Posts

Showing posts from 2022

মহাভারতম্ বনপর্ব-৪৬

 বনপর্ব-৪৬ যেথা যাবে যেই ভাবে, দেশের বাহিরে। চিনিবে না কেউ সেথা তোমরা পাণ্ডব। ধর্ম কর্ম সব হবে, ফিরিবে অচিরে। ন্যায়কার্যে ন্যায় ধর্মে, রবে পরাভব। এই বলে ধর্মরাজ বাতাসে মেলায়  অরণী মন্থের কথা ভোলেনি পাণ্ডব। হাতে করে পাঁচজনে ফিরিল বেলায়। ব্রাহ্মণের হাতে দিল, মিটে গেল সব। পাঁচভাই ফিরে গেল নিরাপদ স্থানে। বনপর্ব শেষ করে যাইবে অজ্ঞাতে। পরামশ্র চাই কিছু আপনার সনে। গোপনে নির্জনে সব,বসে এক সাথে। কোথায় কিভাবে রবে একটি বছর। চিনিতে পারিলে কেউ,জেনে যাবে চর।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৪৫

 বনপর্ব-৪৫ যারে তুমি মনে করো,তোমার অধীন। একজন ফিরে পাবে, কহ কারে নেবে? নকুলেরে পেতে চাই, তারে দিয়ে দিন। সব ভাই ছেড়ে কেন, ও জীবন পাবে? মাদ্রী মায়ের স্মৃতিও রবে মোর সনে। কুন্তী মায়ের দুলাল আমি আছি বলে। ধন্য যুধিষ্ঠির তুমি খুশি মনে মনে, ধর্ম আমি ধর্মরাজ, পিতা এক কালে। ইচ্ছামত বর চাও,তা কি নেবে বলো? মনোবাঞ্ঝা পূর্ণ হবে, মুহূর্তের পর। বার বছরের শেষ, বনবাস গেলো। অজ্ঞাতবাসের দিন, একটি বছর। চিনিতে না পারে কেউ একটি বছরে। অধর্মের পরাজয়, হবে ঘরে ঘরে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৪৪

 বনপর্ব-৪৪ অধর কাঁপিছে ভয়ে কি কহিব মাকে? চারপুত্র তার আর, নেই ধরাধামে। অকালেই চলে গেছে, বীর বলো যাকে, অবলা নরম তৃণ, মূর্ছা যাবে ভ্রমে। পৃথিবীর থেকে ভারি সকলের মাতা। বাতাসের চেয়ে দ্রুত, মানুষের মন। আকাশের থেকে উঁচু,জন্মদাতা পিতা। তৃণের সংখ্যার থেকে,চিন্তা আগমন। এই জীবনে সুখী কে? যার নাই ঋণ। আশ্চর্য এমন কি টা, এই পৃথিবীর। মরণ আছে জেনেও, চায় চিরদিন- বেঁচে রবে আজীবন, তাতেই অস্থির। খুশি হয়ে যক্ষ কহে, ওহে যুধিষ্ঠির। এই চারে বেছে নাও, এক মাত্র বীর।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৪৩

 বনপর্ব-৪৩ অযথা ওদের প্রাণ কেন নিলে কাড়ি? অবাধ্য অশিক্ষার যে, ফল এই রূপ। শোনেনি আমার কথা,এত বাড়াবাড়ি। মরণের ফল ওরা, ভোগে অনুরূপ। নীরস হইল কণ্ঠ স্বর নাহি সরে। যক্ষের বিকট কণ্ঠে,ওষ্ঠাধর কাঁপে। মরিল সকল ভাই,প্রশ্নের উত্তরে। কেমনে সহিবে দুঃখ,দেহমন কাঁপে। পৃথিবীর থেকে ভারি বলতে হবে কে? উচ্চতায় দীর্ঘ বলো,কেবা হতে পারে? বাতাসের থেকে দ্রুত, চলতে পারে কে? তৃণের চাইতে সংখ্যা, বেশি চরাচরে? এই কয়টি প্রশ্নের,করিও উত্তর। ভয়ে কেন কাঁপিতেছে তোমার অধর।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৪২

 বনপর্ব-৪২ কেগো তুমি দেবদৈত্য নয় কি অসুর। চারভাই মৃত কেন, বলিতে কে পারো? হে বনদেবতা শোনো, আছ কত দূর? মহাবীর অর্জুনের প্রাণ নাশ করো? কি জবাব দেবো মাকে, কি কহিব তারে? নয়নের মনি তার, আর নাই ভবে? একা আমি ফিরিয়াছি,সব শেষ করে। এতে মোর মাতা কিগো আর বেঁচে রবে? দৈবের বানী শুনিল প্রথম পাণ্ডব। কিছু প্রশ্নের উত্তর,দাও দয়া করে। পুকুরের জল তুমি নিয়ে যাও সব। নইলে মরণ হবে, পুকুরের ধারে। কহিল যুধিষ্ঠির তা,লুকানো দেবতা। আপনার প্রশ্ন গুলি,কিসের বারতা?

মহাভারতম্ বনপর্ব-৪১

 বনপর্ব-৪১ বহুক্ষণ চলে গেল দীঘি কত দূর? সহদেব যাও দেখো কি করে নকুল। পাশেই তো পুষ্করিনী কেন গেল দূর? সহদেব গেল বটে সেও করে ভুল? চিন্তার পাহাড় জমে কহে যুধিষ্ঠির। দুইভায়ে মিলে কোথা কাটিছে পুকুর? যাও দেখো ভীম ত্বরা, হয়েছি অধীর। চারভাই একে একে, গেল কত দূর? অগত্যাই যুধিষ্ঠির,শেষ কালে যায়। নিকটেই দীঘি পারে পাইলেন সবে। মৃত কেন চার ভাই কি করিবে হায়? দীঘির জলেতে বুঝি বিষ মেশা হবে। দৈব্যবানী হলো ফের শোনে ধর্মজ্ঞানী। প্রশ্নের উত্তর দাও,তবে পাবে পানি।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৪০

 বনপর্ব-৪০ পাণ্ডবেরা সবে মিলে ধরিবে হরিণ। ছুটতে ছুটতে সব, পরিশ্রান্ত হলে। পিপাসায় বুক ফাটে,কণ্ঠস্বর ক্ষীণ। পাচঁজন শ্বাস নিতে,বসে বৃক্ষতলে। ত্বরা করি দীঘি ঘাটে চলিল নকুল। পাশে ছিল জলাশয়, নামিল সত্বর। দৈব্যবানী হলো সেথা,ছাপিয়া দুকুল। তিনটি প্রশ্নের দাও,সঠিক উত্তর। তারপরে যতখুশি জল খাও এসে। না দিয়ে উত্তর হেথা যদি জল খাও। মরণের কোলে যাবে,বুঝে নিও শেষে। আদেশ অমান্য করে, মৃত্যু ফল পাও। তৃষ্ণায় কাতর এবে, কন্ঠ জল চায়। নকুলের মৃত্যুটাকে ,কে মানিবে হায়।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩৯

 বনপর্ব-৩৯ বারটি বছর গেল, নানা উচাটনে। পাণ্ডবেরা দৈতবনে,শেষ দিন রবে। তপস্বী ব্রাহ্মণ এক,ছিল সেই বনে। অরনী মন্থের খোঁজ,তারে দিতে হবে। গাছের ডালেতে ঝুলে, ছিল বহুদিন। সারঙ্গ হরিনী এক, পিঠ ঘষেছিল। সিঙের শাখায় সেঁটে, পালাল হরিণ। অরণী মন্থের নাম, কেউ শুনেছিল? অদ্ভুত ঘটনা সব ,পাণ্ডবের সনে? এমন সামান্য কাজ, কি লাগে করিতে। দুই খণ্ড কাঠ সেটা, দুয়ের ঘর্ষণে, অগ্নি উৎপাদন করে,মশাল জ্বালিতে। সহদেব কহে শোনো, তিষ্ঠ মহারাজ। আমি গিয়ে ধরে আনি,বৃদ্ধ মৃগরাজ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩৮

 বনপর্ব-৩৮ কবজ কুণ্ডল ধারী কর্ণ সুতপুত্র। সরল সুধীর বন্ধু রাজা দুর্যোধন। অর্জুনে বধিবে মনে,প্রতিজ্ঞা পবিত্র। নয়নে চাঞ্চল্য লয়ে,প্রখর এমন। দান বীর নামে খ্যাত, তবু মনে ব্যথা। একবিন্দু মিথ্যে নয়,তার অঙ্গীকার। কবজ কুন্ডল দেহে,কীর্তি যশোগাথা। ইন্দ্রের ছলনা যারে, করিল বেকার। মনের আরাধ্য যার দীপ্তি দিবাকর। তারে কে বধিতে পারে, সম্মুখ সমরে। ব্রাহ্মণের বেশে ইন্দ্র, মাগিল যে বর। কবজ কুণ্ডল খুলে দিতে হবে তারে। প্রতারক জেনেও সে সব দিলো খুলে। জীবন রক্ষার কাজ, তাও গেল ভুলে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩৭

 বনপর্ব-৩৭ অর্ধচন্দ্র বাণ মেরে, মাথা কামাইল। অপমানে জয়দ্রথ,কথা নাহি চলে। পাঁচজন পাঁচঝুটি কেন বানাইল? বিকট রূপের তরে, ভুলভাল বলে। শিবের তপস্যা করে বর মাগে তারে। পাণ্ডবের পরাজয় তার হাতে হবে। চারভাই পরাজিত,হলে হতে পারে। অর্জুনের পরাজয় কিছুতে না হবে। একদিন একবার হারাবে তাহারে। দেবের ক্ষমতা নেই অর্জুনে হারায়। এই নিয়ে সুখী হও,যাও ফিরে ঘরে। মনোদুখে জয়দ্রথ,শিবেরে ফেরায়। শিব তবু বর দিয়ে, করিল আশিস। বিকট রূপের কথা, মনে জাগে বিষ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩৬

 বনপর্ব-৩৬ পাঁচভাই রথ নিয়ে, ছুটিল পিছনে জয়দ্রথ যেই দিকে,গিয়েছেন ধেয়ে। কিছুদূর গিয়ে দেখে, অন্ধকার বনে। পাঞ্চাল দুহিতা সেথা,কত দুঃখ সয়ে। পঙ্গপাল সম সৈন্য দল বেঁধে ধায়। জয়দ্রথের সৈন্যরা,পড়ে ঘূর্ণিপাকে। শ-শতাধিক সৈন্যের মৃত্যু হলো হায়। বিপদে পড়িল রাজা নারীর বিপাকে। মার খেয়ে জয়দ্রথ মরণের মুখী। যুধিষ্ঠির কহে ভীমে ছেড়ে দাও ভাই। গান্ধারী মায়ের মনে দুঃখ দেবে দেখি। হাজার হোক বংশের একটা জামাই। ওরে ভাই জয়দ্রথ, মিছে করো রণ। বিপদে পড়িলে দেখো নারীর কারণ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩৫

 বনপর্ব-৩৫ দুর্যোধনের ভগিনী সেই দুঃশলার। বিবাহ হয়েছে যার,জয়দ্রথ সনে। শাল্বদেশ যাওয়ার পথে অনাচার। জয়দ্রথ দ্রৌপদীরে দেখিল অরন্যে। কাম্যকবনের মাঝে, সুন্দরী রূপসী। অপ্সরা মোহিনী দেবী পাঞ্চাল নন্দিনী। অলক্ত আরক্ত শোভা,প্রভাতের হাসি। পাণ্ডব মৃগয়া করে, কোনখানে জানি? জোর করে জয়দ্রথ,ধরে পাঞ্চালীরে। মানিনীর মুখ দেখে, বাসনা কামনা। জয়দ্রথ তারে নিয়ে গেল জোর করে। ধৌম্য ঋষির চিৎকারে,ভীষণ বেদনা। মৃগয়ায় পাণ্ডবের লাগিল না মন। ফিরিল কুটিরে তারা,শোনে বিবরণ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩৪

 বনপর্ব-৩৪ স্নান শেষে ঋষিদিগে পেট ভরে গেল। কৃষ্ণের লীলার ধার,কে বুঝিতে পারে। অত্যধিক পেট ভরা, মুনিরা দেখিল। দুর্বাসা কহিল সেথা,কি কহিবে তারে। লজ্জায় ঋষিরা কহে,কেমনে খাইব? একটি অন্নও পেটে,ধরাবার নাই। এমন কেমনে হলো, কি করে বুঝিব? চলো মোরা হেথা হতে সকলে পালাই। শ্রীকৃষ্ণের আগমন, বড়ই অদ্ভুত। দ্রৌপদীর আহ্বানের,উপেক্ষা না করি। পরম মিত্রের ডাকে, সদাই প্রস্তুত। বিপদে স্মরণ করে, তারে রক্ষা করি। পাণ্ডবদিগের প্রতি, কৃষ্ণের ভুমিকা। বিদায় নিলেন তিনি নিজের দ্বারকা।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩৩

 বনপর্ব-৩৩ সেদিন দুর্বাসা এল কৌরবের দ্বারে দশ সহস্র শিষ্যরা ছিল তার সনে। দুর্যোধন দুর্বাসারে আপ্যয়ন করে। খুশিতে দুর্বাসা,বর দিবে বলে মানে। দুর্যোধন খুশি হয়ে কহে মহামুনি। দ্রৌপদীর খাদ্য শেষে যান তার ঘরে। দশ সহস্র শিষ্যের,খাদ্য পাবে মানি এই শুধু চাই ঋষি, অন্তরে অন্তরে। হাসিল বিধাতা মনে,নির্বোধ নির্দয়। দ্রৌপদীর খাদ্য শেষে শূণ্য হয় হাঁড়ি। দশ হাজার শিষ্যের হইল উদয়। কৃষ্ণের ভগিনী সখী,সত্যি সতী নারী। এক কণা সব্জি খণ্ড,হাঁড়ির ভিতর। কৃষ্ণ খেয়ে ভরালেন, সবার উদর।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩২

 বনপর্ব-৩২ অনুতাপ নেই মনে,দর্পী দুর্যোধন। বৃথা আস্ফালন করে,আপনার মনে। প্রতিজ্ঞা করিল কর্ণ, নিজে আমরণ। মদ মাংস ছোঁবেন না,বধিবে অর্জুনে। দেখেছি উষ্ণতা তার রবি মহাশয়। কর্ণের প্রতিজ্ঞা হেথা, হইবে বিকল। অলক্ত আরক্ত প্রভা প্রভাত সময়। প্রার্থীর প্রার্থনা জেনো,পুরিবে সকল। ফিরে গেল হস্তিনায়,দলবল সহ। কাম্যক অরণ্য ফের,চলিল পাণ্ডব। অভেদ্য দূর্গম পথ, কার সাধ্য লয়। চারিদিক অন্ধকার,পক্ষী কলরব। প্রভাত হইলে নিশা উঠিল তপন। দ্রৌপদীর ম্লানমুখ,সজল নয়ন।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩১

 বনপর্ব-৩১ যুধিষ্ঠিরের অতুল্য, অত্র আপ্যয়নে। সকলেই ছাড়া পেয়ে ঘরে মুখি হন। অপমানে দুর্যোধন,কেঁদে ফেলে বনে। এর প্রতিশোধ আমি,লইব কখন? মাতুল শকুনি দিলো, ভুল পরামর্শ। সহিতে হলো এমন ঘোর অপমান। এর থেকে শ্রেয় ছিল,মরণের স্পর্শ। শত্রুর ভীষণ ফাঁদে,চলে যেত প্রাণ। পাঁচ ভাই মিলে মোর বাঁচাইল প্রাণ। মূর্খ আমি কখনোই, সহি না আঘাত। সহস্র সৈনিক এনে,করি অবসান। পাণ্ডব বংশের নাম, করিব নস্যাৎ। মাতুল শকুনি কহে,ওহে দুর্যোধন। চিন্তা নাই পাণ্ডবেরা, ধুইবে চরণ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩০

 বনপর্ব-৩০ যেই স্থানে পাণ্ডবেরা বসবাস করে। সরোবর তট সেথা, মনোরম ছিল। কিছুতেই দুর্যোধন ঢুকিতে না পারে। গন্ধর্বেরা সেই স্থানে,কেমনে পশিল। ভীষণ ক্রোধের বসে,কহে দুর্যোধন। দূর হয়ে যাও ত্বরা, সরোবর হতে। দুই দলে ভারি যুদ্ধ, বাঁধিল তখন। কৌরবেরা পালাইল,ভীষণ ভয়েতে। গন্ধর্ব রাজার হাতে,বন্দী দুর্যোধন। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির সেথায় আসেন। কৌরবদের মুক্তির,করে আবেদন। গন্ধর্বদের রাজার,নাম চিত্রসেন। চিত্রসেন অর্জুনের গানের শিক্ষক। স্বর্গের হতে ইন্দ্রই, গন্ধর্ব প্রেরক।

মহাভারতম্ বনপর্ব-২৯

 বনপর্ব-২৯ এদিকে হস্তিনাপুরে,দুর্যোধন বলে পাণ্ডবেরা এইক্ষণে আছে দ্বৈতবনে। নরকযন্ত্রণা ভোগ করিছে সকলে। এইক্ষনে যদি যাই পরিবার সনে? আমোদ প্রমোদ করে কষ্ট দেবো সই। কর্ণ ও শকুনি তাতে দিলেন সম্মতি। দূতক্রীড়ায় হারিয়ে শান্তি হলো কই? অরাজি ধৃতরাষ্ট্রের পেলো অনুমতি।  কর্ণ কহে,ওহে বন্ধু রেখেছ স্মরণে। দ্রৌপদীর হস্তিনায় যেই কষ্ট পায়। তার থেকে বেশি কষ্ট পাবে দ্বৈতবনে। দাসদাসি সহ চলো, অলঙ্কার গায়। শত্রুর কঠিন কষ্টে,মন শান্তি পায়। শকুনির পরামর্শে, চলিল সেথায়।

মহাভারতম্ বনপর্ব-২৮

 বনপর্ব-২৮ বহুক্ষণ ভীম নেই, নেই আশেপাশে। চিন্তায় যুধিষ্ঠিরের, হলো উদগ্রীব। নিজেই জঙ্গলে যায়, অশুভ বিশ্বাসে। দেখিল অদ্ভুত কাণ্ড, এটি কোন জীব? ভীমেরে করিল কাবু, তুচ্ছ অজগরে? সাহস তো মন্দ নয়, খাবে ভীমসেনে। অগস্ত্যর অভিশাপে  এই রূপ ধরে, অনেক বছর আছি তোমার কারণে। প্রশ্নের জবাব দিলে মুক্ত হব আমি। সঠিক জবাব চাই, বলো মহারাজ। সঠিক জবাব পেয়ে, ছাড়িলেন ভুমি। অগস্ত্যের অভিশাপ,মুক্ত হলো আজ। এ বন ছেড়ে পাণ্ডব গেলো দ্বৈতবনে। মনের আনন্দে বাস করে এক সনে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-২৭

 বনপর্ব-২৭ যমুনা নদীর তীরে এলো পাণ্ডবেরা। বিশাকযুপ নামক মনোরম বনে। আসিবার পথে পড়ে সুবাহুর ডেরা। অস্ত্রসস্ত্র নিলো তারা,আপনার সনে। লোমশমুনি গেলেন দেবলোকে ফিরে। ঘটোৎকচও ফিরে যায় সেইক্ষণে। শিকারের জন্য ভীম, সদা ঘোরে ফেরে। ভয়ঙ্কর অজগর, জড়াল বন্ধনে। কিছুতেই মুক্ত হতে পারিল না ভীম। করজোড়ে ভীম কহে,ওহে অজগর। দশ সহস্র হাতির,শক্তি ধরে ভীম। তারে তুমি জব্দ করো,কেমনে অজর।। ভীম নামে চিনিলেন চন্দ্রবংশ জাত। নহুষ নামক রাজা চন্দ্রবংশ খ্যাত।

