Posts

Showing posts from April, 2025

রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে বিধবা জীবন ঘুচল প্রতিমা দেবীর, বিয়ে হল কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে...  (লেখা :- মহুয়া দাশগুপ্ত, বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত প্রবন্ধ।) প্রতিমা নামের মেয়েটির তখন এগারো বছর বয়স। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটো বোন বিনয়িনী দেবী এবং শেষেন্দ্রভূষণ চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা প্রতিমা। তাঁর বিয়ে হয় গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরেরর বোন কুমুদিনী দেবীর নাতি নীলানাথের সঙ্গে। তখন পিরালি ঘরে এমন কাছাকাছি সম্পর্কে বিয়ে হত। কিশোরী প্রতিমাও নিয়ম মেনে শ্বশুরবাড়ি গেলেন। কিন্তু ভাগ্যের বিড়ম্বনায় দিনকয়েকের মধ্যে গঙ্গায় সাঁতার কাটতে গিয়ে জলে ডুবে মৃত্যু হয় নীলানাথের। সুলক্ষণা মেয়েটি ‘অপয়া’ অপবাদ নিয়ে ফিরে আসেন পিতৃগৃহে। আর পাঁচটি বিধবা মেয়ের মতোই হয়তো তাঁর দিন কেটে যেত, কিন্তু এগিয়ে এলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রতিমা দেবীর জন্মের পর, ফুটফুটে মেয়েটিকে নিজের ছেলের বৌ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী। কিন্তু নিয়তি কাউকে ছাড়ে না। তাই অকালে চলে গেলেন মৃণালিনী দেবী। প্রতিমা দেবীর বিয়ের সময় এগিয়ে এল। মৃণালিনী দেবীর কথা মনে করে প্রতিমা দেবীর অভিভাবকদের তরফ থেকে রথীন্দ্রনাথ ঠা...

দাদাঠাকুর

আজকের দিনে তিনি পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন আজকের দিনে তিনি প্রয়াত হয়েছিলেন। অনেকেই বলেন শিরদাঁড়া সোজা বাঙালির তালিকায় দাদাঠাকুর চিরকাল থাকবেন। দৃপ্ত মানুষ, নিজের বিশ্বাসের প্রতি অটুট বিশ্বাস নিয়ে চিরকাল বেঁচে ছিলেন। যে বিয়েতে পাত্রপক্ষ বরপণ গ্রহণ করত সে বিয়েতে দাদাঠাকুর নিমন্ত্রণ পেলেও জলগ্রহণ করতেন না৷এই বিয়ের তিনি নাম দিয়েছিলেন 'বেটা বেচা বিয়ে'। ৬ আগস্ট ১৯৬১ তখন তাঁর বয়স আশী অতিক্রান্ত, সেদিন সকাল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত কাটিয়েছিলেন ঘনিষ্ট সাহিত্যিক,সম্পাদকের বাড়ি। বলেছিলেন এখনও আট -নয় মাইল হাঁটতে পারেন। চারিত্রিক দৃঢ়তার জন্য তিনি আজও বাঙালির শ্রদ্ধার পাত্র। এমন দৃঢ়তা আর জেদ বাঙালি চরিত্রে দুর্লভ। কঠোরতা ও কোমলতা দুদিকেই  দাদাঠাকুর ছিলেন চরমপন্থী। কখনও কারও অনুগ্ৰহ ভিক্ষা করেন নি,দারিদ্র্য তাঁকে পরাভূত করতে পারে নি,এ এক আশ্চর্য পৌরুষ। © ধ্রুবতারাদের খোঁজে   পুত্রবধূ করার জন্য দাদাঠাকুরের বিবাহযোগ্যা কন্যা কে  দেখতে এসেছেন এক ভদ্রলোক। তাঁর দাবিদাওয়া দেখে শরৎ পণ্ডিত স্তম্ভিত৷ ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করলেন 'মশাই ভাগা দেবেন'? বিস্ফোরিত নেত্রে পাত্রের পিতা দাদা ঠাকুরের ম...

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

😀 যমরাজ ও বাঙালী     ( শ্রদ্ধেয় সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়)  --- নেক্সট .......... কি হে চিত্রগুপ্ত, লাইনে হৈচৈ কেন ? --- আজ্ঞে, একজন আত্মহত্যা করে এসে বলছে স্বর্গে যাবে। তাকে কতবার বলেছি আত্মহত্যা মহাপাপ, সাত পুরুষ নরক বাস, শুনছে না। লঘুটঘুর মধ্যে পড়ে ? --- না হুজুর। বলছে স্বর্গে না যেতে দিলে আন্দোলন করবে। --- মাল টা কি বাঙালি ? --- কি করে বুঝলেন ? --- আমার কি কম অভিজ্ঞতা ? একমাত্র বাঙালি মরে গিয়েও এই কথাটা ভুলতে পারে না। ওকে ভেতরে আসতে বল। --- আসুন। নাম কি ? --- আজ্ঞে তপন ভট্টাচার্য। --- বাড়ি কোথায় ? --- মেদিনীপুর। --- বয়েস কত ? --- চল্লিশ স্যার। --- বউ বাচ্চা ? --- একটা বউ, দুটো বাচ্চা। --- কি করে মারা গেলে ? --- আজ্ঞে উত্তমকুমার এ গলা দিলাম। --- এ আবার কি হেঁয়ালি ? --- আজ্ঞে মেট্রো স্টেশন এর নাম। আমি ট্রেন এ গলা দিয়েছি। --- তোমার ওখানে লোকাল ট্রেন ছিল না? --- না স্যার, আজ আন্দোলনের জন্য বন্ধ ছিল। --- শিক্ষাগত যোগ্যতা কি? --- আজ্ঞে বি.এ পাস। --- এবার বল, মরলি কেন? --- আজ্ঞে স্যার, ধার দেনা থেকে বাঁচতে। পাওনাদাররা দিনরাত পেছনে ঘুরতো। --- তুই কাজ করতিস না? --- করতাম , টুক...

রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনধারা... মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবার চাই। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক হিমালয়প্রতিম ব্যক্তিত্ব। বাংলা সাহিত্য জগতের এক অমূল্য ধন। তিনি বাংলা সাহিত্যে এনে দিয়েছেন এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক বলে মনে করা হয়। কিন্তু আজ আমরা গুরুদেবের সাহিত্য নিয়ে আলোচনা না করে জানবো তাঁর জীবন ধারার বিষয়ে। স্কুলে অনীহা রবী ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছিলেন পিতামাতার চতুর্দশ সন্তান। স্কুলশিক্ষায় ছিল তাঁর অনাগ্রহ, তাই বাড়িতেই রাখা হয় গৃহশিক্ষক। খুব কম ঘুমাতেন রবীন্দ্রনাথের ঘুম ছিল খুব কম। তিনি খুব গভীর রাতে শুতেন আবার উঠে যেতেন প্রায় শেষ রাতে। সাধারণত তাঁর দিন শুরু হতো প্রভাত স্নান দিয়ে। ঠিক ভোর ৪টায় এক কাপ চা পান করতেন। ভোর ৪টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত একটানা লিখতেন। তারপর সকাল ৭টায় প্রাতরাশ সেরে আবার লেখা। লেখার ফাঁকে ফাঁকে চা বা কফি খেতে পছন্দ করতেন তিনি। বেলা ১১টা পর্যন্ত টানা লিখে আবার স্নানে যেতেন। এরপরই খেতে বসতেন। রবীন্দ্রনাথ দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমাতে বা বিশ্রাম নিতে তেমন পছন্দ করতেন না। ...

ভালোবাসা

ভালোবাসা  তোমার ভালোবাসার স্মৃতিসৌধে- ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, স্বপ্নপুরী ভেবে মহান প্রেমিক, ভালোবাসা একটি শিল্প,  একজন পুরুষ এই শিল্প বোঝে,  তোমার সৌধে রাখা ফুলের মধ্যে, কী প্রশান্তি, পরিতৃপ্ত সে ঘুম, ভালোবাসা গোবুরে পোকা। একজন নারী জীবনে জাদু তৈরি করতে পারে। ঘুম ভাঙে, আবার ঘুমিয়ে পড়ি, তার আদরে, একজন নারীর জন্য, ভালোবাসা  না অভিজ্ঞতা নয় - এটি একটি রূপান্তর।  ভালোবাসার  গভীর সমুদ্রের প্রস্ফুটিত হয়,  লাল গোলাপের ফুল। শতাব্দীর প্রেমান্ধকার যুক্ত জীবনে, সুন্দর সংস্করণে পরিণত হয় প্রেম। ভালোবাসার শিল্প আশীর্বাদ।  এটি অক্সিজেন যা তার আত্মাকে জীবিত রাখে, দেহ মরে যায়, বারবার,  উষ্ণতার উজ্জ্বল রঙে পৃথিবী দেখতে সাহায্য করে।  আমিও করেছি, সে এই ধরণের ভালোবাসা কামনা করে, কারণ সে দুর্বল নয়, বরং কারণ তাকে এটি অনুভব করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এমনভাবে ভালোবাসা পাওয়া তার জন্মগত অধিকার যা তার হৃদয়কে নাচিয়ে তোলে। জীবনে অন্তত একবার, প্রতিটি নারীর এই জাদু অনুভব করার যোগ্য - জানতে হবে যে বেহালার সুর কীভাবে ভালোবাসার ফিসফিসানির মতো লাগে, রঙ কীভাবে আবেগের মতো মিশ...

বাবুমশাই

বাবুমশাই,  দেবপ্রসাদ বাবুমশাই বাবুদের সবুজ সভায় যার। সবে করে জয়জয়াকার। উথলে ওঠে সাগর, মরু, পাহাড়, সমতল।  পথের ধারে তোমার ভারে তৃণটি চঞ্চল,  হঠাৎ যখন প্রাচীন গ্রামে,  নিঃশব্দে তোমার  নামে। বাবুমশাই- হালকা চটির পদতলে বে-বাক সম্বল। মনিষ্যি নয় মহামানব। মৃত্যুর আগে হয়েছি শব। মানুষ থেকে মোরা অনেক দূর,  আমরা 'মুনিস' ইতর ইঁদুর। বাবুমশাই- জন্ম হ'ল 'বন্ধা' ভগবানের চরণে  ছাগলছানার মত চরি ঘাসের-ডগা চেখে চেখে। গ্রাম-নগরীর রোশনাই উৎসব দেখে দেখে। মোণ্ডা মেঠাই, মাংস লুচি,  সরু চালের ভাত অরুচি। এসব দূর ভাবাও অপরাধ। বাবুমশাই- জোতদার জমিদারের ভোগে  জমিন বাড়ি ইমারৎ রোগে। আমরা শুধু মুনিস  বাঁশবাগানে খড়ো ঘরের ভাঙা চালের নীচে,  পরনে সেই নেংটি, সার্কিতে ক্ষুদ খাই বেছে।

রবীন্দ্রনাথ

আজ সকালে  জাহাজের ছাদের উপর রেলিঙ ধরিয়া দাঁড়াইয়াছিলাম ।  আকাশের পান্ডুর নীল ও সমুদ্রের নিবিড় নীলিমার মাঝখান দিয়া   পশ্চিম দিগন্ত হইতে মৃদুশীতল বাতাস আসিতেছিল ।  আমার ললাট মাধুর্যে অভিষিক্ত হইল ।  আমার মন বলিতে লাগিল,  "এই তো  তাঁহার প্রসাদসুধার প্রবাহ ।”           সকল সময়  মন এমন করিয়া বলে না ।  অনেক সময় বাহিরের সৌন্দর্যকে  আমরা বাহিরে দেখি —- তাহাতে চোখ জুড়ায়,  কিন্তু  তাহাকে অন্তরে গ্রহণ করি না ।  ঠিক যেন অমৃতফলকে আঘ্রাণ করি,  তাহার স্বাদ লই না ।           কিন্তু  সৌন্দর্য  যেদিন  অন্তররাত্মাকে প্রত্যক্ষ স্পর্শ করে  সেই দিন  তাহার মধ্য হইতে  অসীম একেবারে উদ্ভাসিত হইয়া উঠে ।  তখনি  সমস্ত মন  এক  মূহূর্তে গান গাহিয়া উঠে,  " নহে, নহে,  এ  শুধু বর্ণ নহে,  গন্ধ নহে —- এই  তো অমৃত,  এই  তাঁহার  বিশ্বব্যাপী প্রসাদের ধারা ।”         আকাশ ও সমুদ্রের মাঝখানে ...

