Posts

Showing posts from 2023

হে সুন্দরী

হে সুন্দরী দেবপ্রসাদ জানা হে সুন্দরী- কি এমন আছে,  তোমার দেহ বল্লভের? মহার্ঘ অভ্যঞ্জনে চর্চিত তোমার দেহ, কিসে এত ভালো তোমার ভালোবাসার মন,  তোমার অধরে লাল লালিমায় লিপ্ত হই? আনন্দশৈল সুরভিশয্যায় দেখে আমি অভিভূত, আরক্তগৌর তোমার  দেহবর্ণ,  অসংখ্যের মধ্যেও তুমি অ-দোসর।  সোনায় গড়া পুতুল তোমার  মুখখানি,  ঘন চুল কাকের চেয়েও কালো।  চক্ষু যেন ভরানদীর প্রান্তচারী পারাবতের চক্ষু প্রেয়সী আমার, যেন হরিণশিশু, নবস্নাত অবিকল মেঘপুঞ্জে ঢাকা পূর্ণশশী। মধুর কন্ঠস্বরে, কেশতৈল গন্ধে আমি দিশাহারা। হে সুন্দরী স্বর্গপুস্পের স্তবক যেন দ্রাক্ষাবনে বিকশিত ভোরের সূর্যের মতো নির্মল। এ প্রেমের দায়ে যে আমি সর্বস্ব হারাব। প্রেম যে লেলিহান শিখা,  মৃত্যুর মতো শক্তিমান। কেমনে এই প্লাবন,  এই প্রেমস্রোত রোধ করি বলো?

মহামিলন

মহামিলন দেবপ্রসাদ জানা ২৩.১২.২০২৩ আহা মহীপালগণ, সভার ভিতরে।  রত্নরূপে খ্যাত এরা, দেশদেশান্তরে। কলম সৈনিক-এর, সভার বর্ণনে।  কটা কথা লিখে যাই, আমার লিখনে। সভার ভিতরে রূপ, করি দরশন।  ঝরিছে যে কাব্যসুধা, ভারি বরষণ। পাঠমাত্র রোমাঞ্চিত, হয় কলেবর।  ধন্য ধন্য কাব্য-শক্তি, রসের সাগর। কলম সৈনিক সব, গাঢ় নীল বেশে। যেথায় আপন সাজে, স্নিগ্ধ পরিবেশে।  দেখিতে বিচিত্র শোভা, লোক দলে দলে। বাহা-রে আহা-রে দেখি, এই সভা স্থলে। মঞ্চে বসে আছে যিনি, সভা অধিপতি। গোলাপ ফুটেছে মাঝে, করিব আরতি। নানা শোভা চারিদিকে, দেখিতে দেখিতে।  মনের আয়না চোখ, হাসে পুলকিতে। ক্রমে ক্রমে কবিগণ, খুলি ছয় দ্বার।  উপনীত সুবিস্তারে, যেথা সিংহদ্বার ।  অতিশয় পুরাতন, কীর্ত্তির প্রকাশ।  আসিয়াছে কত কবি, কাব্যের নিবাস। প্রকাশিত হবে আজ, বই অঙ্গীকার। মুরারিমোহন বাবু, খুলিবেন দ্বার। একক কাব্যের কথা, বলিব এবার। চল্লিশ জনের কাব্য, হইবে প্রচার। স্মৃতি পুরস্কারের যেন, ভারি এক মেলা। শুভ্রনীল এসে আজ, করে যাবে খেলা। তুলসী জানার স্মৃতি, কাব্যগ্রন্থ ভরে। কত শত কবিরা যে, আলোর নজরে। বিশ্বনাথ চৌধুরীর, পাবে পরিচ...

মেয়েটা হাঁটছে

মেয়েটা হাঁটছে দেবপ্রসাদ জানা একটা মেয়ে হাঁটছে।  পায়ে পায়ে একের পর এক বিপদ পেরিয়ে, মাইলের পর মাইল।  ওর সাথে আরও অনেক ছেলেমেয়েরাও হাঁটছে। ওরা সকলের স্বপ্ন সফলের দাবিতে হাঁটছে।  ক্রমাগত ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে হাঁটছে। বিচার চাইতে,  অধিকার ছিনিয়ে নিতে হাঁটছে।  দুর্নীতির বিষাক্ত নীল গহ্বর থেকে - মানুষকে মুক্তি দিতে।  সেই নীল পঙ্কিল বিষে ঢাকা সাদা কাপড়ের থেকে, চোখ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য হাঁটছে।  একেবারে আটপৌরে পোষাকে হাঁটছে।  কোটি টাকার বিলাসবহুল যাত্রা নয়,  সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় হাঁটছে।  কিন্তু কেন? রাস্তায় পাত পেড়ে ডাল-ভাত, খিচুড়ি- ওদের প্রাণ, ওদের স্বপ্ন। বিকৃত  উপেক্ষার প্রতি- তীব্র ঘৃণা নিয়ে হাঁটছে।  দৃঢ় সংকল্প নিয়ে যুবক যুবতী সহ এ মেয়ে হাঁটবে, আরও হাঁটবে।  ওকে অনেক হাঁটতে হবে,  আরও অনেকটা পথ হেঁটে পেরোতে হবে।  ওর গন্তব্যের পথে অনেক অনেক বাধা। তবু হাঁটবে স্বপ্নের পথ ধরে- নীল দিগন্তের দিকে। যেখানে স্বপ্ন হারিয়ে যায় না  কিছুটা পথের ভাষায়,  সহজ সরল প্রাঞ্জল মানুষের ভাষায়।  এ মেয়ে যুক্তি, তথ্য দিয়ে ...

শুভেচ্ছা বার্তা

শুভেচ্ছা বার্তা  একুশ শতকে পৌঁছে যখন আমরা মহাকাশে স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা করছি, এমন কি স্বর্গের সিঁড়ি তৈরি করার মতো প্রকল্পের কথা ভাবছি, ভবিষ্যতে নতুন নতুন আবিষ্কারের সম্ভাবনায় মগ্ন রয়েছি, সারস্বত জগতে যখন নিত্য-নতুন বিষয় বিকশিত হচ্ছে, প্রগতিশীলতার যুগে কবিতার বই নিয়ে হইচই বা কবিতা নিয়ে ভাবার মতো সামান্য বিষয় সত্যিই ধৃষ্টতা। কিন্তু কথা হচ্ছে, প্রগতি মানে যদি সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া বোঝায় তবে তা তখনই সম্ভব, যখন পেছন থেকে আলো এসে সম্মুখের পথকে আলোকিত করে।  বাঙ্গালা সাহিত্যের আর যে কিছু অভাব থাকুক, কাব্যের অভাব নেই। বিদ্যাপতির সময় হইতে আজ পর্যন্ত, বাঙ্গালী কবিরা কাব্যের বৃষ্টি করে আসছেন। এ মহাসমুদ্রে শিশিরবিন্দু প্রয়োজন হয়তো ছিল না। আমার বিশ্বাস আছে যে, অনেক স্থানে পদ্যের অপেক্ষা গদ্য কাব্য উপযোগী। বিষয় বিশেষে  কাব্যের উপযোগী হইতে পারে, কিন্তু অনেক স্থানে গদ্যের ব্যবহারই ভালো। যে স্থানে ভাষা ভাবের গৌরবে আপনা আপনি ছন্দে বিন্যস্ত হইতে চায়, কেবল সেই স্থানেই পদ্য ব্যবহার করা ভালো । নহিলে কেবল কবিনাম কিনিবার জন্য ছন্দ মিলাইতে বসা এক প্রকার সং সাজিতে বসা। কাব্যের গদ্যের উপযোগিতার উ...

অসাধারণ

অসাধারণ  দেবপ্রসাদ জানা সাধারণ মানুষ আমরা? না আমরা সাধারণ নয়, আমরা গড়েছি পৃথিবীর ঘর আমাদের হাত ধরে এসেছে ফসল  আমরা এনেছি গাছের ফল। কত মিল, কত কারখানায়- জন্মেছে নতুন নতুন পোষাক নতুন শাড়ি, আমাদের হাতে যাদু আছে,  খরা মাটিতে ফলেছে সবুজ ফসল। ফুটেছে ফুল, ভরেছে মাঠ,মহাজনের উঠান,  আমাদের মাথার ঘামে গড়ে ওঠে ইমারত। হাতের জোরে চলে ট্রেন, ওড়ে এরোপ্লেন। জলে চলে জাহাজ। মালিকের ঘরে আসে নতুন আসবাব, মালকিনের চন্দ্রহার, তার ছেলে আমপেলা। নিত্য নতুন পোষাকের রঙ মিলিয়ে জুতো। মহাজনের ঘরে বাড়ে নতুন গুদামঘর। যে আগুনে পুড়ে তৈরী করি ইস্পাত, সেই ইস্পাতের এক টুকরোও  আমাদের ঘরকে শক্তি দেয়নি, শক্ত করেনি। তবু আমরা গড়ি, তবু আমরা ঘাম ঝরাই। আমরা কাজ করি তাদের জন্য, যারা আমাদের উপর চেপে- ঘোরাবে প্রভুর দণ্ড। তবু দেখো আমাদের ঘরে চাল নেই ঘরের চালা নেই, পেট ভর্তি ভাত নেই, বোতল ভরা জল নেই,  আমরা যে - একশ চল্লিশ কোটি মানুষ, কিছু মানুষকে  ধনবান করতে এসেছি। তবু আমরা সাধারণ? অসাধারণ নই।

হে ঘোর রজনী,

হে ঘোর রজনী দেবপ্রসাদ জানা হে ঘোর রজনী,  কৃষ্ণবর্ণ তমসাচ্ছন্ন মেঘের ঘনঘটা, আঙ্গিনার কোণে আমি একলা নিঃসঙ্গ। তোমার বিদ্বেষে আমার প্রাণ ফাটে। হে সই তমসা, কি আর বলিব তোরে, হে অভিমানী, দূরের স্টেশনে দাঁড়িয়ে  ভয়ঙ্কর অভিমান বুকে নিয়ে,  কেন অপেক্ষা করো নীরবে নিভৃতে। যে কৃষ্ণচূড়ার নিচে দিবসে তোমার দু’চোখে ! নীল জলরাশি রোদ্দুরে উন্মুখ, দুলে উঠতো অশান্ত  হাওয়ায়, ছুটে যেতো দক্ষিণ দিগন্তে ।  কিছুই তো অবশিষ্ট নেই,  বড় বড় চোখ দুটি ছাড়া,  তাকালে মনে পড়ে- তোমার নির্মমতায় স্বপ্নের সমাধি। এখনো উঠানে শীতের তমিস্রা, অপরাহ্নে তোমার স্পর্শে- গোধূলির বিমর্ষ আলোয় পড়ে আছি কখন হারাবো রাত চাপচাপ অন্ধকার তার প্রতীক্ষায় । পরিশ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি বাতাসের হিম সম্ভাষণে। মনে পড়ে কত রাত জেগে,  ঘুমচোখে প্রিয় শব্দের আশায় চোখে আশার আলো জ্বালিয়ে  জোসনাময় পথে অপার বাৎসল্যে উঠোনে আজ পৌষের চাঁদ ওঠেনি বারান্দায় আশ্চর্য গহিন কণ্ঠে কে যেন বড় আদরে রাত্রির দরজা খুলে প্রভাত নিয়ে এলো বুকের নিবিড় আশ্রয়ে।

আমি বললাম বাঃ

আমি বললাম বাঃ দেবপ্রসাদ জানা প্রতিদিনের মতো আজও  বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি,  দূর থেকে একটা সুগন্ধি  আতরের গন্ধ বাতাস বয়ে আনছে। নাকের আর চোখের ভারি মিল এক পলকে চোখের মনি ঘুরে গেল আতরের গন্ধের পথ ধরে। হলুদ শাড়ি লাল ব্লাউজের ভেতরে বেশ আঁটোসাঁটো করে বাঁধা, এক অপরূপ সুন্দরী - চোখ পড়তেই চোখে চোখে আলাপ সুন্দর ঠোঁটের ফাঁক বেয়ে ধেয়ে এলো মৃদু হাসির হালকা বাতাস। চোখে চোখ মিলিয়ে  কি যে কথা হলো বুঝিনি। অফিসের বাস এখনো আসেনি  সেদিকে তাকিয়ে আছি হঠাৎ করে একটা চড় গালের ওপর এসে আর্তনাদ করে উঠলো। যে চোখ প্রথমে দেখেছিল সে তার দরজা বন্ধ করে দিলো। যে নাকের মন্ত্রণায় চোখের এই কীর্তি, সে তার কাজ থেকে ক্ষণিকের ছুটি নিল। আমি বললাম বাঃ !