মহাভারতম্ বনপর্ব-২৬

 বনপর্ব-২৬ ভীমের বীরত্বে সব ধরাশায়ী হয়ে, ছুটে যান রক্ষী সব কুবেরের কাছে। সব শুনে কহিলেন, হাসি মুখ লয়ে, ইচ্ছামত ফুল নিতে, বাধা দাও মিছে। ফুল নিয়ে ভীমসেন স্নানে তাজা হলো। চার ভ্রাতা সেইখানে,থাকে কিছুদিন। বদ্রীকা আশ্রমে তারা,সকলে ফিরিল। ফুলের সুবাস ফেরে, ঘরে সারাদিন। জটাসুর নামে এক, শার্দুল অধীন। ব্রাহ্মণের বেশে থাকে,করিয়া কপট। সুযোগের অপেক্ষায় ছিল এতদিন। পাণ্ডবের অস্ত্র নিয়ে,সে দিল চম্পট। সময় নেয়নি ভীম,নিধন করিতে। পাঁচটা বছর গেল,দেখতে দেখতে।

মহাভার‍তম্ বনপর্ব-২৫

 বনপর্ব-২৫ ইচ্ছামত বর চাও,কহে হনুমান। ভীমের প্রতি প্রসন্ন হয়েছেন তিনি। প্রণাম করিয়া ভীম,করিল সম্মান। দর্শন পেয়েছি যার,ইচ্ছাপূর্ণ মানি। এই তেজে শত্রু জয় করিতেই পারি। আর কিছু প্রয়োজন হইবে না এবে। ভীমের মধুর বাক্যে, খুশি হয় ভারি। বিপদে স্মরণ করো,সেইক্ষণে পাবে। পদ্ম নিতে গেল ভীম কৈলাশ পর্বতে। মনমাতানো সুগন্ধ, অতি মনোরম। ভীমেরে দেখিয়া সৈন্য,অস্ত্র নিয়ে হাতে। মহাযুদ্ধে দেখা গেল, কার কত দম। গদার আঘাত দিতে ভীম ভালোবাসে। কৈলাশ পর্বত হতে, ফুল নিয়ে আসে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-২৪

 বনপর্ব-২৪ বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে,পরিশ্রান্ত ভীম। সহস্র হাতির শক্তি,কোথা গেল তার? কেগো তুমি শক্তিমান,আকাশ অসীম। মহাবলী ভীম ডরে, সাধ্য হলো কার? করজোড়ে কহে ভীম,ক্ষমা করো মোরে। পরিচয় দাও প্রভু, ফুল তুলে যাই। ভীমের কথায় মুগ্ধ, হনুমান ঘোরে। মহাবীর হনুমান, কোনো সন্ধ নাই। ওহে ভীম,ভ্রাতা মোর, মুগ্ধ তব কাজে। বর চাও,বুকে এসো,করি কোলাকুলি। দেখা দাও ভয়ঙ্কর, বিরাট সে সাজে। সীতার উদ্ধারে যেতে,বীর মহাবলী। অদ্ভুত সে মহারূপ, ভরাইল প্রাণ। ভীমের সম্মুখে আজি, বীর হনুমান।

মহাভারতম্ বনপর্ব-২৩

 বনপর্ব-২৩ মহাবলে বলী আমি,অধম বানর। এইপথ ছেড়ে দাও,নয় সাজা পাবে। বৃদ্ধ আমি এই হাল,দণ্ডে করি ভর। আমাকে ডিঙিয়ে যাও,সেই ভালো হবে। প্রত্যেক জীবের দেহে,ভগবান পাবো। কেমনে ডিঙিয়ে যাই,অনুচিত হবে। নই আমি হনুমান, লাফ দিয়ে যাবো। পাহাড় সাগর নদী, লঙ্ঘিব নীরবে। হনুমান ! কে সে হনু, বৃথাই জাগাও। তাহলে আর কি হবে,লেজটা আমার, আস্তে করে একপাশে,সরিয়ে পালাও। আমার ক্ষমতা নেই,লেজ সরাবার। অবহেলা করে ভীম লেজটাকে ধরে। হাজার চেষ্টাতে লেজ,সরাতে না পারে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-২২

 বনপর্ব-২২ আহ্লাদেই আটখানা ভীম মহাবীর। শতদল এনে দেবে চলিল সন্ধানে। হনুমান সেইক্ষণে দেখিয়া অস্থির। বিপদে পড়িল বুঝি ভয়ানক স্থানে। বিপদের মুখে ভীম দেখে হনুমান। তুচ্ছ বানরের রূপে, রাস্তার ওপর। ঘুমোনোর ভান করে,পথ আটকান। ভীমের গর্জন শুনে, ভয়ে ভয়ঙ্কর। মিটি মিটি চোখ করে,কহে হনুমান। ভীষণ অসুস্থ আমি,দয়া করো মোরে। ধার্মিক মানুষ তুমি, দেবতা সমান। ফিরে যাও ফল খেয়ে,আপনার ঘরে। ভীম আমি কুরুবংশী কৌলিন্য ক্ষত্রিয়। পবন দেবতা মোর, প্রাণের আত্মীয়।

মহাভারতম্ বনপর্ব-২০

 বনপর্ব-২০ এর পরে ভোগ করে কৈলাশের হিম। দুর্গম পথের শ্রমে দ্রৌপদীর কষ্ট। দ্রৌপদী কুন্তীরে তাই কাঁধে তুলে ভীম, লোমশ মুনির সাথে,লক্ষ্যে মন ইষ্ট। পুলিন্দরাজ সুবাহু, বান্ধব সমান। পাণ্ডবের পরিবার লইবে বিশ্রাম। গচ্ছিত রাখিল সব, খড়গ কৃপাণ। পদব্রজে যেতে হবে,জটেশ্বর ধাম। গন্ধমাদন পর্বতে ভীষণ সে ঝড়ে- অতিশয় তাণ্ডবের,মুখোমুখি তারা। পর্বতের গুহা আর,গাছের উপরে- প্রাণঘাতী তুফানের ছিল বুঝি তাড়া। পরিশ্রান্ত ভীম ডাকে,পুত্র ঘটোৎকচে। কাঁধে তুলে নিয়ে যায়,কৈলাশের কাছে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১৯

 বনপর্ব-১৯ ভীষণ ক্রোধের বসে কহে বলরাম। এমন অবস্থা কেন সখা পাণ্ডবের। চলো মোরা মুছে ফেলি দুর্যোধন নাম। চিরতরে নাম মুছি, দুষ্ট কৌরবের। কত দিন বনবাসে, কহে হলধর। কেমনে কাটিবে দিন, জঙ্গলে জঙ্গলে। চলুন হে মহারাজ, আমাদের ঘর। সৈন্য সামন্ত সাজাই, নিজ শক্তি বলে। কহে কৃষ্ণ মহাবীর শোন হে সাত্যকি। মহারাজ যুধিষ্ঠির, ধর্মের প্রাচীর। লোভের বশে,ধর্মের ত্যাগ করে নাকি? সব যাক ধর্ম থাক,কহে যুধিষ্ঠির। সঠিক বোঝেন কৃষ্ণ, যুধিষ্ঠির কহে। কৃষ্ণের আদেশ হলে,যাইবে কলহে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১৮

 বনপর্ব-১৮ অজানা কারণে ভয়, কেন যুধিষ্ঠির? পাশার খেলায় ফের,ডাকে যদি কেউ, পরাজয় হবে ভেবে, হয়েছো অস্থির। অশান্ত মনের স্থিতি,কাটাবে না কেউ। অক্ষবিদ্যা রপ্ত করে, ভয় নাও জিতে। ভবিষ্যতে আরো কষ্ট,আছে দাঁড়াইয়া। কখন যে কি হইবে কে পারে বলিতে। এর চেয়ে আরো কষ্ট, ধরিবে জড়িয়া। অক্ষবিদ্যায় করিল,রপ্ত যুধিষ্ঠির। নারদের মুখে শোনে তীর্থের বর্ণনা। পুরোহিত ধৌম্য সহ তীর্থে মনোস্থির। লোমশ ঋষির এসে করিল গণনা। তীর্থের ভ্রমণে ঘুরে এলো চারধাম। প্রভাস তীর্থে পাইল কৃষ্ণ বলরাম।

মহাভারতম্ বনপর্ব -১৭

 বনপর্ব-১৭ অর্জুন বিরহে ভাই, দুঃখ যে চরমে। বহু কষ্টে দিন কাটে,সব পাণ্ডবের। বৃহদশ্ব ঋষি এলে,পাণ্ডব আশ্রমে। যুধিষ্ঠির আপ্যয়ন, করে ঋষিদের। কহিলেন যুধিষ্ঠির বৃহদশ্ব কাছে। আদরে প্রণাম করে, যুধিষ্ঠির তারে। দুষ্টেরা পাশা খেলায় সব নিয়ে গেছে। এমনকি দ্রৌপদীরে, অপমান করে। এত দুঃখ এত কষ্ট সহিব কেমনে? অবোধ ভায়েরা মনে,কত কষ্ট পায়। বনেবনে ঘুরিফিরি সুখ নাই মনে। সদা ভাবি মূর্খ আমি,কি করি উপায়। কহে ঋষি বৃহদশ্ব দুঃখ নয় শান্তি। আরো কষ্টে ছিল যারা,নল দময়ন্তী।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১৬

 বনপর্ব-১৬ নিবাতকবচ নামে ভীষণ দানব। স্বর্গপুরে অত্যাচার সর্বদাই করে। অর্জুনেরে শিক্ষা দিয়ে,মরণ পরব। গুরুর দক্ষিণা দিতে,সব ধ্বংস করে। অভেদ্য কবচ বুকে,কিরীট প্রদোষ। মাতলি রথের পরে, গাণ্ডিব ধনুক। ব্রহ্মার বরে সে বলি,হিরন্য রাক্ষস। লক্ষ লক্ষ রাক্ষসেরা,অত্যন্ত ভাবুক। কিছুতেই কাবু আর হয় না যে তারা। দিব্যাস্ত্র নিক্ষেপ করে,অতিই সহজে। হিরণ্যপুরী অসুর,মেরে পায় ছাড়া। দৈত্যকন্যা পুলোমার হত্যা করে নিজে। বিশাল নগর ব্রহ্মা,দিয়েছিল যারে। পৌলোম নামে অসুর,অর্জুণ নিহারে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১৫

 বনপর্ব-১৫ কিরাতরূপী শিবের,হেন কেরামতি, বুঝিল অর্জুন তবে,নমে করজোড়ে। অর্জুনের সব অস্ত্র দিল মহামতি। পাশুপত অস্ত্রদান করে তারে ছাড়ে। শিব চলে গেলে পরে আসে দেবতারা। বরুন কুবের যম, দেবরাজ আসে। অর্জুনেরে সঙ্গে নিয়ে,গেল স্বর্গে তারা। অস্ত্রবিদ্যা নাচগান,শিক্ষা নিল শেষে। গাণ্ডিবের ছিলা দিল, নয়া এক গুণ। কখনো ছিঁড়বে না তা,শক্তিশালী খাস। অক্ষয়তৃণ অস্ত্রের ,ভীষণ আগুন। কুবেরের অন্তর্ধান,বরুণের পাশ। যত অস্ত্র শিক্ষা ছিল,অর্জুনের আছে। স্বর্গের দেবতারাও তুচ্ছ তার কাছে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১৪

 বনপর্ব-১৪ যুধিষ্ঠির অর্জুনকে কহিল অখিল। উত্তরের বনে যাও, হিমালয় শৃঙ্গে। গন্ধমাদন পর্বত ছেড়ে ইন্দ্রকীল। পাইবে সকল দেব, দেবতার সঙ্গে। কঠোর সাধনা করে মধ্যম পাণ্ডব বিশ্বজয়ী বীর হতে আর নাই বাকি। মাসের পর বছর স্তব্ধ হলো সব। তপস্যার তেজে হিম,অন্ধকার দেখি। শিবের তপস্যা করে তুষ্ট করিল সে। কিরাত কিরাতী রূপে শিবদূর্গা ভাই। মূক নামক রাক্ষস শূকরের বেশে, অর্জুন কিরাতদ্বয়ে ভীষণ লড়াই। শূকর মেরেছে কে তাই নিয়ে দ্বন্দ্ব। অর্জুনের সব অস্ত্র,হারিয়েছে ছন্দ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১৩

 বনপর্ব-১৩ সুভদ্রা অভিমন্যুকে নিয়ে দ্বারকায়। ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রৌপদীর পুত্রদের নিয়ে। ধৃষ্টকেতু চেদিরাজ্যে লইল বিদায়। কৈকেয়গণও যায় করুণ বিদায়ে। বিদায়ের পর্ব শেষ,হইলে অর্জুন। কাম্যক অরণ্য ছেড়ে গেল দ্বৈতবনে। আশ্রম বানিয়ে সেথা,কাটিল দারুণ। মার্কণ্ডেয় ঋষি জ্ঞান দিল রামায়ণে। প্রতিস্মৃতি বিদ্যা দান করিলেন ঋষি। বরুন কুবের যম তুষ্ট হবে তাতে, ইন্দ্র রুদ্র বর দান করিবেন আসি। বহু গুণী অস্ত্র দেবে মানবের হিতে। পাইল পাণ্ডব গণ বহু দিব্য অস্ত্র। সরস্বতী নদী তীরে পাইল ব্রহ্মাস্ত্র।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১২

 বনপর্ব-১২ তমিস্রা রজণী যেন,ব্যাপিল ধরণী। কেহ না মুছিবে অশ্রু,গভীর নয়নে। ঘণবনে একাকিনী, বসিয়া রমণী, অযথা চোখের জল,ফেলিছ গোপনে। ত্যজ ক্ষোভ অভিমান,পাঞ্চাল দুহিতা। কালের পরশে দেখো,মিশিবে জঞ্জালে। সতীত্বের পূন্য ফল, দানিবে বিধাতা। নিয়মের জালে বাঁধা,ঘুরিছে সকলে। রবি তথা আলো করে,না করে দহণ। প্রকৃতির আচ্ছাদনে, সকলে বিরাজে। নিশি স্নিগ্ধকরী নহে,তিমির কারণ। গন্ধবহ বাতাসের, বৃথাই রোদন। নারী তথা প্রণয়িনী বিলাসিনী নয়। দেবের কৃপায় দিব্য জ্ঞানের উদয়।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১১

 বনপর্ব-১১ জানিয়া বৃতান্ত কৃষ্ণ,আসে বনবাসে। পাণ্ডবদের মূর্খতা কেমনে সহিবে? দ্বারকার রাজকন্যা অশ্রু জলে ভাসে। ভীষণ রোষে শ্রীকৃষ্ণ,বিশ্ব জ্বালাইবে। ক্ষিপ্ত হইলে শ্রীকৃষ্ণ,কহিল অর্জুন। শান্ত হও বাসুদেব একি করিতেছ। জগতের অধিশ্বর সমস্য করুণ। কৌরবের অত্যাচার,হৃদয়ে লইছ। ধৃষ্টদ্যুম্ন,চেদিরাজ ধৃষ্টকেতু মিলে, শ্রীকৃষ্ণের চর্তুদিকে,ঘিরিয়া বসিল। যুধিষ্ঠির ক্রমে ক্রমে, সব কহে দিলে। দ্রৌপদীর অপমান, হৃদয়ে বিঁধিল। শ্রীকৃষ্ণ কহিল তারে দুঃখ কেন সখী ষোলকলা পূর্ণ হলে,উড়ে যাবে পাখী।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১০

 বনপর্ব-১০ কাম্যক বনের পাশে কিম্মীর রাক্ষস পাণ্ডবদের দেখিয়া কহে আহাম্মক। আয় তোদের মারিয়া করি পরিতোষ। বক রাক্ষসের ভাই আমি, হে পাতক। বন্ধু হিড়িম্বকে তুই মেরেছিস ভীম। আজি তোরে পাঠাইব মৃত যমলোক। বহুদিন খুঁজে খুঁজে পেয়ে গেছি ভীম। নখের ডগায় তুলে, মেটাইব শোক। হা হা রবে ভীম কহে ওরে ও পাষণ্ড বাহুডোরে চেপে তোরে দেখাই শমন। বিশাল পাহাড় তার দেহ সহ মুণ্ড। কিম্মীর রাক্ষস মুক্ত এ কাম্যকবন। রাক্ষস বিদায় হলো শান্তি এলে বনে। পাণ্ডবদের অরণ্য যাত্রা সুখ মনে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৯

 বনপর্ব-৯ সত্যপরায়ণ তারা বীর পাণ্ডু পুত্র। এক তারা একজোট, চলন্ত সরিৎ। দৈব্য অস্ত্রধারী তারা,আছে দৈব্য নেত্র। ফুৎকারে নিঃশেষ সব,করিবে নিশ্চিৎ। মৈত্রেয় ঋষির কথা শুনিতে না পারে, উপদেশ জ্ঞান সম, দুর্যোধন কহে। কটাক্ষের হাস্যরস সবে পান করে। অপমানে মৈত্রেয়ের অগ্নি সম দহে। সুরলোক দেবলোক যার ভয়ে কাঁপে সেই ঋষি মৈত্রেয়ের একি অপমান। শকুনি কর্ণের সনে, দুর্যোধন কোপে, অভিশাপ দিয়ে ঋষি, স্বর্গ মুখে যান। সংগ্রহ হইল আরো এক অভিশাপ। দুর্যোধনের ঝুলিতে বিষধর সাপ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৮

 বনপর্ব-৮ কহে ব্যাস ধৃতরাষ্ট্রে কেমন দূর্মতি। কপট পাশায় জিতে,করো আকিঞ্চন। সহজে পাণ্ডবে মাত, বুঝিবে দূর্গতি। দুরাত্মা দুর্যোধনের,সাঙ্গ আস্ফালন। অশ্ব গজ রথ যোগে পদাতিক দল। সব নিয়ে যুদ্ধ করে,পাইবে না জয়। অকালে জীবন দেবে,এটাই আসল। অঘটন ঘটে গেলে,বুঝবে কি হয়? বন্ধ করুন বিবাদ,ভাই ভাই সনে, অচিরেই মহাযুদ্ধ,আশঙ্কায় মরি। উপদেশ দিন ওরে শুদ্ধ স্বচ্ছ মনে। বুদ্ধিমান দুর্যোধন ঠিক নেবে ধরি। এগোচ্ছে ধ্বংসের পথে,দাঁড়িয়ে অঘোরী। চকিতে দুর্যোধনের, সব নেবে কাড়ি।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৭

 বনপর্ব-৭ ফিরে আসতে বিদুর,কহে দুর্যোধন। আবার এসেছে ফিরে কানমন্ত্র দিতে। পাণ্ডবেরা ফিরে এলে, দ্বেষ আবর্তন, বিষ খেয়ে দুর্যোধন, মরিবে এ রাতে। শকূনি বললে তারে বৎস দুর্যোধন। সত্যপরায়ণ তারা, সহজ সরল। পাণ্ডবেরা সত্যপথে চলে সর্বক্ষণ। মিথ্যে ভয় পেয়ে তুমি,হয়ো না দূর্বল। দূর্বল বলায় কর্ণ,কহিল উৎফুল্লে- এই ক্ষণে পাণ্ডবেরা বড়ই দূর্বল।  বধ করে আসি চলো,অনায়াসে বল্লে। সকলেই একযোগে,বেঁধে নিল দল। নীরবে নিভৃতে মেরে,নেবো প্রতিশোধ। ব্যাসদেব সেইক্ষণে করে প্রতিরোধ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৬

 বনপর্ব-৬ হা ধরণি কোন পাপে রাজ রাজেশ্বর। বিদুরের আনুগত্যে সন্ধেহ ডুবিল। জ্ঞানেন্দ্রিয় স্বচ্ছতায় প্রণমে ঈশ্বর। তারে কিনা বিতাড়িতে সাহস করিল? এদিকে যে ধৃতরাষ্ট্র অহংকারে ডুবে মহামন্ত্রী বিদুরের  করি অপমান। ভবিষ্যৎ পরিনতির কথাও সে ভাবে। অনুতাপে সঞ্জয়কে দিল ফরমান। সত্বর খবর করো,আসুক বিদুর। এক্ষণে যোগদিক এ ,কৌরব বিধান । নাহি জানি কোন লগ্নে প্রকটে অসুর। কটূকথায় বিদুরে করি অপমান। সঞ্জয় চটজলদি,  যায় আজ্ঞা পেয়ে। বিদুরকে নিয়ে আসে স্বশরীরে গিয়ে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৫

 বনপর্ব-৫ সহসা কাঁপিল মন ঘোর বনস্থলী। গভীর নিস্বনে যেন কহিলা শমনে। মহাগদাপ্রভা বুঝি ধ্বনিল বিজলি। থর থর যুধিষ্ঠির কাঁপিল গহনে। বিদুরের আগমনে, ভাবে এতদূর। ফের বুঝি দ্রৌপদীরে করিবে হরণ। ভয়ে ভীত যুধিষ্ঠিরে দেখিল বিদুর। ভয়ে ভয়ে যুধিষ্ঠির, করিল বরণ। ভয় নাই ভাতুষ্পুত্র কহিব কারণ। ধৃতরাষ্ট্র মতিভ্রমে, ডুবিবে কৌরব। ভবিষ্যত দেখিতেছি,হবে মহারণ। কটূকথার বিষয় কহিব রে সব। কৌরব পাণ্ডব হিতে সদা করি রণ। বিদুরের আনুগত্যে সন্ধ অকারণ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৪

 বনপর্ব-৪ হতাশায় বিদুরের মনে ভারি কষ্ট। মহামতি ধৃতরাষ্ট্র দিয়েছেন গালি। মুখের ওপর তিনি বলেছেন স্পষ্ট। বিদুরের প্রয়োজন ফুরিয়েছে বলি। হায় কৌরব এহেন অনুচিত কর্মে। মরিবে সকল প্রাণী অকালে অনলে। পথ নাহি পাবে কেউ,অনুচিত ধর্মে, সমাধান হতে পারে, অস্ত্র বাহুবলে। বিবাগী হলো বিদুর,ছেড়ে কৌরবেরে। অন্যথায় পাণ্ডবের করিল স্মরণ। কাম্যকবনের পথে, দেখে যুধিষ্ঠিরে। ভয়ে কাঁপে যুধিষ্ঠির, কাকা অকারণ? আবার বুঝি পাশার ডাক পড়িয়াছে অস্ত্রসস্ত্র ছাড়া আর, কিছু নেই কাছে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩

 বনপর্ব-৩ রাজ রাজেন্দ্র ঘরণী ভয়ে ভীত প্রাণ প্রজারোষে বুঝি এবে হয় মান হানি। অনুরক্ত প্রজাদের চলে গেছে জান। তিক্ততার শেষধাপে,নেমে গেছি রানী। কহে রাজা ধৃতরাষ্ট্র,গান্ধারীর কানে। কেমনে ফেরাব আমি, এ কুলের মান? তুমি মোরে পথ দাও, বলি এই ক্ষণে। বিদুরের জ্ঞানে বুঝি, পড়ে গেছে টান? আপনি যদি কল্যাণ চান দুই পক্ষে, পাণ্ডবদের স্বরাষ্ট্র ফিরিয়ে ডাকুন। দুইপক্ষে সমঝতা হলে হবে রক্ষ্যে, নহিলে যে ধ্বংস হবে, এটুক ভাবুন। রেগে গিয়ে ধৃতরাষ্ট্র, কহিল বিদুর, আমার ছেলের প্রতি,হিংসা এতদূর?

