Posts

Showing posts from July, 2024

দীপাবলী হোক

দীপাবলী হোক দেবপ্রসাদ না মোমবাতি জ্বালেনি কেউ, নিভে গেছিল নিয়নের বাতি, দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল সব- মোমবাতি জ্বালেনি কেউ-বেদীর ওপরে, কালো ব্যাচ ও কেউ বাঁধেনি হাতে, শোকসভা হয়নি কোথাও,  পার্ক স্ট্রীটের রাস্তায় বসেনি ধর্ণায়- প্রতি বাড়িতে সেদিন ছিল দীপাবলি। ঘন ঘন মৃত্যুর খবরও হয়নি টিভিতে, শীতের রাতে অন্ধকার মেঠো রাস্তার একপাশে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছিল আমার মৃতদেহটা- আসেনি কেউ,  হ্যাঁ এসেছিল বটে, দু একটা শেয়াল। তারা আসার আগে ধরেছিল হায়নারা- ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছিল আমাকে, এই খুচরো দু-একটা মাত্র দুঃখ- ওরা আগুন দিলো বটে, তবে পোড়াতে পারেনি, রাত্রির আলোয়, তখনো জেগে আছি আমি, ঘুমিয়ে পড়িনি মোটেও, একটা কাঠির স্ফুলিঙ্গ আমার ছিন্ন বস্ত্রে- জলের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে বাঁচার আকাঙ্ক্ষায় সর্বজনীন নিয়নের আলো দীপাবলি হোক। আমি রাজি আছি।

টুকরো টুকরো

টুকরো টুকরো দেবপ্রসাদ যে আলোটুকু  এখনো হৃদয় আলোকিত করে আছে  সেই স্নিগ্ধ আলো দুহাত ভরে মেখে নাও, চোখে-মুখে-হাতে। একটু বেছে বেছে কথা বলো,  নিজের বোকামো গুলো মনে করে- ভেবে ভেবে হেসে ওঠো। স্রোতের বিপরীতে মাছের লড়াই- শিখে নাও আজই। ক্ষতগুলো ভাইরাসের অপেক্ষায় না রেখে ক্ষতস্থানগুলোয় লুকিয়ে ফেলো মলমের প্রলেপে। প্রশান্ত হৃদয়ে আগুন না জ্বেলে, নিয়নের বাতি জ্বালো।  অন্ধকারে ডুবে থেকে, গোধূলির আমন্ত্রণ  অবাক লাগে স্বার্থপরতায়- নিজের ছেলে কাঁদলে হৃদয়ে ব্যথা জাগে পরের ছেলে কাঁদলে মাথা ব্যথা লাগে। নিখাদ প্রলাপে দেখো তারা হয়ে জ্বলবে ঠিক। এক-একটা অক্ষত গোলাপের গায়ে,  একটা ক্ষত দেখবে ঠিক। কোনোদিন যদি ডাকো, হাতে প্রেম নিয়ে ডেকো স্মৃতিরা কবিতা হয়ে ডাকবে প্রতিদিন।

পরমজ্যোতি

পরমজ্যোতি দেবপ্রসাদ না, আমি কোনো মানুষ নই,  না আমি দেবতাও নই,  যক্ষ? না তাও নই, আমি ব্রাহ্মণও নই,  ক্ষত্রিয়ও নই, বৈশ্যও নই,  শূদ্র তাও নই।  আমি আমাকে ব্রহ্মচারীও বলি না,  বনবাসী? না তাও হতে পারিনি, ধ্যানরত সন্ন্যাসী আমি তাও হতে পারি নি।  আমি গৃহী, গৃহ আমার পরম শান্তি। আমি পরম ভাগ্যবান, আমার চারপাশে ভগবান ঘোরেন। আমি তাঁকে দেখতে পাই, তার সঙ্গে কথা বলি। আমার মা আছেন আমার চোখের সামনে, তাঁর অমৃতবানী আমাকে সমৃদ্ধ করে, আমার জ্ঞানেন্দ্রিয় উজ্জীবিত করে। বাবা আমার মধ্যে তাঁর যত ভালো গুলোয়-  আমার দেহের প্রতিটি কোষ জাগরিত করেছেন। তাঁর কাব্যিক ধ্বনিমাধুর্য, তাত্ত্বিক কাঠামোর- শৃঙ্খলাবদ্ধ সুনিপুণ নির্মাণ, দার্শনিক গভীরতায় আমি বুঝি না আমি মানুষ কিনা,  আমি এই পরম জ্ঞানপ্রাপ্তির ভিড়ে হারিয়ে যাই। আমি সেই পরমজ্যোতির অংশ।