প্রাসাদ

প্রাসাদ দেবপ্রসাদ জানা সে এক মস্ত বড়ো বাড়ি।  যেন রাজবাড়ি, প্রাসাদ। হয়তো আগে রঙ ছিল গাঢ় লাল।  দীর্ঘ রোদ-ঝড়-জলে সে রঙের চমক,  আজ বোঝা কঠিন।  সে এক বিশাল প্রাসাদ,  একা নিঃসঙ্গ নিঃশব্দে নির্লিপ্তভাবে - দিনের আলোয় ঘুটঘুটে অন্ধকারে- দাঁড়িয়ে নিঃশেষিত জৌলুস নিয়ে. আধো আলো, আধো অন্ধকারে মিশে,  হাঁ করে গিলতে আসছে।  উপচে পড়া গাছ।  একটা গাছের সঙ্গে আরেকটা গাছ জড়িয়ে।  হাত বের করে ছুঁতে চাইছে পরস্পরকে।  এ দেওয়াল ও দেওয়াল ফুঁড়ে আলিঙ্গন - জংলা গাছের দল।  রাত নেমে এসেছে দিনের আলোয়, ভাঙা-কপাট  অন্ধকার জানলা-  গা ছমছমে স্যাঁতস্যাঁতে বাতাস চৈত্র মাসের দুপুরে।  রোদ-পোড়া আকাশ, তেমনি পোড়া বাড়ি।  পোড়োবাড়ি।   শহরের হৈহৈ শব্দগুলোকে নিঃশব্দে গিলে খাচ্ছে। পেল্লায় লোহার গেট, আষ্টেপৃষ্ঠে আটকানো।  নকশাময় চক্র আঁকা, কারুকাজ। সিংহের মুখ। পোর্টিকো, গাড়িবারান্দা।  দুমড়ানো মুচড়ানো নহবতখানা।  অথচ কোনো ইতিহাসই নেই।   লজ্জায় ধুলোর ঘোমটা দিয়ে লাল পাথুরে ফলক।   

মনুষ্যত্ব

মনুষ্যত্ব? কাকে বলে? পৃথিবীর সেই এক অনন্ত জিজ্ঞাসা। মনুষ্যত্ব? কাকে বলে? স্পিচ দিই টোনহলে, লোকে আসে দলে দলে, শুনে পায় প্রীত। নাটক নোবেল কত, লিখিয়াছে শত শত, এ কি নয় মনুষ্যত্ব? নয় দেশহিত? ইংরেজি বাঙ্গালা ফেঁদে, পলিটিক্স লিখি কেঁদে, পদ্য লিখি নানা ছাঁদে, বেচি সস্তা দরে। অশিষ্টে অথবা শিষ্টে, গালি দিই আষ্টে পৃষ্ঠে, তবু বল দেশহিত কিছু নাহি করে? নিপাত যাউক দেশ! দেখি বসে ঘরে ॥  লোকে আসে দলে দলে, শুনে পায় প্রীত। নাটক নোবেল কত, লিখিয়াছে শত শত, এ কি নয় মনুষ্যত্ব? নয় দেশহিত? ইংরেজি বাঙ্গালা ফেঁদে, পলিটিক্স লিখি কেঁদে, পদ্য লিখি নানা ছাঁদে, বেচি সস্তা দরে। অশিষ্টে অথবা শিষ্টে, গালি দিই অষ্টে পৃষ্ঠে, তবু বল দেশহিত কিছু নাহি করে? নিপাত যাউক দেশ! দেখি বসে ঘরে ॥

রবীন্দ্রনাথ

রেণুকার মনের কথা কিন্তু পিতা রবীন্দ্রনাথ বুঝলেন না। তাঁর স্বাধীন মনের দাম দেননি তিনি। বরং একেবারেই প্রচলিত সমাজের বিধি অনুসরণ করেছেন সাধারণ আর পাঁচজন সামাজিক বিধি মেনে চলা বাবার মতো। স্ত্রী মৃণালিনীকে চিঠিতে লিখছেন, ‘রাণীর যেমন প্রকৃতি– বাপের বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেই ও শুধরে যাবে…।’ এ কোন রবীন্দ্রনাথ? সংবেদনশীল লেখক রবীন্দ্রনাথ কি? •••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••• মেয়ের বাবা হিসেবে কেমন ছিলেন রবীন্দ্রনাথ? যে রবীন্দ্রনাথ লেখেন, সেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পিতা রবীন্দ্রনাথকে মেলানো যায় না অনেক সময়। দু’জনে যেন দুই ভিন্নমুখের পথিক। দু’জন যেন একেবারেই বিপরীত মানুষ। লেখার ভাবের সঙ্গে ব্যক্তিজীবনের কাজের মিল নেই। রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিমন সংবেদী, নিভৃতচারী– নর-নারীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ইচ্ছাকে লেখায় খুবই গুরুত্ব দেন। এই মনই তো লিখেছিল ‘বন-ফুল’ নামের কাব্যোপন্যাস। তখন তাঁর কত আর বয়স নিতান্ত তরুণ কবি। সে বই প্রকাশিত হয়েছিল ‘গুপ্তপ্রেশ’ থেকে ১২৮৬ বঙ্গাব্দে। প্রকাশক মতিলাল মণ্ডল। বইয়ের ভেতরে লেখা ‘লেজ ষ্ট্রীট ক্যানিং লাইব্রেরী ও চিনাবাজার পদ্মচন্দ্র নাথের দোকানে প্রাপ্তব্য...