মহাভারতম্ বনপর্ব-২

 বনপর্ব-২ অযথাই সূর্যদেবে করিব বিরক্ত। মোরতরে অকারণে সময়টা নষ্ট। হে প্রাণের সূর্যদেব করি অতিরিক্ত। উপায় কর হে দেব লঙ্ঘিতে এ কষ্ট। এতজন ব্রাহ্মণের খাদ্যের নিমিত্ত- তোমারে স্মরণ করি, করো নিরাময়। চোখ বুজে একমনে যুধিষ্ঠির নিত্য, তপস্যায় মগ্ন থেকে,সূর্যে করে জয়। তাম্রপাত্র এক দিল, মুগ্ধ দিবাকর। দ্রৌপদীর হাতে দাও এই পাত্রখানি। রন্ধন করিবে যাহা, রবে দিনভর। যতক্ষণ সে অভুক্ত, পূর্ণ খাদ্যদানি। গৃহকর্ত্রী ভূক্ত হলে খাদ্য হবে শেষ। সংসারে তারাই দেয় সুস্থ পরিবেশ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১

 বনপর্ব-১ চলিছে পাণ্ডবগণ উত্তরের বনে। তার সাথে চলে তার প্রিয় প্রজাগণ। পুরোহিত ধৌম্য আর তপস্বীর সনে, এ দেশে রইবে আর করিয়াছে পণ। এত লোক এতজন কি খাবে,কিভাবে? যাও ফিরে প্রিয়প্রজা আপনার দেশে। সুখে ঘর করো সেথা, তবে মোরে পাবে, বার বছরের পরে নিয়ে যাবে এসে। চলে গেল সব প্রজা,রহিলো ব্রাহ্মণ। তপস্বী ঋষির মতো  প্রিয়তম তারা। ওরে কি খাব,কি পাব,কোথা যাবে মন। এত গুলি লোক নিয়ে,হই দিশাহারা। ধৌম্য ঋষি কহে, ওহে পাণ্ডু শিরোমনি। সূর্যের তপস্যা করো, কবে দিন মনি।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-২৫

 সভাপর্ব-২৫ শতধিক শকুনিরে কি করে কৌশল। দ্বিতীয়বারও পাশা করিল চক্রান্ত। হারিল পাশার খেলা পাণ্ডবের দল। বনবাসে বারবর্ষ অজ্ঞাত পযর্ন্ত। কুন্তীরে বিদুর রাখে,সম্মানে তাহারে। পাঁচভাই দ্রৌপদীর  হলো বনবাস। রাজপাট সবছাড়ি গেল অবিচারে। দেবর্ষি নারদ কহে,ভাগ্য পরিহাস। রসাতলে যাবে সব,আপন কোন্দলে। চোদ্দ বছর অপেক্ষা করো হে কৌরব। কৌরবেরা ফেঁসে গেল,কোন মায়াজালে? অযথা সম্পত্তি লোভে, হারাবে রে সব। বার বছরের তরে গেল বনবাসে। সভাপর্বের পরেই বনপর্ব আসে।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-২৪

 সভাপর্ব-২৪ ধৃতরাষ্ট্রের মূর্খতা বিরক্ত সকলে। এত কষ্টে জয় করা ঐশ্বর্য বৈভব। ধৃতরাষ্ট্র দান করে অতি অবহেলে। ক্ষত্রিয় ধর্মের নৃপ,উপাস্যে বৈষ্ণব। দুর্যোধন দুঃশাষণ কর্ণ ও শকুনি। ভীষণ চিন্তায় পড়ে,পেলে অবসর। শকুনির কুচক্রের ধার এত খানি। অনায়াসে খণ্ড হবে মহী শৃঙ্গধর। যুধিষ্ঠির সনে হবে পাশার আসর।  পরাজয়ে বারোবর্ষ যাবে বনবাসে। অজ্ঞাত বাসেও যাবে একটি বছর। ধরা যদি পড়ে তবে, ফের বনবাসে। এইশর্তে দূতক্রীড়া খেলিল শকুনি। ছলনায় জিত হলে,হাসে সৌদামিনী।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-২৩

সভাপর্ব-২৩ যন্ত্রণায় ক্রুদ্ধ ভীম,কহে দুর্যোধনে। বাম উরু চূর্ণ করে,দেবো অব্যহতি। নইলে স্বর্গের দ্বার, না দেখি নয়নে। চরম প্রতিজ্ঞা মোর, বুঝিবে দূর্গতি। চরম প্রতিজ্ঞা শুনে কাঁপে সভাসদ। হোমগৃহে শৃগালের  করুণ ক্রন্দন। চারদিক হতে করে গাধা গদ গদ। হুঁস হলো সকলের ছিল মৌনক্ষণ। ধৃতরাষ্ট্র কেঁপে ওঠে,মৌন সভাঘরে। পুত্রগনে কটূকথা কহিলেন ভয়ে। দ্রৌপদীরে ডেকে কয়,বর চাও মোরে। দাসত্বের মুক্তি চাই, এই দিনু কয়ে। ধৃতরাষ্ট্রের আশিসে,সব পেলো ফিরে। পঞ্চপাণ্ডবের সনে,ফিরে গেল ঘরে।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-২২

 সভাপর্ব-২২ ভিতরে ভিতরে খেলা ভারসাম্যহীন। বিকর্ণকে গালি দিয়ে,কহিলেন কর্ণ। পঞ্চপাণ্ডবের আজ কৌরব অধীন। বৃথা তুমি প্রতিবাদ,করিছ বিকর্ণ? অহংকারী পাণ্ডবের বস্ত্র নাও খুলে। দ্রৌপদীর অঙ্গবস্ত্র কেন রাখো দেহে। অপমান করেছিল স্বয়ম্বর কালে। সূতপুত্র কর্ণ কাঁদে,দ্রৌপদী বিরহে। বহুক্ষণ বস্ত্র টেনে ক্লান্ত দুঃশাষণ। কোথা হতে এল বস্ত্র,দ্রৌপদীর দেহে। বস্ত্রের পাহাড় জমে,দ্যাখে জনগন। বাসুদেব রক্ষা করো,কৃষ্ণসখী কহে। সহিছে পঞ্চপাণ্ডব,সব মুখ বুজে। অন্যায় অবিচারের দাসদাসী সেজে।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-২১

 সভাপর্ব-২১ চুলেরমুঠির জোরে,টানে দুঃশাষণ। অসহায় কৃষ্ণ সখী,ছটফট করে। দেখো কৃষ্ণ দেখো কৃষ্ণ একি আচরণ। দেশের প্রগতি হায়, এ কোন তিমিরে। ধুলায় লুটিয়ে পড়ে,কাঁদে কৃষ্ণ সখী। নারী নির্যাতন করে, বীর পুরুষেরা। অবলা অচলা নারী, চিরদিন দুখী। ধর্মকর্ম সব গেল, ন্যায় ও অধরা। বীরশ্রেষ্ঠ ভীষ্ম দ্রোণ, কর্ণ কৃপাচার্য। কাঠের পুতুল যেন দূতসভা ঘরে। আজ্ঞাবহ দাস এরা, দৃশ্য পরিহার্য। বিকর্ণ কৌরব পুত্র, প্রতিবাদ করে। ততক্ষণে দুঃশাষণ,ক্রুর অট্টহাস্যে। দ্রৌপদীর বস্ত্র টানে,কিসের উদ্দেশ্যে?

মহাভারতম্ সভাপর্ব-২০

 সভাপর্ব-২০ অট্টহাস্য হাসে সভা,লাজে যুধিষ্ঠির। পাঁচভাই নীরবে তা, করিছে হজম। দুর্যোধনের আক্রোশে, সকলে অস্থির। আলোচ্য বিষয় হলো, কার কত দম। বিদুর কহিল উঠে, অন্যায় বিচার। যুধিষ্ঠির নিজে হেরে,কি করিতে পারে। খেলার নিয়মে দেখো যে দ্রৌপদী কার? খেলায় নিজেকে হেরে, শর্ত রাখে কারে? পাঞ্চালী একার নয় পঞ্চ পাণ্ডবের। যুধিষ্ঠির একা কেন,বাজি ধরে তারে? দুর্যোধন মহাক্রোশে হয়েছে যে ঢের। কৃষ্ণারে সভায় আনো,ঝাঁট দেবে ঘরে। বার বার দারোয়ান,অসফল হলে। দুঃশাষণ জোর করে,আনে সভাস্থলে।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১৯

 সভাপর্ব-১৯ মামার পাশায় খেলা,অতি অনুচিত । সকলে বুঝিল তাও,প্রতিবাদ হীন- ভীষ্ম দ্রোণ কৃপাচার্য জানে সব রিত নব এই সভা ঘরে ভালোবাসা ক্ষীণ। চলিছে পাশার খেলা, নেশা ভরপুর। যত হারে যুধিষ্ঠির, তত জিদ করে। রাজপাট ধনরত্ন, সব গেল দূর। তবুও জুয়ার নেশা,যেন চেপে ধরে। শর্ত রেখে দ্রৌপদীরে,শেষ খেলা খেলে। শকুনির ক্রুর দৃষ্টি, নানা ছলনায়। দেশ ছেড়ে যেতে হবে, খেলা শেষ হলে। দুর্যোধন দুঃশাষণ, মোহ ললনায়। হায়রে বিধাতা কারে কি দেবে যন্ত্রণা? দেব সৃষ্ট মানুষের, নাই রে ভাবনা।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১৮

 সভাপর্ব-১৮ সভাঘর তৈরী হল,হস্তিনানগরে। বিশাল সে সভাঘরে,খেলার আসর। ইন্দ্রপ্রস্থ থেকে এল,কুন্তী পরিবারে। আপন শহর হেথা, কুন্তীর বাসর।   জুয়ার আসরে বসে কহে দুর্যোধন। ধনরত্ন যত লাগে দেবো আমি সব। আমার হয়ে খেলবে, মাতুল এখন। কৌরবের সভা গৃহে ওঠে কলরব। নিয়মের বিপরীতে, কেমনে সম্ভব? ভীষ্ম দ্রোণ কৃপাচার্য,সম্মতি দিলেন। অসহায় যুধিষ্ঠির, বুঝিলেন সব, বৃথা তর্ক করা হেথা, তাও বুঝিলেন। প্রথম পাশার দান দিলেন শকুনি। প্রথম জয়ের ফল পেয়েছেন উনি।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১৭

 সভাপর্ব-১৭ দ্বিধা দ্বন্দ্ব বিবাদের আয়ু স্বল্পকাল। মতভেদ ভাতৃবর্গে, নিতান্ত ক্ষণিক। কৌরব পাণ্ডব ঐক্য রবে চিরকাল। দুতক্রীড়ার অনুজ্ঞা,কৌলিন্যে বৈদিক। ধৃতরাষ্ট্র কান পেতে,শুনিল ক্ষণিক। চক্রান্তে ব্যকুল পুত্র,কৌতূহল অতি। কহ পুত্র দুর্যোধন, কলির প্রতীক। মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হোক,নাই কোন ক্ষতি। আমন্ত্রণ করে আনো ইন্দ্রপ্রস্থ হতে। আদরে সোহাগে করো,ঋদ্ধ আপ্যয়ন। ত্রুটিহীন আচরণে, খেলো সর্ব মতে। বাজি রাখা,মুক্ত হস্ত, ক্রীড়ার ধরণ। বিদুরের ডাক পড়ে, এমন সময়। সব কথা শুনে কহে,আসিছে প্রলয়।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১৬

 সভাপর্ব- ১৬ অনুমতি দিতে পারে, রাজা ধৃতরাষ্ট্র। দূতক্রীড়ায় হারিয়ে,করিব ভিখারী। রাজপথে পাণ্ডবেরা,হবে দিকভ্রষ্ট। কথা দিলুম শকুনি,তব আজ্ঞাকারী। কেমনে কহিব আমি, পিতার সমীপে। দুর্বোধ্য পাশার ছলে, হেরে যাই যদি, রাজপাট সব যাবে, মরিবো সন্তাপে। সম্মুখ সমর ভালো, যায় যদি গদি। বৃথা কেন ভীত প্রিয়, আমি যে শকুনি। দুতক্রীড়ায় সর্বদা, খ্যাতির শিখরে, শিশু পাণ্ডবেরা এসে,হেরে যাবে জানি। শত্রুর বিনাশ হবে, দেখিবে অচিরে। আমার দ্বারা হবে না,কহে দুর্যোধন। পাশার আসর দিতে, শুনিব বচন?

মহাভারতম সভাপর্ব-১৫

 সভাপর্ব-১৫ দুর্যোধন কহে রোষে জীবন অর্পণে- পাণ্ডবেরে জয় করে,করি দেশ ছাড়া? ইন্দ্রপ্রস্থ জয় করে পাঠাব শমণে। সাজাও সৈনিক দিব, যুদ্ধের মহড়া। এত ভাবি মনে আমি,হবে ভাগ্যদয়। নয়নে বিঁধেছে যেন,দ্রৌপদী পাঞ্চালী। অতুলা ললনা প্রেমে অস্থির হৃদয়। প্রত্যক্ষ করিব তারে, কেমন মরালী। শান্ত হও নিজ গূণে রাখিও গরিমা। সম্মুখ সমরে তুমি  পাইবে না  জয়। ভীষ্ম কর্ণ জয়দ্রথ দ্রোণ অশ্বত্থামা। ছলনায় কেড়ে নিতে,পাশাই আশ্রয়। ভালোবাসে পাশা খেলা,পুত্র যুধিষ্ঠির। পাশার ফ্যাঁসাদে ফেলে,কেড়ে নিও নীড়।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১৪

 সভাপর্ব-১৪ মনের দুঃখে নির্জনে বসে দুর্যোধন। শুকনো মুখে একাকী মনোযন্ত্রনায়- শকুনি মামার কাছে করে নিবেদন, অচিরে পাণ্ডবে তুমি করিবে বিদায়। ছলে বলে কৌশলেও করি অভিপ্রায়  তবু না ডরাতে পারি জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠিরে, কেমনে করিব শেষ করহ উপায়। ভীমার্জুন সহদেব, বাকি পাণ্ডবেরে। অভাব কি আছে ভাগ্নে কহ একবার? শকুনির সব ভ্রাতা তব অনুগত। শত ভ্রাতা বীরশ্রেষ্ঠ, ভীষ্ম মনিহার। অশ্বত্থামা কৃপাচার্য, কর্ণ জয়দ্রথ। একডাকে নিজপ্রাণ বলি দিতে পারে। ধনদৌলত ঐশ্বর্য, রবে একধারে।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১৩

সভাপর্ব-১৩ স্ফটিকের মেঝে দেখে মনে করে জল। বস্ত্র তুলে হেঁটে গিয়ে, হাসির খোরাক। জলের আধারে দ্যাখে,স্ফটিকের তল। পড়ে গিয়ে ভিজিয়েছে,নিজের পোষাক। অট্টহাসি হট্টগোল মহিলা মহলে। কহিল দ্রৌপদী তারে,অন্ধ পুত্র অন্ধ। ওরে অন্ধ,অন্ধরাও সাবধানে চলে। অন্ধের সমক কেন,চোখ রাখো বন্ধ? রাগে ক্রোধে দুর্যোধন,শকুনির সনে। যথা সাধ্য ত্বরা করি,করিল গমণ। প্রতিশোধের আগুন,জ্বলিছে মগনে। ভেসে ওঠে দুইচোখে,মন্দ আচরণ। ওহে বাছা দুর্যোধন দুঃখ কেন মনে? শত্রুর উন্নতি দেখে, জর্জরিত বাণে?