মায়ের ছেলে

মায়ের ছেলে দেবপ্রসাদ জানা ভোর না হতে মায়ের ডাক। মাথায় ঢোকে পড়ার ঝাঁক। হাঁক দিয়ে যে, বলছে মায়। ঘুমোবি কত?  বেলা যায়। সকাল হতেই সোনার ছেলে। বইয়ের পাতায় হেসেখেলে। পরীক্ষা তোর কেমন ছেলে। ঘুমোস কেন? পড়া ফেলে। অনেক হলো অঙ্ক কষা। পরীক্ষা শেষে ফের বসা। মোবাইলের এমন দশা। বই নয় যে ফোনের নেশা। পরীক্ষা শেষ আছি ঘরে। ছেলেরা সব ফোনটা ধরে। তবুও মায়ের শাসন চলে। একই ফোনে, কি আর চলে। একটা দিন কোথায় যেন। মায়ের দেখা পাইনি যেন। বেরিয়ে দেখি, বাড়ির দিকে। অবাক চোখে, ছাদের দিকে। মায়ের মতো পাবো কাকে? স্বপ্ন শুধুই, মায়ের চোখে। মা যে আমার চোখের মনি। মায়ের স্বপ্নে আমি ঋণী।        

ভালোবাসা

ভালোবাসা স্বর্ণহংস জাতক যন্ত্রণার কথা নয়,  কোনো নিরাশা ব্যথা নয় ভালোবাসা শুধু হাহাকার,  কেন ঝরে অশ্রুধারা? কেন কণ্টকের কূপ প্রণয়ের পথে?    বিস্তীর্ণ প্রান্তর মাঝে-  প্রাণ খোঁজে আকুল ব্যাকুল সাথী একজন,    নিয়তি কেনরে, মিশাতে দেয় না দুইটি জীবন?   অনুলঙ্ঘ্য বাধা রাশি, সম্মুখে দাঁড়ায়, নৈরাশ্যপূরিত ভবে,  একটি প্রাণের তরে, আর একটি প্রাণ   কাঁদিবে প্রণয়ের আকাঙ্ক্ষায়।

প্রথম দেখায়

প্রথম দেখায় দেবপ্রসাদ জানা অদ্ভুত কোনো কারণে আজ যখন,  আকাশটা আয়নার মত।  আয়নায় প্রতিফলিত হচ্ছে সূর্যের ক্রোধ।  চারপাশে বিভ্রান্তি, মরীচিকা ভাবনাগুলো  উল্টে পাল্টে আসে বারবার। অস্থির অতিরিক্ত ক্রোধ,  জীবনে আপাদমস্তক কালো চাদরে মুড়ে  শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। ভালোবাসা অদ্ভুত এক বাঁধন।  অজানা অচেনা এক ভয়ানক আকর্ষণ,  কাছে টেনে আনে ভালোবাসা।  যার কাছে মন খুলে সব কিছু বলা যায়,  পরম নির্ভরতায় ধরা যায়, যার হাত।  নিজের সুখটা গৌণ হয়ে দাঁড়ায় তখন,  পাগলের মত তার মায়াভরা মুখটা, হাসিটা। চোখের তারায় ভালোবাসাটুকু দেখতে ইচ্ছে করে। অস্ফুটে হাজারবার বলতে ইচ্ছে করে –  ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি ... প্রথম দেখায় কি প্রেম হয়?  তবু হয়েছিল সেদিন- মায়ার আকর্ষণে মোড়া, ডিমের কুসুমের মত,  তুলতুলে গাঢ় মায়া।  যদিও তখনও অনিশ্চয়তার মেঘ।  আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভালোবাসার প্রতিফলন দেখি, প্রথম দেখার ভালো লাগাটুকু অব্যক্তই থেকে যায়। অশান্ত মনের প্রতিবিম্ব দেখতে পাই আয়নায়। ভালোবাসা সেদিন বয়স মানেনি, কেমন যেন একটা স্নিগ্ধতা ঘিরে ছিল।  সেই...

অপরাধ

অপরাধ  দেবপ্রসাদ জানা অনেকদিন দেখা হয়নি তোমার সাথে কথা হয়নি কিছু। বছরের পর বছর ঘুরে গেল, কত বসন্ত চলে গেল, একটা অবাধ্য চুম্বন, চিলে কোঠার ঘরে জড়িয়ে ধরার অপরাধে- পাথর যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল তোমাকে। আমি হারিয়ে ছিলাম সেদিন, কি অপরাধে? তোমার আঁচলে ঢাকা মুখ, মন-বেদনায় হারিয়ে যাওয়া হাসি, সারাদিন গুমরে গুমরে চোখের জলে প্রেম হারানোর কষ্ট, আজও ভেসে ওঠে চোখের সামনে, সবাইকে সঠিক পথে আনতে, তোমার সেই রাতদিনের সাধনা- এক লহমায় শেষ হয়ে গেল চোখের সামনে, শুধু একটা চুম্বন, ভালোবাসার চুম্বন, 'বিচার দিলে, সময়কে - যত আদরে তুমি শিখিয়েছিলে ভালোবাসা, ঠিক ততটা অনাদরে হারিয়েছিলে,সম্মান। কিন্তু তাতেও বাধা, বোঝেনি কেউ তোমাকে, বুঝতে চায়নি কোনো দায়িত্ব নেয়নি কেউ? তুমিও দিতে পারেনি, সঠিক ব্যখ্যা।  সমাজের আশীর্বাদ নিতে পারোনি, বাধার দেওয়ার চেষ্টা করতে,  যা ছিল অসম্ভব। মানুষের উপর যখন ধ্বংস নেমে আসে, তখন বিবেক মারা যায়। প্রচণ্ড গর্জন করে, তার রূপ প্রকট করে, দৈত্য জেগে ওঠে,  ভগবান ক্রুদ্ধ হয়ে সাথ ছেড়ে দেয়, এই দেখো, আমি তোমাকেই দোষ দিচ্ছি, কেন জানো?  আমার মধ্যেও পাপ নাড়া দেয়। সূর্যের তাপ আছে...

কিশোর প্রেম

কিশোর প্রেম দেবপ্রসাদ জানা আমার চোখের বসন্ত ডাকছে তোমায়  শিমূল-পলাশ কৃষ্ণচূড়ার বনে। ঝড় উঠেছে বৃষ্টি হবে,  স্তব্ধ প্রেমের-কম্পনে  ফিরিয়ে দাও কিশোরবেলা মধুর চুম্বনে। ভালোবাসা চাইনি আমি, অশ্রুবিহীন চোখে.   জানি আমি কিশোর প্রেমের কঠিন পরিণাম। ফুটছে কলি, প্রবল বাতাস!  চোখের কোনে হা-হুতাশ। তাকিয়ে থাকি পথপানে মনে তবু প্রেমে আশ। এ যে আমার ব্যর্থ প্রেমের দারুণ চৈত্রমাস।

আলো

আলো দেবপ্রসাদ জানা আলো এক ধরনের, বাহ্যিক কারণ,  যা চোখে প্রবেশ করে, বস্তু দৃশ্যমান। আলো এক অনুভূতি, অতি সাধারণ। আলো একটি তীর্যক, তড়িৎ ভাসমান। চৌম্বকী তরঙ্গ যাহা,  নিজেই অদৃশ্য।  এর কোনো বেগ নেই, যাহা আপেক্ষিক। তড়িৎচুম্বকী তরঙ্গে, চলিবে অবশ্য। মাধ্যমের ঘনত্বের, ব্যস্তানুপাতিক।  শুন্য মাধ্যমে আলোর, খুব বেশি বেগ। অসীম নয়, ছিয়াশি হাজার মাইল। স্পর্শ করা সম্ভব না, তার গতিবেগ। সাত রঙের মিশ্রণে, শুভ্রতার মিল। কণা ধর্ম, তরঙ্গের, ধর্ম বিদ্যমান। চুম্বকী বর্ণালি তড়িৎ, ছোট্ট এক মান। বেগ ধ্রুব, সাতরঙা, আলো দৃশ্যমান। প্রতিফলনের বেগ, সর্বদা সমান।

সম্পাদকীয়

সহ সম্পাদকীয় সভ্যতা যখন এগিয়ে চলে, তার সঙ্গে আধুনিকতা-র রং বদলাতে থাকে। কয়েক বছর আগেও যা থাকে আধুনিক, অচিরেই তা পুরনো হয়ে যায় । কিন্তু, সেই পুরনো বা অতীতের যদি গৌরবময় ভূমিকা থাকে, তখন তাকে আশ্রয় করে পরবর্তী যুগের সংস্কৃতি অনেকটাই উন্নত হতে থাকে। যখন “বর্তমান” তার মান সবদিক থেকে অনেকটাই নিম্নগামী করে ফেলে,  তখন সেই অতীতকে ব্যবহার করে এগোনোর পথ বন্ধ হয়ে যায়।  যা ইদানিং অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে চারপাশে। কোনও জাতি যদি সবদিক থেকে সমৃদ্ধির শীর্ষে পৌঁছয়, তার পিছনে থাকে মেধা, নিষ্ঠা, পরিশ্রম, .উদ্যোগ, ভালোবাসা ও শিক্ষার মতো শুভ চেতনার প্রকাশ। যার থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আবির্ভূত হন মহান ব্যক্তিবর্গ।  গত ও তার আগের শতকে অনেকটা সময় জুড়ে আমরা দেখেছি এই বাংলায়। সেই কালজয়ী অধ্যায় রচিত হয়েছিল খাঁটি ভাবনা, চিন্তাশীলতা ও নিঃস্বার্থভাবে কর্মপ্রদানের মতো মানসিক প্রকাশ থেকে। এরপর থেকে যতদিন যাচ্ছে, সমাজ-রাজনীতি থেকে শুরু করে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি—সব ক্ষেত্রে নিম্ন মেধার দাপট, সত্যিকারের সৃষ্টিকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে ক্রমাগত । অথচ, আমরা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে শিখণ্ডীর মতো...

