Posts

Showing posts from April, 2020

চোখের তারা জাগে অহংকারে

।।চোখের তারা জাগে অহংকারে।।              দেবপ্রসাদ জানা                ২৯,৪,২০২০ দুচোখের পাতা এক করতে দিচ্ছে না চোখের তারা। কেন জানো? শুধু তোমাকে দেখবে বলে। এমন করে কত নিদ্রাহীন রাত্রি, খুঁজে বেড়ায় তোমাকে। আকাশের তারার মত জ্বলজ্বল করে সে। স্মৃতি গুলো সব জেগে ওঠে মোবাইলের পর্দায়। ওগুলো এখন, মাথা বহন করতে চায় না। শুধু শুধু মাথার মেমোরি ফুল করে লাভ কি? তাই মোবাইল বন্দী করে রাখা স্মৃতি গুলো চোখের সামনে এনে স্মৃতিচারণ। নেশায় ডুবেছে শরীর , অপেক্ষায় দিনের পরেও রাত জাগছে অক্ষিগোলক। শুধু দেখার জন্য। শুধু অপেক্ষা । সেদিন কল্পনাতেও আসেনি । এমনভাবে আসবে তুমি, হৃদয় ছূঁয়ে দিতে। কত জন্ম উন্মুখ, তোমার অত্যাশ্চর্য অনন্যতায়। যেন এক পশলা বৃষ্টি।  শিহরন জেগেছিল ক্ষণিকের। বোঝাতে পারিনি আমি। সেই মূহুর্ত গুলো কি অনুভুতি হারিয়ে গিয়েছিলাম অজানা স্বপ্নের দেশে। হৃদস্পদনে স্তব্ধ সংলাপে ,শুধু অস্থিরতা ! আড়চোখ তোমায় দেখেছে । আপাদমস্তক শুধু ভালোবাসি মোড়া। যেন স্নিগ্ধ জোছনা। উত্তেজনায় কীটদ্রষ্ট ফুল বৃন্তচ্যুত ...

সন্তান

।। সন্তান।। দেবপ্রসাদ জানা সব কবিতাই ভালো। সব কবিতাই কবির মানস পুত্র। সে খোঁড়া হোক অন্ধ হোক হাজার গুনে কালো হোক। তা কবির আদরের দুলাল। মা যেমন সন্তানের জন্ম দেয়। আদর কোরে সন্তান কে সাজায়। কাজল পরায় গহনা পরায়। নতুন জামা পরায়। তার সবটুকু নির্যাস দিয়ে অমরত্ব দেয়। বর্ণময়তায় দৃশ্যমান করে তোলে গোপনে ভুল অন্যায় ক্ষমা করে। বুকের শেষ দুগ্ধ টুকু পান করায়। তেমন কবি তার কবিতাকে ঋদ্ধ করে। সংযত করে। আমৃত্য করে তার অমরত্বের সংগ্রাম।।

আমি ভালো আছি মা অনুগল্প

।।আমি ভালো আছি মা।।      দেবপ্রসাদ জানা ডাক্তারী পাশের পরে যুথিকার বিয়ের তিনমাস ও কাটে নি হাসপাতাল থেকে ডাক পড়ল। অনিচ্ছা সত্বেও যুথিকা স্বামী শশুর বাড়ি ছেড়ে হাসপাতালে চলে গেল। কিন্তু তার মন পড়ে রইল ঘরে। মহামারীর অক্লান্ত পরিশ্রম ভুলিয়ে দিল স্বামী শশুরবাড়ি। দিনের শেষে মোবাইলে শুধু একটা এস এম এস - "আমি ভালো আছি মা " কীটসহীন,সানিটাইজারহীন হাসপাতাল তাকে তার অক্লান্ত পরিশ্রমের উপহার দিল। সংক্রমন। দুমাসের সন্তান সম্ভবা উদিয়মান ডাক্তার, তাতেও ডরায় নি যুথিকা। কিন্তু সন্তান সেতো নিঃষ্পাপ, তার হৃদয়ের টুকরো। তারই বা কি হবে? একদিন সে বিছানা নিল। হাসপাতালের একেবারে ফাঁকা ঘরে সরঞ্জামহীন আই সি ইউ। ধীরে ধীরে সময় তার চলে আসছে যাওয়ার। কিন্তু নমাস তাকে তার শরীরটা জাগিয়ে রাখতে হবে। তার সন্তানের জন্য। তার প্রথম সন্তানের আসার অপেক্ষায়। সুস্থ অসুস্থ এই করে নটা মাস, তার এই একাকিত্বের একমাত্র সঙ্গী তার পেটের সন্তান। তার ভেতরে বাড়ছে একটু একটু করে একটা জীবন রোজ। মোবাইলে একটা এস এম এস "আমি ভালো আছি মা "  এত  বেদনাতেও একাকিত্বের ভয়ঙ্করতা তাকে চেপে ধরেনি। অনায়াসে  কেটে গেল নটা ম...

লুকিয়ে আকাশ

লুকিয়ে আকাশ দেবপ্রসাদ জানা লুকিয়ে পড়েছ আকাশ মেঘের আড়াল দিয়ে। লুকিয়ে আছি আমিও পর্দার আড়াল দিয়ে। একটু পরে উঠবে ঝড় মেঘ যাবে সরে। কেঁদেকেটে আকুল হবে নয়নে জল ভরে।।

রানার ছুটেছে

।।রানার ছুটেছে।। দেবপ্রসাদ জানা ২৪,৪,২০২০ দেখেছ রানার, তোমার কথা আজ সবাই ভুলেই গেছে। আমি ভুলিনি। আমি যে আজো দেখি তোমাকে। তুমি যে আজও ছুটে চলেছো - পিঠের বোঝাটা নিয়ে দূর দূরান্তে, দিক থেকে দিগন্তে। কত দুঃখ,কত কষ্টের বার্তা মনোবন্দী করে। কত সুখ, কত আশা সঙ্গে করে ছুটে চলেছ আজো। অথচ ওরা তোমাকে মনে রাখেনি। তোমার হাতের বর্শাটা আজো যে তোমার হাতেই আছে। কেউ মনে রাখেনি। কেউ দেখেনি। বনে জঙ্গলে, ভালো পথ,খারাপ পথ, কোনো বাধাই সেদিন মাননি। সব ভেঙে চুরমার করে, মাড়িয়ে চলে গেছ ঐ খবরের বোঝাটা নিয়ে। ঝড় বৃষ্টি বজ্রপাতে ও আটকাতে পারে নি তোমাকে। তোমার ঘরে আজো অভাবের ছবিটা দেখি। আছো। আজো আছো তুমি। সময়ের সঙ্গে সুধু তোমার রূপটা পরিবর্তন হয়েছে। যুগে যুগে বদলে নিয়েছ কাজে প্রকৃতি। তুমি তার হয়ে গেছো টেলিফোনের। দূর দূরান্তে পাড়ি দিয়েছ তাতে ভর করে। সুখ দুঃখ আশা ভরসা আলো অন্ধকার সব বয়ে নিয়ে গেছ তাতে। কখনো সুখের সন্দেশ। কখনো দুখের রেশ। তখন ডাকাত ছিল। এখন চোর। তার চোর। কেটে নিয়েছে কতবার। তবুতো ক্ষান্ত দেওনি কাজে। বাবার অসুখে ছুটে যাওনি সব ফেলে। এখন বায়ু। বাতাসের কাঁধে ভর করে আজো ছুটে চলেছ...

সিঁড়ি

।। সিঁড়ি।। দেবপ্রসাদ জানা ২৩,৪,২০২০ নিজের লেখা গুলো নিয়ে একটু একটু করে উপরে উঠতে চাই বুঝলেন। কিন্তু কি করি? সেই  সিঁড়িটাই নেই কাছে। মানে আমার ওঠার সিঁড়িটাই নেই। কিছুদিন আগে একটা বাঁশের তৈরী সিঁড়ি পেয়েছিলাম। সেটা এনেও ছিলাম। একটু পুরানো, ভারি লোক উঠলে ভেঙ্গে যাবে হয়তো। কিন্তু আমি ! না না আমি একদম রোগা পাতলা। অনায়াসে উঠতে পারব ওপরে। আস্তে আস্তে ধরে ধরে উপরে। তো ঘরের বাইরে সেটা রেখে ভাবলাম কাল থেকে শুরু করব। ওপরে ওঠার রাস্তা ধরবো। হাতে অনেক লেখা। কবিতা গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ যা ছিল রাখা। কিন্তু হায়। সকালে উঠে দেখি বউ ওটাকে ভেঙ্গে কেমন একটা আদুরে ঢঙে "বাবা সংসারের জন্য এত ভাবো জানতাম নাতো" আমার ওপরে ওঠার সিঁড়ি হাঁড়ির নিচে জ্বলে। আর একদিন  ইলেকট্রিক সাপ্লাই এর বহুদিনের জং ধরা লোহার সিঁড়ি আনলাম আমি তড়িঘড়ি ভাবলাম এবার হবে না জ্বালানি। কাল সকালে ঘষেমেজে উঠব আমি সেজেগুজে কিন্তু তাও পারি নি। সকাল বেলা বাবার হাতে ভেঙেচুরে করাঘাতে বিক্রি হয়ে গেল। বাজার শাক সবজি চাল ডাল আমার তখন কি যে হাল বলব কেমনে? বহুদিন কেটে গেল বাড়ল যন্ত্রনা। চেষ্টা করেও তেমন সিঁড়ি...

করোনার জন্য

।।করোনার জন্য।। দেবপ্রসাদ জানা করোনার জন্য পথের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছেড়েছি। করোনার জন্য বাতাসের সাথে শত্রুতা করেছি। করোনার জন্য আকাশের গায়ে আতঙ্ক দেখেছি। করোনার জন্য হৃদয় বন্দী করেছি আজ। করোনার জন্য দেহ জুড়ে অদ্ভুত সাজ। করোনার জন্য পৃথিবীতে পড়েছে বাজ। করোনার জন্য কলমের মুখ খুলেছে। করোনার জন্য সাদা খাতা গুলো ভরেছে। করোনার জন্য মানুষ লড়াই ভুলে গেছে। শুধু করোনার জন্য হাতাহাতি ভূলে মানুষের মনের তার জুড়েছে।।

পৃথিবী আজ রুগ্ন

।।পৃথিবী আজ রুগ্ন।।   দেবপ্রসাদ জানা ২৪,৪,২০২০ ও আকাশ শুনছ বাতাসের গায়ে ভাইরাস। ও আকাশ শুনছ পৃথিবীর আজ উঠেছে নাভিশ্বাস। ও আকাশ আমাকে তুমি সঙ্গে নাও বাতাসে লেগে সংক্রামক রোগ। চেনা পাখি গুলো আর উড়ছে না। বাতাসের গায়ে ভর করে। ও আকাশ শুনছ করোনার সাথে জড়াজড়ি করে এনেছে দুর্ভোগ। পথ প্রান্তরে প্রহরী বট আজ ছায়াহীন। নগ্ন পথ বিস্তৃত মাঠ আজ কোলাহল হীন। ইচ্ছের দূরন্ত টগবগে ঘোড়ার মুখে মৃত্যুর ফেনা। বাতাসের সাথে উড়তে উড়তে বৃদ্ধ মেঘেদের মৃত্যু। মেঘেদের ফুসফুসে করোনার বাস। ও আকাশ শুনছ লুকিয়ে পড়ো আক্রান্ত মেঘেরা করোনা নিয়ে তোমার দিকে ধেয়ে আসছে। শিশুমেঘ বাতাসের সাথে খেলছিল হঠাৎই ঝরে গেল বৃষ্টি হয়ে। পৃথিবীর বুকে নেচে বেড়াচ্ছে মারন ভাইরাস। মহাকাশেও ধেয়ে আসছে। রক্ষা করো,রক্ষা করো কচি কচি গ্রহ উপগ্রহ দের। বোঝনি অন্তর্গত শুন্যতায় পৃথিবী আজ রুগ্ন।

বৈশাখী

।।বৈশাখী।। দেবপ্রসাদ জানা ২৮,৪,২০২০ বৈশাখী তোর খুবতো সাহস সকাল বিকেল আসিস। জানিস না কি পাড়ার লোকে বলে তুই আমায় ভালোবাসিস। কত গুঞ্জন কত কথা রটে সমাজ মাঝে। আসবি যদি আয় না তুই একেবারে সাঁঝে। আর আসবি যদি আয় না তবে লুকিয়ে চুরিয়ে আয়। নীরবে আয় পাড়ার লোকে তোকে যেন দেখতে না পায়। তা না তুই ভাঙবি গাছ ভাঙবি বাড়ি এমন করলে তোর সাথে চিরদিনের আড়ি। কলঙ্ক কি তোর এতই  লাগে ভালো। হায়রে হায় এ বয়সে মানটা আমার গেলো। কেন এত উচ্ছাস তোর? গায়ে কেন এত জোর? শহরতলীর লাইট পোষ্টটাও উপড়ে ফেলে দিলি। দামোদরের সঙ্গে মিলে সব ভাসিয়ে গেলি। কত যে নাও ডুবিয়ে এলি কি যে সুখ নিজে পেলি বলতো আমায় সোনা। আমার একটা ছোট্ট ঘর তার থেকে তুই করলি পর। এখন সব বড়ই অচেনা। তার ওপরে বাসা করেছে ওপার থেকে এসে প্রাচীর টপকে করোনারানী আমায় ভালোবেসে। কত জনকে আর রাখব বল তুইও করিস এমন ছল যেন কতই ভালোবাসিস। বাড়িতে আমার বৌ বাচ্চা ভালো ও বাসে তারা সাচ্চা এখন তুইও আবার কাঁদিস। নারে সোনা আর হবে না পরকীয়া বৌ মানবে না যারে তুই চলে। করোনাকেও সঙ্গে নে গতিটা তোর বদলে নে আসিস পরে করোনা মুক্ত হলে।

দুঃখ

 ।।দুঃখ।। দেবপ্রসাদ জানা দুঃখ তুমি দুঃখ দাও অকারণে। সুখতো মোটে কটাদিন এই জীবনে। কাছে থাকো দুঃখ তুমি ছেড়ে যেও না। যেমন করে জড়িয়ে আছে ভাইরাস করোনা।

মজুত খাদ্য

।।মজুত খাদ্য।। দেবপ্রসাদ জানা ২২.৪,২০২০ নারকেল গাছটায় একটা কাক ডাকছে পাতার ওপর বসে। ছাদে বসে আকাশ দেখছি। এত ভালো করে আকাশ দেখিনি বহুদিন। ঘরে তালা দিয়ে মনের দরজাটা খোলার চেষ্টা করছি মাত্র। কাকটা ক্রমাগত কর্কস সুরে ডেকে কি একটা নালিশ করছে বুঝতে পারি নি। এক মনে আকাশের রঙ বদলানো দেখছি। সূর্যকে ঘরে পাঠিয়েই তবে আমি ঘরে যাব। নইলে যা দুষ্টু ছেলে,হয়তো সকাল হওয়ার আগেই উঠে জ্বালাতন করতে শুরু করবে। কাকটা আবারও কা কা করে ডেকে উঠল। কি বলতে চাইছে ও? নাকি ব্যঙ্গ করছে। হয়তো সাবধান করেছে। বলছে মজুত করো? নইলে এবার টান পড়বে পেটে। চাল ডাল তেল নুন সব আগুন। মজুত করো মজুত করো খাদ্য।