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১২

সভাপর্ব-১২ সুদর্শন চক্র হাতে কহিল শ্রীকৃষ্ণ। হে শিশুপাল একশ পাপ করি মাফ। এবার করিব বধ,কারো আছে প্রশ্ন? নির্বাক নিঃশ্চল সব,করে পরিতাপ। পড়িল শিশুপালের, শ্রীহীন মস্তিষ্ক। শিশুপাল সমাপন,যজ্ঞ সভা মাঝে। প্রবেশিল কৃষ্ণ দেহে,উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। রাজসূয় যজ্ঞ শেষে,শঙ্খধ্বনি বাজে। যজ্ঞশেষে সব রাজা চলে গেল দেশে। রয়ে গেল দুর্যোধন, মাতুল শকুনি। সভাঘরে দুইজনে, ঘুরে ঘুরে দেখে। আহামরি সভাঘর, হলো কানাকানি। স্ফটিকের মেঝে দেখে দুর্যোধন টলে। জল ভেবে বস্ত্র তুলে সাবধানে চলে।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১১

 সভাপর্ব-১১ মহামতি শিশুপাল সভার ভিতরে। ক্রোধ রাগ অপমান করিলা প্রকাশ। বাসুদেব শ্রেষ্ঠ কিসে কহিবে আমারে? যজ্ঞ স্থানে অপমান করিলে হে দাস? শান্তমনে বাসুদেব কহিলেন তারে। পিসতুতো ভাই বলে সদা ক্ষমা করি। একশ পাপের ক্ষমা,কথা ছিল ওরে। তাও পূর্ণ করেছিস,বহুদিন ধরি। শ্রীকৃষ্ণরে কটূকথা কহে বার বার। যজ্ঞপণ্ড করে দেবে এই মনোভাব। নিন্দায় পাণ্ডবগণে মুখ ভরে তার। ভাঙ্গচুর করিল সে,দম্ভের প্রভাব। অদ্ভুত নিরখি সবে বিস্মিত অন্তর। সুদর্শণ চক্রঘোরে,যজ্ঞ সভা ঘর।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১০

 সভাপর্ব-১০ রাজসুয় যজ্ঞ হবে,মহা আয়োজনে। তোড়জোড়ে চারভাই আর যুধিষ্ঠির। নানান দেশের রাজা,এলো নিমন্ত্রণে। হস্তিনার থেকে এলো,মহা ভীষ্ম বীর। ধৃতরাষ্ট্র,কৌরবেরা দিতেছে সামাল। ভীষ্মের চরণধুলি,পড়ে সভামাঝে। শ্রীকৃষ্ণের পিসতুতো ভাই শিশুপাল- শত্রু মিত্র গুণীজ্ঞানী ব্যস্ত সব কাজে। উপহার সামগ্রীও এসেছে অঢেল। লক্ষ লক্ষ লোকজন,মুনি ঋষিগণ। যজ্ঞের অনলে ঢালে ঘিয়ে মাখা বেল। অর্ঘ আপ্যয়নে সবে,করিছে বরণ। উত্তম ব্যক্তিরে দিবো,শ্রেষ্ঠ উত্তমার্ঘ্য কৃষ্ণ বাসুদেবে দাও শ্রেষ্ট  পরমার্ঘ্য।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-৯

 সভাপর্ব-৯ ভীমের সাথে লড়াই করে জরাসন্ধ - পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে,যেন থেমে যায়। সেইক্ষণে কৃষ্ণ কহে যুদ্ধ কেন বন্ধ? দুইপায়ে ধরো ভীম,চিরে ফেলো তায়। শ্রীকৃষ্ণের কথা মত,দুইভাগ করে। যেমনটা জন্মেছিল বীর জরাসন্ধ। দুইদিকে ফেলে দেয়,ডানবাম করে। জরাসন্ধ মরে গেলে যুদ্ধ হয় বন্ধ। বন্দী সব রাজাদের মুক্ত করে দিয়ে। কৃষ্ণার্জুন ভীম সহ ফিরে যায় ঘরে। কারামুক্ত রাজাদের,আসে সঙ্গে লয়ে। উপযুক্ত সম্মানের, ডালি দেয় ধরে। সব রাজা পাণ্ডবের বন্ধু হয়ে যায়। রাজসূয় যজ্ঞ হলো নিয়ম নিষ্ঠায়।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-৮

 সভাপর্ব-৮ ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য সকল স্মরণে। মিত্র নও তুমি,শত্রু ভেবেই এসেছি। কৃষ্ণ আমি পাণ্ডুপুত্র এই দুইজনে। ছদ্মবেশ ধরে মালা চন্দন পরেছি। পাঠাইব মৃত্যু লোকে শপথ নিয়েছি। ক্ষত্রিয় রাজারে বন্দী করে আহাম্মক - বলি দিবি অর্বাচীন, বুঝতে পারছি। ছেড়ে দে ওদের ওরে রক্ষ ভয়ানক। মূর্খ বাসুদেব শিশু এরা পাণ্ডু পুত্র জরাসন্ধ ভীত নয় ওরে প্রতারক। ছদ্মবেশ ছলনায়,তোরা শিশু মাত্র। যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে, হয়েছি ধারক। আয় ভীমার্জুন,দেখি বাহুবল তোর। প্রচণ্ড লড়াই চলে চৌদ্দ দিন ভর।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-৭

  সভাপর্ব-৭ রাজধানী গিরিব্রজ বেষ্টিত পর্বতে। দূর্গম দূর্ভেদ্য তার প্রবেশের পথ। সৈন্যের পাহারা ঘেরা,পাঁচটি পর্বতে। সম্মুখ যুদ্ধের হেথা, নাই কোনো পথ। সন্তর্পণে ছদ্মবেশে,মোরা তিনজন। উঠিল ত্রিমূর্তি সেই চৈত্যক পর্বতে। শৃঙ্গ তার ধ্বংস করে,করিলেন পণ। রাজধানী গিরিব্রজ,নিতে হবে হাতে। স্নাতক ব্রাহ্মণ বেশ, শরীরে চন্দন। যাজ্ঞিক যাজক ঋষি জরাসন্ধ দেখে। অগুরুর গন্ধমাখা, শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ। বিশ্রাম করতে দেয় যজ্ঞালয়ে রেখে। পর্বতের শৃঙ্গ ভেঙ্গে কেন আগমণ। স্নাতক ব্রাহ্মণ তবু এই আচরণ।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-৬

 সভাপর্ব-৬ মনকষ্টে মহারাজ ফেলেন জঙ্গলে। জরা নামক রাক্ষসী দিয়েছেন জুড়ে। আকাশ ফাটানো শব্দে শিশুটি কাঁদিলে দিয়ে গেল সেই শিশু,রানীদের ক্রোড়ে। জরাসন্ধ নাম তার,জরা দিলো তারে। জরাসন্ধে রাজ্য দিয়ে,বনে গেল রাজা। জরাসন্ধ অচিরেই ,রাজ্য জয় করে। মামা কংস বধ করে,দেশ পেল সাজা। হংস ডিম্বকের মৃত্যু,কংসের মরণ। সঙ্গহীন জরাসন্ধ হ্রিংস হলো তাই। সঠিক সময় এলো,করি আবেদন। জরাসন্ধের নিধনে,মোটে কষ্ট নাই। শ্রীকৃষ্ণের আবেদনে,অতি কৌতূহলী। যুদ্ধের উল্লাসে মেতে,পঞ্চত্বে কৌশলী।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-৫

 সভাপর্ব-৫ হে কৃষ্ণ বাসুদেব,কে এই জরাসন্ধ? এত প্রতিপত্তি কেন? প্রথিত  সর্বত্র, হে ধর্মরাজ,মগধ দেশের  অলিন্দ। বৃহদ্রথ রাজার সে একমাত্র পুত্র। পুত্রহীন বৃহদ্রথ, তার দুই  রানী। মনকষ্টে দিন যায় মগধ রাজের। চণ্ডকৌশিক এলেন,প্রচারিতে বানী। নৃপতি কহিল তার,জীবন কষ্টের। আম্রবৃক্ষের তলায় বসিয়া কৌশিক। ধ্যানমগ্ন হলো সবে,কোলে পড়ে ফল। সেই আম খেতে দিবে কহে ঐকান্তিক। আবেগে উচ্ছাসে রাজা,হইল চঞ্চল। দুইরানী ভাগকরে সেই আম খান। দুজনের আধা আধা হইল সন্তান।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-৪

 সভাপর্ব-৪ পুণ্ড্রুক ভীষ্মক পুণ্ড্রু কিরাত করভ। বড় বড় রাজা সব তারই অধীনে। কিছু রাজা পালিয়েছে দেবতা গন্ধর্ভ। হংস,ডিম্বক,দুজন বিশ্ব দেবে এনে। বাসুদেব কহে সব পূর্ব ইতিহাস। মথুরা হতে পালাই,দুজনেই কবে। যুদ্ধে মৃত একজন, সেইজন হ্রাস। একজন আত্মহত্যা,যমুনায় ডুবে। হে মাধব বলে দাও কেমনে মারিব? ছিয়াশী জন রাজাকে বন্দীও করেছে, জরাসন্ধের মরণ কেমনে দেখিব। আরো চোদ্দজন পেলে,বলি দেয় পাছে। ছিয়াশী বন্দীকে যিনি করিবে উদ্ধার। সম্রাট হবেন তিনি,মিত্র হবে তার।

মহাভারতম্ সভাপর্ব -৩

 সভাপর্ব-৩ সভাঘরে নারদের  হলো আগমন। রাজসূয় যজ্ঞ করে,স্বর্গে পাবে স্থান । কহিল নারদ এসে, কহে বিবরণ। সেইমতো যুধিষ্ঠির, শ্রীকৃষ্ণে জানান। রাজসূয় যজ্ঞ করা, না সহজ নয়। পরামর্শ নিতে হবে শ্রীকৃষ্ণের থেকে। তিনি ছাড়া এই কাজে,লাগে বড় ভয়। রাজসূয় যজ্ঞ করে,যাবো স্বর্গলোকে। কৃষ্ণের সম্মতি পেয়ে,যজ্ঞ হলো শুরু। মগধরাজের বাধা, প্রস্তর প্রাকার। জরাসন্ধ পৃথিবীর, শ্রেষ্ঠ  মহাগুরু। দন্তবক্র ভগদত্ত ,মেনে গেছে হার। শিশুপাল সেনাপতি বীর বহ্নিশিখা। বশীভুত সব রাজা, পাষাণ পরিখা।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-২

 সভাপর্ব-২ মহারাজ যুধিষ্ঠির অতি আনন্দিত। এমন একটা করো নাম চারিদিকে। অলৌকিক সভাঘর সুবর্ণ মণ্ডিত। দাও দেখি করে এই,অচিন মুল্লুকে। হাসিয়া কহে দানব,এই মাত্র কাজ। দেবস্বর্গ ইন্দ্রপুরী লজ্জা পাবে দেখে। এমনই সভাঘরে করে দেবো কাজ। রত্নখচিত সুচারু,সম দেবলোকে। অম্বুনিধি রত্নযোগে বিরাজে সভায়। ভ্রম হয় তা দর্শনে সম্মুখে পাথার। কোথাও অমৃতকুম্ভ দেবদেবী খায়। মৃগরাজ সভামাঝে সিন্ধু করে পার। স্বর্গ হতে দেবদেবী সকলে আসিল। সবে মিলে কিছুদিন আনন্দে কাটিল।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১

 সভাপর্ব-১ খাণ্ডব দাহের পরে,যারা বাঁচিলেন। নমুচির ছোট ভাই সে ময়দানব। তক্ষক নাগের পুত্র,নাম অশ্বসেন। চারটি পক্ষী শাবক, বড়ই আজব। অগ্নিদেব বলিলেন,বেঁচে আছো যারা। যাও যাও যেথা খুশি,আপন আনন্দে। যমুনার তীরে এসে,বসিলেন তারা। ময়দানবের যেন, হয় নাগো নিন্দে।   হে অর্জুন কথা দাও,দাও প্রতিশ্রুতি। মরণের হাত হতে, রক্ষা পাই আমি, আদেশ করুন মোরে,করি রাতারাতি। কহে কৃষ্ণ উপকার,প্রতিদানে নমি। বলি দানব কুলের, বিশ্বকর্মা আমি। আমি কি করতে পারি,জানে অন্তর্যামী।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৬০

 আদিপর্ব-৬০ পার্থের গাণ্ডীব এলো,কপিধ্বজ রথ। অক্ষয়তৃণ অস্ত্রের সাথে তৈরী তারা। শ্রীকৃষ্ণের সুদর্শণে পুরে মনোরথ। কৌমুদকী গদা নিয়ে ইন্দ্রে দেবে তাড়া। জ্বলিছে খাণ্ডববন লেলিহান শিখা। দেবদেবী ইন্দ্রসহ প্রতিরোধ করে। কৃষ্ণার্জুনের বীরত্বে,কিছু আছে শেখা। তাদের সাহায্যে অগ্নি ভষ্মীভূত করে। যত পশুপাখি আর জলাশয়ে মৎস্য। এগুলি ভক্ষণে অগ্নি তষ্ট করে মন। সব ক্লেশ দূরে গেল, বলে গেল বৎস্য। বড় খুশি আমি আজ,রব আমরণ। ইন্দ্র অগ্নি খুশি হয়ে দৈব্য অস্ত্র দেবে। চিরস্থায়ী বন্ধু রবে, নামেনাম কবে।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৫৯

 আদিপর্ব-৫৯ শ্বেতকি নামক রাজা যজ্ঞ করে সদা ব্যাবাক বছর ধরে, অগ্নি ঘৃত খায়। খেতে খেতে পেটে তার,সমস্যা সর্বদা। যজ্ঞের ব্রাহ্মণেরাই ছাড়িয়া পালায়। অসমাপ্ত যজ্ঞ দেখে,কষ্ট মনে ভরে। তপস্যায় বসে গেল, নিজেই নৃপতি। আরাধ্য দেবতাশিব তারে তুষ্ট করে। দূর্বাসার আগমনে যজ্ঞের সমাপ্তি। বার বছরের যজ্ঞে, ঘিয়ের আহুতি  অগ্নির উদরে চলে ভীষণ উৎপাত। খাণ্ডব বনের দাহে প্রাণীমাংসে তৃপ্তি। সাত সাতবার ইন্দ্র দিয়েছে আঘাত। দুইজনেই নিরস্ত,অস্ত্র কিছু নাই। সাহায্য করিতে পারি যদি অস্ত্র পাই।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৫৮

 আদিপর্ব-৫৮ অর্জুনের অভিমন্যু সুভদ্রার প্রাণ। পাণ্ডবের পাঁচ পুত্র, দ্রৌপদী দিলেন। প্রতিবিন্ধ্য, সুতসোম,ক্রমে বিদ্যমান। শ্রুতকম্মা শতানীক আর শ্রুতসেন। হাসি খুশি চলিয়াছে,জীবন প্রবাহে। যমুনায় জলকেলি করিছে মেয়েরা, খাণ্ডববনের মধ্যে, কৃষ্ণার্জুন দোহে গাছের তলায় বসে,গল্পে আত্মঠহারা। অতিকায় দীর্ঘদেহী ব্রাহ্মণের বেশে। কহিল ক্ষুধার্ত নয়, ক্ষুধা মন্দা মোর। এই বন খেতে চেয়ে,ঘুরে গেছি শেষে। তক্ষক নাগের বাস,ইন্দ্র বন্ধু ওর। জল ঢেলে মাটি করে,প্রয়াস সদাই। তৃপ্তিটা পেতাম যদি,পোড়া মাংস পাই।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৫৭

 আদিপর্ব-৫৭ সুভদ্রাকে চুরি করে পালাল অর্জুন  দ্বারকায় কলরব করে মহারথী। ঘৃণিত কর্ম করিলি,কেন রে অর্জুন? আদর যত্নের মূল্য দিলে এই ভাতি। সেজে গেল অস্ত্রসস্ত্র,সেজে গেল সেনা। অর্জুনের সব দম্ভ চর্ণ হবে আজ। দ্বারকার মান কেন সে রাখবে না? মূল্য তারে দিতে হবে,দ্বারকার লাজ। অর্জুনের অন্যায়টা দেখিলে কোথায়? জোর করে তুলে নিয়ে বিয়েটা করেছে। ক্ষত্রিয়ের ধর্ম তাও,ভূলে গেলে হায়। গুণবান মহাবীর সুভদ্রা পেয়েছে। যাও যাও নিমন্ত্রণ করো এইবার। ইন্দ্রপ্রস্তে দিয়ে এসো নানা উপহার।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৫৬

 আদিপর্ব-৫৬ চিত্রবাহনের কন্যা  নাম চিত্রাঙ্গদা বিবাহ বন্ধনে বেঁধে,প্রেমের অঙ্কেতে। বভ্রুবাহনের জন্ম দিলো চিত্রাঙ্গদা। খবর পেয়ে শ্রীকৃষ্ণ,নিয়ে গেল সাথে। প্রভাসতীর্থ হইতে রৈবভক শৃঙ্গে দুজনে উৎসবে মাতে আরো কিছু দিন। কৃষ্ণের বোন সুভদ্রা রূপে গুণে রঙে পাগল করিল তারে প্রেম অন্তহীন। কৃষ্ণ কহে ওহে পার্থ কিযে এত দেখো তুমি যা ভাবছ মনে, সেটিতো হবে না। আদরের বোন মোর,লজ্জাটজ্জা রাখো। পছন্দ হয়েছে তারে,মন মানবে না। হে মহাবীর ক্ষত্রিয়, তুলে নিয়ে যাও। বিবাহ করিও তারে, সুখ শান্তি পাও।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৫৫

 আদিপর্ব-৫৫ অর্জুনের বনবাস হইল নিশ্চিত। অসহায় ব্রাহ্মণের করে উপকার, কেমনে পাপের ভাগে,হইল পতিত। শর্ত ভঙ্গ হয় কিসে কহ একবার। যুধিষ্ঠির কহে ভাই, অর্জুন আমার। বনবাসে নাই গেলে,ক্ষতি কিছু নাই। একা তুমি বনবাসে,বারো বর্ষ পার। ভীত তুমি নও জানি,তবু ভয় পাই। বিদায় নিয়ে অর্জুন,গেল দেশ ছাড়ি। ঘুরেফিরে হরিদ্বারে পৌছিল আসিয়া। কৌরব্য নাগের কন্যা, অতীব সুন্দরী। বিবাহ করিল তারে, পরিচয় দিয়া। প্রথম সন্তান তার নাম ইরাবান। উলূপীর প্রিয়পুত্র অর্জুন সমান।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৫৪

 আদিপর্ব-৫৪ পঞ্চপাণ্ডবেরা আর পাঞ্চালী দ্রৌপদী। সুখে তারা বাস করে আপন আনন্দে। একটি বছর করে,পাইবে দ্রৌপদী। পাঁচ ভাই শলা করি থাকে মহানন্দে। অস্ত্রাগারে যুধিষ্ঠির মিলনের কালে। প্রয়োজনে অর্জুনের শর্ত ভঙ্গ হলো। নিরালায় তাহাদের,প্রেমালাপ চলে। অকস্মাৎ ই অর্জুন,সেখানে আসিল। অসহায় ব্রাহ্মণের, বড় অভিযোগ। অর্জুন থাকিতে হেথা,গরু চুরি হলো? অস্ত্রাগারে অস্ত্র নিতে আসিতে দুর্ভোগ। একবর্ষ বনবাস তারে যেতে হলো। যুধিষ্ঠির কহিলেন বৃথা চিন্তা করো। অকারণে আসো নাই তবু জেদ করো।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৫৩

 আদিপর্ব-৫৩ শ্রীকৃষ্ণ বিদুর সহ গেল বলরাম। তাহাদের দেখে তারা আনন্দে আকুল। পঞ্চপাণ্ডবেরে দেখে করিল সুনাম। কাকা বিদুরের মন, বড়ই ব্যকুল। কিছুদিন মহানন্দে কাটিল সেথায়। সকলেরে রথে করে, স্বযত্নে আনিল। অর্ধেক রাজ্যের ভার পাণ্ডবেরা পায়। খাণ্ডবপ্রস্থের বনে, পুরী বানাইল। ইন্দ্রপ্রস্থ নাম তার হলো রাজধানী। দুই রাজ্য দুই জনে হলো ভাগাভাগি। কৃষ্ণ বলরাম মিলে কাটিল বনানী। বাস যোগ্য রাজপাট,হলো তার লাগি। সব কাজ সমাপণ করি ঘনশ্যাম। দ্বারকায় ফিরে যান হলধর রাম।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৫২

 আদিপর্ব-৫২ সভা ডেকে ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন তিনি কহ ভীষ্ম পাণ্ডবদের করিব কি আমি? জীবিত তাদের জেনে ধরে যদি আনি রাজ্য দিয়ে ভাগ করি মন্দ কবে তুমি? অমতের কিছু নাই,কৌরব পাণ্ডব। মোর কাছে দুইজনে,সমান সমান। তাদের ও অধিকার করি অনুভব। নিমন্ত্রণ করে তার,করি সমাধান। পুত্র আর পুত্রবধু কষ্ট পায় ঢের। এইক্ষণে আপনার অনুমতি নিয়ে। পাঞ্চাল নগরে যাব,আনিব তাদের। প্রিয় পুত্র দুর্যোধন, কেন আছ চেয়ে। গৃহহারা রাজ্যহারা স্থান পেয়ে যাবে। সাঙ্গ হবে গৃহযুদ্ধ, লোকে ধন্য কবে।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৫১

 আদিপর্ব-৫১ এদিকে খবর গেছে হস্তিনানগরে। পাঁচভাই কুন্তী সব জীবিত এখনো। দুর্যোধন ক্রুদ্ধ হলো, এমন খবরে। হস্তিনাপুরের দুর্ভোগ,কাটেনি এখনো। ধৃতরাষ্ট্র শুনে কহে, আনন্দের কথা। যাও বিদুর তাদের ডেকে আনো ঘরে। বড় স্নেহ করি আমি, দুর্যোধন যথা। এমন সুবুদ্ধি যেন, মনে থাকে ভরে। বিদুরের কথা শুনে কহে দুর্যোধন, শত্রুর উন্নতি বুঝি বড় মোহময়। বিপদ আসিবে ঘরে,পাবে সিংহাসন। ভাতুস্পুত্রের প্রতি কি এতই সদয়? ওরে পুত্র সুযোধন, বুদ্ধিমান তুমি আদরের নামে তোরে,বৃথা ডাকি আমি?

