প্রতিবন্ধ
প্রতিবন্ধ
দেবপ্রসাদ জানা
মাতাল এক তরণী হিমযুগ পার
হয়ে,চলেছে দিগন্তে ভেসে,টলমল
যে তরী ঘুরে এসেছে,সমস্ত শহর।
পাথরের মতো গোটা শহরের মাঝে
যেন অভিশাপ বসে হাসছে,নির্বাক
ক্রুরতমা উল্লাসের হাসি,তিলোত্তমা।
আগুনে জ্বলছে পেট, উনুনে উড়ছে,
ছাই,শূন্য হাঁড়ি শূন্য-ভিক্ষের ঝুলিও।
তোমরা যারা বড়াই করো ফেসবুকে-
ছবি তুলে পোষ্ট করো,হাসি হাসি মুখে,
দেখে এসো,মোটা চাল,কতদিন চলে?
পথগুলো শূন্যতায় কাঁপে,জিভ চুষে -
তৃষ্ণা মেটাচ্ছে মানুষ,তবু দরজার -
পাল্লা ভেঙে,কেউ গলা তুলে রাজপথে
এসে বলতে পারে নি,অন্ন দাও অর্থ
দাও দেবী,তার চেয়ে শান্তি দাও মনে।
হনুমানের মতন,বুক চিরে কেন?
দেখাতে পারছে না যে,বুকের ভিতরে,
কোন দেবী দেবতারা,বসবাস করে।
টাকা,দুই টাকা করে জমানো ভাণ্ডার-
খানা ভেঙ্গে চুরচুর হয়ে গেছে কবে,
সামান্য পয়সা নাড়া দিলে কি পড়বে?
গৃহলক্ষী অন্নপূর্ণা, আমায় একটা
দুধের প্যাকেট দাও,ক্ষুধায় তৃষ্ণায়
আর বিশ্বের ছড়ানো ভাইরাস টায়-
একেবারে কর্দমাক্ত হয়ে আছি দেখো।
আপাতত জিভটার আত্মাটাকে ভরি,
একটু শানিয়ে নেই, লক্ষ্মীর পাঁচালি,
"শোনো শোনো সর্বজনে শোনো দিয়া মন।
অপূর্ব কাহিনী এক করিব বর্ণন।
সকাল বিকেল পথে,দ্বার খুলে রাখো
ধনরত্নে ধনলক্ষ্মী, দ্বারে বসে দেখো।।"
এই পৃথিবীতে আর কারোর কিছুই -
দেবার নেই,যাদের রয়েছে ভাড়ারে -
সোনার কাঠি রুপোর কাঠি,রাজকন্যা,
রূপকথার বইটি, এখনো প্রকাশ-
পায় কলেজস্ট্রীটের উন্মুক্ত বাজারে।
মন্ত্রতন্ত্রের প্রভাবে মানুষ হয় নি
মানুষ। রাক্ষস রয়ে গেছে সমাজের
প্রতিটি কক্ষে,সেখানে মানুষের গন্ধ
পেলে,হাঁউমাউ খাঁউ করে ছুটে আসে।
ওরাতো মারা যায়নি,এক ফোটা রক্ত
সেদিন ছুঁয়েছে মাটি,আর তাতে জন্ম-
দিয়েছে আরো রাক্ষস,রূপকথা গল্পে।
আরব্য কাহিনী এক জাল পেতে আছে
গোটা শহরের এক কোনায়,সেখানে-
যেদিনই প্রতিবাদ নামক শব্দটা-
দানা বাঁধে,সেটাকেও যে ওরা গোপনে
বন্ধক রেখে দিয়েছে,দালালের ঘরে।
ডাল ভাত ছেড়ে সেই,চিকেন চিবোবে,
আর হাড়ের পাহাড় হবে,ফুটপাতে।
জীবন্ত হাড়ের স্তূপ। জলে ভিজে রোদ্রে
পুড়ে,ধীরে ধীরে মৃত্যু ডেকে নেবে পথে।
মরতে চায়নি তারা,চেয়েছিল ভাত,
এই বিষাক্ত পৃথিবী, দেয়নি তাও।
ক্ষিদের আগুন জ্বেলে,জ্বেলো বহ্নিশিখা।
বিদ্রোহের অগ্নিকণা হাতে করে নিয়ে-
বলো অন্ন চাই প্রাণ চাই,ভাত চাই পেটে।
আর শরীর পুড়িয়ে দিয়ে চাই ছাই।
মানুষ,উচ্ছিষ্ট, কিনা পবিত্র,বুঝিনি
পবিত্র ভালোবাসায়,কঠিন মনটা
ভরিয়ে দিতেই হবে,আগামী প্রজন্ম।
হাতে আর সময়ের ঘড়ি নেই জানো?
পৃথিবীর ঘূর্ণাবর্তে বন্দী হয়ে গেছি,
একদিকে অন্ধকার,অন্যদিকে আলো,
অন্ধকারেই সর্বদা,ছুটতে ছুটতে -
সে আলো ধরতে গিয়ে ফের অন্ধকারে,
এসে পড়ে যাচ্ছি রোজ,বুঝিনি এখনো,
সময়ের কারাগারে বন্দী অন্ধকার।
Comments
Post a Comment