ডালিয়া

।।ডালিয়া।। দেবপ্রসাদ জানা ২৪,৪,২০২০ শীত নেই আর,আছে একটু তার ভাব। ডালিয়া ফুল গুলো এখনো হাসে। একটা দুটো কুড়ি ও ফুটেছে ভোরে। ডালপালা সব শুকিয়ে কাঠ। তার মাঝে সবুজ কটা পাতা, লাল নীল কুড়ি। মরার আগেও বেঁচে থাকতে চায়। পৃথিবীকে সুন্দর করতে চায়। তার রূপের মাধুরী ঢেলে রঙে রূপে আলো করতে চায় এখনো। মাঝে মাঝে সাদা ডালিয়া দাঁত বের করে হাসে। আর কত দিন ? তবু শেষ করার আগে জীবনের শেষ টুকু দিয়ে যেতে চায়।। নির্জন রাতের তারারা কুড়ি ফুল গুলো ফুটিয়ে দিয়ে যায়। ভোররের আলোয় সে হেসে উঠে দিনের আলোয় মরে যায়।

আজ আকাশটা

।।আজ আকাশটা।।    দেবপ্রসাদ জানা আজ আকাশে কালো মেঘের ঘটা। আজ আকাশে লুকিয়ে আছে কি টা? আজ আকাশে বর্ষা আছে বেশ। আজ আকাশে কান্নাকাটির রেশ। আজ আকাশের মন বড় খারাপ। আজ আকাশটা মলিন কেন বাপ। আজ আকাশটায় করোনার ভয়। আজ আকাশটা আতঙ্কের কথা কয়। আজ আকাশটায় আগুন ছিল যে। আজ আকাশটা বদলে গেল যে। আজ আকাশটা হেরেছে তার কাছে। আজ আকাশটায় বদ রাক্ষস নাচে। আজ আকাশে পাখিরা লুকিয়ে পড়ে। আজ আকাশটা দেখি নিজের ঘরে। আজ আকাশটা ভয় পেয়েছে ভাই। মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে তাই।

হে জনতা

।।হে জনতা।। দেবপ্রসাদ জানা হে জনতা জাগো, জাগো এই উপযুক্ত কাল। সংখ্যা ও সংহতির বলে তোমরা বিশাল। দেশ দেশান্তরে দিকে দিকে মৃত্যুরা ডাকে। তোমার অজান্তে তোমাকেই বন্দী করে রাখে। ফুৎকারে উড়িও না লক্ ডাউন। আরে দাদা এবার একটু জাগুন। একা ছেড়ে দাও করোনা কে নইলে মারবে যাকে তাকে। এই ভাইরাস জাত জানে না। হিন্দু মুসলিম কিচ্ছূ মানে না। মুখোসের আড়ালে নয়। নিজেকে লুকিয়ে জয়। এ বোধের লড়াই। নিঃসঙ্গ হওয়ার লড়াই। মৃত্যুর ঠোঁটে মৃদু হাসি মারবে সে রাশি রাশি।

ভাবনা চুরি

।।ভাবনা চুরি।। দেবপ্রসাদ জানা ২২,৪,২০২০ আমার ভাবনা চুরি হচ্ছে রোজ। তাই মনের ঘরে তালা দিয়েছি আজ। ক্ষিদে বাড়ে ক্রমশ ভাবনার। অন্যের ভাবনার। ঘরের ভাবনার ওপর বিশ্বাস হারিয়ে, অন্যের ভাবনা চুরি। নিজের মনে তালা দিয়ে অন্যের মনে ঢুকে পড়া। লজ্জা। এটা ঠিক নয়। ভাবনার বিশাল সমুদ্র হতে ভাবনার একটা একটা নুড়ি তুলে আনা সহজ নয়। বাবু নিজের ভাবনার সমুদ্রে ডুব দাও ডুবুরির মতো কুড়িয়ে আনো অমূল্য সম্পদ। তোমার অমুল্য সম্পদ। বোধশুন্য মনের ভাবনা পচা ডোবা হয়ে যায়। ভাবনার সমুদ্র শুকিয়ে নর্দমা হয়ে যায়। নিজস্ব ভাবনার উত্তাল সমুদ্রে ঝাঁপ দাও গড়ে তোলো এক অমূল্য সম্পদের প্রাসাদ। শুধু আমার ভাবনা কেন? কারো ভাবনার ভান্ডারে কলম গলিও না। ও কলম বেশী দিন চলবে না।

।।কমলার ভাগ্য।। অণুগল্প

গল্প-কমলার ভাগ্য কলমে-দেবপ্রসাদ জানা স্বামী মারা যাবার পর কমলা তার তিন ছেলের অধীনে এসে পড়ল। তিন ছেলেকে মানুষ করতে কমলা ও তার স্বামী তাদের শেষ বয়সের পুঁজি টুকুও ওদের পেছনে খরচ করে ফেলেন। আজ তিন ছেলে যোগ্য হয়েছে নিজেরা বাড়ি ঘর করেছে। কমলার স্বামী বেঁচে থাকতে কোনোদিন মনে হয়নি যে তারা তার মাকে নিয়ে ঠেলাঠেলি করবে। পুরানো বাড়িটাও নিলাম করে ছেলেরা ভাগ বাটোরা করে ফেললো। এখন সমস্যা হচ্ছে কমলাকে কে কিভাবে রাখবে? ঠিক হলো একমাস করে প্রত্যেকের বাড়িতে রাখবে। সেটা জানুয়ারী মাস। বড় ছেলের বাড়ি থেকেই শুরু হলো। তার পর মেজো ছেলে সেরে যখন ছোট ছেলের বাড়িতে এল ফেব্রুয়ারির 29 তারিখে ছোটো ছেলের বউ বলল- -মা আপনার তো কাল আসার কথা, আজ কেন এলেন, কাল আসুন। আজতো ত্রিশ দিন হয়নি? হতভাগ্য মা ফিরে গেল মেজো ছেলের কাছে, সেখানেও মেজবৌমা একি কথা বলল। মাসতো শেষ। এবার আপনার ছোটর বাড়িতে থাকার কথা। কমলা বিনা প্রতিবাদে বড় ছেলের কাছে গেল। কিন্তু সেই একই উত্তর। - আমাদের তো এখনো একমাস বাকি। কমলার প্রচন্ড খিদে তৃষ্ণা পেয়ে ছিল। কিন্তু বড়বৌ তাকে জলটাও দিতে নারাজ। রাস্তায় নেমে পড়ল কমলা। আর না। সে আর কারো কাছে যাবে না। রাস...

।।ভুতের যাত্রা।। অণুগল্প

ভৌতিক অনুগল্প ।। ভুতের যাত্রা।। দেব প্রসাদ জানা গরমের ছুটিতে মামার বাড়ি বেড়াতে গেছি। বেশ গরম। যেহেতু মামা বাড়ি প্রায় হলদি নদীর ধারে তাই প্রচন্ড বাতাস। গরম অনুভব হয় না। দিদিমা বাড়িতে থাকলে খুব মজা। পুকুর থেকে টাটকা চিংড়ি মাছের টক সবজি দিয়ে। এই গরমে যেন অমৃত। হলদিয়া উৎসব তখন টাউনসিপে হতো। মামা বলল যাবি? আমি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। মামাকে জিঞ্জেস করলাম - -মামা যাত্রা হবে না? -যাত্রা? -হ্যাঁ,আমার যাত্রা দেখতে খুব ভালো লাগে। -কিন্তু সেতো অনেক রাত হবে। ঘুমিয়ে পড়বি তো। -নাগো মামা ঘুমাব না। চলো না চলো না যাত্রা দেখব। আমি তখন সবে ক্লাস সিক্সে পড়ি। গল্প নাটক যাত্রা খুব প্রিয়। আমরা বাড়ি থেকে মুড়ি গামছায় বেঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। অনেকটা রাস্তা হাঁটতে হবে। সব সময় মামার হাত ধরতে পারছি না। মামাতো ভাইও আছে। বোনেরা আছে। প্রচন্ড হাওয়া দিচ্ছে। মরম রাস্তা। লাল মাটির রাস্তাকে মরম রাস্তা বলে এটা মামার থেকে জেনেছি। সকলে হাঁটছি । আমার এত হাঁটা অভ্যেস নেই তাই পিছিয়ে পড়ছি। তাছাড়া মরম রাস্তায় পা সরে সরে যায়। অন্ধকার পথ। কোথাও যেন শেয়াল ডাকছে। ঝি ঝি পোকার গান শুনতে হাঁটছি। কে যে কোথায় আছে বুঝতে ...

।।একটি মৃত্যু।। অণুগল্প

গল্প গল্প-একটি মৃত্যু কলমে-দেবপ্রসাদ জানা 23.3.2020 সকালে অতুল বাবু খবরের কাগজ টা হাতে নিয়ে সবে বসেছেন, রতন বাবু ডাক দিলেন . -অতুল আছো নাকি ? অতুলবাবুর সঙ্গে রতনবাবুর ভালোই সম্পর্ক বিপদে আপদে সর্বদাই থাকেন . পাশেই বাড়ি , ইন্ডিয়ান স্টাটিস্টিক্যালে চাকরি করেন, লাইব্রেরীতে . স্বভাবে খুবই ভালো , হোমিওপ্যাথি ডাক্তারি ও করেন . অতুল বাবুর বাড়ির মাঝে রাস্তা , তার ওপারে রতনবাবুর বাড়ি . বেশ ভালো বাড়ি , বাবার অনেক টাকা ছিল তা দিয়েই বানানো , নিজে কিছু করেন নি , দুই মেয়ে ,একজন কলেজে ,একজন স্কুলে . স্ত্রী বেশ সুন্দরী, নাম রমলা বর্ধমানের মেয়ে . এই সংসার রতন বাবুর . আজ ছুটি , মহরম .তাই সকালেই গল্প করতে চলে এলেন . অতুল বাবুর কাগজ টা আর পড়া হলো না .অতুল বাবুর একটা বইয়ের দোকান আছে ,বাড়িতে ড্রয়িং রুম থেকে শোবার ঘর সব জায়গায় বই খাতা ভর্তি অগোছালো ঘর , মেঝের ওপর বই খাতার স্তুপ তার মাঝে অতুলবাবু বসে খবর পড়েন রোজ , রতনবাবুর এই পরিবেশটাই নাকি খুব ভালোলাগে . -হ্যাঁ আসুন- দরজা টা খুলেই অতুলবাবু চমকে উঠলেন . রতন বাবুর চোখে মুখে হতাশার ছায়া . -কি বা ব্যাপার ? -বড় মেয়েটা কাল থেকে বাড়ি আসেনি . সকালে কলে...

মহাস্তব্ধতায়

কবিতা - মহাস্তব্ধতায় কলমে-দেবপ্রসাদ জানা ২১.৪.২০২০ যতক্ষন থাকা যায় থাকি মহাস্তব্ধতায়। সাদা বিছানায় শরীর বিছিয়ে নিরবতায়। নিঃশব্দে নিজের ভিতরে মরে যাই। কি করি বাতাসে বিষের রোসনাই।

দুপুর গিয়েছে চলে

।। দুপুর গিয়েছে চলে।।       দেবপ্রসাদ জানা তিনটে বেজে গেছে, সন্ধ্যা আসলো বলে। আর কেন? দুপুর আর নেই। সময় হারিয়ে গেছে। শরীরেও দুপুর নেই, মনের ও নেই। আর কষ্ট পাই দুপুর নেই বলে? স্বপ্ন দেখা বন্ধ হবে , ঘুম চুরি হয়ে যাবে রাতের। দিবা নিদ্রা ভঙ্গ হবে এবার। আর কিছুক্ষন মাত্র এবার ফেরার পালা,এবার মিটবে মনের জ্বালা। এই সন্ধ্যাবেলা, না ঠিক সন্ধ্যা নয়, সন্ধ্যার ঠিক আগে। ঘুমাও পাখি, শিহরে মৃত্যুকে ডাকি। আমি রয়েছি পাশে। কে আমি? আমি সময়, ইতিহাস খুঁজি। অসুবিধে নেই তো? যদি কাছে থাকি। ঘুম ভাঙ্গা চোখে এবার জল দাও। সন্ধে লেগেছে সময়ের গায়ে। আর কিছুক্ষন বাকি, ছবি হতে। কেমন আছো তুমি? আগুনের গায়ে লাগিয়ে আগুন প্রশ্ন করো কেমন আছি? ফাগুন গিয়েছে চলে বহুদিন শুধু ঝরা পলাশ পড়ে আছি।

।। সেই মেয়েটি।। অণুগল্প

।। সেই মেয়েটি।। দেবপ্রসাদ জানা এক যুবক প্রতিদিন সকালে উঠে পাশের মিলে কাজে যাবার জন্য রাস্তায় বের হলে, একটি মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে । সারাটা দিন তার মনে হয় মেয়েটির কথা। মেয়েটি বারান্দায় বসে থাকে। কোন কথা কোনো দিন বলে না। শুধু তাকিয়ে থেকে তাকে দেখে। এবার তার বিয়ের সময় হয়েছে, বাড়ির বাবা মা বিয়ের জন্য তাগাদা দিচ্ছে।  কিন্তু তার মনে একটাই চিন্তা যে মেয়েটি বোধ হয় তাকে ভালো বেসে ফেলেছে। যদিও সেও যেন মেয়ে টাকে না দেখে থাকতে পারে না। সে জিদ ধরে বসল সেই মেয়েটিকেই সে বিয়ে করবে যেভাবেই হোক। দেশের বাড়ি থেকে বাবা মা এলো। মেয়েটি দেখতে সুন্দরী। সবার পছন্দ হলো। সেও দেখল মেয়ে খুব সুন্দরী। বিয়ে করতে ইচ্ছে হল। বিয়ের তারিখ ও ঠিক হয়ে গেল। কিন্তু ছেলের মনে একটাই চিন্তা এতো দিন মেয়েটিকে দেখছে কোন কথা কোন দিন বলে নি। কে জানে মেয়েটা বোবা কিনা। কিন্তু সেদিন কথা বলে তার মনের আশা পূরণ হলো। খুব মার্জিত স্বভাবের মেয়েটি। এবার সে মেয়ের বাড়ি থেকে কিছু বলতে চাইল। কিন্তু ছেলেটি কোন কথা শুনল না। বলল দেনা পাওনা এ সব কিছু তার চাই না। শুধু শাঁখা সিঁদুর দিলেই হবে। বিয়ে হল। লোক জন সবাই ধন্য ধন্য...