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৫০

 আদিপর্ব-৫০ দ্রুপদ রাজার মনে চিন্তা ছিল সাথি। কন্যা বুঝি অপাত্রেই হয়ে গেল দান। কারা ওরা স্বয়ম্বরে, ক্ষত্রিয়ের ভাতি। লক্ষ্যভেদে অনায়াসে,যোদ্ধার সমান। তবুও বিবাহ হবে, নিয়ম মাফিক। বরপক্ষে নিমন্ত্রণ দাও ত্বরা করি। নিজেই সহসা বলে, মোরে শতধিক। নিমন্ত্রণ পত্র যাবে মোর হাতে করি। পাঁচভাই একবধু ,দ্রুপদ অবাক। ব্যাসদেব মধ্যেমনি বোঝালেন তাকে। অমতের কিছু নাই,কেটেছে বিপাক। ধুমধামে বিবাহের, দিন রাখো দেখে। দ্রুপদকে বোঝালেন,কৃষ্ণ বলরাম। এ বিবাহে কারো আর নাই বদনাম।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৪৯

 আদিপর্ব-৪৯ পাপের ভাগি হইবে,মিথ্যা হয় যদি। সত্য করি মাতৃ বাক্য,মোরা পাঁচজন। সকলের বধু হতে, হবে যে দ্রৌপদী। কেমনে সম্ভব জ্যেষ্ঠ, কেমন বচন? সেইক্ষণে কৃষ্ণ সহ বলরাম আসে পরিচয় দিয়ে কৃষ্ণ প্রণাম করিল। পিসি কুন্তী হতবাক, এই সর্বনাশে। আমাদের কথা কারা,প্রকাশ করিল। স্বয়ম্বর সভা জুড়ে যা হইল সেথা। বুঝতে কি বাকি আছে হে পঞ্চপাণ্ডব। আগুন কি চাপা থাকে, নদীস্রোত যথা- বহিবে আপন বেগে, করে কলরব। জতুগৃহ দাহ করে, হে পঞ্চপাণ্ডব। বনেবনে ঘুরে ফিরে,হারিয়েছ সব।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৪৮

 আদিপর্ব - ৪৮ একা কুন্তী অপেক্ষায়, পাঁচপুত্র তরে। ভিক্ষার বিশুদ্ধ  অন্ন এখনো আসেনি  কোথা গেল পাঁচভাই,বেরিয়েছে ভোরে। রাক্ষস দানব ঘোরে নেবে প্রাণ খানি। তার ওপর বাদলে ছেয়েছে আকাশ। ঘণকালো মেঘ জমে,কালো ছায়ালোক। বিদ্যুতের ঝলকানি প্রলয় বাতাস। চিন্তায় প্রাণের পাখি, করিছে হুতাশ। সহসা দেখিল কুন্তী ভীমার্জুন আসে। কহিল অর্জুন মাকে, নতুন জিনিস - এনেছি ভিক্ষার ঝুলি,তোমার সকাশে। আমি নেবো না তা,তোরা সবে মিলে নিস। হায় হায় একি হলো,দেখিয়া দ্রৌপদী। পাঁচভায়ে ভাগাভাগি সাধের দ্রৌপদী।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৪৭

 আদিপর্ব-৪৭ অর্জুনেরে মালা দিয়ে চলিল দ্রৌপদী। পিছেপিছে তারসাথে বাকি পাণ্ডবেরা। বিক্ষুদ্ধ ক্ষত্রিয় রাজা হলো প্রতিবাদী। নিমন্ত্রণ করে এনে,অপমান করা। আক্রমণ করে তারা দ্রুপদের বাটি। পাণ্ডবেরা প্রতিরোধ করে অনায়াসে। ভয় পেয়ে ক্ষত্রিয়রা, গেল গুটি গুটি। ব্রাহ্মণের কাণ্ড দেখে, কৃষ্ণ তাই হাসে। বলরাম কহে কৃষ্ণ, বলো এরা কারা? বীর বিক্রমে লড়াই করিল কেমনে? ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে, ক্ষত্রিয় কি এরা? হেসে হেসে কৃষ্ণ কহে, বিধাতাই জানে। ভীম অর্জুন নকুল সহদেব সাথে। যুধিষ্ঠির এসেছেন দ্রৌপদীরে পেতে।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৪৬

 আদিপর্ব-৪৬ অর্জুনের সাথে তার,বিয়ে দেবে বলে, অদ্ভুত ধনুক এক,তোলাই দুঃসাধ্য। ঘুর্ণমান যন্ত্রটার,মধ্যে দিয়ে গেলে, বীরবাহু,লক্ষ্যভেদ করাই অসাধ্য। স্বয়ম্বরে কতরাজা কত পারিষদ। একযোগে চেষ্টা করে দ্রৌপদী পাবার। কৃষ্ণ বলরাম কহে হাতে কোকনদ, ব্রাহ্মণের বেশে বসে,অর্জুন আমার। একে একে সব গেল গুণ পরাতেই। মাথা নিচু করে সব করিল প্রস্থান। কর্ণ ধরিলেন ধনু অতি সহজেই। পাঁচশর উর্ধপানে করিলেন তান। দ্রৌপদী কহিল এসে,করে অভিমান। সুতপুত্রে বরমাল্য করিব না দান।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৪৫

 আদিপর্ব-৪৫ রাজা দ্রুপদের কথা শুনিয়েছি আগে, দ্রোণের প্রতি রাগের কারণে দ্রুপদ- মহাযজ্ঞ করেছিল,অসন্তোষে রাগে। যজ্ঞ হতে জন্ম নিল, জানাই বিশদ। মন্ত্রপুত দৃষ্টদ্যুম্ন, দুহিতা দ্রৌপদী। পাঞ্চাল রাজকন্যার, স্বয়ম্বর হবে। বহুরাজা এসেছেন,তারে পায় যদি। পাণ্ডবরা অবিলম্বে সেইখানে যাবে। রাজ্য নাই,রাজা নয়,ভিখারির বেশে। স্বয়ম্বরে যোগদান করিল পাণ্ডব। পথে তারা যুদ্ধ করে,জয়ী অনায়াসে। গন্ধর্বরাজের সাথে,পাতালো বান্ধব। পাঞ্চালনগরে তারা ভার্গবের ঘরে। ভিক্ষাবৃত্তি করে সেথা, কিছুদিন ধরে।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৪৪

 আদিপর্ব-৪৪ সেইদিনের দায়িত্ব ভীম পেয়ে ছিল। সাথে করে নিয়ে গেল বিশ হাঁড়ি ভাত। বকরাক্ষসের দ্বারে,খেতে বসে গেল। এই কাণ্ড দেখে বক হলো কুপোকাত। কে এই বিশাল দেহি, বকের খাবার। নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে গেলে,এ মহা অন্যায়। দুমদাম কিল ঘুষি, মারে বারবার। ভীম তবু নড়ে নারে, মহানন্দে খায়। যুদ্ধ বাঁধে মহাযুদ্ধ বিজয় ভীমের। তচনচ হয়ে গেল, বনের সবুজ। মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেল,বকরাক্ষসের। জানিল না রাজ্যবাসি,এতই অবুজ। পাঁচভাই  করে কাজ সকল প্রকার। অন্যদিকে স্বয়ম্বর পাঞ্চাল কন্যার।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৪৩

 আদিপর্ব-৪৩ অন্দরে খবর নিতে কুন্তী গেল ধীরে কান্নায় কাতর হয়ে কহিল দম্পতি। বিপদের সীমা নেই আমাদের নীড়ে। বকরাক্ষস হেথায় সকলের পতি। নগর পালক যিনি কাপুরুষ এক। খোঁজ কিছু রাখেনি সে নিজ প্রজাদের। রাক্ষসের খাদ্য দিতে মরেছে অনেক। আজ সেই পালা পড়ে,পাঠাব কাদের? বিষ হাঁড়ি ভাত আর একটা মানুষ। দুটি মোষ দিতে হবে, সঙ্গে প্রতিদিন। কেমনে পাঠাব আমি হইলে প্রত্যুষ। চলে যাবো সব মিলে, ফুরিয়েছে দিন। শুনি কুন্তুী কহে তারে চুপ করো ওরে। ভীম তারে পাঠাইবে, যমের দুয়ারে।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৪২

 আদিপর্ব-৪২ ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে ঘুরে দেশে দেশে শিকার ও ভিক্ষা করে জীবন ধারন। একদিন ব্যাসদেব পিতামহ এসে - কহিলেন সব জানি এহেন কারণ। মঙ্গলার্থে এসেছিনু এই উপবনে। একচক্রানগর এ যাও ত্বরা করি। বসবাস করো সেথা আনন্দ মগনে। নিশ্চিত নীরবে রবে সুখ পরিহরি। পাঁচজনা ভিক্ষা করে,করে যা সংগ্রহ। অর্ধেক পাঁচজনের,ভীমের অর্ধেক। এইরূপে বহুদিন , চলেছে প্রত্যহ। আশ্রয়দাতা ব্রাহ্মণ,দিয়েছে অনেক। একদিন ক্রন্দনের শব্দ শুনে ভীম। বিপদে পড়েছে ওরা রক্ষা করো ভীম।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৪১

আদিপর্ব-৪১ নারী হত্যা মহাপাপ কহে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। ভালোবাসা পাপ নয়,তারে করো বিয়ে। মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হোক, ওগো মোর মাতা। ধুমধামে বিয়ে হবে, মালা গলে দিয়ে। বিয়ে হলো কেটে গেলো বছর কয়েক। ঘটোৎকচ জন্ম নিল, বিশাল শরীর। মানুষে রাক্ষসে মিলে, নতুন বিবেক। নয়া শক্তি নয়া রূপে,কল্পনা বিধির। ঘটোৎকচের বীরত্ব আজও অম্লান। সেই কথা পরে হবে, সঠিক সময়ে। চলে গেল বন ছেড়ে দিয়ে গেল মান। প্রয়োজনে ডাকিবেন কহিল বিদায়ে। হিড়িম্বা রাক্ষসী আর পাণ্ডুপুত্র ভীম। মহাভারতে তাদের,গুরুত্ব অসীম।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৪০

 আদিপর্ব-৪০ সুন্দরী রূপসী কন্যা, দেখিয়া জননী- কহিল কুন্তী তাহারে কেগো তুমি মেয়ে? কোথা হতে আসিয়াছ? নির্জন বনানী। দেবকন্যা বনদেবী, এলে কোন দায়ে? দেবকন্যা নয় আমি রাক্ষসের মেয়ে। হিড়িম্ব রাক্ষস মোর, মাতৃগর্ভ ভ্রাতা। মানুষের গন্ধ পেয়ে,দিলেন পাঠিয়ে। ভক্ষণ করিতে হবে, এই ছিল কথা। মরেছে প্রাণের ভাই,আমি যাবো কোথা? দয়া করো প্রাণনাথ, ভালোবাসি আমি তব পায়ে স্থান দাও, ভেঙে সব প্রথা। ওরে ও দাসী রাক্ষসী, আমি হব স্বামী? মেরেছি হিড়িম্ব এবে,যাবি যমপুরী। উন্মুক্ত স্বাধীন আমি,পায়ে দিস বেড়ি।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৩৯

 আদিপর্ব-৩৯ ভীমেরে দেখি হিড়িম্বা,প্রেমে গেল পড়ে। সুন্দরী কন্যার রূপে, তার কাছে এলো। দুষ্টু রাক্ষসেরা হেথা, ঘোরাফেরা করে। ওহে বীর মহাবাহু,  অন্ধকারে আলো। কে আপনি কোথা হতে এলে বনাঞ্চলে। নিরাপদ নয় হেথা চলো ত্বরা করি। হিড়িম্ব রাক্ষস ভাই, এই খানে এলে- সব যাবে শেষ হয়ে, প্রাণ যাবে ছাড়ি। হিড়িম্বার কথা শুনে হেসে মরে ভীম ভয় নাহি লাগে মোর, কহিলাম আমি। রাক্ষস খোক্ষস হও, কিংবা অশ্বডিম। সহস্র হস্তীশক্তির অধিকারী আমি। বৃথা চেষ্টা হিড়িম্বর  ভীমেরে ভক্ষণ। হিড়িম্বর শক্তি নেই, করিরে দমন।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৩৮

 আদিপর্ব-৩৮ জাহ্নবী জননী দেবী,কহিলেন কুন্তী বহুদূর আসিয়াছ, বহু কষ্ট হেরি। ধন্য আমি ধন্য মোর সন্তান সন্ততি। শতেক যোজন এলে,একা কাঁধে করি। এই দেখো বটবৃক্ষ ছায়া করে দান। এখানে বিশ্রাম করি, এনো ফলাহার। পিপাসার জল এনো,তবে বাঁচে প্রাণ। দিন গিয়ে রাত এলো,হলো অন্ধকার। হিড়িম্ব হিড়িম্বা নামে রাক্ষস রাক্ষসী। বাস করে এই বনে, বহুদিন ধরে। মানুষের গন্ধ পেয়ে,তারা ওঠে হাসি। বিশাল চেহারা নিয়ে হাঁউমাউ করে। জিভে জল এসেগেল তাহাদের দেখে। মজা করে মাংস খাবে,নুন লেবু মেখে।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৩৭

 আদিপর্ব-৩৭ সুড়ঙ্গের পথে চলে,পঞ্চ পাণ্ডবেরা। মাতা কুন্তী সাথে চলে,ধীর পায়ে পায়ে। চারভ্রাতা কুন্তীরেও,কাঁধে রেখে ঘোরা। খালবিল নদীনালা, চলে পার হয়ে । অনাহারে অনিদ্রায়, সকলেই ক্লান্ত। হিংস্র জন্তু জানোয়ার সব আছে বনে। নাই জল ফলমূল, আঁধার দিগন্ত। পিঠে কাঁধে দুইহাতে, কি হবে কে জানে? অসীম সাহসে ভীম,চলে পথ খুঁজে। পিপাসায় বুক ফাটে, খিদেয় অস্থির। বড় কষ্ট হাঁটে ভীম, সব লয়ে নিজে। ভীম তবু হেঁটে চলে, কহে যুধিষ্ঠির। ভীম,এক্ষণে বিশ্রাম দাও একবার। জল আনো পিপাসায়,আর চলা ভার।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৩৬

 আদিপর্ব-৩৬ নীষাদীর পাঁচ ছেলে আর পুরোচণ। সন্দেহ করেনি মোটে চক্রান্তের কথা। জেনেছিল পাণ্ডবেরা,সব বিবরণ। কেটেছিল পুরোবর্ষ, মনে ছিল ব্যথা। সুড়ঙ্গের ভীত কাটে একটি বছর। তার ভেতর আশ্রয় করে পাঁচজন। একদিন নিষাদীনী পেলে অবসর। ছয়জন খেতে আসে পেয়ে নিমন্ত্রণ। পেটপুর্তি খেয়ে তারা,নিদ্রা গেল সুখে। এমনি সুযোগ পেয়ে,পঞ্চ পাণ্ডবেরা- জতুগৃহে অগ্নি দেয়,পুরোচণে রেখে। দাউদাউ করে জ্বলে, নীষাদ পুত্রেরা। পুড়ে মরেছে পাণ্ডব বার্তা গেল দেশে। কুম্ভীরাশ্রু ফেলে সবে,সেই পরিবেশে।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৩৫

 আদিপর্ব-৩৫ বারণাবতের গৃহে, প্রলয়ের ঝড়ে। যাবে প্রাণ জেনে তবু,চলে যুধিষ্ঠির। পাঁচভাই মাতা সহ,অম্বেষণ করে। কোথা পাবে সুখশান্তি,হইল অস্থির। হৃদয়ের সব ক্ষোভ,ছেড়ে দিলো মন। অগণিত বাজী ফাটে,সেই সন্ধ্যা কালে। আলোয় আলোয় রাঙ্গা,মেলার প্রাঙ্গণ। আনন্দ তরঙ্গ ডঙ্কা বাজে মেলাস্থলে। আনন্দের জতুগৃহে,ভীম মহারোষে। বৃথা কেন প্রাণ দেবো,একি আচরণ। চলো যাই ফিরে সব,আপনার দেশে। সম্মুখ যুদ্ধের আজ,আশু প্রয়োজন। যুধিষ্ঠির বলে ভাই,শান্থ হও প্রিয়। গৃহমধ্যে আছে দেখো,খাদ্য উপাদেয়।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৩৪

আদিপর্ব-৩৪ আনন্দেই আত্মহারা পুত্র দুর্যোধন। গোপনে বিশ্বাসী মন্ত্রী,ডাকি পুরোচনে। বারণাবতের পথে,করহ গমন। কাঠগালাচর্বি দিয়ে,গৃহ গড়ো বনে। আরাম দায়ক হবে,সুন্দর আবাস। লোকে দেখে বলে যেন মহামুল্যবান। আদর যত্নের জন্য,রেখো ভালো দাস। পঞ্চপাণ্ডবেরা সব, জেনো মেহমান । কিছুদিন সুখে হোক,জীবন যাপন। কুন্তীর মনে ধরুক,পাড়ার আসর। শহর নগর হোক,তাদের আপন। অনলে পুড়িয়ে মারো,ঘরের ভিতর। বারণাবতের কথা,বলিল বিদুর। সব শুনে যুধিষ্ঠির,হাসে ভরপুর।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৩৩

 আদিপর্ব-৩৩ ধৃতরাষ্ট্রের বাসনা প্রলুব্ধ প্রলাপ। সব পাবে দুর্যোধন,উত্তর পুরুষ। ভয় তার পিতামহ ভীষ্মের প্রতাপ। মনোরথ মনোবাঞ্ছা,দেখিবে প্রত্যুষ। বারণাবত সুন্দর,করিল প্রচার। উৎসবে মুখর সেথা,মধুর আবেশ। শিবের পুজায় সদা রাত্র করে পার। ফলেফুলে ভরা রাজ্য,পূজিত দুর্গেশ। পঞ্চপাণ্ডবের মনে কৌতূহল জাগে নতুন দেশের কথা, জানিবার তরে। ধৃতরাষ্ট্র কহে শোনো যাও আগেভাগে। শিবরাত্রির মেলায় যদি মন ভরে। অভিসন্ধি বুঝে কহে,জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠির। পাঁচভাই মিলে যাবো,হওনা অস্থির।

মহাভারতম্ আদিপর্ব-৩২

 আদিপর্ব-৩২ একটি বছর গেল, গুরুদক্ষিনায়- যুবরাজ যুধিষ্ঠির ভীমার্জুন সহ। রাজ্যজয় করে তারা,সীমানা বাড়ায়। পাণ্ডবের পরাক্রম ক্রমশ প্রবাহ। তাহা দেখে ধৃতরাষ্ট্র,বোঝে পরিনাম। মন্ত্রী কণিককে ডেকে,কহিলেন তিনি। দিনেদিনে পাণ্ডবের প্রচুর সুনাম- আর যে সহে না মন,বলিতে পারিনি। মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র,এখন কি করা? ঘোষণা হয়েছে দেশে,যুধিষ্ঠির রাজা। প্রজারাই সর্বশ্রেষ্ঠ,ভবিষ্যত তারা। যুধিষ্ঠির রাজা হলে,খুশি হবে প্রজা। বৃহৎ চক্রান্ত এক  সংগঠিত হলো। মূর্তিমান দুর্যোধন কেবল প্রফুল্ল।

মহাভারতম আদিপর্ব-৩১

 আদিপর্ব-৩১ নতজানু দ্রুপদের,দর্প করে চূর্ণ। কহে দ্রোণ বাল্যবন্ধু,তুমি দোষী বটে। ক্ষমা দিয়ে পূনরায়, বন্ধুত্ব সম্পূর্ণ। রাজা তুমি রাজা আমি,ভাগ নদীতটে। দক্ষিনে তোমার রাজ্য,আমার উত্তরে। মূক ও বধির যেন, দ্রুপদ সম্রাট। মনে মনে ফন্দি কষে, বধিবে সত্বরে। হাতি ঘোড়া ধনরত্ন,ভাগে আঁটসাঁট। ধৃতরাষ্ট্র যুধিষ্ঠিরে,করে যুবরাজ। দুর্যোধন ক্রুদ্ধ হয়ে,করে আন্দোলন। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার পুত্ররা,হবে মহারাজ। কনিষ্ঠ ভ্রাতার পুত্র,রাজা কেন হন? শকুনির ফাঁদে পড়ে দুর্যোধন বক্র। মায়ার পাশায় খেলে,শকুনির চক্র।

