ফেসবুক

।। ফেসবুক ।।

দেবপ্রসাদ জানা

দৃশ্য-১

। ড্রইংরুম, আবির অফিস বের হবে, একটা চেয়ারে বসে মোজা পরার চেষ্টা করে, এবং গলা ছেড়ে গান গায়, 'ওরে ভাই আগুন লেগেছে বনে বনে ওরে ভাই--।। তিতলির প্রবেশ ।।।

তিতলি- আজ কাল আগুন লাগছে তাহলে?

আবির- বসন্ত এসে গেছে, সামনে দোল, চারিদিকে রং, একটু আগুন তো লাগবে প্রিয়া। 

তিতলি- প্রিয়া, প্রিয়তমা ছেড়ে, এবার একটু ডালে এসে বসো দেখি-

আবির- ডালে কেন? আমি কি পাখি নাকি?

তিতলি- পাখি না হলেও যেভাবে আজকাল উড়ে বেড়াচ্ছো, পাখনা না গজিয়ে যায় না।

আবির- তা তুমি মন্দ বলোনি। ডানা গজালে, দুজনে মিলে বেশ মুক্ত আকাশে মুক্ত বাতাসে উড়ে বেড়াব।

তিতলি- আমার তো আর তোমার মতো পাখনা গজায় নি? যে তোমার মতো মুক্ত আকাশ, মুক্ত বাতাসে উড়ে বেড়াব।

আবির- মন টাকে মুক্ত করো সোনা, একটু বাতাস লাগুক। মনের জানালাটা খোলা দরকার।

তিতলি- মনের জানালা! বাব্বা তুমি যে কবিদের মত কথা বলছো। কোনো কবিতা সন্ধান পেয়েছো বুঝি? ও সব কবিতা সবিতা দের দিকে কম সময় দাও, নইলে বিপদে পড়ে যাবে।

আবির- কি আজে বাজে বকছো? প্রত্যেক মানুষের ভিতরে একটা করে কবি বাস করে, তা বলে সবাই কবি হয় না।

তিতলি- আহা-রে কবি আমার, তোমার এই লেকচার না তোমার বোর্ড মিটিংয়ে শুনিও। তারা হাত তালি দেবে, তোমার লেকচার শুনতে আমি আসিনি, তোমাকে বলতে এসেছি আমার ফোনের কি হলো?

আবির- তোমার ফোন তো আমার কাছে নেই, সে তো দেখলাম তোমার ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে শোভা পাচ্ছে, আর মাঝে মধ্যে তোমাকে ডাকছে।

তিতলি- ঐ রকম পুরানো মডেলের ফোন ড্রয়ারেই শোভা পায়, হাতে নয়। তার জন্যে চাই এন্ডরয়েড ফোন, যেটা আজ তোমার কিনে দেওয়ার কথা।

আবির- কথা থাকলে তো হবে না, তার জন্য গুচ্ছের টাকা লাগে। এ মাসে কত এক্সট্রা খরচ হলো জানা আছে নিশ্চই।

তিতলি- আমার কিছু কেনার হলেই এক্সট্রা খরচ দেখাও। আর নিজের বেলা দুদুটো জুতো, 
আবির- সেতো তোমার বোনের বিয়ে ছিলো তাই।

তিতলি- দুটো কেন? তাতে এক্সট্রা খরচ হয় না,

আবির- একটা জিনস্ এর প্যান্টের সঙ্গে, আর কোটের সঙ্গে। তুমিও তো চার চার খানা শাড়ি কিনলে।

তিতলি- আমি জানি তো শাড়ির খোঁটা তুমি দেবেই। তুমি তো আমার কোন কিছু কেনা দেখতেই পারো না, কটা শাড়ি দিয়েছ বিয়ের পর থেকে? 

আবির- তাহলে ভানুর কমিক্সের মতো বলতে হয়, হিসাব রাখলে, আমেদাবাদ কটন মিলের ম্যানেজিং ডাইরেক্টার হতাম। 

তিতলি- তাতো বলবেই, আমি কত দিন থেকে তোমার কাছ থেকে একটাও পয়সা নিইনি।

আবির- হ্যাঁ-সেতো আমি সকালে মানিব্যাগের ওয়েট দেখলে বুঝি কেন টাকা চাওনি। নেলপলিশ, ফেয়ারনেশ ক্রিম, বিউটিপার্লার, এ গুলোতো আর বিনে পয়সায় হয় না ? যাক, এবার অফিস যেতে দাও, এরপর বসের মুখ খেতে হবে।

তিতলি- তাহলে আমি যাব কখন?