।। ভয়।। অণুগল্প

।।ভয়।। দেবপ্রসাদ জানা তখন আমি পাঁচ কিংবা ছয় l বাবা  বললো -চল বাজারে নিয়ে যাই l আমি বাবার প্রথম সন্তান তাই আদর বেশী পেয়েছি বরাবর। তখনো বাবা স্কুটার কেনতে পারে নি। তাই রোজ সাইকেলে করে স্কুলে নিয়ে যাওয়া , কাছাকাছি পিসির বাড়ি , সব জায়গাতেই বাবা সাইকেলে করে কত জায়গায় মাঝে মধ্যেই নিয়ে যেত কিন্তু সেদিনের কথা আজও ভুলিনি l বাজারে মাংস এর দোকানে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। জ্যান্ত মুরগির গলা বঁটিতে অনায়াসে কাটা দেখে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলাম পথে। যখন জ্ঞান ফিরল দেখলাম বিছানায় আমি আর মা বাবা দাদু ঠাকুমা সব ভ্যাবাচেকা হয়ে তাকিয়ে আছে। ঠিক কোন জায়গাটা আজ মনে নেই l কিন্তু আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম ঐ দেখে l এটা মনে আছে l পাড়ার কেউ মারা গেলে কি বীভৎস ভয় পেতাম বিয়ের পরেও, সে বলার কথা নয় l সেই রাস্তা দিয়ে যাওয়াই বন্ধ করে দিতাম l অথচ আজ ! দৈনিক খবরের কাগজ গুলো পাল্টে দেয় জীবনের সব মোড় l শিক্ষা দিয়ে যায় কত কঠিন জীবন। চোখের সামনে দেখলাম আধা জাগরনে চির ঘুমে চলে যাওয়া দাদুনকে। আমার মায়ের বাবা। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে সে কি বাঁচার আকাঙ্ক্ষা। চোখের সামনে দেখলাম আমার দিদার শাশুড়িমার হঠাৎ করে একদিনের অসহ্য পেটে ব্যাথা...

অচেনা লোক

।। অচেনা লোক।। দেবপ্রসাদ জানা ২০.৪.২০২০ উঠেছ? নাকি এখনো আছো ঐ লোকটার বুকে। যাকে তুমি চেনো না জানো না যে তোমার কাছে থাকে। আদর পায়। হাতের করা রুটি পায়, ভাতও পায় খেতে। আহা রে যার যেমন কপাল শুতে দাও ও রাতে ইচ্ছে করলে যখন তখন হাতটা ও দেয় একেবারে বুকে। আহা রে কপাল না জানি কতই না আছে সুখে। ভালো তো ঐ অচেনা লোকটার এলেম আছে বলো। তোমাকে কেমন আদর করে সুন্দরী করে নিলো। হায় রে কপাল আমায় কেন অচেনা রাখনি তা তাহলে তো আমি আদর পেতাম পেতাম উষ্ণতা। ঠিক আছে পড়ো আর হাসো আমায় তুমি নাই বা ভালোবাসো। অচেনা নয়? বলো তো ফুল বাঁধার আগে পরকীয়ার কথা বলেছে। নাকি বলেছে কত মেয়ের ছাতি মন্থন করেছে। বলেনি তো? তাহলে? আগুনে হাত দিয়েছ কন্যা পুড়লে সোনাই বটে। তোমায় আমি চিনেছি মেয়ে সূর্য গঙ্গার ঘাটে। ও পরে বলেছে? তাই ! তাতে কি? তখনতো আর ছেড়ে যাওয়ার  পথ নাই। ভালো থাকো  অচেনাতে আর তো কটা দিন। পঞ্চাশ তো পেরিয়ে গেল ভালোবাসা হীন। কি বললে ভালোবাসে? তোমায় নাকি? তুমি যখন ডাঁসা ছিলে কতই না ছিল আদর। এখন তো দেখি রাতে বেলা জড়িয়ে থাকে চাদর।

গোলাপ

তোমার হাতে একটা গোলাপ ছিল এখন আর দেখি না। তুমি জানালায় দাঁড়িয়ে খোলা চুলে বাতাস খেলাতে। হাতে গোলাপফুলটা বরাবর আমার দিকে ছোঁড়ার চেষ্টা করতে। আজকাল কাঁটার দিকটা দেখতে পাই। কখনো কাঁটার দিকটা ছুঁড়ে মারো আমায়।

নারী দিবস

নারী দিবস আজ যে মেয়েটি ধর্ষিত হলো আজ যে মেয়েটি আগুনে পুড়ে ছাই আজ যে মেয়েটি দমকা হাওয়ায় মর্গে আজ যে মেয়েটি দু-আঙুলে চোখের জল মোছে তাদের সামান্য হাওয়া আমরা কখনো কী অনুভব করতে পেরেছি তাদের সামান্য জোছনা আমরা কখনো কী ছুঁইতে পেরেছি তাদের সামান্য আগুন আমরা কখনো কী মূল্য দিতে পেরেছি কেবল কবিতা গানে ঘুড়ি উড়িয়ে কী লাভ আড়চোখে লক্ষ্য করি পাখিটা কতটা আকাশে উড়লো দৌড়ে গিয়ে কেটে ফেলি ডানা উড়তে তাদের মানা নারী দিবস পালন করে কী লাভ? জল ছাড়া নৌকা চলতে পারে না নদী যখন সত্যি সত্যি গতি পথ ফিরে পাবে সেই দিন নারী দিবস ঘটা করে আর পালন করতে হবে না

ইচি

ইচি দেবপ্রসাদ জানা বসন্ত এসে গেল। তিন্নি এখন এক বছরের। সামান্য কথা বলতে পারে। হাঁটতে পারে না ঠিক করে কিন্তু দৌড়াতে পারে। পড়ে যায় বেশী। তবু দৌড়ায়। আর পেছন পেছন ইচি। ইচি আমার আনা একটা কুকুর। আমার বড় মেয়ে মম আদর করে নাম রেখেছে ইচি। ওটা তিন্নিদের বাড়িতে তিন্নি হওয়ার অনেক আগে। ছোটন তিন্নির মা। কিছুতেই ওকে পছন্দ করে না। কারণ ওর লোম খসে পড়ে। ইচির লোম যদি তিন্নির পেটে যায় তাই। কিন্তু যতই তিন্নিকে ইচির থেকে দূরে রাখা হত,আরো বেশী করে ইচি ওর সঙ্গে দৌড়ে বেড়াত। তিন্নির একটা স্বভাব ছিল। হাতে যা পাবে সব মুখে দেবে। কেউ না দেখলে খেয়েও ফেলে। আজ সকাল থেকে ওর ঠাকুমা আর মা ব্যস্ত। তিন্নিকে খাইয়ে দেওয়ার সময় নেই। কারণ তিন্নির বাবা কিশোরের চোখে ওয়েলডিং এর লাইট লেগে চোখ খুলতে পারছে না। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। ইচি ও তিন্নির সঙ্গে ঘুরছে। ফলে ছোটন ও রেগে মেগে ইচিকে অনেক মারল। ইচি তাও ওর পেছনেই ঘুরছে। পাশের বাড়িতে অনেক ইঁদুর ছিল তাই তারা কাল রাতে বিষ দিয়েছে। একটা ইঁদুর এসে ওদের কলের ধারে মরে পড়ে ছিল। আর সেটা কেউ দেখে নি। এদিকে তিন্নি ওটা তুলে নিয়ে মুখে দিতে যাবে ইচি লাফ দিয়ে ওর হাত থেকে ইঁদুরটা নিয়ে ...

মুক্তি

ভেবেছিলাম তোমায় প্রেমের মুক্তি দিতে, পালিয়ে যাবো অনেক দূরে ভুলতে চাওয়া কি সোজা স্মৃতি, আসছে ভেসে হাওয়ার সুরে আগল দিতে হাওয়ার প্রলাপ, পাতাল ঘরে বাস বেঁধেছি হঠাৎ করেই পড়লো মনে, একটু আগেই শেষ কেঁদেছি পাতাল ঘরে রুদ্ধ হাওয়া, তোমার স্মৃতি আর আনেনা শত্রু এখন প্রতিধ্বনি, হাজার নিষেধ বাগ মানেনা তোমার প্রেমের মুক্তি দিতে, শেষ কাঁদা টা কাঁদব এবার জলের চিঠি যায়না পড়া , দায় নেই তাই জবাব দেওয়ার ইচ্ছা ভীষণ, একবারটি পাতাল থেকে উঠবো আমি হাওয়ার কাছে খবর নিয়েই, নিচেই আবার যাবো নামি সয়ম্বরে বিকিয়েছিলে, সুখ সাগরে ভাসবে বলে হলনা আর শেষ কাঁদাটা , মাথা রেখে তোমার কোলে।

ছোটদের জন্য

শিশুদের জন্য ছড়া ********** বর্ষা কালের সোনা ব্যাঙ ডাকছে দেখো ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ লাফাতে গিয়ে দুপুরবেলা ভাঙল নিজের দুটো ঠ্যাং *************** চড়চড় খড়খড় কালি পুজো বাজি। বুড়িমার চকলেটে দোর দিয়েছে পাজি। **************** খোকার গায়ে নতুন জামা দেয়নি সে এখনো হামা কাদা ধুলো মাখলো  গায় বকে  দিলো তারে মায়। ****************** ব্যাঙেদের ছোট কত্তা মাথায় ব্যাঙের ছাতা নীল লাল জামা পোরে গোটায় খালি হাতা।

চিত্রলেখা

আমি তোমাকে খুঁজে পাচ্ছি না চিত্রলেখা। তোমার ছবি গুলো। সব যে কোথায় লুকিয়ে গেল তন্ন তন্ন করে খুঁজছি পাচ্ছি না। না না তোমার ফেসবুকের ছবি না। তোমার দেওয়া সেই নাইটিতে ছাদের ওপর বসে মাথার চুলে আঙুল দেওয়া সেলফি। সেটা পাচ্ছি না। কোথায় যে লুকিয়ে পড়ে- আসলে তোমার মতো তোমার ছবি গুলোও লুকোচুরি খেলতে ভালোবাসে আমার সঙ্গে। কখনো অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকো। আবার কখনো মুখ টিপে হাসো। ভারি ভালো লাগে। কখনো চোখ রাঙিয়ে বলো কি করছো এসব। ঠিক নয়। ভগবান পাপ দেবে। আমি জানি ভগবান আমার বুকে আছে। সে তুমি। তোমাকে স্বপ্নে দেখি। আদর করতে বলি,তুমি রেগে যাও। বলো কি হচ্ছে এ সব। তোমার শাসন ও ভালো লাগে। মাঝে মাঝে খুব রাগ হয়। যদি একটুও তোমাকে না দেখতে পাই। একটু কথা বলতে না পাই - তুমি বিশ্বাস করো না জানি। তবু ওটাই এখন আমার বিশ্বাস। তুমি মানো আর না মানো।

ছড়ায় প্রেম

আমার ওপর রেগে থেকো রাগলে ভারি ভালো লাগে মনে হয় কাছে আছি। অনুরাগ করো যদি মনে হয় আদর করি। রাগের চোটে খিল দিলে হয়তো তোমার পায়ে ধরি। তুমি এড়িয়ে চলো বার বার আমি চেষ্টায় আছি হাত ধরবার। কেন যে সরে যাও মরীচিকার মতো। স্বপ্নটাকে বাঁধতে চাই মরনের মতো। স্বপ্নতো স্বপ্নই হয় বাস্তবটা কঠিন বড়। থাকি না স্বপ্ন দেখে কেন আমার হাত ছাড়ো। বাতাসে ভাসতে দুটো ডানা লাগে আমার দুটি ডানা হও। ওই আকাশে উড়তে পারি যদি মনে সাহস দাও। জানি আমি পড়েও দেখো না আমার মনের কথা তবুও তোমার কাছে যাবো দাও যতই ব্যথা। তোমার চোখের বালি আমি সুধু ধুয়ে ফেলতে চাও। গোলাপ ফলে নাই রওলাম কাঁটাতে স্থান দাও। এত কথা লিখছি তবু একটাও কথা বলছ না। যতই তুমি তাড়াতে চাও তোমায় আমি ছাড়ছি না। মন্দ বলো ভালো বলো এই রকমই আমি। একটা কথাও মিথ্যে নয় সব কথাই দামি। দেখছ না যে বুঝতে পারি হলফ করে বলতে পারি। কেমন পাগল, দেখতে থাকে পরের ঘরের পরনারী। এত কিছু বলার পরে কেন যে চুপটি করে রয় । হৃদয়টাকে বেলুন করে শেষ নিঃস্বাস টাও ভরতে হয়।

ঘুম বিক্রি

আমি ঘুম বিক্রি করে তোমায় দেখি সারারাত। আমার ঘুমেদের দাম অনেক বেশী। কারণ এই ঘুমের বদলে তোমার ভালোবাসার মুহূর্ত গুলো কিনতে পারি। আমি ঘুম বিক্রি করে তোমাকে দেখি। কথা বলি। তোমার ওই সুন্দর মুখের দাম তো কম নয় যে সবাই কিনতে পারবে। আমি কিনি কিছুক্ষনের জন্য। রাত বারটায়। তাই আমার ঘুম না চাইলেও নিলাম হয়ে যায় রাতের কাছে। =

কতবার

কতবার যে তোমার ম্যাসেঞ্জার টা খুলে দেখছি তার সীমা নাই। আজ বললে মেয়ে বাড়িতে আজ কি আর একবার ও কথা হবে না? আমি এমনি ভাবে তোমাকে না দেখে থাকব? তাই ততপর হয়ে উঠি। এই বুঝি খালি হলে। এই বুঝি মেয়ে পড়তে গেল। আর তুমি আকুল হয়ে আমাকে ম্যাসেজ করলে। আমি যদি সঙ্গে উত্তর না দি, রেগে যাবে তো তুমি। হ্যাঁ জানি তুমি রাগ করেও থাকো না বেশীক্ষন। তবুও - মনে হয় একটা অমুল্য সময় চলে গেল অযথা, তাই এই আকুলতা।

এলোমেলো

যদি ভুল করে ভিডিও কলে হাত লেগে যায়। যদি ভুল করে তুমি ভিডিও  কল রিসিভ করে ফেলো। যদি ভুল করে তোমায় দেখে ফেলি। বিছানায় আগোছালো অবস্থায় তুমি বিশ্রাম নিচ্ছো। তোমার বুকের ওপর থেকে হয়তো আঁচলটি সরে গেছে। কিংবা নাইটিটা একটু বেশী নেবে গেছে। কিংবা বুকে আঁচল টা তোমার বুকটাকে পুরো ঢাকতে পারে নি। অথবা প্রচন্ড গরমে সুধূ সায়া বুকের ওপর অবধি এনে রেখেছো। দেখে ফেলি। যদি তোমার পায়ের দিকের কাপড় একটু তুলে আরামে শুয়ে ছিলে। যদি দেখে ফেলি। তবে কি তুমি রাগ করবে? না লজ্জায় বলবে কি করছো আমি ঠিক অবস্থায় নেই। নাকি বলবে খুব মজা পাও আমার শরীর টা এলো মেলো অবস্থায় দেখতে।

একটি মৃত্যু

গল্প গল্প-একটি মৃত্যু কলমে-দেবপ্রসাদ জানা 23.3.2020 সকালে অতুল বাবু খবরের কাগজ টা হাতে নিয়ে সবে বসেছেন, রতন বাবু ডাক দিলেন . -অতুল আছো নাকি ? অতুলবাবুর সঙ্গে রতনবাবুর ভালোই সম্পর্ক বিপদে আপদে সর্বদাই থাকেন . পাশেই বাড়ি , ইন্ডিয়ান স্টাটিস্টিক্যালে চাকরি করেন, লাইব্রেরীতে . স্বভাবে খুবই ভালো , হোমিওপ্যাথি ডাক্তারি ও করেন . অতুল বাবুর বাড়ির মাঝে রাস্তা , তার ওপারে রতনবাবুর বাড়ি . বেশ ভালো বাড়ি , বাবার অনেক টাকা ছিল তা দিয়েই বানানো , নিজে কিছু করেন নি , দুই মেয়ে ,একজন কলেজে ,একজন স্কুলে . স্ত্রী বেশ সুন্দরী, নাম রমলা বর্ধমানের মেয়ে . এই সংসার রতন বাবুর . আজ ছুটি , মহরম .তাই সকালেই গল্প করতে চলে এলেন . অতুল বাবুর কাগজ টা আর পড়া হলো না .অতুল বাবুর একটা বইয়ের দোকান আছে ,বাড়িতে ড্রয়িং রুম থেকে শোবার ঘর সব জায়গায় বই খাতা ভর্তি অগোছালো ঘর , মেঝের ওপর বই খাতার স্তুপ তার মাঝে অতুলবাবু বসে খবর পড়েন রোজ , রতনবাবুর এই পরিবেশটাই নাকি খুব ভালোলাগে . -হ্যাঁ আসুন- দরজা টা খুলেই অতুলবাবু চমকে উঠলেন . রতন বাবুর চোখে মুখে হতাশার ছায়া . -কি বা ব্যাপার ? -বড় মেয়েটা কাল থেকে বাড়ি আসেনি . সকালে কলে...