হে চরিত্রহীন

হে চরিত্রহীন স্বর্ণহংস জাতক ১৫,১১,২৩ হে চরিত্রহীন, ভালো আছো তো? কেমন লাগছে গলায় ফাঁস দিয়ে? একদিন তুমি বাংলা সাহিত্যকে দিয়ে ছিলে জ্ঞান, ভরেছিলে কথায়। তোমার সাহিত্য এনেছিল জোয়ার, এই বাংলায়, সারা ভারতবর্ষে, তোমার দীপ্ত কন্ঠের প্রতিবাদ তোমার চরিত্রে কালিমা লেপন করেছিল। হে বাংলা ভাষার মহাসূর্য প্রতিটি বাংলা সাহিত্য একদিন  শিক্ষার অরুনোদয় হয়েছিল- কালজয়ী উপন্যাসে। "চরিত্রহীন" "পরিনীতা" "দেবদাস" "মহেশ" গ্রাম বাংলাকে চিনিয়েছিল ভালোবাসা, প্রেম। তোমার সাহিত্যের টানে আজো আমরা ছুটে যাই বই খাদানে। ভুলবে না কোনদিন বাঙালি তোমার অবদান- তবু তোমার গলা পড়েছে ফাঁস। এ যে বাংলা সাহিত্যের গলায় দড়ি।

যখন একা থাকি

যখন একা থাকি দেবপ্রসাদ জানা যখন একা থাকি ভয় পাই ভয় পাই তোমাকে। যদি আবার তেমন হয়। যদি তোমার জীবনে আবার কেউ আসে ভালোবাসে, আমার থেকে বেশি। অন্ধকার রাতের মতো শরীর ভাঙছে দ্রুত, তফাৎ শুধু একটাই... রাত ভাঙলে ভোর আসে শরীর ভাঙলে মৃত্যু আসে। যখন একা থাকি ভয় পাই- ছুটে আসে, চেপে ধরে যৌবনে না পাওয়া ভালোবাসা গুলো, রাত ভাঙে, ভেঙে যাওয়া প্রেমের মতো।   হৃদয় ভাঙা কান্না যত, চেপে ধরে বুকে। শরীর ভাঙার আগে যেদিন মন ভাঙে, সম্পূর্ণ মৃত হৃদয়ের আত্মা গুলো চেপে ধরে। একটা দড়ি ঝুলে ছিল পড়ে কড়ি কাঠ থেকে। ঝুলে থাকা ঘুরন্ত পাখা হাসে, বলে এসো ঘুরতে থাকো, মেঘরঙা অন্ধকারে,  দাঁড়িয়ে থাকো দরজার ওপারে। আমি ভয় পাই,  যখন একা থাকি, ঘরে। না হার মানবো না ভেবেই স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি। আজও তার দেখা পাইনি, কখনো। ভালোবেসেছিলাম বয়ঃসন্ধির প্রাক্কালে  কোনো এক প্রখর রৌদ্র দুপুরে, মাঠের এক কোনে থাকা কৃষ্ণচূড়ার নিচে। পৃথিবী থেমে গিয়েছিল, মৃত্যু আসেনি জোরে জোরে ঘোরেনি পৃথিবী, আমিও থমকে দাঁড়িয়ে ছিলাম,  মৃত প্রেমের আত্মারা ডাকে, যখন একা থাকি ঘরে। শরীরটা ভেঙে যাচ্ছে যেমন,  শরীরের নিচের দিকটা অবশ হতে থাকে, স...

কেন জেগে আছো?

কেন জেগে আছো? স্বর্ণহংস জাতক ১৩.১১.২৩ কেন জেগে আছো প্রেয়সী? আজতো পূর্ণিমা নয়, অমাবস্যা। কালো রাতের অন্ধকার তোমাকে গ্রাস  করতে পারে, অন্ধকারের কালো রঙ তোমাকে কালিমালিপ্ত করতে পারে। এ রাতে হাজার আলোর ভেতরে যে অন্ধকার জেগে আছে, তার কলঙ্ক নির্মম। বাতাসে ভরে দিচ্ছে আরো কালো ধোঁয়া। আগুনে আগুন মেখে কালো রাতে তোমার দেহটাকে কলঙ্কিত করবে।

হরিবোল

হরিবোল স্বর্ণহংস জাতক দরবারে আজ বহুলোক। মাছমাংসে ভীষণ শোক। আদা রসুন তিনশটাকা। পিঁয়াজ তার পাশে রাখা। অলিগলি কালীপুজা। বাজার ঘুরে ভ্রান্তপ্রজা। কোটিটাকা আলোর সাজ। নিম্নবিত্তে পড়ছে বাজ। হুলুস-থুলুস গণ্ডগোল। মরার আগে হরিবোল। মন্ত্রী মশাই বেজায় খুশি। উদ্বোধনে ডাকছে মাসি। সবুজ সবুজ আতসবাজি। লালের পটকা বড্ড পাজি। কাঁদছে বসে, বেহাগ সানাই। বাজছে ঢাক, ঢাকিই নাই। বামুন পাড়ায় সোরগোল। দখিনা ব্যাগে ব্লাকহোল। মার পিছনে মালের ঠেক। সামনে লাইন হচ্ছে চেক্। হুলুস-থুলুস গণ্ডগোল। মরার আগে হরিবোল। মদের ঠেকে লাইন দাদা। মাল খেতে কোথায় বাধা। শিক্ষা দীক্ষা চুলোয় যাক। উৎসবে তাই আনন্দ ঢাক। দশের আলু কুড়ি হলো। বিনে টাকায় রেশন পেলো। দুয়ার খুললে সরকার। ব্যাঙ্কে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। তেলা মাথায় তেলে ঘানি। ভোটের আগে ছটফটানি। হুলুস-থুলুস গণ্ডগোল। মরার আগে হরিবোল।

আমার মতো

আমার মতো স্বর্ণহংস জাতক ১০.১১.২৩ আর মাত্র একটা রাত,  নিঝুম গভীর রাত। পিপাসার্ত শতাব্দীর, অপ্রয়োজনীয় বাসনা। আমি ভুলে যাব তোমার লাল শাড়িতে- ভেজা চুলের টপ্কে পড়া জল। লাল সিঁদুরে কপাল, নাকের ওপর ঝরে পড়া তোমার মুখ। তোমার প্রিয় রঙ। হায় চিত্রলেখা তোমার দেওয়া সব ছবিগুলো যদি বাগবাজারে বিক্রি হতো মানবিকতার আবরণে। কলমের শেষ কালি টুকু তোমাকেই  খুঁজতো ভালোবাসার আঙিনায়। কবিতার খাতায়। শুধু মৃত্যু, শুধু লাশ, শুধু বিস্ফোরণ, কলমে কলমে, কাগজে- প্রেম হারিয়ে যাচ্ছে অথচ আমরা কোথাও কেউ নেই, গঙ্গার পাড়ে, স্টেশনের বেঞ্চে। ভিক্টোরিয়ার ঝোপে ঝোপে, গড়ের মাঠে বাদামের খোলার সাথে হারিয়ে যাচ্ছি, তবু কত লক্ষ প্রেমিক হাঁটছে অবিরাম- তৎপরতায় গভীর নিঝুম অন্ধকারে। সব যেন মৃত প্রেমিকের লাশ। অবিকল আমার মতো।

আনমনে

আনমনে  স্বর্ণহংস জাতক গোধুলী আলোর শেষে, ভীষণ বিসন্ন রাতের আঁধারে ঢেকে দিচ্ছে গোটা দেহ, গভীর অন্ধকারের, অহেতুক ছন্দ দেখতে পাওয়া কবি, অর্থ খুঁজে মরে। পথ ভুলে একদিন,পথের মাঝেই  হারায় নিজেকে,আজো খোঁজে তারে। জীবনবোধ বাসনা, হৈমন্তীর ছন্দ। কাব্যের সবসময় ছন্দ থাকে না যে। কিছু কাব্য ছন্দহীন, কিছু গদ্য কাব্য। সব ছন্দহীন কাব্যে, স্মৃতি বাস্তবতা। কখনো কখনো অর্থে, অনর্থক শব্দ, খোঁজার চেষ্টায় ছন্দ ছোট্ট জীবনটাকে অসহনীয় অজানা রহস্যের ভরে- পৃথিবীর কান ভারি করে, সহজেই।

ভৈরবী সুর

ভৈরবী সুর দেবপ্রসাদ জানা ২৯.১০.২০২১ আলমারির কোনে সেই পুরানো তানপুরাটা টুং টুং করে বাজে প্রতিদিন। সেই যে, গুপির হাতের তানপুরার মতো। ওস্তাদের গান, ভৈরবী। সকাল কি আছে এখনো? তাহলে গান ধরি, কি বলেন বাবুরা? বটতলার বাবুদের গান শোনালেম, তারা কত সুখ্যাত করলে,তুমি বলো সুর নেই, তানপুরা আবারও বেজে ওঠে- আলমারির কোনে, মূর্ছিত হয়েছি প্রতিবার,তোমার গানে  তোমার কদরে। কত কিছু ঘটেছে,  ওই আলমারির কোনে,এই অন্তপুরে  বেজেছে তানপুরা অকারণে, সৌন্দর্য ফুটেছে তার গানে,ভালোবেসে একদিন। তার হাত, আমার বক্ষ ঘুরে ঐ তানপুরার  প্রতি তারে,সে কি সুর- ভালোবাসা। দেখনি তোমরা তার নয়নের ভাষায় লুকিয়ে ছিল, অশ্লীলতা।  গানটা আমার ঠিক আসে নি,  এ গলায় বসে নি, সুর আমি বুঝিনি, তবু মা, আমার মা। বোঝালে, মাস্টারটা ভালো, শিখে নে কিছু, যা শিখবি সব তোর থাকবে,  শশুর বাড়িতে রোয়াব বাড়বে, ওই তানপুরার তারে জমাট বাঁধা ধুলো হৃদয়ের আলোড়ন বুঝেছিল সে, শরীরের উন্মাদনা দেখেছিল যে। বুঝিনি আমি। ছলনা করেছে,  লোভের লেলিহান শিখায় জ্বালিয়ে দিয়েছে। কি যে চেয়েছিল সে? ভাঙল সব আশার তৃণলতা। ওই আলমারির কোনে তানপুরায়- পাপের ধু...

কল্পনায় তুমি.....

কল্পনায় তুমি... দেবপ্রসাদ জানা ২৬.১০.২০২৩ মেঘলা আকাশ, বিকেলের রোদ হারিয়েছে, আমি নিশ্চুপ নীরবে হেঁটে চলেছি আনমনে।  শহরের কোনো এক গলিতে,  চারদিকে মানুষের কোলাহল, ব্যস্ত শহর। মানুষের কোলাহল ছেড়ে- হাঁটতে হাঁটতে, শহর থেকে দূরে জন-মানবহীন কোনো স্থানে। যেখানে চারদিকে কোনো মানুষ নেই,  একদম নীরব প্রকৃতি। যেখানে শুধু পাখিরা গান গাইবে। বইবে শীতল বাতাস। আমি বসে থাকবো কোনো এক বটতলায়। চোখের কোণে জলবিন্দু এসে জমাট হবে। আকাশটাও আমার চোখের সাথে  তাল মিলিয়ে ঝরিয়ে দেবে বৃষ্টি কণা। বুঝবে না কেউ, আমি কাঁদছি, অনেকটা ভিজে যাবে আমার শরীর, ঠান্ডা বাতাস আমাকে শীতল করে দিয়ে বলবে, কাঁদো, আরো কাঁদো ভুলে যাবে সব। আমি ভুলে যাবো তোমার কথা, আমি ভুলে যাবো তোমার প্রেমের- মন ভোলানো শব্দ গুলো। ভুলে যাবো যাত্রী ছাউনিতে বাসের অপেক্ষায়, নীল শাড়ির ফাঁকে তোমার মোহময় তনু। লাল লিপষ্টিকে আদুরে তোমার ঠোঁট। ভালোবাসায় ভেজা শাড়ির আঁচলে - জড়িয়ে ধরা তোমার আদর। আমি ভুলে যাবো। আবার বৃষ্টি নামলে- বৃষ্টিতে ভিজতে হবে বলে ছাতা হাতে নিয়ে তোমার এগিয়ে আসা। তোমার অভিমানী শাসনে- নিজেকে সামলে নেওয়া, সব ভুলে যাবো।   আবা...

