Posts

Showing posts from August, 2022

মহাভারতম্ বনপর্ব-২৮

 বনপর্ব-২৮ বহুক্ষণ ভীম নেই, নেই আশেপাশে। চিন্তায় যুধিষ্ঠিরের, হলো উদগ্রীব। নিজেই জঙ্গলে যায়, অশুভ বিশ্বাসে। দেখিল অদ্ভুত কাণ্ড, এটি কোন জীব? ভীমেরে করিল কাবু, তুচ্ছ অজগরে? সাহস তো মন্দ নয়, খাবে ভীমসেনে। অগস্ত্যর অভিশাপে  এই রূপ ধরে, অনেক বছর আছি তোমার কারণে। প্রশ্নের জবাব দিলে মুক্ত হব আমি। সঠিক জবাব চাই, বলো মহারাজ। সঠিক জবাব পেয়ে, ছাড়িলেন ভুমি। অগস্ত্যের অভিশাপ,মুক্ত হলো আজ। এ বন ছেড়ে পাণ্ডব গেলো দ্বৈতবনে। মনের আনন্দে বাস করে এক সনে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-২৭

 বনপর্ব-২৭ যমুনা নদীর তীরে এলো পাণ্ডবেরা। বিশাকযুপ নামক মনোরম বনে। আসিবার পথে পড়ে সুবাহুর ডেরা। অস্ত্রসস্ত্র নিলো তারা,আপনার সনে। লোমশমুনি গেলেন দেবলোকে ফিরে। ঘটোৎকচও ফিরে যায় সেইক্ষণে। শিকারের জন্য ভীম, সদা ঘোরে ফেরে। ভয়ঙ্কর অজগর, জড়াল বন্ধনে। কিছুতেই মুক্ত হতে পারিল না ভীম। করজোড়ে ভীম কহে,ওহে অজগর। দশ সহস্র হাতির,শক্তি ধরে ভীম। তারে তুমি জব্দ করো,কেমনে অজর।। ভীম নামে চিনিলেন চন্দ্রবংশ জাত। নহুষ নামক রাজা চন্দ্রবংশ খ্যাত।

মহাভারতম্ বনপর্ব-২৬

 বনপর্ব-২৬ ভীমের বীরত্বে সব ধরাশায়ী হয়ে, ছুটে যান রক্ষী সব কুবেরের কাছে। সব শুনে কহিলেন, হাসি মুখ লয়ে, ইচ্ছামত ফুল নিতে, বাধা দাও মিছে। ফুল নিয়ে ভীমসেন স্নানে তাজা হলো। চার ভ্রাতা সেইখানে,থাকে কিছুদিন। বদ্রীকা আশ্রমে তারা,সকলে ফিরিল। ফুলের সুবাস ফেরে, ঘরে সারাদিন। জটাসুর নামে এক, শার্দুল অধীন। ব্রাহ্মণের বেশে থাকে,করিয়া কপট। সুযোগের অপেক্ষায় ছিল এতদিন। পাণ্ডবের অস্ত্র নিয়ে,সে দিল চম্পট। সময় নেয়নি ভীম,নিধন করিতে। পাঁচটা বছর গেল,দেখতে দেখতে।

মহাভার‍তম্ বনপর্ব-২৫

 বনপর্ব-২৫ ইচ্ছামত বর চাও,কহে হনুমান। ভীমের প্রতি প্রসন্ন হয়েছেন তিনি। প্রণাম করিয়া ভীম,করিল সম্মান। দর্শন পেয়েছি যার,ইচ্ছাপূর্ণ মানি। এই তেজে শত্রু জয় করিতেই পারি। আর কিছু প্রয়োজন হইবে না এবে। ভীমের মধুর বাক্যে, খুশি হয় ভারি। বিপদে স্মরণ করো,সেইক্ষণে পাবে। পদ্ম নিতে গেল ভীম কৈলাশ পর্বতে। মনমাতানো সুগন্ধ, অতি মনোরম। ভীমেরে দেখিয়া সৈন্য,অস্ত্র নিয়ে হাতে। মহাযুদ্ধে দেখা গেল, কার কত দম। গদার আঘাত দিতে ভীম ভালোবাসে। কৈলাশ পর্বত হতে, ফুল নিয়ে আসে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-২৪

 বনপর্ব-২৪ বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে,পরিশ্রান্ত ভীম। সহস্র হাতির শক্তি,কোথা গেল তার? কেগো তুমি শক্তিমান,আকাশ অসীম। মহাবলী ভীম ডরে, সাধ্য হলো কার? করজোড়ে কহে ভীম,ক্ষমা করো মোরে। পরিচয় দাও প্রভু, ফুল তুলে যাই। ভীমের কথায় মুগ্ধ, হনুমান ঘোরে। মহাবীর হনুমান, কোনো সন্ধ নাই। ওহে ভীম,ভ্রাতা মোর, মুগ্ধ তব কাজে। বর চাও,বুকে এসো,করি কোলাকুলি। দেখা দাও ভয়ঙ্কর, বিরাট সে সাজে। সীতার উদ্ধারে যেতে,বীর মহাবলী। অদ্ভুত সে মহারূপ, ভরাইল প্রাণ। ভীমের সম্মুখে আজি, বীর হনুমান।

মহাভারতম্ বনপর্ব-২৩

 বনপর্ব-২৩ মহাবলে বলী আমি,অধম বানর। এইপথ ছেড়ে দাও,নয় সাজা পাবে। বৃদ্ধ আমি এই হাল,দণ্ডে করি ভর। আমাকে ডিঙিয়ে যাও,সেই ভালো হবে। প্রত্যেক জীবের দেহে,ভগবান পাবো। কেমনে ডিঙিয়ে যাই,অনুচিত হবে। নই আমি হনুমান, লাফ দিয়ে যাবো। পাহাড় সাগর নদী, লঙ্ঘিব নীরবে। হনুমান ! কে সে হনু, বৃথাই জাগাও। তাহলে আর কি হবে,লেজটা আমার, আস্তে করে একপাশে,সরিয়ে পালাও। আমার ক্ষমতা নেই,লেজ সরাবার। অবহেলা করে ভীম লেজটাকে ধরে। হাজার চেষ্টাতে লেজ,সরাতে না পারে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-২২