প্রহর

কবিতা -প্রহর কলমে -দেবপ্রসাদ জানা প্রহর গোনার সময় হলো বৈকি সময়ের তালে চলছে দেখো পালকি। দুলে দুলে হাওয়ার মতো পাল তুলেছে নৌকা যত। ভাটার টানে নদীর কাদায় জীবন ভীষন কষ্টে কাঁদায় আটকে পড়ে সাধের জীবন তাই কি?

পাঁজরের নিচে

।। পাঁজরের নিচে।।  দেবপ্রসাদ জানা ২০.৪.২০২০ তোমার বুকের কাপড়টা সরিয়ে দেখোতো, আমি আছি কিনা। হৃদয়পুরে। ঠিক বুকের বাম দিকে পাঁজরের নিচে। যেখানে জীবনবাবু চলা ফেরা করে।  ধীরগতিতে। যেখানে লাল রক্তের স্রোত চলে বাধাহীন। যেখানে অক্সিজেনের আনাগোনা অপরিসীম। যেখান থেকে প্রতিটা রক্ত শরীরের আনাচে  কানাচে পৌঁছে যায়। সেখানে আছি কিনা? যেখানে প্রতি মিনিটে ষাট থেকে সত্তরবার জীবনের নবজন্ম হয়। ধুক্ ধুক্ ধুক ধুক ধুক্। একটা পান পাতার মতো লাল একটা যন্ত্র সারাদিন কাজ করে চলেছে বিরামহীন। হ্যাঁ আমি সেইখানের কথা বলছি। আছে? আরে যে জিনিসটা নিজের অজান্তে চুরি হয়ে যায় প্রায়ই। কই দেখছি নাতো? নাই বোধ হয়। আগে থেকে ওখানে অনেক ভীড়। তাই না? তাহলে  আর কি?  ওখানের আশা ছেড়ে হাত ধরি, তোমার শরীরের উষ্ণতাই নি। মন নাই বা পেলাম। এ জনমে 

হিম অন্ধকারে

।।হিম অন্ধকারে।। দেবপ্রসাদ জানা ১৯,৪,২০২০ ঝরে পড়া পালকেরও প্রতিশব্দ শোনা যাচ্ছে আজকের বিশ্বে। অন্ধকারে আলো ঢুকে পড়ার শব্দ তাও কর্ণগোচর হচ্ছে। কই সে কোলাহল কই সেই জাতি বর্ণ নির্বিশেষে লড়াই। ফুরিয়ে আসছে আয়ু। আশ্চর্য হিম অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে গোটা পৃথিবী। নীল নীল আকাশ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, আর মেঘের কানে কানে পরকীয়ার কথা বলে না। মৌমাছি মধু সংগ্রহ ভুলে ফুলের সাথে গৃহ বন্দী। প্রজাপতি ফুলের দেমাক দেখে কটূক্তি করছে না আর। পৃথিবী ভয় পেয়ে কক্ষপথ ছেড়ে হিম অন্ধকারে। গাছ গাছালি পাখপাখালি ক্ষনে ক্ষনে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। কোন একটা মেঘ এক পশলা বৃষ্টি দিয়ে মাঠটার গরম বাড়িয়ে গেল। যতই গরম বাড়ছে তেনারা ও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।

কবে আসবে তুমি চিত্রলেখা

আজ তুমি অস্বীকার করছো আমার ভালোবাসা কে- কেন অস্বীকার করছ চিত্রলেখা? ভূলে গেছো? একদিন দেখা না হলে কি বলতে তুমি? কেন এই দুই সত্তার বিপরীত স্রোত। ভূলে গেছো? সেই গঙ্গার ধারে একান্তে ভালোবাসার পূর্ণ আস্বাদন। বোধের ভেতর প্রেমরস ঢালার কথা। কত ভয় পেয়েছিলে তুমি, কি হবে? ও অহঙ্কার ! যে অহঙ্কার তৃষ্ণার শিকড়ে দেয় মোচড়। শোনো ভালোবাসা মৃত্যুহীন , অমর। আর মরলেও তোমার আমার নীরবে নিভৃতে তুলে রাখা ছবি গুলো আজো প্রমাণ করতে পারবেই,

বাইরে বেরিও না যেন

।।বাইরে বেরিও না যেন।। আমার পেছনের পর্দা টা কি সুন্দর তাই না? বেচারা জন্মের পর থেকেই এই ঘরে। নড়েচড়ে কথা বলে পত্ পত্ করে। কার সঙ্গে বলে জানি না। জানালার সঙ্গে বলতে পারে। প্রতিদিন পাটেপাটে ঝুলতে থাকে ঝুলতে থাকে নিঃশব্দে। কত মার্জিত,কত স্মার্ট। ওর কাজ ছিল ঘরটাকে সুন্দর করা। তা ও করে নির্বিবাদে। দুলে দুলে বাতাসকে ডাকে। ওর আড়ালে থেকে কত লুকোচুরি খেলেছি কোনো প্রতিবাদ করেনি একদিনও। কোনদিন কোন নালিশ নেই। বছরের পর বছর একভাবে এক জায়গায়। জানালার কাঁচ ধরে স্বপ্ন ডেকে আনে রাতে। মায়াবী আলোর ছটাকে স্বপ্নময় করে তোলে ঘরের ভিতর । আজ মনে হলো কিছু একটা বলতে চাইছে। কান পেতে শুনি - "বাইরে বেরিও না যেন" আমার মতো ঘরেই থাকো কিছুদিন। বাইরে তেনারা বাসা বেঁধেছেন।

ট্রেন আজো থামেনি

।। ট্রেন আজো থামেনি।। কলমে -দেবপ্রসাদ জানা আজো একটা ট্রেন এসেছি শুভদ্রা আমি গিয়েছিলাম ছাতা মাথায় বৃষ্টি ভেজা রাতে,তোমার অগোচরে। আলোকবর্তিকাকে পাথেয় করে নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে। অসম্ভব তলিয়ে থাকি অন্তরঙ্গ অন্ধকারময় স্তব্ধতার গানে। আশ্চর্য এক বিষাদ প্রদাহে অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকি ঐ কান্না ভেজা প্লাটফর্মে। অক্ষি প্রদাহ জীর্ণ করে অন্তিমক্ষন অপেক্ষায়। তবু প্লাটফর্ম চলতে থাকে অসীম নিরবচ্ছিন্ন ঘুমপাড়ানি গান শোনাতে শোনাতে। ট্রেন থামে নি আজো। একটাও কফিন প্লাটফর্ম ছোঁয়নি। তুমি না বলছিলে আজ আসবে আজ ফুল নিয়ে অপেক্ষা করবে তুমি কই সেতো এলো না। জাতীয় পতাকা মুড়ে যুদ্ধক্ষেত্র হতে। প্রতিদিন নানান অছিলায় এই স্টেশনে এই বরষায় আমি থেকেছি। কি বলে তোমাকে আমি বোঝাব যে - আজো আসেনি শুভদ্রা তোমার মনিকাঞ্চন। তোমার সৈনিক।

তাহলে কি আমি!

সবাই কত লাইভে আসছে, কত কবিতা পড়ছে। কত বই সম্পর্কে বলছে ভালো মন্দ। আমার মাথায় কিন্তু কিছুই ঢুকছে না। হ্যাঁ আমি শুনছিলাম। কিন্তু তখন যেন মাথার ভেতর তুমি ঢুকে গেলে। কে তুমি? চিত্রলেখা? কই তুমিতো নও। কেমন যেন আবছা আবছা আলোছায়া - একটা মেঘ যেন ঢেকে আছে তোমাকে। কেন? ঢেকে আছে কেন? নীল নীল আকাশ তার উপর কালোছায়া মেঘ। একটা কাক উড়ে গেল মনে হয়। না তাতো নয়, চিল - কিন্তু চিল কেন? মরা মানুষের গন্ধ পেয়েছে বোধ হয়। কে মরল? এখানে তো সব জীবিত। কি ! শব জীবিত? না না এই যে সব তুমি মেঘ পাখি আকাশ - তাহলে? জলের ওপর নৌকাটা ভাসছে, পাল তোলা। বাতাস তাতে বন্দী করে নৌকাটাকে টানছে। কোন লোক দেখছি না কেন? মাথার ওপর মেঘেরা হাসছে। সন্ধ্যা বেলা - না না সন্ধ্যার একটু আগে, নীলাকাশটা যখন লাল হয়ে গেল তখন। কারা যেন ছায়া ছায়া নৌকার ওপরে। আমি নিজে কি ছিলাম? কই নাতো। দেখছি নাতো। সন্ধ্যার আকাশ এত বিষন্ন কেন? মেঘের ঘন ঘটা নেই। ঝড়ও ওঠেনি। হালকা মেঘ, তবু বিষন্নতা। আমি ছায়া টাকে চিনি চিত্রলেখা। তুমি এই নৌকায় কি করছ বলতো? এত চিল উড়ছে কেন? মরা মানুষের গন্ধ পেয়েছে বোধ হয়। মরা মানুষ ! কই? এইতো তুমি চিত্রলেখ...

কেন তুই আমার বয়সী হলি না

।। কেন তুই আমার বয়সী হলি না।। কলমে-দেবপ্রসাদ জানা ১৮.৪.২০২০ একদিন আকাশ জুড়ে কালো মেঘ। তুমুল ঝড় বৃষ্টি। তখন আমি চোদ্দ কি পনের। জোছনারা ভিড় করে আছে সারা শরীর জুড়ে। স্বপ্ন দেখায় পূনিমার চাঁদ। বিগলিত সত্তার তাপ বাড়ে দেহে। চোখ ভরে স্বপ্ন নিয়ে চিলে কোঠার ঘরে স্তব্ধ নির্বাক। নিঃশব্দে ছাদের কার্নিশে ভেজা কাক, থরথর করে কাঁপছে। আমি বসে আছি,ঘন মেঘ উজাড় করে দিচ্ছে শান্তি। বেলা দি। আমার দূর সম্পর্কের দিদি। ভেজা কাকটার মতো থরথর করে কাঁপছে চিলে কোঠার এক কোনে। আলো আঁধারি চিলে কোঠা তখন স্বপ্নপুরী। শরীরের প্রায় সব ভেজা কাপড় গুলো সরিয়ে ফেলে জড়িয়ে ধরল আমাকে। একটা বিদ্যুৎ চমকানোর কথা ছিল। কিন্তু না তা চমকালো না। শুধু আমার বুকে চমকালো প্রথম প্রেম। এই চিলেকোঠার ঘরে। প্রচন্ড ঝড়। আমার দেহে মনে বাইরে। বেলাদি, আমার বেলাদি। তুই যে কেন আমার বয়সী হলি না।

প্রদীপের তেল

।। প্রদীপের তেল।।    দেবপ্রসাদ জানা ১৮.৪.২০২০ আমার দিকে এমন ক্লান্ত শুন্য দৃষ্টিতে তাকিও না। আমি সেই প্রানী যার চেতনারা শুধু ছুটে বেড়ায়। রক্তের ভিতরে। খুব গোপনে। আমি পারি না প্রতিবাদ করতে। চেতনার পদধ্বনি শান্ত নীরব। বোধের ভিতরে হালকা আবছা আলোছায়ায় শরীরের সঙ্গে শরীর। বোধের সঙ্গে বোধ। চেতনার সঙ্গে চেতনা। বোধের ভিতরে অন্ধকার, ভারসাম্যহীন বিষন্নতা। ঘর ঘরনী সন্তান সন্ততি ধূসর হচ্ছে জীবনের গোলকধাঁধায়। একটা যোগবিয়োগ দরকার। নিদ্রাহীন রাতটায়। ঘুমেরা লক্ ডাউনে আটকে আছে  রাস্তায়। শিমুল গাছের তলায়। আমি পারি নি প্রতিবাদ করতে। অমন শান্ত শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকো না আমার দিকে। দেখছো না আমি জীবনের উৎরোল বেলায় দাঁড়িয়ে আছি। প্রদীপের তেলতো ফুরিয়ে এলো। বুঝলে না? হ্যাঁ হ্যাঁ আমি মৃত্যুর কথা বলছি।

আমার সমাধী

।। আমার সমাধী।। - দেব প্রসাদ জানা যদি তোমার জন্য হাজার কবিতা লিখতে পারতাম - যদি তোমার জন্য দশ হাজার  প্রেমের কবিতা লিখতে পারতাম। অথবা দশটা প্রেমের কবিতার বই অথবা একটা পুরো লাইব্রেরী। তাহলে তোমাকে ভালোবাসি বলতে পারতাম। তোমার হাত দুটো ধরে একটা চুমু খেতে পারতাম। তোমার আকাঙ্ক্ষায় আমি ডানা মেলেছি। পাখি হয়ে মেঘের সাথে আলাপ করেছি। আকাশের গায়ে রামধনু এঁকেছি। চাঁদের জোছনাকে নামিয়ে এনেছি সমুদ্রের নোনা জলে। যদি একটা গোলাপ তোমায় দিতে পারতাম। যদি একটা গোলাপ ফুলের বুকে দিতাম, অথবা একটা গোলাপ বাগান। হৃদয়ের লাল রক্ত মাখিয়ে দিতাম প্রতিটি গোলাপের গায়। তোমার জন্য উপহার দিতাম - যে লাল গোলাপে ভরে থাকত ভালোবাসার আবেশ। প্রেমিক মৌমাছিরা ঘুরতো তোমার চার পাশে। একটা তাজমহল বানাতে পারতাম, সাদা পাথরের না। নীল পাথরের সেখানে তুমি আমি রোজ সন্ধ্যায় প্রেমের সোনালী ফুল ফোটাতাম, আমার সমাধী পরে।

এই সন্ধ্যায়

।। এই সন্ধ্যায়।। কলমে -দেবপ্রসাদ জানা ১৭.৪.২০২০ এই সন্ধ্যাটা কি সেই সন্ধ্যা? যে সন্ধ্যায় তুমি আসবে বলেছিলে ঐ জেঠিটার উপর। আমি আজো দাঁড়িয়ে আছি তোমার জন্য এই শ্মশান ঘাটে জেঠিটার ওপরে। হ্যাঁ শ্মশান ঘাটে, যেখানে শেষবেলায় শেষ দিনের দেখা সেরে স্নান করে সব। এখানেই তো শেষ দেখা হয়েছিল তাই না চিত্রলেখা। তুমি নীল চাদর গায়ে এই ঘাটের ইট বালির চেয়ারে বসে আমাকে শেষ চুম্বনটা দিয়েছিলে। বলেছিলে আবার আসব এখানে। খুব নিরিবিলি জায়গাটা। এখানে কেউ আসে না দুপুরে। বলেছিলে এখানেই আসব রোজ। সন্ধ্যা হয়ে এলো। এখনো এলে না। গঙ্গার ওপর দিয়ে একটা ছোট নৌকা ভেসে যাচ্ছে। অন্ধকারে মিশে যাওয়ার আগে বলে গেল বাড়ি যাও। আজ আর আসবে না তাও বসে আছি তোমার অপেক্ষায় এখানে। আমি নিঃশব্দে বসে আছি এক মায়াবী আলোয়। ওপারে বেলুড়মঠ, এখান থেকে স্বপ্নপুরীর মতো লাগছে চিত্রলেখা। একটা ধর্মীয় গান বাজছে কোথাও - না কেউ বোধ হয় তার সঙ্গীকে শেষ বিদায় জানাতে এসেছে। একটা নৌকা এসে লাগল জেঠিটার গায়। টিমটিমে আলোয় কারা যেন নামল। তুমি আসলে নাকি? আসন্ন জোয়ারের ছোট ছোট ঢেউ আছড়ে পড়ছে পায়ে। ভালোবাসা করোনার মতো সংক্রামক হতো তোমার শরীরে ...

