Posts

Showing posts from 2024

মাইকেল মধুসুদন

আঠারশ চব্বিশের পঁচিশে  ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির যশোহর জেলার (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলায়) সাগরদাঁড়ি  গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে  জন্মগ্রহণ করেন, মধু মাইকেল। রাজনারায়ণ দত্ত তাঁর স্ত্রী প্রথমবারে  জাহ্নবী দেবীর  একমাত্র সন্তান। রাজনারায়ণ কলকাতার সদর দেওয়ানি আদালতের এক খ্যাতনামা আইনজীবী ছিলেন। তেরো বছর বয়স থেকেই মধুসূদন কলকাতায় বাস করতে থাকেন। খিদিরপুর অঞ্চলে সার্কুলার গার্ডেনরিচ রোডে (বর্তমানে কার্ল মার্ক্স সরণি) তিনি একটি বিশাল অট্টালিকা নির্মাণ করেছিলেন। শিক্ষাজীবন সম্পাদনা মা জাহ্নবী দেবীর কাছে মধুসূদনের প্রাথমিক শিক্ষার সূত্রপাত হয়। জাহ্নবী দেবীই তাঁকে রামায়ণ, মহাভারত, হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত করে তুলেছিলেন। সাগরদাঁড়িতেই মধুসূদনের ছেলেবেলা কেটেছিল। সাগরদাঁড়ির পাশের গ্রামের শেখপুরা মসজিদের বিদ্বান ইমাম মুফতি লুৎফুল হকের কাছে মধুসূদন বাল্যকালে বাংলা, ফারসি ও আরবি শিক্ষা করেন। তেরো বছর বয়সে মধুসূদন কলকাতায় আসেন। স্থানীয় একটি স্কুলে কিছুদিন পড়ার পর তিনি হিন্দু কল...

নারী পুরুষ

পুরুষের শারীরিক চাহিদা পূরণ  হলে তার মানসিক শান্তি চলে আসে।  তবে নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন। একজন নারী মানসিক শান্তি পেলে তবেই শারীরিক চাহিদা দেখায়।নারী এবং পুরুষের চাহিদার মধ্যে পার্থক্য আছে। পুরুষের সমস্ত ডিপ্রেশন এবং ক্লান্তি দূর হয় সঙ্গীর সাথে Physical Attachment এ থাকলে। আপনি যখন আপনার পুরুষ সঙ্গীকে খুশি করতে চাইবেন, তবে অবশ্যই তার সাথে শারীরিক Attachment হতে হবে এমনকি তা পুরোপুরি মন থেকেই। পুরুষের তুলনায় নারীদের এই একটা কারণেই সবচেয়ে বেশি মুড সুইং হয়। নারী এবং পুরুষ দুই ভিন্ন মেরুর জিনিস। এখানে বুঝতে হবে, আপনার সঙ্গী ঠিক কিসে নিজেকে Satisfy মনে করে। সঙ্গীর চাহিদা অনুযায়ী যদি তা পূরণ করতে পারেন, তবেই আপনি একজন ভালো সঙ্গী। এখানে কেউ কারো চাহিদা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।  তবে নারীরা Physical Attachment এর চাইতে Mentally Attachment এ বেশি গুরুত্ব দেয়। আপনার নারী সঙ্গীর যদি মন ভালো থাকে, তবেই কেবল সে শারীরিক Attachment এ আগ্রহ দেখাবে। তবে মানসিক অবস্থা যদি ভালো না থাকে, তবে সে কোনোকিছুর প্রতিই আগ্রহ দেখাবে না। নারীরা সবসময় তার মনকে গুরুত্ব দেয়। মন যদি সায় না দেয়, ত...

চর্তুদশপদী

চতুর্দশপদী দেবপ্রসাদ ১ সে এক ঝড়ো বছর, বাতাস ছুটল নিষ্ক্রান্ত হলো অরণি পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ।  কালোমেঘ ভেঙে ভেঙে, উঠানে পড়ল। বৃষ্টি, শিলা বৃষ্টি আর বাতাসের বেগ। বজ্রনির্ঘোষ আঘাতে ক্ষতগুলো সব, অগ্নিময় হয়ে, বজ্র হিংসায় উন্মত্ত। বিদ্যুতের ঝলকানি, সেকি কলরব। নির্মম উত্তাপ জানি, গ্রীষ্মের প্রদত্ত। জ্বলতে লাগল অগ্নি, বুকের উপর  চাপিল পাষাণভার। আগুন আগার। আলোকিত ক'রে তোলে, এই চরাচর। নক্ষত্রহীন রাত্রির নিস্তব্ধ আঁধার। বিপর্যস্ত নদনদী পথ ঘাট সব। অস্পষ্ট উদ্বেগে সব করে কলরব।  ২ সন্তাপে হাঁপাতে লাগে, ভীষণ অসুখ। রক্তাক্ত হাজার পশু, হারাইল প্রাণ। কাঁটার মুকুট পরে, ফিরাইল মুখ। কতদিন আর তবে, রবে যশবান। একি অন্ধকার এলো, আগুনের মতো। মশালের মতো জ্বলে, জোছানার রাতে। আগুনের আঁচড় যে, লাগে অবিরত।  আত্মোৎসর্গের পথ, জীবন প্রভাতে। ঘৃণার শৃঙ্খলে বাঁধা, লজ্জার ভঙিমা। বৃষ্টির কান্নায় ভরা, কালো পাঁকে ডোবা।  অসহ্য তাদের কাছে, জীবন মহিমা।  যন্ত্রণা তাদের করে, খোঁড়া অন্ধ বোবা। অবিশ্বাস্য হিম শূন্য ঘোর অন্ধকার। হঠাৎ বসন্ত এলে, কি দেখবে আর। ৩ পচা হেমন্তের মাঝখানে, সুন্দর বসন্ত। ম্রিয়মান দুর্গে সাজ...

সেইদিন রাতে

বড় সাহেব যখন আমার ব্লাউজের বোতাম খুলছিলেন, তার চোখে আমি লোভাতুর চকচকে দৃষ্টিতে সে আমার শরীর দেখছে। হয়তো আমার চোখে তাচ্ছিল্যের কোন ভাব ছিল,সম্ভবত ঠোঁটের কোনাটাও হাল্কা বেঁকে গিয়েছিল। কারণ সে হঠাত আমার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। আমি তাড়াতাড়ি ভয়ে কুঁকড়ে ওঠার ভান করে বুকের ওপর হাত গুটিয়ে আনলাম। সে কি বুঝলো কি জানি। এবার লোভাতুর চোখের সাথে যুক্ত হলো অশ্লীল হাসি। আমি ভয়ের ভান করে জিজ্ঞাসা করলাম,আমার সাথে কি করবেন বড় সাহেব? সে জিভ দিয়ে নিজের ঠোঁট চেটে বললো, ও তুম আভি দেখোগে। যদিও আমি তাকিয়েই ছিলাম,কিন্তু আসলে আমি কিছুই দেখিনি। তাকে কোন বাধাও দেইনি। শুধু কিছুক্ষণ পর পর ব্যথায় শরীরটা কুঁকড়ে যাচ্ছিল,কিন্তু তাও চোখে জল আসতে দেইনি। শুধু শরীরটাই দূষিত হচ্ছিল,কিন্তু মন ঠিকই জানতো,এই ঘরের ঠিক পেছনে এই মুহুর্তে সোহাগ লুকিয়ে আছে। এভাবে কতক্ষন কাটলো জানিনা। কতবার যে আমাকে দুষিত করলো তাও বলতে পারবো না। বড় সাহেব আমার চুলের মুঠি ধরে মেঝেতে আছড়ে ফেলার পর আমার ঘোর ভাঙে। সে শোয়ার কাপড় পড়ে ঘুমাতে গেল। রাতের খাবারের পর সে এক বোতল মদ খেয়েছে,এখন বেঘোরে ঘুমাবে।আমাকে দিয়ে তার আপাতত প্রয়োজন শেষ,তাই আমি কি করবো এটা নিয়ে ...

