পণ

বিয়ের আসরে ছেলের বাবা হাসিমুখে বললেন,
"বেয়াই সাহেব, বিয়ে তো হয়ে যাচ্ছে, তো আমার ছেলের জন্য বলছিলাম যে পাঁচ লাখ টাকা আর একটা বাইকের ব্যবস্থা করলে সুবিধা হতো। 

আসলে চাইতাম না, তবুও ওর অফিসে যাতায়াতের জন্য বাইকটা খুবই প্রয়োজন ছিল। আর আমারও কিছু ঋণ-টিন আছে ওগুলাও পরিশোধ করতাম। ছেলে তো আমার একটাই। আমার যা আছে সবই তো ওর, আর ওর মানে আমার বউমার"।

মেয়ে পক্ষের সকলে এই কথা শুনে চুপ করে রইলো। কিছুক্ষণ বাদেই উকিল সাহেব আসলেন বিয়ে করানোর জন্য। এদিকে ব্রাহ্মণ ঠাকুরও বসে আছেন, রেজিষ্ট্রি হয়ে যাবার পর, বেদ মন্ত্রে দুজনের হাত এক করে দেবেন। সকলে অপেক্ষা করছেন, বর যাত্রী কেউ কেউ খেয়েও এসেছেন বিয়ে দেখবেন, বিয়েতে কেন দেরি হচ্ছে বুঝতে পারছেন না, এদিক ওদিক কানাগুষো চলছে, চলছে সেলফি তোলার হিড়িক, ফোটোগ্রাফার নানান অ্যাঙ্গেলে ছবি তুলে চলেছে বরের, তাদের বন্ধু বান্ধব সহ। সানাইয়ের সুর বাজছে, মেয়ে বউরাও কেউ কেউ সেজেগুজে এর ওর দিকে তাকাচ্ছে, 

 যখন কাবিনের কথা উঠলো তখন মেয়ের বাবা কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কাজি সাহেবকে বললেন,
"আপনি দশ লাখ টাকা কাবিন লিখেন"।
এই কথা শুনে ছেলের বাবা ফুঁসে উঠে বললেন,
"দশ লাখ টাকা কাবিন! মগের মুল্লুক নাকি? আমার ছেলের সামর্থ্যও তো দেখতে হবে নাকি"?
মেয়ের বাবা সামান্য হেসে বলেন,
-"মেয়ে তো আপনাদের কাছেই থাকবে তো দশ লাখ কাবিন হোক আর এক কোটি হোক তাতে কি আসে যায়"?
ছেলের বাবা রাগমিশ্রিত কণ্ঠে বলেন,
"যতো যাই বলেন আমি এতো টাকা কাবিন দিবো না"।
মেয়ের বাবা ভরা মজলিসে সামান্য অট্টহাসি দিয়ে বলেন,
"দশ লাখ টাকা কাবিন দিতে আপনার ভয় যে ছেলে বউয়ের যদি কোনোভাবে ডিভোর্স হয়ে যায় তাহলে আপনার দশ লাখ টাকা গচ্চা যাবে, আর এদিকে আপনি ঠিকই আমার কাছে ছেলের জন্য বাইক আর পাঁচলাখ টাকা নগদ চাচ্ছেন। বিষয়টা কেমন হয়ে গেলো না"?
"কিসের সাথে কি মিলান? জামাইকে শ্বশুর বাড়ি থেকে এসব টুকটাক তো সবাই দেয়। এটাতো সমাজেরই নিয়ম"।
মেয়ের বাবা ঠান্ডা মাথায় বললেন,
"যৌতুক নেওয়া যদি সমাজের নিয়ম হয় তাহলে কাবিনও বেশি দেওয়া সমাজের নিয়ম। এক চোখে সবকিছু দেখলে হয় নাকি বেয়াই সাহেব"?
ছেলের বাবা এবার রাগান্বিত স্বরে বলেন,
"আমার ছেলে বড় চাকরি করে। দরকার হলে আপনার এখানে ছেলেকে বিয়ে দিবো না, মেয়ের অভাব আছে নাকি"?
"আমার মেয়েও কিন্তু উচ্চশিক্ষিত, তাকেও আমি নিজের টাকা পয়সা খরচ করে এতোদূর এনেছি, আর আপনিও আপনার ছেলের জন্য কষ্ট করেছেন, তাহলে যৌতুক কেনো মেয়ের বাবাকেই দেওয়া লাগবে? আর এখানে বিয়ের আসর ছেড়ে চলে গেলে ক্ষতি কিন্তু আপনারই। থানায় কল দিয়ে যদি বলি যৌতুকের জন্য বিয়ে ভেঙে দিচ্ছেন তাহলে জেলে যাবেন কিন্তু আপনারাই। তাই ভেবে চিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েন"।
মেয়ের বাবার কথা শুনে ছেলে পক্ষের সবাই চুপ। নীরবতা ঠেলে মেয়ের বাবা পুনরায় বলে উঠলেন,
"যাই হোক আপনাদের সাথে আমারও আর আত্মীয়তা করার সখ নেই। এখনই এই অবস্থা আর বিয়ের পর আমার মেয়েকে যৌতুকের জন্য অত্যাচার করবেন না তার কি গ্যারান্টি? তার থেকে বরং আমার এই বিয়ের আয়োজনের যেই খরচটা হলো সেটা দিয়ে কেটে পড়ুন। নাহলে বিষয়টা থানা পর্যন্ত গেলে কতো কি হয়ে যাবে ভাবতে পারছেন"?
ছেলের বাবাসহ ছেলে পক্ষের সকলের মাঝে পিনপতন নীরবতা।

মেয়ের বাবা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
"যতো যাই হোক আমি অন্ততঃ তোকে কোনো ছোটলোকের কাছে বিয়ে দিবো না। আমার রাজকন্যা আমৃত্যু যেনো রাজকন্যার মতোই থাকে সেই ব্যবস্থাই করবো"।

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