Posts

Showing posts from March, 2025

বঙ্কিমচন্দ্র

বঙ্কিমচন্দ্র সারাজীবনে ভুলতে পারেননি তাঁর মোহিনীকে.. বঙ্কিমচন্দ্রের বিবাহ হল। পাত্রীর নাম মোহিনী। বালিকাবধূ। শ্বশুর  বাড়ি কাঁটালপাড়া থেকে হাঁটা দূরত্বে।অসামান্যা রূপসী ছিল মোহিনী। তেমনি নরম মনের মেয়ে। বঙ্কিম মোহিনীকে চোখে চোখে হারাতেন। বঙ্কিম কিছু লিখলে প্রথম পড়ে শোনাতেন মোহিনীকে। মোহিনী  যখন শ্বশুর বাড়ি থাকতো না, বঙ্কিম তখন  ছটফট করতেন বিরহের জ্বালায়। প্রায়ই বাড়ির লোককে লুকিয়ে পায়ে হেঁটে মোহিনীর সঙ্গে দেখা করতে শ্বশুরবাড়ি চলে যেতেন। বঙ্কিম খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। বঙ্কিম ছাত্র অবস্থায় পড়ার সময় বৃত্তি পেতেন। একবার বৃত্তির টাকায় তিনি গোপনে মোহিনীকে একজোড়া কানের দুল ও সোনার চুলের কাঁটা উপহার দিয়েছিলেন। এরপর  বঙ্কিমচন্দ্র চাকুরি নিয়ে যশোরে চলে গেলেন। মোহিনীর বিরহে বঙ্কিমের মন খুব খারাপ।  এ যেন কবির গানের মত, “ সখী, ভাবনা কাহারে বলে। সখী, যাতনা কাহারে বলে... বঙ্কিম চিঠি লিখলেন মোহিনীকে, এইবার আমি তোমাকে এখানে শীঘ্রই লইয়া আসিব। চিঠি পেয়ে মোহিনী আত্মহারা। বাড়ির লোকেরাও রাজি। কিন্তু এত সুখের দিন বুঝি সইলো না। কিছুদিন পর বঙ্কিমের কাছে খবর এল মোহিনীর খুব জ্বর। বঙ্কিম খ...

দাদাঠাকুর

কোনও শব্দ বা বাক্য শুরু থেকে পড়লে যা হয়, আর শেষ থেকে পড়লেও যদি একই হয় তখন তাকে ইংরেজিতে বলে প্যালিনড্রোম (Palindrome)। এই শব্দের উৎপত্তি হয়েছে দুটো গ্রিক শব্দ ‘প্যালিন’ (Palin) এবং ‘ড্রোমোস’ (Dromos) থেকে। যার অর্থ পুনরায় পিছনে ফিরে আসা (Running back again)। বাংলায় প্যালিনড্রোম নিয়ে লিখতে গেলে দাদাঠাকুরকে বাদ দিয়ে আলোচনা করা অসম্ভব। আর দাদাঠাকুরকে বাঙালি পাঠকরা চেনে না, এমন কাউকে মনে হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। দাদাঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিতই প্রথম বাঙালি, যিনি বাংলায় প্যালিনড্রোম নিয়ে গভীরভাবে চর্চা করেছিলেন। দাদাঠাকুর সম্পাদিত ‘বিদূষক’ পত্রিকায় তিনি অনেক বাংলা প্যালিনড্রোম বাক্য বাঙালিদের উপহার দিয়েছেন। যেমনঃ ১) চেনা সে ছেলে বলেছে সে নাচে। ২) তাল বনে নেব লতা। ৩) মার কথা থাক রমা। ৪) রমা তো মামা তোমার। ৫) চার সের চা। ৬) বেনে তেল সলতে নেবে। ৭) কেবল ভুল বকে। ৮) দাস কোথা থাকো সদা? ৯) থাক রবি কবির কথা। ১০) বিরহে রাধা নয়ন ধারা হেরবি। এগুলি হল দাদাঠাকুর সৃষ্ট অমর কিছু প্যালিনড্রোম বাক্যের উদাহরণ। এছাড়া তিনি প্যালিনড্রোম বাক্যে কবিতাও লিখে গেছেন। যেমনঃ “রাধা নাচে অচেনা ধারা রাজন্যগণ তরঙ্...