মহাভারতম আদিপর্ব-৩০

 আদিপর্ব-৩০ অঙ্গরাজ্য করে দান,মিত্র দুর্যোধন। অধিরথ আনন্দেতে আলিঙ্গন করে। চিরস্থায়ী বন্ধু হলো কর্ণ দুর্যোধন। আনন্দ মুহূর্তে তার অশ্রু ঝরে পড়ে। ভীম কহে কর্ণ তুমি,ঘরে যাও ফিরে। পিতার আদর খাও,নাও রাজ্য ভার। বৃথা কেন প্রাণ দেবে,অর্জুনের তীরে। বীরত্বে অর্জুন শ্রেষ্ঠ, হয়েছে বিচার। রঙ্গভূমি ভঙ্গ দিয়ে দ্রোণাচার্য দেখে। যুদ্ধবিদ্যা শেষ তবে,দক্ষিণা যে বাকি। দ্রুপদ রাজাকে আনো আমার সম্মুখে। সেটাই দক্ষিণা হবে, কে পারবে দেখি? কৌরব পাণ্ডব দুয়ে যুদ্ধ করে শেষে। দ্রুপদ রাজারে আনে ভিখারির বেশে।

মহাভারতম আদিপর্ব-২৯

 আদিপর্ব-২৯ হুঙ্কারে ডঙ্কারে কাঁপে,রঙ্গভূমি সব। কোন বীর আছে হেথা রাজপরিবারে? যুদ্ধে কি পরাস্ত মোরে করিবে পাণ্ডব? নাকি কৌরব পাণ্ডব,মেনে নেবে হারে। দ্রোণাচার্য কৃপাচার্য বুঝেছিল ঠিক। কৌশলে কাটাতে হবে সময় এখন। যুদ্ধ করিতে যে চাও বুঝিলাম ঠিক কৌরব পাণ্ডব হেথা,করিবে না রণ। কহ তব বংশকুল বলো পরিচয়। কোন রাজবংশে তব জন্ম প্রিয়বর। রাজায় রাজায় যুদ্ধ হইবে নিশ্চয়। মাথানত করে কর্ণ,কাঁপিছে অধর। মহাবীর কর্ণ সেযে,সুতপুত্র জাত। লজ্জায় মস্তক তার হয় অবনত।

মহাভারতম আদিপর্ব-২৮

 আদিপর্ব-২৮ ভীষণ গর্জনে আসে মহাবীর কর্ণ। পরশুরামের শিষ্য,অধিরথ পুত্র। কবজকুণ্ডল বুকে দানবীর কর্ণ। সারথির পুত্র তবু তার অন্য গোত্র। কুন্তীভোজ কন্যা সতী,কুন্তী তার নাম। দুর্বাসার সেবা করে, মন্ত্র শক্তি পান। চপল বালিকা কুন্তী মন্ত্রে পরিনাম। কুমারীর পুত্র হলো, সূর্যের সমান। লোকলাজে সেই পুত্রে ভাসাইল নদে। ফুটফুটে শিশু পেল সারথি দম্পতি। ধৈর্য্যেবীর্যে শক্তিমান, অভাব সম্পদে। জানিল না বীরকর্ণ, তার মাতা কুন্তী। জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব সে,তবু করেনি আপন। বীরত্বের উপহার দিলো দুর্যোধন।

মহাভারতম আদিপর্ব-২৭

 আদিপর্ব-২৭ গুরুশিষ্য নদীজলে স্নানে ছিল ব্যস্ত। স্নানের আমোদে তারা অতিশয় মগ্ন দ্রোণাচার্যের হাঁটুতে কুমির সে মস্ত- কামড় দিয়েছে কষে, সকলে উদ্বিগ্ন। বাঁচাও বাঁচাও বলে দ্রোণাচার্য ঋষি চোখের নিমেষে অস্ত্র তুলেছে অর্জুন। পঞ্চতীর দিয়ে তারে মুক্ত করে আসি টুকরো টুকরো করে, কুমিরে অর্জুন। ব্রহ্মশির নামে এক অস্ত্র করে দান। সার্থক সে অস্তগুরু মনের আনন্দে- নানাবিধ পরীক্ষায় পেয়েছিল মান। সর্বশ্রেষ্ঠ বীর তার আপন অলিন্দে। রঙ্গভূমির উল্লাসে কাঁপিছে হস্তিনা। কর্ণ নামে মহাবীর আরো একজনা।

মহাভারতম আদিপর্ব-২৬

 আদিপর্ব-২৬ অর্জুনই শ্রেষ্ঠবীর এই ধরাধামে। নানাবিধ অস্ত্রসস্ত্রে ভীষণ নিপুণ। দুর্যোধন গদাযুদ্ধে পরাজিত ভীমে। নকুল সহদেবের খড়্গ যুদ্ধে গূণ। রথ চালনায় দক্ষ জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠির। নীতিধর্মে মহাজ্ঞান অতীব ধার্মিক। দ্রোণপুত্র অশ্বত্থামা গুপ্ত অস্ত্রে বীর। তীরন্দাজ অর্জুনের লক্ষ্য ছিল ঠিক। সকলের চোখে ছিল শুধু ভাসপক্ষী। অর্জুনের চোখে পড়ে,শুধু নীল চোখ। মনিবিদ্ধ করেছিল,সব ছিল শাক্ষি। হিংসায় জ্বলছে ভাই,শকুনির লোক। কুটিল শকুনি খেলে,কুচক্রীর পাশা। তার মনে এতবিষ করেনি প্রত্যাশা।

মহাভারতম আদিপর্ব-২৫

 আদিপর্ব-২৫ দ্রোণাচার্যের শিষ্যরা কহিল তাহারে সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা যদি অর্জুনই হয়- এ তবে কোথা হইতে এসেছে নজরে? রক্তপাতহীন মুখে শব্দ নাহি কয়। একগোছা তীর মুখে কেমনে পশিল। যিনি এই একলব্য বীর শিরোমনি। দ্রোণাচার্য গুরু বলে, কেন সে বলিল? গুরুদেব এইশিক্ষা এখনো পাইনি। সব শুনে দ্রোণাচার্য আশ্চর্য বিস্মিত। তার শিষ্য সেই তারে দেখেনি এখনো। জিগ্যাসিল ত্বরা করি, কে হে অনুগত। দক্ষিণা না দিয়ে বৎস অস্ত্রশিক্ষা কেন? অভিমানে ভরা এই সাজানো সংসার। বৃদ্ধাঙুলি কেটে দিয়ে চুকিয়েছে ধার।

মহাভারতম আদিপর্ব-২৪

 আদিপর্ব-২৪ হিরন্যধনুর পুত্র জঙ্গলের  পার। একলব্য একমনে অস্ত্রশিক্ষা করে। অস্ত্র চালনায় তার জুড়ি মেলা ভার। একমনে একান্ত সে গুরু পুজা করে। মৃত্তিকার মূর্তি গড়ে,তীরধনু নিয়ে- দ্রোণাচার্যের নিকটে শিক্ষা নাই হলো। মূর্তিরে গুরুর পদে অধিষ্ঠান দিয়ে- সর্বদা অভ্যাসে তার, লক্ষ্য খুঁজে পেলো। একদিন কুকুরের ভীষন চিৎকার। একলব্য শব্দ শুনে তীর ছুঁড়ে মারে। বিন্দুমাত্র রক্তপাত হয়নি যে তার। কুকুরের ঘেউ ডাক শুধু বন্ধ করে। তাই দেখে পাণ্ডবেরা অবাক হইল। অর্জুনের থেকে বীর কেমনে আসিল।

হে মানব

 হে মানব দেবপ্রসাদ জানা ০২.৭.২০২২ হে মানব,রথের দড়ি টেনে দেখো একবার। সময়ের সোপানে পদপিষ্ট সত্যকে - মুষ্টিবদ্ধ করো হে মানব, সময়ের স্রোতের পাক খেতে খেতেই, ঈশ্বরের সারথি হতে হবে তোমাকে। পথের আবর্জনা গুলোকে  মনের বাতাসে -উড়িয়ে দাও। দেখবে সমাজের গম্ভীর কালো অন্ধকার, তোমার পাশে নেই আর। মাটির নিভৃতে ধূলো হয়ে জমে ছিলে, ঘুমিয়েছিলে যে অনন্ত বছর, প্রতীক্ষায় ছিলে যে সুন্দর পৃথিবীর - মহাপ্রলয়ের আগেই তাকে পেয়ে গেছো হাতে। মুষ্টিবদ্ধ দড়িটার গায়ে যদি রক্ত লেগে যায়। সেই রক্ত জেনো ঈশ্বরের। প্রজন্মের পর প্রজন্ম - যে কলেবরহীন রথ টেনে চলেছ  গন্তব্যে পৌঁছতে পারোনি সহজে- দেখবে সেই রথ ও তুমি অনায়াসে, পৌঁছে দিয়েছ গন্তব্যস্থলে। আজ ঈশ্বরের রথের দড়িটা, তোমার মুষ্টিবদ্ধ হোক একবার, তুমি অবয়বহীন মায়া - তোমার আত্মার হৃদয়ে নক্ষত্র হয়ে থাকবে।

মহাভারতম আদিপর্ব-২৩

 আদিপর্ব-২৩ ভীষ্মের সমীপে সব করিল বর্ণন। দ্রুপদের অপমান করেছি হজম। প্রতিশোধ নিতে ক্রোধ করেছি দমন। দারিদ্রের পরিহাসে রেগেছি বিষম। ওহে দ্রোণ প্রতিশোধ সব হবে পরে। অস্ত্রশিক্ষায় শিক্ষিত করিও ব্রাহ্মণ। কৌরব পাণ্ডব যেন, সব অস্ত্র ধরে। আজ হতে অস্ত্রগুরু, দাও হে বচন। অস্ত্রশিক্ষায় শিক্ষিত,কৃপাচার্য দ্রোণ। কৌরব পাণ্ডব তায়, পারদর্শী হলে- কৌরবের সঙ্গে হলো,শক্তি প্রদর্শন। দুর্যোধন শকুনির ছল তবু চলে। অর্জুনের কৃতিত্বের তুলনা হয় না। সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা তিনি,বিশ্ব ভুলবে না।

মহাভারতম আদিপর্ব-২২

 আদিপর্ব-২২ অতিশয় অপমানে ভরদ্বাজ পুত্র রাগে ক্ষোভে চিত্ত তার হলো বৈশ্বানর। স্ত্রী পুত্রের হাত ধরে, ঘোরে যত্রতত্র। হস্তিনায় আসে তারা প্রতিজ্ঞা কঠোর।   কৌরব পাণ্ডব খেলে বীটা লয়ে ঘিরে। পড়ে যায় সেই বীটা কূয়ার ভিতর। কিছুতেই সেই বীটা তুলিতে না পারে। তাই দেখে দ্রোণ হাসে, পড়িলে নজর। ওহে,ক্ষত্রিয় হয়েও পারো না তুলিতে। ওটি আমি তুলে দেবো যদি খেতে দাও। প্রতিদিন খেতে পাবে,পারো যদি দিতে। যুধিষ্ঠির কহে তারে, যখন যা চাও। তীরধনু নিয়ে বীটা নিমিষে তুলিল। অবাক হইল তারা ভীষ্মকে বলিল।

মহাভারতম আদিপর্ব-২১

 আদিপর্ব-২১ ভরদ্বাজ মনিপুত্র আচার্য্য দ্রোনের- অস্ত্রশিক্ষা হলে পরে,খ্যাতি হলো তার। অত্যন্ত দরিদ্র তিনি, নিত্য অভাবের- মাঝে কাটে তার দিন, কে দেবে আহার? শিশুকালে অস্ত্রবিদ্যা করে এক সনে দ্রুপদ নামক বন্ধু, ছিল অন্তরালে। দ্রুপদ হয়েছে রাজা,শুনেছিল কানে। বলেছিল অর্ধরাজ্য,দেবে রাজা হলে, পাঞ্চালরাজের কাছে গেল সেই ক্ষণ। দারিদ্রতা দূরে যাবে, আশা মনে নিয়ে- পরিচয় দিল তারে, আমি বন্ধু দ্রোণ। আশায় এসেছি রাজা,পরিবার লয়ে। শুনে রাজা ক্রুদ্ধ হন কেহে তুমি দ্রোণ। আমি রাজা তব বন্ধু  হব কি কারণ?

মহাভারতম আদিপর্ব-২০

 আদিপর্ব-২০ পেটপুরে ভীমসেন মহাভোজ খায় আদরেআদরে তিনি হয় শক্তিশালী  দশ হাজার হাতির বল হাতপায়। আটদিন পরে ঘুম ভাঙ্গে মহাবলি। স্নান করে খেয়েদেয়ে ঘরে ফিরে চলে। আনন্দে কহিল ভীম, গল্প গৌরবের। শকুনিমামাই তারে জলে দেয় ফেলে। সাথে ছিল একশত ভাই,কৌরবের। সাবধানে থেকো সদা মনে রেখো সব। ষড়যন্ত্র আরো হবে, এই পরিবারে। সিংহাসন রাজপাট, পাইবে পাণ্ডব। হিংসা বিবাদ দহন, কে দমন করে? না জানার ভান করে থাকো সদা সনে। অস্ত্রশিক্ষা নাও সব, নিয়ন্ত্রিত মনে।

মহাভারতম আদিপর্ব-১৯

 আদিপর্ব-১৯ প্রমাণকোটি হইতে ফেরিল পাণ্ডব। ভীম নাই সাথে ওরে,কারো মনে নাই। কহে কুন্তী যুধিষ্ঠিরে তোরা এলি সব ভীমটারে ভুলে গেলি,কারো মনে নাই? বাছা মোর কোথা আছে,কেযে বলে দেবে? কোনখানে নিদ্রা গেছে, কি জানি কখন। কোন কীটের দংশনে,কি ক্ষতি না হবে। না জানি দুর্যোধনেরা, করে কি তখন। ঘরশত্রু মহাশত্রু বিজ্ঞ লোকে কয়। আত্মভোলা পুত্র মোর কোথা আছ তুমি? ফিরে এসো একবার মনে বড় ভয়। কি জানি কি বিপদের বার্তা পাই আমি। হে বিদুর খোঁজ করো একবার তারে। বাছা মোর প্রাণ বুঝি,দেয় অনাহারে।

মহাভারতম আদিপর্ব-১৮

 আদিপর্ব-১৮ হাতে পায়ে দড়ি বেঁধে,ফেলে নদী জলে। চলে গেল ভীমসেন,পাতালের দেশে। শক্তপোক্ত ভীমসেন সাপের জঙ্গলে। তার চাপে মরে সাপ,কেউ মরে পিসে। নাগকুল ক্রোধবশে আরো বিষ ঢালে। বিষে বিষে বিষক্ষয়, চেতনায় ভীম। ভয়ে সব নাগকুল, বাসুকিরে বলে। ত্বরা আইল বাসুকী,ক্রোধ পরিসীম। বাসুকি দেখিল চেয়ে, এযে তার নাতি। ওরে ওরে দেখো চেয়ে,নাতি যে আমার। শূরসেন নাতি তার,ভীম তার নাতি। এরে কে মারিতে পারে,সাধ্য আছে কার? আদর যতন হলো,ভীমের অশেষ। দশ ঘড়া অমৃতের,কুম্ভ হলো শেষ।

মহাভারতম আদিপর্ব-১৭

 আদিপর্ব-১৭ প্রমাণকোটি নামক খেলিবার স্থানে। কৌরব পাণ্ডব খেলে নানাবিধ খেলা। শৈশব চপল ভীম সকলে তা জানে। ভীমের স্বভাবে সবে কষ্ট হয় মেলা। যুধিষ্ঠির বড়ভাই, ছোটো দুর্যোধন। তাই নিয়ে নানা গোল,দুজনের সনে। যুধিষ্ঠির রাজা হবে, বলে জনগন। হিংসায় কৌরব মরে শুধু অকারণে। দুর্যোধন বিষ দিল ভীমের খাবারে। বোকাভীম মোটাভীম পেটুক অত্যন্ত। বিষপাত্রখানি খেয়ে দিল খালি করে। জলক্রীড়া শেষ করে হলো পরিশ্রান্ত। সুখনিদ্রা দিলো ভীম রইল না বোধ। সেই ফাঁকে দুর্যোধন নিল তার শোধ।

মহাভারতম আদিপর্ব-১৬

 আদিপর্ব-১৬ অসংখ্য বীরের যিনি জন্মপ্রদায়িনী। মহারত্নরূপে খ্যাত দেশদেশান্তর। শতপুত্র যার সেই গান্ধার নন্দিনী। তরুণ অরুণ ভাতি, জ্বলে নিরন্তর। কৌরব পাণ্ডবে প্রীতি রসের সাগর। ভীষ্মের তত্ত্বাবধানে দিন কাটে বেশ। সরসী সরিৎ সিন্ধু শেখর সুন্দর। কন্দরে কন্দরে ফোটে কুসুম অশেষ। কৌরবে পাণ্ডবে মিলে,খেলা করে সদা। যুধিষ্ঠির জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা, সদা তৎপর। ধর্মকর্ম আভিজাত্য বংশের মর্যাদা। সব যেন তার মাথে, করছে নির্ভর। বড় দুষ্টু ভীমসেন  পেটুক ভীষণ। গুরুকুলে সকলেরে করেছে দমন।

মহাভারতম আদিপর্ব-১৫

 আদিপর্ব-১৫ দাসীপুত্র বিদুরের ধর্ম জ্ঞান ভালো। আকাশের মত তার মনোরম মন। মনে হয় দেহজুড়ে,মোহনীয় আলো। রূপে গুণে মনে হয়,শান্ত উপবন। গান্ধার রাজার কন্যা,যুবতী গান্ধারী। স্বয়ম্বরে পাণ্ডু পেল,কুন্তিভোজ কন্যা। দ্বিতীয় বিবাহে পেল, মদ্রকন্যা মাদ্রী  বিদুর বিবাহ  করে, দেবকের কন্যা, অন্ধের ঘরণী তাই, চোখ বেঁধে নেয়। এমনি সোনার মেয়ে,সুচারু গান্ধারী। সুরলোক দেবলোক ধন্যবাদ দেয়। শতপুত্রের জননী, হইল গান্ধারী। যুধিষ্ঠিরই বংশের প্রথম সন্তান। দেবতার বরে কুন্তী পাঁচপুত্র পান।

মহাভারতম আদিপর্ব-১৪

 আদিপর্ব-১৪ বিচিত্রবীর্য্যকে রাজা,করলেন ভীষ্ম। কাশীরাজের কন্যারা ছিল তিনজন। তিনজনকেই তুলে এনে ছিল ভীষ্ম। অম্বা,অম্বালিকা আর অম্বিকা কাঞ্চন। ভীষ্মের বীরত্বে তাই, জনগণ খুসী। বিপদ হইল এক, সত্য হলো ফাঁস। অম্বা কহে শাল্বরাজে আমি ভালোবাসি। স্বয়ম্বরে মালা দিব, ছিল অভিলাষ। চলে গেল অম্বা সেই শাল্বরাজ ঘরে। বিচিত্রবীর্য্যের গলে,তারা মালা দিলো। দুই রানি দৈবযোগে পুত্র লাভ করে। ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ তাই,পাণ্ডু রাজা হলো। দাসীপুত্র বিদুরের জন্ম হলে পরে। জ্ঞানে গুণে দাসীপুত্র ঘর আলো করে।

মহাভারতম আদিপর্ব-১৩

 আদিপর্ব-১৩ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইতে যেই জন পারে। ভীষ্ম নামে খ্যাতি তার হইবে তখন। দেবদেবী স্বর্গ হতে পুষ্প বৃষ্টি করে। ধন্য ধন্য করে দেয়,অমূল্য আসন। সন্তুষ্ট হলেন পিতা কহেন তাহারে। হে নিষ্পাপ পুত্র মোর আশির্বাদ করি। ইচ্ছামৃত হবে তব, এই চরাচরে। যতদিন খুশি দেখো,এই বিশ্ব ঘুরি। সত্যবতী শান্তনুর দুই পুত্র হয়। কনিষ্ঠ বিচিত্রবীর্য্য জ্যেষ্ঠ চিত্রাঙ্গদ। হাসিতে খুসিতে বড়,হয় পুত্র দ্বয়। শান্তনুর মৃত্য হলে,রাজা চিত্রাঙ্গদ। গন্ধর্বরাজের সহিত ঘোর যুদ্ধ করে। চিত্রাঙ্গদ মারা যায় অল্পদিন পরে।