শান্তি দূত শ্রীকৃষ্ণ

পাঁচ গ্রাম দাও ওহে ভ্রাতা দুর্যোধন। শান্তি বার্তা আনি কহে দেবকী নন্দন। পাঁচ ভ্রাতা পাঁচ গ্রামে রবে ভালো মনে। না কহিবে রাজ্য দাও, না যাইবে বনে। শকুনির যাদু পাশা, হয়েছে প্রচুর। ভাই ভাই বিনা দোষে হলো বহু দূর। দোষ কার নাহি জানি, প্রিয় দুর্যোধন। বারো বর্ষ ঘুরে ঘুরে, আর নাহি মন। ইন্দ্রপ্রস্থ গড়ে তারা, যা করিল নাম। তাও যদি নাহি দেবে, দিও পাঁচ গ্রাম। পিতামহ ভীষ্ম আছে, আছে মহারাজ। মহাবীর কর্ণ আছে, 

বাইশের কবিতা মেলা

বাইশের কবিতা মেলা দেবপ্রসাদ জানা আলস্য ত্যজিয়া সব কৃষ্ণপদ হলে প্রবেশি দেখিবে সব আহা কৌতূহলে। দেব পুরন্দর যেন, দেব দেবালয়ে। রবি, বায়ু, হরি, হর, সব ইন্দ্রালয়ে। কবির বাহন লয়ে, ভারি মনোরম। দেখিবে ভাসিছে সেথা, পালক কলম। কত কথা কত লেখা, পড়িবে আসিয়া। শব্দের জোয়ারে সব, যাইবে ভাসিয়া। দেহের প্রকৃতি প্রেম, কালের আকার,  নিয়ম-শৃঙ্খলা ঘিরে, কবে বার বার। সৌমেন দাদার যেন, নাহি যায় মান। আমাদের আপনার, মেলা অনুষ্ঠান। বাইশের সকালেই কবিতার মেলা। কবিতায় কবিতায় কলমের খেলা।

সুন্দর

সুন্দর  দেবপ্রসাদ জানা কিভাবে ভাঙাব ঘুম সুন্দরের? সবই কি সুন্দর থাকে চিরদিন  মান-যশ, কৃতকাজ, রূপ-মোহ,  অহঙ্কার আর জীবন? সত্তার বিপরীত মুখী স্রোত  অবরুদ্ধ অহংকার তৃষ্ণার্ত শিকড়ে পথ প্রান্তের প্রহরী বট, ছায়াহীন,  নগ্ন কাঠ হয়ে আছে। ছাতার মতো পাতা গুলি ঝরে যেতে যেতে মাটিতে বিলীন। শান্ত উদাসীন নদী তার শান্ত ধ্বনি  তোমার ভালোবাসার নীল খামে ভরা সাদা কাগজ।  শূন্য করতলে নগ্ন হাহাকার।  এই আদিগন্ত সবুজ মাঠ,   ইচ্ছের দুরন্ত টগবগে ঘোড়া ছোটে- মৃত্যুর ফেনা মুখে নিয়ে জীবনের বিষাদময় পথে। চিরচেনা পাখি মেঘের ভিতর থেকে, মেঘের ভিতরে উড়তে উড়তে আকাশেই মরে যায়।  অন্তর্গত শূন্যতায় নিঃশব্দে হারায়। তবু সুন্দর এই পৃথিবীর পথ তার ছায়াঘন উষ্ণতায় আমরা সুন্দর।

পুরীতে হনুমান বন্দী

সমুদ্র মন্থনে ওঠে, দেব স্নেহধন্যা। সৌভাগ্যের দেবী লক্ষ্মী সাগরের কন্যা। নারায়ণ বিয়ে করে, রাখিলেন ঘরে।

এখন শীতে

এখন শীতে দেবপ্রসাদ জানা এখন শীতে খেজুর রসের হাঁড়ি নেই কুয়াশা ভোরে স্বরচিত নির্জনতায় চুমুক দেওয়া ঠাণ্ডা রস নেই। খড়ের জ্বালে চৌকো টিনের পাতলা কড়ায়- ফুটতে থাকা রসের মধুর গন্ধ নেই সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছে, গ্রামের সেই সরল সহজ দৃশ্য গুলি। মেঠো রাস্তার ধারে সারি সারি বাঁকাচোরা, জমিতে হেলে পড়া ওই বিদ্ঘুটে চেহারায় হাজার কাঁটা ধরে থাকে যে গাছ গুলো, তাদের শরীর ফেটে বেরিয়ে আসা মিষ্টি রস, আজ আর নেই। যে উচ্ছাসে উষ্ণ রিপু গুলো শীতল তরলে আত্মমগ্ন হতো ভোরের বাতাস, হারিয়ে গেছে, বিপন্ন বিস্ময়ে। সেই আদিগন্ত সবুজমাঠ, ধু ধু ধুসর দিগন্ত, অন্তর্গত শূন্যতায় নিঃশব্দে হারায়। পৃথিবী সুন্দর হচ্ছে সেই মধুর স্বাদের, পথপ্রান্তের প্রহরী খেজুর গাছের বলি দিয়ে প্রতিদিন।

সাগর দর্শন

তিনি লালপেড়ে ধুতি পরেন, জামা পরেন, জুতো পরেন। তক্তার ওপর বিছানায় শোন, আবার মশারিও খাটান"। বিদ্যাসাগর অবাক! "এ কেমন পরমহংস তোমাদের? কোনো ভড়ং টড়ং নেই বলছো?" শ্রীম বললেন, "না। রানী রাসমণির কালীবাড়িতে পুজো করেন, আর সারাক্ষণ ঈশ্বরচিন্তা করেন।"   বিদ্যাসাগর হেসে ফেললেন, "আচ্ছা আচ্ছা। তাঁকে নিয়ে আসবে একদিন। এত করে যখন বলছেন।" ঠাকুর সাগর দর্শন করতে চেয়েছিলেন। এক্ষণে সাগরও ঠাকুর দর্শন করতে চান। শ্রীমর সংবাদে খুশি হলেন ঠাকুর। শ্রীম বললেন "কবে যাবেন? আজ, কালের মধ্যেই?" ঠাকুর যেন ধ্যানমগ্ন কন্ঠে বললেন, "যে কোনো দিন কি আর সাগর দর্শন হয় গো? সাগর দর্শন করতে যাব এই শনিবার। ঠিক বিকাল চারটেয়। ওদিন শ্রাবণের কৃষ্ণাষষ্ঠী। বড় ভালো দিন। ১৮৮২ সালের একটা দিন। বিদ্যাসাগরের বয়স বাষট্টি ছুঁইছুঁই। রামকৃষ্ণ ছেচল্লিশে দৌড়াচ্ছে। সাগর তখন বাদুড় বাগানে থাকেন। ঠিক চারটে বাজতে মিনিট দুয়েক বাকি, একটি ঘোড়ার গাড়ি এসে দাঁড়ালো বিদ্যাসাগরের বাড়ির নিকটে। গাড়ি থেকে নামলেন ভবনাথ, মহেন্দ্রনাথ (শ্রীম), হাজরা ও ঠাকুর রামকৃষ্ণ স্বয়ং। বাড়ির ভিতর ঢুকতেই ঠাকুরের চোখ জুড়িয়ে গেল। কি সুন্দর...