আজ বারান্দায়

আর আমি দেবপ্রসাদ জানা তুমি দরজা বন্ধ করো,  আমি বসে রই আজ তোমার বারান্দায়  প্রখর দুপুরের উলঙ্গ নিস্তব্ধতা,  তোমার থালায় এখনো লেপটে থাকা,  ঘিয়ের গন্ধ, কয়েকটা মাছি আর আমি, তোমার বাড়ির মাদুর, অবহেলে পড়ে থাকা- পায়া ভাঙা জলচৌকি আর আমি। একটা কালো মেঘ, সূর্য ঢেকে দিয়ে, সে-কি আনন্দে নেচে নেচে এগিয়ে চলেছে- একবার জানালার ফাঁক দিয়ে দেখো। না না দেখবো না আমি তোমাকে,  আকাশ আর ধোঁয়া ধোঁয়া মেঘ,  প্রখর রৌদ্রের তাপ, আর আমি তোমার বারান্দায়। আমি আর নিদ্রাহীন প্রশস্ত মাঠ।  একাকিত্বে স্মৃতি, আর আমি- পোড়া ধ্বস্ত মাঠির হাঁড়িতে ভনভনে মাছি, নগ্ন রৌদ্র রষ্মির উত্তাপে পুড়ে যাওয়া ক্লান্ত শরীর। পৃথিবীর কানে কানে করে যাওয়া নালিশ  পথিকের পায়ে পায়ে আসা অপরাহ্ন, স্মৃতিক্ষত মেঘের হা হা রব, আর আমি। এক পাত্র সুরায় দেবপ্রসাদ জানা এক পাত্র সুরায় যখন- অতি সন্তর্পণে খুলে ফেলি বোধের পোশাক কোন এক দুর্যোগের রাত্রি, হঠাৎ বজ্রপাত,  হিমস্বরে অনন্ত খাদ পেরিয়ে বয়ে যাওয়া স্রোত আশঙ্কার নদী।  বিচ্ছেদের বিষাদময় সুর,  না কোন নতুন অধ্যায়ের সূচনা নয়,  কারো চকিত পায়ের শব্দে - সশব্দে ভ...

ব্যোমকেশ

বড় মুশকিলে পড়িয়াছি। ১৯৭০  সালে শরদিন্দু বাবুর মৃত্যুর পর হইতে আজ অবধি কলম ধরি নাই। অনভ্যাসে বিদ্যা কিঞ্চিৎ হ্রাস পাইয়াছে। তবু বহুযুগ পরে এই মুখপুস্তিকাখানি পাইয়া কিছু লিখিতে সাধ জাগিল। খোকার পুত্র এখন বড় হইয়াছে। সেই আমাকে এই অ্যাকাউন্টখানি খুলিয়া দিয়া কহিল মনের সকল কথা ইহাতে লিপিবদ্ধ করিতে। কিন্তু কী লিখি? জানি পাঠকদিগের আমার প্রতি এক চরম ক্ষোভ রহিয়াছে। কেন বিশুপাল বধের কাহিনি সম্পূর্ণ করিলাম না? কেন শরদিন্দু বাবুর মৃত্যুর পরেই লেখনী সংবরণ করিলাম? এতদিন এই কথা প্রকাশ করি নাই। আজ জানাই, উহাই ব্যোমকেশের শেষ কেস ছিল এবং উহাতে তাহার সম্পূর্ণ পরাজয় হয়। আমি চাহিয়াছিলাম পাঠকদের নিকট যে ব্যোমকেশ বীরের আসনে আসীন, তাহা যেন বিন্দুমাত্র লাঘব না হয়। এই অবধি লিখিয়াছি, আচমকা ঘরে ব্যোমকেশ প্রবেশ করিল। মুচকি হাসিয়া কহিল “কি হে, আজ শরদিন্দুবাবুর উপরে ফেসবুকে কিছু লিখছ নাকি?” আমি চমকিত হইয়া কহিলাম “বুঝলে কি করে?” একখানি সিগারেট ধরাইয়া আরামকেদারায় বসিয়া পা নাচাইতে নাচাইতে ব্যোমকেশ কহিল “এ বুঝতে বুদ্ধি লাগে না। গতকাল থেকেই তোমার মধ্যে কেমন একটা অস্থির ভাব দেখছি। তাক থেকে শরদিন্দু বাবুর লাল লাল বইগুলো ট...

ব্যোমকেশ না ফেলুদা

বেঁচে থাকলে বসের আজ বয়স হতো ১২৬।  ইস্টবেঙ্গল না মোহনবাগান, উত্তম না সৌমিত্র, ইলিশ না চিংড়ি— এরকম নানা বিতর্কের মতোই ফেলুদা না ব্যোমকেশ, এনিয়েও কম টেবিল চাপড়াচাপড়ি হয়নি। আমি নিজে ফেলুদা এবং ব্যোমকেশ দু’‌টিরই ভক্ত। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেও বুঝতে পেরেছি, আমি ক্রমেই ঝুঁকে পড়ছি ব্যোমকেশের দিকে। ফেলুদা পিকচার পারফেক্ট। গড়পড়তা বাঙালি যা চট করে হতে পারবে না, ফেলুদা তাই। ছ’‌ফিটের ওপরে হাইট। ঝকঝকে হ্যান্ডসাম, অব্যর্থ বন্দুকের নিশানা, চরম আইকিউ, তুখোড় স্মৃতিশক্তি। তার চলনে–বলনে, হাঁটাচলায়, কথা বলায় হিরের ঔজ্বল্য ঠিকরে বেরিয়ে আসে। পনেরো জনের মধ্যেও ফেলুদা সামনে এলে ব্যাকগ্রাউন্ডে কোথাও ‘‌আমাকে দেখুন’‌–এর রিংটোন বাজতে থাকে। ব্যোমকেশ ঠিক অমন নন। প্রথম গল্পে তার বর্ণনায় শরদিন্দু জানাচ্ছেন, বয়স তেইশ–চব্বিশ। গায়ের রং ময়লা। শিক্ষিত ভদ্রলোকের ছাপ তার চেহারায় আছে। চোখেমুখে বুদ্ধির উপস্থিতি। বেশভূষার যত্ন নেই, চুল অবিন্যস্ত। পায়ের জুতো জোড়াও ময়লা।  দৃশ্যত ফারাকটা কল্পনা করুন। সৌমিত্র আর অনির্বাণের মধ্যে যা তফাৎ, তাই। তবে ব্যোমকেশের গল্পে আমাকে যা সবচেয়ে বেশি ‘‌থ্রিল’‌ করেছে, তা হল খুনের ...

