আজ বারান্দায়
আর আমি
দেবপ্রসাদ জানা
তুমি দরজা বন্ধ করো,
আমি বসে রই আজ তোমার বারান্দায়
প্রখর দুপুরের উলঙ্গ নিস্তব্ধতা,
তোমার থালায় এখনো লেপটে থাকা,
ঘিয়ের গন্ধ, কয়েকটা মাছি আর আমি,
তোমার বাড়ির মাদুর, অবহেলে পড়ে থাকা-
পায়া ভাঙা জলচৌকি আর আমি।
একটা কালো মেঘ, সূর্য ঢেকে দিয়ে,
সে-কি আনন্দে নেচে নেচে এগিয়ে চলেছে-
একবার জানালার ফাঁক দিয়ে দেখো।
না না দেখবো না আমি তোমাকে,
আকাশ আর ধোঁয়া ধোঁয়া মেঘ,
প্রখর রৌদ্রের তাপ, আর আমি তোমার বারান্দায়।
আমি আর নিদ্রাহীন প্রশস্ত মাঠ।
একাকিত্বে স্মৃতি, আর আমি-
পোড়া ধ্বস্ত মাঠির হাঁড়িতে ভনভনে মাছি,
নগ্ন রৌদ্র রষ্মির উত্তাপে পুড়ে যাওয়া ক্লান্ত শরীর।
পৃথিবীর কানে কানে করে যাওয়া নালিশ
পথিকের পায়ে পায়ে আসা অপরাহ্ন,
স্মৃতিক্ষত মেঘের হা হা রব, আর আমি।
এক পাত্র সুরায়
দেবপ্রসাদ জানা
এক পাত্র সুরায় যখন-
অতি সন্তর্পণে খুলে ফেলি বোধের পোশাক
কোন এক দুর্যোগের রাত্রি, হঠাৎ বজ্রপাত,
হিমস্বরে অনন্ত খাদ পেরিয়ে
বয়ে যাওয়া স্রোত আশঙ্কার নদী।
বিচ্ছেদের বিষাদময় সুর,
না কোন নতুন অধ্যায়ের সূচনা নয়,
কারো চকিত পায়ের শব্দে -
সশব্দে ভেঙে যায় স্বপ্নের মায়াজাল।
চোখের সামনে সেই ছায়া স্পষ্ট,
স্বীকারোক্তি নিঃশব্দ ভালোবাসার।
সাঁঝবেলা, গলিপথ, আঁধারবেলা।
আকাশে সাদামেঘের ভেলা,
সেই মনোরম স্নিগ্ধ অনুরণন,
আর এক টুকরো জীবনের জ্বালা।
খুব নাড়া খেয়ে ভেতরে ভেতরে জেগে উঠি।
নিবিড় ছুঁয়ে দেখা হালকা জোছনা।
বন্দী আমি, এক ঝলক চেয়ে দেখা চোখে,
বুকের রুদ্ধতায় জন্ম হয় নীল প্রজাপতি,
আর নিঃস্তব্ধ অন্ধকার।
নেশায় টলমল অব্যক্ত শব্দেরা।
তার বিষন্ন মনের আদরে প্রত্যাশা।
মনে পড়ে গেল
দেবপ্রসাদ জানা
সেই সব অতি যত্নে রাখা স্মৃতি,
সেই রাতজাগা গল্পদের ভোরের আলো দেখানো।
তার প্রথম হাত ধরার শব্দ গুলোকে অনুভব করা।
আমার অন্তরে অনুরণিত সেই ব্যথাদের,
হঠাৎ যেন হারিয়ে যাওয়া।
আজ তা সব সুর বাজে বহু প্রাণে।
মনে পড়ে গেল তার আদর করা।
কপালে আদর মাখানো চুম্বন।
কোন এক রুপোলি প্রেক্ষাগৃহে -
এক নাটকীয় মুহুর্তে চুপিসারে আলিঙ্গন,
ভুলিনি তার অভিমানের শব্দ গুলো।
ছেলেমানুষির হাসিতে ভুলে যাওয়া সব-
বিষাদের হাসি,
বোঝা না বোঝার প্রথম মিলনের আদ্যপান্ত,
আর এক অনন্য উন্মাদনায় ভরা বুক।
কোন এক বটবৃক্ষের আড়ালে স্পর্শে,
অনুভবে অতি গোপনে হাতে হাত ছোঁয়া।
আজ বন্দী আমি বন্দী সেও,
পরিস্থিতির চাপে সে কর্তব্যের খাতিরে।
আজ বিষন্নতায়
দেবপ্রসাদ জানা
ভরা বুক ফিরে পেতে চায়
সেই হারিয়ে যাওয়া সুখ,
কোন এক প্রিয় অভিমানে দূর বহুদূর
ক্রমশ গিয়েছি সরে।
যদি গুছিয়ে নিই এলোমেলো সব।
অজুহাতে হারিয়ে দেবে কি সে বিস্মৃতির অন্তরালে?
একান্তই জানি আজও রয়ে যাবে নীরবে,
এ ভাবেই হারাব বারে বারে,
গহিন রাতের অন্ধকারে,
স্মৃতির মূর্চ্ছনাতে।
হাল্কা আলোর রাতের আকাশ, চোখে গভীর ঘুম।
নিয়ত ক্লান্ত জীবন আর অহরহ স্বপ্ন,
স্মৃতির জ্বালাতনে ফল্গুতেও বন্যা আসে,
হৃদয়ের বালিয়াড়ি ছুঁয়ে যায় তার স্মৃতির ঢেউ,
শুকিয়ে যাবে মরুভূমির মায়াহীন রোদ্দুর।
বৃত্তের অন্তরালে, এক অলীক মায়ার ছলে,
বিরহের তাপে নিয়ত আগুন।
Comments
Post a Comment