আর্তনাদ

আর্তনাদ দেবপ্রসাদ জানা কোথা হে প্রাণের পতি, রহিলে কোথায়?  কি হবে আমার গতি, কে করে রক্ষণ?  কি হেতু বিপক্ষ-পুরে, রাখিলে আমায়? কেন না দেখো মুকুরে, দাসীর বদন। আমার কি দোষ নাথ, কোন অপরাধে।  আমা পরে এ উৎপাত, করিছ এখন। কেন কহিলাম আমি, আপনার বোধে। দর্পণে আমায় রায়, ভাবিলে দুর্জন। বিবাহের পূর্বে ছিল, মনের ভিতর। যারে দেখি মন ছিল, উতলা তখন। ধৰ্ম ভয়হীন আমি, পাপিষ্ঠ ইতর।  তোমারে বিশ্বাস করি, কয়েছি এখন? ভালো করিবারে করি, শিষ্ট আলাপন। কেন করো অত্যাচার, ওহে প্রাণধন।

আর্তনাদ

আর্তনাদ কোথায় হে প্রাণোনাথ, কোথায় এখন?  কি হবে আমার গতি, কে করিবে রক্ষা। কি জন্য বিপক্ষ-দলে, করিলে গমন?  কে মোরে পাহারা দেবে, কে দেবে সুরক্ষা। কেন যে দেখালে মোরে, দাসীর বদন?  তোমার কি দোষ নাথ, ছিল না মনন।  আমা হতে এ উৎপাত, হইল ঘটন ॥  কেন কহিলাম হায়! এমন বচন?  দর্পণে আমায় রায়, দেখুক দুর্জন ॥  ধৰ্ম ভয়হীন হেন, পাপিষ্ঠ যবন।  তাহারে বিশ্বাস কেন, করিলে রাজন? ভাল গেলে করিবারে, শিষ্ট আলাপন। বদ্ধ হলে কারাগারে, ওহে প্রাণধন ॥

প্রহর

প্রহর দেবপ্রসাদ ছাপ্পান্ন !  না তেমন কিছূ নয়,  আমার বয়স। এবার প্রহর গোনার সময়। জীবনটাই তো, উত্তাল প্রহরসমুদ্র।  কখনো দোলা দিচ্ছে,  কখনো অকূলে ভাসিয়ে বান ডাকছে, আবার ভাটার টানে স্রোত সরে গেলে- সামনে ধূ ধূ চর।  আবার উজানভাটায় নৌকার গুন টানিয়ে নিয়েছে। আমি আশ্চর্য হয়ে দেখি,  নৌকায় নির্জনে যে লোকটি বসে আছে,  ফিনফিনে ধুতি পাঞ্জাবি পোরে সেই মানুষটি,  নৌকার মোটা কাছির কাঁধে নুয়ে পড়া মানুষটি,  সেই আমি!  শরীরের বয়স যার তিন কুড়ি হতে চলল। প্রচুর গাছপালা নিয়ে ছিমছাম বাড়ি,  নামটার মধ্যেও নতুনত্ব-গোলকধাম।  লেখক কবি সাহিত্যিক সৌমেন চৌধুরীর বাড়ি।  কাছাকাছি থাকি তাই ছুটিছাটায়-  একবার দেখা করার চেষ্টা থাকে।  সেবারে গিয়ে দেখলাম,  একজন সন্ন্যাসী এসেছেন ওদের বাসায়।  সৌম্য, গৌরবর্ণ চেহারা, স্মিত হেসে কথা বলেন। সেই সন্ন্যাসীর সাথে, আমার তেমন কোনো,  অন্তরঙ্গ বহিরঙ্গ কথা হল না। ঘনিষ্ঠতা হল না,  অথচ তিনি আমার জীবনের যাবতীয় প্রহরগুলো, দাড়িপাল্লায় মেপে দিলেন। কপালের ভাঁজে ভাঁজে লেখা ছিল কিনা জানি না, তবে ঘরে পড়ন্ত বিকেলে-...

ভালো থাকো মনে রাখো কেউ আছে অপেক্ষায়। বৃথা সময় সব নষ্ট করো বহু ধনের আশায়। কথা বলো না যত  ভালোবাসো তত মনে হয় আসি আরো ভালোবাসি। অপেক্ষায় থেকে থেকে চোখ হলো ক্লান্ত,  পথভ্রষ্ট পথিক সেও পথচলায় শ্রান্ত। তবু একবার দেখা যদি পাই দিনে ভালো লাগেনা আর তুমি বিনে। ব্যস্ত আছো বুঝি তবুও তোমায় খুঁজি দেখছি এবার মন ভরে বুকের ওপর মাথা রেখে আদর বহু করছি আমি তোমায় দেখে দেখে। এই তুমি  সেই তুমি যাকে ভাবি বরাবর। সেই তুমি দিলে ধরা বহু বহু  বছর পর। তোমার এই মিষ্টি ছবি অস্থির হচ্ছে তোমার কবি।

কলমের আর্তনাদ

"কলমের আর্তনাদ" আমি দেখছিলাম,  কি জানি কারা যেন গলির ওপাশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছিল, বিচার চাই, বেশ লাগছিল, আমি তৃষ্ণার্ত আমার শরীরে একফোঁটা রক্ত নেই, রক্তের অভাবে আমি কিছু বলতে পারছি না। ছুটতে পারছি না, আমাকে একবার পেট ভরে খেতে দিলে চার হাজার কিলোমিটার দৌড়াতে পারি। কিন্তু এই ফোন ল্যাপটপ কমপিউটারের যুগে আমাকে না খাইয়ে মারার চেষ্টা চলছে। যদিও মরিনি এখনো, আমি বেঁচে আছি, ছাত্রছাত্রীদের হাতে হাতে, ওরা পদ্য গদ্য লেখে না যদিও অঙ্ক করে, প্রশ্নের উত্তর করে, পরীক্ষা দেয়। শোনো সভ্য মানব, এ পৃথিবীতে আমিই সৃজিত হয়েছি সর্বপ্রথম।  লিখেছি অনন্তকাল পর্যন্ত, সকলের ভাগ্যলিপি, রামায়ন, মহাভারত যত মহাকাব্য সব আমার এই মুখ দিয়ে, কয়েক লক্ষ মাইল ছুটেছি, আজ এই বৃদ্ধ বয়সে আমাকে অথর্ব করে রেখেছে।  আমাকে দিয়েই রচিত হয়েছে পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে অদ্যাবধি ইতিহাসের সকল অধ্যায়। পৃথিবীতে জন্মেছে যত মহা মনীষী ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ঝর্ণাধারা, আমিই দিয়েছি তাঁদের সকল জ্ঞানের দিশা। তাঁদের অনেকে হয়ত আজ নেই, কিন্তু তাঁরা অমর হয়ে আছেন সকল মানুষের বুকে এবং থাকবেন চির স্মরণীয় হয়ে চিরদিন সবার মাঝে। নিশ্চয় তাঁদের এ আকাশচুম্ব...

স্বপ্নের রঙিন পাখি

স্বপ্নের রঙিন পাখি দেবপ্রসাদ জানা স্বপ্নের রঙিন পাখি ওড়িল আকাশে। সবুজ পাতায় লাগে দুঃস্বপ্নের ধুলো। কালো রাত্রি অন্ধকারে মেঘেদের ঢেউ  ছিঁড়ে ছিঁড়ে উড়ে যায়, উত্তরের দিকে। উত্তরে, আরো উত্তরে জমাট বাতাসে। রঙের প্রলেপ লাগা রঙ করা তুলো। পৃথিবীর চোখে যেন অশ্রু তোলে ঢেউ। অজানা সে মেঘ গুলো, হিম হয়ে থাকে। সূর্য উঁকি মেরে দেখে, মনে মনে হাসে। এমন সোহাগী বেলা, কতক্ষণ বলো? এখুনি আসছি আমি, বলে দিয়ো কেউ। অযথা কু-কর্ম করে, দুষিবে আমাকে। রূপালী রাতের দিব্যি, মেঘ নিজে আসে। আহা নাম কীরে তোর? জিজ্ঞাসা করলো। সুন্দর রূপের খ্যাতি, বুঝবে না কেউ। রামধনু দয়া করে, রঙ মেলে রাখে। হলুদ ঘাসের পরে মরণেরা ভাসে। স্বপ্নের শেষ নিঃশ্বাস রাজকীয় ছিলো। গৃহস্থের ঘর রাখা, মৃতদেহে ফেউ। বানপ্রস্থে যাওয়ার আমন্ত্রণ থাকে। ঋণগ্রস্ত বোকাসোকা মানুষের পাশে- নেশাখোর মাতালেরা থম্ মেরে ছিলো হুমড়ি খেয়ে চৌকাঠে পড়েছিল কেউ- টান টান পেশীগুলো, নাচাতেই থাকে। সোনালি সুতোর ফাঁসে মৃত্যু এসে বসে। ভয়ঙ্কর নিঃসঙ্গতা যেন এসে ছিলো। হা-ডু ডু খেলার ছক কেটেছিল কেউ চৌহদ্দি এঁকেছে মৃত্যু বলে দিও তাকে।

