মহাভারতের গল্প
দূর্যোধন ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের বেয়াই
মহাভারতের সবচেয়ে বড় ভিলেন দুর্যোধন ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের বেয়াই। দুর্যোধনের স্ত্রী ভানুমতির গর্ভে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। মেয়েটির নাম রাখা হয় লক্ষণা। রূপে, গুণে সেই মেয়ে ছিল ভুবন বিখ্যাত। লক্ষণার বিয়ের বয়স হলে দুর্যোধন পাত্র নির্বাচনের জন্য স্বয়ম্ভর সভার আয়োজন করেন। এদিকে শ্রীকৃষ্ণের পুত্র শাম্ব দেবর্ষি নারদের মুখে লক্ষণার প্রশংসা শুনে তার প্রেমে পড়ে যান। তিনি স্বয়ম্ভর সভায় উপস্থিত হন ঠিকই তবে প্রতিযোগিতায় অংশ না নিয়ে লক্ষণাকে তুলে নিয়ে আসেন। যথারিতি কৌরবরা ভীষণ চোটে গিয়ে শাম্বকে পিছু ধাওয়া করে। কর্ণ ইন্দ্রজাল অস্ত্র প্রয়োগ করে শাম্বকে বন্দীও করে ফেলেন। খবর পেয়ে ছেলের জেঠু বলরাম বিষয়টা মিটমাট করতে ছুটে যান। শেষে উভয় পক্ষ মত দেবার পর শম্ব ও লক্ষণার বিয়ে হয়। দুর্যোধন যৌতুক হিসেবে দেন, এক লক্ষ হাতি, বারো হাজার ঘোড়া, ছয় হাজার রথ ও এক হাজার দাসী। পরে শাম্ব ও লক্ষণার ১০ জন ছেলে হয় যাদের মধ্যে উফিক, সুমিত্র ও বরুণ অন্যতম।
গান্ডিব রহস্য
গান্ডিব হল একটি ঐশ্বরিক ধনুক, যা মহাভারতে অর্জুনের কাছে ছিল। সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা ধর্ম রক্ষার জন্য এই অস্ত্রটি নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীতে এটি ভগবান শিব, তার পর চন্দ্রদেব, বরুণদেব এবং অগ্নিদেবের হাত ঘুরে শেষে অর্জুনের কাছে গিয়ে পৌঁছায়। মহাভারতে "খাণ্ডব দহন" পর্বে, অর্জুন অগ্নিদেবকে সাহায্য করেছিলেন বলে, অগ্নিদেব পুরস্কারস্বরূপ অর্জুনকে এটি দিয়েছিলেন। ধনুকটির বিশেষত্ব হল এতে ১০৮ টি দড়ি লাগানো ছিল যা দিয়ে একসঙ্গে একশোটি তীর নিক্ষেপ করা যেত। ধনুকটি সোনা ও বিভিন্ন রত্ন দিয়ে সাজানো ছিল। অর্জুন গাম্ভিবের সাহায্যেই ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ প্রমুখ যোদ্ধাদের বধ করেছিলেন। মহাভারতের শেষে অর্জুন বরুনদেবের কাছে গাম্ভিব ফেরত দিয়েছিলেন। গান্ডিব কথাটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ 'গল্ড' থেকে। যার অর্থ প্রবল শব্দ। এই ধনুকটির দড়ি ধরে টান দিলে মেঘ গর্জনের মতো প্রচণ্ড আওয়াজ হোত বলে এর নাম গান্ডিব দেওয়া হয়েছে। অপর একটি মত বলছে যে, এই ধনুকটি গন্ডারের মেরুদন্ড দিয়ে তৈরি বলে এমন নাম হয়েছে।
সপ্তঋষি কে কে?
