সীতার অগ্নিপরীক্ষা

 সীতার অগ্নিপরীক্ষা 

দেবপ্রসাদ জানা



শ্রীলঙ্কায় যুদ্ধ শেষে এল সেইক্ষন

উদ্ধার করিতে হবে মাতাসীতারানী

হনুমান বিভীষনে করিল আবেদন

সীতামাতা কোনখানে কহ ধর্মজ্ঞানী।


রাজপদে অভিসিক্ত বন্ধু বিভীষণ।

শ্রীরামের আপ্যয়ন করে যথা বিধি।

সীতামাতা অপেক্ষায় মনে আলোড়ন।

তুচ্ছ লাগে আপ্যয়ন জ্বালা দেয় গদি।


রামের হৃদয় কাঁদে,সীতা দেখিবারে,

উন্মুখ উদ্বেগে পূর্ণ,মন কথা কয়।

সোনার হরিন লাগি,হারায় সীতারে,

প্রতীক্ষায় রত তার,ব্যাকুল হৃদয়।


আলুথালু বেশে সীতা অশোক বাগানে।

স্বামীর আশ্রয়ে যাবে,ব্যাকুল ক্রন্দনে।



বিভীষণ সবিনয়,করে নিবেদন

এমন বেসে,কেমনে?প্রভুর সম্মুখে।

জীর্ণশীর্ণ বেশ দেখি,অযোধ্যা নন্দন।

দুখের অন্ত রবে না,প্রভুর তরফে।


অবশেষে রাজবেশে এলো সীতা,হাসি।

বিভীষণ শিবিকার,আগে আগে চলে।

আগমনবার্তা দেয়, যত দাসদাসী।

সপার্ষদ রাম বসে,আঁখি নাহি টলে।


ওহে বন্ধু বিভীষন, শুনো মোর বানী

অধিক নিকট মোর,পানে নাহি আসো।

রূপে গুণে সরস্বতী,জনক নন্দিনী।

এত কেন ত্বরা করি,সুখস্রোতে ভাসো।


রাজকন্যা রাজরানী,জানকী বিস্ময়ে।

অবাক নয়নে চায়, সীতা ভয়ে ভয়ে।



গাম্ভীর্যময় প্রকৃতি করিছে বিরাজ।

সকলের দৃষ্টি এবে সীতায় নিবদ্ধ।

রামসীতার মিলন, দেখবে সমাজ।

সমস্ত পৃথিবী যেন,জেগে ওঠে সদ্য।


আবেগসর্বস্ব মন, বাসনার দাস।

উপলব্ধি করিলেন,সহজ নয় তা।

রাবনের গৃহে সীতা,ছিল এতমাস।

দেবী হলো গৃহবধু,সাধারণ সীতা।


স্তব্ধ হয় পশুপাখি, নির্বাক মানুষ।

রামের পলকে লাগে,সন্দেহের ঘুন।

এতদিন এতরাত,অজ্ঞান বেহুস।

এযে দেখি জানকীর,রূপের আগুন।


কষ্ট নাই মনে তার,স্বামীর বিরহে।

রাম বিনা সীতাদেবী,আনন্দ আবহে।



নিকটে আইল সীতা,রামের সম্মুখ।

কহে রাম,রাবনের,করেছি বিনাশ।

শ্রীলঙ্কায় ঘরে ঘরে,বিরাজিছে সুখ।

যেথায় থাকিতে চাহ,করিও প্রকাশ।


অযোধ্যার মান আমি করেছি উদ্ধার।

মর্যাদার সঙ্গে, ফিরে যাবো মোর দেশে।

কলঙ্কের দাগ নিয়ে,ফিরব না আর।

রাবনের দেশে থাকো,রাজরানী বেশে।


পতিনিষ্ঠ সীতা কহে,একি মতি নাথ।

কোন পাপে শাস্তি দাও সীতা অবলারে।

এতদূর পাড়ি দিয়ে, এমন আঘাত।

আর কেন কষ্ট দাও,সীতা বেচারিরে।


শুনেছি দেখেছি সব,বুঝেছি সকল।

চাকচিক্য স্বর্ণপুরে,হত মনোবল।



রামের বচনে সীতা,কষ্ট পায় মনে

যার লাগি এতদিন,কঠোর তপস্যা

রাবনের ছল হেথা,সকলে তা জানে

প্রাণনাথ শ্রীরামের,এই রূপ ভাষা?