ভেবেছিলাম

ভেবেছিলাম চিত্রলেখা আমার প্রেমিকা হবে। কাদম্বরীর মতো আমারও একটা প্রেমিকা থাকবে। আরো অনেক অনেক অনেক কবিতা - প্রেমের কবিতা দানা বাঁধবে আমার হৃদয়ে। ভালোবাসার কবিতা গুলো হৃদয় থেকে টেনে বের করে আনবে আমার কলম। কিন্তু তুমি? মেঘ হয়ে গেলে, উড়বে বলে। হয়ে গেলে পালের বাতাস, নৌকা বাইবে বলে। আশ্চর্য এক বারবনিতার মত নিজেকে আমার কাছে হাজির করলে। আমিতো চাইনি এমনটা। চেয়েছিলাম আমাকে ভালোবাসবে রাধার মতো। মীরাবাঈ এর মতো। ভেবেছিলাম তুমি প্রেমিকা হবে নীরার মতো। বনলতা সেনের মতো। আমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চোখের ইসারায় বললে এসো পরকীয়া করি। কত গুলো অসভ্য ভাষায় কবিতা গুলোকে ডাকলে। ভেবেছিলাম তুমি আমার নদনদী,গাছপালা, মাটি মাটির গন্ধ,বর্ষার গান, বাঁকা পথ, বাঁশ গাছ, নন্দের হাট পুকুর ঘাট। ডাকবে আমায়। কিন্তু সে আর হোলো না।।

সঙ্গী হারা

।।সঙ্গী হারা।। দেবপ্রসাদ জানা ওরা আমাকে সঙ্গী হারা করছে, রক্ষীহারা ও। ওরা আমাকে অপমান করেছে। আমি তোমাদের দরজায় দরজায় হন্যে হয়ে ঘুরছি। কেন তোমরা আমাকে আপ্যয়ন করতে অস্বীকার করছো আমি এই নিঃসঙ্গ অন্ধকারে - বড় একা হচ্ছি। আমার অস্তিত্ব লোপ করে দিতে চাইছে ওরা। তুমি আমাকে জায়গা দাও। হাত বাড়াও। হাত বাড়াবে না? তোমরাতো এমন ছিলে না? তোমরা প্লেগ নিয়েছো তোমরা কলেরা নিয়েছো ফ্লু ও নিয়েছ আপন করে। শুধু করোনাকে ভয়? দূরে সরিয়ে রাখছ কেন? কাছে এসো, বের হও বাইরে। আমি অপেক্ষা করছি। এ কোন বিপ্লব করতে চাইছ তোমরা? কোন যুদ্ধ করবে রক্ত ছাড়া। মৃত্যু ছাড়া। পারবে না, পারবে না। তোমাদের মধ্যে ই বিশ্বাস ঘাতক আছে। মীরজাফরের মতো। সে দেবে আশ্রয় আমাকে। তারপর পুরো মানব জাতি আমার মুঠোর মধ্যে চলে আসবে। ধ্বংস হবে একটা একটা করে দেশ। পুরো পৃথিবীটাতে আমি একা রাজত্ব করব আমি। তারপর দেখবো এই গুমোর কোথায় পাও?

অপেক্ষায়

।।অপেক্ষায়।। দেবপ্রসাদ জানা স্তম্ভিত বিস্ময়ে আমি এতদিনে অবশেষে তোমাকে দেখলাম আমি। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরের ক্ষীন আলোকমালায়। অনুতাপে স্তব্ধ বেদনায় উত্তাল নদীর মত হৃদয়ের গহিন গহ্বরে। তোমার ছবি,তোমার ছায়া ঘন কুয়াশায়- তুমি উন্মাদিনীর মতো পথে পথে। অশান্ত জলরাশি সম। তোমার এ রূপ দেখিনি কোনদিন আজ দেখলাম। কেন এই রূপ? কেন এলে না তুমি? জানি আমি কাপুরুষ তোমাকে রক্ষা করতে পারিনি - কামদুনীর মাঠে। দিল্লীর বাসে। পার্কস্ট্রীটে। ওই দুরাচারীদের হাত থেকে আমি অসহায় আমি অপারগ। শতছিন্ন অবস্থায় আজো পড়ে আছো - ওখানেই আমার অপেক্ষায়?

কবরে

।।কবরে।। দেবপ্রসাদ জানা কবরের পাথরটা সরিয়ে দেখো আমি আজও বেঁচে আছি - আমি আজও বেঁচে আছি। কোন ভাইরাস আমাকে জড়িয়ে ধরতে পারে নি। ওরা আমাকে জোর করে কবর দিলো। তোমাকে দেখতেও দেয়নি। বলল করোনা দেখতে দেবো না। ওটা শুধু ছলনা। তুমি তাও বুঝলে না? সামান্য জ্বর কাশি, বুকের ভেতরটা আজো ধুকপুক করছে। তোমার জন্য। কোন অভিশাপ নেমে এলো বলতো? খুলে দেখো কবরের পাথরটা আমি আজো বেঁচে আছি। ওরা জোর করে আমাকে - বিশ্বাষ হচ্ছে না? আমি করোনায় মৃত নই বেদনায় মৃত। তোমাদের দেওয়া বেদনায় -

জিততে পারিনি

বিকেলের সূর্যটা আজ যেন বিষন্ন মনে চলে যাচ্ছে। যেন ডুবতে ডুবতে বলে গেল নাঃ আজো তোমাদের বিপদ মুক্ত করতে পারলাম না। ঠিক কালকের মত আজও একই বিপদের মুখে রেখে আমাকে চলে যেতে হচ্ছে। করোনা আজ ঘাতকের চরিত্রে তোমাদের দরজায় অপেক্ষা করছে। ওরা বলেছিল সাতাশ আঠাশ ডিগ্রী উত্তাপে করোনার মৃত্যু হবে। আমি সারাদিন ধরে ওই উত্তাপ টাকে ধরে রেখে ওর সাথে লড়াই করেছি। কিন্তু নাঃ পারিনি জিততে।

সময়

কবিতা-সময় কলমে-দেবপ্রসাদ জানা 25.3.2020 সময় এগিয়ে চলেছে নদীর মতো। দিনের পরে রাত, রাতের পরে দিন। আমরা বন্দী ঘরের কোনে - ওরা বলল আড়াই থেকে তিন ঘন্টা বাঁচে রাক্ষস টা। আবার বলল সাত থেকে আট ঘন্টা সেটা বেড়ে হলো বারো ঘন্টা। এখন আবার বাহাত্তর। রাক্ষসটার আয়ু ক্রমশ বাড়ছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা ধৈর্য্যহীন হচ্ছি। আজ নয় কাল আমরা বেরিয়ে পড়বই। আর রাক্ষসটাতো দরজায় আছে। সময় তাকে হার মানাতে পারেনি।

স্তব্ধতার দিকে

তুমি শব্দহীন .,................... কালো পর্দার পেছনে নতুন সংলাপ। তুমি শব্দহীন। ভালোবাসতে তো পারো নি আমার বুকের ওপর হাত রেখে। বলনি? কি করব বলো? আমি তোমার হতে পারছি না। শুধু ভালোবাসতে পারব অনেক। বলো নি তুমি, শুধু এড়িয়ে গেছো কথা আড়াল দিয়ে। প্রাচীর তৈরী করে দিয়েছ আমার তোমার ভালোবাসার মাঝখানে। যে সে প্রাচীর নয়? চীনের প্রাচীর। পাছে আমার ভালোবাসা তোমার প্রাচীর ডিঙিয়ে তোমাকে অবশ করে ফেলে। কেন গো? কেন করছ এমন? আমি তো চাই না তোমার হাত ধরতে। জোর করে তোমার ওষ্ঠ চুম্বন করতে। সুধু  তোমার ভেতরে আমার ভালোবাসা টা রোপন করতে চাই। যেটা এ জন্মে না হলেও পর জন্মে ঠিক বট বৃক্ষ হবে। === ক্ষনিকের ............. ক্ষনিকের জন্য এসেছিলে কি জানি কি ভেবে। বুঝিনি বিনা কারনে এমনভাবে মুহূর্তে চলে যাবে। কিছুতো কথা হলো না দেখাও হলো না মুখোমুখি। কথাও বেশি কিছু হয়নি প্রেম না হলেও হয়েছিলেম সুখী। কি জানি কি ভেবে বুকের ভেতরে ঝরনা। হোক না প্রয়োজনে প্রেম ভালোবাসা তাতে যায় না। স্বার্থে ছিল না দেওয়া নেওয়া হৃদয় কেঁপে ছিল তাই। মনের কোনায় আছাড় খেয়ে হৃদয় মরলো তাই। কি যে হলো জানি না কি ভেবে...

একটা চিঠি

"একটা চিঠি" কলমে-দেবপ্রসাদ জানা 16.3.2020 স্নেহের গোপা অনেক দিন হলো তোকে ফোন করা হয়নি। তোর বাড়ি কত দূর হলো জানাও হয়নি। আসলে আমি না একদম বুড়িয়ে গেছি। তোকে যে ফোন করব সে রকম মানসিক অবস্থা বর্তমানে আমার আর নেই। তাই এই চিঠির আকারে এস এম এস। তুই হয়তো ভাবছিস জামাই বাবু ভয়ে ফোন করছে না। তা নয়, গত পাঁচ বছরে আমি না একেবারে কাঙাল হয়ে গেছি। এক তো বাড়ি তার ওপর একটা চিট ফান্ড আমাকে পুরো শেষ করে দিয়েছে। মাসে যা মাইনে পাই সব তোর বোনঝিদের লেখা পড়ায় খরচ হয়ে যায়। মাসের শেষের দিকে গোবিন্দর থেকে ধার করতে হয়। তোর বাড়ি করার জন্য যে কিছু সাহায্য করব তার ও সামর্থ্য নেই। ইচ্ছাপুরেও যেতে পারি না। লজ্জায়। একটা ছোট্ট মেয়ের ওপর গিয়ে খেতে খুব কষ্ট হয় জানিস  তো? ওই টুকু বাচ্চা বাস ট্রেন করে রোজগার করে আনবে আর আমি বড় হয়ে। ছিঃ লজ্জা লাগে। তাই যাওয়া হয়ে ওঠে না। তুই ভুল বুঝিস না ভাই। আমি আমার মধ্যেই মরে বসে আছি। ভালো থাকিস। অনেক কথা তোকে বলে ফেললাম। আসলে ব্যথাটা কাউকে বলতে না পারলে আমি হয়তো পাগল হয়ে যাব। তাই তোকে- ক্ষমা করিস। ইতি তোর জামাইবাবু।।

মাননীয়া করোনা

কবিতা-মাননীয়া করোনা কবি-দেবপ্রসাদ জানা 30.3.2020 মাননীয় করোনা মহাশয়া সমীপেষু। আজ আমরা সারা বিশ্বের সাধারণ রোগ সম্প্রদায় সমিতির পক্ষ থেকে একটা আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সমবেত হয়েছি। ওরা আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না। আমরা কেমন আছি এখন ! আপনার প্রকোপে আমাদের এই দৈন্যদশা। যাকে বলে ভাগ্য লিখন .... আমরা যে ভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিলাম, তাতে সর্বদা আমাদেরই সমালোচনা আমাদেরই গুনগান করত সকল শরীর। কখনো জ্বর কখনো কাশি কখনো ডায়রিয়া একটু বেশী। গলার খুসখুস মাঝে মাঝে মাথা ধরা সকাল সাঁঝে। কিন্তু আপনার প্রচন্ড প্রকোপে আমরা আজ অনাথের মতো তুচ্ছ। আপনারা যারা ধনী সম্প্রদায়ের মারনরোগ, যারা গ্রামকে গ্রাম দেশের পর দেশ ঘুরে আসেন অনায়াসে। যেমন ক্যানসার, টিবি,এডস্। এদের কথা বলছি না। বলছি আপনাদের মতো যোদ্ধা রোগ সম্প্রদায়। যারা গ্রাম,শহর,রাজ্য, দেশ একসঙ্গে ধ্বংস করে দিতে পারেন। কলেরা, প্লেগ,ফ্লু। কিন্তু আপনি? আমাদের ছদ্মবেশে আমাদের ঘরে দেশে এই যে শত শত মনুষ্য শরীর মেরে ফেলছেন। আপনার ভয়ে মনুষ্যকুল বাইরেই বের হচ্ছে না। সব দেশ ধীরে ধীরে মনুষ্য শুন্য হচ্ছে। আমরা কি করে বাঁচব? আমরা ক্ষুদ্র ...

