কৃষ্ণ কর্ণ কথা
কৃষ্ণকর্ণকথা
দেবপ্রসাদ জানা
১
কহ কৃষ্ণ বাসুদেব, মোর কোন দোষে?
মাতা মোরে ফেলেদিলে জনমের কালে
সদ্যজাত, এক শিশু নদীজলে ভাসে।
হতভাগ্য অবোধের, জন্ম পাণ্ডু কুলে।
রানি কুন্তী মোর মাতা সূর্যের ঔরসে।
কুমারী বয়সে মাতা, সেকি মোর দোষ।
সুতপুত্র বলে কেন, লোক এবে হাসে।
কি দিলে বিধাতা মোরে এত কেন রোষ।
মহাগুরু দ্রোণাচার্যে অহঙ্কার ঢের।
শিক্ষা দিতে গররাজি হয় সেইক্ষনে।
যত শিক্ষা গুরুদেব পরশুরামের।
অভিশাপ হেনে কহে,লুপ্ত প্রয়োজনে।
হায় কৃষ্ণ কিযে করি সম্মুখে অর্জুন।
ভ্রাতা সে কনিষ্ঠ জানি করি কি বলুন।
২
কহে কৃষ্ণ ওহে কর্ণ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে।
ধর্মের স্থাপন হবে, ধর্ম যুদ্ধ করে।
অভিমান আছে জানি পাণ্ডব বিরুদ্ধে।
কটু কথা বলে তুমি দোষ দেবে কারে?
রাজপুত্র হয়ে জন্ম অন্ধ কারাগারে।
লালন পালন করে, গোয়ালিনী মাতা
রাক্ষস খোক্ষস কত, প্রাণ নিতে পারে
আপন মামাই শত্রু, লিখিল বিধাতা।
বলো কর্ণ,কার কাছে,করব নালিশ?
আপনার বলে কেউ ছিল নাযে সেথা।
নিজের সামর্থ্য বলে,জীবনের বিষ।
হজম করিতে হলো, হৃদয়ের ব্যথা।
কুন্তী কিবা পাণ্ডবের দোষ কারো নয়।
সকলি অদৃষ্ট কর্ণ, জয় পরাজয়।
৩
যুদ্ধক্ষেত্রে রথচাকা ভূমিতে বসিল।
অর্জুন গান্ডিব তুলে শরক্ষেপ করে।
কবজহীন কর্ণের মরণ আসিল।
মাতাকুন্তী দুইচোখে অশ্রু কেন ঝরে।
কহে কৃষ্ণ চক্রপানি, কেন হও দুক্ষি।
যুগে যুগে দাতাকর্ণ নামে পুজা পাবে।
মহাবীর কর্ণ নামে রয়ে গেল শাক্ষি।
বীরশ্রেষ্ঠ কর্ণ গাথা, ইতিহাস কবে।
কর্ণ কৃষ্ণের বচন শোনে মন দিয়া।
কহিল আপন মনে বিধাতার লেখা।
অস্ত্রশিক্ষা জ্ঞানলাভ কি হইবে নিয়া।
প্রয়োজনে সব নষ্ট, হইল যে দেখা।
সাঙ্গ হলো ভবলীলা সাঙ্গ হলো দ্বেষ।
বিবিধের কল্যাণেই জীবন উন্মেষ।
Comments
Post a Comment