রবীন্দ্রনাথ

১৯৩৯ সাল। ‘তাসের দেশ’ পুনরাভিনয়ের প্রস্তুতি চলছে। রবীন্দ্রনাথ তখন ‘কোনার্ক’ বাড়িতে থাকেন। সারা দুপুর কয়েকটি গানে সুর দিয়ে, ভৃত্যকে পাঠালেন তাঁর এক ছাত্রের কাছে। ছাত্রটি তখন ছাত্রছাত্রীদের গান শেখাচ্ছিল ক্লাসে। ভৃত্যটিকে দিয়ে সে গুরুদেবকে বলে পাঠাল, “আমি ক্লাস শেষ করেই যাচ্ছি। একটু দেরি হবে।” গুরুদেবের কাছে ছাত্রটির যেতে প্রায় আধ ঘণ্টা দেরি হয়। গিয়ে সে দেখে, যে ঘরে বসে লিখতেন, সেখানেই লেখার টেবিলের উপরে গানের খাতা খুলে রেখে চুপ করে বসে আছেন রবীন্দ্রনাথ। মুখ গম্ভীর। কিছুই বলছেন না, তাকাচ্ছেনও না ছাত্রটির দিকে। কিছুক্ষণ পর গানের খাতাটি দিয়ে কবি তাঁকে পাশের মোড়াটিতে বসতে বললেন। বিরক্ত যে তিনি হয়েছেন সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু কারণ জিজ্ঞেস করতেও ছেলেটির সাহস হচ্ছে না। মোড়ায় বসে সে গুরুদেবের কাছ থেকে একটি কলম ও কয়েকটি কাগজ চেয়ে নিয়ে যখন নতুন গান ক’টি কপি করে নিচ্ছে, তখন কবি গম্ভীর কণ্ঠে অনুযোগ জানালেন, সারা দুপুর নতুন সুর দেওয়া গানগুলি মনে রাখার জন্য গেয়ে গেয়ে ক্লান্ত তিনি। ছেলেটিকে খবর দেওয়া সত্ত্বেও সে এল দেরি করে! ক্লাস থাকলেও কেন সে তা বন্ধ করে আসেনি— তাই গুরুদ...

রবীন্দ্রনাথ

১৯৩৯ সাল। ‘তাসের দেশ’ পুনরাভিনয়ের প্রস্তুতি চলছে। রবীন্দ্রনাথ তখন ‘কোনার্ক’ বাড়িতে থাকেন। সারা দুপুর কয়েকটি গানে সুর দিয়ে, ভৃত্যকে পাঠালেন তাঁর এক ছাত্রের কাছে। ছাত্রটি তখন ছাত্রছাত্রীদের গান শেখাচ্ছিল ক্লাসে। ভৃত্যটিকে দিয়ে সে গুরুদেবকে বলে পাঠাল, “আমি ক্লাস শেষ করেই যাচ্ছি। একটু দেরি হবে।” গুরুদেবের কাছে ছাত্রটির যেতে প্রায় আধ ঘণ্টা দেরি হয়। গিয়ে সে দেখে, যে ঘরে বসে লিখতেন, সেখানেই লেখার টেবিলের উপরে গানের খাতা খুলে রেখে চুপ করে বসে আছেন রবীন্দ্রনাথ। মুখ গম্ভীর। কিছুই বলছেন না, তাকাচ্ছেনও না ছাত্রটির দিকে। কিছুক্ষণ পর গানের খাতাটি দিয়ে কবি তাঁকে পাশের মোড়াটিতে বসতে বললেন। বিরক্ত যে তিনি হয়েছেন সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু কারণ জিজ্ঞেস করতেও ছেলেটির সাহস হচ্ছে না। মোড়ায় বসে সে গুরুদেবের কাছ থেকে একটি কলম ও কয়েকটি কাগজ চেয়ে নিয়ে যখন নতুন গান ক’টি কপি করে নিচ্ছে, তখন কবি গম্ভীর কণ্ঠে অনুযোগ জানালেন, সারা দুপুর নতুন সুর দেওয়া গানগুলি মনে রাখার জন্য গেয়ে গেয়ে ক্লান্ত তিনি। ছেলেটিকে খবর দেওয়া সত্ত্বেও সে এল দেরি করে! ক্লাস থাকলেও কেন সে তা বন্ধ করে আসেনি— তাই গুরুদ...

ঝড়

ঝড় দেবপ্রসাদ জানা ঝড় উঠেছে একটা  কাল বৈশাখীর - এলো মেলো বাতাসের উৎপাত  উড়িয়ে নিচ্ছে খড়কুটো এলোমেলো বাতাসে।  বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে বাজ পড়ছে বারবার। সবুজ সবুজ বৃক্ষেরা উপড়ে পড়ছে এবার। আর কতদিন মাথা উঁচু করে থাকবে? আকাঙ্ক্ষার শেষ চূড়ায় বসে কত হাসি হাসবে? ঝড়ের শেষে রাত হবে- রাতের শেষে যখন লাল হবে সূর্য, তখন অন্ধকার জরাজীর্ণ ঘরে আলো এসে পড়বে।  লাল লাল রক্তের বিনিময়ে স্বপ্ন ছোবলাবে মাটি। প্রতিটা ঘরে ঘরে জ্বলবে লাল লণ্ঠন। দূরে অনড় পাহাড় চমকে ওঠবে,  সমস্ত পৃথিবী ধুয়ে বৃষ্টি নামবে অঝোর বর্ষণে। তৃষ্ণার্ত মানুষ জতুগৃহ থেকে বেরুবার পথ খুঁজে পাবে। মেঘে ঝড়ে নিঃশ্বাসে স্পন্দনে,  প্রানের দর্পণে কাল রাত্রি কেটে যাবে। শ্বাপদ অন্ধকার কেটে যাবে। পোড়া ধ্বস্ত ঘরের আঙিনায় মুখ করে উঠবে  রক্তিম সূর্য, আর দেরি নেই। অপেক্ষা করো আর কিছুদিন,  ঝড় উঠেছে, সেই ঝড় মহাপ্রলয়ের। 

