মহাঋষি শুক্রাচার্য্য
মহাঋষি শুক্রাচার্য্য
দেবপ্রসাদ
আমরা প্রতিদিন আকাশে যে উজ্জ্বল গ্রহ দেখতে পাই তা কি করে আকাশ গঙ্গায় এলো এখন তার কথা বলবো। আজ থেকে হাজার বছর আগে একবার মহাঋষি ভৃগুর পুত্র কবি, শিক্ষা গ্রহণের জন্য, আর এক মহাঋষি অঙ্গীরসের কাছে এলো, সেখানে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঋষি অঙ্গীরসের পুত্র 'জীব' ও শিক্ষা নিচ্ছিল, বেশ কিছু বছর পর অঙ্গীরস দেখলেন ভৃগু পুত্র কবি খুব মেধাবী, তিনি তার পুত্র জীবকেও কবির মতো মেধাবী করতে চাইছিলেন, তাই একদিন দুজনকে ডেকে তাদের মেধা পরীক্ষা করবেন বলে বসলেন। তিনি দুজনকে একটা প্রশ্ন করলেন,
-পবন থেকে দ্রুতগামী কি?
ঋষি জীবের দিকে তাকিয়ে রইলেন, কিন্তু জীবের কিছু মাথায় ঢুকলো না, তখন কবির দিকে তাকাতেই, কবি অতি বিনম্র ভঙ্গিতে বলল,
-পবন থেকে দ্রতগামী মন।
মহর্ষী অঙ্গীরসের মনে একটু ক্ষোভ সৃষ্টি হলো, যা কোনো গুরুদেবের কাছে আশা করা যায় না। গুরু আবার একটা প্রশ্ন করলেন,
-বলতো এই পৃথিবীকে কিসে ঢেকে রেখেছে?
গুরু তার পুত্রের দিকে তাকালেন, জীব কিংকর্তব্যবিমূঢ় দেখে কবির দিকে দৃষ্টি দিলেন, কবি আরো বিনম্রভাবে উত্তর দিলো,
-গুরুদেব, এই পৃথিবীকে অজ্ঞাতায় ঢেকে রেখেছে।
গুরু ভেতরে ভেতরে বেশ রেগে গেলেন। এবার গুরু আর একটি প্রশ্ন করলেন,
-বলোতো আলস্য কি?
জীবকে মূর্খের ন্যায় চুপ থাকতে দেখে, কবি উত্তর দিলো।
-গুরুদেব আলস্য হচ্ছে ধর্মে মন না রাখা।
কবির সব উত্তর সঠিক দেখে ঋষি মনে মনে ঠিক করলেন, জীবকে আলাদা ভাবে শিক্ষা দেবেন, কিন্তু বেশ কিছুদিন পরে বুঝলেন, জীবের কবির মত মেধা নেই, তাই তিনি ভাবলেন, জীবকে শিক্ষা দেওয়ার বদলে কবিকেই শিক্ষা কম দেওয়া উচিত হবে, তাই প্রতিদিন যখন তিনি শিক্ষাদান করতেন, নানা ছলে তাকে অন্য কাজে ব্যস্ত করে দিতেন, এরকমভাবে বহুদিন চলায়, কবির মনে সন্দেহ হলো, নিশ্চয়ই গুরুদেব আমার প্রতি ক্ষুন্ন হয়েছেন, তাই কবি একদিন গুরুদেবকে খুব নম্রভাবে জিজ্ঞাসা করল,
-গুরুদেব আপনি কি আমার কোনো কাজে অখুশি হয়েছেন, তাই আমাকে শিক্ষাদানে অসুবিধা হচ্ছে?
গুরুদেব খুব রেগে গেলেন, তাকে সেই মুহূর্তে আশ্রম ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বললেন, গুরু আজ্ঞা মান্য করতেই হবে, আবার শিক্ষা শেষ না করে, বাড়ি ফিরে যাওয়া যাবে না, তাই মনদুঃখে বনের মধ্যে চলতে চলতে ঋষি গৌতমের আশ্রমে উপস্থিত হলো। তার মেধা ও বুদ্ধিমত্যা দেখে ঋষি গৌতম তাকে সমস্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করলেন। তাঁর কাছে আর কোনো বিদ্যা ছিল না যে তিনি দিতে পারেন, কিন্তু কবির আরো বড় শিক্ষা নেওয়ার ক্ষমতা ছিল, একদিন তিনি বললেন,
-বৎস, আমার সকল বিদ্যা তোমাকে দান করেছি, তোমার মধ্যে আরো অনেক শিক্ষা নেওয়ার ক্ষমতা আছে, এই পৃথিবীতে আর কোনো আচার্য নেই যে তোমাকে শিক্ষাদান করেন, তাই তুমি দেবাদিদেব মহাদেব, যিনি বিদ্যা ও কলার মহাগুরু, তুমি তার তপস্যা করো, তোমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে।
কবি তাই করল, বহু বৎসর যাবৎ তপস্যা করে কবি মহাদেবের দেখা পেলেন, তিনি তার বুদ্ধিমত্যার পরিচয় পেয়ে তাকে বহু শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুললেন, তার মধ্যে মহা মৃত্যঞ্জয় মন্ত্র দিলেন, যে বিদ্যায় মৃতকে জীবিত করতে পারবে। ঠিক এই মুহূর্তে কবি হলেন অসুরদের গুরু। যত অসুর মারা যেতো দেবতাদের হাতে, তাকে জীবন দিতে শুরু করলো, এই অবস্থায় অসুরদের অত্যাচার বাড়তে লাগল, তারা স্বর্গমর্ত্য পৃথিবীর অধিশ্বর হয়ে উঠল। দেবতারা পালিয়ে বেড়াতে লাগল, শেষে দেবতারা মহাদেবের কাছে এর সমাধান চাইলো, তখন শিব কোনো দিকে তাকে জব্দ করতে না পেরে গিলে ফেললেন, শিবের পেট থেকে আর সেই মন্ত্র উচ্চারণ করতে পারলো না, কিন্তু কবি এতো পরিশ্রমী ও মেধাশীল ছিল যে, সে শিবের পেটের ভেতরেই কঠোর তপস্যায় ব্রতী হলো, বহুদিন তপস্যায় খুশি হয়ে, তাকে পেট থেকে বের করলেন, এবং বললেন তিনি যেন যখন তখন এই মৃত্যঞ্জয় মন্ত্র ব্যবহার না করেন, তাকে শুক্র নামে অভিভূত করলেন, এবং সপ্ত ঋষির এক ঋষি করলেন বললেন সে আকাশ গঙ্গায় স্থান পাবে।
আমরা রাতের বেলায় যে উজ্জ্বল গ্রহটি দেখতে পাই সেই হলো. কবি যার নাম শুক্রাচার্য্য। তিনিই দৈত্যগুরু।
Comments
Post a Comment