বীরবল

১৫৮৬ সালে ঠিক এই সময়ে আফগানিস্থানে একটি যুদ্ধে মারা যান মহেশ দাস ওরফে বীরবল। স্মরণে বীরবল শ্রদ্ধাঞ্জলি ------------------------------- হায় বীরবল শুধু ভাঁড় বলেই চিনল লোকে! ইতিহাস ঘেঁটে অন্য পরিচয় পেলেন বিনোদ ঘোষাল ঋণ*আনন্দবাজার* ------------------ ঘোড়ায় চড়ে চৌগান(পোলো) খেলছেন মহেশ দাস। আর সেই খেলা দেখছেন তার প্রাণের বন্ধু সম্রাট আকবর। হাততালি দিয়ে উৎসাহও দিচ্ছেন খেলার। আচমকাই ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে সাংঘাতিক জখম মহেশ। এমনই আঘাত, যে সংজ্ঞা হারালেন তিনি। ছুটে এলেন দিল্লীশ্বর। কোলের ওপর তুলে নিলেন তাঁর বন্ধুর মুখ। কী করে জ্ঞান ফেরানো উচিত ভেবে না পেয়ে নিজেই বন্ধুর মুখে মুখ লাগিয়ে প্রাণপণে ভরে দিতে থাকলেন নিজের নিশ্বাস। এই মহেশ দাসই হলেন বীরবল। সম্রাট আকবরের প্রাণের চেয়েও প্রিয়। অথচ যাঁর পরিচয় দিতে কালমাত্র দেরি করবেন না কেউই।— ‘‘ও, বীরবল? আকবরের নবরত্ন সভার ভাঁড়?’’ আসল ঘটনা হল, এই সব কাহিনির সঙ্গে মানুষ বীররবলের কোনও যোগই ছিল না। সবটাই কল্পনাপ্রসূত। তা’ও সে গুলি আকবরের রাজ-অবসানের একশো বছর বাদে মুখে মুখে প্রচলিত হয়। তাঁকে বিদূষক হিসেবে কোনও দিনই নিযুক্ত করেননি সম্রাট আকবর।। অ্যারিস্টটলের কাছে...

রেবা রক্ষিত

☘️| বুকে যার ‘একশো হাতির’ বল |☘️ দেহের ওজন উনিশটি মণ না হলেও এই বাঙালি কন্যা ছাতিতে হাতি উঠিয়ে দেশে বিদেশে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। বুকের ওপর হাতি তোলা হয়ে গিয়েছিল তার সকাল বিকালের অভ্যাস। নাম তাঁর রেবা রক্ষিত, হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন মহিলা এক বাঙালি বীরাঙ্গনাই বটে..💪🔥 ১৯৩০ সালে পূর্ব বাংলার কুমিল্লার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম রেবার। ছোটবেলা থেকেই ডানপিটে মেয়ের ব্যাপক আগ্রহ ছিল খেলাধুলো শরীরচর্চার উপর। স্কুলে পড়ার সময়েই কলকাতায় চলে আসে তাঁর পরিবার। ভরতি হন এক যোগচর্চা কেন্দ্রে, নাম ‘‌জাতীয় ক্রীড়া ও শক্তি সংঘ’‌। সেখান থেকেই চলে আসা বিষ্টু ঘোষের আখড়ায়। তখন তাঁর বয়স মাত্র এগারো। প্রথম প্রথম কয়েকদিন গিয়েই পালিয়ে এসেছিলেন। ভয়ে পেয়েছিলেন মেয়ে হয়ে তাঁর চেহারা ষণ্ডামার্কা হয়ে যাবে। দাদু বুঝিয়ে সুঝিয়ে আবার নিয়ে যান। বিষ্টুবাবু কথা দিয়েছিলেন নাতনিকে ষণ্ডা নয় কিন্তু এমন চেহারা বানিয়ে দেবেন যে হাতির মতো হবে তাঁর শক্তি। অথচ চেহারা থাকবে একেবারে সাধারণ। পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিক থেকেই রেবা সার্কাসে খেলা দেখাতে শুরু করেন। জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা এখান থেকেই। বিষ্টু ঘোষের হাত ধরে বুকের উপর দিয়ে মোটর সা...

আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

পৌনে তেরোর নামতা আশুতোষ মুখোপান্যায় “এতক্ষণ ধরে বোকার মত বসে ছিলি কেন? ঢেউ গুনতে পারিস নি? প্রতি ঢেঊয়ে সাত পয়সা করে হলে এতক্ষণে তুই লাখপতি হয়ে যেতিস, জানিস?” আমি বললুম, আমি বোকার মত বসে থাকিনি তো। আমি তো ইলিশ মাছের নৌকো গুনছিলাম।  ছোটোকাকা ছেড়ে দেবার লোক নন। বলল, সেটা অবশ্য ঠিকই করেছিলি। তা কী করে বুঝলি কোন্‌ জেলেডিঙ্গি ইলিশের আর কোন্‌টা চিংড়ির? ওই যে, যে নৌকোর মেছোরা মাথায় গামছা পেঁচিয়েছিল সেগুলো ইলিশের, আমি জানি। জালে বাধা পেয়ে ইলিশেরা যখন উড়ুক্কু মাছের মত সাঁই সাঁই করে লাফিয়ে নৌকোয় ওঠে তখন ওদের ধারালো পেটির ঘায়ে মেছোদের মাথা কেটে যায় কিনা, তাই গামছা পেঁচিয়ে রাখে। আমি দেখেছি। ছোটোকাকা বলল, তা যখন এতোই জানিস, তাহলে মুখটা সবসময় অমন সাড়ে পাঁচের মত করে রাখিস কেন? পৌনে তেরোর নামতা জানিস? আমি ম্লান হয়ে বললাম, পৌনে তেরো কেন ছোটকা? তেরো কি উনিশ বলো, আমি ঠিক পারব।  ছোটোকাকা আমার কানে একটা প্যাঁচ দিয়ে বলল, না ঐ পৌনে তেরোর ঘরের নামতাই বলতে হবে,। আমি অখন অতিকষ্টে পৌনে তেরো দুগুনে, ইয়ে মানে সাড়ে পঁচিশ। পৌনে তেরোত্তিনে (আবার ঢোঁক গিলে) সওয়া আটচল্লিশ এই করতে করতে যখন পৌনে তেরোদ্দশে একশ সাড়...

শিবরাম

"তখন ইংরেজ আমল। ধরপাকড় চলছে বিপ্লবীদের। বিপ্লবীদের দমন করার জন্য স্পেশাল ব্রাঞ্চ তৈরি হয়েছে। পোস্ট অফিসেও সতর্ক দৃষ্টি গোয়েন্দাদের। সন্দেহজনক চিঠি খুলে গোপনে পড়ে দেখা হয়। জোড়াসাঁকো থানা এলাকার পোস্ট অফিসে যে গোয়েন্দার ডিউটি ছিল, তাঁর নজরে এল এক অদ্ভুত ঘটনা। এই এলাকার মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে একটা মেস আছে। সেই মেসের এক বোর্ডারের নামে প্রতি মাসে মানি অর্ডার আসে। কখনো ২০০, কখনো ৩০০ টাকা। যুবক বোর্ডারটির নাম শিবরাম। সে কিন্তু মানি অর্ডার গ্রহণ না করে প্রতি বার ফেরত দেয়। জানিয়ে দেয় যে তার টাকার দরকার নেই। টাকার দরকার নেই এমন মানুষ আছে না কি? সন্দেহ হয় গোয়েন্দার। তিনি খোঁজখবর করেন গোপনে। জানতে পারেন, শিবরাম হতদরিদ্র মানুষ। দু-তিন মাস মেসের টাকা বাকি পড়েছে। সকালে খবরের কাগজ বিক্রি করে। পত্রপত্রিকায় লিখে কিছু পায়। ওসবে আর কত আয়, তাই ধার করতে হয়। অবশ্য ফেরেব্বাজ নয়, ধার শোধ করার চেষ্টা করে। উত্তরবঙ্গের মালদার দিকে তার বাড়ি। তার মামার বাড়ি বেশ ধনী। পুলিশের সন্দেহ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য শিবরাম বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। বিপ্লবীদের এরকম দুঃখবিলাসের কথা পুলিশ জানে। ...

দশরাজ যুদ্ধ

দাসরাজন্য যুদ্ধ (দশরাজ যুদ্ধ) দাসরাজন্য যুদ্ধ, যা দশরাজ যুদ্ধ নামে পরিচিত, ছিল ভারতের প্রাচীনতম যুদ্ধগুলোর একটি, যা ঋগ্বেদে বর্ণিত হয়েছে। এটি খ্রিস্টপূর্ব আনুমানিক ১৪০০-১৩০০ সালে সংঘটিত হয়েছিল।  যুদ্ধের কারণ: • এটি ছিল আর্যদের বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য লড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ। • রাজা সুদাস, যিনি ভরতা (ভারত) গোত্রের নেতা ছিলেন, তাঁর সঙ্গে দশটি অন্য আর্য ও অনার্য গোত্রের সংঘর্ষ হয়। • যুদ্ধের মূল কারণ ছিল পাঞ্জাব ও সিন্ধুর উর্বর ভূমির দখল এবং নদী ও জলস্রোতের নিয়ন্ত্রণ।  যুদ্ধের প্রধান পক্ষ: ১. সুদাস (ভরতা গোত্রের নেতা) → বিজয়ী পক্ষ ২. দশটি বিরোধী গোত্র → পরাজিত পক্ষ দশটি গোত্রের মধ্যে প্রধান ছিল: • পুরু • দ্রুহু • আনু • তুর্বসু • আলিন • শিবা • পাক্থা • ভলানস • ভৃষা • ভালোসা  যুদ্ধের স্থান ও কৌশল: • যুদ্ধটি পরুষ্ণী নদীর তীরে (বর্তমানে রাভি নদী) সংঘটিত হয়েছিল। • সুদাসের প্রধান পুরোহিত বিশ্বামিত্র ছিলেন, তবে পরে সুদাস বাসিষ্ঠ মুনিকে প্রধান পুরোহিত করেন, যা বিশ্বামিত্রের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বের কারণ হয়। • বিশ্বামিত্র সুদাসের বিরুদ্ধে দশটি গোত্রকে এক...