সপ্তর্ষি মণ্ডল, রাতের আকাশে দৃশ্যমান এক নক্ষত্রের সমষ্টি, যেখানে সাতটি তারা এমন ভাবে অবস্থান করছে যেটাকে দেখতে ঠিক জিজ্ঞাসা চিহ্নের মতো দেখায়। খালি চোখে আমরা সবাই এটিকে দেখেছি। পুরাণে ঐ নক্ষত্র গুলোকে সাতজন ঋষির প্রতিনিধি হিসেবে ধরা হয়েছে। তাঁদের নাম গুলি হল ১. বশিষ্ঠ, ২. মরীচি, ৩. পুলস্ত্য, ৪. পুলহ, ৫. অত্রি, ৬. অঙ্গিরা ও ৭. ক্রতু। এই সপ্তর্ষিদের নাম বিভিন্ন পৌরাণিক গ্রন্থে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তবে সর্বাধিক স্বীকৃত তালিকা এটিই। কোথাও কোথাও ঋষি অগস্ত্যকে সপ্তর্ষির মধ্যে গণ্য করা হয়েছে, তবে সাধারণত তিনি "অষ্টম ঋষি" হিসেবে পরিচিত। কিংবদন্তি অনুসারে, পরবর্তী যুগে সাতটি তারার নাম পাল্টে হবে- দীপ্তিমত, গলভ, পরশুরাম, কৃপ, দ্রোণি বা অশ্বত্থামা, ব্যাস ও ঋষ্যশৃঙ্গ। ইদানিং অনেকেই স্বামী বিবেকানন্দকে সপ্তঋষির একজন বলে প্রচার করছে। সত্যিই কি আপনি তাই মনে করেন? কমেন্টে লিখে জানান।
সুদর্শন চক্রের রহস্য
আমরা সবাই জানি যে, ভগবান বিষ্ণু (শ্রীকৃষ্ণ), অশুভ শক্তিকে দমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সুদর্শন চক্র ব্যবহার করেন। এটি হল ১০৮ টি ধারালো দাঁত যুক্ত এক প্রকার স্বয়ংক্রিয় ঘূর্ণায়মান চাকতি। 'সুদর্শন' কথার অর্থ হল সুন্দর দেখতে। সুদর্শন ছাড়াও চক্রটির আরোও অনেক নাম আছে- চক্ররাজ, নীলচক্র, মহাজ্বাল ইত্যাদি। দক্ষিণ ভারতে এটিকে বলা হয় চক্রথালবর। সুদর্শন চক্র তৈরি করেছিলেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। তিনি সূর্যের তেজ থেকে এই অস্ত্রটি নির্মাণ করেছিলেন। সুদর্শন চক্রকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে ধরা হয়, এমনকি ব্রহ্মাস্ত্রের থেকেও শক্তিশালী। পুরাণ মতে শ্রীবিষ্ণু এটিকে একাধিক বার ব্যাবহার করেছিলেন, যেমন- সমুদ্র মন্থনের সময় অমৃত চুরির চেষ্টাকারী রাহুর মুন্ডু কাটা। মহাভারতে শিশুপাল বধ। মাতা সতীর দেহকে টুকরো টুকরো করে, সতী পীঠ নির্মাণ।
শ্রীকৃষ্ণের হতভাগ্য পুত্র
শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর এক স্ত্রী জাম্ববতীর পুত্র ছিলেন শাম্ব। একবার স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তাঁর এই পুত্রকে অভিশাপ দিয়েছিলেন। এখন প্রশ্ন হল কিন্তু কেন? একবার দেবর্ষি নারদ দ্বারকা নগরীতে গেলে শাম্ব তাঁকে অবজ্ঞা করেন। এতে নারদ খুবিই অপমানিত বোধ করেন। তিনি শাম্বকে এর উচিৎ শিক্ষা দেবার সংকল্প করেন। এরপর একদিন শ্রীকৃষ্ণ যখন রৈবতক পর্বতের প্রমোদকাননে তাঁর মহিষীদের সঙ্গে আমোদ প্রমোদে লিপ্ত ছিলেন, তখন নারদ একটি ফন্দি আঁটেন। তিনি শাম্বকে গিয়ে বলেন যে তাঁর পিতা তাকে ডেকেছেন। কথামত শাম্ব সেখানে উপস্থিত হন। কিন্তু তাঁকে দেখে শ্রীকৃষ্ণ বেজায় চটে যান। তিনি শাম্বকে অভিশাপ দেন যে, সে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে পচবে। পরে শ্রীকৃষ্ণ আসল ব্যাপারটি বুঝতে পেরে শাম্বকে পরামর্শ দেন যে, যা হয়েগেছে সেটাকে আর ফেরানো সম্ভব নয়, তবে সে যদি তপস্যা করে সূর্যদেবকে সন্তুষ্ট করতে পারে তাহলে সে অভিশাপ থেকে রেহাই পাবে। সেই মতো শাম্ব টানা বারো বছর
সপ্তঋষি কে কে?