আবির- কোথায়?

তিতলি- ফোন কিনতে।

আবির- আরে, এত মহা মুসকিল হলো। আমি অফিস করব না তোমার সঙ্গে বাজারে বাজারে ঘুরে বেড়াব?

তিতলি- তাহলে আমাকে টাকা দাও আমিই না হয়-

আবির- ওরে বাপরে, এ কেরে? সংসার টানতে টানতে আমার লাল সুতো বেরোনোর অবস্থা আর তুমি -

তিতলি- লাল সুতো! আমি কি তোমার বউ না? বউয়ের জন্য-গুস্টির সংসার টানতে টানতে হয়, আর তোমার মা বললে তো এক্ষুনি চলে আসতো।

আবির- তুমি ভুলে যাচ্ছো, এই বাড়িটা তার নামে-

তিতলি- মরে গেলে তো তুমিই পাবে।

আবির- তিতলি । হুংকার দিয়ে।

তিতলি- বাবা মারা যাবার পর, সংসারতো তোমাকেই টানতে হচ্ছে নাকি।

আবির- এটা আমার কর্তব্য।

তিতলি- তোমার বোন, সেতো মাকে নিয়ে রাখতে পারতো?

আবির- সে তার ব্যাপার- আমার কর্তব্য আমি করব।

তিতলি- বউকে ফোন কিনে দেওয়াও তোমার কর্তব্য। একটা স্মাট ফোন না হলে আজ কাল আর চলে না, দিন বদলাচ্ছে, ওয়াটসপ, ফেসবুকের মতো সোসাল মিডিয়া প্রতি ঘরের দরজা কড়া নাড়ছে। কাজের বউ এর সঙ্গে কথা বলা যায় না, সেও আপডেট চায়। সেদিন বলে, আপনার ওয়াটসপ নেই-?

আবির- নেই তো নেই-তাতে কি?

তিতলি- পাশের বাড়ির কাকিমা, কি দেখতে? টক্ টক করে ফটো তুলছে আর ফেসবুকে আপডেট দিচ্ছে। ঢং-
আবির- তুমি না দেখলেই হলো।
তিতলি- বারে দেখব না? কি সুন্দর ছবি ওঠে। কাকিমার কাছ থেকে ফেসবুকটা শিখে নিয়েছি।
আবির- ঐ কাকিমাই তাহলে তোমার মাথাটা খাচ্ছে? একদম মিশো না।
তিতলি- আহা-রে বউয়ের জন্য কি দরদ। দিন রাত তোমার গুস্টির ফায় ফরমাস্ খাটতে খাটতে প্রাণ যায়-
আবির- কি কাজটা করো তুমি? কাজের লোকতো আছে।
তিতলি- সে যে দুদিন ধরে আসছে না-
( বছর সাতাসের এক মহিলা সোনালীর প্রবেশ)
সোনালী- দুদিন নয় বৌদি দেড় দিন- আমার ওর শরীরটা খারাপ ছিল।
তিতলি- সেতো বলে গেলেই হোতো। তাহলে মেন্টালি প্রিপেয়ার্ড থাকতাম।
সোনালী- কেন? ফেসবুকেতো আপডেট দিয়েছি। আবিরদা কমেন্ট করেছে-আই মিস্ ইউ।
তিতলি- কি! কি করেছিস?
সোনালী- ফেসবুকে আপডেট-
তিতলি- তাই নাকি?(আবির কে) আহা কি রুচি।
সোনালী- আবিরদা, কি দ্যাননি? আপডেট দ্যাননি?
তিতলি- কি বললি আবিরদা! বাবু থেকে আবিরদা? এই তোকে আবিরদা বলতে কে বলেছে রে। আঙুল দিয়ে আবিরকে ঈশারা করে।
সোনালী- ওমা ফেসবুক ফ্রেন্ডকে কেউ বাবু বলে?
তিতলি - ফেসবুক ফ্রেন্ড?
সোনালী - হ্যাঁগো আবিরদাকে ফ্রেন্ড রিকিউয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম, আবিরদা এক্সেপ্ট করলেন -তো।
তিতলি - বুঝেছি। এবার আপনি আসতে পারেন। যতসব-
সোনালী -অত অবহেলার চোখে দেখবেন না আমরাও-মানুষ। ( প্রস্থান)

তিতলি- হ্যাঁ বুঝেছি-আসুন।(আবির কে) কি রুচি? বাড়ির কাজের মেয়ের সঙ্গে ফেসবুক-ছিঃ-

আবির- এতে ছিঃ কি আছে? কত ভালো মেয়ে। দাদা দাদা করে ভালোই লাগে।
তিতলি- তা তো লাগবেই। (স্বগত)। বেশ ডাগর কিনা?
আবির- যাগগে, আমি চলি বুঝলে, আসতে আজ একটু দেরী হবে, ফোন করে জ্বালাবে না
তিতলি- কেন?
আবির- একটু অনিমাদের বাড়ি যাব। ও-ও-ও তাই এত গান বেরচ্ছে?