অশ্বত্থামা

"মহাভারতের প্রতিনায়কদের মধ্যে অন্যতম একজন অশ্বত্থামা। আর তাঁকে নিয়ে আলোচনা করতে বসলে ওনাকে কখনই লঘু চরিত্র বলে মনে হবে না আপনার।  তিনি মহাভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আচার্য গুরুর পুত্র। শ্রেষ্ঠতম মহাবীরদের একজন৷ বহু দৈবাস্ত্র ধারণ করতে সক্ষম, সদা স্পষ্টবাদী এবং যথেষ্ট প্রভাবশালী বলতে যা বোঝায়, এককথায় তিনি তাই। অশ্বত্থামার চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গেলে, সবার আগে আমাদের দ্রোণাচার্যকে নিয়েও কিছু কথা বোঝা প্রয়োজন।  একজন পুরুষের কাছে, যিনি পিতা হয়েছেন, তাঁর কাছে বোধহয় তাঁর সন্তানের থেকে প্রিয় আর কেউ নয়। আর কিছুই নয়। সেই কথা সেই দ্বাপরেও যেমন সত্য ছিলো, ত্রেতাতেও সত্যই ছিলো আর আজকের যুগে এসেও সেটা তেমনই সত্য রয়ে গিয়েছে। কিন্তু, মহাভারতের মহান কবি যদি সেই এক চিরাচরিত মাত্রাতেই তাঁর রচনাকে নিয়ে এগোবেন, তাহলে আর তাঁর কবিত্বের মহত্ব থাকলো কোথায়!?  যৌবন শক্তিতে উচ্ছলা, চঞ্চলা নদীতে প্রবল বর্ষা ঋতুতে ভরা জোয়ারের সময় যেমন আলাদা আলাদা স্রোতের ধারা প্রবাহিত হয় একের নীচে বহু, যেমন সেখানে ঘূর্ণির আবর্ত তৈরী হয়, মহাভারতের প্রত্যেকটা চরিত্রেও তেমনই যেন ঘূর্ণি আছে, চোরাস্রোত আছে। এই আজকেই আপনার কোনও ঘ...

অনুভূতির চর।

অনুভূতির চর। দেবপ্রসাদ জানা শিরদাঁড়া বেয়ে শিরশির করে উঠে আসছে- অনুভূতির চর, মস্তিষ্ক লক্ষ্য করে- কালকূট প্রলেপের তীর তার হাতে। না-একটা উলঙ্গ তরবারি,  সকালের রশ্মির মত ফোঁটা ফোঁটা চুইয়ে পড়ছে রক্ত। এরা ঘৃণার মন্ত্রে উচ্চারিত প্রার্থনাকে ছাপিয়ে - জেগে রয় অনন্তকাল। বি-তৃষ্ণার হৃদয় গুহায়- যেখানে রশ্মির মত ফোঁটা ফোঁটা রক্ত চুইয়ে পড়ছে। দখলদাররা কুত্তার মত গর্জায় "কে তুমি?” হৃদয় কোটরে দুমদাম শব্দ তুলে মহড়া চলছে, অনুভূতির চরেরা ছুটে আসছে,  গোপনে শিরদাঁড়া বেয়ে। ভবিষ্যৎ নির্দিষ্ট হয়-চুইয়ে পড়া রক্তের পথ ধরে? লোভ আকাঙ্ক্ষা অহংকার - এরাও আছে অনুভূতির সাথে। সকালের রশ্মির মত ফোঁটা ফোঁটা রক্তে। গোপন আলাপের কথাগুলো ছিটকে আসে  কার্তুজের মত- অস্ত্রহীন বেদনার সৈনিক ঘুমিয়ে পড়ে, চিরঘুমে। ওরা তখন আতঙ্কে নীল- চুইয়ে পড়া রক্তের দাগ প্রতিদিন জীবন থেকে - ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে করতে- ভিতরে ভিতরে টের পাই তার মৃদু দহন আর ক্ষয়। সম্মুখ যুদ্ধে যে পরাজিত-,  চক্রান্তকারীর লোমশ থাবা, শানিত বাক্য।  যারা পিছন থেকে ভল্ল ছুঁড়ছিল,  যারা অন্ধকারের বন্ধু সেজে বসেছিল পাশে,  তাদের নিষ্ফলতার প্রতি কর...

শকুনি পাশা

শকুনির পাশা দেবপ্রসাদ মহাভারতের প্রধান খলনায়ক হলো গান্ধাররাজ সুবলের পুত্র ও গান্ধারীর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শকুনি। সুবলের কোনো এক পাপের কারণে দেবতাদের অভিশাপে তাঁর বংশে শকুনির জন্ম হয়। শকুনির জন্ম কলির অংশে, তাই তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধূর্ত ও কপট। গান্ধারীর বিবাহের পর থেকে শকুনি ধৃতরাষ্ট্রের সংসারেই থাকতেন এবং ভাগিনেয় দুর্যোধনের সঙ্গে তার বিশেষ বন্ধুত্ব ছিল।  অস্ত্রবিদ্যায় খুব একটা পারদর্শী ছিলেন না, তথাপি তাঁর কপট বুদ্ধিতেই সমগ্র কুরুবংশ ধ্বংস হয়েছিল। পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে শকুনির কোনও বিদ্বেষ ছিল না, শকুনির প্রধান শত্রুতা ছিল  পিতামহ  ভীষ্মের বিরুদ্ধে। যে সময় কৌরব মাতা গান্ধারী কুরু সংসারে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত। সেই সময় একদিন পিতামহ ভীষ্মের কানে পৌঁছে গেল কেমন করে যে, গান্ধার রাজকন্যা বিবাহপূর্বে নাকি বিধবা ছিলেন। চারিদিকে গুপ্তচর ছুটল। জ্যোতিষীদের ডাক পড়ল, সত্যাসত্য যাচাই করতে। জানা গেল গান্ধার রাজ সুবলকে রাজজ্যোতিষী বলেছিলেন, গান্ধারীর প্রথম স্বামীর আয়ু সীমিত, কিন্তু দ্বিতীয় স্বামীর আয়ু হবে অনেক। তাই তড়িঘড়ি তিনি একটি ছাগলের সঙ্গে কন্যার বিবাহ দিয়ে সেই দোষ  স্খলন করেছিল...