গোয়েন্দা প্রফুল্ল

গোয়েন্দা প্রফুল্ল ১৭ই জুলাই আজ বহরমপুরে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল | অল্প অল্প অন্ধকার শুরু হয়েছে, সামনে পুজো ঠাকুর দালানে প্রতিমার আবক্ষে সবে কাদামাটি লেপা হচ্ছে, ঠাকুর দালানে পটুয়াদের হাতে পায়ে কাদামাখা, আমি তখন মনোযোগ সহকারে প্রতিমার ওপর চোখ রেখেছি, এক পটুয়া সবে বলতে শুরু করেছে মায়ের পৌরাণিক গল্প, মর্তে আসার রোমহর্ষক কাহিনী, প্রতিবছর মা বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবার আগে মহাদেব তাকে বাধা দিলে মায়ের নয় নটা রূপ দেখতে পান-....এই সময় বহরমপুরের এই সম্ভ্রান্ত পরিবারের কর্তার সঙ্গে দেখা করতে এলেন কর্ণসুবর্ণ এলাকার বাসিন্দা এক দিনমজুর | উঠোনে দাঁড়িয়ে কর্তা তার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলছেন | হঠাৎ কর্তার নজর গেল দিনমজুর লোকটির হাতের দিকে | হাতে একটি পিস্তল। কিছু বলার আগেই চলল গুলি, কর্তা ছিটকে পড়ল মাটিতে। বৃষ্টির মধ্যে ঘন অন্ধকারে হারিয়ে গেল লোকটা। হইহই চারদিকে কি হলো? এমন করে কে কর্তাকে মারতে পারে? জমিদার দূর্লভ চৌধুরীর কে এমন শত্রু যে তাকে গুলি করে মারতে পারে, এত সজ্জ্বন ব্যক্তি, দানধ্যান পূণ্য কাজে যার জুড়ি নেই, সারা বহরমপুর যার গুনগান করে, তাকে কে মারতে পারে,  লালচে রঙের কাদা |  কর্তার মু...

অবসাদ

অবসাদ  দেবপ্রসাদ সময়ের সিঁড়ি গুলি ভাঙতে ভাঙতে। শরীরে ছুঁয়েছে আজ, মৃত্যুর নিঃশ্বাস। করতলে চাঁদ রেখে, চলতে চলতে। বুকের ভিতরে জন্মে, সেই ক্রীতদাস। টাল মাটাল নৌকার, পাল ছিঁড়ে ছিঁড়ে। যেখানে দুঃখের জন্ম, জনতার ভিড়ে। বোধশূন্য সন্ধ্যা ঘিরে ধরেছে আমায় প্রিয় এই শহরের, চেনা ঘর গুলো। পথঘাট নরনারী, আছে বেদনায়। পাথরের স্তূপে বড়, অবসাদ ছিল। ধ্বংসস্তূপে আত্মমগ্ন ভগ্ন ইতিহাস। খসেপড়া সময়ের নীরব উচ্ছাস। আহত শরীর তুলে দেখি আশেপাশে,  অগণিত লাশ সব, পড়ে নানা স্থানে। স্বামীর আদরে ঘেরা, অচেনা প্রদেশে। পুতুল-জড়ানো হাত, পুড়েছে আগুনে। বাঁচার প্রত্যয়ে স্তব্ধ, পৃথিবীর প্রাণ। অবয়বহীন মায়া, নিঃশব্দ প্রয়াণ। ভেঙে পড়া ঘরবাড়ি, খুঁজে খুঁজে দেখি। আখেরে অধিকতর, অক্লান্ত শরীরে- অজানা অচেনা পথে, চলেছে বৈশাখী। ভগ্নস্তূপ ধুলোমাখা, দেখিনু অদুরে। একটি ধূসর খাতা, পড়েছিল পথে।   তমসার অন্ধকার, লেখা ছিল তাতে। ছেঁড়া খাতার প্রথম, পাতা দুটি পড়ে, অবাক করেছে এই, ঘটনার দিনে। আশ্চর্য কবিতা সব, পথে কেন ওড়ে। শেষ হলো না যে তার, কবিতা সেদিনে। স্মৃতিঘন চেতনায়, দেহজ সূষমা। ধুসর মেঘের রূপে, নারীর উপমা। নাম পরিচয় তার, লেখা নেই...