সপ্তর্ষি মণ্ডল, রাতের আকাশে দৃশ্যমান এক নক্ষত্রের সমষ্টি, যেখানে সাতটি তারা এমন ভাবে অবস্থান করছে যেটাকে দেখতে ঠিক জিজ্ঞাসা চিহ্নের মতো দেখায়। খালি চোখে আমরা সবাই এটিকে দেখেছি। পুরাণে ঐ নক্ষত্র গুলোকে সাতজন ঋষির প্রতিনিধি হিসেবে ধরা হয়েছে। তাঁদের নাম গুলি হল ১. বশিষ্ঠ, ২. মরীচি, ৩. পুলস্ত্য, ৪. পুলহ, ৫. অত্রি, ৬. অঙ্গিরা ও ৭. ক্রতু। এই সপ্তর্ষিদের নাম বিভিন্ন পৌরাণিক গ্রন্থে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তবে সর্বাধিক স্বীকৃত তালিকা এটিই। কোথাও কোথাও ঋষি অগস্ত্যকে সপ্তর্ষির মধ্যে গণ্য করা হয়েছে, তবে সাধারণত তিনি "অষ্টম ঋষি" হিসেবে পরিচিত। কিংবদন্তি অনুসারে, পরবর্তী যুগে সাতটি তারার নাম পাল্টে হবে- দীপ্তিমত, গলভ, পরশুরাম, কৃপ, দ্রোণি বা অশ্বত্থামা, ব্যাস ও ঋষ্যশৃঙ্গ। ইদানিং অনেকেই স্বামী বিবেকানন্দকে সপ্তঋষির একজন বলে প্রচার করছে। সত্যিই কি আপনি তাই মনে করেন? কমেন্টে লিখে জানান।
মহাবিজ্ঞানী আর্যভট্ট
মহাবিজ্ঞানী আর্যভট্টের জন্ম হয় আনুমানিক 476 খ্রিস্টাব্দে কুসুমপুর গ্রামে। যা বর্তমানে বিহারের পাটনার কাছে অবস্থিত। তিনি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ "আর্যভটীয়" গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যার একটি মৌলিক গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাঁর লেখা আর একটি বিখ্যাত বই হল আর্য-সিদ্ধান্ত। আর্যভট্ট শূন্যের ধারণা প্রবর্তন করেন, যা গণিতের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। তিনি পাই (n)-এর মান 3.1416 বলে উল্লেখ করেন, যা আধুনিক মানের খুব কাছাকাছি। কোপার্নিকাসের বহু আগে তিনি বলেন যে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে। এছাড়াও তিনি আরোও বলেছিলেন যে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ পৃথিবী ও চাঁদের ছায়ার কারণে হয়। ত্রিকোণমিতিতেও তাঁর বিরাট অবদান রয়েছে। তিনি বর্গমূল ও ঘনমূল গণনা করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন এবং সাইন (sine) ফাংশনের ধারণা প্রবর্তন করেন। আনুমানিক 550 খ্রিস্টাব্দে অর্যভট্টের মৃত্যু হয়।
কর্ণের বিজয়
