মুক্তারাম বাবু স্ট্রীট
ব্যাগবন্দী দেহ
আবার শহরে ব্যাগবন্দি দেহ, লোপাটের চেষ্টায় গ্রেপ্তার এক। ব্যাগবন্দি দেহ। বধ্যভূমি কলকাতা। ফারাক একটাই-দিনকয়েক আগে শহরতলিতে খুন করে কুমোরটুলির গঙ্গার ঘাটে ফেলার জন্য মৃতদেহ নিয়ে এসেছিল দুই অভিযুক্ত। আর এবার খুন করে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া জলায় দেহ ফেলতে গিয়ে ধরা পড়ল এক অভিযুক্ত। ক্যাব চালক।
হাতের পেপারটা গুটিয়ে রেখে, দ্রোণের প্রিয় ভক্ত ও সহকারী নীলাঞ্জনা বললো-
-এ-কি হচ্ছে স্যর? ক্যাব চালক খুন করেছে?
কোনো কথা না বলে, উঠে দাঁড়ালো দ্রোণ, সকাল ঠিক সাতটায় তার ঘুম ভাঙে। নীলু পেপারের খুণখারাপি, অপহরণ, রেপ, যত রসালো খবর গুলো পড়ে শোনায়, তারপর সে বাথরুমে ঢোকে, ঘন্টা খানিক বাথরুমে কাটায় দ্রোণ, সেবার পুরুলিয়ার কেসটার পর আর কোনো কেস আসেনি দ্রোণের হাতে, নীলুও বসে বসে খেয়ে বোর হচ্ছিল, মোটাও হচ্ছিল একটু। নীলুর বাবা মা নেই, একটা রোড এক্সিডেন্টে দুজনের মৃত্যু হয়েছে, সাত বছর। নীলু তখন সবে কলেজ পার করেছে, অনেক চেষ্টা করেও দ্রোণ তার বিয়ে দিতে পারেনি, নীলুর বাবার ইন্সুরেন্সের টাকায় নীলুর ভালোই চলে যায়, বাবার করে যাওয়া বেশ বড়ই বাড়ি নিমতায়, দ্রোণ এসেছিল ইন্সুরেন্সের টাকা গুলো নীলু সঠিকভাবে পাচ্ছে কিনা দেখার জন্য, তারপর থেকেই দুজনে একই বাড়িতে থাকে, মনে মনে দুজনের প্রেম থাকলেও, কেউ কাউকে এই সাত বছরে বলতে পারেনি, দুজনেই সম বয়সী প্রায়, দ্রোণ বীমার কাজটা করতে করতেই নানা রকম তদন্তের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে, জীবনবীমার যে সব কেস, আসে তদন্তের টাকা পাওয়া না পাওয়া সব ওর তদন্তের ওপর নির্ভর করে, আর এভাবেই ও পাকা গোয়েন্দা হয়ে উঠেছে, দ্রোণ আচার্য, সকলে দ্রোণাচার্য নামেই চেনে, পুলিশ যখন কোনো কেস সামলাতে পারে না, তখন দ্রোণাচার্যের খোঁজ পড়ে, পুলিশ আধিকারিকদের, তলব আসে, বেশ ভালো টাকার বিনিময়ে, দ্রোণাচার্য সেই কেস সমাধান করে, এইভাবে বেশ চলে যাচ্ছে দিন গুলো,
এক্ষেত্রে উপস্থিত বুদ্ধি ও তৎপরতায় হত্যারহস্য ফাঁস করে দিলেন এক ক্যাব চালক।
তাঁর বুদ্ধিমত্তার জন্যই মঙ্গলবার রাতে ব্যবসায়ী ভাগারাম দিওয়াসির (৩০) গলার নলিকাটা দেহের হদিশ পেল ঘোলা থানার পুলিস। তাও গাড়ির ডিকিতে। ওই রাতেই খুনের অভিযোগে করণ সিং ও কৃষ্ণপাল সিংকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার ধৃতদের বারাকপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক সাতদিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন।