মানসিক দুঃখ

মানসিক দুঃখ দেবপ্রসাদ জানা অনঙ্গ জ্যোৎস্নায় দেখি শুদ্ধতার মুখ  মনে পড়ে মেঘে ঢাকা বর্ষার দু-চোখ।  অকালে মৃত্যুর ক্ষোভ, মানসিক দুখ। আঘাতের ক্ষত সব, দেখেনি সে-চোখ। মাটির ছোঁয়ায় দৃঢ়, সবুজ অরণ্য। মেঘের কৌতুকে হাসে সাবলীল চাঁদ। রাতভর অন্ধকারে, কুয়াশারা ধন্য। অভিশাপ ছদ্মবেশে, কহে ধন্যবাদ। স্নেহময় আঙুলের ছোঁয়া দাও বুকে। সন্তানের ক্ষত বুক, কার অপরাধে। ঘন অন্ধকারে বলো কে আছে সুখে। ভুল সঞ্চারিত হয়, প্রজন্ম-বিবাদে। কঠোর ঘৃণিত বাক্য নিজস্ব শাসনে   আঁধার বপন করে সন্তান-হৃদয়ে। ভালোবাসায় মাতাল, যাহারা এমনে কটু বাক্যে ফেরাবে না, কু-ভাষার ভয়ে। বেহেড মাতাল হয়ে বাড়ি এলে ছেলে, পিতার শূন্য হৃদয়ে, রূপালী জোছনা। অপরাধের সকল পাপ তুলে তুলে। আলমারি বন্ধ করে, নীরব বন্দনা।

গোলাপের রঙ

গোলাপের রঙ দেবপ্রসাদ জানা আরো একবার গোলাপের রঙ বদলে গেল সাদা গোলাপের রঙ- লাল হয়ে গেল তোমার রক্তে, বলেছিলাম ভালোবেসো না আঘাত আসবে, তুমি শোনোনি, মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে আকাশকে ভালোবাসলে, চুপিচুপি দূরে সেই দূর প্রান্তে মাঠের শেষে একসাথে এক হয়ে গেলে, ভূলে গেলে আমার কথা, সূর্যের সিঁদুরে মরণ টিপ কপালে তুললে, পূব দিকে করুণ আঁধার, আগুন আগুন চোখে, অবজ্ঞায়- আমাকে ফেলে গেলে,   রক্তের ভিতরে চেতনার নিঃশব্দ প্রয়াণ। বুঝে ছিলাম খুব দ্রুত ছেড়ে যাবে তুমি, বিপন্ন বিস্ময়ে দুঃখের নদীর মতো- দুই চোখে বান ভাসিয়ে ফিরে এলে। বলেছিলাম মেঘমালার ঘর আকাশ ভাঙবে না। মেঘ যতই কালো হোক,  আকাশ মেঘের প্রেম বন্ধন চিরকালের, শোনো না বজ্রের চীৎকার। মেঘকে ভালোবেসে অন্তর্গত শূন্যতায় নিঃশব্দে হৃদয়ালোক ছিটিয়ে গর্জন করে ওঠে বার বার। আহা রে প্রকৃতি বৃথা কেন তুমি জেগে আছো?  সংসার শিয়রে ঘোর রজনীর ছায়া। প্রসারিত হাতে বৃথা তব প্রেম আহ্বান। চেতনায় তব দেহজ সুষমা, আজ শূন্য প্রান্তরে অবরুদ্ধ অন্ধকার। সমুদ্রের জলে, আজ উথাল পাথাল, কেঁদে কেঁদে প্রকৃতি ভূবন ভরায়। যত ছিল প্রেম সব যেন গোলাপের লালিমায়।

চার্লি চ্যাপলিন

শিক্ষক ক্লাসে ঢুকে একটি ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেনঃ   তুই বল আমাদের শরীরে ক'টা কিডনি আছে ? ছেলেটি চটজলদি উত্তর দিলঃ  চারটে কিডনি স্যার।  ছাত্রটির উত্তর শুনে ক্লাসের বাকি ছাত্ররা হো হো করে হেসে উঠলো।  শিক্ষক বললেন তোমরা হাসি থামাও।  তারপর অপর একটি ছাত্রকে বললেনঃ  এবার তুই দাঁড়া।  ছাত্রটি জিজ্ঞেস করলঃ  স্যার কটা কিডনি আছে বলব, নাকি বেত আনবো?  শিক্ষক বললেনঃ  না কটা কিডনি আছে বলতে হবে না, বেতও আনতে হবে না, তুই কিছু ঘাস নিয়ে আয়। একদম তাজা ঘাস।  ছাত্রঃ  ঘাস দিয়ে কি হবে স্যার?  শিক্ষকঃ  ক্লাসে একটা গাধা আছে তাকে খাওয়াবো।  এই কথা শুনে আগের ছাত্রটি বললঃ  যাও ঘাস নিয়ে এসো, সেই সঙ্গে এক কাপ কফি ও আনবে।  শিক্ষক রেগে, কফি আনবে কেন, কফি কে খাবে? ছাত্রটির উত্তরঃ  স্যার! কফি খাবো আমি, আর যে গাধা সে ঘাস খাবে।  শিক্ষকঃ  তাহলে গাধাকে ?  ছাত্রঃ  স্যার আপনি জিজ্ঞেস করেছিলেন আমাদের কটা কিডনি আছে ?  আমার আর আপনার মিলিয়ে তো চারটেই কিডনি আছে। তাহলে আমি নিশ্চয়ই গাধা নই। শিক্ষক রেগেঃ  তুই...

ঝরাপাতার স্বর

ঝরাপাতার স্বর দেবপ্রসাদ জানা কতদূর কোন পাখি উড়ে যাবে কে তা জানে  স্তব্ধতা কত গভীর তা নিঃস্তব্ধতা জানে, আকাঙ্ক্ষার চুড়ায় কত জীবন  সবার অলক্ষ্যে নির্মুল হয়ে যায়। তবু জেগে থাকে সমুদ্র,  বেঁচে থাকে নদী। খাঁচা বোঝে শূন্যতার ব্যথা। সময়ের খরস্রোতে হারিয়ে যায় অতীত ছিন্নতার ব্যথা বোঝে পাতা  স্বপ্নময় নীলাকাশ বোঝে প্রেমের খিদে কাঁকর বোঝে পিঠের ওপর বোঝা নিয়ে থাকা। অনন্ত আড়ালে সুখ দুঃখ মৃত্যুর সংসার  নিভৃতে নিঃশব্দে শোনা যায় পাতা ঝরার স্বর। ধ্বনিময় হাহাকারে প্রেম কাঁদে, জীবনের দীর্ঘতর পথে কতটুকু কাঁটা লাগে পায়ে সে বোঝে জানে। চলার সীমারেখা একদিন শেষ হয়,  আসে মৃত্যুর পরোয়ানা। এক মুহূর্ত ও অপেক্ষা নয়,  চলা শুরু সেইক্ষণেই,  প্রতিধ্বনি হলে বুঝি, ন্যূনতম দুরত্বেই  সে আসছে, অবাঞ্ছিত অবাঞ্ছনীয় মৃত্যু। ধুলো মাখা জীবন থমকে দাঁড়ায় মৃত্যুর  কাছে, স্তব্ধতার পাথর খায় - অসমাপ্ত জীবনের হৃৎপিণ্ড। সমস্ত অলীক স্বপ্ন কুয়াশার ভেতরে হারিয়ে যেতে থাকে ক্রমশ। সে পাখি শূন্য বাতাসে সীমানা ছাড়িয়ে  উড়ে যায় অনন্তে কোথাও পাখি তা কতটুকু জানে।

