নজরুল

"পৃথিবীর নিদারুন নিয়তি হয়ত এমনি যে নিঃস্বার্থভাবে মানুষকে বিলিয়ে যায় তিনিই সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হন। বলছি কাজী নজরুল ইসলামের কথা।

 সারাটি জীবন যিনি বাংলা সাহিত্যকে, ইসলামী গজলকে, কবিতা,শ্যামা সঙ্গীত কিংবা নজরুল সঙ্গীত নামে অনবদ্য এক সঙ্গীত সৃষ্টি করে গিয়েছেন তিনি সারাটি জীবন করে গিয়েছেন নিদারুন অর্থকষ্ট। আজ তাঁর রচিত সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতা বিদ্রোহী, ধুমকেতু, প্রলয়োল্লাস, তাঁর রচিত সঙ্গীত নিয়ে গবেষনা করে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সন্মানিত আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন বহু মানুষ। উপার্জন করছেন অঢেল অর্থ বিত্ত। চড়ছেন দামী মোটরগাড়িতে। কিন্তু এই বিদ্রোহী কবিতাটি যিনি লিখেছিলেন তিনি তাঁর পুত্র বুলবুলের অসূস্থ্যতার সময় তাকে ওষুধ কিনে দিতে পারেননি অর্থকষ্টে। দীর্ঘদিন রোগে ভুগে যখন বুলবুল মারা যায় তখন তাকে দাফন করার মত অর্থও কবির ছিলনা। সেই দাফনের টাকা যোগাড় করতে বহু গ্রামোফোন কোম্পানী, রেডিও কোম্পানির দারে দারে ঘুরেছেন। পুত্রশোকে পাথর হৃদয় কবির কাছে তখন গ্রামোফোন কোম্পানী গান লিখার মাধ্যমে সামান্য কিছু টাকা দিতে রাজী হয়। সেই পুত্রের মৃতদেহকে পাশে নিয়ে কবি রচনা করেন হৃদয় বিদীর্ন করা একটি সঙ্গীতঃ

"শূন্য এ বুকে পাখি মোর আয়,
ফিরে আয় ফিরে আয়।
তোরে না হেরিয়া সকালের ফুল
অকালে ঝরিয়া যায়"

রচনা করেন আরো একটি গানঃ

"ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি,
করুন চোখে চেয়ে আছে সাঁঝের ঝরা ফুলগুলি।
কাল হতে আর ফুটবে না হায় লতার বুকে মঞ্জুরী,
উঠছে পাতায় পাতায় কাহার করুন নিশাস মর্মরী"

সেই গান লিখা অর্থে দাফন হয় বুলবুলের। কবির জায়গায় এবার নিজেকে কল্পনা করে ভাবুন তো। দেখুন তো শুধু একবার কেমন অনুভূতি হয়? আমার বিশ্বাস কেউ, কোন সন্তানের পিতা নিজেকে ঠিক রাখতে পারবেন না।

এই কঠিন পরিস্থিতির মাঝে দিয়ে যেতে হয়েছিল কবির। ব্যক্তি মানুষ হিসাবে, জাতি হিসাবে নিজেকে খুব লজ্জা বোধ হয়, অপমানিত লাগে যখন কবির এক একটি গান, কবিতা টিভি কিংবা রেডিওতে শুনি। নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হয়। যিনি এত মহামূল্যবান কবিতা, সঙ্গীত, বানী রেখে গিয়েছেন আমাদের জন্য আর আমরা কি দিতে পেরেছি  তাঁকে। কবিপুত্র বুলবুলের মোটরগাড়ির অনেক প্রিয় ছিল। সেই খেলনা মোটরগাড়ি কিনে দেবার সাধ্যও ছিলনা কবির। অথচ কবির শুধু একটা বিদ্রোহী কবিতা নিয়ে গবেষনা করে কত মানুষ আজ মোটরগাড়ীতে চড়ছেন তার হিসেব নেই।

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