।। সেই মেয়েটি।। অণুগল্প
।। সেই মেয়েটি।।
দেবপ্রসাদ জানা
এক যুবক প্রতিদিন সকালে উঠে পাশের মিলে কাজে যাবার জন্য রাস্তায় বের হলে, একটি মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে । সারাটা দিন তার মনে হয় মেয়েটির কথা। মেয়েটি বারান্দায় বসে থাকে। কোন কথা কোনো দিন বলে না। শুধু তাকিয়ে থেকে তাকে দেখে।
এবার তার বিয়ের সময় হয়েছে, বাড়ির বাবা মা বিয়ের জন্য তাগাদা দিচ্ছে। কিন্তু তার মনে
একটাই চিন্তা যে মেয়েটি বোধ হয় তাকে ভালো বেসে ফেলেছে। যদিও সেও যেন মেয়ে টাকে না দেখে থাকতে পারে না।
সে জিদ ধরে বসল সেই মেয়েটিকেই সে বিয়ে করবে যেভাবেই হোক। দেশের বাড়ি থেকে বাবা মা এলো। মেয়েটি দেখতে সুন্দরী। সবার পছন্দ হলো।
সেও দেখল মেয়ে খুব সুন্দরী। বিয়ে করতে ইচ্ছে
হল। বিয়ের তারিখ ও ঠিক হয়ে গেল।
কিন্তু ছেলের মনে একটাই চিন্তা এতো দিন মেয়েটিকে দেখছে কোন কথা কোন দিন বলে নি।
কে জানে মেয়েটা বোবা কিনা। কিন্তু সেদিন কথা বলে তার মনের আশা পূরণ হলো। খুব মার্জিত স্বভাবের মেয়েটি। এবার সে মেয়ের বাড়ি থেকে কিছু বলতে চাইল। কিন্তু ছেলেটি কোন কথা শুনল না। বলল দেনা পাওনা এ সব কিছু তার চাই না। শুধু শাঁখা সিঁদুর দিলেই হবে। বিয়ে হল। লোক জন সবাই ধন্য ধন্য করল তাকে। এ যুগে এমন ছেলে মেলা ভার।
খুব আনন্দে কেটে গেল বিয়ে। বৌভাতের খাওয়া দাওয়া হলো। বৌকে ভাত কাপড় দিল সে। সারাজীবনের দায়িত্ব নিল। বৌ এবার সকলকে খেতে দেবে। সবাই ধরা ধরি করে বৌকে দিয়ে ভাত দেওয়া করালো। মেয়েটার একটা বোন ছিল সেই সব ধরে ধরে করালো। নতুন বৌ সবাই খুব খুসি।
নতুন জায়গা একটুতো অসুবিধা হবে । শশুর শাশুড়ি বারবার বলল, বৌমা কোনো অসুবিধা হচ্ছে নাতো। বৌ ও খুব নম্রতার সঙ্গে তাদের বলল, না মা পা বাবা কোন অসুবিধা নেই। শশুর শাশুড়ি ও খুসি। নাঃ ছেলে ভালো মেয়েই পছন্দ করেছে।
ফুল সজ্জার আয়োজন করা হলো।
রাতে ছেলেটি সব মিটিয়ে যখন বৌয়ের ঘরে গেল তখন বৌ খাটের এক প্রান্তে বসে আছে।
আর তার দিকে তাকিয়ে আছে আগের মতো।
ছেলেটি কিছু না বলেই আসতে আসতে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল। মেয়েটি চমকে উঠে বলে, কে কে?
একি এই তো তুমি আমায় দেখলে আমি ঢুকছি ঘরে। এখন কে কে বলছ কেন?
ও তুমি। আসলে আমি তো দেখতে পাই না।
ছেলেটি চমকে উঠল। কি দেখতে পাও না?
কই এতদিন তো বলো নি। আমাকে এভাবে ঠকানো ঠিক হয় নি তোমার। হইচই করে ছেলেটি সেইদিন ই মেয়েটিকে তার বাপের বাড়ি দিয়ে এল।
এবং নিজে ঐ এলাকা থেকে অন্য জায়গায় ঘর ভাড়া করে চলে গেল।
এর একবছর পর দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হলো। সকলে ঘর বন্দী। মেয়েটি বরাবর ছেলেটির খোঁজ নিয়ে এসেছে। এখন আর কিছুতেই খোঁজ পাচ্ছে না। কি হলো তার বরের। একদিন সাহস করে ফোন করে বসল। ওপারে ফোন তুলল ছেলেটি। যা বলল তাতে তার হোঁস উড়ে গেল।
ছেলেটি করোনা আক্রান্ত।
অনেক চিঠি পত্র করে অনেক কষ্টে সে তার বরের কাছে সম্পূন প্রটেকশন নিয়ে ছেলেটির সেবা করার সুজোগ পেল। কারন সে ছিল অন্ধ।
স্পেশাল পারমিশন পেয়ে জান প্রান দিয়ে সেবা করল। ছেলেটি সুস্থ হলো কিন্তূ মেয়েটি সেই রোগে আক্রান্ত হলো।
কিন্তু মেয়েটি হার মানল না । এতদিনে সাবধানতায় ও একটা ভুল করে সে ফেলেছিল। সেই ভুলের মাসুল তাকে হয়তো দিতে হবে। ন মাস পরে তার পেটে যে সন্তান তার স্বামী দিয়েছে তার জন্য তাকে বেঁচে থাকতে হবে অনেকদিন। তিই সে লড়াই বন্ধ করবে না। তাকে তার স্বামী দেখলেও না। আর না দেখলেও না। জীবনের কিছু আলো ছুঁয়ে আছে তার প্রান।
Comments
Post a Comment