।।কমলার ভাগ্য।। অণুগল্প


গল্প-কমলার ভাগ্য
কলমে-দেবপ্রসাদ জানা

স্বামী মারা যাবার পর কমলা তার তিন ছেলের অধীনে এসে পড়ল।
তিন ছেলেকে মানুষ করতে কমলা ও তার স্বামী তাদের শেষ বয়সের পুঁজি টুকুও ওদের পেছনে খরচ করে ফেলেন। আজ তিন ছেলে যোগ্য হয়েছে নিজেরা বাড়ি ঘর করেছে। কমলার স্বামী বেঁচে থাকতে কোনোদিন মনে হয়নি যে তারা তার মাকে নিয়ে ঠেলাঠেলি করবে। পুরানো বাড়িটাও নিলাম করে ছেলেরা ভাগ বাটোরা করে ফেললো। এখন সমস্যা হচ্ছে কমলাকে কে কিভাবে রাখবে?
ঠিক হলো একমাস করে প্রত্যেকের বাড়িতে রাখবে। সেটা জানুয়ারী মাস। বড় ছেলের বাড়ি থেকেই শুরু হলো। তার পর মেজো ছেলে সেরে যখন ছোট ছেলের বাড়িতে এল ফেব্রুয়ারির 29 তারিখে ছোটো ছেলের বউ বলল-
-মা আপনার তো কাল আসার কথা, আজ কেন এলেন, কাল আসুন। আজতো ত্রিশ দিন হয়নি?
হতভাগ্য মা ফিরে গেল মেজো ছেলের কাছে, সেখানেও মেজবৌমা একি কথা বলল। মাসতো শেষ। এবার আপনার ছোটর বাড়িতে থাকার কথা।
কমলা বিনা প্রতিবাদে বড় ছেলের কাছে গেল। কিন্তু সেই একই উত্তর।
- আমাদের তো এখনো একমাস বাকি।
কমলার প্রচন্ড খিদে তৃষ্ণা পেয়ে ছিল।
কিন্তু বড়বৌ তাকে জলটাও দিতে নারাজ।
রাস্তায় নেমে পড়ল কমলা। আর না। সে আর কারো কাছে যাবে না। রাস্তায় ভিক্ষা করে খাবে তাও কোনো ছেলের কাছে যাবে না।
এদিকে দেশে এমার্জেন্সী লেগেছে দেশে দেশে করোনার প্রকোপ। সকলকে ঘর থেকে বেরতে বারন করে দিয়েছে। কমলার ঘরই নেই সে যাবে কোথায়? কমলা হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে থাকতে লাগল। কিন্তু সেখানেও বেশীদিন থাকতে পারবে না। তাই এ হাসপাতাল ও হাসপাতাল করে তারদিন কাটছিল। কলকাতার আই ডি হাসপাতালে তখন রমরমা ব্যপার। সব করোনা রুগিদের সেখানেই জায়গা দেওয়া হলো।
একদিন দেখলো তার ছোট ছেলেকে পুলিশ ও নার্সরা ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তড়িঘড়ি কমলা তাকে দেখতে গেল। কিন্তু তাকে কেউ ছেলের কাছে যেতে দিল না।
বাড়ির কাউকে সেখানে সে দেখতে পেল না।
এদিকে ছেলের অবস্থাও খুব ভালো না। এই সময় যেহেতু কেউ কাজ করতে চাইছিল না আয়ারা। কমলা সেই খানে আয়ার কাজের জন্য বললে, সহজেই পেয়ে গেল। সারাদিন ছেলে এবং অন্যান্য দের সেবায় কাটিয়ে দিতে লাগল। দিন পনের পর ছেলে মোটামুটি সুস্থ হলে, মায়ের ঐ শতছিন্ন অবস্থা দেখে বলল -
তোমার তো একটু বুদ্ধি থাকার কথা নাকি সব জলাঞ্জলি দিয়েছ। কেউ যদি জানে তুমি আমার মা। তাহলে আমার সম্মান কোথায় থাকবে বলোতো?

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