মহাভারতে অর্জুনের কাছে যেমন গান্ডিব ধনুক ছিল তেমনি কর্ণের কাছে ছিল বিজয় ধনুক। বিজয় ধনুক দেব শিল্পী বিশ্বকর্মা নির্মাণ করে ছিলেন দেবাদিদেব মহাদেবের জন্য। মহাদেব পরবর্তীতে এটি পরশুরামকে দান করে দেন। পরশুরাম কর্ণের প্রতিভা ও গুরু ভক্তিতে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বিজয় ধনুক প্রদান করে ছিলেন। এই ধনুকটির বিশেষত্ব হল, যার হাতে এটি থাকবে, প্রতিদ্বন্দ্বীর কোন অস্ত্রই তাকে মারতে পারবে না এবং তার জিৎ নিশ্চিত। তাই এর নাম দেওয়া হয়েছিল বিজয়। বিজয়ের টঙ্কারের আওয়াজ বজ্রপাতের মত ভয়ঙ্কর ছিল। কর্ণ এই ধনুকটি শুধুমাত্র মহাভারতের যুদ্ধের সতেরো তম দিনে ব্যাবহার করেছিলেন। অর্জুন যখন কর্ণকে হত্যা করেছিলেন তখন তাঁর হাতে বিজয় ধনুক ছিল না। তিনি সেটাকে রেখে, কাদা থেকে রথের চাকা তুলছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ জানতেন কর্ণের হাতে বিজয় ধনুক থাকলে অর্জুনের কোন তীরই কাজ করবে না। তাই তিনি ঐ সময়েই অর্জুনকে বান চালাতে বলেছিলেন। কর্ণের মৃত্যুর পর বিজয় ধনুককে তাঁর চিতার সঙ্গে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই আট জন চিরঞ্জীবি এখনো বেঁচে আছেন?
হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী, 'চিরঞ্জীবী' বলতে সেইসব পৌরাণিক চরিত্রদের বোঝায় যারা কলিযুগের শেষ পর্যন্ত জীবিত থাকবেন। তাঁদের নাম গুলি হল-
১. বেদব্যাস: ঋষি পরাশরের পুত্র ব্যাসদেব মহাভারত
রচনা করেছিলেন।
২. হনুমান: ইনি জগতের রামের একনিষ্ঠ ভক্ত
সর্বশ্রেষ্ঠ ব্রহ্মচারী। ভগবান বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার।
হনুমানজি।
৩. পরশুরাম: ঐশ্বরিক অস্ত্রের জ্ঞানী। ইনি সমস্ত অস্ত্র, শাস্ত্র ও জ্ঞানী
বিভীষণ।
৫. অশ্বত্থামা:দ্রোণাচার্যের পুত্র। শ্রীকৃষ্ণ একটি অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, এনার শরীরে বেদনাদায়ক ঘা থাকবে, যা কখনই নিরাময় হবে না।
৪. বিভীষণ: রাবনের ভাই
৬. মহাবলী: ভগবান বিষ্ণু বামন অবতারের সময়
এনাকে পাতাল লোকে পাঠিয়ে ছিলেন।
৭. কৃপাচার্য: ইনি পাণ্ডব ও কৌরব রাজকুমারদের
কুলগুরু ছিলেন।
নরকের নদী
বৈতরণী বা বৈতর্ণ হল হিন্দু পুরাণের এক নদী। এটি পৃথিবী ও নরকের মাঝে অবস্থিত। এই নদীর ধারণা হিন্দু শাস্ত্র, বিশেষ করে গরুড় পুরাণ, মহাভারত এবং বিভিন্ন তান্ত্রিক গ্রন্থে বিস্তারিত ভাবে বর্ণিত হয়েছে। বিশ্বাস অনুযায়ী, মৃত্যুর পর আত্মা যমলোকে প্রবেশ করে। এই যাত্রাপথে বৈতরণী নদী অতিক্রম করা একটি কঠিন পরীক্ষা স্বরূপ। গরুড় পুরাণ মতে, বৈতরণী একশত যোজন পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি রক্ত, পুঁজ, মলমূত্র এবং বিষাক্ত প্রাণীতে পরিপূর্ণ। পাপী