 বনপর্ব-২২ আহ্লাদেই আটখানা ভীম মহাবীর। শতদল এনে দেবে চলিল সন্ধানে। হনুমান সেইক্ষণে দেখিয়া অস্থির। বিপদে পড়িল বুঝি ভয়ানক স্থানে। বিপদের মুখে ভীম দেখে হনুমান। তুচ্ছ বানরের রূপে, রাস্তার ওপর। ঘুমোনোর ভান করে,পথ আটকান। ভীমের গর্জন শুনে, ভয়ে ভয়ঙ্কর। মিটি মিটি চোখ করে,কহে হনুমান। ভীষণ অসুস্থ আমি,দয়া করো মোরে। ধার্মিক মানুষ তুমি, দেবতা সমান। ফিরে যাও ফল খেয়ে,আপনার ঘরে। ভীম আমি কুরুবংশী কৌলিন্য ক্ষত্রিয়। পবন দেবতা মোর, প্রাণের আত্মীয়।

মহাভারতম্ বনপর্ব-২০

 বনপর্ব-২০ এর পরে ভোগ করে কৈলাশের হিম। দুর্গম পথের শ্রমে দ্রৌপদীর কষ্ট। দ্রৌপদী কুন্তীরে তাই কাঁধে তুলে ভীম, লোমশ মুনির সাথে,লক্ষ্যে মন ইষ্ট। পুলিন্দরাজ সুবাহু, বান্ধব সমান। পাণ্ডবের পরিবার লইবে বিশ্রাম। গচ্ছিত রাখিল সব, খড়গ কৃপাণ। পদব্রজে যেতে হবে,জটেশ্বর ধাম। গন্ধমাদন পর্বতে ভীষণ সে ঝড়ে- অতিশয় তাণ্ডবের,মুখোমুখি তারা। পর্বতের গুহা আর,গাছের উপরে- প্রাণঘাতী তুফানের ছিল বুঝি তাড়া। পরিশ্রান্ত ভীম ডাকে,পুত্র ঘটোৎকচে। কাঁধে তুলে নিয়ে যায়,কৈলাশের কাছে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১৯

 বনপর্ব-১৯ ভীষণ ক্রোধের বসে কহে বলরাম। এমন অবস্থা কেন সখা পাণ্ডবের। চলো মোরা মুছে ফেলি দুর্যোধন নাম। চিরতরে নাম মুছি, দুষ্ট কৌরবের। কত দিন বনবাসে, কহে হলধর। কেমনে কাটিবে দিন, জঙ্গলে জঙ্গলে। চলুন হে মহারাজ, আমাদের ঘর। সৈন্য সামন্ত সাজাই, নিজ শক্তি বলে। কহে কৃষ্ণ মহাবীর শোন হে সাত্যকি। মহারাজ যুধিষ্ঠির, ধর্মের প্রাচীর। লোভের বশে,ধর্মের ত্যাগ করে নাকি? সব যাক ধর্ম থাক,কহে যুধিষ্ঠির। সঠিক বোঝেন কৃষ্ণ, যুধিষ্ঠির কহে। কৃষ্ণের আদেশ হলে,যাইবে কলহে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১৮

 বনপর্ব-১৮ অজানা কারণে ভয়, কেন যুধিষ্ঠির? পাশার খেলায় ফের,ডাকে যদি কেউ, পরাজয় হবে ভেবে, হয়েছো অস্থির। অশান্ত মনের স্থিতি,কাটাবে না কেউ। অক্ষবিদ্যা রপ্ত করে, ভয় নাও জিতে। ভবিষ্যতে আরো কষ্ট,আছে দাঁড়াইয়া। কখন যে কি হইবে কে পারে বলিতে। এর চেয়ে আরো কষ্ট, ধরিবে জড়িয়া। অক্ষবিদ্যায় করিল,রপ্ত যুধিষ্ঠির। নারদের মুখে শোনে তীর্থের বর্ণনা। পুরোহিত ধৌম্য সহ তীর্থে মনোস্থির। লোমশ ঋষির এসে করিল গণনা। তীর্থের ভ্রমণে ঘুরে এলো চারধাম। প্রভাস তীর্থে পাইল কৃষ্ণ বলরাম।

মহাভারতম্ বনপর্ব -১৭

 বনপর্ব-১৭ অর্জুন বিরহে ভাই, দুঃখ যে চরমে। বহু কষ্টে দিন কাটে,সব পাণ্ডবের। বৃহদশ্ব ঋষি এলে,পাণ্ডব আশ্রমে। যুধিষ্ঠির আপ্যয়ন, করে ঋষিদের। কহিলেন যুধিষ্ঠির বৃহদশ্ব কাছে। আদরে প্রণাম করে, যুধিষ্ঠির তারে। দুষ্টেরা পাশা খেলায় সব নিয়ে গেছে। এমনকি দ্রৌপদীরে, অপমান করে। এত দুঃখ এত কষ্ট সহিব কেমনে? অবোধ ভায়েরা মনে,কত কষ্ট পায়। বনেবনে ঘুরিফিরি সুখ নাই মনে। সদা ভাবি মূর্খ আমি,কি করি উপায়। কহে ঋষি বৃহদশ্ব দুঃখ নয় শান্তি। আরো কষ্টে ছিল যারা,নল দময়ন্তী।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১৬

