ঘর



কি অদ্ভুত ব্যাপার বলো তো মা,
এই বাড়িতে কাটিয়েছি, 
আজ কেন অচেনা?
এই বাড়ি থেকে বেরোতে গেলে 
জিজ্ঞেস করতে হতো যাবো কিনা.. 
অথচ দেখো, আজ যাবো বললে, কেউ তোমরা
একবারও বলো না কোথায় যাবি।
এই বাড়িতেই আমি বেড়াতে আসি..
এই বাড়ি থেকেই ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে যেতে হয়.. যাওয়ার আগে কয়েক বার দেখে নিতে হয় কিছু ফেলে যাচ্ছি না তো..
এই যে আমার সাধের ঘরটা 
ফেলে যাই আমি.. 
এই ঘরের পর্দা, 
এই ঘরের বিছানা, 
এই আলমারিটা আমার খুব কাছের.. 
এই ঘরে এলে আমি চেনা গন্ধ পাই.. 
প্রতিটা কোনা আমার ছোঁয়ায় 
আল্লাদে আটখানা হয়ে যায়..
অথচ আমি আর তাদের আদর করি না।
আগে আমি ঘর খানা গুছাতাম না.. 
এখন এসে দেখি পরিপাটি করে গোছানো,
কত রাত জেগে কাটিয়েছি এই ঘরে..
কত গোপন আলোচনার সাক্ষী এই ঘর.. 
কত কান্না কতো অভিমান রাগ দেখেছে 
মন ভাঙ্গার রাতে এই ঘরের জানলায় 
আকাশ দেখেছি... 
কত ছুটির দুপুরে শালিক পাখির মতো,
ঝগড়া করেছি তোমার সাথে.... 
স্কুল থেকে এসে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়েছি,
এই ঘরে.. নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছি.. স্বপ্ন দেখেছি, 
বুক ভাঙ্গা কান্না কেঁদেছি.... 
সব জানে এই পশ্চিমের ঘর.. 
অন্ধকার ঘরে পরম শান্তিতে পছন্দের গান শুনেছি কতবার তোমার দেওয়া খাবার লুকিয়েছি খাটের পাশের ড্রয়ারটায়... 
ওই আলমারিটা অগোছালো দেখলে
বোনের সঙ্গে লড়াই করেছি,
কতবার একটা জিন্স পাইনি বলে,
সব ছুঁড়ে ফেলেছি বাইরে-
আজ দেখো সেই জিন্সটাই আমাকে ডাকছে।
সরস্বতী পুজোয় একটা শাড়ি তোমাকে লুকিয়ে
স্কুলে নিয়ে গেছি, তুমি আর পরোনি সেই শাড়ি।
আলমারির কোনায় আজ অনাদরে পড়ে আছে।
অবাক কাণ্ড হলো বিছানায় রাখা,
ওই যে দুটো ব্যাগ এখন ওই ব্যাগেই জামা কাপড় আনি ওই ভাবেই নিয়ে যাই..ভাবি দু-চার দিন তো থাকবো আর আলমারিতে রাখবো না ব্যাগেই থাক.. ব্যাস আলমারিটা আর খোলাও হয় না.. সাজার জিনিস.. কানের দুলের রঙিন বাক্স সবই পড়ে থাকে ,একটু হাত দিয়ে দেখি মা কে জিজ্ঞেস করি  'এই টা কবে কিনলে, ওই টা কবে আনলে, এই চাদরটা কি নতুন??'  যখন যাওয়ার সময় বর নিতে আসে হাসি মুখে আর বলে  'কতো দিন পর বাড়ি ফিরবি'... আমি চুপচাপ ব্যাগ নিয়ে বাইক এ উঠে বসি জবাব দেওয়ার মতো কিছুই থাকে না... হ্যাঁ আমিও জানি ওই বাড়িতেও আমার একটা ঘর আছে..মা বাবা আছে।।  সবাই আমার জন্যে অপেক্ষা করছে ও বাড়িতে..তাও এই ঘরের মায়া কাটে না.. প্রতিবার যাওয়ার সময় পিছন ফিরে আর তাকাতে পারি না.

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