আবির-এ মহা মুসকিল তো, খুসি থাকলে ও তোমার অসুবিধা?

তিতলি- অসুবিধা তো তোমার,

আবির- আমার কেন?

তিতলি- যে ভাবে উড়ে বেড়াচ্ছ, বৈশাখী ঝড় আসলে বুঝবে, আমি বুঝি না? আজ অনিমা, কাল শ্রেয়ষী, পরশু --

আবির- আমাকে কি অফিস যেতে দেবে না, নাকি বাড়িতেই কাটাব?

তিতলি- বাড়িতে তুমি কবে থাকো? কই আমাকে নিয়ে তো কোথাও নিয়ে যাও না? এখন আমার দিকে তাকানোর ও টাইম নেই তোমার। বেড়ানো তো দূরের কথা।
আবির- বেশি তাকালে, পকেটটি যে হালকা হয়ে যায়।

তিতলি- কাজের মেয়ের দিকে তাকানোর টাইম আছে না? ফ্রেন্ডসিভ হয়েছে।

আবির- ফেসবুক ফ্রেন্ড করতে পয়সা লাগে না। বেড়াতে গেলে লাগে।

তিতলি- লাগেতো কি করব? বিয়ের পর হনিমুন ও হলো না। আমার বোনকে দেখো, বিয়ের পর পরই ভাইজ্যাক ঘুরে এলো।

আবির- ঘুরবেই তো। ওদের মত আমাকে তো কেউ টুর স্পন্সর করে নি? করলে যেতাম, ওরা একটা পয়সাও নেয়নি।। (আবিরের সেলফোন বাজে।)

তিতলি- তুমি ভুলে যাচ্ছ, আমার বিয়ের সময় কাঁড়ি খানেক টাকা নিয়ে ছিল তোমার বাবা মা, 
আবির- [ ফোন তোলে] হ্যাঁ অনি আরে তোর বৌদি সেই থেকে.........আসছি আসছি-

তিতলি- বাব্বা অনি! প্রানেরশ্বরী যাও যাও লেট হয়ে যাবে।

আবির-তুমি না! এক অদ্ভুত জিনিস। অনিমা কে তুমি চেনো না?

তিতলি-চিনি- তোমার অফিসের কলিগ। ঢঙি, একটা-তুই তাকারি ও হয় তাহলে।

আবির- ও আমার বোনের মত।

তিতলি- হ্যাঁ- কাজের মেয়েটার মত। দুনিয়ায় কত বোন আছে গো তোমার?

আবির- আবার শুরু করলে?

তিতলি- বলে দাও আজ যেতে পারছ না।
আবির-বারে! যেতে পারছ না বললেই হলো? সব প্রোগ্রাম ফিট্। আমি না গেলে - 
তিতলি- এই তো বললে অফিস যাচ্ছ। দিনে দিনে বড় মিথ্যুক হয়ে যাচ্ছ। বলোই না অনিমার সঙ্গে পার্কে যাচ্ছ।
ছিঃ লজ্জা করে না? বাড়িতে বৌ থাকতে 
আবির- তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছ নাকি?
তিতলি- না সন্দেহ করব কেন? তোমার যা লীলাখেলা দেখছি, সন্দেহ করে কিছু লাভ নেই। জানিতো-সব গা সোয়া হয়ে গেছে। আমার তো কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, তাই- এই অত্যাচার।

আবির- আমি তোমার উপর অত্যচার করি? ছিঃ তিতলি।
তিতলি- ছিঃ! ওটা তো আমার বলার কথা। আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি ফোন কিনে না দিলে -

আবির- দেবো না।

তিতলি-কি-?

আবির- না মানে, দেব নাতো বলিনি-দেবো শুধু আজকের দিনটা ছাড়ো। আজ যেতে দাও-সরকারী চাকরি-
তিতলি- সে তো আমার পয়ে হয়েছে। না হলে পেতে?
আবির- তোমার পয়ে মানে?
তিতলি- বিয়ের পর তো সরকারী চাকরিটা পেলে। সকলে বলল আবিরের বৌ পয়া আছে।

আবির- আর সেই জন্য আমার এত ভালো টাকা মাইনের প্রাইভেট চাকরিটা ছেড়ে দিতে হলো। এত দিনে আমার ঘর বাড়ি সব হয়ে যেত। জানো বকুল কত মাইনে পায়

তিতলি- বকুলটা আবারকে?