 বনপর্ব-১৬ নিবাতকবচ নামে ভীষণ দানব। স্বর্গপুরে অত্যাচার সর্বদাই করে। অর্জুনেরে শিক্ষা দিয়ে,মরণ পরব। গুরুর দক্ষিণা দিতে,সব ধ্বংস করে। অভেদ্য কবচ বুকে,কিরীট প্রদোষ। মাতলি রথের পরে, গাণ্ডিব ধনুক। ব্রহ্মার বরে সে বলি,হিরন্য রাক্ষস। লক্ষ লক্ষ রাক্ষসেরা,অত্যন্ত ভাবুক। কিছুতেই কাবু আর হয় না যে তারা। দিব্যাস্ত্র নিক্ষেপ করে,অতিই সহজে। হিরণ্যপুরী অসুর,মেরে পায় ছাড়া। দৈত্যকন্যা পুলোমার হত্যা করে নিজে। বিশাল নগর ব্রহ্মা,দিয়েছিল যারে। পৌলোম নামে অসুর,অর্জুণ নিহারে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১৫

 বনপর্ব-১৫ কিরাতরূপী শিবের,হেন কেরামতি, বুঝিল অর্জুন তবে,নমে করজোড়ে। অর্জুনের সব অস্ত্র দিল মহামতি। পাশুপত অস্ত্রদান করে তারে ছাড়ে। শিব চলে গেলে পরে আসে দেবতারা। বরুন কুবের যম, দেবরাজ আসে। অর্জুনেরে সঙ্গে নিয়ে,গেল স্বর্গে তারা। অস্ত্রবিদ্যা নাচগান,শিক্ষা নিল শেষে। গাণ্ডিবের ছিলা দিল, নয়া এক গুণ। কখনো ছিঁড়বে না তা,শক্তিশালী খাস। অক্ষয়তৃণ অস্ত্রের ,ভীষণ আগুন। কুবেরের অন্তর্ধান,বরুণের পাশ। যত অস্ত্র শিক্ষা ছিল,অর্জুনের আছে। স্বর্গের দেবতারাও তুচ্ছ তার কাছে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১৪

 বনপর্ব-১৪ যুধিষ্ঠির অর্জুনকে কহিল অখিল। উত্তরের বনে যাও, হিমালয় শৃঙ্গে। গন্ধমাদন পর্বত ছেড়ে ইন্দ্রকীল। পাইবে সকল দেব, দেবতার সঙ্গে। কঠোর সাধনা করে মধ্যম পাণ্ডব বিশ্বজয়ী বীর হতে আর নাই বাকি। মাসের পর বছর স্তব্ধ হলো সব। তপস্যার তেজে হিম,অন্ধকার দেখি। শিবের তপস্যা করে তুষ্ট করিল সে। কিরাত কিরাতী রূপে শিবদূর্গা ভাই। মূক নামক রাক্ষস শূকরের বেশে, অর্জুন কিরাতদ্বয়ে ভীষণ লড়াই। শূকর মেরেছে কে তাই নিয়ে দ্বন্দ্ব। অর্জুনের সব অস্ত্র,হারিয়েছে ছন্দ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১৩

 বনপর্ব-১৩ সুভদ্রা অভিমন্যুকে নিয়ে দ্বারকায়। ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রৌপদীর পুত্রদের নিয়ে। ধৃষ্টকেতু চেদিরাজ্যে লইল বিদায়। কৈকেয়গণও যায় করুণ বিদায়ে। বিদায়ের পর্ব শেষ,হইলে অর্জুন। কাম্যক অরণ্য ছেড়ে গেল দ্বৈতবনে। আশ্রম বানিয়ে সেথা,কাটিল দারুণ। মার্কণ্ডেয় ঋষি জ্ঞান দিল রামায়ণে। প্রতিস্মৃতি বিদ্যা দান করিলেন ঋষি। বরুন কুবের যম তুষ্ট হবে তাতে, ইন্দ্র রুদ্র বর দান করিবেন আসি। বহু গুণী অস্ত্র দেবে মানবের হিতে। পাইল পাণ্ডব গণ বহু দিব্য অস্ত্র। সরস্বতী নদী তীরে পাইল ব্রহ্মাস্ত্র।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১২

 বনপর্ব-১২ তমিস্রা রজণী যেন,ব্যাপিল ধরণী। কেহ না মুছিবে অশ্রু,গভীর নয়নে। ঘণবনে একাকিনী, বসিয়া রমণী, অযথা চোখের জল,ফেলিছ গোপনে। ত্যজ ক্ষোভ অভিমান,পাঞ্চাল দুহিতা। কালের পরশে দেখো,মিশিবে জঞ্জালে। সতীত্বের পূন্য ফল, দানিবে বিধাতা। নিয়মের জালে বাঁধা,ঘুরিছে সকলে। রবি তথা আলো করে,না করে দহণ। প্রকৃতির আচ্ছাদনে, সকলে বিরাজে। নিশি স্নিগ্ধকরী নহে,তিমির কারণ। গন্ধবহ বাতাসের, বৃথাই রোদন। নারী তথা প্রণয়িনী বিলাসিনী নয়। দেবের কৃপায় দিব্য জ্ঞানের উদয়।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১১

 বনপর্ব-১১ জানিয়া বৃতান্ত কৃষ্ণ,আসে বনবাসে। পাণ্ডবদের মূর্খতা কেমনে সহিবে? দ্বারকার রাজকন্যা অশ্রু জলে ভাসে। ভীষণ রোষে শ্রীকৃষ্ণ,বিশ্ব জ্বালাইবে। ক্ষিপ্ত হইলে শ্রীকৃষ্ণ,কহিল অর্জুন। শান্ত হও বাসুদেব একি করিতেছ। জগতের অধিশ্বর সমস্য করুণ। কৌরবের অত্যাচার,হৃদয়ে লইছ। ধৃষ্টদ্যুম্ন,চেদিরাজ ধৃষ্টকেতু মিলে, শ্রীকৃষ্ণের চর্তুদিকে,ঘিরিয়া বসিল। যুধিষ্ঠির ক্রমে ক্রমে, সব কহে দিলে। দ্রৌপদীর অপমান, হৃদয়ে বিঁধিল। শ্রীকৃষ্ণ কহিল তারে দুঃখ কেন সখী ষোলকলা পূর্ণ হলে,উড়ে যাবে পাখী।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১০