নজরুল

কাজী নজরুল ইসলামের স্কুলের শিক্ষক ছিলেন কবি কুমুদরঞ্জন, একদিন নজরুল হঠাৎ করে জানতে পারলেন কুমুদরঞ্জন তাঁকে দেখতে এসেছেন, ফুটপাতে অপেক্ষা করছেন। শুনেই খালি পায়ে নজরুল ছুটলেন তাঁর শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করতে, প্রথমে কুমুদরঞ্জেনের পায়ের ধুলো নিলেন,তারপর তাঁকে সসম্মানে সঙ্গে করে দোতলায় নিয়ে এলেন। অনেকে আলাপ গল্প হল শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যে।কথায় কথায় নজরুল, কুমুদরঞ্জন কে বলে বসলেন 'স্যার আমিও আপনার মত পাগল '। নজরুলের মুখে একথা শুনে মুজজফর আহমেদ হতবাক, কিন্তু তিনি দেখলেন সেকথা শুনে কুমুদরঞ্জনের চোখে মুখে নজরুলের প্রতি স্নেহ ঝরে পড়ছে। কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক পিতার প্রস্তাবে সম্মত হন নি। তাঁর অর্থাভাব থাকলেও গ্ৰামের প্রতি ভালবাসা কোনওদিন কমেনি,কুমুদরঞ্জনের পিতা পূর্ণচন্দ্র, ছেলেকে লিখেছিলেন -তুমি মাথরুণ স্কুলের হেডমাস্টার,৮০টাকা বেতন পাও। কাশ্মীরে ইংরেজি ও ইতিহাসের অধ্যাপনা করার সুযোগ আছে। রাজি থাকলে সে জননী কে সঙ্গে নিয়ে সেখানে চলে আসুক। আজন্ম লালিত গ্ৰামের প্রতি ভালবাসায় কোনওদিন কমেনি,তাই হয়ত তিনি লিখতে পেরেছেন- 'আমি নর্মদা মর্মরতটে বাঁধিতে চাহি না ঘর, উচ্চপ্রসাদ অলিন্দে হেরি ...

রবীন্দ্রনাথ

রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী জুতোয় পা গলিয়ে ফিতে বাঁধতে বাঁধতে অভ্যেসমত রবীন্দ্রনাথ কে জিজ্ঞেস করলেন "রবিবাবু আপনার মেয়ে কেমন আছে? একটু ভালো তো"? বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিদায় দিতে রবীন্দ্রনাথ দরজা পর্যন্ত এগিয়ে এসেছেন, শান্ত কণ্ঠে উত্তর দেন সে আজ মারা গেছে। "কী বললেন!" "রানী আজ মারা গেছে দুপুরে"। সবাই স্তুম্ভিত। তাদের হতবাক চোখে ঘোরাফেরা করে রবীন্দ্রনাথ -এর শান্ত মুখের দিকে। যেন কিছু ঘটেনি। অথচ ঐ চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা সম্ভব নয়।মাথা নীচু করে অতিথিরা দ্রুত প্রস্থান করলেন। © ধ্রুবতারাদের খোঁজে  সন্তান-স্বজনের অকাল মৃত্যু শেলের মত বারবার বিদ্ধ করেছে রবীন্দ্রনাথের হৃদয়,মাত্র ন'মাসের ব্যবধানে রক্তাত্ব হৃদয়ে সহ্য করেছেন সহধর্মিণী ও ১২বছরের কিশোরী কন্যা রেণুর অকালমৃত্যু৷ পরপর মৃত্যুর ধাক্কায় রবীন্দ্রনাথ তখন বিপর্যস্ত। বেলার বিয়ের মাস না পেরোতেই রবি কবি তাঁর দ্বিতীয় মেয়ে রেণুর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলেন বয়স তাঁর কম। তবু বিয়ের জন্য অস্থিরতার বড় কারণ সে একটু ভিন্ন৷ বড় একগুঁয়ে,শাসন মানত না৷ ভাল পোশাকে তেমন আকর্ষণও নেই,গয়ণা গায়ে তোলে না,কবি এই মেয়েকে বড় ভালবা...