পরাজিত

পরাজিত দেবপ্রসাদ জানা তৈরি হও, চটপট, তৈরি হও।  তোমাকে ধরেছে রোগে,  তোমার শরীরের ওপর মাছি ভণভণ করছে, কিন্তু দরকার তোমাকে।  মরতে বসো না, সরে থাকতে যেও না, ফোঁটা ফোঁটা রক্ত চুয়ে চুয়ে পড়ছে। তৈরি হও, চটপট। যদি বেঁচে থাকো, কখনও বোলো না ভালোবাসি, ভালোবাসি-কখখনো না”।  নিশ্চিত মনে হচ্ছে যা তা নিশ্চিত নয়।  চলেছে যেভাবে সব সেভাবে চলবে না কিছুই। বিপদ আসবে একদিন, সেদিন লড়াই করতে হবে। গলা উঁচিয়ে, সেদিন বলতে হবে ভালোবাসি। সাহস করে বলতে হবে। আমরা বেঁচে আছি। চিতা সাজছে, আগুন হাতে তোমার প্রিয়জন। তোমার শরীরটা হয়তো পুড়বে না বেশি, ওই যে লাঠি হাতে ডোম,  পিটিয়ে গুঁজে দেবে-আগুনে। অন্যায়ের শাস্তি দেয় কে? এই আমরাই।  ভুলে যাওয়া প্রেমের স্মৃতি ফিরিয়ে - নিজের চারপাশের পরিস্থিতিটা - অন্যরকম কোরো না আজকের পরাজিতরাই,  আগামীকালের বিজয়ী। "কথখনো না”  এই কথাটাই এখন বদলে নিতে হবে।

সৌমেন

সাখালিন দ্বীপে দানব মশা/ নীলউল্কা ( সৌমেন কুমার চৌধুরী) একটা কাঠের চৌপায়া, অনেকগুলো মোবাইল ফোন, বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম, কফির ফ্লাস্ক আর কাঠিন্যে ভরা মুখের সাথে একজোড়া গভীর চোখ.. এটাই যথেষ্ট ছিল টানটান করে নীলউল্কার এই সাখালিন দ্বীপে দানব মশার জন্য। লোকটার নাম কেউ জানতেন না শেষ পর্যন্ত কিন্তু জানতে হবে। তাকে আবারও কুর্ণিশ জানাতে হয়। মশা নামে পতঙ্গটিকে জানে না এমন কেউ নেই পৃথিবীতে, তারে নিয়ে যে বাস্তব লেখা জড়িয়ে ফেলা যায় সেটা ভাবনাতেই আনা যায় না।  হ্যাঁ  সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের মশা নামক লেখা আছে, তবে হাসির রসে মশাকে স্বর্গ পযর্ন্ত ঘুরিয়ে আনাও যায়, এতো দানব মশা স্বর্গ জয় করতেই পারে, ইন্দ্রকে স্বর্গচ্যুত করতেই পারে। দুঃখিত আমি কল্পনায় যতই স্বর্গে যাই না কেন সাখালিন দ্বীপে দানব মশা আসছে, নীলউল্কার এই প্রয়াস সকলের মনকে রঞ্জিত করবে অবশ্যই, প্রতিটা মশা সিরিজে যে মজা এবং হাসি লোকানো ছিল, এই লেখায় যেন আরো আরো উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে। এর একটাই কারণ নীলউল্কার ( সৌমেন কুমার চৌধুরী) কঠিনচিত্তের ভেতরেও আর এক চরিত্র বসবাস করে, তা নিজের মধ্যে সেই বৈচিত্র্য না থাকলে হয় না।  আজ পর্যন্...

