আমি তো সেই


আমিই তো সেই
দেবপ্রসাদ জানা

জীবকণ্ঠে, আমি কণ্ঠস্বর, নয়া নতুন শব্দ।
ষোড়শী কন্যার অধর আমি, আবৃত্তির পদ্য।
আমি বাক্য, শব্দ আমি, আমিই তো ছন্দ-
কখনো খুব ভালো, কখনো সখনো মন্দ।
আমিই যে সকল ভাষায় সাহিত্য বিজ্ঞান।
আমি তো তরল, মহা সিন্ধু, আমিই প্রাণ।
বৃক্ষতলে ছায়া আমি, শশীর জোছনা।
কৌমূদীমধুর হাসি, কামুক বাসনা।
শরতের চাঁদ আমি, নদীকুলে বাঁধ।
শীতের আগুন আমি-পীরিতির ফাঁদ।
সিংহের গর্জন আমি, ভীষণ হুঙ্কার।
বিষাদ বাসনা আমি, নানান প্রকার।
কুরুক্ষেত্রে আমি, অর্জুন, কখনো কর্ণ।
গদাধারী ভীম, চক্রবূহে অভিমন্যু চূর্ণ।
ঝর্ণা কলমে আমি লিখে যাই নানা বর্ণ।
ঋষি কণ্ঠে ওঙ্কার আমি, রঙহীন বিবর্ণ।
মাদলের তাল আমি, আমিই তো ঝঙ্কার, 
আমিই রাগিণী ছয়, ছন্দ ছন্দের ডঙ্কার।
কামিনীর রাগ আমি, আমিই সোহাগ, 
অমৃতের ভাণ্ডখানি আমিই করি ভাগ।
ভ্রমরের গুঞ্জন আমি, কোকিলের কুহু।
গ্রহণের কালে আমি, হয়ে যাই রাহু।
যুগান্ত বসন্ত পলাশ, রক্ত মাখা ফুল।
আমিই তো কুমারের হাতে মাটির পুতুল।
আমিইতো রজনী ডাকি মিলন প্রণয়ে।
আমিই কষ্ট, আমিই কান্না, দুখির হৃদয়ে।
আমিই যে প্রথম প্রেমে বিচ্ছেদযন্ত্রণা।
আমি যে গভীর মনের উদ্বেগ বাসনা।
প্রখর উত্তাপে আমি, ঘুরি ঘর ঘর।
আমিই যে বনস্থলী, বিশ্ব-মনোহর।
সবুজ আমি, বন জুড়ে, মায়াজালে ঘেরা-
মেঘলা আকাশ জুড়ে, বজ্রপাতে ভরা।
বাসুকী নাগ আমি, পৃথিবী ধরেছি শিরে।
বীরদর্প চুর্ণ করি আজ, আপনার তীরে।
ক্ষুধা তৃষ্ণা তন্দ্রা নিদ্রা না লই শরীরে।
দেখি পরমানুরাশি, অণু হয় ধীরে ধীরে।
অনন্ত বসন্ত যদি, অনন্ত যৌবন।
মৃত্যু কেন আসে দ্বারে বরিতে মরণ।
মহাগদাপ্রভা যম, পরলোকপতি।
রয়েছি দাঁড়ায়ে হেথা, এই শেষ গতি।
এইতো সেই আমি মহাবলবান।
চকিতে যাইবে এই একমুঠো প্রাণ।
জীবনের চেয়ে বলো কে বড় দামি।
যম আমি, মৃত্যু আমি, মৃতও আমি।

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