অণুগল্প

বাস থেকে

গেটের মুখে এসে এক ভদ্রলোক সিনিয়র সিটিজেনের সিট থেকে উঠে কন্ডাকটরকে বলল, 
-আরে অপূর্ব  তুমি? শেষে কন্ডাক্টারি করছো?
-কি করবো কাকাবাবু পেটতো চালাতে হবে। তা আপনি কোথায় গেছিলেন?
তিনি হেসে বললেন, 
-ছেলের সাথে দেখা করতে গেছিলুম।"
-ছেলে কোথায় আছে এখন?"
-আর বলো কেন, ছেলে তো এখন জেলে আছে।"
-জেলে? জেলে কেন?
-কেস করলুম যে, তুমি তো জানো বুড়োবুড়ি কে কত কষ্ট দিয়েছে ও, দুবেলা খেতে পযর্ন্ত দিতো না। আর কতদিন সহ্য করবো বলো? অথচ দেখো - 
আর কথা হলো না, স্টপেজ এসে গেল। ভদ্রলোক নেমে বলল-
-এসো না একদিন।
বাস স্টপেজ ছেড়ে চলে গেল।
সেই সেদিন

কত দিন হলো? তুমিতো আগে অন্য কোনো... "
পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই অমূল্য বললে
-বছর তিনেক হয়ে গেল, 
ততক্ষণে ট্রেন স্টেশনে ঢুকে গেছে। অমূল্য নামতে নামতে বলল-
তোমার সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা রুমি, আমি ভালোই আছি গত বছর আমার, বই বেরিয়েছে, "আমার স্বপ্ন" বই মেলায়, ওটা অ্যাকাডেমী পুরস্কার পাচ্ছে।
ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলেছে, জানলায় রুমি অবাক দৃষ্টিতে অমূল্যর দিকে তাকিয়ে।
-রুমি আমি এখন আর সেই জঙ্গলে থাকি না। তোমার মাকে বলে দিও।

অপরাধ 

তুমি কি আগের মতই আছো অপর্ণা?
উত্তরটা শোনার অপেক্ষা না করেই ট্রেন থেকে নেমে গেল কৌশিক। নামার আগে বলে গেল, "রাতের দিকে কল করছি তোমাকে। বহুদিন পর তোমার সাথে দেখা।"
তোমার নম্বরটা দাও। নম্বর বলার সময় দিলো না  ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলে গেল।

ছেলে 

ছেলে বিদেশে আছে শুনে, অনেকেই তখন ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আমার পাশে দাঁড়ানো  অন্য একটা লোক বলে উঠল, "ছেলে বিদেশ আছে, কত গর্ব? 
-গর্ব! হ্যাঁ গর্ব, রূপম, আমার ছেলে। একটা ছেলে মানুষ করেছি, লেখাপড়া শিখিয়ে, সাবলীল সাবলম্বী করেছি, বিয়ে দিয়েছি, গর্ব হবে না?
এক ভদ্রলোক পাশ থেকে বললেন, আর আপনার কি হবে? বৃদ্ধ বয়সে কোথায় থাকবেন? কে আপনার আর আপনার স্ত্রীর হাত ধরবে। 
ভদ্রলোক উদাস হলেন আর কথা বলতে পারলেন না।

নিস্তব্ধ ট্রেন

ট্রেনে এক বয়স্ক লোকের পাশে বসে ছিলেন আর এক মধ্য বয়ষ্ক মহিলা। তিনজনের সিটে চারজন, বেশ চাপাচাপি, উনি আর থাকতে পারলেন না। বলেই ফেললেন, 
-দাদা একটু চেপে বসুন না,
-আর কোথায় চাপবো এরপর তো ট্রেনের জানলা ভেঙ্গে বেরিয়ে যাবো। 
- ওমা সে কী? কী করে? কী সব বলছেন আপনি?" তাকি হতে পারে? ট্রেনের জানালা ভেঙ্গে যাবে? 
-যেতেও তো পারে, যা অবস্থা, 
-ট্রেনে উঠেই তো জানলা ধরে বসে পড়েন। আর কারো কথা চিন্তাই করেন না। 
কথা শেষ হলো না একটা পাথর এসে লাগল ভদ্রলোকের মাথায়, সকলে হতবাক কি হলো? ভদ্রলোকের মাথা থেকে গলগল করে রক্ত পড়তে লাগল প্রায় ভিজে গেল জামা টা। সকলে হইহই করে উঠল। কেউ হাত লাগাল না, ভদ্র মহিলা নিজের শাড়িটা ছিঁড়ে ভদ্রলোকের মাথায় বেঁধে দিলেন। নিস্তব্ধ ট্রেন।