 বনপর্ব-১০ কাম্যক বনের পাশে কিম্মীর রাক্ষস পাণ্ডবদের দেখিয়া কহে আহাম্মক। আয় তোদের মারিয়া করি পরিতোষ। বক রাক্ষসের ভাই আমি, হে পাতক। বন্ধু হিড়িম্বকে তুই মেরেছিস ভীম। আজি তোরে পাঠাইব মৃত যমলোক। বহুদিন খুঁজে খুঁজে পেয়ে গেছি ভীম। নখের ডগায় তুলে, মেটাইব শোক। হা হা রবে ভীম কহে ওরে ও পাষণ্ড বাহুডোরে চেপে তোরে দেখাই শমন। বিশাল পাহাড় তার দেহ সহ মুণ্ড। কিম্মীর রাক্ষস মুক্ত এ কাম্যকবন। রাক্ষস বিদায় হলো শান্তি এলে বনে। পাণ্ডবদের অরণ্য যাত্রা সুখ মনে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৯

 বনপর্ব-৯ সত্যপরায়ণ তারা বীর পাণ্ডু পুত্র। এক তারা একজোট, চলন্ত সরিৎ। দৈব্য অস্ত্রধারী তারা,আছে দৈব্য নেত্র। ফুৎকারে নিঃশেষ সব,করিবে নিশ্চিৎ। মৈত্রেয় ঋষির কথা শুনিতে না পারে, উপদেশ জ্ঞান সম, দুর্যোধন কহে। কটাক্ষের হাস্যরস সবে পান করে। অপমানে মৈত্রেয়ের অগ্নি সম দহে। সুরলোক দেবলোক যার ভয়ে কাঁপে সেই ঋষি মৈত্রেয়ের একি অপমান। শকুনি কর্ণের সনে, দুর্যোধন কোপে, অভিশাপ দিয়ে ঋষি, স্বর্গ মুখে যান। সংগ্রহ হইল আরো এক অভিশাপ। দুর্যোধনের ঝুলিতে বিষধর সাপ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৮

 বনপর্ব-৮ কহে ব্যাস ধৃতরাষ্ট্রে কেমন দূর্মতি। কপট পাশায় জিতে,করো আকিঞ্চন। সহজে পাণ্ডবে মাত, বুঝিবে দূর্গতি। দুরাত্মা দুর্যোধনের,সাঙ্গ আস্ফালন। অশ্ব গজ রথ যোগে পদাতিক দল। সব নিয়ে যুদ্ধ করে,পাইবে না জয়। অকালে জীবন দেবে,এটাই আসল। অঘটন ঘটে গেলে,বুঝবে কি হয়? বন্ধ করুন বিবাদ,ভাই ভাই সনে, অচিরেই মহাযুদ্ধ,আশঙ্কায় মরি। উপদেশ দিন ওরে শুদ্ধ স্বচ্ছ মনে। বুদ্ধিমান দুর্যোধন ঠিক নেবে ধরি। এগোচ্ছে ধ্বংসের পথে,দাঁড়িয়ে অঘোরী। চকিতে দুর্যোধনের, সব নেবে কাড়ি।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৭

 বনপর্ব-৭ ফিরে আসতে বিদুর,কহে দুর্যোধন। আবার এসেছে ফিরে কানমন্ত্র দিতে। পাণ্ডবেরা ফিরে এলে, দ্বেষ আবর্তন, বিষ খেয়ে দুর্যোধন, মরিবে এ রাতে। শকূনি বললে তারে বৎস দুর্যোধন। সত্যপরায়ণ তারা, সহজ সরল। পাণ্ডবেরা সত্যপথে চলে সর্বক্ষণ। মিথ্যে ভয় পেয়ে তুমি,হয়ো না দূর্বল। দূর্বল বলায় কর্ণ,কহিল উৎফুল্লে- এই ক্ষণে পাণ্ডবেরা বড়ই দূর্বল।  বধ করে আসি চলো,অনায়াসে বল্লে। সকলেই একযোগে,বেঁধে নিল দল। নীরবে নিভৃতে মেরে,নেবো প্রতিশোধ। ব্যাসদেব সেইক্ষণে করে প্রতিরোধ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৬

 বনপর্ব-৬ হা ধরণি কোন পাপে রাজ রাজেশ্বর। বিদুরের আনুগত্যে সন্ধেহ ডুবিল। জ্ঞানেন্দ্রিয় স্বচ্ছতায় প্রণমে ঈশ্বর। তারে কিনা বিতাড়িতে সাহস করিল? এদিকে যে ধৃতরাষ্ট্র অহংকারে ডুবে মহামন্ত্রী বিদুরের  করি অপমান। ভবিষ্যৎ পরিনতির কথাও সে ভাবে। অনুতাপে সঞ্জয়কে দিল ফরমান। সত্বর খবর করো,আসুক বিদুর। এক্ষণে যোগদিক এ ,কৌরব বিধান । নাহি জানি কোন লগ্নে প্রকটে অসুর। কটূকথায় বিদুরে করি অপমান। সঞ্জয় চটজলদি,  যায় আজ্ঞা পেয়ে। বিদুরকে নিয়ে আসে স্বশরীরে গিয়ে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৫