আমি ভালোবেসেছিলাম

আমি ভালোবেসেছিলাম দেবপ্রসাদ জানা ২৬.১০.২০২৩ গাড়িটা চলে গেল দূরে,  অনেক দূরে...... আমার বুকটা হাহাকার করে উঠল,  চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হলো-  "আমি মিথ্যে বলেছি সোনা।  আমি তোমার বরের অফিসের বস নই!  আমি টিউশনী করে চলা,  বস্তিতে থাকা অকর্মা-বেকার যুবক।  যেদিন তোমার বিয়ে হলো,  সেদিন আমি অস্ট্রেলিয়া যাইনি।  আমি সারারাত ছাদে বসে কেঁদেছি...  তোমার কথা ভেবেছি,  তোমার ধারণা ঠিক, আমি একটা দুর্বল।  আমি ভালো নেই সোনা,  আমি ভালো নেই!" হ্যাঁ নিশ্চয়ই ভীষণ অবাক হচ্ছো,  ওর চিন্তা আমি স্পষ্ট ধরতে পারছি না।  একসময় বইয়ের মতো পড়তে পারতাম  ওর মনটাকে, আজ অবোধ্য সে দূর থেকে মিষ্টি করে হাসল, আমি তার দিকে তাকিয়ে।  তার চোয়াল বিস্ময়ে ঝুলে পড়েছে। আমার আকুতি ভরা সংলাপ সে- শুনতে পায়নি, আমার বাইরের হাসিটা দেখেছে। আমি তার প্রাক্তন প্রেমিক,  এ কথাটা তার মুখ থেকে বেরোল না। বেশ অবাক হয়েছে বলে মনে হলো। নিশ্চয়ই ভাবছে, চার বছর আগে - যে ছেলেটার সাথে দীর্ঘদিনে  ভালোবাসার সম্পর্ক, কোন কারণ ছাড়াই,  এক মুহূর্তে চুকিয়ে দিয়ে,  বাব...

খিচুড়ি

খিচুড়ি  দেবপ্রসাদ জানা ২৫.১০.২০২৩ চল শালা তোর সময় শেষ। ঘুমিয়ে ছিলাম জানেন,  রাতের খাবার খেয়ে, একটা মিষ্টিও ছিল। বেশ আরামে পাশবালিশে পা তুলে - হ্যাঁ বউ ও ছিল সঙ্গে,  ও উল্টো দিকে মুখ করে গভীর ঘুমে- আমি বললাম আরে !  এখন কেন?  ঘুমাচ্ছি, তাছাড়া কোথায় যাবো? কালো ভোঁত্কা একটা মোটা লোক মাথায় সোনালী রঙের মুকুট পরেছে আবার, সবাই বলে আমার নাকি মাথাটা, খুব ডাল। আপনাদেরও কি তাই মনে হয়?  ছোটো বয়স থেকেই শুনে আসছি  আমার নাকি কিসসু হবে না,  এক্কেবারে ডাল মাথা। তবে শুনতে খারাপ লাগলেও, আমি কষ্ট একেবারেই পাই না,  মহাপুরুষদের জীবনী পড়ে দেখেছি ছোটো বয়সে, তাঁদের অনেকেই আমার মতো ছিলেন,  অনেকেই পড়াশোনা ভালোভাবে করতেন না,  ক্লাসে গাড্ডুও মারতেন কেউ কেউ ।  আমি কিন্তু, কখনোই গাড্ডু মারিনি,  টেনেটুনে ঠিক পাশ নম্বরটা তুলে নিতাম।  তবুও শুনতে হ'তো "ডাল হেডেড ! " তা সে যাই হোক, চাকরি বিয়ে বউ বাচ্চা- ওই বিশেষ বিশেষণটা এখনো মলিন হয়নি। আসলে কি জানেন,  সাধারণ মানুষের পক্ষে, মহাপুরুষদের বুঝতে পারা একেবারেই সম্ভব নয়। সাধারণের সঙ্গে ভাবনার বিশাল ফারাক!...

শুভ বিজয়া

শুভ বিজয়া দেবপ্রসাদ জানা পুজোর শেষ, পৃথিবীকে অন্ধকার করে মা চললেন নিজের বাড়ি কৈলাশে। বরফের দেশ, ঠাণ্ডায় হিমকরা কাঁপুনির মধ্যেও মা থাকেন, বলেন না উষ্ণতা চাই। বলেন না আধুনিকতা চাই। তবু চললেন পৃথিবীর সব সুবিধা ছেড়ে অসুবিধার দেশে। পর্যাপ্ত আলোয় পুবের আকাশটা  সোনালী রঙে ভরে যায় কৈলাশ। আরো কত রঙের বাহার সেখানে প্রাকৃতিক। স্পষ্ট দেখা যায় সব। মাকে দেখা যায় না।  এখানে হাজার নিয়নের বাতি জ্বেলে, রাখতে হয় মাকে। বাবা ভোলা নাথের অমতে আসেন বটে, কিন্তু বেশিদিন থাকতে পারেন না কিছুতেই। আবছা অন্ধকার,  রাতের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। বড্ড দুষ্ট হয়েছে পশ্চিমের আকাশটা। তাড়াতাড়ি তাড়াহুড়ো করে রাত আসে। একটা সময় গভীর হয় অন্ধকার। দিনের শেষে রাতের প্রথম অন্ধকারের  মাঝামাঝি একটা সময় আছে,  বেশ ভালো লাগে কিন্তু সময়টা কম। মা আসার দিন গুলোর মতো। আজ চলে গেল মা- শুভ বিজয়া 

একটা চিঠি

একটা চিঠি  দেবপ্রসাদ জানা ২৩.১০.২০২৩ সাদা পাতার কি কপাল। এখন আর কেউ চিঠি লেখে না তাতে। মেঘের ভাঁজে পুরে, সাদা মেঘের গায়ে- মেঘের হাতেও কেউ চিঠি দেয় না আদরে। পায়রার কথাতো বাদই দিলাম। সে রাজা রাজরাদের ব্যাপার। একটা ভালোবাসার চিঠি এখন, হাজার মাইল দূরে এক মুহূর্তে চলে যাচ্ছে। ভালো খারাপ দেয়ানেয়ার সব কথা তোমাদের ওই ছোট্ট মেশিনটায় ভরে। আমি একদিন কি ভেবে আমার গল্পগুলোকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম তার কাছে।  গল্পগুলো ঠিক গল্প নয়, জানো তো...  নিতান্তই দৈনন্দিন টুকিটাকি।  এই তো সেদিন,  আলগোছে পাতা উল্টিয়ে দেখি, এক কোণে লিখে রেখেছি, সেদিনকার বাজার দর।  কুচো চিংড়ি তিনশো গ্রাম ১০০ টাকা!  কুচো চিংড়ির দাম জেনে,  কি করবে সে? এটা কিছুতেই মাথায় আসে নি!  কি জানি কি সব আবোল তাবোল লিখি! তবু লিখেছিলাম পাতা ভরে, সাদা পাতায়। আসলে সাদা পাতার দুঃখটা বোঝেনি কেউ। আমি বুঝেছিলাম বটে। তবে চিঠিগুলো কাকে লেখা? এই যেমন ধরো বিকেল বেলায়,  অলস বিছানায় গা এলিয়ে,  বসে থাকতে থাকতে, লিখে ফেলেছি দু'কলম। মাঝে মাঝে গভীর রাত্তিরে ঘুম ভেঙে, চোখ কচলাতে কচলাতে লিখেছি,  "আজকের চাঁদটার ম...

একটা অচেনা নদী

একটা অচেনা নদী দেবপ্রসাদ জানা একটা চেনা নদী একটা অচেনা স্রোত। দূর থেকে দূরে  আকাশ চলে যায়,  কেন যে চেনা মন আমাকে ডাকে,  শুধু ডাকে। এমনটা যদি হতো ছেঁড়া সাদা পাল আঁকড়ে ধরে বাতাস নদী বুক চিরে চলে যায় সকালের হাওয়ার বাঁধনে। তোর অকুণ্ঠ ভালোবাসার পথে টিলা জঙ্গল নিয়ে চলেছি, মেঘ কুড়োতে, শেষ আশ্বিন, হেমন্ত হলো শুরু। ভাদ্রের জ্বালা জুড়োতে, শাল পলাশের পাড়ায়, শিশির নেমেছে ঘাসে মুখে চুম্বন দিতে কদমের ফুলের গন্ধ চোখে ঘুম দিয়ে- ছেঁড়া পালের নৌকায় ডাকে হেমন্ত। নীলকণ্ঠের নীল দ্বীপে কোজাগরী জোছনাকে ডেকে বিষণ্ণতার মানে খোঁজে আগমনী হাওয়া গহীন নিভৃতে।  মনের জানালা ধরে, হেমন্তের দিন গুলি উঁকি দিয়ে গেল হিমেল হাওয়ার উত্তরে।

রৌদ্রের চিৎকার

রৌদ্রের চিৎকার  দেবপ্রসাদ জানা না বাসস্টপে দেখা তিন মিনিট,  বহুকাল ধরে মনের গভীরে বেঁধেছি তোমাকে স্বপ্নে, কখনো কল্পনায়। দিকচিহ্নহীন এই ভালোবাসার গল্প শোনাতে পারিনি আমি। এক শরীর, একমন, একান্তে প্রেম- হয়নি কোনদিন, পূবালী হাওয়ার ভিতরে স্বপ্নে, অফুরন্ত বনানীর সবুজে,  নীল স্বপ্নের, নীল দুঃসময়ে। দক্ষিণা বাতাসে ওড়া তোমার চুলের   সুগন্ধ মেখে, স্বপ্নের সমুদ্রে ভাসা কী ভয়ংকর।  স্বপ্ন ফুরিয়েছিল সেদিন,  যেদিন চোখের পাতায় তুলসী চন্দনের,  প্রলেপ পড়ে গেল, ঘুম দিয়ে গেল চিরনিদ্রার অন্ধকার। না ঘুমোবো না, স্বপ্নে দেখা শেষ হবে কিনা? তোমার সুশীল পোশাকের লজ্জাহীন, সেলফি। স্বপ্নহীন জেগে থাকার প্রয়াস, তোমার সহাস্য মুখের অন্তঃস্থলে,  রৌদ্রের চিৎকার শুনেছি, আমি। আমার বুকের ভিতরে।

জ্যোতির্ময়ী রূপ

জ্যোতির্ময়ী রূপ দেবপ্রসাদ জানা ২১.১০.২০২৩ হে রূপসিন্ধু, স্বরূপ তোমার - হৃদয় ভরিয়া যায়, সুধায় সুধায়। এ কোন মৃত্তিকায় খুঁজি বিশ্বের মন্দির। উদার আকাশ আর, সিন্ধুর সুনীল। গিরি নির্ঝরিনী অশ্রান্ত উচ্ছল প্রভা। প্রান্তর দিগন্ত নীল, শ্যাম মধুরিমায়। প্রকৃতির অঙ্গে অঙ্গে তোমার সুষমা, সম্বলহীন কুণ্ঠায়, এ কোন চমৎকারে পেয়েছ তোমার এমন রূপ,  কবে কোনখানে?  সৃষ্টির আদিকালে ব্রহ্মার কোলে, তোমার উৎপত্তি, তোমার সৃষ্টি। তোমার রূপে মুগ্ধ হয়ে,  তোমারেই বাসনা করেন যিনি, তিনি আর কেউ নয়,  তিনি প্রজাপতি ব্রহ্মা। তোমার চঞ্চলতায় সেও ধরিবারে চায়, অন্তরে, বাহিরে অপূর্ব আলোকে তোমার জ্যোতির্ময়ী রূপ, 