সন্দেহের বশে নাথ,করো অবিচার।

একবার চেয়ে দেখো,মুখ পানে মোর।

অগ্নিসম পবিত্রতা দেখিবে আবার।

কেন মোর স্বচ্ছতায়, কালের নজর।


যুগে যুগে নারীদের,স্বচ্ছতায় কালি।

জনক রাজার মেয়ে,এত তুচ্ছ নয়।

রাবনের ক্ষমতায়,যত চোরা বালি।

একে একে চূর্ণ করি,করেছি যে জয়।


মনস্থির করো যদি,একবার শোনো

জানকীর প্রাণনাথ,বুকে বান হানো।



নীরবে সহিল রাম, সীতার অনল।

উচ্চবাচ্চ্যে বলিল না,একবার তারে।

হৃদয় কুটিরে বাজে, ধামসা মাদল।

উথাল পাথাল করে,হৃদয় পিঞ্জরে।


বেদনার অগ্নিকুণ্ড করে অবগতি।

সীতার বিহনে আঁখি করে ছলছল।

কহে রাম শোনো সীতা হও যদি সতী।

অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশিতে কেন টলমল।


রাম রাজ্যে বামসাধে অসাধু প্রজারা

কতখানি সতী সীতা,প্রমান সাপেক্ষ।

একনিষ্ঠ দেবী সীতা,শুনে দিশাহারা।

ক্রন্দনে ক্রন্দনে সীতা,চাপড়ায় বক্ষ।


হায় রাম রঘুপতি চিনিলে না মোরে।

হৃদয় কুটিরে রাম বুক আছে ভোরে।।



আদেশ করিল সীতা লক্ষণের প্রতি

অগ্নিকুণ্ডে প্রাণ দিব,করহ প্রস্তুত।

চিতা সাজাও এক্ষনে নাই কোনো গতি

জ্বলন্ত কাষ্ঠের সনে,আমিও প্রস্তুত।


বন থেকে কাঠ এলো,শুষ্ক ভেজা সব

একের ওপর এক চেপে, সাজে চিতা

আগুনের ঝলকানি দেখে কলরব।

কেমনে পশিবে সেথা,মা জননী সীতা।


ভয়হীন সীতামাতা অনায়াসে ঢোকে

সীতার সাহস দেখে,অনুজ লক্ষণ।

দেখিতেছে দেবদেবী,দেখিতেছে লোকে।

কলঙ্কহীনা সীতার দৈবিক বন্ধন।


অগ্নিদেব কোলেকরে,আনিল জানকী

আগুনের আঁচ তার,ক্ষতি করিল কি?



করজোড়ে অগ্নিদেব রামেরে কহিল।

প্রভু আপনি চেনেন না,শ্রীলক্ষ্মীমাতা

অসতী করিবে কে?কে এমন বলিল?

যুগে যুগে অবহেলা, করেন অযথা।


হাসি মুখে রামসীতা অযোধ্যা চলিল।

লক্ষ্মণ চলিল সাথে,পথ দেখে দেখে।

বহুপথ যেতে হবে, লক্ষ্মণ কহিল।

হনুমান পিছু পিছু পাহারায় থাকে।


বিভীষণ কহে বন্ধু,রথ আছে রাখা

ভগবানের সারথী,হই কিছুক্ষন।

জীবন সফল হবে,আরো হলে দেখা।

নবরাজা নবদেশ করিব দর্শন।


রামায়ন কথা সদা অমৃত সমান।

প্রসাদ কবি কহিল,শোনো পূন্যবান।






Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