আবির- ও আছে তুমি চেনো না।

তিতলি- চিনি-না! আচ্ছা তোমার কত গুলি মেয়ে বন্ধু আছে গো? তোমার কাছে এর নাম এই প্রথম শুনলাম, তার মানে নতুন বাঃ বেশ ভালো। এই জন্যেই সকাল থেকে ফুর ফুর করছো।

আবির- যা কিযে বলো না তুমি? ওতো আমার চাইল্ডহুড ফ্রেন্ড।

তিতলি- চাইল্ডহুড? তা তোমার আর কত চাইল্ডহুড আছে? দিনে দিনে কলির কেষ্ট হয়ে যাচ্ছো, -ছেঃ।

আবির- ছেঃ কেন? ছিঃ থেকে ছেঃ কেন?

তিতলি- কারন ছিঃ বললে আর তোমার চরিত্রের, না শুধু চরিত্র কেন হবে? তোমার মত দাগী চরিত্রহীনের গভীরতা বোঝানো যাবে না। তাই ছেঃ-

আবির- তোমার এলেম আছে, তুমি তো বাংলায় পি এইচ ডি। ট্রেনিংটা আমার খুব খারাপ হচ্ছে না।

তিতলি- তুমি তো কৃষ্ণকে ও হারমানাবে মনে হয়, হাজার গোপিনী স্নান করছে, আর তুমি তাদের কাপড় চুরি করে পালাচ্ছো। দৃশ্যটা ভাবো।

আবির-গোপিনী নয় ভগিনী। ওটা উচ্চারণে ভুল হলো। তিতলি- তাই নাকি? তা ভগিণী রা পার্কের রাস্তা জানে না? তোমাকে পথ দেখাতে হবে?

আবির- পার্ক কোথায় পেলে?।( ফোন বাজে।)

তিতলি- দেখো তোমার কোন ভগিনী আবার ফোন করল।

আবির-(ফোন দেখে) কোম্পানীর -

তিতলি-কোন কোম্পানী? পার্ক না। 

নৈপথ্যে- নির্মলা- বৌমা-।

আবির- মা আসছে বোধ হয়, আমি আসি। (প্রস্থান)

তিতলি- আমার ফোনটা আনবে কিন্তু-না হলে-

( হাঁটুর ব্যথা নিয়ে নির্মলার প্রবেশ)

নির্মলা- না হলে আমার তো চলবে মা-

তিতলি- কি হয়েছে মা?

নির্মলা- ওই তোমার কাজের মেয়ে, কাজের না অকাজের, ভাত বসিয়ে সারাক্ষন ফোন ঘাঁটতে বসেছে, এদিকে ভাত পড়ে-সব

তিতলি- সে কি ভাত এখনো হয় নি? তাহলে আপনার ছেলে কি খেয়ে গেল ?

নির্মলা- আবির চলে গেছে? না খেয়ে? কি বৌমা এসব কি হচ্ছে? ছেলেটা না খেয়ে অফিস গেল। কি আক্কেল তোমাদের।

তিতলি- সোনালী সকাল থেকে কি করছিল? আমি তো ভাবলাম-

নির্মলা- উঃ হুহু কি ব্যাথা- মাগো ওরে আর তো পারি না, বৌমা একটু তেলটা আনতো, ওষুধটা তো শেষ হয়ে গেছে-আবিরটা আজকাল কিছু মনে রাখে না। কতবার বললাম আমার ওষুধটা নিয়ে আসিস- ভুলে গেছে।

তিতলি- না মা, আসলে আপনার ছেলের এ মাসে অনেক গুলো টাকা এক্সট্রা খরচ হলো কিনা তাই-

নির্মলা- ও ঠিক আছে বৌমা, তা হলে তেল গরম করে লাগাই।

তিতলি- হ্যাঁ মা তাই করেন। আপনার ছেলেকে বললে মাথা গরম হতে পারে -আমি বরং সোনালীকে বলে দিচ্ছি ও তেল গরম করে দেবে। 
নির্মলা- হ্যাঁ না হলে কাল আবার উঠে দাঁড়াতে পারব না।

তিতলি- আমি বলছিলাম কি মা, শুনলাম আপনার ভাই নাকি অনেক সম্পত্তি পেয়েছে আপনার বাবার-

নির্মলা- সম্পত্তি পেয়েছে? কোত্থেকে?