বিরক্তি

।। বিরক্তি।। যে বিছানাটায় সারাদিনের পরিশ্রমটাকে দান করতাম। সেটা আজকাল কাঁটার মতো লাগছে। তাকে দেখলে হৃৎপিন্ডটা বেরিয়ে আসতে চাইছে। যে ঘরটা এক সময় স্বর্গ মনে হতো - সেটা হয়ে গেছে বিরক্তি আখড়া। হাতের ফোনটাও অসহ্য লাগছে কলমটাও যেন চলতে চাইছে না। লেখার বিষয় গুলো মাথার ওপর থেকে চলে যাচ্ছে। যে বউটা বাড়িতে সময়ে না এলে অশান্তি করতো ফোনের পর ফোন করত। ঘরে ঢুকলে হাতের কাছে জল ও চা এগিয়ে দিতো। সে এখন চিনতেই পারে না। চা জল চাইলেই - নিয়ে খেতে বলে। সকালের বাসনটাও মেজে দিলে ভালো হয়।

বুঝতেই পারবে না

কখনো মনে হয় তোমার বাড়ির গেট ধরে দাঁড়িয়ে থাকি অনেকক্ষন। কখনো তো নামবে ওপর থেকে - দেখতে পাবো তোমায়। কখনো ওপরের জানলার দিকে তাকিয়ে থাকি একবার অন্তত উঁকি দিতে পারো জানলা দিয়ে। কখনো মনে হয় হকার হয়ে হাঁক দি তোমার বাড়ির গেটে। প্রেম বিক্রি আছে গো নেবে নাকি? অনেক সস্তা দামে দেবো। কখনো মনে হয় একটা কাক হয়ে যাই রোজ তোমার রান্না ঘরের জানালায় বসি। তুমি ভাববে খেতে এসেছে চুরি করে। আমাকে তাড়াতে গেলেই তোমায় দেখে নেবো। তুমি বুঝতেই পারবে না।

ধন্যবাদ বন্ধু

বন্ধু কবি সৌমেন চৌধুরীর উদ্দেশ্যে ।। ধন্যবাদ বন্ধু।। সমস্ত স্তব্ধতার শব্দ ভেঙ্গে আজ লাইভে এলে- ফেসবুক লাইভে। বোধশুন্য শরীরটাকে বন্দীশালা থেকে মুক্ত করে প্রকাশ্য রাজ পথে। তুমি চির স্মরণীয় থাকবে আমার হৃদয়ে। পড়ে থাকা নুড়িপাথর কে তুলে নিজ হৃদয় মন্দিরে দেবতার আসন দিলে। ধন্যবাদ বন্ধু।। ফুলের মত পবিত্র মন তোমার সৌমেনদা। কবি সৌমেন চৌধুরী। তোমার পরিছন্ন সমগ্রতা তোমার সাবলীল কন্ঠে পরিপূর্ন। তোমার মুল্য শুধু তুমিই। তুমি সুন্দর। অবিনশ্বর তোমার ধ্বনি। প্রজন্মকে প্রজন্ম তোমার আবেশে সিক্ত হোক মুক্ত হোক স্তব্ধতা। ===

প্রথম

প্রথম - দেব প্রসাদ জানা প্রথম করা জন্ম গ্রহন প্রথম খাওয়া ভাত। প্রথম হাতে শ্লেট খাতা প্রথম পড়া পাঠ। প্রথম যাওয়া স্কুলেতে প্রথম খাওয়া মার প্রথম করা বন্ধুটি ভাই প্রথম জেতা হার। প্রথম বসা পরীক্ষাতে প্রথম প্রশ্ন পত্র। প্রথম হাসাকাঁদার পালা প্রথম ফলছত্র। প্রথম পড়া বোর্ডের হাতে প্রথম স্কুল শেষ। প্রথম আসা কলেজ পাড়ায় প্রথম গড়া ড্রেস। প্রথম হওয়া বান্ধবী টির প্রথম প্রেমের ছোঁয়া। প্রথম ধরা নেশা কিছু প্রথম খাওয়া ধোঁয়া। প্রথম পাওয়া নারীর পরশ প্রথম পাওয়া চুম্বন। প্রথম পাড়ায় লোকের গড়া মনে মতন গুঞ্জন। প্রথম পরা সোলার টুপি প্রথম ফুলের মালা। প্রথম হাসি নতুন করে প্রথম ভাসাই ভেলা। প্রথম পাওয়া অমৃত স্বাদ প্রথম প্রেমের রেশ। প্রথম হওয়া ফুলশয্যা প্রথম স্বপ্নের দেশ। প্রথম হলাম জামাইবাবু প্রথম পেলাম শালী। প্রথম করি যা খুসী তাই প্রথম পকেট খালি। প্রথম পেলাম নতুন গন্ধ প্রথম হলাম বাপ। প্রথম এবার স্বাধীন হলাম প্রথম ভুলের মাপ।

আজ খবরে

আজ খবরে তোমাকে দেখালো। তোমার হাতে হাত কড়া, কোমরে দড়ি। তোমার মুখটা ঢাকা। নিয়তির কি পরিহাস। তোমার হাতে হাতকড়া যতক্ষন  দেখা যায় ততক্ষন দেখি। তার মহাস্তব্ধতায় জেগে দেখি   আমার আঁখি আঁখির জলে গেছে ভেসে-- মনে হল আকাশ যেন একেবারে ভেঙ্গে পড়ল। শরীর টাকে বিছানায় বিছিয়ে দিয়ে নিঃশব্দে নিজের ভেতরে মরে যেতে থাকি। এই সেই তুমি - যাকে দেখে ভালোবাসতে শুধু একটা মুহূর্ত প্রয়োজন হয়েছিল। প্রনত রোদ্দুরে উত্তাপ দিয়েছি তোমার শরীরে। সেই তুমি আমার গলায় ধারালো ছুরিটা চালিয়ে দিলে। সেদিন বললে -ছুরিটা ধার দাও। মাছ মাংস কাটতে বড় অসুবিধা হচ্ছে। বিনা প্রতিবাদে তোমার আদেশ পালন করেছিলাম আমি। তবু তুমি কোন অপরাধে - কে সেই প্রচ্ছন্ন প্রেমিক তোমার? যে তোমার হাতেই আমার রক্ত মাখিয়ে দিলে। আমার কন্ঠ রোধ করতে কোন আততায়ীর কামার্ত নিঃশ্বাস পড়েছিল। তোমার গায়ে। আমাকে ঘুম পাড়িয়ে জেগেছিলে তুমি। ক্ষতবীক্ষত রক্তাক্ত দেহটা আমার ফ্রিজে বন্দী করে, আজ নিজেই বন্দী। একটু দেখবে প্রিয়া আমার বুকের ওপর পাথরটা সরিয়ে। দেখোতো আজো তোমার বেদনায় আমার হৃদয় হতে রক্ত পড়ে কিনা? যদিও হৃদয়টাকেই তুমি বেশী করে টুকরো করে...

মনুষ্যত্ব?

মনুষ্যত্ব? মনুষ্যত্ব কাকে বলে? কত যে নাটক করলাম লোক শিক্ষার জন্য। কত যে কবিতা লিখলাম জ্ঞান প্রসারণের জন্য। কি হয়েছে মহামারীতে মানুষের পাশে দাঁড়াইনিতো। এই যে কত ভালো ভালো কথা ফেসবুকে আপলোড দিলাম। এই যে কত প্রেমের কবিতায় নিজের মৃত্যুকে সাধারণ দের জন্য উৎসর্গ করলাম। শুধু মহামারীর মৃত্যু মিছিলে যোগ দিতে চাই নি। কত প্রবন্ধে করোনার গুষ্টির ষষ্টি পুজো করে তবেই বিশ্রাম নিয়েছি। সরকারের ভাব মুর্তির যোগ বিয়োগ করলাম। এটা মনুষ্যত্ব নয়। তাছাড়াও - সোসাল মিডিয়ায় কত নিজের হাতে তৈরী খাবারের ছবি দিলাম। যারা রাস্তার পশুদের খাদ্য বিতরণ করছে কত লাইক করলাম। যত বিদ্যেবুদ্ধি বালা লোকজনদের, কবিতার আড়ালে যা নয় তাই বললাম। এটা মনুষ্যত্ব নয়? এর পর কি মনুষ্যত্ব দেখাতে গিয়ে নিজের জীবনটাই দিয়ে দেবো?

পাঁচশ টাকা

।। পাঁচশ টাকা।। লজ্জার কিছু নেই একটা পাঁচশ টাকার নোট না হলে আজকাল আর সংসার চলে না। দিনকাল খুব খারাপ। একে তো চৈত্র মাস তার ওপরে মহামারী। স্তব্ধ পথঘাট,স্তব্ধ দৈনন্দিন জীবন যাত্রা। প্রতিদিনের খাদ্যে পড়েছে টান। কেউ আগবাড়িয়ে এসে বলবে না, এই নিন পাঁচশ টাকা - মানুষের আয়ু যে কখন কি কে বলতে পারে? বিস্ময় ! এখন আর সেই স্টেজ নেই শুধু গ্রীনরুম। মেকাপ করে বসে থাকো পর্দা যখন উঠবে, তখন শো। লাল নীল হলুদ আলোর অপেক্ষা। মৃতের স্তুপে শুধু আগুন দেওয়া কাজ। ও ভাই তোমাদের লোক লাগবে? শ্মশানে কি অনেক লোক? একটা পাঁচশ টাকা খুব দরকার। একদিনে তোমাদের কত দেয় লাস গুলো পোড়াতে? পাঁচশ টাকা দেয়? নাকি বেশী। অ্যাপলিকেশন করতে হয় নাকি শ্মশানের চাকরিতে? নাকি সুপারিশ লাগে? বলো না কি করতে হবে? ঘুষ নিশ্চয়ই দিতে হয় না। একটা পাঁচশ টাকা রোজ চাই যে। বউ বলেছিল -ছিঃ ছিঃ এত নিচে নামবে তুমি? মড়া পোড়াবে। কি করব বলো? এখন ঐ কারখানাতেই উৎপাদন হচ্ছে। বাকি সব বন্ধ।।

দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর

একবার এক গ্রামের ব্যক্তি রাগে রাগে করল উক্তি। আমার ছেলে টি বড় চিনি খায় বিদ্যাসাগরের ধরল পায়। সে যেন আর চিনি না খায়- বিদ্যাসাগর মিষ্টি হেসে করবে বারন কালকে এসে। কালকে এনো সাথে করে না আসলে এনো ধরে। এনো কিন্তু মনে করে - পরের দিন খুব সকালে লোকটি এলো সঙ্গে ছেলে। সাগর মশাই, এনেছি সাথে। বারন করুন দয়া করে নইলে বকুন কানটি ধরে। চিনি যেন আর দেখি না হাতে। বিদ্যাসাগর বলল হেসে আর খাবি না চিনি। চিনি খেলে ক্রিমি হবে এটা আমরা জানি। শুনে ছেলে গেল চলে আর খাবে না গেল বলে। লোকটি এবার বলল খুলে গতকালই দিতেন বলে। এই সামান্য কথা- বললেন সাগর আরে ধনা কাল বলাটা সহজ ছিল না। কাল পযর্ন্ত আমিও খেতাম চিনির ঢেলা মুখে নিতাম। বলাই হতো বৃথা- একটা দিন চিনি, না খেয়ে বারন করলাম আজকে পেয়ে। এমন ছিলেন বিদ্যাসাগর দয়া নিধি দয়ার সাগর।।

মৃত্যু ক্ষধা

একটা সর্বগ্রাসী মৃত্যু ক্ষুধা জীবনকে ক্রমশ গ্রাস করার চেষ্টা করছে মা। প্রথমে এক। একের পরে তিন। প্রতিদিন একের অধিক। শিশু ও বৃদ্ধ মুল নিশানা, তুমি বেরিও না মা। ঘর থেকে বেরিও না। বাবাকেও বেরতে দিও না। আমি মুদি দোকানে টাকা পাঠিয়েছি। ওরা তোমাকে চাল ডাল সব দেবে। এক সংক্রামক চক্র ঘুরছে ঘুর্ণাবর্তে - দিক থেকে দিগন্তে, বাতাসে একটা গম্ভীরতা। মৃত্যু গন্ধে বিভোর পৃথিবীর জন সমুদ্র। সেই গন্ধ যেন তোমার নাকে না যায়। বাবাকে বলো সাবধান। ওরা আসছে, মানুষ নামক পক্ষীরাজে চড়ে। একটু অসাবধানতা, ঝাঁপিয়ে পড়বে ঠিক বুকের ওপর। থেকো না মা, একটু ঘরের ভিতর। একমাস বড় জোর দুমাস। তোমাদের সব খাবারের টাকা মুদি দোকানে পাঠিয়েছি, ভেবো না আমি এখানে ভালো আছি বের হই না। একুশদিন পর আমি আসব। একুশ দিন পর - মা, আমি এসেছি মা আর কোনো ভয় নেই এই দেখো। কই তুমি কোথায়? বাবা কই? কি হোলো মা কথা বলছ না কেন? তোমাদের কে দোকান থেকে খাবার দেয় নি? আমি যে সব টাকা পাঠিয়েছিলাম মা। এতদিন অনাহারে - হা ভগবান এই ছিল শেষে।

ভালোবাসার জবা

।।ভালোবাসার জবা।। কলমে-দেবপ্রসাদ জানা 8.4.2020 তোমাকে যেন কোথায় দেখেছি সঞ্চিতা স্বপ্নে? না বোধ হয়। ও সেইদিন মাঠে - আবির মাখা দুটো গাল কপালে লাল সিঁদুর। চোখ দুটো বড় মায়াময় চোখে চোখ রাখলেই প্রেম। যেন হাত ছানি দিয়ে ডাকছে। শুধু আমাকে ডাকছে। আমার সব তোমার পায়ে বিলিয়ে দিতে আমি প্রস্তুত। তোমার ঠোঁট দুটো সামান্য খুলে রেখো। ভারি অদ্ভুত লাগে। মনে হয় এই বুঝি একটা চুম্বন জুটে গেল না চাইতেই। মাঠের ধারে তোমার ছায়া যেন ভালোবাসার জবা গাছ। ভাবছো জবা কেন? গোলাপ তো ছিল। তোমার আত্মরব আসে শুন্য আকাশ থেকে আমি দিগভ্রান্ত অস্তমিত সূর্য। ভেতরে ভেতরে ভারসাম্যহীন এক নিশ্চল পৃথিবীর বিলুপ্ত প্রানী আমি। তবুও তোমার আকাঙ্ক্ষায় রক্তের ভিতরে চেতনার শব্দ পেয়েছি। তুমি আমায় প্রেমের সুগন্ধি এনে দাও। অলৌকিক ঐন্দ্রজালিক মুগ্ধতায় আমাকে আপন করে নাও।

জানালার প্রেম

জানালার প্রেম কলমে -দেবপ্রসাদ জানা 9.4.2020 জানালার কাছে একটা আরাম কেদারা নিয়ে বসলাম। গরম পড়েছে বেশ। চটচটে শরীর। মনে হলো জানালাটা ডাকছে আমাকে। জীবনের সফলতার সিঁড়িটা বেয়ে উঠতে উঠতে, কখন যে পঞ্চাশ পেরিয়েছি। বুঝতেও পারিনি। জানালাটাকে দেখিনিও ভালো করে কোনো দিন। আজ মনে হলো জানালাটা বোধ রাগ করেছে। হালকা বাতাস আসছে। পর্দা টাকে এক পাশে সরিয়ে দিয়ে হালকা বাতাসের আদর খেতে চাইছি। আরো একটু এগিয়ে গেলাম। জানালা কথা বলে। কত লোক এই জানালার পাস দিয়ে যায় রোজ। একবার অন্ততপক্ষে উকি দিয়ে যায় ঠিকই। জানালা কত কথা বলে। পাশের বাড়ির বৌদির। অমল ও দই ওয়ালার কষ্ট। না হওয়া প্রেমের গল্প। এ বাড়ির জানালা ও বাড়ির জানালার সঙ্গে ভারি দোস্তি। ভোরের রোদ। বিকালের কনে দেখা সোনালী আলো। এক ফালি রুপালী জোছনা। উন্মুক্ত বাতাস। আর বুকে ধরা শাশ্বত রাত। নীরব যন্ত্রনা। প্রথম বরষার স্নেহ মাখা প্রশান্তির হালকা ছেটা। যন্ত্রনার আবেগ মাখা দেওয়া নেওয়া। আর জানালার ওপারে মাড়িয়ে যাওয়া ঘাষের বোবা কান্না। জানালা কথা বলে বিরহের। লুকিয়ে আনা লাল গোলাপের মৃত্যু। জানালার পিঠ বেয়ে আকাশের নিচে নিঃশব্দ পতন। বিশ্বাস, প্রেম ভ...