সন্তুষ্টি

সন্তুষ্টি দেবপ্রসাদ জানা 'সন্তুষ্টি' নামে একটি শব্দ আছে দুনিয়ায়.. সত্যিই আমি  উপভোগ করি—   বুদ্ধিমত্তা বিনোদন মিশেলের কারণে।   এটি থেকে আমি শিখি, ভীষণই ভালো লাগে। চিৎকার-চেঁচামেচি-হীন,  নাচানাচি-কান্নাকাটি ছোঁড়াছুড়ি  স্নিগ্ধ, সাধাসিধে ব্যক্তিত্ব। ইঞ্জিন বিকল –  সুদীর্ঘ অবিশ্রান্ত শ্বাসে জাগে ফাটা বয়লার,  অবরুদ্ধ গতিবেগ।  গলানো ইস্পাত, দৃঢ় অস্ত্র হানে বারবার।  জ্বলন্ত অগ্নির তাপ, যন্ত্র জানোয়ার  সুদুর্গম দেশে, সমতলে সমান্তরাল প্রেম,  রেলের লাইন যেন- সেতুপথ পার হয়ে, অভীষ্ট লক্ষ্যে ছুটে চলে,  উত্তরে, আরো আরো উত্তরে আহত সন্ধ্যাতারা অবশেষে মিটি মেটি হাসে  দূরের আশা জ্বলে বালবে লাল-নীল-পীত;  উজ্জ্বীবিত কামনার অগ্নিমোহ-অশান্ত ক্ষুধাতে;  লক্ষ্যভ্রষ্ট ম্লান চাঁদ,  কৃষ্ণপক্ষের রাতে জাগে নারী, আর স্বপ্নের ইঙ্গিত। আজকের পৃথিবীতে, ছুট - পেছনে পেছনে ছুটছে তো ছুটছেই—  দাঁড়িয়ে ভাবার সময় কই, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ছুটছে ভাবার ফুরসৎ নেই।  থামছে না কেউ, সন্তুষ্টি নেই,  লোভ ফুরাচ্ছে না, সমস্যা অতোটা নেই,...

কায়াহীনের দেশে

কায়াহীনের দেশে দেবপ্রসাদ জানা তোমরা যে ফুলের শয্যায় রেখেছ, কটা গোলাপ দাওনি ওতে, গোলাপের সুবাস ভারি প্রিয়। চারদিকে ঘেরা স্বচ্ছ কাঁচের বাইরে তোমাদের কান্নার শব্দ হারিয়ে যাচ্ছে, তোমাদের মুখ গুলো অন্ধকার লাগছে মন খারাপ হলে যে নদীর ধারে গিয়ে বসতাম, সেই নদীই আজ আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে অনন্তে। কাঠের আগুনে বড় চোখ জ্বালা করে, রামকৃষ্ণ মহাশশ্মান,  যাকে তোমরা রতনবাবুর ঘাট বলো, ওখানেই নিচ্ছো তো?  আমার কথা গুলো শুনতে পাচ্ছো না তোমরা। আর একটু এগিয়ে কুঠিঘাট,  ওখানে একবার নিয়ো, আমার স্বপ্নের স্থান। জীবনের অনেকটা সময় ওখানেই কাটিয়েছি। জেঠির ওপরে জোছনায় কী উচ্ছাসে - উষ্ণ রিপুগুলি শীতল জ্যোৎস্নায় ভরে যেতো। আমার বোধশূন্য শরীরটা স্পর্শ' করে দেখেছ? কত শান্ত, কিন্তু ভেতরে? নদীর- টালমাটাল নৌকা। যেখানে দুঃখের জন্ম হচ্ছে প্রতিদিন।  যেখানে আত্মমগ্ন ছায়া,  প্রাচীন নিদর্শ'ন ধ্বংসস্তূপ, ইতিহাস হচ্ছে। আজও নদীর মতো ছুটে চলেছি নদীর উপেক্ষায়, কী প্রজ্ঞায় নিয়ে যায় নদী, অচেনা প্রদেশে। সেই অস্থিরতা হীন মায়াহীন, কায়াহীনের দেশে। সমস্ত স্তব্ধতার ভিতরে শুদ্ধতার কথা ভেবেছি সমস্ত ক্ষয়ের ভিতরে আজ মৃত্যু-চন্...

বন্ধু ভুলে যাবো

বন্ধু ভুলে যাবো দেবপ্রসাদ জানা জানিস হিমাংশু, কতদিন দেখিনি তোকে। আগে তবু আসতিস্ অফিসে। তোর জাহাজ এখানে পাড়ি দিলে,  দেখা করতিস্, গল্প হতো সঞ্জীবের, সুশান্ত, তাপসের। পুরানো দিনের সব কথা, স্কুলের কথা-পড়ার কথা সবই ভুলে যাবো একদিন,  সময়ের সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে সবই ভুলে যাবো। তুই তবু যোগাযোগ রেখেছিস্ বরাবর, আমি পারিনি, মুখ লুকিয়ে থেকেছি ভাই- তুইতো জানিস্ ভাই কত প্রতিকুলতায় আমি জীবনের প্রতিটা ধাপ এগিয়েছি। কাঠ ফাটা রোদ্দুরে - বাবা যখন কাজের উদ্দেশ্যে হেঁটে যেতো,  মেঘ চিরে তেড়ে আসা জ্বলন্ত সূর্যের আক্রমণে  আক্রান্ত বাবা, ছায়ার সন্ধানে ছুটেছে দৌড়েছে। আমি পারিনি তখন তাকে এক পাত্র ছায়া দিতে। উদাসীন মায়ের আঁচল খানাও ছিঁড়ে কুটিকুটি। আইবুড়ো বোন এক্কাদোক্কা খেলতে খেলতে একদিন পার হয়ে যায় বয়সের খেলা ঘর। বোনের চন্দন মাখা হাতের গন্ধ।  সমাজের চোখের আগুনে পুড়ে ছাই,  তোকে বলতে পারিনি,  হাজার স্বপ্নের ভিড়ে, হারিয়ে গেছে  বন্ধু বন্ধনের সুতোহীন টান,  সবই ভুলে গেছিলাম, সব ভুলে গেছি। বাঁচার চৈতন্যে প্রতিধ্বনিময় রৌদ্রাক্ত মাঠে শুনতে চেয়েছি ফুল ঝরার শব্দ।  পথ চলার ছন্দ ক্...