ব্যক্তিরা এই নদী পার হতে গিয়ে ভয়ানক যন্ত্রণার সম্মুখীন হয়। বলা হয় পাপীরা নদীতে ডুবে যাওয়ার সময় নখ, চুল, বা দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করে, কিন্তু স্রোতে ভেসে যায়। অন্যদিকে পুণ্যবানরা নামমাত্র মূল্য দিয়ে সহজেই নদী পার করে যায়। এই কারনেই যখন কেউ কোন ঝামেলা থেকে বেরিয়ে আসে তখন একটি বাগধারা বলা হয়, "বৈতরণী পার হয়েছে"।
মা মনসার স্বামী ও পুত্র
ঋষি কাশ্যপের মন থেকে নাগমাতা কদ্রুর গর্ভে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কাশ্যপ ঋষির মন থেকে জন্ম বলে তার নাম হয় 'মনসা'। ইনিই আমাদের সকলের কাছে বিষহরি মা মনসা। ঋষি কাশ্যপ জরৎকারু নামের অপর এক ঋষির সাথে মনসার বিয়ে দিয়ে দেন। ঋষি জরৎকারু ছিলেন ব্রহ্মচারী। কথিত আছে, তিনি শুধু বাতাস খেয়েই কঠোর তপস্যা করতেন। এই কঠোর তপস্যার ফলে তাঁর শরীর ক্ষীণ হয়েছিল, তাই তাঁর নাম হয় জরৎকারু। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি কখনো বিবাহ করবেন না। কিন্তু ঘটনাক্রমে, মনসার সাথে জরুৎকারুর বিয়ে পূর্ব-নির্ধারিত ছিল। জরৎকারু এই শর্তে মনসাকে বিবাহ করতে রাজি হয়েছিলেন যে, মনসা যেন কখনো তার অবাধ্য না হয়। একদিন মনসা জরৎকারুকে ঘুম থেকে তুলতে দেরি করেন। এই ঘটনায় দুঃখিত হয়ে জরৎকারু মনসাকে ত্যাগ করেন। পরে দেবতাদের অনুরোধে তিনি মনসার কাছে ফিরে আসেন এবং আস্তিক নামে তাঁদের এক পুত্রের জন্ম হয়।
অভিমন্যুর হত্যাকাণ্ড
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের তেরো তম দিনে অর্জুনের ষোল বছরের পুত্র অভিমন্যুকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। ঐ দিন দ্রোণাচার্য চক্রব্যূহ তৈরি করেন। "চক্রব্যূহ" হল সাপের মতো পাকানো এক ধরনের সৈন্য বিন্যাস। এই ব্যূহ ভেদ করার ক্ষমতা কেবলমাত্র অর্জুন, শ্রীকৃষ্ণ ও অভিমন্যুর ছিল, তবে অভিমন্যু শুধু ব্যুহে প্রবেশ করতে জানতেন, বেরিয়ে আসার কৌশল জানতেন না। এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দুর্ষধন তাঁকে ফাঁদে ফেলেন। এর পর শিবের বরপ্রাপ্ত জয়দ্রথ পাণ্ডবদের ব্যুহে প্রবেশে বাধা দেন, ফলে অভিমন্যু একা পড়ে যান। কর্ণ অভিমন্যুর ধনুকের ছিলা কেটে দিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেন। কিন্তু অভিমন্যু রথের চাকা খুলে তাদের দিকে ছুঁড়তে যান। এই দেখে দুঃশাসনের পুত্র পাথর নিক্ষেপ করে তাঁকে আহত করে। এর পর অশ্বত্থামা, কৃপাচার্য ও শকুনি মিলে অভিমন্যুকে ঘির ধরে, তলোয়ার, গদা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।
