দশ অবতার



দশ-অবতার 

শ্রীমৎস্য-অবতার

কল্পের শেষ হয়েছে, নিয়ম মাফিক 
সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা ক্লান্ত, ভারি পরিশ্রান্ত 
এর মধ্যে সবে নিদ্রা আবেশ হয়েছে। 
যোগনিদ্রা, ঘন ঘন উন্মত্ত উন্মাদে
ব্রহ্মার শরীর জুড়ে, প্রসারিত হচ্ছে
নিদ্রা এখন শয়ন শুধুই বিশ্রাম -
ওই ভাব ও ভাবনা দেখে বলবান্ 
হয়গ্রীব নামে এক রাক্ষস, ব্রহ্মার 
শ্রীমুখ হতে নির্গত বেদসমূহকে 
চুরি করলেন। ভগবান হরি 
হয়গ্রীবের ওই দুষ্কর্মের কথা জানতে পারেন ও স্বয়ং শফরী মৎস্যের রূপ ধারণ করেন।
ওই সময় শ্রীভগবান নারায়ণের ভক্ত সত্যব্রত নামে শ্রেষ্ঠ রাজা জলে বসে তপস্যা করছিলেন। একদিন তিনি কৃতমালা নদীতে জল দিয়ে যখন তর্পণ করছেন, ঠিক সে-সময় তাঁর হাতের অঞ্জলিতে থাকা জলের মধ্যে একটি শফরীকে (পুঁটি মাছ) দেখতে পেলেন। রাজা তাঁর অঞ্জলির মধ্যে থাকা জলে সেই মাছটিকে দেখে, তাকে নদীর জলেই ফেলে দিতে উদ্যত হলেন। তখন সেই শফরী পরম দয়ালু রাজাকে অত্যন্ত কাতর হয়ে বলতে থাকে হে দীনজনের প্রতি করুণাময় মহারাজ! আমি আমার হিংসাপরায়ণ আত্মীয়দের ভয়ে ভীত ও অত্যন্ত দীন। অতএব আপনি আমাকে কি-ভাবে জলে ছেড়ে দিতে উদ্যত হয়েছেন? রাজা দেখলেন, হ্যাঁ তা'তো ঠিকই, বড় বড় মাছেরা এই ছোট মাছটিকে যখন তখনই খেয়ে ফেলতে পারে। শফরী দুর্বল। তাই তার পক্ষে পালিয়ে জীবন বাঁচানোও সম্ভব নয়। রাজা তখন ঠিক করলেন মাছটির জীবন তিনি নিজেই রক্ষা করবেন। কিন্তু মাছটি যে সে মাছ নয়, সেটি যে প্রকৃতপক্ষে স্বয়ং ভগবান শ্রীহরি। নিজের অনুগ্রহ প্রকাশের জন্যই তিনি ওই মাছের রূপ ধারণ করেছেন তখনও বুঝতে পারেননি। 
যাহোক, রাজা তাঁর কমণ্ডলুর মধ্যে মাছটিকে রেখে নিজের ঘরে নিয়ে আসেন। ফিরে আসার পর সে-দিন রাত্রেই সেই শফরী এতখানি বড় হয়ে উঠে, যে রাজা তাকে যে কমণ্ডলুতে রেখেছিলেন, সেই কমণ্ডলুতে আর রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তখন সে রাজাকে বলে, এই কমণ্ডলুর মধ্যে থাকতে আমার কষ্ট হচ্ছে। তাই আমি এর মধ্যে আর থাকতে পারছি না। অতএব আমাকে এখন আপনি বড় জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করুন, রাজা তার কথা শুনে, একটি বড় জালার জলে রেখে দিলেন। ভাবলেন এখানে মাছটি নিশ্চয় ভালো থাকতে পারবে। কিন্তু তিনি দেখে অবাক হয়ে গেলেন সেই মুহূর্তেই সে 'সেখানে তিন হাত লম্বা হয়ে গেল! তখন সেই শফরী আবার রাজাকে বলে হে রাজাধীরাজ আপনি আমাকে যে জালার মধ্যে রেখেছেন, এখানে আমি, খুব কষ্ট করে আছি। অতএব আপনি যদি আমাকে আরও বড় কোন জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করেন, তাহলে আমি সুখী হতে পারি।
তখন রাজা সত্যব্রত তাকে এক সরোবরে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিলেন। সেখানে মাছটি ছেড়ে দেওয়ায় সে হয়তো সুখী হল। তবে খুবই কম সময়ের জন্য। কারণ সেখানেও সে কিছুক্ষণের মধ্যেই এত বড় হয়ে গেল যে, পুরো সরোবরটির সমান তার দেহের আয়তন হয়ে গেল। তখন সে আবার রাজাকে বলে, এই সরোবরের জলে আমি থাকতে পারছি না। অতএব আমাকে কোনও হ্রদে নিয়ে ছেড়ে দিন। তবে দেখবেন যেন ওই জল কখনও কমে না যায় বা না শুকিয়ে যায়।