আগুনের ফুলকি

আগুনের ফুলকি দেবপ্রসাদ জানা ততক্ষণে লড়াই হয়েছে- আমি তখন একটা কাঠ পাতার ঘরে, নিজেকে লুকিয়ে রেখেছি সকালের সোনালী রশ্মির মত-  ফোঁটা ফোঁটা রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে, বন্ধ আদালতে অপরাধীর বিচার সভা। বোমার আঘাতে ভেঙ্গে গেছে আদালতে কাঠগড়া। শহরের গেট বন্ধ হয়েছে,  দুঃখে মোমের চোখে জল,  হাহাকার করছে জনতা, রাতের কারফুর ধাক্কায় শহর নিঃস্তব্ধ। মেয়েটা এসেছিল ব্যাণ্ডেজ হাতে। এখন সেই ব্যাণ্ডেজে মোড়া দেহ- তিলোত্তমা। ফিরে আসতে মাঝরাতে, তার সাদা অ্যাপ্রনে রক্তের রক্তিম বর্ণালী চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে  সন্ধ্যাবেলার রোদ, এক চিলতে পথ, যার পথে চোখ মেলে রয়েছে ফিরে আসেনি তিলোত্তমা- আদরের হাতটা দেয়নি বৃদ্ধা রোগীর গায়ে, বলেনি ভয় কি ঠাকুমা ঠিক হয়ে যাবে আমি তো আছি।  আক্রমণকারী রাইফেলে নয় বোমার আঘাতে ভেঙ্গে দিয়েছে সব বোমার টুকরো-শত শত রক্তের ফোঁটার মত, হাসপাতালের আনাচে কানাচে-  বিচার হইনি এখন বন্ধ আদালতের দরজা। দোষী কই? সেতো নেই প্রমানও নেই হাতে, সবাই সব জানে, কাঠ পাতার কুঁড়ে ঘরে লুকিয়ে  প্রতিবাদের ভাষা, "উই ওয়ান্ট জাষ্টিস" আতঙ্ক পা টিপে টিপে হাঁটতে থাকবে প্রতিদিন। লুকিয়ে পড়বে কোনো জঙ্গলে, ...

দশ অবতার

দশ-অবতার  শ্রীমৎস্য-অবতার কল্পের শেষ হয়েছে, নিয়ম মাফিক  সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা ক্লান্ত, ভারি পরিশ্রান্ত  এর মধ্যে সবে নিদ্রা আবেশ হয়েছে।  যোগনিদ্রা, ঘন ঘন উন্মত্ত উন্মাদে ব্রহ্মার শরীর জুড়ে, প্রসারিত হচ্ছে নিদ্রা এখন শয়ন শুধুই বিশ্রাম - ওই ভাব ও ভাবনা দেখে বলবান্  হয়গ্রীব নামে এক রাক্ষস, ব্রহ্মার  শ্রীমুখ হতে নির্গত বেদসমূহকে  চুরি করলেন। ভগবান হরি  হয়গ্রীবের ওই দুষ্কর্মের কথা জানতে পারেন ও স্বয়ং শফরী মৎস্যের রূপ ধারণ করেন। ওই সময় শ্রীভগবান নারায়ণের ভক্ত সত্যব্রত নামে শ্রেষ্ঠ রাজা জলে বসে তপস্যা করছিলেন। একদিন তিনি কৃতমালা নদীতে জল দিয়ে যখন তর্পণ করছেন, ঠিক সে-সময় তাঁর হাতের অঞ্জলিতে থাকা জলের মধ্যে একটি শফরীকে (পুঁটি মাছ) দেখতে পেলেন। রাজা তাঁর অঞ্জলির মধ্যে থাকা জলে সেই মাছটিকে দেখে, তাকে নদীর জলেই ফেলে দিতে উদ্যত হলেন। তখন সেই শফরী পরম দয়ালু রাজাকে অত্যন্ত কাতর হয়ে বলতে থাকে হে দীনজনের প্রতি করুণাময় মহারাজ! আমি আমার হিংসাপরায়ণ আত্মীয়দের ভয়ে ভীত ও অত্যন্ত দীন। অতএব আপনি আমাকে কি-ভাবে জলে ছেড়ে দিতে উদ্যত হয়েছেন? রাজা দেখলেন, হ্যাঁ তা'তো ঠিকই, বড় বড় ...

টঠট

জোয়ারের টানে চক্রের বন্ধনে জীবনের পরিবর্তন,    বাস্তবে আবর্তনের বদ্ধতাই স্মৃতি রোমন্থন।  আমি শুনেছি সমুদ্রের গর্জনের গভীরতা,  আত্মার সাথে সাথে চুপি চুপি কয় কথা।  সমুদ্র তটে, মনের সাথে উথালি ঢেউ বিকুলিতে আছড়ে পড়ে,  নোনা জলের , স্বাদে   গোপন রহস্য জাগে অন্তরে।  এক দৃষ্টিতে  উথালি ঢেউয়ে অনুভব প্রকাশ পায়,  সমুদ্র তটে, ঐ নীল গভীর চোখের মায়ায়,  এক নিমেষে  দিল সব ভাসিয়ে ঢেউয়ের ভেলায়,  কোথায় যেন দুলছি দোদুল দোলায়।  দুদিনের তরে মায়ার বন্ধনে , মন পাগল পারা,  তার নেই ঢেউয়ের শেষ সে যে আপন কাজে আপনি হারা।  সমুদ্রের গভীরের অতলে মুক্তার খেলা রাশি রাশি, আকাশ ভরা তারাদের  মায়া ভরা হাসি।  তার ঢেউয়ের তরঙ্গে চাঁদের উল্লাসে উঁকির  ছায়ায় প্রতিবিম্ব আনে।  যতবার যায় আসি,  সমুদ্রের হাতছানি যেন বারবার আমায় আকর্ষণ করে, হৃদয়ে স্পন্দন  জাগে।। 

সর্বশক্তিমান

সর্বশক্তিমান দেবপ্রসাদ এ ভবে, কেউ রাজা নয়, কেউ নয় প্রজা। তার আশ্রয়ে থাকি মোরা, সেই এক রাজা। সে যেমন, চালায় মোদের, চলি তেমন করে। সেই, দিনের বাতি জ্বালে, সেই আঁধার ভরে। ভোরের শিশির সেই আনে, শীতল করে বায়ু। সেই, জীবন মৃত্যু সাজায়, সেই গড়ে আয়ু। অঙ্ক কষে সময় চালায়, গনিতে খুব পাকা। টিক্ টিক্ ঠিক ঠিক, ঘোরে সময় চাকা। সময় মেপে চক্র ঘোরায়, চলে চন্দ্র তারা। তার ছোঁয়াতে ফুলেরা সব, এমন রঙিন পারা। তার আদেশে সাগর নদী, উচ্ছলে পড়ে পাড়ে। কল কল কল বইছে স্রোত, নদী কেমন করে। মেঘের আনাগোনা দেখো, কেমন মন কাড়ে। পথ হারিয়ে যাক না পাখি, ঠিক ফিরে নিড়ে। তার আবেশ মূক পাখি, গাইছে দেখো গান। সব শক্তির একই আধার, সে সর্বশক্তিমান।

মায়ের ছায়া

মায়ের ছায়া দেবপ্রসাদ জানা মায়ের হাতে ক্ষুন্তি ছিল, ছিল রুটির বেলনা। লক্ষ কোটি প্রাণও ছিল, তার হাতের খেলনা। মায়ের বুকে আঁচল ছিল, আদর জড়ানো ছায়া। আমরা ক'জন দুষ্টু প্রাণ, পেয়েছি তার মায়া। মায়ের করা শাসন ছিল, ঘুম পাড়ানো গান। আমরা ক'জন, উন্নত জীব, ধরেছি তায় প্রাণ। মায়ের হাতের রান্না ছিল, অমৃত যার নাম। মায়ের খিদে পেটেই ছিল, দেয়নি কেউ দাম। পড়তে বসে মায়ের ভাষা, মিষ্টি মিষ্টি কত ছড়া। নজরুল আর রবীন্দ্রনাথ, সব ছিল তার পড়া। কত কত বায়না করে, পেয়েছি বকা ঝকা। খানিক পরে এনেছে নিজে, খেয়েছি বসে একা। আজকে মায়ের আঁচল নেই, পরেছে বিদেশ কুর্তি। মায়ের ছোঁয়ার আদর নেই, করছে ছেলে ফুর্তি। হারিয়ে গেছে মায়ের আঁচল, বট গাছের ছায়া। মানবতার দিন গেছে সব, ঘুরছে নষ্ট কায়া।