 বনপর্ব-৫ সহসা কাঁপিল মন ঘোর বনস্থলী। গভীর নিস্বনে যেন কহিলা শমনে। মহাগদাপ্রভা বুঝি ধ্বনিল বিজলি। থর থর যুধিষ্ঠির কাঁপিল গহনে। বিদুরের আগমনে, ভাবে এতদূর। ফের বুঝি দ্রৌপদীরে করিবে হরণ। ভয়ে ভীত যুধিষ্ঠিরে দেখিল বিদুর। ভয়ে ভয়ে যুধিষ্ঠির, করিল বরণ। ভয় নাই ভাতুষ্পুত্র কহিব কারণ। ধৃতরাষ্ট্র মতিভ্রমে, ডুবিবে কৌরব। ভবিষ্যত দেখিতেছি,হবে মহারণ। কটূকথার বিষয় কহিব রে সব। কৌরব পাণ্ডব হিতে সদা করি রণ। বিদুরের আনুগত্যে সন্ধ অকারণ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৪

 বনপর্ব-৪ হতাশায় বিদুরের মনে ভারি কষ্ট। মহামতি ধৃতরাষ্ট্র দিয়েছেন গালি। মুখের ওপর তিনি বলেছেন স্পষ্ট। বিদুরের প্রয়োজন ফুরিয়েছে বলি। হায় কৌরব এহেন অনুচিত কর্মে। মরিবে সকল প্রাণী অকালে অনলে। পথ নাহি পাবে কেউ,অনুচিত ধর্মে, সমাধান হতে পারে, অস্ত্র বাহুবলে। বিবাগী হলো বিদুর,ছেড়ে কৌরবেরে। অন্যথায় পাণ্ডবের করিল স্মরণ। কাম্যকবনের পথে, দেখে যুধিষ্ঠিরে। ভয়ে কাঁপে যুধিষ্ঠির, কাকা অকারণ? আবার বুঝি পাশার ডাক পড়িয়াছে অস্ত্রসস্ত্র ছাড়া আর, কিছু নেই কাছে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩

 বনপর্ব-৩ রাজ রাজেন্দ্র ঘরণী ভয়ে ভীত প্রাণ প্রজারোষে বুঝি এবে হয় মান হানি। অনুরক্ত প্রজাদের চলে গেছে জান। তিক্ততার শেষধাপে,নেমে গেছি রানী। কহে রাজা ধৃতরাষ্ট্র,গান্ধারীর কানে। কেমনে ফেরাব আমি, এ কুলের মান? তুমি মোরে পথ দাও, বলি এই ক্ষণে। বিদুরের জ্ঞানে বুঝি, পড়ে গেছে টান? আপনি যদি কল্যাণ চান দুই পক্ষে, পাণ্ডবদের স্বরাষ্ট্র ফিরিয়ে ডাকুন। দুইপক্ষে সমঝতা হলে হবে রক্ষ্যে, নহিলে যে ধ্বংস হবে, এটুক ভাবুন। রেগে গিয়ে ধৃতরাষ্ট্র, কহিল বিদুর, আমার ছেলের প্রতি,হিংসা এতদূর?

মহাভারতম্ বনপর্ব-২

 বনপর্ব-২ অযথাই সূর্যদেবে করিব বিরক্ত। মোরতরে অকারণে সময়টা নষ্ট। হে প্রাণের সূর্যদেব করি অতিরিক্ত। উপায় কর হে দেব লঙ্ঘিতে এ কষ্ট। এতজন ব্রাহ্মণের খাদ্যের নিমিত্ত- তোমারে স্মরণ করি, করো নিরাময়। চোখ বুজে একমনে যুধিষ্ঠির নিত্য, তপস্যায় মগ্ন থেকে,সূর্যে করে জয়। তাম্রপাত্র এক দিল, মুগ্ধ দিবাকর। দ্রৌপদীর হাতে দাও এই পাত্রখানি। রন্ধন করিবে যাহা, রবে দিনভর। যতক্ষণ সে অভুক্ত, পূর্ণ খাদ্যদানি। গৃহকর্ত্রী ভূক্ত হলে খাদ্য হবে শেষ। সংসারে তারাই দেয় সুস্থ পরিবেশ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-১

 বনপর্ব-১ চলিছে পাণ্ডবগণ উত্তরের বনে। তার সাথে চলে তার প্রিয় প্রজাগণ। পুরোহিত ধৌম্য আর তপস্বীর সনে, এ দেশে রইবে আর করিয়াছে পণ। এত লোক এতজন কি খাবে,কিভাবে? যাও ফিরে প্রিয়প্রজা আপনার দেশে। সুখে ঘর করো সেথা, তবে মোরে পাবে, বার বছরের পরে নিয়ে যাবে এসে। চলে গেল সব প্রজা,রহিলো ব্রাহ্মণ। তপস্বী ঋষির মতো  প্রিয়তম তারা। ওরে কি খাব,কি পাব,কোথা যাবে মন। এত গুলি লোক নিয়ে,হই দিশাহারা। ধৌম্য ঋষি কহে, ওহে পাণ্ডু শিরোমনি। সূর্যের তপস্যা করো, কবে দিন মনি।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-২৫

 সভাপর্ব-২৫ শতধিক শকুনিরে কি করে কৌশল। দ্বিতীয়বারও পাশা করিল চক্রান্ত। হারিল পাশার খেলা পাণ্ডবের দল। বনবাসে বারবর্ষ অজ্ঞাত পযর্ন্ত। কুন্তীরে বিদুর রাখে,সম্মানে তাহারে। পাঁচভাই দ্রৌপদীর  হলো বনবাস। রাজপাট সবছাড়ি গেল অবিচারে। দেবর্ষি নারদ কহে,ভাগ্য পরিহাস। রসাতলে যাবে সব,আপন কোন্দলে। চোদ্দ বছর অপেক্ষা করো হে কৌরব। কৌরবেরা ফেঁসে গেল,কোন মায়াজালে? অযথা সম্পত্তি লোভে, হারাবে রে সব। বার বছরের তরে গেল বনবাসে। সভাপর্বের পরেই বনপর্ব আসে।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-২৪