লাল লাল ফুল

লাল লাল ফুল দেবপ্রসাদ জানা লাল লাল ফুল ফুটছে একটা একটা করে। উদ্দীপ্ত রক্ত থেকে জন্ম নিচ্ছে রাঙা গোলাপ,  লাল লাল ফুল, তারা ফুটে উঠছে  আর শুকিয়ে যাচ্ছে। বিস্মৃত সমাধি গুলোর উপর পরিয়ে দিচ্ছে গৌরব-মুকুট। পৃথিবীর সমুদ্রতটে বাতিঘরের দীপ্তির মতো,  প্রকৃতির বেদীমূলে কোনো অজানা হাতের জ্বালানো শাশ্বত উৎসর্গ-শিখার মতো একদিন- লালে লাল হবে ধরিত্রী। নিদ্রিত মানুষ গুলোকে আকর্ষণ করছে- আলোকের দিকে। নিদ্রার পরে জাগরণ,  বাস্তব নিষ্করুণ, স্বপ্ন আর মদিরতার স্বর্গসুখে,  আসুক না আশাভঙ্গের তিক্ত স্বাদ। সকালের মতন এক রক্তিম প্রত্যুষের উদয় হবে,  বিষণ্ণ আকাশে। ঝকমকে লাল সূর্য তার রশ্মির তরোয়ালে ফেড়ে ফেলবে পুঞ্জ মেঘ, কুয়াশার শবাচ্ছাদন।

সৈয়দ মুজতবা আলি

সৈয়দ মুজতবা আলীকে কোনো এক আসরে মদ খেতে দেখে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন—আপনি যে মদ খাচ্ছেন, এটা দেখে তরুণ সমাজ কী শিখবে? উত্তরে সৈয়দ মুজতবা আলী মদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলেছিলেন, 'তোমার তরুণ সমাজকে বলে দিও—মদ খাওয়ার আগে আমি পৃথিবীর ২৩ টি ভাষা রপ্ত করেছি।' উনাকে নিয়ে আরেক মজার ঘটনা আছে! সৈয়দ মুজতবা আলী তখন বেশ বিখ্যাত লেখক। প্রতিদিনই তাঁর দর্শন লাভ করতে ভক্তরা বাসায় এসে হাজির হয়। একদিন এক ভক্ত মুজতবা আলীর কাছে জানতে চাইলেন, তিনি কোন বই কী অবস্থায় লিখেছেন। মুজতবা আলী যতই এড়িয়ে যেতে চান, ততই তিনি নাছোড়বান্দা। শেষে মুজতবা আলী সরাসরি উত্তর না দিয়ে বললেন, 'দেখো, সুইস মনস্তত্ত্ববিদ কার্ল গুসতাফ ইয়ুং একদা তাঁর ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন, কিছু লোক আমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি কীভাবে লিখি। এ ব্যাপারে আমাকে একটা কথা বলতেই হয়, কেউ চাইলে তাকে আমরা আমাদের সন্তানগুলো দেখাতে পারি, কিন্তু সন্তানগুলো উৎপাদনের পদ্ধতি দেখাতে পারি না।' এমনই হাস্যরসে পরিপূর্ণ ছিল এই মানুষটি।  আরো একটি কথা প্রচলিত আছে: পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে গেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী। সাধ জগন্নাথ দর্শন করবেন। পুরুত জিজ্ঞেস করলেন, তোমার...

তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়

সুইডিশ নোবেল কমিটি ২০২২ সালের নোবেল প্রাপকদের নাম প্রকাশ করেছিল,যারা নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন তাদের নাম প্রকাশ করার পাশাপাশি যাদের নাম মনোনীত হয়েছিল তাদের নামও প্রকাশ করার হয়েছে। ৫১ বছর পর সেই তালিকাতেই দেখা যায় নোবেল পদকের জন্য নাম ছিল কথা সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বাংলা ও বাঙালির দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কি বলা যায়! রবীন্দ্রনাথের পর সাহিত্যে আর একটি নোবেল বাংলায় আসার উজ্জল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কথা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় নোবেল পুরস্কারের জন্য ১৯৭১ সালে সাহিত্যে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের সবার দুর্ভাগ্য সেই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি প্রয়াত হন। যেহেতু মরণোত্তর নোবেল দেওয়া হয় না সেহেতু পুরস্কারের জন্য তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম আর বিবেচিত হয় নি। ওই বছর নোবেল পেয়েছিলেন  পাবলো নেরুদা। যদি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বেঁচে থাকতেন,কে বলতে পারে তিনি সেবার সাহিত্যে নোবেল পেতেন না! © ধ্রুবতারাদের খোঁজে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য যাঁর নাম মনোনয়ন পায়,সেই তারাশঙ্কর কে একসময় সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে জীবনে অ...

আমার রবি

মাত্র আঠারো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গেল আমার। ফুলশয্যার খাটে বত্রিশ বছরের স্বামী বলল, দেখো, 'তোমার বাবা গরিব,তাই উদ্ধার করেছি কেবল, মনে আমার অন্য সোহাগ। থাকবে, খাবে, দাবে... শাড়ি গয়না সব পাবে কিন্তু, আমাকে চেও না কখনো।' বিবাহের নানা নিয়ম কানুনে ক্লান্ত আমার চোখে নেমে এল ঘুম। আমার স্বামী ভীষণ বড় ব্যবসায়ী, আমার ঘরের সঙ্গে লাগোয়া ঘরেই রাত্রিবাস করেন। আমি ঠাকুর-শাশুড়ির বেঁধে দেওয়া খোঁপায় ফুল লাগিয়ে বিছানায় বসে থাকি একা। দিন দশেক পরে আমি তোমাকে পেলাম হঠাৎ জানো। আমার ছোট দেওর এসে আমার হাতে গীতবিতান দিয়ে বললো, 'বৌদি নাও। এ তোমার উপহার!' আমি হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে ঘরে নিয়ে এলাম। তারপর তুমি আমার হলে। যুবতীর প্রেম হলে। প্রত্যেক বিকেলে দেওর পাঠ করে শোনাতো তোমায়। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম।  বৈশাখে বৃষ্টি আসতো। আমার সমবয়সী দেওর ওর দুহাত দিয়ে আড়াল করতো আমায়। তারপর সকালে তোমার গান দিয়ে ধুইয়ে দিত আমার দু চোখ। আমি একদিন ওকে জড়িয়ে ধরি আমার অবশ মূর্ছনায়। ও আমায় ওর খোলা বুকে আশ্রয় দেয় সেই প্রথম। ঠোঁটে ভিজিয়ে দেয় তোমার কবিতা, তোমার গান, তোমার প্রেম, প্রকৃতি, পূজা। আমি আমার দেওরের নতুন বৌঠান হয়ে উ...

