।।একটি মৃত্যু।। অণুগল্প


গল্প
গল্প-একটি মৃত্যু
কলমে-দেবপ্রসাদ জানা
23.3.2020
সকালে অতুল বাবু খবরের কাগজ টা হাতে নিয়ে সবে বসেছেন, রতন বাবু ডাক দিলেন .
-অতুল আছো নাকি ?
অতুলবাবুর সঙ্গে রতনবাবুর ভালোই সম্পর্ক বিপদে আপদে সর্বদাই থাকেন . পাশেই বাড়ি , ইন্ডিয়ান স্টাটিস্টিক্যালে চাকরি করেন, লাইব্রেরীতে . স্বভাবে খুবই ভালো , হোমিওপ্যাথি ডাক্তারি ও করেন . অতুল বাবুর বাড়ির মাঝে রাস্তা , তার ওপারে রতনবাবুর বাড়ি . বেশ ভালো বাড়ি , বাবার অনেক টাকা ছিল তা দিয়েই বানানো , নিজে কিছু করেন নি , দুই মেয়ে ,একজন কলেজে ,একজন স্কুলে . স্ত্রী বেশ সুন্দরী, নাম রমলা বর্ধমানের মেয়ে . এই সংসার রতন বাবুর . আজ ছুটি , মহরম .তাই সকালেই গল্প করতে চলে এলেন .
অতুল বাবুর কাগজ টা আর পড়া হলো না .অতুল বাবুর একটা বইয়ের দোকান আছে ,বাড়িতে ড্রয়িং রুম থেকে শোবার ঘর সব জায়গায় বই খাতা ভর্তি অগোছালো ঘর , মেঝের ওপর বই খাতার স্তুপ তার মাঝে অতুলবাবু বসে খবর পড়েন রোজ , রতনবাবুর এই পরিবেশটাই নাকি খুব ভালোলাগে .
-হ্যাঁ আসুন-
দরজা টা খুলেই অতুলবাবু চমকে উঠলেন . রতন বাবুর চোখে মুখে হতাশার ছায়া .
-কি বা ব্যাপার ?
-বড় মেয়েটা কাল থেকে বাড়ি আসেনি . সকালে কলেজ গেছে, আজ ছুটি,
-দেখো কোনো বন্ধুর বাড়িতে.
-এ কি বলছো অতুল আমার মেয়ে এমন না .
-আরে না না তা বলিনি , বলছি কোনো বান্ধবীর বাড়ি তাড়ি যদি গিয়ে থাকে.
-ফোনটাও ধরছে না, সব খবর নিলাম কোথাও নেই.
রতনবাবু কেঁদে ফেললেন .
-আরে একি হলো? আগে খুঁজে দেখি কি হলো.
রতন বাবুর মেয়ে সুছন্দা ভালো মেয়ে দেখতে শুনতেও ভালো , কোনোদিন কোনো ব্যাপারে কারোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েনি .
পড়াশোনা ছাড়া কোনো গল্পগুজব করতে দেখিনি , হটাৎ কি হলো কাল যে বাড়ি ফিরলো না ,
-গতকাল ওর জন্মদিন ছিল, ওর মা পায়েস করে বসে ছিল সারা রাত, মেয়ে এই আসবে এই আসবে করে ঘুমোতেই যায়নি.সকালে উঠে দেখে মেয়ে তখন আসেনি,হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিলে.আমি কি করি বলতো?
হাসপাতালটা খোঁজ নেওয়ার দরকার .
- হ্যাঁ ওর মামা আসছে দেখি যাবো .
- আমি কি যাবো ?
অনিচ্ছা সত্বেও কথাটা বলতে হলো . কারণ রতনবাবু আমাদের খুব পুরানো বন্ধু . ছুটির দিন ভেবেছিলাম বাড়িতে একটু আরাম করবো ,বিকালে বইয়ের দোকানে যাবো , কিন্তু হলো না .
-চলো তোমার সঙ্গে যেতেই হবে,তোমার যা মনের অবস্থা দেখছি,
-চলো না ভাই, তুমি গেলে একটু সাহস পাই .
-সে আর বলতে,
বইয়ের দোকানে আর যাওয়া হলো না মনে হয় , এ যা দেখছি সারাদিনের ব্যাপার .
-রতন তোমার মেয়ের কোনো ছেলে বন্ধু ছিল না তুমি জানতো? জানি এসব কথা এ সময় তোমার শুনতে ভালো লাগছে না,কিন্তু জানতো এখনকার মেয়েরা খুব চাপা গোছের হয় .
-তা হয়তো হবে.
দরজায় আবার কে যেন বেল দিচ্ছে . উঠে দরজা খুলে দেখলাম , রতন বাবুর স্ত্রী ও ছোট মেয়ে সুনন্দা .দুজনেরই কাঁদো কাঁদো মুখ ,
-দাদা একটু দেখুন না কি হলো? মেয়েটা তো এমন নয়, কোনো দিন এমন হয়নি, কি যে করি?
- আরে বৌদি চিন্তা কেন করছেন ? আমি দেখছি কি করা যায় .