কবির দুর্গা

কবির দুর্গা দেবপ্রসাদ জানা নীল আকাশে শরৎ ভাসে শুভ্র মেঘের ভেলা। শুরু হলো রোজ কবিতায়  দুর্গা দুর্গার খেলা। কারো দুর্গা মাটির গড়া কারোর দুর্গা বেলা। কাশ ফুলের সাদা ফুলের বসিয়ে দিলো মেলা। কারো দুর্গা টালির ঘরে কারোর দুর্গা বিলে। মেঘে উড়ছে পেঁজা তুলো  কোথায় যেন চলে। হায়রে দুর্গা ফুটপাতের রজনী গেল খেটে। কাশের ধুতি দুলিয়ে এলো তোমায় নেবে  বটে। এমন দুর্গা খেলায় কেন মাতলো কবির দল। শরতের শুভ্র নীল গগনে  কালো মেঘের ছল। কারোর দুর্গা বাসন মাজে কারোর দুর্গা হাসে। জমির পানে তাকিয়ে দেখি শিশির নেইযে ঘাসে। কাশের বনে শুকনো পাতা দুর্গা তুলে আনে। রান্না ঘরের খালি উনুন ভেসে গেছে বানে। শরৎ হাওয়ায় তারই বার্তা  আকাশের সাদা মেঘ। এদিক ওদিকে ঘুরে বেড়ায় পেটে ক্ষিদের বেগ। কবির দুর্গার ঘর নেই সেতুর নিচে ঘর। মাটির দুর্গার রঙিন আলো হাজার অনুচর। পুজোর গন্ধে মাটির দুর্গা  হাসছে সারাদিন। শিউলির ডালে শুয়োপোকা ঘুরছে প্রতিদিন। দুর্গা নিয়ে শব্দ খেলায় মাতলো কবির দল। গাছের পাতা ফলফুলে কবিতা দূর্বল।

ওভারব্রীজে

ওভারব্রীজে দেবপ্রসাদ জানা ২০.১০.২০২৩ ওভারব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে আছি আমি।  সন্ধার সূর্যটা বহু আগেই বাড়ি ফিরে গেছে, রাস্তার সোডিয়াম হলুদ বাতিগুলোও জ্বলে উঠেছে আলোকময় নগরীকে আরেকটু আলোকিত। এই সময় বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে মানুষের, ফিরে যাওয়ার নীরব প্রতিযোগিতা। ভীড় বাড়ে বাসে ঠেলাঠেলি।   হাঁ যাত্রীদের ফিরে যাবার,  আকুলতা দেখতে থাকি আমি।  মানুষের জীবনটা বড় বিচিত্র, পাখির মতো। দিন শেষে রাতে পরিবারের পিছুটান, অবাক লাগে মাঝে মাঝে এরকম পিছুটান।  ভীড় বাড়ে ওভারব্রীজে,  একটা মেয়ে না বউ দেখিনি  অনেকক্ষণ কার জন্য যেন অপেক্ষা করছে। অস্থায়ী বাসিন্দারা ফিরতে শুরু করেছে, আমি ব্যস্ততার পাশ কাটিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।  হাতের জ্বলন্ত সিগারেট,  টান দিতে ভুলে গেছি, হাতে ছেঁকা লাগল। ব্রীজের আলো গুলো মহিমায় উজ্বল হয়ে উঠছে। আমাদের পৃথিবীটা হয়ত কোন জ্বলন্ত সিগারেট, প্রতি মুহুর্তেই ছোট হয়ে আসছে।  প্রতিদিন ছেঁকা দিয়ে যাচ্ছে, মধ্যবিত্ত বেকারের হাতে। আজকের দিনে একটু বিলাসিতা হতেই পারে। বেতনটা এ মাসে দুদিন আগেই পেলাম।  মন বাসা পরিবর্তন করেছে। সত্যিকার অর্থে আমার জন্যেই। ...

তোমাকে ঠিক চেয়ে নেবো

তোমাকে ঠিক চেয়ে নেবো  দেবপ্রসাদ জানা যখন খুব মেঘ করবে,  বৃষ্টি নামার আগে রাতের আকাশ যখন-  অফুরন্ত উল্লাসে নিজেকে লালচে রঙ্গে রাঙিয়ে, যখন অফুরন্ত ভালোবাসার উদ্বেগ হবে, তখন তোমাকে ঠিক চেয়ে নেবো। যখন মাঝেমাঝে আমার মনে অদ্ভুত - এক ইচ্ছে জেগে উঠবে।  বোকা বোকা কতগুলো ইচ্ছে ,  আমার কাছে ভীষণ প্রিয় হয়ে উঠবে।  রাতের মেঘলা আকাশে নির্জন একটি দ্বীপ, কিনতে ইচ্ছে করবে।  ইচ্ছেমত সবুজ আর নীলচে রঙ করা- সমুদ্রের মাঝে দ্বীপটিতে - শুধু আমার একলা রাজত্ব হবে। ঠিক তখন তোমাকে চেয়ে নেবো আমি। মাঝরাতের আকাশ ভেঙ্গে যখন ঝুম ঝুম বৃষ্টি নামবে,  সেই বৃষ্টিতে আমি দুরন্ত নদীর মত উল্লাসে,  যখন মেতে উঠব ।  বৃষ্টির আনন্দ আমাকে বাঁধতে আসবে না। আমার একলা দ্বীপে মুগ্ধতায় মাখা বৃষ্টি- ছোট্ট সমুদ্রতটে হলদে বালির ওপর-  অবিরাম ঝরতে থাকবে, রঙ্গীন কোন ছোটো সালতি,  অনেক দুরের কোন দ্বীপাঞ্চল থেকে,  কোন খেয়ালী বাতাস ভ্রমণসঙ্গী হয়ে উদাস নয়নে, ভীষণ সাহসী আর উন্মত্ত বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকবে। তখন আমি ঠিক চেয়ে নেবো তোমাকে। যখন আমার চুলের বাতাসের যুদ্ধ হবে-  তখন আমি ঠিক চেয়...

জন্ম

আকাশের ঘোলাটে বিষণ্ণতা কাটিয়ে হৃদ স্পন্দনের কম্পনে সুরেলা বাদ্যে মুখোরিত দেবীপক্ষে দেবীর আবির্ভাব।  মহা চতুর্থীর পূণ্যলগ্নে দুপুর পেরিয়ে ঠিক একটায়। সবুজের শিহরিত সজীবতায় জন্মে  অভিমানী ফোঁটা, গর্বোদ্ধত বারিবিন্দুর সম্মোহন...  অলিখিত ব্যবধানে বাউণ্ডুলে একতারা   আঙুলের রক্তাক্ত আঁচড় কেটেই  ছড়ের শরীরে ছোঁয়াতে চেয়েছিল  বিশুদ্ধ স্বেদনে নির্ভীক প্রেমের স্মৃতি!  ফুলের সুবাসে স্নিগ্ধতা পর হ’লেই  কুণ্ডলীর কুণ্ঠায় ধোঁয়া অযাচিত,  সময়ের করাল দংশনে হতবাক প্রশ্ন   প্রশমনে সোঁদা মাটির খোঁজে নষ্ট,  ক্ষেতের ক্ষেত্রজ খতিয়ানে খয়রাতি...  ধারায় আপ্লুত ঝরণা হয়তো  আসলে আড়ালে ফেলা চোখের জল,  বিরহিত যমুনায় আকুলতা অনায়াসে   হ’তেই পারে ব্যবহারে বিবর্জিত,  স্থিরতা হারালেই কালপুরুষ কাপুরুষ?  স্বাদ আর বিস্বাদের ফারাক   বুঝে গেলেই নিবারণের বারণ চিনে  হতাশার হা-হুতাশ মোটেও অবুঝ নয়,  বিলম্বিত লয়ের দ্যোতকে পূরণ করা  প্রলম্বিত শূন্যের বিচরণ সাবলীল...  তবুও কারণের শব দাহ-কালে   জ্বল...

শরতের প্রতিবাদ

শরতের প্রতিবাদ  দেবপ্রসাদ জানা ১৭.১০.২০২৩ শরতের মুখে গাঁথা সূর্য ফোঁটা ফোঁটা চুইয়ে পড়া রক্ত যেমন। সকালের রশ্মি শরতের আগমনী মঞ্চে স্পট লাইটের মতো টানছে। একদিকে ঘোর অন্ধকার,  একদিকে শারদীয়ালোকের শিব তাণ্ডব। প্রতিটি ফুটপাতের আলোর পিছনে  না খেতে পাওয়া, এক একটা উলঙ্গ লাস, তবু আমরা সমাজ কল্যাণে ব্রতী। কতকগুলো ঘৃণিত প্রাণী, ঘৃণার মন্ত্রে উচ্চারিত প্রার্থনাকে ছাপিয়ে দশভূজার দশহাতের অস্ত্রসস্ত্রকে জাগরিত করি। অস্ত্র? যা ছুঁড়ে বিনাশ করা যায়। সস্ত্র? যা নিজ হস্তে বধ করতে হয়। না কোনটাই ব্যবহার যোগ্য নেই। তবু মায়ের আগমনী সুরে পাপ ও পাপীদের বিনাশ বার্তা। কেন? তবু জেগে থাকে প্রতিটা মুখ ফুটপাতে। অলিতে গলিতে। যেখানে সকালের রশ্মির মত ফোঁটা ফোঁটা রক্ত চুইয়ে পড়ে।  দখলদাররা কুত্তার মত গর্জায় -  "ছোটলোকের দল শহরে নোংরা করছিস্।" “কে তোর সঙ্গী ?” একটা বস্ত্রদান এক মুঠো চাল,  একবেলার পেট পূর্তি মোবাইল উৎসব। ভবিষ্যৎ নির্দিষ্ট হয়—সকালের রশ্মির মত, ফোঁটা ফোঁটা রক্ত চুইয়ে পড়া রোদ। ঠিক তখন থেকেই বলবৎ হয়—আগমনী। কথা গুলো তীরের মতো ছিটকে আসে। কার্তুজের মত—আগুন ছোঁড়ে। প্রার্থনাগুল...

এ কিসের আগমনী

এ কিসের আগমনী দেবপ্রসাদ জানা কাশফুলের হৃদয় মায়ের আগমনী। মা এলো নতুন সাজে, আবার প্রকৃতি, ঢাকের তালে নেচে উঠেছে। কি আজব ব্যাপার, বলো দেখি। প্রকৃতির মুখে মুচকি হাসি। মেঘেরা পাল তুলে কাশবনের দেশে চলেছে। কাছে যাবার মতো প্রবৃত্তি কি করেই বা হবে? সারা গায়ে লেগে আছে পাপের ধূলো। সত্যের শুভ পায়ে-  কুৎসিত কালো অন্ধকার। কিঞ্জল চোখের গভীরে প্রতিহিংসার ক্ষুধা। চাপ চাপ রক্তের শুকনো দাগ।  হাঁটতে গেলেই পথ আগলে দাঁড়ায় অন্ধকার। মনও সায় দেয় না যেতে,  অথচ যেতে হবেই সব কালো মেখে, ক্ষুরধার সাঁকো পেরিয়ে, সাদা মেঘের নীচে লক্ লক্, করছে, লেলিহান আগুনের শিখা। কালো ধোঁয়ায় ভরেছে পৃথিবী। চির রহস্যময় পাল তোলা সাদা মেঘ, অন্ধকারময় পৃথিবীর কাশফুল ভয়ে ভয়ে কাঁটা হয়ে আছে।  তবে কি, কোন মূল্যেই তার কাশবনে  যাওয়া হবে না?