মহাভারতম আদিপর্ব-১২

 আদিপর্ব-১২ সহে না পিতার কষ্ট দেবব্রত ভাবে। দাসরাজার তনয়া প্রত্যাখ্যান করে? সাহস তার মন্দ না এক্ষণেই যাবে। পিতাপুত্রী দুইজনে আনবে সে ধরে। কহে রাজা,বীরপুত্র,শর্ত কহে তারা সত্যবতীর সন্তান,রাজপাট পাবে। উত্তরাধিকারী হবে, সেই সন্তানেরা। তব রাজ্য তাহাদের সব দিতে হবে। পিতার আক্ষেপ তার মনে লাগে ভারি প্রতিজ্ঞা করিল হেথা, বীর দেবব্রত। সব ত্যাগ করে যাবে,এই রাজ্য ছাড়ি। উত্তর পুরুষ তার, হবে না বিব্রত। বিবাহ করিবে না সে,প্রতিজ্ঞায় বদ্ধ। রাজার সুরক্ষা পরে,থাকিবে আবদ্ধ।

মহাভারতম আদিপর্ব-১১

 আদিপর্ব-১১ দিনেদিনে শান্তনুর বাড়ে মনে কষ্ট। দেহমন দুই যেন নিজ হাতে নেই। চোখের নিচে কলঙ্ক দেখা যায় স্পষ্ট। দূর্বল শরীরে আর কোন জোর নেই। এইভাবে দিন যায় দেবব্রত দেখে। জিগ্যেস করিবে কিছু ভাবে দেবব্রত। সাহস হয়নি তার পিতার সম্মুখে। সব যেন হঠাৎ ই করেছে বিব্রত। সাহস সঞ্চার করে তারে জিজ্ঞাসিলে। কহ পিতা কোন রোগে আক্রান্ত শরীর। কবিরাজ বৈদ্য ডাকি,অনুমতি দিলে। কহে রাজা পুত্র তুমি, হোয়ো না অধীর। রোগ নয় ভালোবাসা নাম সত্যবতী। দাসরাজার দুহিতা,দেয়নি সম্মতি।

মহাভারতম আদিপর্ব-১০

 আদিপর্ব-১০ দাসরাজের সমীপে কহিল শান্তনু বিবাহ করিব  তব পালিতা কন্যারে অনুমতি করিলেই বাজাইব বেণু। কহ রাজা কি করিলে মোরে দেবে তারে। হাসিয়া কহিল নৃপ,আনন্দের কথা রাজরানী হবে জানি সত্যবতী মোর। প্রথম সন্তান হবে এ দেশের মাথা। কি পাইবে সত্যবতী কত পাবে জোর? কথা দাও সত্যবতী, তার পুত্রকন্যা। ভবিষ্যতে রাজা হবে, সহজে সরলে। ঝগড়া বিবাদ বিনা থাকে মোর কন্যা। তাহার প্রতি অন্যায় করিব না বলে। প্রত্যাখ্যান পেয়ে রাজা বিসন্ন বদনে ফিরে গেল মনকষ্টে ক্ষোভ লয়ে মনে।

মহাভারতম আদিপর্ব-৯

 আদিপর্ব-৯ যুবরাজ দেবব্রত  অষ্টাদশ বর্ষী। মহীধর শৃঙ্গধর  বহ্নি শিখা ঊর্মি। শাস্ত্রজ্ঞ বেদজ্ঞ যুদ্ধে শাস্ত্রে পারদর্শী। আজানু লম্বিত বাহু,প্রাংশু ও সংযমী। সদা শান্তি দেশভর আনন্দে শান্তনু। আকাশে বাতাসে ধ্বনি,জয় জয়কার। এত শান্তি,এত সুখ হেরিল শান্তনু। হৃদয়ের সব ব্যথা মুছে গেল তার। একদিন মহারাজ  নদীধারে হেরি, সুগন্ধি ফুলের গন্ধে আকুল ক্ষিতীশ। নদীধারে তরী পরে পরমা সুন্দরী। কে তুমি সুন্দরী?আমি হস্তিনা নরেশ। দাসরাজ কন্যা আমি, সত্যবতী আর- পিতার আদেশ করি,যাত্রী পারাপার।

মহাভারতম আদিপর্ব-৮

 আদিপর্ব-৮ এক্ষণে এই শিশুর পালনের তরে সঙ্গে লয়ে যাব আমি কিছুটা সময়। সময় ফেরত দেবো এই পরিবারে। যাও তব রাজকার্য বেশ পড়ে রয়। মনকষ্টে শান্তনুর আঁখি ছলছল। বহুকষ্টে মনটারে মুষ্টি গত করে। সামান্য আলোক মনে তাই মনবল- পুত্র পাবে প্রত্যাশায় বুক বেঁধে ঘোরে। একদিন গঙ্গাতীরে দেখিল শান্তনু- গঙ্গার জল শুকিয়ে গেছে একেবারে। ভূলোকের সব জল শুষে নিল ভানু? কেমনে এমন হলো এই চরাচরে? অতি সুন্দর বালক শরক্ষেপ করে। গঙ্গার জলের স্রোত অনায়াসে ধরে।

মহাভারতম আদিপর্ব-৭

 আদিপর্ব-৭ পাপিষ্ঠা তোমার ভয় নেই কি পাপের, সাতটা দুধের শিশু জলে দিলে ফেলে? বলো না নিজের শিশু কি অভিশাপের? এ যে হৃদয়ের ফুল, অকালে ঝরালে? হাসিয়া কহিল গঙ্গা রুষ্ট হও কেন? তোমারে বলেছি পূর্বে,এমন বাসনা। দেবকার্য্য সাধনের তরে এই জেনো। জহ্নুকন্যা গঙ্গা আমি,দিয়েছি বেদনা। বশিষ্ঠের অভিশাপে আট অষ্টবসু মানব জন্ম নিতেই,দিয়েছিল বিধি। সাত বসু চলে গেছে বাকি অষ্টবসু দ্যো নামক বসুদেব বেশি অপরাধী। দ্যো রবে অনেকদিন মানবের রূপে দেবব্রত নাম লয়ে,এই মর্ত দ্বীপে।

মহাভারতম আদিপর্ব-৬

 আদিপর্ব-৬ আমি আপনার রানী,হব এক শর্তে। যাহা করি,প্রতিবাদ করিবে না মোটে। প্রতিবাদ করিলেই  থাকিব না মর্তে। সেই শর্ত মেনে নিলে রানী হব বটে। সৌন্দর্য্যে আকুল রাজা,শর্ত লয় মেনে। রাজধানী আলো করে,বিবাহে উল্লাস। সুখশান্তি সবদিকে, দেখে জনে জনে। সন্তান সম্ভবা হলে, আনন্দে উচ্ছ্বাস। প্রসবের পরে গঙ্গা,দুধের শিশুরে- গঙ্গার পবিত্র জলে,বিসর্জন দিলে- শান্তনুর বুক ফাটে,কহিল আহা রে। প্রতিবাদ করে নাই,চোখ ভরে জলে। এক এক করে সাত,পুত্র গেল জলে। অষ্টম পুত্রের বেলা গঙ্গা গেল চলে।

মহাভারতম আদিপর্ব-৫

 আদিপর্ব-৫ শান্তনুর রূপ গুণে জুড়াইল চোখ রাজ্যভার তারে দিয়ে বানপ্রস্তে যায়। মহারাজা প্রতীপের জয় জয় হোক। কুরুবংশের গৌরব দিকে দিকে ধায়। মৃগয়া করিতে গিয়ে দেখিল শান্তনু একাকিনী বিচরণ,করে গঙ্গা তীরে মনে মনে কহে রাজা কি রূপ হেরিনু। পরমা সুন্দরী কন্যা,ভীষণা গঙ্গারে। রূপের পসরা দেখে কহিল শান্তনু। বিবাহ করিতে চাই,চপলা চঞ্চলা। অনুমতি দাও গঙ্গে,প্রিয়তমা জানু। বিবাহে সম্মতি দিতে,চায়নি অবলা। অবলা নয় সে কন্যা,অতীব কঠোর। শর্ত দিয়ে বেঁধেছিল,তাহার অধর।

মহাভারতম আদিপর্ব-৪

 আদিপর্ব-৪ সূর্যবংশে মহাভিষ নামে ছিল রাজা। বিধাতার অভিশাপে মর্তে আসে ফিরে। মহারাজা প্রতীপের পুত্র রূপে সাজা। শান্তনুর জন্ম হয়, এই চরাচরে। একদিন গঙ্গাতীরে প্রতীপের কোলে বসিলেন হেসে হেসে মাতা গঙ্গাদেবী কহিলেন হে রাজন মালা দেবো গলে আপন করিয়া লহ আমি যে জাহ্নবী। কুলশ্রেষ্ঠ মহামতি কুরুবংশ কয়। কহিলেন মাতাগঙ্গা বসিয়াছ যেথা ডান উরু পুত্রকন্যা পুত্রবধু পায়। কহ কন্যা কিরকমে কব প্রেম গাথা। পুত্রবধু রূপে এসো লব স্নেহভরে। পুত্রলাভে তপস্যায়, চলিল উত্তরে।

চোখের কালি

চোখের কালি দেবপ্রসাদ জানা ২৫.৬.২০২২ তোমার চোখে আগুন দেখেছি তোমার চোখে ফাগুন দেখেছি। আজ দেখেছি চোখের কোণে কালি। তোমার চোখের তারায় অহংকার। কী করে বোঝাবো তোমাকে।  ভালোবাসার লাল গোলাপটা আজ কালো- মনের গভীরে যা ফোটে নিয়মিত - তোমারই চোখের কোণে, অতি সন্তর্পণে। নিশীথনী তোয়ধর নাচে তব চোখে। আকাঙ্ক্ষার  মহীধ্র শিখরে ভাসে - জমাট বাঁধা পয়োমুক, তোমার ঘণ কালো কেশরাশি, কতবার চোখ রেখে কেটে গেছে নিঝুম সময়।  অথচ হৃদয় ছুঁয়ে দ্যাখো - বারবার তোমার ভেতরে বেজেছি আমি। বাঁশির মতো নীরব অভিমানে।  আক্ষেপ,তোমারই মতো কেউ বোঝেনি  অভিযোগ করিনি আমি, কারোর কাছে, বলিনি যন্ত্রণার কথা। শুধু ভালোবেসে গেছি স্নিগ্ধ অন্ধকারে। নিজেকে ছুঁয়ে দেখেছি  উষ্ণতাহীন। তোমার চোখের কোণে কালি দেখেছি গোপন অনুভবে।  হে প্রেম! হে নিঃশব্দ ভালোবাসা- তুমি কথা দিতে পারোনি,ব্যথা দিয়েছ বারবার। হে আশ্চর্য প্রেরণা আমার-বয়ে চলো- রক্তনালি বেয়ে উদগ্রীব আত্মসমর্পণে। 

মহাভারতম আদিপর্ব-২

 আদিপর্ব-২ ব্রহ্মার আদেশ মেনে গাহিলেন গান। শ্লোকের অর্থ গণেশ বুঝিলে লেখেন। কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন তবে অবসর পান। পরের শ্লোক বলেন,গণেশ লেখেন। একলক্ষ শ্লোক লেখা করিলেন শেষ। আদিপর্ব দিয়ে শুরু আঠারোটি পর্ব। স্বর্গারোহণ পর্বের গুরুত্ব বিশেষ। নরক দর্শন করে পেয়েছিল স্বর্গ। ধর্মের লড়াই হবে,আদি থেকে অন্ত। ভায়ের রক্তে রক্তিম,হবে কুরুক্ষেত্র। কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন মুনি কহেন বৃত্তান্ত। প্রথমে পড়েন তাহা ব্যাসদেব পুত্র। মহাভারতের কথা অমৃত সমান। দেবপ্রসাদ লেখেন মহা পূণ্য গান। চলবে......

মহাভারতম আদিপর্ব-৩

 আদিপর্ব-৩ রাজা দুষ্মন্তের পুত্র রাজেন্দ্র ভরত। বহু রাজ্য জয় করে হন চক্রবর্তী। হস্তিনানগর গড়ে পোরে মনোরথ। তাঁরই বংশের রাজা নাম তার হস্তী। আলোচ্য সেই বংশের যত পাত্রমিত্র হস্তীর পরে  নরেশ হয়েছিল কুরু। কুরু তপস্যা করেন স্থান কুরুক্ষেত্র। সেইস্থানে একদিন যুদ্ধ হবে শুরু।  সপ্তম পুরুষ যিনি নৃপতি প্রতীপ। ধার্মিক স্বজ্জন নৃপ,সূর্যবংশ জাত ক্ষিতিপতি মহীপাল রাজা প্রজাধিপ। একদিন গঙ্গাতীরে ধ্যানে উপনীত। পরমা সুন্দরী কন্যা গঙ্গা রূপবতী। আলোক রঞ্জিত করে অন্ধকার রাতি।

মহাভারতম আদিপর্ব-১

 মহাভারতম  দেবপ্রসাদ জানা  আদিপর্ব-১ নৈমিষারণ্যে শৌনক,করে মহাযজ্ঞ। বারোটা বছর ব্যাপি চলে উৎসব। সেইক্ষণে সেইখানে এলেন মনোজ্ঞ। লোমহর্ষণের পুত্র সৌতি অনুভব। দেশান্তর হতে আসে যজ্ঞ সভাস্থলে। দৈবজ্ঞ বেদাজ্ঞ ঋষি কহিলেন তিনি। দেখিনু জনমেজয় ,সর্পযজ্ঞে স্থলে। শুনেছি দ্বৈপায়নের মহাকাব্য খানি। আদেশ করেন যদি বলি এই ঘরে। শুনাইব মহাকাব্য,মহান ভারতে। 'মহাভারত' নামেই,খ্যাতি চরাচরে। কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাস কহিছে নিভৃতে। মনেমনে শ্লোক লিখে কহিছেন তিনি। গজানন একমনে চালান লেখনী।

দুর্বাসার কাণ্ড

 দুর্বাসার কাণ্ড দেবপ্রসাদ জানা ১৫.৬.২০২২ ১ মুদ্গল ঋষির কথা, বলে বেদব্যাস। বনবাসী পাণ্ডবেরা, উপদেশ শোনে। ধৈর্য্য রক্ষার বানীই, কহে বেদব্যাস। জ্যেষ্ঠ পাণ্ডবের মন, রয় সেই পানে। উঞ্ছবৃত্তি করে শিল, মহর্ষি মুদ্গল। শস্যদানা জমি হতে, করিয়া সংগ্রহ। পাকা গম পাকা ধান, জমিতে অচল। কুড়াইয়া দিন তার,  হয় অতিবাহ। শিলোঞ্ছবৃত্তি করেন, তবু খ্যাতি তার। একদ্রোণ শস্য তিনি, করেন সংগ্রহ। পনের দিনের পর, করেন আহার। তার থেকে কিছু শস্য, বিলোন প্রত্যহ। অতিথি সৎকার করে, পৌর্ণমাস যাগ। কৃচ্ছতার মুল লক্ষ্য, রাগ রোষ ত্যাগ। ২ দেবদেবী গণ এলে,প্রসাদ পেতেন। দেশব্যাপী খ্যাতি পেল,মহর্ষি মুদ্গল। দেবরাজ ইন্দ্র এসে অতিথি হতেন। চারিদিকে থেকে এল অতিথির দল। আশ্চর্য ক্ষমতা এক পেলেন মুদ্গল। যতই আসুক অতিথি,ফুরোয় না অন্ন। শতাধিক অতিথিতে, করেনি দূর্বল। তিতিক্ষা ও ঈর্ষামুক্ত জীবনের জন্য। দুর্বাসা ঋষির কানে এলো যেই দিন। ঈর্ষান্বিত হলো তিনি,সেই কথা শুনে। তার থেকে নামি হবে? বড়ই কঠিন।  পাগলের মত হয়ে গেল সেইক্ষণে। হুঙ্কার দিয়ে ডাকেন,হে মুদ্গল ঋষি। অশিষ্ট দুর্বাসা ডাকে,দেখো দ্বারে আসি। ৩ মুণ্ডিত মস্তক আর, কটূ কথা মুখে। তীক্ষ্ণ ...

ভাঁজে ভাঁজে

 ভাঁজে ভাঁজে দেবপ্রসাদ জানা বিসন্নতার পাথর নিয়ে নবজন্ম সুখস্মৃতি ঘোরে ফেরে দৃরত্ব মেলায়। বুকের রূদ্ধতা ভেঙ্গে মিলেছিল কর্ম ভেতরে ভেতরে বোধ বিসন্ন ডানায়। ভিজে কাপড়ের মত নিঙড়েছি মন, রোজই শুকোতে দিই,ঝকঝকে রোদে তবু কষ্টেরা চুঁইয়ে পড়ে কিছুক্ষণ - ফোঁটাফোঁটা জমা হয় অমূল্য সম্পদে। বাসি কাপড়ের মত রোজ সকালের- ছেড়ে দেওয়া কাপড়,সোনা রোদ খোঁজে। সাবুর মাড় দেওয়া নীল উজ্জলের - টানটান ইস্ত্রি করা,প্রতি ভাঁজে ভাঁজে। কনকনে শীতকালে কুয়াশায় ভিজে। বেচারা মনটা বুঝি কষ্ট পায় লাজে।

চরিত্র হনন

চরিত্র হনন দেবপ্রসাদ জানা ১১.০৬.২০২২ ভেতরে ভেতরে জেগে উঠি নাড়া খেয়ে, কে যে বন্ধু?কে যে শত্রু বুঝতে পারছি? না বুঝতে পারছি না, বিপন্ন বিস্ময়ে। ঘুন পোকার কামড়ে,খোঁকলাই হচ্ছি। কলঙ্কের কালি কেন,শূন্যের চরিত্রে ? সূর্যাস্তের পরে রাতে, বিক্ষত পাঁজরে। অলক্ষ্যে ঘাতক পাখি,অচলা নক্ষত্রে - আঘাত হানিছে কেন,রাতের আঁধারে? কে তুমি গোপনে করো,চরিত্র হনন। কলঙ্ক বন্ধু কলঙ্ক, তুমি যে দিয়েছ- তুমি তো সজাগ চিত্তে,করেছ ধর্ষণ। কেনইবা শেষরাতে ,আঘাত হানিছ। জনেজনে ক্ষণেক্ষণে,করিছে বিচার। খেরোর খাতায় মরে,লেখনী আমার।

অপেক্ষায়

 অপেক্ষায়  দেবপ্রসাদ জানা তুমি অপেক্ষায় থেকো মা  যে শ্মশানের পথ ধরে তুমি, চলে গেছ একদিন - পুরাতন শরীর খুলে নতুন শরীর পোরে নিতে, সাদা কালো মেঘের  মতো, উড়ে উড়ে আকাশের পথে, আমি অপেক্ষায় আছি মা  সেই স্নিগ্ধ পাখিটার মতো, আশ্বিনের কাশবন পেরিয়ে, আবেগে। পূর্ণিমার রাতে,জোছনা মেখে, সাদা ঘোড়ায় চড়া পরীর হাত ধরে, চলে যাবো একদিন এ দেহ ছেড়ে। তোমার আহ্বান পেয়েছি আমি, পলাশবনে লাল ফুল নিয়ে হাতে,  শরৎ উৎসবের আলো চোখে ভরে, অফুরান প্রেম সঙ্গীত মনে বন্দী করে  স্নিগ্ধ ধানের শিষ সবুজের পথ দিয়ে চলে যাবো আমি তোমার কাছে। তুমি অপেক্ষায় থেকো ইছামতী নদীর ধারে, প্রশান্ত বাতাস খেতে খেতে, সাত সমুদ্রের জলে, নীল কুয়াশায় ঢাকা  ভোরের আলোয় ভালোবেসে। গাঙের চিলের ঠোঁটে বন্দী হয়ে, না পাওয়া ভালোবাসা,আর বুকে রাখা বেদনার নির্যাস, সব রেখে চলে যাবো আনন্দে। তোমার কাছে, তুমি অপেক্ষায় থেকো মা।

গন্ধ পাচ্ছো?