তারা বাঈ

‘তারাবাঈ’ তারাবাঈ ছিলেন মহারাষ্ট্র-সূর্য ছত্রপতি শিবাজীর তেজস্বতী পুত্রবধূ; এবং গবেষকদের মতে, মধ্যযুগের মহারাষ্ট্রের রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে তাঁর মত অন্য কোন নারীই এত প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। শুধু তাই নয়, তাঁর জীবনের মত বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন সেযুগের খুব কম নারীরই ছিল। শিবাজীর মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র শম্ভাজী মারাঠা-রাজ্যের সিংহাসনের অধিকারী হয়েছিলেন। যদিও তিনি কাপুরুষ ছিলেন না, বরং কখনও কখনও বীরত্বের পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছিলেন, তাঁর হৃদয়ও উদার ছিল, এবং তিনি শিক্ষিতও ছিলেন, কিন্তু তবুও তাঁর চরিত্রে মেরুদণ্ড বলে কিছু ছিল না। আচার্য যদুনাথ সরকারের লেখা থেকে জানা যায় যে, তিনি তাঁর পিতার জীবদ্দশাতেই তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। আর তাঁর ন’বছরের কু-শাসনে দেশ বিশৃঙ্খলায় ভরে উঠেছিল, রাজকোষ প্রায় শূন্য হয়ে গিয়েছিল এবং মারাঠাদের রাষ্ট্রীয় শক্তি দিনে দিনে ক্ষয় পেতে শুরু করেছিল। মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব স্বয়ং তখন দাক্ষিণাত্যে অবস্থান করছিলেন, তাঁর বিজাপুর ও গোলকুণ্ডা অধিকার-পর্ব তখন শেষ হয়ে গিয়েছিল, এবং এরপরে তিনি মারাঠা-রাজ্য ধ্বংস ও গ্রাস করতেও কৃতসঙ্কল্প হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যে মহারাষ্ট্রের ক...

রবীন্দ্রনাথ

মৃত্যু সম্পর্কে নির্মলকুমারী মহলানবিশকে রবীন্দ্রনাথ প্রায়ই বলতেন, ‘‘মৃত্যু না থাকলে জীবনের কোন মানে নেই। আর মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে জীবনকে না দেখলে অমৃতের সন্ধান মেলে না। এই জীবন মরণের খেলা দিয়েই জগৎ সত্য হয়ে উঠেছে।’’ জীবনে তিনি বহু প্রিয়জনের মৃত্যু দেখেছেন, তাই হয়তো দৃপ্ত স্বরে বলতে পেরেছিলেন, ‘করি না ভয় তোমারি জয় গাহিয়া যাব চলিয়া, দাঁড়াবো আসি তব অমৃত দুয়ারে।’ শেষ লগ্নে রোগশয্যায়, অশক্ত জীবনের শরীরে অসুস্থতার কথা একেবারেই বলতে চাননি। তাঁর তখন খুব ইচ্ছে হত নিজের হাতে কলম নিয়ে লিখতে। খাতা নিয়ে লিখতে শুরু করলে, একটু পরেই হাত কেঁপে পেশি শিথিল হয়ে পড়ত। সে সময় তিনি মুখে মুখে বলে যেতেন, তাঁর লিপিকার সুধীরচন্দ্র কর লিখে নিতেন। ‘তিনসঙ্গী’ বইয়ের ‘রবিবার’ গল্পটি ছিল প্রথম মুখে বলে লেখানো। শান্তিনিকেতনে কবির সঙ্গে থেকে অস্তগামী রবির দিনলিপি তিনি ১৩৪৮-এর অগ্রহায়ণে ‘প্রবাসী’তে লিখে গিয়েছিলেন। মৃত্যু সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের ধারণা সম্বন্ধে সুধীরবাবু লেখেন, ‘‘কোনদিনও তিনি মৃত্যুপথের বীভৎস্যতাকে কিংবা তার অনিশ্চয় ভয়কে মনে আমল দেননি। উপরন্তু জীবনের প্রথম থেকেই দেখি মৃত্যুর নিবিড় উপলব্ধি ত...

মাষ্টার দা

#বিয়ের #রাত, #মাস্টারদা #সূর্যসেনএসেছেন #বিয়ে #করতে। বিয়ের মন্ত্র পড়া হবে ,এমন সময় হঠাৎ পাশ থেকে একজন মাস্টারদার হাতে গুঁজে দিল একটু চিরকুট। চিরকুট পড়ে খুবই চিন্তিত ও গম্ভীর হয়ে গেলেন মাস্টারদা। গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ এসেছে কলকাতার দলের উচ্চমহল থেকে। ফুলশয্যার রাতে নির্জন কক্ষে সহধর্মিণী পুস্পকে বললেন " তোমার কাছে আমার অপরাধের সীমা নেই। তুমি আমার অগ্নি সাক্ষী করা স্ত্রী। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তুমিই আমার স্ত্রী থাকবে। দলের গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমার ডাক এসেছে।আজ ই তোমার কাছ থেকে আমাকে বিদায় নিতে হবে।" অশ্রুসিক্ত নয়নে মাস্টারদাকে বিদায়  দিয়েছিলেন নব বিবাহিতা স্ত্রী পুস্প। শুধু জিজ্ঞেস করেছিলেন মাস্টারদার চিঠি পাবে কিনা।                                         কথা রেখেছিলেন মাস্টারদা। চিঠি আসতো পুস্পর কাছে, খুব গোপনে।সে চিঠি শুরু হতো " স্নেহের পুস্প" দিয়ে আর শেষ হতো  " তোমার ই সূর্য " দিয়ে।                      ...

