একটা চিঠি

একটা চিঠি 
দেবপ্রসাদ জানা
২৩.১০.২০২৩

সাদা পাতার কি কপাল।
এখন আর কেউ চিঠি লেখে না তাতে।
মেঘের ভাঁজে পুরে, সাদা মেঘের গায়ে-
মেঘের হাতেও কেউ চিঠি দেয় না আদরে।
পায়রার কথাতো বাদই দিলাম।
সে রাজা রাজরাদের ব্যাপার।
একটা ভালোবাসার চিঠি এখন,
হাজার মাইল দূরে এক মুহূর্তে চলে যাচ্ছে।
ভালো খারাপ দেয়ানেয়ার সব কথা
তোমাদের ওই ছোট্ট মেশিনটায় ভরে।
আমি একদিন কি ভেবে আমার গল্পগুলোকে
পাঠিয়ে দিয়েছিলাম তার কাছে। 
গল্পগুলো ঠিক গল্প নয়, জানো তো... 
নিতান্তই দৈনন্দিন টুকিটাকি। 
এই তো সেদিন, 
আলগোছে পাতা উল্টিয়ে দেখি,
এক কোণে লিখে রেখেছি,
সেদিনকার বাজার দর। 
কুচো চিংড়ি তিনশো গ্রাম ১০০ টাকা! 
কুচো চিংড়ির দাম জেনে, 
কি করবে সে?
এটা কিছুতেই মাথায় আসে নি! 
কি জানি কি সব আবোল তাবোল লিখি!
তবু লিখেছিলাম পাতা ভরে, সাদা পাতায়।
আসলে সাদা পাতার দুঃখটা বোঝেনি কেউ।
আমি বুঝেছিলাম বটে।
তবে চিঠিগুলো কাকে লেখা?
এই যেমন ধরো বিকেল বেলায়, 
অলস বিছানায় গা এলিয়ে, 
বসে থাকতে থাকতে,
লিখে ফেলেছি দু'কলম।
মাঝে মাঝে গভীর রাত্তিরে ঘুম ভেঙে,
চোখ কচলাতে কচলাতে লিখেছি, 
"আজকের চাঁদটার মারমুখো ধরণ" 
"অথবা জোছনার আলিঙ্গনে ভালোবাসার কথা।"
তারপর ওই যে ঐ দিন,
যেদিন সবাই জোট বেঁধে কোথায় গেলো! 
সেদিন লিখেছিলাম নিষিদ্ধ চিঠি। 
দুয়ার বন্ধ রেখে লুকোচুরি খেলার গল্প,
চিঠির পেছনে একটা হামির চিহ্ন-
ছেপে দিয়েছিলাম বটে। 
উল্টেপাল্টে চিঠি পড়ার অভ্যেস যাদের-
তারাতো দেখতে পাবেই।
মাঝে মাঝে নিজেই বুঝে উঠতে পারি না, 
হতচ্ছাড়া কথাগুলো কেন লিখেছিলাম, 
শব্দ গুলো এলো কোত্থেকে?
কি ভেবে এতো মান-অভিমান, 
এতো উচ্ছ্বাস... 
মাঝে মাঝে ঝগড়া! 
সবটাই একপক্ষীয়, ছেলে মানুষী আর কি,
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে- 
নাটকের পার্ট মুখস্থ করার মতো। 
কেউ দেখছে না, জানছে না... 
পুরোটাই ন্যাকামো। 
অথচ লেখার সময়ে এসব কিন্তু -
একদম মাথায় আসে না! 
বরং মনে হয়, 
এই কথাগুলো তাকে না বললে চলবে? 
আমি বাঁচবো, লুকিয়ে থেকে।
সেই চিঠিগুলো একদিন আমি য়্যাত্ত বড়ো, 
এক খাকি রঙের খামে পুরে, 
পুরানো খবরের কাগজের ভেতরে পুরে-
সে গুলো বিক্রি করে দিলাম।
বিক্রির পর মন খচখচ করতে লাগল। 
এই চিঠি সে যদি না পায়।
যে পাবে, এইসব লেখালেখি, 
সে যদি না বোঝে? 
যদি বোকা বোকা ভাবে? 
এলোমেলোই তো সব। 
কোন পুকুরে গা ডোবানো হলো, 
কবে কখন মেঘ হয়েছিলো, 
মায়ের ঘুমের সুযোগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ভেঙে, 
টাকা চুরি করে একটা প্রেম কিনেছিলাম, 
আরে একটা লাভ বার্ড। ভালোবাসার পাখি।
দিতে পারিনি, তারাও বেশিদিন বাঁচেনি।
এইসব কি বলার মতো? এলোমেলো নয়? 
তবু সাহস করে লিখেছিলাম। 
কি আর হবে? 
বড়োজোর ধুত্তোরি ফালতু... 
বলে ছুড়ে ফেলে দেবে! 
তাতেই বা আমার কি? 
আমি তো সেটা দেখছি না! তবে হ্যাঁ। 
দেখলে খানিকটা কষ্ট পেতাম বটে! 
কত কত কালি ফুরিয়ে, 
মন কুড়িয়ে খুঁজে আনা শব্দ! 
একটুও কি লাগতো না? 
তাই পুরানো খবরের কাগজই সই। 
পাঠিয়ে দিলাম। মানে বিক্রি করে দিলাম।
কেউ না কেউতো পাবে, পড়বে?
সাদা কাগজো খুশী আমিও খুশী।
সে পৌঁছে যাবে ঠিক জায়গা মতো।

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