প্রেমশূন্য হৃদে

প্রেমশূন্য হৃদে দেবপ্রসাদ কভু কোপ, কভু ক্ষোভ কৃপাণ কম্পন। কভু লোভ, লোল জিহ্বা চলে নিরন্তর। কভু কাম, কুষ্ঠ কায়, চন্দন লেপন। রক্ তে  ভেজা ডান হাত, যুগ যুগান্তর। বীজের মধ্যে শিউরে ওঠে শব্দমালা। কভু দেখা দেয় ভয়, মাটির অন্তরে। কভু ফণী কুণ্ডলিনী, বিকালের খেলা কাঁদে হিংসা-পিশাচিনী, যন্ত্রণা গভীরে। আশা-ক্ষিপ্ত কত হাসে, করে কত গান। পাথুরে পাতাল থেকে, আগুনের তাল। প্রেমশূন্য হৃদে হ'লো, ভূতের বাথান। জমাট বাঁধা স্বপ্নের, কি এমন হাল। শব্দের মালায় দেখো, বলিচিহ্নগুলো। জড়ো করা পৃথিবীর, চরণের ধুলো।

সাবিত্রী সত্যবান

। নিশ্চিন্তে রহিনু আমি মনে করি হেলা।। মেঘেতে আচ্ছন্ন, বেলা নারিনু বুঝিতে। মম দোষ নাহি কিছু, না ভাবিহ চিতে।। অকারণে গৃহে যেতে কর মনোরথ। রাত্রিকালে বনস্থলে না জানিব পথ।। চল প্রভু এই বৃক্ষে আরোহণ করি। কোনমতে বঞ্চি প্রভু এ ঘোর শর্ব্বরী।। প্রভাতে উঠিয়া কালি করিব গমন। যে আজ্ঞা তোমার, এই মম নিবেদন।। সত্যবান বলে, হবে যাহা আছে ভালে। ইহা না করিয়া কোথা যাব রাত্রিকালে।। এত বলি উঠি দোঁহে বৃক্ষের উপরে। চিন্তায় আকুল রহে দুঃখিত-অন্তরে।। হেথায় হইল চক্ষু অন্ধ নৃপতির। পুত্রের বিলম্ব দেখি হলেন অস্থির।। শোকাকুলে কান্দে যত রাজার ঘরণী। কোথায় রহিল পুত্র, এ ঘোর রজনী।। তিন দিন উপবাসী বধূ গেল সাথে। না জানি কেমনে নষ্ট হইল বা পথে।। এতদিনে স্বামী যদি পেলে চক্ষুদান। হারাইল রত্ননিধি পুত্র সত্যবান।। হায় বধু গুণবতী, নন্দিনী সমান। তোমা দোঁহে না দেখিয়া ফাটে মোর প্রাণ।। ঘোর বনে বনজন্তু শত শত ছিল। অভাগীর কর্ম্মদোষে দোঁহারে হিংসিল।। নাম ধরি কান্দি উঠে দম্পতি দুজনে। কারণ জানিতে আসে যত মুনি স্থানে।। একে একে কহে তবে যত মুনিগণ। কি হেতু তোমরা এত করিছ রোদন।। আশ্বাস করিয়া কয়, না করিহ ভয়। সুখের লক্ষণ রাজা জানিহ নিশ্চয়।। আমা সবাকার ...