কলম সৈনিক

।।কলম সৈনিক।। কলমে-দেবপ্রসাদ জানা 9.4.2020 কবি কলম ধরেছো? অসি ছেড়ে কলম ধরেছো। ভালো। একটা কথা জেনে রেখো এ লড়াই মরে থেকে বাঁচার লড়াই। তুমি মৃত সৈনিক। অসি যুদ্ধ থেকে পালিয়েছো মানে মরে গেছ। এখানে যুদ্ধক্ষেত্র সাদা পাতা। ভূল লিখে ফেলেছ কি সর্বনাশ। মুছে ফেলতে পারবে না। ভূল বার্তা যাবে। প্রিয়জন পর হবে। প্রেমের কবিতা লিখবে? বউ সন্ধেহ করবে। তুমি তো জীবনানন্দ নও যে তোমার বনলতা থাকবে। আর সুনীলবাবুও না যে নীরার গল্প করবে। তুমি সাধারণ কবি। অসাধারণ হতে লড়াই চাই। শারীরিক, মানসিক মৌখিক। তোমার বলার ভঙ্গি হবে কঠিন। মন হবে সরল। লেখা হবে সাবলীল। চক্ষু হবে নীল। লাল নয় - আকাশের মতো হবে চোখ।

ঘুমাতে দাও

পাশের পাশ বালিশটা যদি তুমি হতে সঞ্চিতা তার কভারটা যদি তোমার নাইটি হতো। নাইটিটা যদি একটু উঠে যেত, আসতে করে, তোমায় না জাগিয়ে নামিয়ে দিতাম। হাতের কলমটা যদি তোমার আঙুল হতো চাপ দিয়ে আদর করার ইশারা করতাম। তুমি বিরক্ত হয়ে বলতে ঘুমাতে দাও সকালে উঠতে হয় আমায়, তোমার মতো রাত জেগে কলম চালিয়ে দিন কাটে না। তাকে সংসারের কাজ করতে হয় সকাল সকাল।।

অন্ধকারের ক্ষুধা

।। অন্ধকারে ক্ষুধা।। দেবপ্রসাদ জানা 10.4.2020 আলোর শ্বাসরূদ্ধ করে অন্ধকার পথ করে নিচ্ছে প্রতিদিন। আর কতদিন? আর কতদিন এই ভাবে জীবনের আশায় জীবন দিতে হবে? ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে ক্ষুধা। মৃত্যু কে বেছে নেওয়া ছাড়া আর পথ নেই কোনো। দিন আনা দিন খানা লোকটা আজ দিশাহারা। ছয়ছটা পেট যখন ক্ষুধায় ডাকে তখন মনে হয় আকাশের চাঁদটা - একটা অল্প সেঁকা জল রুটি। কিন্তু কই আকাশের উনান থেকে তো পড়ে না অর্ধ সেঁকা জলরুটিটা। ইট ভাটা বন্ধ। বাবুদের জানালায় অপেক্ষায় আছি যদিই ফেলে দেওয়া অতিরিক্ত একটা পেট - যদি হাতে আসে,ছয় জনে ভাগ করে খাই। ছোট্ট ঘরটার কোনায় কোনায় ক্ষুধারা কাঁদে। আর কতদিন ইট পাথরের দেশে পাষান হয়ে থাকবে জীবন্ত ক্ষুধারা। মৃত্যু ভয়ে মৃত্যু বরণ, এর নাম জীবন? একটা মৃত্যু পথে অনেক মৃত্যু ঘরে। চেনা, অচেনা,  অর্ধচেনা কে কতটা দেবে? ছয়ছটা ক্ষুধার তিনটে ধাপ - সকাল, দুপুর, রাত। অন্ধকার এসেছিল মৃত্যু সঙ্গে করে আলোর পথটাকে আড়াল করে।।

বিরক্ত

কানের দুই পাশের অবাধ্য চুল গুলোর মতো তোমাকে বিরক্ত করতে ভারি ভালো লাগে। বিরতিহীন অবাধ্যতা আইন অমান্য আন্দোলনের মত। কিছুক্ষন তাড়া খাও। দশ মিনিটির কারা বন্দী - আবার অবাধ্যতা। আবার বিরক্ত করা। কী কঠিন অসুখ আমার। পুরাতনী টপ্পা গানে যেমন না শুনে বাঃ বাঃ করি। অবুজ মন তোমার না চাওয়াকে লজ্জা ভেবে - হামলে পড়ি আকাঙ্ক্ষায়। খোপার আলগা হয়ে যাওয়া এক গোছা চুল। তোমার কানের পাশে অনবরত সুড়সুড়ি দিয়ে বিরক্ত করে যেমন আমার ও তোমাকে কথার ফাঁকে ফেলে বিরক্ত করতে ভালো লাগে।

একদিন

।। একদিন।। কলমে - দেব প্রসাদ জানা 10.4.2020 তোমার দেওয়া চায়ের কাপে একটা চুমুক দিলাম সঞ্চিতা। তোমার জোৎস্নাময় হাসি আর মেরি বিস্কুটের সাথে। তোমার ভালোবাসার নীল চোখে - আমার নষ্ট হৃদয় দৃষ্টি হানে। আমি চুম্বনের মতো - চায়ের কাপের ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে চুমুক দি। ইচ্ছের দুরন্ত টগবগে হৃদয় তোমাকে বোধের আর্তিতে জাগাতে চেষ্টা করে। তোমার হাতে সাজানো কাপের ঠোঁটে লিপষ্টিক। যাঃ কাপের ঠোঁটের লিপস্টিকটা বোধ হয় আমার ঠোঁটে লেগে গেল। ধান্দাবাজ লজ্জাহীন ঠোঁট, তোমার কাপের ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলে- আঃ তোমার ঠোঁটের গন্ধ পেলাম। চুমু বলছে -উড়ে যাই কাপের ঠোঁট থেকে- ঠোঁট বলে - না যেও না। কোন না কোনদিন ওই কাপই চুমুক দেবে সঞ্চিতা একদিন না একদিন।।

ইচ্ছে করে

বড় ইচ্ছে করে তোমার প্রেমিক হতে। হৃদয় ভাঙ্গা প্রেমের আঘাত  হতে। তোমার বইয়ের পাতায় লুকোনো ছবি হতে। তোমার ফোনের কল লিষ্টে প্রথম হতে। তোমার  বইয়ের পৃষ্টায় শুকনো গোলাপ হতে। বড় ইচ্ছে করে। হাত ধরে এক সাথে দুপা হেঁটে যেতে। হাতে হাত রেখে সিনেমা হলে অন্ধকারে বসে থাকতে। গায়ে গা ঠেকিয়ে উষ্ণতাকে হজম করতে। বড় ইচ্ছে করে। তোমার কপালের লাল সিঁদুর হতে। কিন্তু ভয় হয় সে যদি অস্বীকার করো। যদি অপমান করো । যদি আঘাত লাগে মনে। যদি শুন্য করে বুক, চলে যাও ছেড়ে।  যদি রাস্তায় ধরে মারধোর করো তোমাকে দেখে আমার ভালো লাগতেই পারে। তোমাকে বলাটা আমার অপরাধ হবে? প্রেম নিবেদন করতে না পারলেও তোমার প্রেম চাওয়ার মন বেঁধেছি আজ।

একটা পুরো প্রেমের কবিতা

একটা পুরো প্রেমের কবিতা - দেব প্রসাদ জানা এক খানা পুরো প্রেমের কবিতা তুমি। না পুরো এক খানা প্রেমের কবিতা বই। তুমি দিন তুমি রাত্রি। তুমি জোছনার স্বপ্ন না তুমি জোছনার সই। একখানা পুরো প্রেম তুমি। তুমি গোলাপের পাপড়ি। তুমি চাঁদের নির্মল জোছনা। তুমি সুনীল গাঙ্গুলী নীরা তুমি জীবনানন্দের বনলতা হ্যাঁ একখানা পুরো প্রেমের কবিতা। চার হাজার বছর বদ্ধ গুহায় থাকলেও তুমি চির নতুন।। বসন্ত তোমার শরীর জড়িয়ে থাকে। চৈত্র তোমাকে আদর করে রাখে। তুমি মমতাজ বেগমের আত্মা। পুরো একটা তাজমহল। তুমি কবির আকাশ। বরষার বাতাস। তুমি বৃষ্টির পরের মাঠ। তুমি ঝরা ফুলের কান্না  তুমি তেপান্তরের মাঠ। নদী বরষার। তুমি আগুনে পোড়া সোনার গহনা। তুমি সঞ্চিতা, তুমি কবির বুকের আশা। তুমি শুকনো নদীর বান। তুমি ভাটিয়ালি সুরে গান। তুমি সহস্র কবিতার হরফে লেখা কান্না ভেজা আঁচল। তুমি প্রেম।

মৃত্যুর স্রোতে

।। মৃত্যুর স্রোতে।। দেবপ্রসাদ জানা 12.4.2020 ঝরে পড়া পালকের ও প্রতিশব্দ শোনা যাচ্ছে আজকের বিশ্বে। অন্ধকারে আলো ঢুকে পড়ার শব্দ তাও কর্ণ গোচর হচ্ছে। কই সেই কোলাহল কই সেই জাতি বর্ণ নির্বিশেষে লড়াই ফুরিয়ে আসছে আয়ু। আশ্চর্য হিম অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে গোটা পৃথিবী। নীল নীল আকাশ ফ্যাকাশে। মেঘবালিকার কানে কানে পরকীয়ার কথা বলে না। মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ ভূলে ফুলের আড়ালে লুকিয়েছে । সুখের চাঁদ জোছনা মেখে পাথর। গাছের আড়ালে নীরব নিশ্চল। পার্থিব তামাশা টুকু বুঝে নিতে জীবন গেলো মৃত্যুর স্রোতে বেঁকে।

বাংলা হলেই চলে

।।বাংলা হলেই চলে।। কলমে-দেবপ্রসাদ জানা সরকার মশাই আমাদের একটু দেখুন আমাদের যে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। কতদিন তো হয়ে গেল। আচ্ছা কি করে চলছে বলুনতো আপনার। কতদিনের মুনাফার ক্ষতি আপনি করলেন বলুনতো। কি করে চলবে আপনার গামলাদের। কি করে ভরবে তাদের চৌবাচ্চা। সবতো ঘরের কোনে আঁচলের তলায় নাকে মুখে চাপা দিয়ে সোসাল মিডিয়ায় ডুব মারছে। সে গামলা যে শুন্য হয়ে গেল। নাকি হাত পাতা ভিক্ষের চাল তাদের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছো সরকার মশাই। সে আপনি যা হয় করুন। তাতে আমাদের কিচ্ছু এসে যায় না। আমরা দিন মজুর মাতালের দল। ঐ একটু কারন সুধাই আমাদের বল। স্কচ্ নয় হুইস্কি নয় আমাদের বাংলা হলেই চলে। কি করব বলো স্বদেশ আমার দায়। আমরা দেশকে ভালোবাসি। দেশের আমদানি আমাদের আমদানি। স্বদেশ গঠনে আমরা সেই বৈদিক যুগ থেকে লড়াই করে চলেছি। এই দুঃসময় দেখব না? দেখো সরকার মশাই আমরা বড় চিন্তায় আছি।

ধৈর্য্য

।। ধৈয্য।। কলমে -দেবপ্রসাদ জানা তোমরা ধৈর্য্য হারাচ্ছো না তো। দেখো বিদ্রোহ করে বসবে না যেন। ঘরের বাইরে এসে বিদ্রোহ দেখালে তোমার বদলে ওরা স্বাধীনতা পেয়ে যাবে জেনো। এ লড়াই তোমার  লড়াই সমগ্র মানবজাতিকে করোনার শাসন থেকে মুক্তি দেওয়ার লড়াই। এই সময়টা বুকে গুলি খাবার জন্য নয়। আপনি শহীদ হলে আপনার সমাধীর ওপর কেউ স্লোগান দেবে না। কেউ আপনার মূর্তি বসিয়ে ফুল মালা দেবে না। এক মুহূর্তের উল্লাস, নিশ্চিহ্ন করতে পারে মানবজাতির অত্যাধুনিক গোটা শহর। কপালের ঘামটা সুড়ূৎ করে হড়কে নেমে এল তো। এ যুদ্ধে অস্ত্র লাগবে না, রক্তারক্তি হবে না জিততে হলে শুধু ধৈয্য চাই মনে। প্রতিদিন আমি আমার সাথেই লড়াই করব। নিজেকে পোড়াব নিজের আগুনে। এ লড়াই ধৈয্যের লড়াই শাসনকর্তা করোনা সে ধৈয্যহীনদের ছাড়ে না। এ নিম্নচাপ নিরীহ নয়,এ সঙ্কট দেখাছে ভয়।।

চিঠি

শিরোনাম : চিঠি কলমে : দেবপ্রসাদ জানা তারিখ : ১৫/০৪/২০২০ বয়স বেড়েছে অনেক বয়সের বাড়াবাড়ি এখন কি আর মানায় সোহাগ আড়ি। শিকেয় তুলেছি লেখালিখি শুধু মোবাইলের ডাকাডাকি তাকিয়ে আছি জীবনের রাস্তায় পাছে তেনার চিঠি এসে ফিরে যায়।

নষ্টরাত

( কখখক কখখক গঘগঘগঘ  অষ্টক ষষ্টক পেত্রার্কীয় রীতিতে ) ।। নষ্ট রাত।। এই চকচকে রোদ প্রচন্ড গরম। তোমার চামড়ায় ট্যান পড়বে সোনা। তাম্রবর্ণ হবে তোমার ত্বক ভুলো না। তোমার সৌন্দর্য ক্ষুন্ন হবে যে বেদম।। তারপর যদি বৃষ্টি নামে অবিরাম। বাতাস যদি রুষ্ট হয় মোরে বোলোনা। আকাশ যদি শিলা ছোঁড়ে হবে বেদনা। বেরিও না ছাতা মাথে বলে দিলাম।। সেই যে বারো বছর আগে একদিন। সে এক শিউলিগন্ধী রাতে, জোছনায়। স্নান করা আঁধার নিশায় প্রতিদিন। নগ্ন পরশে গোপনতম পরিখায়। সুখের নষ্ট রাত হইল যে মলিন। তব অবদমনের অবসন্নতায়।।