 সভাপর্ব-২৪ ধৃতরাষ্ট্রের মূর্খতা বিরক্ত সকলে। এত কষ্টে জয় করা ঐশ্বর্য বৈভব। ধৃতরাষ্ট্র দান করে অতি অবহেলে। ক্ষত্রিয় ধর্মের নৃপ,উপাস্যে বৈষ্ণব। দুর্যোধন দুঃশাষণ কর্ণ ও শকুনি। ভীষণ চিন্তায় পড়ে,পেলে অবসর। শকুনির কুচক্রের ধার এত খানি। অনায়াসে খণ্ড হবে মহী শৃঙ্গধর। যুধিষ্ঠির সনে হবে পাশার আসর।  পরাজয়ে বারোবর্ষ যাবে বনবাসে। অজ্ঞাত বাসেও যাবে একটি বছর। ধরা যদি পড়ে তবে, ফের বনবাসে। এইশর্তে দূতক্রীড়া খেলিল শকুনি। ছলনায় জিত হলে,হাসে সৌদামিনী।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-২৩

সভাপর্ব-২৩ যন্ত্রণায় ক্রুদ্ধ ভীম,কহে দুর্যোধনে। বাম উরু চূর্ণ করে,দেবো অব্যহতি। নইলে স্বর্গের দ্বার, না দেখি নয়নে। চরম প্রতিজ্ঞা মোর, বুঝিবে দূর্গতি। চরম প্রতিজ্ঞা শুনে কাঁপে সভাসদ। হোমগৃহে শৃগালের  করুণ ক্রন্দন। চারদিক হতে করে গাধা গদ গদ। হুঁস হলো সকলের ছিল মৌনক্ষণ। ধৃতরাষ্ট্র কেঁপে ওঠে,মৌন সভাঘরে। পুত্রগনে কটূকথা কহিলেন ভয়ে। দ্রৌপদীরে ডেকে কয়,বর চাও মোরে। দাসত্বের মুক্তি চাই, এই দিনু কয়ে। ধৃতরাষ্ট্রের আশিসে,সব পেলো ফিরে। পঞ্চপাণ্ডবের সনে,ফিরে গেল ঘরে।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-২২

 সভাপর্ব-২২ ভিতরে ভিতরে খেলা ভারসাম্যহীন। বিকর্ণকে গালি দিয়ে,কহিলেন কর্ণ। পঞ্চপাণ্ডবের আজ কৌরব অধীন। বৃথা তুমি প্রতিবাদ,করিছ বিকর্ণ? অহংকারী পাণ্ডবের বস্ত্র নাও খুলে। দ্রৌপদীর অঙ্গবস্ত্র কেন রাখো দেহে। অপমান করেছিল স্বয়ম্বর কালে। সূতপুত্র কর্ণ কাঁদে,দ্রৌপদী বিরহে। বহুক্ষণ বস্ত্র টেনে ক্লান্ত দুঃশাষণ। কোথা হতে এল বস্ত্র,দ্রৌপদীর দেহে। বস্ত্রের পাহাড় জমে,দ্যাখে জনগন। বাসুদেব রক্ষা করো,কৃষ্ণসখী কহে। সহিছে পঞ্চপাণ্ডব,সব মুখ বুজে। অন্যায় অবিচারের দাসদাসী সেজে।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-২১

 সভাপর্ব-২১ চুলেরমুঠির জোরে,টানে দুঃশাষণ। অসহায় কৃষ্ণ সখী,ছটফট করে। দেখো কৃষ্ণ দেখো কৃষ্ণ একি আচরণ। দেশের প্রগতি হায়, এ কোন তিমিরে। ধুলায় লুটিয়ে পড়ে,কাঁদে কৃষ্ণ সখী। নারী নির্যাতন করে, বীর পুরুষেরা। অবলা অচলা নারী, চিরদিন দুখী। ধর্মকর্ম সব গেল, ন্যায় ও অধরা। বীরশ্রেষ্ঠ ভীষ্ম দ্রোণ, কর্ণ কৃপাচার্য। কাঠের পুতুল যেন দূতসভা ঘরে। আজ্ঞাবহ দাস এরা, দৃশ্য পরিহার্য। বিকর্ণ কৌরব পুত্র, প্রতিবাদ করে। ততক্ষণে দুঃশাষণ,ক্রুর অট্টহাস্যে। দ্রৌপদীর বস্ত্র টানে,কিসের উদ্দেশ্যে?

মহাভারতম্ সভাপর্ব-২০

 সভাপর্ব-২০ অট্টহাস্য হাসে সভা,লাজে যুধিষ্ঠির। পাঁচভাই নীরবে তা, করিছে হজম। দুর্যোধনের আক্রোশে, সকলে অস্থির। আলোচ্য বিষয় হলো, কার কত দম। বিদুর কহিল উঠে, অন্যায় বিচার। যুধিষ্ঠির নিজে হেরে,কি করিতে পারে। খেলার নিয়মে দেখো যে দ্রৌপদী কার? খেলায় নিজেকে হেরে, শর্ত রাখে কারে? পাঞ্চালী একার নয় পঞ্চ পাণ্ডবের। যুধিষ্ঠির একা কেন,বাজি ধরে তারে? দুর্যোধন মহাক্রোশে হয়েছে যে ঢের। কৃষ্ণারে সভায় আনো,ঝাঁট দেবে ঘরে। বার বার দারোয়ান,অসফল হলে। দুঃশাষণ জোর করে,আনে সভাস্থলে।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১৯