কাশফুল

কাশফুলের হৃদয় মাঝে মায়ের আগমনী। মা এলো নতুন সাজে, আবার প্রকৃতি, ঢাকের তালে নেচে উঠেছে। কি আজব ব্যাপার, বলো দেখি। ভাবছে নূপুর।  ছেলেটার নাম রাজু।  সব মেয়েই ওর জন্য পাগল।  নুপুর একদমই পছন্দ করে না।  ছেলেটা তার পাশের বাড়ির। মুচকি হাসে।  কাছে যাবার মতো প্রবৃত্তি কি করেই বা হবে সারা গায়ে লেগে আছে পাপ-ধূলো ঘূণিত সমা সত্যের শভ পায়ে কুৎসিত কালো লেগে আছে কিঞ্জল চোখের গভীরে প্রতিহিংসার ক্ষুধা তন্ময় হাতে ; চাপ চাপ রক্তের শুকনো দাগ । হাঁটতে গেলেই পথ আগলে দাঁড়ায় মনুষ্য বিবেক। মনও সায় দেয় না যেতে, অথচ যেতে হবেই সব কালো মেখে ক্ষুরধার সাঁকো পেরিয়ে যার নীচে লক্ লক্, করছে লেলিহান আগুনের শিখা চির রহস্যময় তোমার কথা ভাবছি, আর ভয়ে ভয়ে কাঁটা হয়ে যাচ্ছি। তবে কি কোন মূল্যেই তোমার কাছে হবে নাকো যাওয়া ?- রাজুঃ এই যে নুপুর, উনি আমার বাবা, কাল এসেছে। নুপুর পায়ে ধরে সালাম করল। আর বলল, “আঙ্কেল, আমাদের বাসায় আসবেন কিন্তু।“ নুপুরের এক ফ্রেন্ড রাজুকে লাইক করে। তাই মাঝে মাঝে রাজুর ভোনের কাছে গিয়ে কথা বলে আসে। কিন্তু নুপুর এসব লাইক করে না। নুপুর একটু reserve  টাইপের। তাই ত...

হে অচিন্ত্য

হে অচিন্ত্য দেবপ্রসাদ হে অচিন্ত্য পূর্ণ রূপ-চরিত-মহিমা, নবশোভা, নব ধ্যান, মৃন্ময়ী প্রতিমা, হে মহালক্ষ্মী জননী, বোধন সাধনে। বিকশিল জ্যোতি প্রীতি, মঙ্গল বরণে। তুমি ব্রহ্ম মহামায়া, বিপদহারিনী। তব প্রেমময় আঁখি, নিখিল তারণী। কনককান্তি ঝরিছে, শ্রীকান্ত বদনে। জয় সংগীত ধ্বনিছে, তোমার ভুবনে। প্রাক্-প্রত্যুষে জাগো হে, জ্যোতির্ম্ময়ী মাতা। জগন্মাতা মহাশক্তি, আগমনী বার্তা। আকাশ-বাতাসে ঘোরে, বেদ মন্ত্রস্তব। ভূলোকে গোলোকে জাগে, মহাকলরব। ভূমানন্দে মহানন্দে, অপূর্ব্ব প্রেরণা।  শারদ গগনে দেবী,করিছো ঘোষণা। হে অহং রুদ্রেভি চণ্ডী মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি। মহর্ষি অম্ভৃণের কন্যা; মহাপূণ্য শশী। সূক্তের দেবতা দেবী, পরব্রহ্মময়ী। আদ্যাশক্তি জগদম্বা, হে পরমাশ্রয়ী। তুমি রুদ্রা ও (অষ্ট) বসুরূপে বিচরণ করি; আমি (দ্বাদশ) আদিত্য ও বিশ্বদেবগণের রূপে বিচরণ করি; আমি মিত্র ও বরুণকে ধারণ করছি; আমি ইন্দ্র ও অগ্নিকে ধারণ করছি; আমিই ধারণ করছি অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে।।১।। আমি দেবগণের শত্রুনাশকারী সোম, ত্বষ্টা, পূষা ও ভগকে ধারণ করছি; দেবতাদের উদ্দেশ্যে হবি-প্রদানকারী ও বিধি অনুযায়ী সোমরস প্রস্তুতকারী যজমানকে আমি ধন প্রদান করি।।২।। আ...

তবে?

তবে?  দেবপ্রসাদ জানা ১৫.১০.২০২৩ তবে কেন যেন মনে হচ্ছে,  আজ রাতে বৃষ্টি নামবে ,  শরৎকাল তো সারপ্রাইজ দিতে, ভীষণ পছন্দ করে বলেই জানি। লক্ষ্য করলাম, একা একা হাসছি। কয়েকজন ঘুরে আমার দিকে তাকাচ্ছে, সম্ভবত পাগল ঠাওরেছে। সে যাকগে , কে কি ভাবল তা নিয়ে মাথা ঘামাবার,  খুব কমই সময়, সময় ব্যক্তিমালিকানাধীন। তাই সংরক্ষন করি।  এর সদ্গতি করি, নাকি দুর্গতি করি  তা ঠিক জানি না, তবে আমার সমস্যার  যে একটা গতি হয় তা কিন্তু সত্যি। তবু মনে হচ্ছে আজ রাতে বৃষ্টি হবে। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষার পর- সময়ের দরজা খুলে গেল। কি বলব বুঝলাম না,  সত্যি বলতে কি, বেয়াদব রকমের সময়,  আমার জীবনে খুব কম দেখেছি।  কেন যেন বুড়ো বয়সের সময় গুলি সব বিখ্যাত হয়ে যায়।  কিভাবে সেটা একটা ভাববার বিষয়। আপাতত মাথা না ঘামিয়ে, বসে পড়লাম।  বৃষ্টি আসার অপেক্ষায়। কয়েক মুহূর্তে মেজাজ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল,  এতক্ষন ধরে বসে আছি,কত বড় সাহস,  আমার সময়- আমাকে এর পরেও  অপেক্ষা করতে বলে। আমি হতাশার সাথে আবিষ্কার করলাম, আমার বয়স আর আমার সময়,  চোখে চশমা লাগিয়ে, হাতে বই নিয়ে,...

একটানা স্বপ্ন

একটানা স্বপ্ন দেবপ্রসাদ জানা খুব মেঘ করে বৃষ্টি নামার আগে  রাতের আকাশ যখন অফুরন্ত উল্লাসে, নিজেকে লালচে রঙে সাজায়,  রাতের মেঘলা আকাশ দেখলে,  নির্জন একটি দ্বীপের যেমন ইচ্ছে করে।  সবুজ আর নীলচে রঙ করা, দ্বীপটিতে শুধু একলা রাজত্ব করবে।  আকাশ ভেঙে সেখানে যখন ঝুম বৃষ্টি নামবে,  তখন দুরন্ত নদীর মত উল্লাসে মেতে উঠবে, বৃষ্টির আনন্দে। মুগ্ধতায় মাখা বৃষ্টির আশ সমুদ্রতটে,  অবিরাম দুলতে থাকবে,  কোন এক পাল ছেঁড়া পানসি ,  হতে পারে অনেক দুরের,  কোন দ্বীপাঞ্চল থেকে ভেসে এসেছে ,  হতে পারে খেয়ালি রাজপুত্রের,  বিলাসী ভ্রমণসঙ্গী, হারিয়েছে।  পানসিতে উদাস নয়নে বসে থাকা,  এক সাহসী কাক। ভিজে জবজবে। কাকা রবে ডেকে উঠবে। বৃষ্টিমুগ্ধ পানসি ছেঁড়া পালের আঁচলে, মুখ লুকিয়ে বলবে ভালোবাসি। উন্মত্ত বৃষ্টি বাতাসের সাথে যুদ্ধ করতে করতে- ঝাপসা হয়ে যাওয়া আকাশের চশমায়  ছবি আঁকবে। ভরসন্ধ্যাবেলায় যখন এই অদ্ভুত,  কল্পনাবিলাসী মেঘ, ঝড়ো হাওয়া হয়ে- পানসির পালটি ছিঁড়ে চলে গেল, তখন বুঝলাম।

একটি রাত

একটি রাত  দেবপ্রসাদ জানা ১২.১০.২৩ কেন জানি না আজ খুব কান্না পাচ্ছে!  শূন্যতা, পূর্ণতা, নির্ভরতা-  নাকি নিঃসঙ্গতার জন্য,  তাও জানি না।  বুকের ভিতরে কোথায় যেন,  লুকানো জায়গা থেকে একদল অভিমান,  প্রচণ্ড সাইক্লোনে কান্না হয়ে-  দু’চোখ ফেটে বেরুতে চাইছে।  শূন্যতা তার ইচ্ছে মত, তার নিষ্ঠুর খেলা খেলছে। হিমবাহ ছুঁয়ে ছুটে আসা, দমকা শীতল বাতাস। ঘনকালো মেঘের মতো- মহাকাল। যে পাঁচটা আঙ্গুলের শরণার্থী আমি,  যে বুকের খাঁচায় রাখা ছিল আমার প্রাণ,  যার দুটো অদ্ভুত সুন্দর মধুভরা ঠোঁটের উষ্ণতায়, জীবনটা শিউলিফুলের মত সুন্দর,  যদিও ক্ষনিকের, আমি চমকে উঠেছিলাম।  তুমি আমায় পরম মততায় আলতো জড়িয়ে ধরে, তোমার ঠোঁটের সেই খুব মিষ্টি ছোঁয়ায় ভরে, ভোরের আলো ফোটার আগেই, দুষ্টু বাতাস এসে তোমাকে চুপি চুপি, নিয়ে গেল, তবুও আমি কাঁদিনি শিশির। প্রতিটি ক্ষণ হৃদয়ে যে, পরম সত্য অনুভব করলাম-  প্রতিরাতের ক্ষনিকের ভালোবাসা, এ শুধু আমার জন্য নয়, সে আর এক শিউলির এক রাতে প্রেম।

নীল উল্কা

নীলউল্কা স্বর্ণহংস জাতক ১১.১০.২৩ একটা নীলউল্কা প্রতিদিন পথ দেখাচ্ছে, আলোর পথ। ছড়িয়ে যাওয়া রবির কিরণে  বাঁচতে চাওয়া প্রাণী গুলোর ওপর দুহাতে ছড়িয়ে দেওয়া রবির আলো, অকৃপণ দানীর মতো। অসহিষ্ণুতার মেঘলা আকাশ বিদীর্ণ করে, নীলউল্কার সেই দেখানো পথ, অন্ধকারের ফাঁকে ফাঁকে রবির আলো  হীরক দ্যুতির মতো ছড়িয়ে দেয় পৃথিবীর বুকে । রাগ দুঃখ মান অভিমান করেনি সে, ভালোবাসার শ্রাবণের ধারায়  চিরকালের মতো। হিংসা ক্রোধ লোভ লালসা তলিয়ে দিতে চেয়েছে। যদিও ভালোবাসার মনটাকে কতদিন বাঁচাতে  পারবে জানা নেই, যা ধ্বংসাত্মক কর্ম যজ্ঞ চলছে- প্রতিটি নক্ষত্রে নক্ষত্রে, গ্রহে গ্রহে, অন্ধকারময় পথ কেটে নীলউল্কার ছুটে বেড়ানো মুক্ত করে অসহায় বন্দী শব্দমালা নানান আলাপ চারিতায়, অপসংস্কৃতির আঘাতে শব্দগুচ্ছ ভাঙে নির্লজ্জ অনুকরণপ্রিয়তায়। ক্ষয়ে যাওয়া ভাষার পুনরুদ্ধার, নয়তো সংক্রামক ব্যাধির মহৌষ‌‌ধের খোঁজে  নীলউল্কার এই ছুটে বেড়ানো বৃথা।       

ভালোবাসার আগে

ভালোবাসার আগে দেবপ্রসাদ জানা ১০.১০.২০২৩ এই মাতাল করা পূজার গন্ধে, আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরা, আমার একলা সন্ধে, ভালোবাসার বেহিসাবী ঝড়, হৃদস্পন্দনের পেন্ডুলাম ঘড়িটায়। অন্দরমহলের শুধুই নৈঃশব্দ্যে নিয়নবাতি  অন্ধকারকে জব্দ করছে, অতন্দ্র পহরায় থাকা উদাসী মনটা, এখন ভণিতা বোঝে, নিজেকে নিজেই খোঁজে প্রবহমানতায়। নুড়ি-পাথর গুলো যেমন বুকের ভেতরে জমা হয়ে, হিমালয় গড়তে চেয়েছিল, তেমনি আজকাল অন্ধকার গুলো জমা হয়ে, ব্লাকহোল হতে চাইছে। একটা নদীও এদিক ওদিক ঘুরে নুড়ি-পাথরসহ নীরস বুকের মাঝে চিরন্তন বালুচর গড়ে তুলবে বলছে। বুঝলে ভরা শ্রাবণে, জলের চাপে ক্ষয় হতে হতে, স্রোতের দাগ শুকনো খটখটে মনটাকে,  উপত্যকায় আটকে রাখা নুড়িপাথরের-  সকল অভিলাষ..আগ্রাসী শরৎ-কে করে দিয়েছে পুরোপুরি ছারখার- কালো মেঘের ঘন প্রবাহ বিপদসীমা পেরিয়ে, ধুলিসাৎ করেছে শরতের সমস্ত অহংকার। ঋতুরাজে উপেক্ষায় অপ্রাপ্তির ভাণ্ডার - পূরণ করে নিতে, শ্রাবণ এসেছে, আরও একবার। প্রতিশোধের আঁচে--কাশের শুভ্র আঁচল। শিউলি হাসি জলকাদায় মিশেছে। সহ্যের বাঁধ যখন সীমান্ত অতিক্রম করে  কাজলদীঘির অঝোর ধারায়,  থামে না অনাহুত বৃষ্টি। মনের উচ্...