চড়ুই

কান্নুরের উল্লিকালের হৃদয় থেকে উঠে আসা একটি করুণাপূর্ণ গল্প প্রমাণ করে যে, যখন ঐক্য থাকে, তখন একটি ছোট গ্রামও বড় পরিবর্তন আনতে পারে। একটি ছোট চড়ুই পাখির জীবন বাঁচাতে গ্রামবাসীরা যা করলেন তা কোনও উদাহরণের চেয়ে কম ছিল না। তিন দিন ধরে একটি চড়ুই পাখি একটি বন্ধ কাপড়ের দোকানের কাঁচের দেয়ালের আড়ালে আটকা পড়ে ছিল, এবং বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তার ক্ষুদ্র ডানার ঝাপটানি গ্রামের নীরবতা ভেঙে মানুষের হৃদয়ে গিয়ে কড়া নাড়ে। 8ই এপ্রিল, মেকানিক মনোজ কুমার প্রথম চড়ুইটিকে দেখতে পান। পাইপের ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে সে দোকানে ঢুকেছিল, কিন্তু বের হওয়ার সময় সে সেই পথ ভুলে যায় এবং আটকা পরে যায়। স্থানীয়রা, দমকল বাহিনী, গ্রাম কর্মকর্তারা এমনকি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটও চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সম্পত্তি বিরোধের কারণে আদালতের আদেশে দোকানটি সিল থাকায় কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। কিন্তু গ্রামবাসীরা হাল ছাড়তে রাজি ছিল না। অটোচালক থেকে শুরু করে দোকানদার, সবাই মিলে চড়ুইটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য একটি ছোট গর্ত দিয়ে খাবার এবং জল সরবরাহ করেছিল। সময়ের সাথে সাথে চড়ুইটির অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে।...

ফিরোজা বেগম

তাঁকে বলা হতো 'নজরুলের গানের পাখি'! কবি নজরুলকে সামনাসামনি মাত্র ১০ বছর বয়সে সঙ্গীত-জীবনের শুভসূচনা হয়েছিলো যাঁর! কবি নজরুলের অসুস্থোত্তরকালে কবির গানগুলোকে অ-রক্ষিত এবং বিলুপ্ত হবার 'অভিশাপ' থেকে মুক্ত করে 'নজরুল-গীতি' পরিচয় দিতে যে মহীয়সী নারী মুখ্য ভূমিকা পালন করেন, তিনি আর কেউ নন - ফিরোজা বেগম। ১৯৩০ সালের ২৮শে জুলাই, ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমায় রাতইল ঘোনাপাড়া গ্রামের এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এই নজরুল-সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী। বাবা খান বাহাদুর মোহাম্মাদ ইসমাইল ছিলেন তৎকালীন ফরিদপুর জেলার প্রথম মুসলিম আইনজীবী এবং মা কওকাবুন্নেসা বেগম। বাঁধাহীন হওয়া সত্ত্বেও এবং বিশেষ কোনো পারিবারিক অনুপ্রেরণা না পেলেও, তিনি নিজের আগ্রহে এবং আত্মঅনুপ্রেরণায় গান শিখেছিলেন! বাড়িতে পূর্বপুরুষদের ব্যবহৃত পুরনো গ্রামোফোন ছিলো। মা ছিলেন সঙ্গীতানুরাগী। কাননবালা দেবী, শচীন দেব বর্মন, চিত্ত রায়, কমল দাশগুপ্তদের রেকর্ড বাজতো, পাশাপাশি যাঁর গান তখন একটা 'যুগ' এবং মনের অজান্তেই যাঁকে বেশি শুনতেন ফিরোজা, তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলাম। এভাবে বিভোর হয়ে গ্রামোফোন থেক...

সমসাময়িক

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর সমসাময়িক লেখকদের সম্পর্ক ছিল বেশ জটিল, অনেকটাই শ্রদ্ধা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও মতপার্থক্যের মিশেল। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো: ১. সারদানন্দ (স্বামী বিবেকানন্দের সহচর) রবীন্দ্রনাথ স্বামী বিবেকানন্দের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। যদিও তাঁদের সরাসরি সাক্ষাৎ কম, তবুও দুজনেই একে অপরের চিন্তাধারাকে গুরুত্ব দিতেন। সারদানন্দও রবীন্দ্রনাথের লেখাকে মূল্য দিতেন। ২. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ বঙ্কিমচন্দ্রকে তাঁর সাহিত্যজীবনের গুরু হিসেবে দেখতেন। তবে দুজনের সাহিত্যরীতি আলাদা ছিল—বঙ্কিমের গদ্য গম্ভীর ও কাঠামোগত, রবীন্দ্রনাথের ছিল অধিক কাব্যিক ও আত্মিক। ৩. সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সুসম্পর্ক ছিল, যদিও কবিতার ধরণ ছিল ভিন্ন। সত্যেন্দ্রনাথ ছন্দ ও শব্দচয়নে পারদর্শী, রবীন্দ্রনাথের কাব্য ছিল ভাবপ্রবণ। তবুও রবীন্দ্রনাথ তাঁকে "ছন্দের জাদুকর" বলে সম্বোধন করেছিলেন। ৪. কাজী নজরুল ইসলাম রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে খুব শ্রদ্ধা করতেন। নজরুল যখন "বিদ্রোহী" কবিতার মাধ্যমে বিখ্যাত হন, তখন রবীন্দ্রনাথ তাঁকে...