কষ্টের কাহিনী

<<< একটি ছোট কষ্টের কাহিনী আবিরের  অনেক স্বপ্ন। অনেকের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে। এই কারণে  ফেসবুকে আইডি খুলিছে। সে স্কুল-এ খুব চুপচাপ থাকতো। স্কুলে ছিল তার অনেক বন্ধু। কিন্তু সবাই ছিল ছেলে। কোন মেয়ের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়নি। ফেসবুক আইডি খুলেছে সে ২০০৯ সালে। তখন সে প্রতিদিন এ সাইবার ক্যাফ-এ গিয়ে ফেসবুক ব্যবহার  করতো। সে কখনো ভাবে নি যে তার আজ এই পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হবে। তখন তার ফেসবুক আইডি তে ও কোন মেয়ে বন্ধু ছিল না। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যায় সে। জানতে পারে যে তার মামাতো ভাইয়ের ফেসবুক আইডি আছে। ভাইকে তার ফ্রেন্ড লিস্ট এ অ্যাড করল সে। তার ভাই তাকে পরিচয় করিয়ে দিলো তার অনেক বন্ধু-বান্ধব এর সাথে। সাথে তার জিএফ এর সাথেও। রাফা তার ভাই এর জিএফ কে ভাবি বলে ডাকতো FB তে । সামনাসামনি তাদের এখন দেখা হয় নি। রাফা অনেক দুস্টামি করতো তার ভাবির সাথে। হঠাৎ একদিন তার ভাবি তাকে বলল তোমার জিএফ নাই। সে সরাসরি উত্তর দিলো না। ওর ভাবি একজন এর প্রফাইল লিঙ্ক দিয়ে বলল তোমার মত আমার এই বান্ধবীটিও একা। রাফা তাকে ফ্রেন্ড রেকুয়েস্ট পাঠায়। মেয়েটি এক্সেপ্ট করে। তার নাম তানি। তাদের মধ্যে ...

জোছনা

জোছনা স্বর্ণহংস জাতক না গত ষোলো বছরে প্রদীপ জ্বলেনি তার ঘরে আলোর রোশনাই যখন শহর জুড়ে তার ঘরের ভাঙা জানালা গলে  এক টুকরো আলো আসেনি। একটা বাতি চাই,  যে চাঁদ আলো ঢালে, সেই চাঁদও উঠেনি আজ, তার নাকি উঠতে মানা, কটা দিন, জোছনার বয়স যে সবে ষোলো,  হৃদয় জোড়া ভালোবাসার মৌচাক। অথচ তার মনের মৌচাকে এখনো একটুও মধু আসেনি। বসেনি মৌমাছি। এখনো মনের মৌচাকে শূন্যতা। প্রেমের কামড় চায় মন। অন্ধকারে প্রেমের পোকা গুলোর উৎপাত হিমেল বাতাস আর কামনার জ্বালা। দেহের প্রতিটা কোষ প্রেমের ক্ষুধায় কাতর। মনের ফাগুন উষ্ণতা চায় পেটে হাজার ক্ষুধা, তবুও যৌবন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কয়েক টুকরো  ভালোবাসার পোড়া কাঠ মজুত করেছে আর এক বাণ্ডিল আগুন। এক উচ্চবংশে জন্ম তার,  জীবনটা কাটিয়ে দিলে হতদরিদ্রতার আঁধারে।  স্বপ্ন ছিল তার আকাশছোঁয়া।  বন্ধনহীন সম্পর্কের মাঝে এক ক্ষুধার বন্ধন। দেহের কোটরে কোটরে যৌবন  মনের গভীরে ভরা ভালোবাসা-  অন্ধকারে আলো ছড়িয়ে দিবে।  হাহাকার আর আকাঙ্ক্ষা -  প্রশান্তির বদলে নিয়ে আসবে অপমান— এতো বেদনার ভেতর দিয়ে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া। রাতে ছারপোকার কামড়ের মতো যৌবন কামড়ায়, ক...

থাক তবে আজ

থাক তবে আজ  দেবপ্রসাদ জানা থাক তবে আজ  কাল না হয় পরশু দেখা হবে পথে কিংবা গাছের তলায় স্কুলের মাঠে তুমি বলবে সংসার - সেটা তো আমি জানি  প্রতিদিনের প্রতিশ্রুতি প্রতিদিনের ক্ষোভ অপেক্ষায় অপেক্ষায় জীবন   চিরকাল এভাবেই কথার খেলাপ হোক ভারি মজা লাগে অপেক্ষায় থাকতে- ময়দানে বা গড়ের মাঠে। তুমি বলবে কাজে বড় ব্যস্ত সে তো জানি আমি, তবূ মনে হয় বারবার  মাটির মূর্তি নীরবে নিশ্চলভাবে  ওই পথের দিকে - জানো দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে  অপেক্ষা করতে করতে একদিন মোড়ের বট গাছটার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। ও শান্ত বাতাসে - শীতল ছায়ায় -  মন্দ লাগে না মোটেও আজ কাল অপেক্ষায় থাকি তোমার জন্য, তবে তোমার আসার পথ দেখি না শান্ত বাতাস আর শীতল ছায়া  আমাকে বসিয়ে রাখে একদিন বড় উতপ্ত দিনে পুড়ে যাওয়ার জোগাড়। হঠাৎ যেন বটের আহ্বানে বৃষ্টি, প্রাণ জুড়িয়ে দিলো। আমি অভিযোগ করছি না, বলছি - তোমার অবহেলার বিষ, আমাকে যখন দূর্বল করে চলে যাই বটের তলায় নয়তো স্কুল মাঠে  সবুজ ঘাসের ওপর শুয়ে আকাশ দেখি। বাতাস বইছে নির্মল শান্তির বাতাস আসলে কেউ বুঝতেই চায় না  অপেক্ষারও মুল্য কম নয়, তাই অপেক্ষায় থা...

অনুদান

বলতে পারো তোমরা কেন ভয়ের খাতায় নাম লেখো। প্রতিবাদের ঝড় তুলে পথের ধারে রঙ দেখো। বলতে পারো তোমরা কেন ভিক্ষের হাত বাড়িয়ে দাও মাসে মাসে এমন দয়া হাত পেতে কেন নাও। জানো না কি ওই দয়াতে ভোলায় সবার মন। দাসী হচ্ছে তাদের ঘরে তোমার আপন বোন। জানো না কি সন্ধ্যা হলে বেরোয় লোভী হায়না। হাজার টাকার মূল্য নিতে ধরবে তখন বায়না। পায়ের তলায় মরছে দেখো হাজার তিলোত্তমা। কোটি কোটির অনুদানে খুলছে বোনের জামা। বলতে পারো তোমরা কেন নিচ্ছো এমন দান। সব কিছু শোধ দিতে হবে নাইকো পরিত্রান। বছর বছর উৎসবেতে দিচ্ছে প্রচুর টাকা। বলতে পারো কোথায় ছিল এই টাকাটা রাখা। কোটি কোটি বাড়ছে ঋণ তোমার আমার ওপর। মাথা পিছু কোটি কোটি

আঁধারের বন

আঁধারের বন দেবপ্রসাদ তৈরি হও, তৈরি হও বিপদ সম্মুখে!  তুমিও ডুবছো, দেশ ডুবতে বসেছে।  তুমি ক্ষীণ শক্তিহীন, বিপদের মুখে! অবিছিন্ন বেদনার সাথি বসে আছে। কোন সংশয়ে এসব জায়গায় আছি। আমরা ঢুকে পড়েছি শেষের সীমায়।  এতো অভিযোগ আছে, তবু সব বাঁচি। তোমাকে ধরেছে রোগে, বলেছ আমায়। মরতে বসো না, ভাই, আত্মহত্যা পাপ। সহ্য করো ধৈর্য্য ধরো, সঠিক সময়ে- সূর্য উঠবে আবার,  কিসের সন্তাপ। যদি বেঁচে থাকো তবে, বাঁচো না অভয়ে। কবর খোঁড়ে কে বলো, এই আমরাই। অন্যায়ে, লুটিয়ে-পড়া মানুষের মন। হেরে যেতে যেতে করো, নিজের লড়াই।  তোমার চারপাশে যে আঁধারের বন।