নারী

ঋক বৈদিক যুগের নারীদের অবস্থা কেমন ছিল??? ঋক বৈদিক যুগে নারীর অবস্থা: প্রাচীন ভারতে নারীর স্থান নিয়ে বিতর্ক আছে । সাধারণভাবে বলা হয় বৈদিক যুগে নারীর স্থান ছিল খুব উপরে । পিতৃতান্ত্রিক সমাজে কন্যাসন্তানের জন্ম অনভিপ্রেত হলেও তার যত্ন ও লালনপালনে কোনো ত্রুটি থাকত না । তার শিক্ষার দিকে যথেষ্ট নজর দেওয়া হত । ঘোষ, অপালা, বিশ্ববারার মতো নারীরা বৈদিক শ্লোক রচনা করেছিলেন । উপনিষদের যুগে গার্গীর মতো দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটেছিল । তিনি যাজ্ঞবল্ক্যের মতো পণ্ডিতের সঙ্গে বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছিলেন । উচ্চবর্ণের মহিলারা তাঁদের স্বামীর সঙ্গে যাগযজ্ঞে অংশ নিতেন । তাঁরা সম্পত্তির অধিকারিণীও ছিলেন এবং স্বামীর মৃত্যুর পর ইচ্ছা করলে পুনর্বিবাহ করতে পারতেন । কিন্তু বৈদিকযুগে, বিশেষত পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর অবস্থা যে সবটাই ভাল ছিল তা নয় । ক্রমে সমাজে শূদ্র ও নারীদের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছিল । নারীকে বলা হত ‘ভার্ষা’; অর্থাৎ, ভরণীয়া বা যাকে ভরণ করতে হয় । তার স্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না । শিশুকালে সে পিতার, যৌবনে স্বামীর এবং বয়সকালে বা বৈধব্য জীবনে পুত্রের অধীন । পুরুষদের মধ্যে বহু বিবাহ প্রচলিত থাকলেও নারীদের ম...

রবীন্দ্রনাথ

জোড়াসাঁকোর তেতলার বারান্দার আড্ডায় সেদিন সংস্কৃত নাটক পাঠ করছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। বসন্ত উত্‍সবের বর্ণনা পড়তে পড়তে তাঁর মনে হল কী সুন্দর ছিল সেকালের বসন্ত উত্‍সব, যেন হৃদয়ের হোরিখেলা। তিনি সবাইকে বলেন, দেখো আমরা এমন প্রাণ খুলে আবির মাখতে পারি না কেন? দিশি রীতির এই উত্‍সবকে কি ফিরিয়ে আনা যায় না? কাদম্বরীও উত্‍সাহে মেতে উঠলেন, কেন পারব না, আমাদের উঠোনেই বসন্ত উত্‍সব করলে হয়, কিংবা পাশের বৈঠকখানা বাড়ির আঙিনায়। তা হলে গুণোদাদাকে খবর পাঠানো হোক, স্বর্ণ বললেন, দু'বাড়ির ভাইবোনেরা মিলে দারুণ মজার বসন্তখেলা হবে। এ-সব ব্যাপারে গুণেন্দ্রনাথের বরাবর খুব উত্‍সাহ। দু'বাড়ির ছেলেমেয়েদের নিয়ে আগেও তিনি হিন্দুমেলা বা নবনাটকের আয়োজনে মেতে উঠেছেন। যদিও জোড়াসাঁকোর দু'বাড়ির মধ্যে সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে মনোমালিন্য লেগেই ছিল। তবু সে-সব গায়ে না মেখে গুণেন্দ্র এবারেও মহানন্দে বসতবাড়ির ভাইবোনদের সঙ্গে উত্‍সবে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ধর্ম নিয়ে দু'বাড়ির বিভেদ হলেও ছেলেমেয়েদের মনের টান রয়ে গেছে। বসন্তসন্ধ্যায় রঙিন আলোয় আর আবিরে বৈঠকখানা-বাড়ির বাগান হয়ে উঠল নন্দনকানন। পিচকারিতে রংখেলাও বাদ রইল না। বসন্...