 সভাপর্ব-১৯ মামার পাশায় খেলা,অতি অনুচিত । সকলে বুঝিল তাও,প্রতিবাদ হীন- ভীষ্ম দ্রোণ কৃপাচার্য জানে সব রিত নব এই সভা ঘরে ভালোবাসা ক্ষীণ। চলিছে পাশার খেলা, নেশা ভরপুর। যত হারে যুধিষ্ঠির, তত জিদ করে। রাজপাট ধনরত্ন, সব গেল দূর। তবুও জুয়ার নেশা,যেন চেপে ধরে। শর্ত রেখে দ্রৌপদীরে,শেষ খেলা খেলে। শকুনির ক্রুর দৃষ্টি, নানা ছলনায়। দেশ ছেড়ে যেতে হবে, খেলা শেষ হলে। দুর্যোধন দুঃশাষণ, মোহ ললনায়। হায়রে বিধাতা কারে কি দেবে যন্ত্রণা? দেব সৃষ্ট মানুষের, নাই রে ভাবনা।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১৮

 সভাপর্ব-১৮ সভাঘর তৈরী হল,হস্তিনানগরে। বিশাল সে সভাঘরে,খেলার আসর। ইন্দ্রপ্রস্থ থেকে এল,কুন্তী পরিবারে। আপন শহর হেথা, কুন্তীর বাসর।   জুয়ার আসরে বসে কহে দুর্যোধন। ধনরত্ন যত লাগে দেবো আমি সব। আমার হয়ে খেলবে, মাতুল এখন। কৌরবের সভা গৃহে ওঠে কলরব। নিয়মের বিপরীতে, কেমনে সম্ভব? ভীষ্ম দ্রোণ কৃপাচার্য,সম্মতি দিলেন। অসহায় যুধিষ্ঠির, বুঝিলেন সব, বৃথা তর্ক করা হেথা, তাও বুঝিলেন। প্রথম পাশার দান দিলেন শকুনি। প্রথম জয়ের ফল পেয়েছেন উনি।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১৭

 সভাপর্ব-১৭ দ্বিধা দ্বন্দ্ব বিবাদের আয়ু স্বল্পকাল। মতভেদ ভাতৃবর্গে, নিতান্ত ক্ষণিক। কৌরব পাণ্ডব ঐক্য রবে চিরকাল। দুতক্রীড়ার অনুজ্ঞা,কৌলিন্যে বৈদিক। ধৃতরাষ্ট্র কান পেতে,শুনিল ক্ষণিক। চক্রান্তে ব্যকুল পুত্র,কৌতূহল অতি। কহ পুত্র দুর্যোধন, কলির প্রতীক। মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হোক,নাই কোন ক্ষতি। আমন্ত্রণ করে আনো ইন্দ্রপ্রস্থ হতে। আদরে সোহাগে করো,ঋদ্ধ আপ্যয়ন। ত্রুটিহীন আচরণে, খেলো সর্ব মতে। বাজি রাখা,মুক্ত হস্ত, ক্রীড়ার ধরণ। বিদুরের ডাক পড়ে, এমন সময়। সব কথা শুনে কহে,আসিছে প্রলয়।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১৬

 সভাপর্ব- ১৬ অনুমতি দিতে পারে, রাজা ধৃতরাষ্ট্র। দূতক্রীড়ায় হারিয়ে,করিব ভিখারী। রাজপথে পাণ্ডবেরা,হবে দিকভ্রষ্ট। কথা দিলুম শকুনি,তব আজ্ঞাকারী। কেমনে কহিব আমি, পিতার সমীপে। দুর্বোধ্য পাশার ছলে, হেরে যাই যদি, রাজপাট সব যাবে, মরিবো সন্তাপে। সম্মুখ সমর ভালো, যায় যদি গদি। বৃথা কেন ভীত প্রিয়, আমি যে শকুনি। দুতক্রীড়ায় সর্বদা, খ্যাতির শিখরে, শিশু পাণ্ডবেরা এসে,হেরে যাবে জানি। শত্রুর বিনাশ হবে, দেখিবে অচিরে। আমার দ্বারা হবে না,কহে দুর্যোধন। পাশার আসর দিতে, শুনিব বচন?

মহাভারতম সভাপর্ব-১৫

 সভাপর্ব-১৫ দুর্যোধন কহে রোষে জীবন অর্পণে- পাণ্ডবেরে জয় করে,করি দেশ ছাড়া? ইন্দ্রপ্রস্থ জয় করে পাঠাব শমণে। সাজাও সৈনিক দিব, যুদ্ধের মহড়া। এত ভাবি মনে আমি,হবে ভাগ্যদয়। নয়নে বিঁধেছে যেন,দ্রৌপদী পাঞ্চালী। অতুলা ললনা প্রেমে অস্থির হৃদয়। প্রত্যক্ষ করিব তারে, কেমন মরালী। শান্ত হও নিজ গূণে রাখিও গরিমা। সম্মুখ সমরে তুমি  পাইবে না  জয়। ভীষ্ম কর্ণ জয়দ্রথ দ্রোণ অশ্বত্থামা। ছলনায় কেড়ে নিতে,পাশাই আশ্রয়। ভালোবাসে পাশা খেলা,পুত্র যুধিষ্ঠির। পাশার ফ্যাঁসাদে ফেলে,কেড়ে নিও নীড়।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১৪

 সভাপর্ব-১৪ মনের দুঃখে নির্জনে বসে দুর্যোধন। শুকনো মুখে একাকী মনোযন্ত্রনায়- শকুনি মামার কাছে করে নিবেদন, অচিরে পাণ্ডবে তুমি করিবে বিদায়। ছলে বলে কৌশলেও করি অভিপ্রায়  তবু না ডরাতে পারি জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠিরে, কেমনে করিব শেষ করহ উপায়। ভীমার্জুন সহদেব, বাকি পাণ্ডবেরে। অভাব কি আছে ভাগ্নে কহ একবার? শকুনির সব ভ্রাতা তব অনুগত। শত ভ্রাতা বীরশ্রেষ্ঠ, ভীষ্ম মনিহার। অশ্বত্থামা কৃপাচার্য, কর্ণ জয়দ্রথ। একডাকে নিজপ্রাণ বলি দিতে পারে। ধনদৌলত ঐশ্বর্য, রবে একধারে।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১৩