ঘুমিয়ে পড়া স্মৃতি

।। ঘুমিয়ে পড়া স্মৃতি।। বুকের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়া তোমার স্মৃতি গুলো আবার জেগে উঠেছে চিত্রলেখা। আজ তোমায় ফেসবুকের পাতায় যেন জীবন্ত দেখলাম। সেই মুখ, সেই হাসি, সেই চপলতা তুমি আমাকে ব্লক করেছো। ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ওয়াটস্ অ্যাপেও জানি না কেন? ভয় ! কিসের ভয়? আমিতো তোমার কোনো ক্ষতি করিনি। তোমাকে দেখতে চেয়েছি শুধু। তোমার সেই লাল শাড়িতে স্কুলে। তোমার সেই ছাপা শাড়ির নানান ফুলে। তোমার চলার সেই অসাধারন ভঙ্গি। ঠিক যেন কলসি কাখে শকুন্তলা। তোমার সোঁদামাটি নাভি জুড়ে এক সোহাগী স্থাপত্য। তোমার প্রতিটি মিথুন মুদ্রার সোহাগ জ্যামিতি চুপি চুপি। তোমার নগ্ন স্পর্শে আমার মৃত কোষ গুলো জীবিত হচ্ছে চিত্রলেখা। আমার নীল পালক তোমার শিউলিবনে অবৈধ ছবির নীলাভ শীৎকার শুনতে চায় চিত্রলেখা। আশ্চর্য হিম অন্ধকারে তোমার চপল ইসারায় আমার হৃদয় কুটিরে - আলোড়ন জাগায় চিত্রলেখা এখনো। ।। ঘুমিয়ে পড়া স্মৃতি।। কলমে-দেবপ্রসাদ জানা 7.4.2020 বুকের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়া তোমার স্মৃতি গুলো আবার জেগে উঠেছে চিত্রলেখা। আজ তোমায় ফেসবুকের পাতায় যেন জীবন্ত দেখলাম। সেই মুখ, সেই হাসি, সেই চপলতা তুমি আমাকে ব্লক করেছো। ফেস...

ক্ষনিকের

ক্ষনিকের জন্য এসেছিলে কি জানি কি ভেবে। বুঝিনি বিনা কারনে এমনভাবে মুহূর্তে চলে যাবে। কিছুতো কথা হলো না দেখাও হলো না মুখোমুখি। কথাও বেশি কিছু হয়নি, প্রেম না হলেও হয়েছি সুখী। কি জানি কি ভেবে বুকের ভেতরে ঝরনা। হোক না প্রয়োজনে প্রেম, তাতে কিছু যায় না। স্বার্থে ছিল না দেওয়া নেওয়া হৃদয় কেঁপে ছিল তাই। মনের কোনায় আছাড় খেয়ে হৃদয় মরলো তাই। কি যে হলো জানি না কি ভেবে এলে এবে। করে গেলে ছলনা। তাই আজ বুক ভরে অশ্রু আসে আসে এক বেদনা।

পূর্বাভাস

।।পূর্বাভাস।। কলমে-দেবপ্রসাদ জানা চুড়ান্ত মৃত্যু মিছিলের ভেতরেই ফুরিয়ে আসতে থাকে ছুটির খেলা। মৃত্যু কি ভীষন বিস্ময়কর। নিশ্ছিদ্র অন্ধকারেও পার হয় জীবনের সব চাওয়া পাওয়া। সর্বনাশের দোহাই টেনে যতিচিহ্ন মাখা মৃত্যু শোক। আশ্চর্য এক বিষাদ প্রদাহে, অপেক্ষা প্রহর গোনার। মৃত্যু ও বিষন্নতাকে আলতো ছুঁয়ে জ্বলে উঠুক নয়টা ন মিনিট। হয়তো ন তারিখ হলেই ভালো হতো। জীবন্ত হয়ে উঠুক না জ্বলতে পারা মোমের বাতি গুলো। স্বর্গদ্বারের চাবিটা হাতে নিয়েই তলিয়ে যেতে থাকি এক বিস্তৃত অন্ধকারে। মৃত্যুর পূর্বাভাসে।

নব যৌবন

।। নব যৌবন।। কলমে- দেবপ্রসাদ জানা রাতের খাওয়ার পর আধ ঘন্টা তোমার সঙ্গে অন্ধকার ছাদে - পাশের নারকেল গাছের পাতায় খস খস ধ্বনি। পাখা ঝাপ্টানো শব্দ আসছে বোধ করি কাকের বাসা থেকে। কাদের যেন পাম্পে জল তোলার অদ্ভুত শব্দ। নিঃস্তব্ধতায় বাধা দিচ্ছে। একটা কোকিল ডাকছে বার বার। আর জুঁই ফুলের গন্ধ। যদিও বসন্ত চলে গেছে কয়েকদিন হলো। হোলির রঙ মাখা শেষ হলো, আর তিনি এসে গেলেন স্বপ্ন ভেঙ্গে দিতে। তোমার হাতের সঙ্গে হাতটার অনিচ্ছাকৃত স্পর্শে বুকটা কেঁপে উঠেছিল একবার। তবু যেন আজ বড় ইচ্ছে করল তোমার হাতটা ধরি। বৌভাতের সেই রাতটায় চলে যাই এই পঞ্চাশেও। আজকের দিনটাতেই বোধ হয় ফুল সজ্জা ছিল। তোমার চন্দন মাখা কপাল, আর নতুন শাড়ি তোমাকে মোহময় করে তুলেছিল সেদিন। একটা মিষ্টি গন্ধ যেন তোমাকে জড়িয়ে আছে এখনো। তোমার সিঁথেয় লাল সিঁদুরে ভরা। যদিও এখন আর দেখাও যায় না। শরীর ছুঁয়ে যায় মনের অজান্তেই। কিসের প্রত্যাশায় এই অন্ধকারে - জানি না। তবুও হারিয়ে যাচ্ছি স্বপ্নের ঘোরে। দৈহিক বার্ধক্যকে কলা দেখিয়ে নব যৌবন পাচ্ছে মন এই পঞ্চাশেও।

প্রাচীরের দিকে

শিউলি ফুলের গন্ধ আর নেই। পলাশ ফুলের রঙ ও যেতে বসেছে। আকাশের রামধনুটাও লুকিয়ে গেছে। বসন্তের রঙ যেন হারিয়ে ফেলেছি কোন অজানা শহরে। বৃষ্টি নামে নি এখনো। কালবৈশাখী ভয় পাচ্ছে। বাতাসের গায়ে উত্তাপের আনাগোনা। নিশ্বাস নিঃশব্দে বন্ধ হয়ে আসছে। বড় ভয় পাচ্ছি। পৃথিবীর বুক থেকে সবুজ চুরি হয়ে গেছে। দাবানলে পুড়েছে পৃথিবীর ফুসফুস। এবার ঐ পোড়া ফুসফুসে মহামারী। প্রেমিকের হৃদয়ে প্রেম ডূব মেরেছে, আর ওঠেনি। ছাদের ঘরে একা একা- লকডাউনে শিশু মনটা কাঁদছে। কবিতায় মন বসছে না কল্পনার হালকা স্রোতে ভাসছে। হারিয়ে যাচ্ছে বোধ বুদ্ধি বোকারা গাধার মতো ছুটছে। ঐ উঁচু প্রাচীরের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব। বেদনার কথা বলছে।

থাক না

।। থাক না।। দেবপ্রসাদ জানা 16.4.2020 থাক না টিকা টিপ্পনী অবাঞ্ছিত কোলাহল এ পৃথিবীর গায়ে লেগেছে মৃত্যুর বাতাস। স্তরে স্তরে বিষিয়ে যাচ্ছে আতঙ্কের মহামারী। স্ট্যাটোস্পিয়ার,ট্রোপোস্পিয়ার,আয়নোষ্পিয়ার সর্বস্তরে মৃত্যুর আনাগোনা। দিক থেকে দিগন্তে বিষাক্ত মহামারীর হাতছানি। ঘাষের ডগার শিশিরে বিষ, বিষ লেগে ফুলে। পাতায় লেগেছে বিষ, বিষ রুগির ফলে। রোজের আহারে বিষ,বিষ নিজের হাতে। চোখের কাজলে বিষ, বিষ ঢেলেছে রাতে। অপ্রসঙ্গে জেগে থাকে পোস্টের অর্বাচীন বাতি খোঁজে আত্মহননের অনিবার্যতায়-দড়ি কলসী কাঠ। আর একবার নিজেকে হত্যা করার আগে ভাবোতো এরা কারা? সাত সমুদ্র তের পারে রাজকন্যার দেশে বিষ এনেছে নিয়তি করমর্দনের ছদ্মবেশে। অন্ধকারের ছায়াতে বিষ,বিষ দিনের আলোয়। বোধের আত্মায় বিশ্ব জুড়ে ঢেকে দিচ্ছে কালোয়। মৃত আজ রঙিন শাড়ির ভাঁজ। বিশ্ব জুড়ে করজোড়ের রাজ।

কবিতা হোক

।। কবিতা হোক।। দেবপ্রসাদ জানা 14.4.2020 কবিতা হবে চালাক চতুর চঞ্চল কবিতারা যেন ময়লা জামা কাপড় পরে একটা ভাঙ্গা ষ্টিল ফ্রেমের চশমা নাকে গুঁজে দাঁড়কাকের মতো দাঁড়িয়ে না থাকে। সব কবিতার দুঃখ আছে। তাবলে রাস্তা ঘাটে, পার্কে, বাগানে মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করবে? যেখানে লোক দেখবে দুখের গল্প বলবে। সে কবিতা কেউ নেবে? কবিতা হবে তেজি, রেসের ঘোড়ার মতো। কবিতা হবে অগ্নিকন্যা, ঝাঁসিরানীর মতো ঘোড়ায় চেপে টক টক টক টক করে ছুটবে। কবিতা কখনো খোঁপায় ফুল গুঁজবে কারণে অকারণে ভরন্ত বুকজোড়া দেখাবে। কবিতা ষোলোতে যেমন পঞ্চাশেও তেমন কবিতা শ্রাবনের একটানা বৃষ্টি শাওনঘটা। কবিতার গায়ে থাকবে শাড়ি ব্লাউজ পুঁতির মালা জলচুড়ি। কবিতা কখনো শান্ত নির্জন মাঠপ্রান্তরে অঢেল জ্যোৎস্না। কবিতা মহুয়ার আসর,মাদলের আদিবাসী নাচ। কবিতা চাঁদের আলোয় স্থপতির তৈরি করা আরন্যক যুবতী। কবিতা সন্ধ্যারতি। কবিতা চিলে কোঠার ঘরে ছাদের কার্নিশে করা পরকীয় যুবতী। কবিতার শব্দরা আগুনের কথা বলে। কবিতার শব্দরা প্রেমের কথা বলে। কবিতার শব্দরা মেঘ হয়ে ভাসে। কবিতার শব্দরা শুধু ভালোবাসে। কবিতার শব্দরা ট্রেনের কামরায়।...

উল্টোপাল্টা

।।উল্টোপাল্টা।। দেবপ্রসাদ জানা 11.4.2020 আমাকে একটা সকাল ধার দেবে ভাই। আমার সকালটা হারিয়ে গেছে। ক্যালেন্ডারের তারিখ গুলোও নেই কাছে। বার গুলো বোধ হয় রাস্তায় পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সোম থেকে শনি সব হারিয়েছি - শুধু রবিবার। রাস্তারা সব একা হাঁটতে হাঁটতে পরিশ্রমে ঘুমিয়ে পড়েছে। গাছ গুলো সব একা একা হাওয়া খাচ্ছে। শুধূ আঁকড়ে ধরে থাকা। আর কি? আমার অবাধ্য কলম বিনা দোষে গালাগাল খাচ্ছে প্রতিদিন। সোমবার কে মঙ্গলবার মঙ্গলবার কে শনিবার লিখছে। টিভির সিরিয়াল গুলোও আগে পিছে চলছে। সব উল্টোপাল্টা হয়ে গেছে। দাও না ভাই একটা সকাল - ভোরের সূর্যটা দেখি। পাখিদের বাসা ছেড়ে যাওয়া দেখি তাদের কলকাকলি শুনি, অন্ততপক্ষে একদিন।

শুভ নববর্ষ

।।শুভ নববর্ষ।। কলমে-দেবপ্রসাদ জানা 15.4.2020 যে বর্ষ জন্মায় নিজেই সময়ের বাঁক ধরে ডাল পালা ছড়ায় নিজেই। সে দুঃখ জানে না, সুখ মানে না,ভয় নেই অসুখও নেই। তার শরীর জুড়ে সহস্র সৃঙ্গার। সে সিঁথিতে সিঁদুর পরে। আলতা লাগায় পায়ে। জন্মেই সে যুবতী, শিশিরস্নাত ভোরবসন্তের ফুল। একটা বর্ষের আয়ু মাত্র একটি বছর। তাই তোর অত্যাশ্চর্য অনন্যতায় প্রজন্মকে প্রজন্ম পার করে দ্বিধাহীন। একটা বছরের প্রান তন্ময় নারীর মতো ভালোবেসে কত শত জীবন তুমি প্রতিভাত করো, আলোকিত করো। যতই জীবনের স্তব্ধতা আসুক পৃথিবী অসুস্থ হোক। কুয়াশা যদি পীড়িত করেও বার বার তুমি এসো নতুন রূপে প্রতিবার। শুভ নববর্ষ।।

সূর্যগঙ্গার ঘাটে

কবিতা-সূর্যগঙ্গার ঘাটে কলমে-দেবপ্রসাদ জানা 15.4.2020 রাত হতে এখনো বাকি, জোছনা মাখা চাঁদ এখনো হাসছে। সন্ধ্যার তারারা মেঘের আড়ালে উকি দিচ্ছে। "তুমি এসো একবার লেকের ধারে।" দুজনায় বসে দুদন্ড কথা বলে নেব একবার। লেকের পাড়ে ঘাষের ওপর। সূর্য গঙ্গার ঘাটে কিছুক্ষন। তোমার হৃদয়ে জ্যোৎস্না ভরে দিতে। একটু তোমাকে দেখব, একটু আদর করে কাছে টেনে নেব এইবুকে। তুমি বলো বন্ধুত্ব। চাঁদের সাথে জ্যোৎস্নারও বন্ধুত্ব ছিল। এখন প্রেম।  ভালোবাসা। সন্ধ্যা তারারা উকি মারছে জোছনার পর্দা ঠেলে। এক একবার মনে হচ্ছিল তোমাকে জড়িয়ে ধরি। আজ খোলা চুলে খুব সুন্দর লাগছে। সন্ধ্যা তারার আলোয়, রূপালী জোছনায়। তোমার কথা গুলো মনে পড়ছে আবার। বন্ধুত্ব তো?