দাদাঠাকুর

কোনও শব্দ বা বাক্য শুরু থেকে পড়লে যা হয়, আর শেষ থেকে পড়লেও যদি একই হয় তখন তাকে ইংরেজিতে বলে প্যালিনড্রোম (Palindrome)। এই শব্দের উৎপত্তি হয়েছে দুটো গ্রিক শব্দ ‘প্যালিন’ (Palin) এবং ‘ড্রোমোস’ (Dromos) থেকে। যার অর্থ পুনরায় পিছনে ফিরে আসা (Running back again)।

বাংলায় প্যালিনড্রোম নিয়ে লিখতে গেলে দাদাঠাকুরকে বাদ দিয়ে আলোচনা করা অসম্ভব। আর দাদাঠাকুরকে বাঙালি পাঠকরা চেনে না, এমন কাউকে মনে হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না।

দাদাঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিতই প্রথম বাঙালি, যিনি বাংলায় প্যালিনড্রোম নিয়ে গভীরভাবে চর্চা করেছিলেন। দাদাঠাকুর সম্পাদিত ‘বিদূষক’ পত্রিকায় তিনি অনেক বাংলা প্যালিনড্রোম বাক্য বাঙালিদের উপহার দিয়েছেন। যেমনঃ

১) চেনা সে ছেলে বলেছে সে নাচে।
২) তাল বনে নেব লতা।
৩) মার কথা থাক রমা।
৪) রমা তো মামা তোমার।
৫) চার সের চা।
৬) বেনে তেল সলতে নেবে।
৭) কেবল ভুল বকে।
৮) দাস কোথা থাকো সদা?
৯) থাক রবি কবির কথা।
১০) বিরহে রাধা নয়ন ধারা হেরবি।
এগুলি হল দাদাঠাকুর সৃষ্ট অমর কিছু প্যালিনড্রোম বাক্যের উদাহরণ।

এছাড়া তিনি প্যালিনড্রোম বাক্যে কবিতাও লিখে গেছেন। যেমনঃ

“রাধা নাচে অচেনা ধারা
রাজন্যগণ তরঙ্গরত, নগণ্য জরা।
কীলক-সঙ্গ নয়নঙ্গ সকল কী?
কীর্তন মঞ্চ পরে পঞ্চম নর্তকী।”

দাদাঠাকুরের লেখা এই কবিতার প্রতিটি লাইনই এক একটি প্যালিনড্রোম। আর শেষ লাইনটি সম্ভবত বাংলায় সৃষ্ট সবচেয়ে জটিল প্যালিনড্রোম।

একটি বিস্ময়কর ব্যাপার হল, দাদাঠাকুরের জন্ম ইংরেজির ১৮৮১ সালে। সালটা কিন্তু একটা প্যালিনড্রোমিক বছর। আর জন্ম তারিখ বাংলায় ১৩ বৈশাখ। ১৩ বৈশাখ সংখ্যায় লিখলে এভাবে লেখা হয় – ১৩/১। এটাও একটা প্যালিনড্রোম। আরও তাজ্জবের বিষয় হল দাদাঠাকুরের প্রয়াণ তারিখও বাংলার জন্ম তারিখেই অর্থাৎ ১৩ বৈশাখ। 

জীবন শুরু যে তারিখ দিয়ে, মৃত্যুও সেই তারিখে। সত্যিই দাদাঠাকুরের জীবৎকালও একটা প্যালিনড্রোমই বটে!

তথ্যঃ (সংগৃহীত)

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