ভাঙ্গা শরীরে

ভাঙ্গা শরীরে দেবপ্রসাদ জানা রাতের পাখিরা নীড় ছাড়ছে- শরীর ভাঙছে দ্রুত,তফাৎ শুধু একটাই... পুরোপুরি রাত ভেঙে গেলে দিন আসে আলোর ফুলঝুরি জ্বলে,  শরীর ভাঙা শেষ হলে  পুরো অন্ধকার! আর সহ্য হয় না পরিশ্রম। এক স্বপ্নে দেখা রাজকন্যার খোঁজে,  বয়ঃসন্ধির প্রাক্কালে, কোনো এক বাসন্তী ভোরে- তখনো পাখিরা ঘর ছাড়েনি, পৃথিবীতে পড়েনি সূর্যের আলো, একটা জোরে...শব্দ করে মিলের সাইরেনটাও বাজেনি তখন। হ্যাঁ ঘর ছেড়েছিলাম, সময় কে পিছনে ফেলে, এগিয়ে যাবো উন্নতির শিখরে। বরফ ঢাকা হিমালয়ের কক্ষে। কিংবা কৈলাশে। কৈলাশের কোলে পৌঁছনোর আগেই শরীরটা যেন ভেঙে যাচ্ছিল। স্বপ্নে দেখা রাজকন্যার দেখা হয়নি তখনো। তোমার সঙ্গে দেখা হলো বটে, ধবধবে জামায় লাল রঙের একটা দাগ- হঠাৎ ই কালো হয়ে গেল। সেই দাগ আজও  স্বপ্নে নয়, বাস্তবে দেখতে পাই। ভাঙ্গা শরীরের ভাঙ্গা স্বপ্ন গুলো, হারাতে দেয়নি এখনো।

ত্বং স্বাহা ত্বং স্বধা ত্বং হি বষট্‌কারঃ স্বরাত্মিকা ।   সুধা ত্বমক্ষরে নিত্যে ত্রিধা মাত্রাত্মিকা স্থিতা ॥  অর্ধমাত্রা স্থিতা নিত্যা যানুচ্চার্যা বিশেষতঃ ।   ত্বমেব সা ত্বং সাবিত্রী ত্বং দেবজননী পরা ॥  ত্বয়ৈব ধার্যতে সর্বং ত্বয়ৈতৎ সৃজ্যতে জগৎ ।   ত্বয়ৈতৎ পাল্যতে দেবি ত্বমত্স্যন্তে চ সর্বদা ॥  অনুচ্চার্যা নির্গুণা বা তুরীয়া,   হে দেবি, গায়ত্রীমন্ত্ররূপা পরিণামহীনা শ্রেষ্ঠা শক্তি আদি মাতা।   হে দেবি, প্রলয়কালে আপনিই ইহা সংহার করেন। উদ্যদ্‌ভানুসহস্রকান্তিমরুণক্ষৌমাং শিরোমালিকাং  রক্তালিপ্তপয়োধরাং জপবটীং বিদ্যামভীতিং বরাম্ ।  হস্তাব্জৈর্দধতীং ত্রিনেত্রবিলসদ্বক্ত্রারবিন্দশ্রিয়ং  দেবীং ৰদ্ধহিমাংশুরত্নমুকুটাং বন্দে সুমন্দস্মিতাম্ ॥  যিনি সহস্র উদীয়মান রবিতুল্য রক্তবর্ণা, রক্তবর্ণ-কৌষেয়-বস্ত্রপরিহিতা,  নৃমুণ্ডমালিনী এবং চারি হস্তকমলে অক্ষমালা, বিদ্যা,  অভয়মুদ্রা ও বরমুদ্রাধারিণী, যাহার স্তনযুগল রক্তরঞ্জিত,  যাহার ত্রিনেত্রশোভিত মুখমণ্ডল কমলবৎ সুন্দর, যাহার মুকুটে চন্দ্র রত্নরূপে নিবদ্ধ সেই ঈষত্হ...

ভালো থাকার রসদ

ভালো থাকার রসদ দেবপ্রসাদ জানা ৮.১০.২৩ আকাশটা একটু ফর্সা হয়েছে আকাশের এককোণে স্থির হয়ে -সূর্যটা  ভালো থাকার ভাণ করে দাঁড়িয়ে আছে। তোমরা তো জানো না,  কত অগ্নিকাণ্ড চলছে ভেতরে ভেতরে। কত বিস্ফোরণ চলছে, তোমাদের অজান্তে। কিন্তু ভালো থাকার প্রশ্নটা? রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া একদল প্রাণী- সাদা পোশাকে ময়দানের দিকে। কেউ বাসস্ট্যাণ্ডে দাঁড়িয়ে, অসহায়। কারো রক্ত ঝরছে বুকে,  যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত শরীর,  কারো গলায় উঠেছে ফাঁস ..... কেউ ছুটেছে, কেউ আঁচ পোহাতে চায়,  গনগনে সূর্যের আঁচে। প্রশ্ন করো কেমন আছো বন্ধু? বলবে ভালো আছি। প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়েছে, ভেসে চলেছে আকাশে। চোখে জল, বেদনার জল, যন্ত্রণার জল। সবাই ঘাড় উঁচু করে দেখে - বলে, ভালো থেকো বন্ধু।

জীবনের আঁধার

জীবনের আঁধার  দেবপ্রসাদ জানা তখন ঢের রাত। উঠোনে জ্যোৎস্নার আলো, দু-তিনটে বেড়ালের থাবায় শান্ত জোছনা। বিড়াল গুলি সেই আলোর গোলা নিয়ে - লোফালুফি করছে। একপাল গেছো ইঁদুর ভারি ব্যস্ত,  কিচকিচ শব্দে কেবলই জানান দিচ্ছে, আমরা আছি। আসলে জোছনা নয়, চাঁদপানা নিয়নের আলো, পাশের হাই রাইজ বিল্ডিং থেকে লাফ দিয়ে, এই হাসপাতালের ভাঙ্গা জানালা গলে, শ্যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। তারপর সারারাত সারাক্ষণ চললো জীবন মরণের হুটোপাটি। প্রভাত হলো। শেষ নিশ্বাসটুকু চেটেপুটে সাফ করে সরে পড়ল যমরাজের নিয়নের আলো। ভোরের নরম আলো এসে ছুঁয়ে দিলো নির্মীয়মান বহুতলের দিকে চেয়ে থাকা যৌবনের  প্রথম আলোর রেণু, আর বসন্ত কোকিলটা ডেকে উঠলো ঠিকই, বসন্ত ডাকেনি। একবারও। ঝাঁকড়া মাথা বটঅশ্বত্থ গাছটায়,  ভারি খুশী হয়ে আত্মার পাখিটা পুকুরের জলে- নিজের মুখ দেখলো। জীবনের আঁধার ওৎ পেতে থাকে প্রতিদিন যমরাজের মৃত্যুদণ্ডের মতো।

ভালো বাসা

ভালোবাসা ছিল যত- মন জুড়ে গভীরতা শত, ছিল ব্যথা ভরা ক্ষতের পাতায় ছাওয়া ঘর। মমতা-শুশ্রুষায় জেগে ছিল রাত। বাতাসেরা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল- অন্ধকারময় কূপে। মুহূর্তেরা পালিয়ে যাচ্ছিল  সময়ের ফাঁকে ফাঁকে।  অগোচরে যন্ত্রণা গুলো জোছনার মত- শত ছিন্ন পাতায় ছাওয়া ঘরের ভিতরে উঁকি মারছিল। তখন তুমি এলে আমার জন্মদিনে। শরীর ক্ষয়িষ্ণু আবহে, রাখা বিষাক্ত কলহে।  তুমি দাঁড়িয়ে আছো দূরে  কল্পসুখে মগ্ন, অশ্রু সারে ভগ্ন।  বিরহিত ত্রস্ত, বর্ষা আভরণে ব্যস্ত।  অলস নিভৃত কোণে- হতোদ্যম প্রতিচ্ছবি দৃশ্যমান  কৌতুক সাজায়।  আমি বললাম এসেছ? কি এনেছ? বাতাস?  দিও না, আমার তাকে রাখা,  ভাঙা প্রদীপের আলো নিভে যাবে। আকাশ আনো যদি, চাঁদের সাথে- রেখে যেও বারান্দায়। গোলাপের ফুল যদি এনে থাকো কাঁটা গুলি রেখো না লুকিয়ে। আমার হৃদয় পানা বেলুন গুলি ফেটে যাবে।

চন্দ্রযান

চন্দ্রযান দেবপ্রসাদ জানা চাঁদের বুড়ির চরকা কাটা, চাঁদের তিমিরে জোছনা নিয়ে গল্পকথা, মেঘের পরত মেঘে মেশা, চাঁদের মাটি ছুঁয়ে দেখে,বলছে এসে চন্দ্রযান- স্বপ্নে দেখা পরীর ঘরে আলোছায়ায়- শব্দ হলো বিক্রম বিক্রম-  জীবন যখন বেগার খাটে প্রাণের পণে, রাজপুত্র আর রাজকন্যার গল্পে রূপার কাঠি সোনার কাঠি আজকে দেখো হলো মাটি - কেন? আঠাশ দিনে একটা পাকে অতিশয় ক্লান্ত চাঁদ, ধরার থেকে জন্ম যার তার পরিচয় করবে আজ শুধুই ভারত, আমার ভারত। মহান ভারত, বলবান। অদূরে প্রদোষের অন্তরালে। লুকিয়ে থাকা রহস্য করবে উদ্ঘাটন। স্বপ্ন যেখানে লুকিয়ে ছিল - চাঁদের গুহায় আঁধার ঘরে বহুদিন বিশ্ব জুড়ে দেখবে বসে,  গড়বে ভারত বিশ্ব রেকর্ড। দক্ষিণে বা উত্তরে যদি থাকে, প্রাণের আভাস, দেড়শো কোটি মানুষের ঘরে  

স্বাধীনতা

স্বাধীনতা  দেবপ্রসাদ জানা চকিত-স্থগিত-নেত্রে দেখি বিনা মেঘে দিবস তিমিরে- ঘন ঘন দেখা দেয় বিদ্যুৎ চমক। ক্ষণে ক্ষণে ভূমিকম্প,  যেন পৃথিবী চূর্ণ হয়ে রসাতল যাবে। হইবে শোণিত-বৃষ্টি,  কাঁদিবে জনগণ। ভাঙ্গিল বিষম ঝড়ে, পাতায় বাঁধা ঘর। “আর বিলম্ব কেন, সকলে অস্ত্র ধরো। উড়িয়ে তেরঙ্গা নীলাকাশে,  স্বাধীনতার গান গাও এবার, "বল বীর চির উন্নত মম শির" যাঁরা দিলো স্বাধীনতা, তাঁরা আজ ইতিহাসের ছেঁড়া পাতায়, তাই- ধরেছি কলম ইতিহাস হবো বলে। এ নবীন, মায়ার জালে আর নয়, ধন জন যৌবন জীবন, সকলের আশা-  চলো সবে প্রাণপণে। রাখিব জাতীয় ধর্ম, রুধির তর্পণে। কুল-ধৰ্মহীন জীবন, জীবনের সার্থকতা,  ক্ষতি কিবা তায়? কুলের কলঙ্ক যবন আলয়ে, প্রেয়সী আমার ।