পরাশরের জন্ম রহস্য
ঋষি পরাশর ছিলেন মহর্ষি বশিষ্ঠের নাতি। ঋষি শক্তি ছিলেন তাঁর পিতা এবং মায়ের নাম ছিল অদৃশ্যন্তী। কথিত আছে, একবার রাক্ষসরা ঋষি শক্তি ও অদৃশ্যন্তীকে আক্রমণ করেছিল, পরাশর তখন তাঁর মায়ের পেটে। অলৌকিক ভাবে তিনি মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে এসে রাক্ষসদের বধ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ঋষি শক্তি রাক্ষসদের হাতে মারা পড়েন। বড় হয়ে পরাশর তাঁর পিতার মৃত্যুর বদলা নিতে একটি যজ্ঞের মাধ্যমে সমগ্র রাক্ষস বংশ ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর পিতামহ বশিষ্ঠ তাঁকে শান্ত করেন। একবার ঋষি পরাশর ধীবর কন্যা সত্যবতীর রূপে আকৃষ্ট হন। তাদের মিলনে এক মহাজ্ঞানী পুত্রের জন্ম হয়। সেই পুত্রই মহাভারতের রচয়িতা ব্যাসদেব। কিংবদন্তি অনুযায়ী, পরাশর একবার গঙ্গা নদীর জলে ধ্যানরত ছিলেন। গঙ্গার স্রোতে তাঁর ধ্যানভঙ্গ হলে তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে গঙ্গাকে শাপ দেন যে তিনি মানবদেহে জন্ম নেবেন। পরিনাম হিসাবে গঙ্গা মানবরূপে জন্মলাভ করেন এবং রাজা শান্তনুর সঙ্গে বিয়ে হয়। ব্যাপার হচ্ছে শান্তনুর সঙ্গে সত্যবতীর ও বিয়ে হয়েছিল। সত্যবতীর বিয়ের আগেই পরাশরের ঔরসজাত সন্তান ব্যাসদেবের জন্ম হয়েছিল।
ধৃতরাষ্ট্রের একমাত্র জীবিত পুত্র
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে ধৃতরাষ্ট্রের একশো জন পুত্রই নিহত হয়েছিল। কিন্তু একজন পুত্র বেঁচে যান। তাঁর নাম যুযুৎসু। তিনি ছিলেন ধৃতরাষ্ট্রের একশো এক তম পুত্র। তবে তাঁকে গান্ধারী জন্ম দেননি। ধৃতরাষ্ট্রের ঔরসে সুগদা নামে এক দাসীর গর্ভে জন্ম হয়েছিল। যুযুৎসু কথার অর্থ হল, যিনি যুদ্ধ করতে আগ্রহী। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরু হবার আগে যুধিষ্ঠির ঘোষণা করেছিলেন যে, "ধর্মে ও ন্যায়ের জন্য যিনি পক্ষ পরিবর্তন করতে চান, তিনি এইমুহুর্তে তা করতে পারেন।" এই কথা শুনে যুযুৎসু কৌরব পক্ষ ত্যাগ করে পান্ডব শিবিরে যোগ দেন। কথিত আছে তিনি একাই সাত লক্ষ কুড়ি হাজার সৈনকে পরাজিত করেছিলেন। পান্ডবরা পৃথিবী থেকে মহাপ্রস্থানের আগে যুযুৎসুকে বালক রাজা পরীক্ষিতের তত্ত্বাধায়ক হিসেবে নিযুক্ত করেন। আপনি কি যুযুৎসুকে জানতেন? কমেন্টে লিখে জানান
শান্তনু কে ছিলেন?