কাঙাল হরিনাথ

‘হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হলো, পার কর আমারে’ এই বিখ্যাত লোকসঙ্গীতটি কেবল হরি'র উদ্দ্যেশ্যে রচিত, তাই নয়, এটির রচয়িতাও হরি। মানে 'কাঙাল হরিনাথ'। উনিশ শতকের বাংলার এক খ্যাতনামা সাংবাদিক তথা সমাজকর্মী অথচ তিনি কাঙাল। তাঁর দেওয়ার ছিল অনেক কিছুই, চাওয়ার ছিল না কোনকিছুই। তবুও তিনি কাঙাল।।কারণ তিনি চেয়েছেন মুক্তি। যন্ত্রণা থেকে মুক্তি, পরাধীনতা থেকে মুক্তি। চেয়েছেন একাগ্রভাবে। কাঙালের মতো। চেয়েছেন পরের জন্য। পেয়েছেন কি?  প্রকৃত নাম হরিনাথ মজুমদার। ১৮৩৩ সালের ২২শে জুলাই নদীয়া (বর্তমান কুষ্টিয়া) জেলার কুমারখালি গ্রামে জন্ম হয় তাঁর। আর্থিক কারণে হরিনাথের লেখাপড়া বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। ১৮৫৫ সালে বন্ধুদের সহায়তায় তিনি নিজ গ্রামে একটি ভার্নাকুলার স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং গ্রামের সাধারণ লোকদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে সেখানে অবৈতনিক শিক্ষকরূপে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরের বছর তাঁরই সাহায্যে কৃষ্ণনাথ মজুমদার কুমারখালিতে একটি বালিকা বিদ্যালয়ও স্থাপন করেন। গ্রামের সাধারণ মানুষের উন্নতির জন্য এবং তাদের শোষণ-পীড়নের বিরুদ্ধে হরিনাথ সারাজীবন আন্দোলন করেছেন। অত্যাচারিত এবং অসহায় কৃষক সম্...

কলহ

কলহ দেবপ্রসাদ জানা দেখো সেই পরিবার,  কলহ করিছে বিস্তার। কুণ্ঠিত কলম তবু, কভু নাহি ডরে! কুঁজোর ও কি ইচ্ছা হয়,  চিত্ হওয়ার কথা কয়। কি বিপদ-কহ বন্ধু, বিত্ত বড় করে। কি জানি-অশ্রু-জলে,  পুড়ে মন রোষানলে, হিত না হইবে বন্ধু সমক বিবাদে  ভ্রাতার স্বরূপ!-বলে  কহি সদা নানা ছলে তাই তুমি নানা ছলে কহ প্রমাদে। "নারী কিবা পাপ!” গৃহী হয়ে পরিতাপ, ওরে মূঢ়! ভাবো বুঝি নাই কোনো উপায়।  অহংকারের শেষ আছে। কালোর পরে আলো নাচে। খেদ ছাড়, যত্ন করো আপন-শিক্ষায়।

দাসত্ব

দাসত্ব দেবপ্রসাদ জানা ঝঞ্চা ছুটল- তা থেকে নিষ্ক্রান্ত হল পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ।  শিলাবর্ষণ আর বজ্রনির্ঘোষ।  ক্ষতগুলো আঘাতের পর আঘাতে। অগ্নিময় হয়ে উঠল বজ্র। হিংস্র উন্মত্ত বিদ্যুতের ঝলকানি।  নির্মম উত্তাপ জ্বলতে লাগল,  বুকের উপর চাপছে পাষাণভার।  দাবানলের আভায় আলোকিত অথচ নক্ষত্রহীন রাত্রির নিস্তব্ধ অন্ধকার। সমস্ত বস্তু সমস্ত মানুষ বিপর্যস্ত। সমস্ত হৃদয় এক অস্পষ্ট উদ্বেগে পীড়িত,  রক্তাক্ত হাজার হাজার প্রাণ,  শিক্ষাহীন শিক্ষিত যারা-কাঁটার মুকুটে।  অন্ধকারের রাজ্যে ভণ্ড রাজা। রাজা যদি প্রজার শত্রু হয় জ্বলতে থাকে ভবিষ্যত, মশালের মতো। আগুনের আঁচড়ে,  কোন অক্ষয় আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন শিক্ষা। আত্মোৎসর্গের পথ প্রস্তরে প্রস্তরে বধ্য।  দাসত্বের জোয়ালে, শীলমোহর  ঘৃণার শৃঙ্খলে লজ্জার নিঃশ্বাস  হিমের স্পর্শে পাতারা বিবর্ণ,  মরণ-নাচ, ধূসর গলিত হেমন্ত- শিক্ষাহীনদের দাসত্বে।

তোমাকে আরো কাছে পেতে চাই

সর্বগাত্রেণ সংস্পর্শং নিত্যালিঙ্গণ বিভ্রমম—  আমি তোমাকে আরও কাছে পেতে চাই! এমন দূরে, আলাদা করে নয়। নিত্য আলিঙ্গনে, ছায়ার মতো তোমার অঙ্গের সমস্ত পরমাণুর স্পর্শ চাই আমি। — কালিকাপুরাণ প্রকৃতির এই চিরন্তন আকুলতায় সাড়া দিল পুরুষ। জন্ম ও মৃত্যুর মতো, অন্ধকার ও আলোর মতো, ধ্বংস ও সৃষ্টির মতো, মিথ্যা ও সত্যের মতো একই দেহে সমাহিত হলো নারী ও নর। বসন্তকালে মহাবিষুবের লগ্নে, যেদিন সমস্ত পৃথিবীতে রাত আর দিনের দৈর্ঘ্য সমান, হরগৌরি আবির্ভূত হলেন অর্ধনারীশ্বর রূপে। প্রেমে, সমতায়, ভারসাম্যে........ ভারসাম্যের এই লীলা কেবল ভারতেই নয়, প্রচলিত চীনেও। মহাবিষুবের দিন মসৃণ তলের ওপর একটি ডিমকে সোজা দাঁড় করাতে হবে। আসন্ন গ্রীষ্মে যেন বৃষ্টি ও রোদের, ঝড় ও বাতাসের ভারসাম্য বজায় থাকে। বন্যা ও খরা দুইই তো দরকার সমান সমান। পলিমাটিও দরকার, ধান শুকানোও দরকার।  বিষুব সংক্রান্তি— বছরে দুবার আসে। শরতের জলবিষুব আনে জলবাহিত রোগ। আর বসন্তে বিষুবের পর বছরের শুরু, চৈতালী হাওয়ায় গুটিবসন্তের প্রকোপ। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যায়। তখন ঔষধি জ্ঞানের পরম্পরায়, মাটি খুঁড়ে আমাদের পূর্বনারীরা আবাহন করেন দূর্গতিনাশিনীকে— দৈত্...