তিতলি- ছিল নিশ্চই,

নির্মলা- তা ও পেয়েছে, আমি কি করব?

তিতলি- ওতে তো আপনার ও ভাগ আছে, তাই না মা।

নির্মলা- আমাকে কি দেবে?

তিতলি- না চাইলে কি দেয় মা? চাইতে হয়,

নির্মলা- চাইব! কেন? আমাদের কি অভাব?

তিতলি- অভাব তো আছে মা, আপনি দেখতে পান না। আপনার ও তো ছেলে আছে নাতি আছে, তার জন্য কিছু করে যাওয়া কি আপনার কর্তব্য নয়।

নির্মলা- আমি বাপু চাইতে ফাইতে পারব না, ও মা গো মরে গেলাম। তোমার শশুর মশাই থাকলে এ সব কথা বলতে পারতে না।

তিতলি- সোনালী, সোনালী একটু তেল গরম করে আনতো। বা-রে চাইবেন না? আপনার ভাই একাই ভোগ করবে সম্পত্তি।

নির্মলা- তা তুমি এত কিছু জানলে কি করে?

তিতলি- ছোট কাকিমা বলছিল। ওরা ফেসবুক ফ্রেন্ড কি না। কত কিছু জানা যায়।

নির্মলা- ফেসবুক! বাপরে! ফেসবুক থেকে তাও জানা যায়। তুমি ও ফেসবুক করো ?

তিতলি- কি করে করব মা? টাকার অভাবে একটা ভালো ফোন ও কিনে দিতে পারে না, আপনার ছেলে।

নির্মলা- ও মাগো মরে গেলাম,

তিতলি- সোনালী- সো-

। হাতে একটা ফোন, কানে ইয়ার ফোন।

সোনালী- ডাকছো বৌদি।

তিতলি- বৌদি! আমি তোর বৌদি হলাম কি করে?

সোনালী- বারে দাদার বৌকে কি দিদিমা বলব? কি বলবে বলো? ভেতরে অনেক কাজ। ওঃ বৌদি যা একখানা সেলফি তুলে ফেসবুকে দিয়েছি না। খালি ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসছে সামালাতে পারছি না। অ্যাক্সেপ্ট করতে করতে হাত ব্যাথা হয়ে গেল।

তিতলি- এর জন্য তুই আবিরকে সকালের ভাত দিলি না।

সোনালী- দাদা তো বলল আমি বাইরে খেয়ে নেব।

তিতলি- ঐ তোকে মাথায় তুলছে, তুইতো বুঝছিস না, কি অবস্থা হবে তোর?

সোনালী- তা এই বলার জন্য, আমাকে ডাকলে? বলছি না আমার সময় নেই।

তিতলি- তেল গরম করে, মার পায়ে মালিশ করে দেতো। সোনালী- আমার অত সময় নেই। তুমিতো বসে আছো।

তিতলি- তোকে যা বললাম কর। ফেসবুক ঘাঁটছে, বলে বাড়ির কাজ করতে হবে না? ঐ আবির টাই তোকে আদর দিয়ে মাথায় তুলেছে, আজ আসুক।। প্রস্থান।

সোনালী- যা বাবা, আমাকে ঠেকিয়ে নিজে চলে গেল। নির্মলাকে। দেখ মা মনি আমি কিন্তু তোমার ফায় ফরমাস খাটতে পারব না। এই বলে দিলাম- না হলে অন্য লোক খুঁজে নাও-হ্যাঁ-

নির্মলা- সে কিরে! কাজ করতে পারবি না? এ কি রকম কথা? মাসে মাসে কাঁড়ি কাঁড়ি

টাকা নিচ্ছিস, কাজের বেলায় লবডঙ্কা-

সোনালী- লবডঙ্কা বলো আর যাই বলো। আমাদের এখন ফেসবুক ইউনিয়ন হয়েছে বেশী বাড়াবাড়ি করলে- একে বারে পগার পার।

নির্মলা- সে কিরে! কাজের লোককে কাজ করতে বললে, ফেসবুক ইউনিয়নে জানিয়ে দিবি। সোনালী- কাজের লোক বলে, অপমান করলে সইব না মা- এই আমি আপনাকে জানিয়ে রাখছি, কাজ যদি করাতে হয় আমাদের সময় মত চলতে হবে এই সব ফাই ফরমাস, এক্সট্রা কাজ করাতে এক্সট্রা টাকা লাগবে- তা না যদি দেন মোবাইলে নেট ভরে দিতে হবে- নইলে রইল ঝোলা চলল ভোলা-

( আলো নিবে আসে)


Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