দণ্ডধর

দণ্ডধর দেবপ্রসাদ পূবদিকে আরক্তিম, অরুণ প্রকাশে৷  সারা নিশা গেল তাঁর, নক্ষত্র-সভায়।  তাই বুঝি পাণ্ডুবর্ণে, সভাসদ হাসে। লজ্জাভরে দণ্ডধর, পাংশুরাগে ধায়। আজ কেন দণ্ডধর, প্রখর এমন ।  কেউ কহে বুঝিয়াছি, ওহে মান্যবর। সব মুখে কালি মাখা, উদ্যত যবন। সেই হেতু উষ্ণ-রাগে, আছে দণ্ডধর। অলক্ত আরক্ত প্রভা, এই সভামাঝে। আকাশে শোণিতছটা, শোণিত ভূতলে ।  শোণিত বাহিত নদী, রক্তিমের সাজে। শয়তানি কালমন্ত্রে, দাবানল জ্বলে। এইভাবে কত দিন, চলিবে সমর।  ওহে পাপী দণ্ডধর, নাও অবসর। ২ তারপরেও যবন, করিল বিজয়।  অভেদ্য দুর্গম দুর্গ, কে করিবে ভেদ। তাহার করিলে নিন্দা, জেলে যেতে হয়। দণ্ডধর নিন্দা শুনে, করে বক্ষোভেদ। একা তারা শিবলিঙ্গ, করিল রে চূর্ণ। গুড়া করি ছড়াইল, মসজিদ দ্বারে। অগাধ বিস্ময়ে দেখি, কোতল সম্পূর্ণ। রাক্ষসের বাচ্ছা, কিনা করিবার পারে। এখনি দুষ্টেরে লয়ে করহ বন্ধন ৷  নিশ্চয় ইহার প্রাণ লইব সত্বরে ॥  সত্য সত্য কোরাণ পরশি দিব্য করি ।  ভূমিসাৎ ক'রে যাব চিতোর নগরী ॥  হিন্দু দেব দেবী আর হিন্দু নারীগণ ।  ভ্রষ্ট করিবেক মম ক্রোধ-হুতাশন ॥”  আজ্ঞামাত্র প্রহরী পব...

কার অপেক্ষায়?

কার অপেক্ষায়? দেবপ্রসাদ জানা আজও মেটেনি উন্নয়নের স্বাদ, উন্নয়নের চাকার তলায় পিসে একদিন, বাতাস হয়ে যাওয়া অতৃপ্ত আত্মা-  তাই প্রেতাত্মার মতো - অপেক্ষায় থাকে। ছিঃ ছিঃ উন্নয়ন তুমি লোভী,  বড় হিংস্র, হৃদয় হীন। তুমি অপেক্ষায় থাকো কার? নারী শরীরের? উন্মক্ত ময়দানের, অন্ধ হয়ে যাওয়া লাইট পোষ্টের-  নিচে অন্ধকারের? বড় কৌতূহল জাগে, রাতভর নারী গ্রন্থের পাতা গুলো - ওল্টাতে ওল্টাতে সব অনুচ্ছেদের প্রতিটি লাইন, ওই অন্ধকারে খুঁটিনাটি ধাতস্ত ক'রে,  অগ্নিগ্রাসে গিলে- উন্নয়নের লৌহদন্ডটি সাজিয়ে রেখেছ।  তবুও স্বাদ মেটেনি, প্রকাশ্য দিবালোকেও  গিলতে চেয়েছ গোগ্রাসে?  ভেবে দেখ, সবইতো তোমার জন্যই, তবুও লোভের সুতোয় বেঁধে  টেনে এনেছ নির্জন অন্ধকারে। তারপর...... সুযোগ পেলেই লোলুপ দৃষ্টিতে  হিংস্র থাবায়  তীক্ষ্ণ আঁচড়ে ছিঁড়েছ অবলীলায়। ঘুমন্ত মনুষ্যত্ব, নিথর বিবেককে সভ্যতার ছাউনির ধারে - অন্তঃসার শূণ্য গণতন্ত্রের খাম্বা, দাঁড় করাচ্ছ কার অপেক্ষায়? ক্ষতবিক্ষত সমাজের রক্তে রাঙানো  অর্জিত স্বাধীনতার অপেক্ষায়? একটি যন্ত্রনা দগ্ধ হৃদয়, অর্ধনগ্ন, বেআব্রু,মেদহীন শরীর,...

কৃষ্ণ ভীষ্ম সংবাদ

কৃষ্ণ ভীষ্ম সংবাদ  পিতামহ ভীষ্ম-   এসো দেবকীনন্দন, স্বাগত জানাই  তোমাকে, অনেকক্ষণ ধরেই তোমার  কথা চিন্তা করিতেছি, দেব নারায়ণ।  হে অন্তরযামী, এই কৌমুদীরাশিতে কুসুম পল্লব লতা, নিশার তুষারে শীতল করিয়া প্রাণ, শরীর জুড়ায় এই শরসজ্জা পরে। উন্মুক্ত অম্বরে- জীবন পিঞ্জর কাঁদে, যমের তাড়নে। হেরি মরণের কালো অন্ধকার নিশি। তব ছলনার সুখে, শান্ত নিশানাথ- প্রশস্ত নদীর তট বেয়ে, অন্বেষণে আসে, এই ধর্ম স্থানে, যখন পাগল মন ত্যজে এ শ্মাশান, কহে বারবার  আমিই কলঙ্কময়, বিষতুল্য কায়া। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হে শান্তনু পুত্র ভীষ্ম আমি আপনাকে - কি জিজ্ঞাসা করিব হেথা ? সেটাই বুঝতে  পারছি না, এখন তো, এটাও জিজ্ঞেস  করতে পারবোনা যে, কেমন আছেন। এহেন তীরশজ্জা পরে, বীরাত্মা বিরাজে স্বজাতির মুখ আজ, এত  মনোহর। ধরনীতে সদানন্দে আছে একজন না থাকে সন্তাপে, থাকে সদাহাস্য ভরে। রাখিল এ ধরাতল, সদা ধন্য করে তারে আমি কি কহিব? কিবা জিজ্ঞাসিব? দিবানিশি মানবের হিত, যিনি নিত্য  মনচিত্রে দেখে, করে সুখ অনুভব, অসার দেখি যে তারে কুরুক্ষেত্র পরে, তার সাথে কোন বাক্যে গাথিব কথন। পিতামহ ভীষ্ম ...

দাতাকর্ণ

দাতা কর্ণ  দেবপ্রসাদ  মহাবীর কর্ণ 'দাতা কর্ণ' রূপেও পরিচিত। বহুরূপী ইন্দ্রকে তিনি কবচ ও কুণ্ডল দান করেছিলেন তা সবাই জানেন। তবে এটা অনেকেই জানেন না যখন কুরুক্ষেত্রে শেষ নিঃশ্বাস পড়ছে কর্ণের তখন ভগবান কৃষ্ণও ব্রাহ্মণের বেশে হাজির হন কর্ণের সামনে। তাঁর কাছে সোনা চেয়ে বসেন। তখন কর্ণের কাছে তেমন কিছু ছিল না,   কর্ণ তাঁর সোনা বাঁধানো দাঁত দিতে চান। ব্রাহ্মণ হয়ে দাঁত ভেঙে তা নিতে অস্বীকার করেন শ্রীকৃষ্ণ। তখন কর্ণ নিজে  পাথর দিয়ে দাঁত ভেঙে দেন। তাতে রক্ত লেগে থাকায় তাও নিতে অস্বীকার করেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তখন আকাশে তির মেরে বৃষ্টি নামিয়ে তাতে দাঁত ধুয়ে তা কৃষ্ণকে দান করেন কর্ণ। এরপর ভগবান নিজের বেশে হাজির হয়ে কর্ণকে বর চাইতে বলেন। জীবনের শেষ লগ্নে ভগবানের দেখা পাওয়াই সবচেয়ে বড় বর, এই জবাব দিয়েই কর্ণ মারা যান।

বিশ্বাস

বিশ্বাস   দেবপ্রসাদ দুর্যোধনের স্ত্রী ভানুমতী ও কর্ণ একদিন পাশা খেলছিলেন।  খেলায় হেরে যান ভানুমতী। সেইসময়ই দুর্যোধন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেই ভয় পেয়ে ভানুমতী পালিয়ে যেতে যান। কর্ণ তা না বুঝেই পালাতে যাওয়া ভানুমতীর হাত চেপে ধরেন। সে সময়ে পরপুরুষের সঙ্গে সময় কাটানো অলৌকিক ব্যপার ছিল। দুর্যোধন যে ঘরে এসে গিয়েছে,  তখন ভানুমতীর গলার মতির হার ছিঁড়ে ছত্রাকার হয়ে যায়। দুর্যোধন সব দেখেও না দেখার ভান করে, মতি কুড়োতে ব্যস্ত হয়ে যান। কারণ কর্ণকে তিনি অন্ধের মতো বিশ্বাস করতেন এবং জানতেন তিনি কোনও খারাপ কাজ করতে পারেন না।

স্বর্গপথে যুধিষ্ঠির

স্বর্গ পথে যুধিষ্ঠির  দেবপ্রসাদ [ হিমালয় অতিক্রম করে স্বর্গের সিংহদ্বারে এসে পৌঁছেছেন যুধিষ্ঠির। একজন দেবদুত তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন।]    যুধিষ্ঠির - স্বর্গ! শশী তনুছটা, পড়িছে উথলি দেবক্রীড়া করে দেখি, কিন্নর কিন্নরী মন্দাকিনী দেবাপ্সরা গগন প্রাঙ্গণে কিরণের রজ্জু যেন মহাতেজস্কর। অসংখ্য গন্ধর্ব গলে সঙ্গীত ঝরিছে দেব অট্টালিকা পরে ফুল পারিজাত। মধুর নিনাদে ঘোরে জ্যোতিষ্কমণ্ডলী এই কি সেই স্বর্গ, হে দেবতার দূত অবাকে নিরখি আমি যে অমরালয় উচ্ছাসে বহিল মন, শ্রবণে ভরিছে কর্ণ কুহর, মধুর অমর সঙ্গীতে। বাজিছে দুন্দুভি বাদ্য ত্রিলোক ব্যাপিয়া অপুর্ব সৌরভ বহে, এই দেবালয় সুখ নিদ্রা যায় বুঝি দেবতা সকলে?   দেবদূত- নিদ্রা যায় দেবগণ সুধার সুগন্ধে ধর্মপুত্র, ঐ অদূরে তোমার ঈপ্সিত নগরীর অতুলিত , সুধার সুগন্ধে আনন্দে শশাঙ্ক শশী অপুর্ব আকারে অমল সুন্দর দৃশ্য, বিত্ত মনোলোভে ঐন্দ্রজালিক বিশ্রুতি, বিভূতি মহিমা বিচিত্র আশ্চর্য চারু ললিত সুন্দরে। ঐ যে শুভ্র মেঘছায়া তলে পারিজাত অসংখ্য গন্ধর্ব দেব খেলিছে কাননে ঐ যে সোহাগের গান বাজিছে গগনে গিরি উপবন রহে প্রণয়ে বিধুর অমর নীরব সেই কমল কানন তার পাশে ব...