রাজা এরপর শফরীর কথা মত তেমন হ্রদে নিয়ে গেলেন, সেখানেও সেই শফরী হ্রদের সমান আকার সে ধারণ করে। তখন বাধ্য হয়েই রাজা তাকে সমুদ্রে নিয়ে ছেড়ে দিতে উদ্যোগী হলেন। কারণ তাছাড়া আর উপায় নেই। রাজা শফরীকে সমুদ্রে ছেড়ে দিতে উদ্যোগী দেখে সে রাজাকে বলে হে বীর, আপনি আমাকে এই সমুদ্রের জলে ত্যাগ করবেন না। এখানে অনেক বড় বড় কুমীর প্রভৃতি জলজন্তুরা আছে। তারা আমাকে খেয়ে ফেলবে।
রাজা সেই মিষ্টভাষী মাছের কথায় মুগ্ধ হয়ে এবার বললেন আপনি আমাকে মৎস্য রূপে মোহিত করছেন। আপনি কে তা' আমাকে বলুন। আপনি একদিনেই শতযোজন পরিমান সরোবরকে নিজের দেহ দিয়ে ঢেকে ফেললেন, আমরা এরকম প্রভাবশালী জলচর প্রাণীর কথা চোখে দেখাতো তো দূরে থাক্, কানেও শুনিনি। নিশ্চয় আপনি অব্যয় পুরুষ সাক্ষাৎ নারায়ণ শ্রীহরি হবেন। শুধুমাত্র লোকসকলের প্রতি অনুগ্রহ বিস্তারের জন্যই এই মাছের রূপ আপনি ধারণ করেছেন। হে সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের অধীশ্বর পুরুষশ্রেষ্ঠ! হে বিভো! আপনাকে প্রণাম করি। আপনি আমাদের মতো শরণাগত ভক্তগণের বাস্তব আত্মা ও আশ্রয়। আপনার সকল লীলা অবতারই প্রাণীসকলের মঙ্গলের কারণ হয়ে থাকে। অতএব আপনি যে প্রয়োজন সাধনের জন্য এই মাছের রূপ ধারণ করেছেন, তা' আমি জানতে ইচ্ছা করি। যেহেতু আমরা আপনার পাদপদ্মের শরণাগত, তাই আপনি আমাদের এই অদ্ভুত মূর্তি দর্শন করিয়েছেন।

রাজর্ষি সত্যব্রত এই কথা বললে যুগের অবসানে মাছের রূপধারী, ভক্তগণের প্রতি প্রীতিমান, প্রলয় সলিলে বিহার করতে ইচ্ছুক শ্রীহরি জগতের প্রিয়কাজ করার ইচ্ছায় সত্যব্রতকে এই কথাগুলি বলেন।

শ্রীভগবান বললেন- আজ থেকে সাতদিনের দিনে ভূঃ, ভূবঃ ও স্বর্গ এই

তিন লোক প্রলয় সমুদ্রে ডুবে যাবে। সেই প্রলয় সমুদ্রে তিন লোক লীন হওয়ার উপক্রম হলে আমি তোমার কাছে একটি নৌকা পাঠাব। তুমি সপ্তর্ষিগণে পরিবেষ্টিত হয়ে সেই নৌকায় থাকবে। তোমার সঙ্গে সকল প্রাণিগণ থাকবে। থাকবে সবরকমের ওষধি (অর্থাৎ ধান প্রভৃতি বীজ)। তারপর তুমি বিরাট নৌকায় চেপে আলোবিহীন প্রলয় সমুদ্রে সপ্তর্ষিগণের জ্যোতির্ময় দেহের আলোর সাহায্যেই অকাতরে বিচরণ করবে।

তারপর প্রলয়কালের প্রবল বাতাসের বেগে যখন যখন তোমার নৌকা টলমল করবে, তখন আমি এই মাছরূপে কাছে আসব। সে-সময় তুমি দড়ির মত


Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