।। ভয়।। অণুগল্প

।।ভয়।।
দেবপ্রসাদ জানা
তখন আমি পাঁচ কিংবা ছয় l বাবা  বললো -চল বাজারে নিয়ে যাই l আমি বাবার প্রথম সন্তান তাই আদর বেশী পেয়েছি বরাবর। তখনো বাবা স্কুটার কেনতে পারে নি। তাই রোজ সাইকেলে করে স্কুলে নিয়ে যাওয়া , কাছাকাছি পিসির বাড়ি , সব জায়গাতেই বাবা সাইকেলে করে কত জায়গায় মাঝে মধ্যেই নিয়ে যেত কিন্তু সেদিনের কথা আজও ভুলিনি l বাজারে মাংস এর দোকানে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। জ্যান্ত মুরগির গলা বঁটিতে অনায়াসে কাটা দেখে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলাম পথে। যখন জ্ঞান ফিরল দেখলাম বিছানায় আমি আর মা বাবা দাদু ঠাকুমা সব ভ্যাবাচেকা হয়ে তাকিয়ে আছে। ঠিক কোন জায়গাটা আজ মনে নেই l কিন্তু আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম ঐ দেখে l এটা মনে আছে l
পাড়ার কেউ মারা গেলে কি বীভৎস ভয় পেতাম বিয়ের পরেও, সে বলার কথা নয় l সেই রাস্তা দিয়ে যাওয়াই বন্ধ করে দিতাম l
অথচ আজ ! দৈনিক খবরের কাগজ গুলো পাল্টে দেয় জীবনের সব মোড় l শিক্ষা দিয়ে যায় কত কঠিন জীবন।
চোখের সামনে দেখলাম আধা জাগরনে চির ঘুমে চলে যাওয়া দাদুনকে। আমার মায়ের বাবা। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে সে কি বাঁচার আকাঙ্ক্ষা।
চোখের সামনে দেখলাম আমার দিদার শাশুড়িমার হঠাৎ করে একদিনের অসহ্য পেটে ব্যাথায় অদ্ভুত নিথর দেহটাকে l
কাছের মানুষরা চলে গেলে কি যে কষ্ট তার অনুভুতি একমাত্র যে ভুক্ত ভোগি সেই বোঝে l
না শ্মশানে কখনো যাইনি কোনদিন। অন্তিম যাত্রায় কারোর সঙ্গী হইনি এখনো।
জ্বলন্ত একটা মানুষকে দেখার সাহস হয়নি আজো। মৃত মানুষের ছাই হয়ে যাওয়া দেখার সাহস , মানসিকতা কোনদিনই নেই l
তবে সেদিন বেথুন স্কুল থেকে বেরিয়ে দুই বন্ধু ও তার মা বাসে উঠতে গেলাম। আমরা আগেই উঠে গেছি। প্রচন্ড ভিড়। বন্ধুর মা উঠতে না পেরে পড়ে যায় নিচে, গাড়ি চলন্ত অবস্থা। পেছনের চাকার নিচে চলে গেলেন তিনি। রক্তে রক্তারক্তি। বাস থামলে দুজনে নেমে পড়লাম। এত রক্ত দেখেও কি করে যে দুজন সেদিন এত শক্ত ছিলাম বলতে পারি না। একটা গাড়িও নিল না। তখন ভদ্র মহিলা বেঁচে আছেন সারা শরীর রক্তে মাখা। একটা মাল বয়া ভ্যান তাতেই দুজনে টেনে তুলে নিলাম। একটা লোকও এগিয়ে এল না। পুলিশি ঝামেলার ভয়ে।
ফুটপাতের একটা লোক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল। মেডিক্যাল হাসপাতাল। এমার্জেন্সী। চার ঘন্টা চিকিৎসার পর জানা গেল বন্ধুটির মা এ যাত্রায় বেঁচে গেলেন।
তাই ভাবি পরিস্থিতি মানুষ কে কি পরিবর্তন করে দেয়। তখন সে সব সহ্য করে নেয়।
===

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