সাহস দিলাম বটে , কি করবো আমি নিজেই জানি না , ওদেরকে আমাদের বাড়িতে বসিয়ে , আমি আর রতন বাবু বেরিয়ে পড়লাম ,প্রথমে সরকারি হাসপাতাল গুলোতে খোঁজ করতে , আর জি কর , মেডিকেল ,নীলরতন , কোথাও সুছন্দার খোঁজ পেলাম না , সুছন্দা রতন বাবুর হারিয়ে যাওয়া মেয়ে . হতাশ হয়ে রাতে ফিরে এলাম বাড়িতে ,রতন বাবুকে বাড়িতে দিয়ে, ঘরে ঢুকলাম ,সারাদিন খাওয়া দাওয়া নেই , শরীরটাও ভালো ঠেকছে না , মর্গে মর্গে ঘুরে ঘুরে গা ঘিন ঘিন করছে , বৌ বললো ভালো করে স্নান করে নাও , খেয়ে নিয়ে চিন্তা করো কি করবে ? দুদিন হলো মেয়ের কোনো খোঁজ নেই যখন, তখন দেখতে হবে কদিন, নইলে পুলিশে খবর দেওয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তা দেখছি না . রতন বাবুর ফ্যামিলি কে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে সবে খেতে যাবো , টেলিফোনটা বেজে উঠলো,
-হ্যালো.
-দাদা আমি সুছন্দার মা বলছি ,
-কি ব্যাপার ?
-ওনাকে কি বাড়িতে দিয়ে গেছিলেন?
-হ্যাঁ
-কিন্তু ওনাকে তো দেখতে পাচ্ছি না-
-সেকি! আবার কোথায় গেলো? বাথরুম টা দেখুন.
- না নেই,
-তা হলে হয়তো আবার বেরিয়েছে.ঠিক আছে রাখুন,আমি খেয়ে উঠে দেখছি.
খাওয়া আর হলো না,রতন বাবু কোথায় গেলো দেখতে হবে . এ বাপবেটি মিলে কি শুরু ?এক বার বাপ্ একবার বেটি .যাই হোক বেরিয়ে পড়লাম ,ফোন করলাম কোনো রেসপন্স নেই , রাত হয়ে আসছে , দিশা হীন ঘুরে বেড়ালাম ,থানাটাও গেলাম , যদি ডাইরি করতে আসে , কিন্তু না তা আসেনি . মুদি দোকান বাজার সব ঘুরে রতন বাবুর বাড়ি গেলাম , আমাকে দেখেই আরো কান্না জুড়ে দিলো ,
-কি হলো আবার? রতন বাবু আসেনি?
-না,
-তাহলে?
-দেখুন তো কি করে বসলো মেয়েটা ?
-কি হয়েছে ?
-ফোন এসেছিলো
-কার ?
-সুছন্দার .
-কিসের ভালো খবরতো ?
-জানি না দাদা, এভাবে কোনোদিন ওকে দেখিনি, ওর বাবা হয়তো একটু বেশি শাসন করতো তাই বলে ও আমাদের কিছু না বলে,এমন কান্ড করবে,জানা ছিল না,
-কি হয়েছে,বলুনতো?
-সুছন্দা বিয়ে করেছে-
-যাক তবু একটা খবর তো পাওয়া গেলো, এখন রতন বাবু সে আবার কোথায় গেলো?আচ্ছা আমি বাড়ি যাই,চিন্তা করবেন না-
বাড়ি এসে আমি খাওয়া শেষ করে টিভি টা চালিয়ে বসেছি ,হঠাৎ কলিং বেল ,দরজা খুলে দেখি ,রতন বাবুর স্ত্রী এসে হাজির ,
- কি ব্যাপার?
-দাদা ওকে ফোনে পাচ্ছি না,
-সেকি! দাঁড়ান আমি করছি, হয়তো রাগের মাথায় ধরছে না,
কোনো রেসপন্স নেই ,এ আবার কি সমস্যা? মেয়ের খবর পেলাম তো বাবা হাওয়া.
-দাদা সুছন্দা ফোন করেছিল ,সুছন্দা কাল বিয়ে করে শিলিগুড়ি তে আছে ছেলের পিসিমার বাড়ি.
কিন্তু এখন বাবা তার তো কোনো খবর নেই . বাইরে শোরগোল শুনে উঠে পড়লাম ,বাইরে খুব ভিড় , পুলিশ -দৌড়ে গেলাম , রতন বাবুর বাড়িতে -আমার সঙ্গে রতন বাবুর স্ত্রীও ছিল , হাউমাউ করে পড়লো ,পুলিশ কেন? একটা পুলিশ বলল ,
-শুনুন,একটি লোক মেট্রো রেলে ঝাঁপ মেরেছে, পকেট থেকে এই চিরকুট পাওয়া গেছে,
-এইটা যে বাড়ি কি করে জানলেন?
-পকেটে শুধু এটা নয়,মোবাইলটা ও ছিল, ওখান থেকে ঠিকানা বার করেছি,
-কিন্তু আমরা তো বার বার ফোন করছি.
-মেট্রোয় কোনো টাওয়ার ছিল না , অপেক্ষা করছিলাম,
-চিরকুট টা দেখি,
বাবা ,

আমি তোমার মুখ রাখতে পারলাম না , কিন্তু আমি কি করবো ? আমি যে ভুল করে ফেলেছি বাবা , আমি অন্তঃস্বত্যা ,বিয়ে না করলে আরো কাউকে মুখ দেখতে পারবো না ,তাই আমাকে ক্ষমা করো , আমি ভালো থাকবো .সুছন্দা .

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