কায়াহীনের দেশে
কায়াহীনের দেশে
দেবপ্রসাদ জানা
তোমরা যে ফুলের শয্যায় রেখেছ,
কটা গোলাপ দাওনি ওতে,
গোলাপের সুবাস ভারি প্রিয়।
চারদিকে ঘেরা স্বচ্ছ কাঁচের বাইরে
তোমাদের কান্নার শব্দ হারিয়ে যাচ্ছে,
তোমাদের মুখ গুলো অন্ধকার লাগছে
মন খারাপ হলে যে নদীর ধারে গিয়ে বসতাম,
সেই নদীই আজ আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে অনন্তে।
কাঠের আগুনে বড় চোখ জ্বালা করে,
রামকৃষ্ণ মহাশশ্মান,
যাকে তোমরা রতনবাবুর ঘাট বলো,
ওখানেই নিচ্ছো তো?
আমার কথা গুলো শুনতে পাচ্ছো না তোমরা।
আর একটু এগিয়ে কুঠিঘাট,
ওখানে একবার নিয়ো, আমার স্বপ্নের স্থান।
জীবনের অনেকটা সময় ওখানেই কাটিয়েছি।
জেঠির ওপরে জোছনায়
কী উচ্ছাসে -
উষ্ণ রিপুগুলি শীতল জ্যোৎস্নায় ভরে যেতো।
আমার বোধশূন্য শরীরটা স্পর্শ' করে দেখেছ?
কত শান্ত, কিন্তু ভেতরে?
নদীর- টালমাটাল নৌকা।
যেখানে দুঃখের জন্ম হচ্ছে প্রতিদিন।
যেখানে আত্মমগ্ন ছায়া,
প্রাচীন নিদর্শ'ন ধ্বংসস্তূপ, ইতিহাস হচ্ছে।
আজও নদীর মতো ছুটে চলেছি নদীর উপেক্ষায়,
কী প্রজ্ঞায় নিয়ে যায় নদী, অচেনা প্রদেশে।
সেই অস্থিরতা হীন মায়াহীন, কায়াহীনের দেশে।
সমস্ত স্তব্ধতার ভিতরে শুদ্ধতার কথা ভেবেছি
সমস্ত ক্ষয়ের ভিতরে আজ মৃত্যু-চন্দন মেখেছি।
তবুও জীবন বাঁচার প্রত্যয়ে কৃতঘ্ন দাঁড় করায়।
সময়ের খসে পড়া ডালে একটি ফুল -
ধীরে ধীরে ফুটে ওঠে,
আবার ঝরে যায়।
সেই ফুলের শোকে কেউ বিষন্নতায় পাগল হয়নি,
সব চলে যায় ঘর-ঘরণী,
সন্তান-সন্ততি, ধূসর জীবনের গোলকধাঁধায়।
কত বসন্ত বাদে বিষন্নতায় চাঁদ দেখে,
আকাশের নীল চাদরে লিখেছি জীবনের কবিতা।
ওই অন্তর্মুখী চাঁদ পোড়া ধ্বস্ত ঘরের আঙিনায়,
জোছনা দেয়নি কোনোদিন,
আর আঙিনায় ঝুঁকে থাকা শুকনো করবী গাছেও।
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে, পচা আতরের গন্ধ,
দম বন্ধ করা চন্দনের ধুপ, তার ওপর বন্ধ কাঁচের ঘর।
খুলে দাও, খুলে দাও, স্পর্শ করো আমাকে,
সেই ভোরবেলা খবর পৌঁছে দিয়েছি পৃথিবীর কানে।
তারপর সারাদিন ধরে উথালিপাথালি-
বুকের ওপর পাথর চাপা সাদা ফুল, ছিঃ
একটা গোলাপ দেয়নি কেউ,
কয়েকটা সূর্যমুখি ছিল বটে,
গোলাপের কাঁটা থাকলেও ভারি সুগন্ধি,
কি জানি তা জঙ্গলে জ্যোৎস্নায় নষ্ট হয়ে গেছে কিনা।
কোন শ্বাপদ অন্ধকার ছিল কিনা?
কালরাতে তো পূর্ণিমার অলৌকিক চাঁদ,
তার সঙ্গিনী জোছনা নিয়ে শুয়েছিল
বারান্দার ওপারে, বাগানে।
আমি দেখলুম যে - নগ্ন জোছনা, গাছের আড়ালে।
প্রেম পিপাসার্ত দৃষ্টিতে স্পর্শ করতে চাইছে চাঁদ।
'আমাকে আবৃত করো,
শুদ্ধ করে স্পর্শ করো। সব শুনেছি আমি।
সাদা ফুলের সাথে গোটা গুচ্ছের পাতা, সবুজপাতা।
থাক, এই বদ্ধ কাঁচের ঘরে,
ওই পাতা গুলোই অক্সিজেন।
Comments
Post a Comment