ছেলে এখন জেলে

-না মানে চুরি ডাকাতি নাকি অন্য কোনো কেস? আগে তো অন্য কোনো জেলে ছিল শুনলাম।"
এবার বয়স্ক ভদ্রলোকের মেজাজ গেল চড়ে। আর বলতে দিলেন না মহিলাকে। তারপর বললেন, "ভালো করে না শুনে কেন কথা বলেন আপনারা? তিলকে তাল করে দেবেন দেখছি। আমার ছেলে আগে অন্য একটা চাকরি করত। রেলের গ্রুপ ডি, ধানবাদে পোস্টিং ছিল। দূরে থাকতে হতো। সে চাকরি ছেড়ে এখন জেলে চাকরি পেয়েছে। মানে জেল পুলিশ। তাই বললাম, ছেলে এখন জেলে। "
পাশে বসা আর এক ভদ্রলোক  তখন অন্য একজন মহিলাকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে বলছেন, আরে ওনার ছেলে আগে ছিল রেলে, এখন আছে জেলে। বুঝলেন?
মহিলা  এবার রেগে বললেন, আমি বুঝে কী করব, যার ছেলে তাকে বোঝান।

কাকা বলেছি

ছোটো মেয়ে মৌমির বয়স তখন বারো, বড় মেয়ের থেকে সাত বছরের ছোটো, কোনো কিছু একজনের জন্য আনলেই খুনসুটি হতো, সেদিন একটা বড় টেরি বিয়ার এনে ছিলাম অফিস থেকে, অফিসের কলিগ কি দেবে বুঝে না পেয়ে, আমার জন্মদিনে দিয়েছিল, তো আমি বললাম ওটা তোর দিদিভাই নিক, 
অনেক ঝগড়াঝাটি হলো, শেষে আমি বললাম -
- দেখ ওতো আমাকে প্রথম বাবা বলেছে-
- কেন আমি কি জন্মে তোমাকে কাকা বলেছি?

কুমার

মধুর হাত ধরে টানলো কুমার! লোক ভর্তি বিয়ে বাড়ি।
সদ্যই তখন মধুর সঙ্গে প্রেম ভেঙেছে কুমারের। মনের ক্ষত তখনও তাজা। তবে মধু সেই ব্যথা গোপন করতে পারলেও, কুমারের চোখে, মুখে ধরা পড়ত। মধুকে দেখলেই চোখ ছলছল করে উঠত তার। কিছুতেই যেন প্রেমের এমন পরিণতি মানতে পারেনি সে। আর সেই ব্যথা থেকেই হয়তো এমন কাজ করে বসে। 
-এটা কি হলো?
-একবার আমার কথাটা শোনো।
-না আর কথা থাকতে পারে না। তুমি যে পথে নেমেছ সেখানে আমার স্থান নেই। আর কত লোকাবে তোমাকে, আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম।
-এখনো ভালোবাসো, আমি জানি।
-না আমি তোমাকে ভালোবাসি না। যে সাত বছর প্রেমের নাটক করে এসেছে....
কথা শেষ হয় না মধুর, চকিতে কুমার জড়িয়ে ধরে তাকে, বিয়ে বাড়ি ভর্তি লোকের মাঝে, হঠাৎ এই কাণ্ড, কিছুতেই নিজেকে ছাড়াতে পারছিল না মধু। জোর করে ছুঁড়ে ফেলে দিলো তাকে, কুমার আর ওঠেনি।


Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