মহাভারতের শান্তনু ছিলেন হস্তিনাপুরের একজন বিখ্যাত রাজা এবং কুরুবংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনি রাজা দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার পুত্র ভরতের বংশধর ছিলেন। শান্তনুর পিতার নাম ছিল প্রতীপ, যিনি একজন ধার্মিক ও প্রজাবৎসল রাজা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল সুনন্দা। মহাভিষ নামের ইক্ষাকুবংশীয় এক রাজা বহু যজ্ঞ করে স্বর্গে স্থান পেয়েছিলেন। একদিন মহাভিষ যখন দেবতাদের সঙ্গে ব্রহ্মার সভায় বসে ছিলেন, তখন বাতাস লেগে দেবী গঙ্গার বুকের কাপড় সরে যায়। সমস্ত দেবতারা মাথা নিচু করে ফেললেও মহাভিষ গঙ্গার দিকে তাকিয়ে থাকে। ভগবান ব্রহ্মা সেটা লক্ষ্য করেন এবং মহাভিষকে তিনি অভিশাপ দেন যে সে আবার মানব রূপে পৃথিবীতে জন্মলাভ করবে। আশ্চর্যের বিষয় মহাভিষ মানব জন্মে শান্তনু হয়ে আবার সেই গঙ্গার প্রেমেই পড়েছিলেন। মহাভারতের কাহিনীতে তিনি গঙ্গা ও সত্যবতীকে বিয়ে করার জন্যই বিশেষ ভাবে পরিচিত। ভীষ্ম, চিত্রাঙ্গদ এবং বিচিত্রবীর্ষ ছিলেন তাঁর পুত্র, যারা কুরুবংশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
সবচেয়ে বড় অভিশাপ
হিন্দু পুরাণ অনুসারে, জয় ও বিজয় হলেন শ্রীবিষ্ণুর বৈকুণ্ঠধামের দুই দ্বাররক্ষী বা দ্বারপাল। একবার ব্রহ্মার চার জন মানসপুত্র (সনক, সনন্দন, সনাতন ও সনৎকুমার) ভগবান শ্রীবিষ্ণুর দর্শন পেতে বৈকুণ্ঠে হাজির হন। তাঁরা বাচ্চা ছেলের মতো দেখতে ছিলেন। জয় ও বিজয় তাঁদেরকে চিনতে না পেরে, ভিতরে ঢুকতে বাধা দেয়। এতে ঐ চার কুমার জয় ও বিজয়ের ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দেন যে তারা দুজনে মর্তলোকে বার বার জন্মলাভ করে কষ্ট যন্ত্রনা ভোগ করবে। খবরটি বিষ্ণুর কানে পৌঁছালে তিনি সেখানে উপস্থিত হন। জয় বিজয় বিষ্ণুর কাছে অনুরোধ করেন যে কুমারদেরকে বলুন, তারা যেন অভিশাপ ফিরিয়ে নেয়। শ্রীবিষ্ণু বলেন ব্রহ্মার পুত্রদের দেওয়া অভিশাপ ফেরানো সম্ভব নয়। তিনি প্রস্তাব দেন হয় তাদের দুজনকে সাত জন্ম ভগবানের সেবক অথবা তিন জন্ম ভগবানের শত্রু হয়ে জন্মলাভ করতে হবে, তবেই তারা মুক্তি পাবে। জয় বিজয় সাত জন্ম বিষ্ণুকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতেই পারছিল না। তাই তারা তিন জন্ম শত্রু হয়ে জন্মাবার প্রস্তাবটি গ্রহন করে। সেই মতো তারা সত্যযুগে হিরণ্যাক্ষ ও হিরণ্যকশিপু, ত্রেতাযুগে রাবণ ও কুম্ভকর্ণ এবং দ্বাপরযুগে শিশুপাল ও দন্তবক্র নামে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে, আর প্রতিবারেই তারা বিষ্ণুর অবতার দ্বারা নিহত হয়।
Comments
Post a Comment