খিচুড়ি

খিচুড়ি 
দেবপ্রসাদ জানা
২৫.১০.২০২৩

চল শালা তোর সময় শেষ।
ঘুমিয়ে ছিলাম জানেন, 
রাতের খাবার খেয়ে, একটা মিষ্টিও ছিল।
বেশ আরামে পাশবালিশে পা তুলে -
হ্যাঁ বউ ও ছিল সঙ্গে, 
ও উল্টো দিকে মুখ করে গভীর ঘুমে-
আমি বললাম আরে ! 
এখন কেন?  ঘুমাচ্ছি,
তাছাড়া কোথায় যাবো?
কালো ভোঁত্কা একটা মোটা লোক
মাথায় সোনালী রঙের মুকুট পরেছে আবার,
সবাই বলে আমার নাকি মাথাটা, খুব ডাল।
আপনাদেরও কি তাই মনে হয়? 
ছোটো বয়স থেকেই শুনে আসছি 
আমার নাকি কিসসু হবে না, 
এক্কেবারে ডাল মাথা।
তবে শুনতে খারাপ লাগলেও,
আমি কষ্ট একেবারেই পাই না, 
মহাপুরুষদের জীবনী পড়ে দেখেছি ছোটো বয়সে,
তাঁদের অনেকেই আমার মতো ছিলেন, 
অনেকেই পড়াশোনা ভালোভাবে করতেন না, 
ক্লাসে গাড্ডুও মারতেন কেউ কেউ । 
আমি কিন্তু, কখনোই গাড্ডু মারিনি, 
টেনেটুনে ঠিক পাশ নম্বরটা তুলে নিতাম। 
তবুও শুনতে হ'তো "ডাল হেডেড ! "
তা সে যাই হোক, চাকরি বিয়ে বউ বাচ্চা-
ওই বিশেষ বিশেষণটা এখনো মলিন হয়নি।
আসলে কি জানেন, 
সাধারণ মানুষের পক্ষে,
মহাপুরুষদের বুঝতে পারা একেবারেই সম্ভব নয়। সাধারণের সঙ্গে ভাবনার বিশাল ফারাক!  
সাধারণ মানুষ ঘর-সংসার, 
খাওয়া-দাওয়া, সম্পত্তি, টাকা-কড়ি, ছেলে-পিলে, 
এইসব মায়াময় জগত নিয়েই, 
পৃথিবীতে কোনো দাগ না রেখেই চলে যায়।
আর মহাপুরুষ? 
জীবন তো একেবারে অন‍্যরকম, 
তাঁদের চিন্তা তো আরও উচ্চস্তরে বিচরণ করে। 
আজ সকালে আমারও ভুল হয়েছিল তাঁরই মতো। সকাল থেকে সারাক্ষণ  বৃষ্টি পড়েই চলেছে।  
তাই, স্বয়ং গৃহকর্ত্রীর ইচ্ছা হয়েছে খিচুড়ি রান্নার।
আমি তো সবসময় ভাবনায় বিভোর হয়ে থাকি। 
ব্যস পেট ভর্তি খিঁচুনি ও খিচুড়ি খেয়ে ঘুম।
তা সেই কালো মোটা লোকটা, তার হাতটাকে-
সোজা আমার নাকের ভিতরে ঢুকিয়ে দিলো।
ভেতরে প্রাণটাও বেশ চলছিল, বুঝলেন,
সেটাকে খপ্ করে ধরে -
হাতের আঙুলের ফাঁকে প্রাণটা তখনো-
বেলুনের মতো পাম্প করছিল,
বললাম এটা কি হলো?
নাকের ভেতর দিয়ে হাত কেন? মুখ রয়েছে।
তাছাড়া তুমি কে হে চাঁদু ফস্ করে সোজা.
আমার নাকের ভেতরে হাত গলাও?
এখনো বুঝলি না শালা আমি যম দূত।
তোর প্রাণটা নিয়ে পালাব।
বহুদিন ধরে চেষ্টা করছি, 
কিছুতেই হাতে পাচ্ছিলাম না।
আজ খিচুড়ি খেয়েছিস্-আজ পেয়েছি, 
প্রতিবারেই কিছু না কিছু কাজে
আমাকে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে।
আর দেরি করা যাচ্ছে না।
খিচুড়ি তো আগেও খেয়েছি-
সেই বেলুড় মঠে?
আরে সেতো সাধু সন্তদের করা,
তখন নিলে তাদের বদনাম হতো না?
কেন? সেদিন বাড়িতে উপাসনার দিন?
সেদিনও তো খেয়েছিলাম কই তখনতো-
সে তো ঠাকুরের ভোগ।
আরো দু তিনবার তোকে নিয়ে যাবো বলে,
অমনি তোর বউ এসে পড়লো,
সতী সাদ্ধী স্ত্রী তার ছোঁয়ায় তুই বেঁচে গেলি।
এবার আর ছাড়বো না, 
তোর বউও তোর দিকে পেছন ফিরে শুয়ে।
চল আজ আর রেহাই নেই।
আমি হাতটা আমার বউয়ের দিকে নিয়ে গেলাম
কিছুতেই ধরতে পারলাম না।
দূরে ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছি।
সারা গায়ে কাঁটার আঁচড় লাগছে।
জ্বালা করছে। রক্ত বেরচ্ছে।
বললাম - এটা কি হচ্ছে?
আর কোনো রাস্তা নেই? কাঁটার ওপর থেকে?
কষ্ট হচ্ছে তো, ভালো রাস্তা রয়েছে কত।
ও রাস্তা তোর জন্য নয়। এটা শাস্তি।
খিচুড়ি খেয়েছি বলে?
আরে দূর ওটাতো তোর মরণ খাবার।
বাকি পাপ গুলোর শাস্তি পেতে হবে না?
বারে ! কি পাপ করলাম আমি?
বাপ মাকে দেখেছি, ছেলে মেয়ে মানুষ করেছি।
সংসার ধর্ম করেছি।
কেন বাকি গুলো বল, বাড়িতে বউ থাকতে-
অন্যের বউদির দেখে লোভ হয়নি তোর?
লোভ হয়েছে, ধরিনিতো কাউকে,
এতো প্রলোভন ছিল, চোখতো যাবেই,
তাছাড়া যে সব পোষাক আষাক জানেনিতো।
খুলে বলা যাবে না, 
আর সেতো চোখ দেখেছে, আমি না।
অন্ধ হলেতো বেঁচে থাকবো।
শুধু কি এই? আরো কতকি।
এ সব বিচার যমরাজ করবেন।
তা কতদিন লাগবে আবার আসতে?
সে বলতে পারবো না, অনেক কেশ।
আচ্ছা আর কাউকে তো দেখলাম না
অনেকেই তো এই বৃষ্টিতে খিচুড়ি খেয়েছে।
তাদের না ধরে আমিই কেন?
শালা বহুত কথা বলছিস চুপ কর।
একটা থাপ্পড়ে ঘুমটা ভেঙে গেল।
বউ চেল্লাচ্ছে, অনেক বেলা হলো এবার ওঠো।
আমি অবাক। ভাবলাম -
এই বউয়ের জন্য আজও বেঁচে গেলাম।



Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