প্রেম

প্রেম

প্রেম হবে এমন সাহসী,
রাজপথে একবার জড়িয়ে নিতে, 
তোমার ইতস্তত বোধ হবে না। 
কপালে বা গালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিতেও,
তোমার অস্বস্তি হবে না। 
বয়স বাড়লে প্রেমিকের সাহস কমে?
হয়তো কমে।
যতদিন সাহস আছে, 
ততদিন না হয় আগলে নিয়ো। 
সম্পর্কের গভীরতায় সাহস কমে না। 
যারা গভীরে ডুবতে পারেনি, 
অল্প জলে ছটফট করে, 
গায়ে কাদা লাগার ভয়।
গভীরে কাদা থাকে না, সেখানে ডুবলে ভয় কি?
তবে সাহস লাগে ঢের। 
একবুক বাতাস জমা করে তবে ডুবতে হয়। 
বুকভরা বাতাস থাকবে,
প্রেমে পড়লে বসন্তের প্রকৃতিতে শিমুল পলাশ কৃষ্ণচূড়ার রং ধরার আগে প্রেমিকার মনে লাগে প্রেমের রং, 
জেদি একরোখা পুরুষের খর দৃষ্টিতেও নেমে আসে জ্যোৎস্নার নরম পরশ।
কল্পনায় প্রেমিক পুরুষ তার প্রিয় নারীর সৌন্দর্যে অবগাহন না করে উপাসনা করে, 
তবে তাঁর কল্পনা তিন সত্যি! 
প্রেমিকার কোমল ঠোঁটই প্রেমিকের রুক্ষ ঠোঁটের যাবতীয় দর্প চূর্ণ হওয়ার একমাত্র ঠিকানা, তবে তাঁর ভাবনায় ভুল নেই। 

     যদি কলমচি বিশ্বাস করতে বলেন, স্পর্শবিহীন কোনও রাতেও প্রেমিক পুরুষ অবস্থান করবে প্রিয় নারীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে, তবে তা অবিশ্বাস্য নয়। 

      যদি ঔপন্যাসিকের বর্ণনায় সাময়িক বিচ্ছেদ দুটি মনের অগ্নিকুণ্ডে ঘৃতাহুতি দেয়, তবে সে বর্ণনা অতিরঞ্জিত নয়। 

       যদি স্রষ্টার কলমে ভালোবাসা হয় অন্তহীন, তবে সে কলমের কালি যেন না ফুরোয়। 

        যদি রচয়িতা বলেন, কালবৈশাখী থেকে শরতের মেঘভেলা, হেমন্তের মনকেমন হয়ে শীতের রুক্ষতা, 
ঋতুরাজের আবিররাঙা হৃদয় ছুঁয়ে থাকা শাওন কিংবা ভাদর,
যুগলের জন্যই প্রকৃতির যত আদর...
তবে মেনে নিও তাঁর রচনা নির্ভুল। 

        যদি গ্রন্থকারের লেখনী বলে, দিনের মধ্যে সর্বসমক্ষে প্রেমিক পুরুষ শতবার খোঁজে তার প্রেমিকাকে। চোরাদৃষ্টির কারিকুরিতে সর্বদা চঞ্চল তার চারচোখ। কিন্তু মধ্যরাতের আলো-আঁধারিতে প্রেমিকাকে আড়ালে পেয়ে আর একবারও চোখ তুলে চাইতে পারে না। তবে তাঁর বক্তব্যে সন্দেহ প্রকাশ করার কারণ নেই। 

          যদি সাহিত্যিক লিখতে চান, প্ৰেমিক তার প্রেমিকার নাম দিল প্রাপ্তি। প্রেমিকা তা শুনে বলল, যাঃ! তবে তো তোমার প্রাপ্তির জন্য আমাকে সব হারাতে হয়। আজন্মকাল ধরে এই চাওয়া-পাওয়ার গল্পগুলো যদি গ্রন্থকার লিপিবদ্ধ করতে চান, তবে তাঁর যেন সোনার দোয়াত-কলম হয়। 

       যদি লিপিকারের ভাষায় প্ৰেমিক তার প্রেমিকাকে বলে, তারপর একদিন তোমাকে খুব করে চাইব। শেষবারের মতো চাইব। জীবনের মতো চাইব। এমনভাবে চাইব, তোমার পরে আর কাউকে চাওয়ার প্রয়োজন হবে না... 

       তুমি চাওয়ার মতো করে চাইলে। যেভাবে চাইলে মানুষ মানুষকে ফেরাতে পারে না, মায়ায় জড়িয়ে যায়, তুমি সেভাবে আমায় চাইলে। তোমার সেই চাওয়া পূরণ করতে গিয়ে নিজেকেও হারালাম আমি। আজ এতগুলো বছর পর আমি তোমাকে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, এক চরিত্র ছাড়া আমি সব হারিয়েছি। তুমিও হেসে বললে, হ্যাঁ। এই পাগলীটার চরিত্র ছাড়া আর কিচ্ছু ঠিক নেই। ওষুধ খাওয়া, খাবার খাওয়া, সময়ে ঘুমানো, এমনকী লেখা.... সেটা পর্যন্ত আমাকে বলে-বলে করাতে হয়। 

          হ্যাঁ করাতে হয় তো। এভাবে বকে-ধমকে, কান মুলে যত্ন নেওয়ার জন্য আমি তোমাকেই চাই। জীবনের কোলাহলে তুমি আমার নৈঃশব্দ্য। মধ্যদুপুরের তপ্ত রোদের পর তুমিই আমার নিঝুম সন্ধ্যা। প্রত্যেকদিন কড়া ডায়েটের পর মাসের শেষে তুমিই আমার দই ফুচকা। যা কিছু তুমিই। আর কীভাবে বোঝাই ভালোবাসি? 

          আজকের দিনে তোমার পরনে ছিল পাটভাঙা পাঞ্জাবি, ফিনফিনে ধুতি, মাথায় টোপর, শরীরের ভাঁজে আতরের গন্ধ। আমাকে জড়িয়ে ছিল লাল বেনারসি। আমার শরীর ঘিরে জমেছিল গোলাপ-জুঁই গন্ধ।

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

কল্কি