সাবিত্রী

সাবিত্রী-১ মদ্রদেশে অশ্বপতি ছিল মহীপাল। সন্তান বিহীন রাজা নিরানন্দ মতি। পুত্রহেতু শিব সেবা করে বহুকাল। বহুদিন পরে হলো, কন্যা রূপবতী। শ্বেতবর্ণ তনু তার শরীরের শোভা। বিহঙ্গম-চঞ্চু সম, প্রকাশিছে নাসা। ধনুকের মত ভুরূ অতি মনোলোভা দু আঁখি দেখিলে মনে, ধরে যাবে নেশা। শুদ্ধমতি সর্বকার্যে অতি সে প্রবীণা। সুপ্রিয়বাদিনী সতী, ভারি দয়া মায়া। সুকোমল ইন্দ্রধনু, অপার করুণা। অশ্বপতি হৃষ্টমতি দেখিয়া তনয়া। সর্বদা পবিত্রা কন্যা, পবিত্র আচার। সাবিত্রী রাখিল নাম, বিচারি তাহার। সাবিত্রী-২ দিনে দিনে বাড়ে কন্যা, পিতার মন্দিরে। প্রিয় সখীগণ লয়ে, আনন্দে উৎসবে। স্বচ্ছন্দে ভ্রমনে যায়, যেথা ইচ্ছা করে। ভ্রমণ করিছে সুখে, সুন্দর এ ভবে। উপনীত হলে গিয়া, মুনির আলয়। বিবিধ কৌতুক দেখে, অশ্বপতি-সুতা। রূপে গুণে সবদিকে, পাইল প্রশ্রয়। খুশিতে মগন হয়ে, কহে নানা কথা। হাসিতে ঝরিছে রত্ন, খুশি অশ্বপতি। বিদ্যাশিক্ষা জ্ঞানশিক্ষা, সব দিল তারে। ধৈর্য স্নিগ্ধ গুরুজ্ঞান, আর রীতিনীতি। শিশুকাল হতে কন্যা, সব নিলো ধরে। ষোড়শী রূপসী কন্যা, ভারি জ্ঞানবতী দেখিয়া তাহার রূপ, খুশি অশ্বপতি। সাবিত্রী-৩ দ্যুমৎসেন নামে জেনো অবন্তীর পতি। তাহার নন্দন ছিল, না...

বউ

বউ দেবপ্রসাদ আমি কিন্তু সবার মতো বউকে ভয় পাই না। বউ কিছু বললে পরে, বিতর্কে তাই যাই না। ঘুমের থেকে সকালবেলা  বাসি বাসন থাকলে মেলা চটপট তা ধুয়ে ফেলি, লজ্জা কিছু পাই না। আমি কিন্তু সবার মতো বউকে ভয় পাই না। আলমারির শাড়ি গুলো পরেছি কতবার। সকলে যে নিয়েছে দেখে, বলবে বারবার। এই শাড়িটা পুজোয় কেনা পরেছি দুবার, নয় অচেনা বছরে তুমি কটা শাড়ি দিয়েছো বলো আর। একই শাড়ি এক বাড়িতে পরবো কতবার? অভিমানে বিয়ে বাড়ি, যাবে না বুঝি তুমি। হাজার টাকার শাড়ি কিনে দেবো এখন আমি? কেমন করে রেখেছ মনে কার কোন অনুষ্ঠানে  কোন শাড়িটা কোনখানে, পরে গেছো তুমি। গ্যাসের টাকা কাল দিয়েছি, ভুলে গেছ তুমি। একশ টাকা ধার নিলে তার, সুদ একশ টাকা। খুচরো টাকার খোঁজ পাই না মানি ব্যাগে রাখা রাতের বেলা গুছিয়ে রাখি সকালবেলা মিলিয়ে দেখি কম হলে, হেসে বলি, মানি ব্যাগ যে ফাঁকা। চোখ ঘুরিয়ে হাঁটা দেবে, ঠোঁট করবে বাঁকা। যদিও বেশি লাই দিই না চাপে চাপে রাখি। চোখ দুটো লাল হল কিনা সেটা লুকিয়ে দেখি। হাতে হাতে কুটনো কাটা অল্প সল্প বাটনা বাটা  খাবার আগে বলি তারে, খেতে দেবে নাকি। তাড়াহুড়ো করো না তুমি আরও একটু বাকি। কথায় কথায় বলবে শুধু হাঁদা তুমি ...

