সমসাময়িক
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর সমসাময়িক লেখকদের সম্পর্ক ছিল বেশ জটিল, অনেকটাই শ্রদ্ধা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও মতপার্থক্যের মিশেল। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
১. সারদানন্দ (স্বামী বিবেকানন্দের সহচর)
রবীন্দ্রনাথ স্বামী বিবেকানন্দের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। যদিও তাঁদের সরাসরি সাক্ষাৎ কম, তবুও দুজনেই একে অপরের চিন্তাধারাকে গুরুত্ব দিতেন। সারদানন্দও রবীন্দ্রনাথের লেখাকে মূল্য দিতেন।
২. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
রবীন্দ্রনাথ বঙ্কিমচন্দ্রকে তাঁর সাহিত্যজীবনের গুরু হিসেবে দেখতেন। তবে দুজনের সাহিত্যরীতি আলাদা ছিল—বঙ্কিমের গদ্য গম্ভীর ও কাঠামোগত, রবীন্দ্রনাথের ছিল অধিক কাব্যিক ও আত্মিক।
৩. সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
তাঁর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সুসম্পর্ক ছিল, যদিও কবিতার ধরণ ছিল ভিন্ন। সত্যেন্দ্রনাথ ছন্দ ও শব্দচয়নে পারদর্শী, রবীন্দ্রনাথের কাব্য ছিল ভাবপ্রবণ। তবুও রবীন্দ্রনাথ তাঁকে "ছন্দের জাদুকর" বলে সম্বোধন করেছিলেন।
৪. কাজী নজরুল ইসলাম
রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে খুব শ্রদ্ধা করতেন। নজরুল যখন "বিদ্রোহী" কবিতার মাধ্যমে বিখ্যাত হন, তখন রবীন্দ্রনাথ তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলেন, "বিদ্রোহী কবিতার মতো কবিতা আমি লিখিনি, তবে লেখা উচিত ছিল।" তবে একসময় কিছু অনুরাগী রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখার চেষ্টা করেন, যা বাস্তব ভিত্তিহীন।
৫. প্রমথ চৌধুরী
প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গভীর বন্ধুত্ব ও সাহিত্যিক বোঝাপড়া ছিল। "সবুজ পত্র" পত্রিকার মাধ্যমে প্রমথ চৌধুরী যে গদ্যধারা চালু করেন, তা রবীন্দ্রনাথকেও প্রভাবিত করেছিল।
৬. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
তাঁদের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ ছিল না, এবং সাহিত্যের ধরণেও বড় পার্থক্য ছিল। শরৎচন্দ্রের উপন্যাস ছিল বাস্তববাদী ও সমাজকেন্দ্রিক, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ছিল অধিক আদর্শমুখী ও দার্শনিক।
Comments
Post a Comment