 গন্ধ পাচ্ছো?  গন্ধ পাচ্ছো?  কাঠ ফাটা রোদ্দুরে,দরিদ্র কৃষক? বাঁচার চৈতন্যে প্রতিধ্বনিময় রৌদ্রাক্ত মাঠে। হয়তো হিংসার আগুনে কোনো প্রতিবেশী, নয়তো স্বামী পরিত্যক্তা ননদ- বিষাদের গ্লানি মেখে, স্বপ্নের উদ্দাম রোদ্দুরে পুড়ছে।  পুড়ছে আমার কলম,তোমার কলমে আঁচে। গন্ধ পাচ্ছো? আমি গন্ধ পাচ্ছি - মনে হয় মাংস পোড়া গন্ধ, নয়তো চামড়া পোড়া, ধানের ক্ষেতে,ফাঁকা মাঠে কোথাও - ধর্ষণের পরে অবলা নারীর দেহ জ্বলছে। হয়তো তার গন্ধ। শ্মশানে কাঠের আগুনে,ইলেকট্রিক চুল্লিতে। কিছুতো একটাতো জ্বলছেই  আমি গন্ধ পাচ্ছি, কারো হৃদয় জ্বলছে বেদনার আগুনে, কেউ হয়তো কলঙ্কের আগুনে জ্বলছে। কোনো বধু শ্বশুর বাড়িতে পণের আগুনে- রান্নাঘরে কেরোসিন ঢেলে জ্বলছে। কারো মন জ্বলছে কামনার আগুনে, বিছানায় দম্পতি সন্ধেহের আগুন পুড়ছে। কেউ হয়তো পরকীয়ার আগুনে জ্বলছে। আমি গন্ধ পাচ্ছি।  কেউ চিতায় তুলে দিয়েছে সদ্যজাত সদ্য মৃতশিশু,  নয়তো কন্যা ভ্রূণ জন্মের আগে- ক্ষুধায় পুড়ছে নাড়ি, ভালোবাসায় পুড়ছে যুবক পুড়ছে কামনার শরীর, কিছুতো একটা জ্বলছেই আগুনের হল্কা এসে লাগছে গায়ে।

পিপাসা

 পিপাসা  দেবপ্রসাদ জানা প্রথম প্রেম হোক বা প্রথম চুম্বন  হৃদয় গভীরে ভাসে উন্মত্ত আবেশ। অলক্ত আরক্ত প্রভা স্নেহ-আলিঙ্গন প্রথম চুম্বন স্মৃতি হর্ষ পরিবেশ।    মানব জীবনে যাহা শান্তি-প্রস্রবণ। কত প্রেম কত আশা,স্নেহ ভালবাসা,   বিরাজে তাহায় নেশা,অপার্থিব ধন। মোহিনী পুলক জাগে, মনের পিপাসা।    যত সুখ আলিঙ্গনে যত আকুলতা- যত হাসি,তত ব্যথা কটাক্ষের জোরে। ব্যাকুল প্রাণের কথা প্রেম বিহ্বলতা। প্রীতি সম্ভাষণে মুক্তি রাতজাগা ভোরে। সে চুম্বন,আলিঙ্গন, প্রেম-সম্ভাষণ,   উন্মত্ততা, মাদকতা ভরা অনুক্ষণ,  

কি আছে?

 কি আছে দেবপসাদ জানা একদিন ঝরে যাব,পালকের মত। উড়ে যাব নিশ্চয়ই হালকা বাতাসে। ফুটপাতে পড়ে রব বুকে নিয়ে ক্ষত। অকারণ প্রত্যাখ্যাত হইব প্রশ্বাসে। অনায়াসে পদতলে মাড়িয়েছে সবে শুভ্রঅঙ্গ জুড়ে ধুলো,আপন বিশ্বাসে- ঢেকে দিয়ে শুদ্ধ মন কলঙ্কে জড়াবে। প্রয়োজন হীনতায়,ভুগি দীর্ঘশ্বাসে। অনুষ্ণো বেদনা জমে তবু পড়ে থাকি অনির্বাণ অনুগ্রহে হৃদ জ্বলে যায়  পিপাসা আকৃষ্ট করা বারি ধরে রাখি। ভয় হয় কোনদিন মন কিছু চায়। অতৃপ্ত পিপাসু মন ডাক পাড়ে তারে। পড়ে থাকা পালকের কি আছে অন্তরে?

পরাজয়

 পরাজয় দেবপ্রসাদ জানা পরাস্ত হয়েছি আমি, মরণের কাছে। সব আশা আকাঙ্খায়,উষ্ণ বারি ঢেলে, জীবনের মনগড়া,যত প্রেম আছে, স্বপ্নের বৃষ্টিরা এসে,ধুয়ে নিয়ে গেলে।  জল জমে,কাদামাটি খানাখন্দে স্থিত। আকাশ বিস্ময়ে বলে আরো বৃষ্টি চাই? কাদামাখা জীবনের কলঙ্কেরা ধৃত। চারিদিকে শুধু মেঘ আলো কিছু নাই। একদিন দেখি তারে,অমল প্রতূষে। ঘুম ভেঙ্গে জানালায়,মুখের উপর । স্বাদ হল,মুছে ফেলি,দোষী যত দোষে। তৃপ্তির আহার্য খাদ্য,মনের ভিতর।   ইতিহাস হয়ে যায়,ব্যথা জেগে ওঠে।   নীল পাথরের তেজ, বিচ্ছুরিত বটে।   

কৃষ্ণ কর্ণ কথা

 কৃষ্ণকর্ণকথা  দেবপ্রসাদ জানা ১ কহ কৃষ্ণ বাসুদেব, মোর কোন দোষে? মাতা মোরে ফেলেদিলে জনমের কালে  সদ্যজাত, এক শিশু নদীজলে ভাসে। হতভাগ্য অবোধের, জন্ম পাণ্ডু কুলে। রানি কুন্তী মোর মাতা সূর্যের ঔরসে। কুমারী বয়সে মাতা, সেকি মোর দোষ। সুতপুত্র বলে কেন, লোক এবে হাসে। কি দিলে বিধাতা মোরে এত কেন রোষ। মহাগুরু দ্রোণাচার্যে অহঙ্কার ঢের। শিক্ষা দিতে গররাজি হয় সেইক্ষনে। যত শিক্ষা গুরুদেব পরশুরামের। অভিশাপ হেনে কহে,লুপ্ত প্রয়োজনে। হায় কৃষ্ণ কিযে করি সম্মুখে অর্জুন। ভ্রাতা সে কনিষ্ঠ জানি করি কি বলুন। ২ কহে কৃষ্ণ ওহে কর্ণ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে। ধর্মের স্থাপন হবে, ধর্ম যুদ্ধ করে। অভিমান আছে জানি পাণ্ডব বিরুদ্ধে। কটু কথা বলে তুমি দোষ দেবে কারে? রাজপুত্র হয়ে জন্ম অন্ধ কারাগারে। লালন পালন করে, গোয়ালিনী মাতা রাক্ষস খোক্ষস কত, প্রাণ নিতে পারে আপন মামাই শত্রু, লিখিল বিধাতা। বলো কর্ণ,কার কাছে,করব নালিশ? আপনার বলে কেউ ছিল নাযে সেথা। নিজের সামর্থ্য বলে,জীবনের বিষ। হজম করিতে হলো, হৃদয়ের ব্যথা। কুন্তী কিবা পাণ্ডবের দোষ কারো নয়। সকলি অদৃষ্ট কর্ণ, জয় পরাজয়। ৩ যুদ্ধক্ষেত্রে রথচাকা ভূমিতে বসিল। অর্জুন গান্ডিব ...

আয়রে জামাই

 আয়রে জামাই দেবপ্রসাদ জানা আয়রে জামাই দিল খোলা। লকডাউনের মনচলা। আম কাঁঠালে ডুববি আয়। শ্বশুর বাড়ি,কোন সে গাঁয়। মাছ মাংস ছোলার ডাল। পেট পুরে খাবি কাল। শালাশালি, ঘরবালি। শ্বশুর বাবার ব্যাগ খালি। হাতে নিয়ে ফর্দ নামা। কিনতে হবে প্যান্ট জামা। ধুতি পোরে স্কুটি করে। মাছ মাংস ঝোলা ভরে। সাত সকালে সুজি লুচি। সঙ্গে দেবে বোঁদে কুচি। আড়াই প্যাঁচ, রসে ডোবা। গরম গরম আনবে বাবা। শাশুড়ি মাথার ঘোমটা ধরে। নাইটি ওপর শাড়ি পোরে। ভীষণ গরম,ভীষণ গরম। শাশুমাতার আসবে শরম। শ্বশুর বাড়ির জামাই আদর। বিছানায় পড়বে নতুন চাদর। পাশ বালিশে হেলান দিয়ে। পাশে একটি শালি নিয়ে- গল্প গুজব হবে বেশ। রাজনীতি আর পরিবেশ। সিনেমা হলে নতুন বই। KGF বা পুষ্পা সই।  কোনো শালির বিয়ের কথা উঠবে সেদিন মিঠা মিঠা। ছাড়ানো লিচু হাতে নিয়ে। আসবে মা ঘোমটা দিয়ে। মিষ্টি খেয়ে মুখ নষ্ট। ঝাল খাবে,বলবে স্পষ্ট। দু-দুটো বছর পরে। নতুন জামাই আসল ঘরে। গলা কাঁঠাল ভুল করে। এনেছে জামাই গোটা ধরে। বলবে শ্বশুর,বলতে আমায়। কাঁঠাল পেকে আছে মাচায়। চায়ের পরে চা হবে। পেট ফেঁপে বেলুন কবে। পত্যাঞ্জলির হজম ওলা। টক ঢেকুরে জ্বলবে গলা। ঠান্ডা জলে জলজিরা। আছে সাথে পুদিনহারা...

বোমারু

 বোমারু দেবপ্রসাদ জানা হঠাৎ যদি আমি না থাকি?  আর তুমি যদি আমাকে ভুলতে না পারো, যদি এই স্বল্পদীর্ঘ জীবনের, আজ শেষ দিন হয়। নীরবে,নিভৃতে,নিঃশব্দে,একান্তে - নশ্বরতার ভিতরে-নশ্বর হয়ে যাই আমি,  তখন অশ্রু জমা হবে তোমার হৃদয়ে। আমার বরফে ঢাকা শরীরটা- যখন চিতার আগুনে জ্বলবে চোখের সামনে, তোমার হৃদয়কে দগ্ধ করবে? ভিতরে ভিতরে টের পাবে মৃদু দহন? মনে পড়বে? তোমার ভালোবাসার কৃষ্ণ চুড়ায় যারা বাসা বেঁধেছিল- তারা সব পরিযায়ী পাখি।  ক্ষনিকের জন্য আসে, আবার চলেও যায়। আজ কেন কাঁদবে তুমি অন্তরে? বোবা কান্নায় ভেঙে পড়বে নীরবে- চুরমার করবে তোমার স্বপ্ন গুলো। আমার জীবনের সিংহভাগই ছিল তোমার জন্য, আদৌ কি বুঝেছিলে তুমি? কতটা ভালোবাসা ছিল এই হৃদয়ে। তোমার ভালোবাসায় উন্মাদ আমি, বলছিলে পাগল নাকি? আমাদের ঐ ভালোবাসার জবা গাছটায় একটা লাল ফুল ফুটেছে,  যে গাছটা জঞ্জাল বলে কেটে ফেলে দিয়েছ তুমি, আমি সেটা আবার বসিয়েছি - আমার ছোট্ট বাগানে,হৃদয়ে বাগিচায়। আমি যে গ্রহচ্যুত প্রাণী,  বোমারু আঘাতে আমি বিচ্ছিন্ন বিবর্ণ। তবু আমি ভালোবাসি এখনো।

কেন অপেক্ষায় থাকি

 কেন অপেক্ষায় থাকি দেবপ্রসাদ জানা ৩.৬.২০২২ কেন অপেক্ষায় থাকি প্রতিবার?  দেখছ না হলুদ ঘাসের ওপর পড়ে আছে সদ্য মৃত গোলাপের ফুল।  পতঙ্গেরা ঘিরে ধরেছে। প্রতিরাতের শেষে, মৃত্যু আসে - পাপড়ি ঝরে যায়। শুকিয়ে যায়। পড়ে থাকে অনাদরে, সব গোলাপের ঠাঁই, ফুলদানিতে, বইয়ের পাতায়,কবিতার খাতায় হয় না। আদরে আনা প্রেমের প্রতীক,  অনাদরে পড়ে থাকে টেবিলের নিচে। হলুদ ঘাসের ওপর। লাল গোলাপের মৃত্যু !  সোনালী সুতোয় বাঁধা তার দেহ,  রাঙতা কাগজে কাঁটা গুলো ঢাকা, চিরবন্ধন ছিন্ন করে কাল রাতেই,  খোলা পাপড়ি,হাওয়া ঘোরে দূরে-দূরে, ফুলকে সমীহ করে,সূর্যাস্তও থমকে থাকে, আমার বাগানে এক অগ্নিময় - ফুল ফুটে আছে আজ,  তুলে নিয়ে সৌন্দর্য প্রতিষ্ঠা করি, ফুলের পবিত্রতা দিয়ে, তারে আপন করি, তার সৌরভে মন ভরি আনন্দে,  সব কুসুমের জীবন-চরিত তুচ্ছ।  তবু  প্রতীক্ষায় থাকি প্রতিদিন। আরো একটি নতুন গোলাপের, তার মৃত্যুর অপেক্ষায়।

ঝড়

 ঝড় দেবপ্রসাদ জানা কেউ কি শুনেছ,কারা করে কলরব?  সার্থক নীরবতায়, নাকি অভিমানে। কেবলই গর্জে সেথা হিংস্র পশু সব,  বৃক্ষচ্যুত পুষ্পপত্র,মৃত্তিকার টানে। বৃক্ষের পল্লব খসে,পড়ে যায় সেথা। বরষার বারি সনে,মিশে যায় ভূমে। ভয়েতে সুন্দরী পুষ্প,বলে নারে কথা। অধর পাপড়ি স্পর্শে,অনুভবে চুমে। নীরবে কাঁদিছে পক্ষী,চাতকের বারি। ঘোর সঙ্কটে পৃথিবী,ভয়ঙ্কর বানী। আকাশের পথে ক্রমে,কালো মেঘ ঘেরি। কাননে অমনি ওঠে, বজ্রপাত ধ্বনি। সহসা উঠিল ঝড়, ত্রাহী বনস্থলী। মহাগদাপ্রভা হাঁকে,চকিতে বিজলী।

চন্দ্রকলা

চন্দ্রকলা দেবপ্রসাদ জানা উচ্ছাসে উন্মাদনায়,উষ্ণ রিপুগুলি। তমিস্রা রজনী মাঝে,ব্যাপিল ধরণী,  শীতল জোছনা আঁকে,জোনাক রঙ্গলি। একাকিনী আত্মমগ্ন,বসিলা রমণী। আঁধার আকাশে জ্বলে,তারা মিটিমিটি। চাঁদ গেছে কৃষ্ণপক্ষে,অচেনা প্রদেশে। অন্ধকারে গিরিরাজ,ধুসর  করোটি। দুর্গম কান্তার কাঁদে,অন্ধকারে এসে। আমাকে আবৃত করো,শুদ্ধ স্পর্শ দিয়ে। অলৌকিক চন্দ্রপ্রভা, রূপালী প্রশান্ত । চাঁদ এলো ত্বরাকরি,আমন্ত্রণ পেয়ে। রাতের আঁধার লাজে,দেখে চন্দ্রকান্ত। আহা মরি চন্দ্রকলা,পৃথিবীর দেহে। জোছনার প্রেম জাগে,ধরিত্রীর মোহে।

আমি চৌঁত্রিশ

 আমি চৌঁত্রিশ দেবপ্রসাদ জানা তোমরা কি জানো? সতের বছর আমি ঘুমিয়েছিলাম। হ্যাঁ ঠিক তাই,কোন ভাববাচ্যে নয়। একেবারে সত্যি। একদম সত্যি। আমি একান্ন পেরিয়েছি?হিসাব করে দেখো। প্রতিদিন আট ঘন্টা ঘুমিয়েছি। একান্ন থেকে সতের বাদ দাও। এখন আমি মাত্র চৌঁত্রিশ। চুলে পাক ধরেছে, মুখে পড়েছে ভাঁজ। শরীরের চামড়া কুঁচকে গেছে। চোখের নিচে কালি। চোখের তারায় অন্ধকার আসছে। চশমার ডান্ডিটা কানে ব্যথা দেয় প্রত্যহ। তবু আমার মনে প্রেম জাগে, পকেট থেকে বেরিয়ে আসে প্রেমপত্র। নীল খামে গন্ধ মেশা মুখ বন্ধ খাম। পাঠযোগ্য স্মৃতিচিহ্ন হয়তো নেই, তবু প্রেম আসে মনে, কবিতায়। শুকনো গোলাপ পাওয়া যায় কবিতার খাতায়। গোলাপের মৃতদেহে তার গায়ের সুবাস পাই। স্মৃতিরা লুকিয়ে পড়ে, কোনো এক কোষে।  কিছু মনে পড়ে কিছু হারিয়ে যায় নিজেই। স্মৃতিরা বড় উচ্ছৃঙ্খল।  আকাঙ্খার বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে একদিন - বুকের ভেতরে জন্ম দিয়েছে প্রেমের নদী। ভালোবাসার সন্ধিতে প্রেম অপুষ্টিকর। আমার চৌঁত্রিশে। তার চোখের আগুনে পুড়ে - মিশে যাই আঁধার আকাশের তারার মাঝে। আগুনের ওপরে হাঁটি প্রতিদিন, তবু প্রেম এসে ধরে, আকুতি মিনতি করে। ভালোবাসতে চায় লাল গোলাপ হাতে। ব্যাধের ম...

নদী

 নদী দেবপ্রসাদ জানা ১ প্রলয়ঙ্করী ভীষণা ভৈরবী সুন্দরী। প্রগলভা প্রবলা পদ্মা ভাগীরথী। পদ্মাগঙ্গা তরঙ্গিনী তৃস্তা ও কাবেরী। সাগরের প্রিয়তমা,অয়ি চিরসাথী।    দিগন্ত বিস্তৃত তব কল্লোলিনী হাসি। তরঙ্গিয়া উদ্বেলিয়া দৃপ্ত অব্যাহত।   দুর্নমিত,রুদ্রবেশি সীমাহীন নিশি। হে গম্ভীর দামোদর নিত্য অসংযত। অবহেলে অবজ্ঞায় ভাঙো নদীতীর।   উর্বর করিছ মহি, গ্রাসিয়া নগর। অন্তহীন মূর্ছনায় আন্দোলিত শির। ঝঙ্কারিয়া রুদ্রবীণা,ভাঙিয়াছ ঘর। প্রসন্ন কখনো তুমি, একান্ত নিষ্ঠুর। দুর্বোধ, দুর্গম হায়,  দুর্জ্ঞেয় সুদূর।  ২ তুমি উচ্ছৃঙ্খল অতি, দুরন্ত দুর্বার। সগর রাজার ভস্ম করিলে পরশ। স্বর্গ হতে অবতরি,এলে এলোকেশে,   শিবজটা ফুঁড়ে এলে,হইতে অলস। কিরাত-পুলিন্দ-পুণ্ড্র অনাচারী দেশে। বৃথা বাজাইল শঙ্খ, শঙ্খ লয়ে আদি। বিস্ময়ে বিহ্বল-চিত্তে ভগীরথ আসে। আর্যের নৈবেদ্য,বলি হে বিদ্রোহী নদী। অনার্যের ঘরে আছ,আছ কত সাজে। কত যুগ বহে চলো কত পথ ধেয়ে। ব্যাপৃত সহস্র ভুজ,প্রলয়ের কাজে। দম্ভ যবে মূর্তি ধরে, অভ্রভেদী হয়ে। সিন্ধুসঙ্গী, মহাকাল হে সাম্যবাদিনী। বহে চলো কীর্তিনাশা,কল্লোলনাদিনী। ৩ ধনী দরিদ্...