অজিতেশ বন্দোপাধ্যায়

একটি সাদা পাঞ্জাবী, নৌকার মতো একটি চটি পরে দিল্লিতে অ্যাকাডেমি পুরস্কার নিতে উঠছেন এক জন ছিপছিপে রোগাটে ছ’ফুট লম্বা মাথাভর্তি ঝাঁকড়া চুলের মানুষ। তাঁকে পুরস্কার নিতে উঠতে দেখে অনেকেই ভ্রূ কুঁচকেছিলেন। অনেকেরই মনে হয়েছিল চলতি হাওয়ার কাছে তিনি একেবারেই বেমানান। তবু তিনি সব ধরনের আড়ম্বর থেকে বহুদূরবাসী, নিজের সৃষ্টির মধ্যে ডুবে থাকা একজন সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্ব। তিনি কর্মে নিষ্ঠাবান, ভিতরে ভিতরে প্রবল ভাবপ্রবণ এবং শিশুর মতোই আবেগ সর্বস্ব। তবে তাঁর জেদ এবং নিয়ামানুবর্তিতার কথা লোকের মুখে মুখে ফেরে। জীবনে সিগারেট ছিল এই ব্যক্তিটির সব সময়ের সঙ্গী আর চেতনা ছিল মার্কসীয় তত্ত্বে জারিত। এই মানুষটিই অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়।  ১৯৬৬ সাল। বনফুলের ছোটগল্প অবলম্বনে ডাক্তার অনাদি মুখুজ্জের কাহিনি নিয়ে ছবি করবেন বলে মনস্থির করলেন তপন সিংহ। গল্পের ভিলেন জোতদার ছবিলালের ছেলে লছমনলাল। একে অমন দোর্দণ্ডপ্রতাপ খল চরিত্র, তার উপর অশোককুমার বৈজয়ন্তীমালার মতো তারকার পাশাপাশি দাপিয়ে অভিনয়, সে কি চাট্টিখানি কথা? কোথায় পাবেন এমন অভিনেতা? হঠাৎ করেই পরিচালকের মনে পড়ে গেল সাড়ে ছ’ফুট লম্বা, রোগাটে গড়ন আর মাথাভর্তি ঝাঁ...

উৎপল দত্ত

অনেকেই বলেন অনেকে ব্রিটিশের থেকেও তিনি ভাল ইংরেজি বলতেন! ইংরেজি ভাষা ও শেকসপিয়ার যদি উৎপল দত্তের  শ্বাস-প্রশ্বাস হয়,তবে বাংলা ভাষা আর বাংলার প্রতি ছিল অদম্য টান। সেই টান কেমন দেখিয়ে গিয়েছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে। নাটকের জন্য জেল খেটেছেন অনেকদিন।  বাংলা ছবির পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের ঘোষণা ইংরেজিতে হচ্ছে দেখে পুরস্কার মঞ্চে একপ্রকার বোমা ফাটিয়েছিলেন৷ দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন 'বুঝতে পারছি না কোথায় আছি লন্ডন না আমেরিকায়....আমি এখানে যে উপস্থিত তাতেই আমি লজ্জিত'৷ তারপর স্টেজ থেকে নেমে এসে হনহন করে প্রেক্ষাগৃহ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন৷  © ধ্রুবতারাদের খোঁজে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য মৃত্যুর এক বছর আগে বি.এফ.জে.এর লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার পেয়েছিলেন উৎপল দত্ত,এর আগের বছর 'আগন্তুক' ও 'পথ ও প্রসাদ' এ অভিনয়ের জন্য ওই সংস্থার সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন৷ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান ১৯৯২-এর রবীন্দ্রসদনে৷ পুরস্কার ঘোষণার পর্ব চলছে,সবটাই হচ্ছে ইংরেজিতে৷ উৎপল দত্তের নাম যথারীতি ঘোষিত হল সেই ইংরেজিতে,মঞ্চের ওপরে উঠে কার্যত একপ্রকার কার্যত বোমা ফাটানো...

বিদ্যাসাগর

বর্তমান ঝাড়খন্ডের কাড়মাটাঁর অঞ্চল। গ্রামের এক বাড়ির উঠোনে বসে আছে একঝাঁক অতি দরিদ্র দেহাতি মেয়ে পুরুষ বাচ্চা বুড়ো। ঘর থেকে বেরোলেন তিনি। সারা দেশ যাকে চেনে বিদ্যাসাগর নামে, এদের কাছে তিনি শুধুই বাবাঠাকুর। এক মহিলা ছুটে এলো, এই বাবা ঠাকুর আমার বাচ্চাটাকে আগে দেখ। পেট কেমন ফুলে গেছে।কিছু খেতে পারছে না। বৃদ্ধ ভালো করে দেখলেন। মুখ কালো হয়ে গেল তাঁর, আর কিছু না, পুষ্টির অভাব, ভিটামিনের অভাব খাদ্যের অভাব। চোখে জল এসে যায় তাঁর। বলেন ছেলেকে খাওয়াতে হবে ভালো করে। বউটি বলে শুখা সময়, খাবারের বড় অভাব গো। চাষ নাই। ওষুধ দেন তিনি। এদের জন্য অনেক কিছু করা যেত। কিন্তু আজ তিনি সম্বলহীন। বড় ভালোবাসে এরা তাঁকে। বাবাঠাকুর কে দেবতা বানিয়ে রেখেছে যেন। অথচ কি বা করতে পারেন এদের জন্য..? যেটুকু করেন এরা তাতেই খুশি। মালিন্যহীন সরল সাদা্সিধে আদিবাসী মানুষগুলি তাঁর পরম প্রিয়। ইজিচেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করেন তিনি। মনের মধ্যে ভেসে ওঠে শহুরে দিন গুলির কথা... তখন যৌবন কাল, শরীরে সামর্থ্য ছিলো, মনে ছিলো এক অদ্ভুত জেদ। পিতা যে জেদকে এঁড়ে বাছুরের গোঁ বলেছেন। সংস্কৃত পণ্ডিত হলেও বুঝে ফেলেছিলেন সারকথা। সংস্কৃত দ...