আলোর বসন্ত

আলোর বসন্ত দেবপ্রসাদ ১ রাত্রির কাছে কি দিন পরাজিত ভূল। আছে আলোর বসন্ত, কুসুম রঙিন। আছে পদদলিতের ছিন্ন মুক্তি ফুল। বায়ু সেও মৃদু মৃদু বহে, রাত্রি দিন। যেথা লজ্জা-পুষ্পগন্ধ চুরি করে যায়। সরোবরে স্নান করে, যেথায় সুন্দরী। বসে বাতায়নোপরে, গ্রীষ্মের জ্বালায়। নীল আকাশের থেকে মন চুরি করি। মেঘবালিকারে ধরি, মুখো চুম্বি তার। অঞ্চল চঞ্চল করি, স্নিগ্ধ করি কায়।  আলোর পৃথিবী তবে মুক্ত করে ভার। এমন আঁধার তারে, কেমনে ভুলায়? বনে বনে কারা যেন, বাজায় বাঁশরী।  বাজে মোহন বাঁশীতে, সুরের লহরী। ২ উঃ ফুল গুলো যে সব কাঁটা হয়ে গেল।  কার গুণে, বৃন্দাবনে, বৃন্দাবনেশ্বরী। ওরে ছল করে জল, কে যে নিতে এলো। নিশীথ ফুলে উজল, কানন বল্লরী। কার মাঝে বাজিতেছ বংশী রূপ ধরি। কুয়াশার আড়ালে কে দাঁড়িয়েছ প্রিয়ে। কুটিল রাত্রিরা ঘোরে দিন রূপ ধরি। ফুলের শয্যায় কেন, রাত্রি আছে শুয়ে। বিশ্বস্ত বন্ধুর হাত, ঘাতকের হাত। রক্ত মাখা হাতে যার, গোলাপের কুঁড়ি। জড়িয়ে রয়েছে স্নেহে এক মুঠো ভাত। বিক্ষত বুকের টান, হাঁটে গুড়ি গুড়ি। আদরের স্পর্শ নিতে, এক মুঠো রাত। পাঁজরের পোড়া ছাই, হয়েছ বরাত।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কয়েক বছরের জন্য সন্ন্যাস জীবন যাপন করেছিলেন। সময়টা আনুমানিক ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের প্রথমদিক। এই সময় তিনি হঠাৎ একদিন গৃহত্যাগ করেন। কেউ বলেন- তাঁর মায়ের আকস্মিক মৃত্যুতে তিনি খুবই ভেঙে পড়েছিলেন। তাই বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। আবার কেউ কেউ বলেন, তিনি নিজের পিতার উপর অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।                কেউ কেউ এমনও মনে করেন- ভাগলপুরের রক্ষণশীল নেতারা শরৎচন্দ্রকে একটি বিশেষ কারণে সমাজচ্যুত করেছিল। ফলে তিনি সেই সময় মর্মান্তিক আহত হয়ে ভাগলপুর ত্যাগ করেন।               কারণ যাই থাক না কেন। তিনি যে বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন এবং সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন তার বহুবিধ প্রমাণ পাওয়া যায়। এই সময় তিনি সন্ন্যাসীর বেশে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। এমনকি নাগা সন্ন্যাসীদের দলে ভিড়ে গেলেন বেশ কিছু সময়ের জন্য। এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন তিনি মজঃফরপুরে এলেন। প্রত্যক্ষদর্শী নরেন্দ্র দেব এ প্রসঙ্গে তার 'শরৎচন্দ্র' গ্রন্থে লিখছেন-          "তাঁর মজঃফরপুর আগমন সম্বন্ধে স্বর্গীয় প...

কলকাতা

আজও নানা রহস্যে ঘেরা জব চার্নকের আগের কলকাতার ইতিহাস! বাঙালি আজকের ২০২১ এ সারা পৃথিবীতে নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকলেও কলকাতার প্রতি সে আজও এক তীব্র আকর্ষণ অনুভব করে। কলকাতার প্রেমে সে বার বার হাবু ডুবু খায়। কলকাতার উৎপত্তিটাই নানা সময়ের কাল চক্রে নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা খুঁজে পাই। এই ২০২১ সালে দাঁড়িয়েও কলকাতা নগরীটার কোণে কোণে পাওয়া যায় অজানা নানা তথ্য। জব চার্নকের আগের কলকাতার কথাই ধরা যাক। দ্বাদশ শতাব্দীর আগে পোদ্ , জেলে, দুলে বাগদী এই আদিবাসী দের নিয়ে একটা জনবসতি অঞ্চল গড়ে উঠেছিল। নাম দেওয়া হয়েছিল কালী ক্ষেত্র। বর্তমানের বেহালা থেকে দক্ষিণেশ্বরের মধ্যবর্তী জায়গাই কালীক্ষেত্র নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। বিশিষ্ট ঐতিহাসিক মার্টিন সাহেব দক্ষিণেশ্বরকে সেই সময়ে বাংলার রাজধানী হওয়ার উপযুক্ত মনে করতেন। আরও পিছনের দিকে ইতিহাসের পাতা থেকে জানা কিছু তথ্য। গুপ্ত আর হর্ষবর্ধনের সামাজ্যের পতনের পর তাঁর বংশের মানুষজন তাদের সঞ্চিত ধনরত্ন আর কুলদেবী সিংহবাহিনীকে নিয়ে বাংলার করখানি গ্রামে বসবাস শুরু করে। পরে সেই জায়গাই সপ্তগ্রামে প্রসিদ্ধ হয়। পুরনো জমিদারদের বাড়িকে কেন্দ্র করেই হাট বাজা...

হৃদ

যদি হৃদহারা হই। দেবপ্রসাদ জানা যদি এমন হয় - মরণ আসে তোমার আগে তুমি রাতভর নিদ্রায় দুঃস্বপ্নের অশান্ত  অন্ধকারে হৃদয়ালোক জ্বেলো। দুর্বোধ্য জোছনার চাদর বিছিয়ে দিয়ো পথে। প্রেমের নিয়ন আলো যদি নিভে যায় - আঁধার আকাশে যদি নিরুপায় হয়ে, কালো মেঘের আড়ালে চলে যায় জোছনা আঁধার চাঁদের গায়ে আলো মেখে দিয়ো- হাজার নক্ষত্রের। শীতাতপ বর্ষা ক্লেশে  হৃদয়ে লুকিয়ে রেখো সোহাগে। আলোর ভ্রূণ যদি মরে যায় অকালে হৃদহারা হই কোনোদিন- চাঁদের আলোর অপেক্ষায় রেখো নিথর নিদ্রায় যাওয়া এই দেহটি।

রাত

তুমি রাত নির্ভর নিদ্রায় দুঃস্বপ্নে অশান্ত অশ্বের লাগাম টেনে  আবেগের প্রফুল্লতায় আদি-অন্তের  দুর্বোধ্য ইতিহাসে কুয়াশার চাদর বিছিয়ে  হৃদয়ে জ্বালিয়ছ প্রেমের প্রদীপ।  মেঘলা আকাশে নিরুপায়  সূর্যের ন্যায় প্রেমালোক গুছিয়ে  নিশিথে চাঁদের গা ছোঁয়া আলো মেখে  হাজার নক্ষত্রকে সাক্ষী করেও  দুর্বোধ্য উত্তরে বোবা কাব্যের কান্না মাতৃগর্ভে লালিত এখনও আলোর ভ্রূণ  তাই নীড় হারা পাখির স্বজন  চাঁদের আলোর অপেক্ষায় নির্ঘুম সময় মরুপথ জুড়ে নিশ্ছিদ্র প্রহরায় আঁধারে আলো নিথর নিদ্রায় নিরুত্তর।