নিহত ব্যবসায়ী ভাগারাম দিওয়াসির বাড়ি রাজস্থানের ঝালওয়ার এলাকায়। তিনি কলকাতার মেছোবাজার এলাকায় ভাড়ায় থাকতেন। পেশায় পোশাক বিক্রেতা। সম্পর্কে তুতো ভাই কৃষ্ণপাল সিং ও করণ সিংয়ের থেকে জামা-কাপড় নিয়েই খুচরো ব্যবসা চালাতেন তিনি। এই দু'জন বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন
গিরিশ পার্ক থানার মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট এলাকায়। পুলিস জেনেছে, ভাগারামের কাছে ব্যবসার প্রায় ৮ লক্ষ টাকা পাওনা ছিল তাঁদের। একমাস ধরে ঝামেলা চলছিল। মঙ্গলবার দুপুরে ভাগারাম ৬৫ হাজার ৪৫০ টাকা নিয়ে কৃষ্ণপালের ভাড়া বাড়িতে আসেন। বলেন, 'এর বেশি নেই।' কিন্তু কৃষ্ণপাল অন্তত ৫ লক্ষ টাকা চেয়ে বসে। তার থেকেই তুমুল বচসার সূত্রপাত। তারপরই কৃষ্ণপাল ভাগারামকে খুন করে বলে অভিযোগ।
ক্যাব চালকের তৎপরতায় খুনের রহস্য ফাঁস
এরপরও ঠান্ডা মাথায় ওই মৃতদেহ ট্রলিব্যাগে ভরে ফেলে কৃষ্ণপাল। তারপর যথারীতি কাজে বেরিয়ে যায়। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে সে ফোন করে করণ সিংকে। বলে, সোজা নাগেরবাজার চলে এসো। আর কৃষ্ণপালও ব্যাগবন্দি দেহ নিয়ে বেরিয়ে একটা হলুদ ট্যাক্সি ধরে চলে যায় নাগেরবাজার। এরপর তারা অ্যাপ ক্যাব বুক করে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের পাশে খেপলির বিল পৌঁছয়। কিন্তু ওই ক্যাব চালক রাহুল অধিকারীর উপস্থিত বুদ্ধির জেরে পর্দা ফাঁস হয়ে যায় অপরাধের। নির্জন ওই জায়গায় ব্যাগ নামাতে বলা মাত্রই রাহুল প্রশ্ন করে, 'কী
আছে ব্যাগে?' তারা বলতে চায়নি। নাছোড় রাহুলও। পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে বুঝে তারা ক্যাব চালককে টাকাও অফার করে। গড়বড় যে আছে, নিশ্চিত হয়ে যান রাহুল। পাশ দিয়েই যাচ্ছিল ঘোলা থানার টহলদারি ভ্যান। তিনি চিৎকার শুরু করেন। পুলিস দেখেই কৃষ্ণপাল চম্পট দেয়। করণও পালানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু রাহুল তাকে জাপটে ধরেন। পুলিস করণকে দিয়ে ব্যাগ খোলাতেই বেরিয়ে আসে
সেলোটেপ জড়ানো দেহ। মোবাইল ট্র্যাক করে ভোররাতে ঘোলা থানার পুলিস কৃষ্ণপালকে মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটের ভাড়া বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। বারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দ্রবদন ঝা বলেন, 'ব্যাগের ভিতর থেকে মৃতদেহের পাশাপাশি রক্তমাখা ধারালো অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। ধৃতদের থেকে ৬৫ হাজার ৪৫০ টাকা সহ অন্যান্য সামগ্রী মিলেছে।' তদন্তে জানা গিয়েছে, ধৃতরা গুগল সার্চ করেই দেহ ফেলার জন্য কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে নির্জন জলাশয় চিহ্নিত করেছিল। এরপর প্ল্যান ছিল রাজস্থান পালানোর।
Comments
Post a Comment