সভাপর্ব-১৩ স্ফটিকের মেঝে দেখে মনে করে জল। বস্ত্র তুলে হেঁটে গিয়ে, হাসির খোরাক। জলের আধারে দ্যাখে,স্ফটিকের তল। পড়ে গিয়ে ভিজিয়েছে,নিজের পোষাক। অট্টহাসি হট্টগোল মহিলা মহলে। কহিল দ্রৌপদী তারে,অন্ধ পুত্র অন্ধ। ওরে অন্ধ,অন্ধরাও সাবধানে চলে। অন্ধের সমক কেন,চোখ রাখো বন্ধ? রাগে ক্রোধে দুর্যোধন,শকুনির সনে। যথা সাধ্য ত্বরা করি,করিল গমণ। প্রতিশোধের আগুন,জ্বলিছে মগনে। ভেসে ওঠে দুইচোখে,মন্দ আচরণ। ওহে বাছা দুর্যোধন দুঃখ কেন মনে? শত্রুর উন্নতি দেখে, জর্জরিত বাণে?

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১২

সভাপর্ব-১২ সুদর্শন চক্র হাতে কহিল শ্রীকৃষ্ণ। হে শিশুপাল একশ পাপ করি মাফ। এবার করিব বধ,কারো আছে প্রশ্ন? নির্বাক নিঃশ্চল সব,করে পরিতাপ। পড়িল শিশুপালের, শ্রীহীন মস্তিষ্ক। শিশুপাল সমাপন,যজ্ঞ সভা মাঝে। প্রবেশিল কৃষ্ণ দেহে,উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। রাজসূয় যজ্ঞ শেষে,শঙ্খধ্বনি বাজে। যজ্ঞশেষে সব রাজা চলে গেল দেশে। রয়ে গেল দুর্যোধন, মাতুল শকুনি। সভাঘরে দুইজনে, ঘুরে ঘুরে দেখে। আহামরি সভাঘর, হলো কানাকানি। স্ফটিকের মেঝে দেখে দুর্যোধন টলে। জল ভেবে বস্ত্র তুলে সাবধানে চলে।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১১

 সভাপর্ব-১১ মহামতি শিশুপাল সভার ভিতরে। ক্রোধ রাগ অপমান করিলা প্রকাশ। বাসুদেব শ্রেষ্ঠ কিসে কহিবে আমারে? যজ্ঞ স্থানে অপমান করিলে হে দাস? শান্তমনে বাসুদেব কহিলেন তারে। পিসতুতো ভাই বলে সদা ক্ষমা করি। একশ পাপের ক্ষমা,কথা ছিল ওরে। তাও পূর্ণ করেছিস,বহুদিন ধরি। শ্রীকৃষ্ণরে কটূকথা কহে বার বার। যজ্ঞপণ্ড করে দেবে এই মনোভাব। নিন্দায় পাণ্ডবগণে মুখ ভরে তার। ভাঙ্গচুর করিল সে,দম্ভের প্রভাব। অদ্ভুত নিরখি সবে বিস্মিত অন্তর। সুদর্শণ চক্রঘোরে,যজ্ঞ সভা ঘর।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-১০

 সভাপর্ব-১০ রাজসুয় যজ্ঞ হবে,মহা আয়োজনে। তোড়জোড়ে চারভাই আর যুধিষ্ঠির। নানান দেশের রাজা,এলো নিমন্ত্রণে। হস্তিনার থেকে এলো,মহা ভীষ্ম বীর। ধৃতরাষ্ট্র,কৌরবেরা দিতেছে সামাল। ভীষ্মের চরণধুলি,পড়ে সভামাঝে। শ্রীকৃষ্ণের পিসতুতো ভাই শিশুপাল- শত্রু মিত্র গুণীজ্ঞানী ব্যস্ত সব কাজে। উপহার সামগ্রীও এসেছে অঢেল। লক্ষ লক্ষ লোকজন,মুনি ঋষিগণ। যজ্ঞের অনলে ঢালে ঘিয়ে মাখা বেল। অর্ঘ আপ্যয়নে সবে,করিছে বরণ। উত্তম ব্যক্তিরে দিবো,শ্রেষ্ঠ উত্তমার্ঘ্য কৃষ্ণ বাসুদেবে দাও শ্রেষ্ট  পরমার্ঘ্য।

মহাভারতম্ সভাপর্ব-৯

 সভাপর্ব-৯ ভীমের সাথে লড়াই করে জরাসন্ধ - পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে,যেন থেমে যায়। সেইক্ষণে কৃষ্ণ কহে যুদ্ধ কেন বন্ধ? দুইপায়ে ধরো ভীম,চিরে ফেলো তায়। শ্রীকৃষ্ণের কথা মত,দুইভাগ করে। যেমনটা জন্মেছিল বীর জরাসন্ধ। দুইদিকে ফেলে দেয়,ডানবাম করে। জরাসন্ধ মরে গেলে যুদ্ধ হয় বন্ধ। বন্দী সব রাজাদের মুক্ত করে দিয়ে। কৃষ্ণার্জুন ভীম সহ ফিরে যায় ঘরে। কারামুক্ত রাজাদের,আসে সঙ্গে লয়ে। উপযুক্ত সম্মানের, ডালি দেয় ধরে। সব রাজা পাণ্ডবের বন্ধু হয়ে যায়। রাজসূয় যজ্ঞ হলো নিয়ম নিষ্ঠায়।