অন্ধকারের শক্তিরা

অন্ধকারের শক্তিরা দেবপ্রসাদ অন্ধকারের শক্তিরা লুকিয়ে আছে-সাবধান একটু খুঁজলে দেখতে পাবে, টেবিলের নিচে কানা লাইট পোষ্টের তলায়,  উন্নয়নের অলিতে গলিতে। অন্ধকারের শক্তিরা নোংরা মুখ দিয়ে-  পান করে, উষ্ণ নির্মল রক্ত,  যখন কঠিন পথশ্রমে অবসন্ন,  তন্দ্রাতুর আর নিরস্ত্র জীবন,  তখন অতর্কিতে আক্রমণ করে। আলোর দিন অদৃশ্য হয়েছে তো- সীমাহীন অভিশপ্ত কালো দিন- সূর্য নিবে গেলে- জঘন্য হত্যাকাণ্ড, হিংসা, কুৎসা,  অন্ধকারের বাহিনী উৎসবে মেতেছে। হৃদয়হীনতায়, প্রতিহিংসার বলি, বিনা কারণে  বিশ্বাসঘাতী আক্রমণে নিহত হচ্ছে, জ্ঞাত অজ্ঞাত বহুরক্ত। ঘন এই অন্ধকারে- আহত পশুর অনুভবে।   দুর্গন্ধ-ভরা গুহাহিত রাত,  ক্রোধে চিৎকার করে। প্রাণে ছিল মরুভূমির তীব্রতা।  ধমনীতে ছিল রঙিন তরল।  স্বপ্নের মতো হৃদয়। খেয়ালি রাত যখন জলন্ত প্রতঙ্গের-  আলোয় আলোকিত। মাতাল হাওয়ায় মর্মরিত গাছের পাতাগুলি ঝরে পড়ে শুকনো ঘাসের ওপর। শুকনো ঘাসে-ঢাকা জমির ওপর- গাঙ শালিকের দল, সারি বাঁধে- এই সুন্দর প্রকৃতির ওপর বেখেয়ালি  রাত আনে অন্ধকার - অন্ধকারে জন্ম হয় শক্তিরা-    

ফেসবুক

।। ফেসবুক ।। দেবপ্রসাদ জানা দৃশ্য-১ । ড্রইংরুম, আবির অফিস বের হবে, একটা চেয়ারে বসে মোজা পরার চেষ্টা করে, এবং গলা ছেড়ে গান গায়, 'ওরে ভাই আগুন লেগেছে বনে বনে ওরে ভাই--।। তিতলির প্রবেশ ।।। তিতলি- আজ কাল আগুন লাগছে তাহলে? আবির- বসন্ত এসে গেছে, সামনে দোল, চারিদিকে রং, একটু আগুন তো লাগবে প্রিয়া।  তিতলি- প্রিয়া, প্রিয়তমা ছেড়ে, এবার একটু ডালে এসে বসো দেখি- আবির- ডালে কেন? আমি কি পাখি নাকি? তিতলি- পাখি না হলেও যেভাবে আজকাল উড়ে বেড়াচ্ছো, পাখনা না গজিয়ে যায় না। আবির- তা তুমি মন্দ বলোনি। ডানা গজালে, দুজনে মিলে বেশ মুক্ত আকাশে মুক্ত বাতাসে উড়ে বেড়াব। তিতলি- আমার তো আর তোমার মতো পাখনা গজায় নি? যে তোমার মতো মুক্ত আকাশ, মুক্ত বাতাসে উড়ে বেড়াব। আবির- মন টাকে মুক্ত করো সোনা, একটু বাতাস লাগুক। মনের জানালাটা খোলা দরকার। তিতলি- মনের জানালা! বাব্বা তুমি যে কবিদের মত কথা বলছো। কোনো কবিতা সন্ধান পেয়েছো বুঝি? ও সব কবিতা সবিতা দের দিকে কম সময় দাও, নইলে বিপদে পড়ে যাবে। আবির- কি আজে বাজে বকছো? প্রত্যেক মানুষের ভিতরে একটা করে কবি বাস করে, তা বলে সবাই কবি হয় না। তিতলি- আহা-রে কবি আমার, তোমার এই লেকচার না তোমার ...

সর্বনাশা নেশা

সর্বনাশা নেশা দেবপ্রসাদ এই নিদ্রাহীন রাতের গহ্বরে  অস্ত্র নয়, বস্ত্র নয়, তৃষ্ণা শুধু মোবাইলে।  উলঙ্গ শরীরে কামক্ষুধা বাড়ছে,  সুরার নেশায় আসক্ত এক একটা নর রাক্ষস। বক্ষসুধায় ঘাটতি, হৃদয়ে প্রেমহীন অশান্তি, অশালীন অপ্রাকৃত বৈদেশিক ভাষার বাদ্য,  খাদ্য চাই, বিদেশি, বাক্সবন্দী, বাসি,  ডালভাতের গরম খাবারে অরুচি। হায়রে প্রকৃতি, অভাবের মলিন কুটিরে নিজের মাটিতে একটা বাসযোগ্য ঘর,  জীবনের নিশ্চয়তা, সুস্থ শিশু। শোষকের রক্তে, পর্যাপ্ত রোদ্দুর,  লক্ষকোটি অবিশ্বাসের হাত। এমন গভীর রাতে, যে রাত শুধু অমাবস্যা। আঁধার যেখানে বুক ফুলিয়ে থাকে - ঘুমের তৃষ্ণায় অনন্ত সময় ধরে - জেগে থাকি একা,  এবার ঘুমাতে দাও এই সমুদ্রতটে বিশাল পৃথিবী আমার হোক  ওই তো ফেনায়ে ওঠেছে সাগর,  শরীর ভাসিয়ে জোয়ারের ঢেউ এর  সাথে মিশে যাই। ভালোবাসা, তোর নেশায় মগ্ন এ পৃথিবী- আমার নয়, এ ভারি তীব্র তৃষ্ণা। হৃদয় কাঁদায়, জীবন ভাসায়,  এ এক ঘাতক দানব, এ এক সর্বনাশা নেশা।

বৃষ্টিকথা

বৃষ্টিকথা দেবপ্রসাদ আকাশে তারারা দেখো, দেখছে কেমন। জোনাকির মতো দেখো মিটি মিটি চায়। নিশিরাতে বাঁশঝাড়ে, জোনাকি যেমন। পূবের পুকুরে চাঁদ, লুটোপুটি খায়। ঝাঁকড়া ডুমুর গাছে, ফুল ছদ্মবেশী। স্থিরচোখে মাছরাঙা, দেখে দীঘি জলে। আমি এক অভ্যাগত, দূর ভিনদেশী। আমি মেঘ, আগন্তুক, সহসা অঞ্চলে। স্বাপ্নিক নিয়মে আমি, এখানেই থাকি। এখানে থাকার নাম, সর্বত্রই থাকা -   এ দেশ আমার দেশ, হৃদ মাঝে রাখি। তাতে কি বদল হবে, সৌভাগ্যের চাকা। খরারোদে এ বাতাস, ক্লান্ত পরিশ্রান্ত। কোনো অনাত্মীয় নই, ঘুরি দেশে দেশে। কার্তিকে ধানের মাঠে, মঞ্জরী অশান্ত। চিরোল পাতার পরে, আসি ছদ্মবেশে। টলমল শিশিরের, জ্যোৎস্নার চাদর।  নিশিন্দার ছায়াতলে অকাল বার্ধক্য। ক্লান্ত চোখের আঁধার, করিবে আদর। মাঠের লাঙ্গলে দেখো, ভারি মতানৈক্য। মাটিতে আমার গন্ধ, দেখো বুক চিরে। লেগে আছে সেই স্নিগ্ধ, আমার সুবাস।     দু’পাশে ধানের ক্ষেত, আকাশ অদূরে। সরু পথ ধু ধু মাঠে, নদীর বাতাস। আমার অস্তিত্বে গাঁথা, অবোধ বালক।  মেঘবালিকার কথা, শুনিবে সবাই। বৃষ্টি হয়ে পড়ি এসে, পড়িতে পলক। যেই দেশে যাই কেন, ভারি সুখ পাই।

আমি ক্রীতদাস

আমি ক্রীতদাস  দেবপ্রসাদ  আমি ক্রীতদাস তোমার,  আমি ক্রীতদাস তোমার ছেলে মেয়ের- কখনো স্বামী, কখনো পিতা রূপী ক্রীতদাস আমি। তোমার শাসন পৃথিবীর প্রতি অংশে, এই আভিজাত্য শাসন-শৃঙ্খল, গলায় বাঁধা লৌহশিকল, মস্তকে কাঁটার তাজ- মনে হয় রাজা আমি, পায়ের শিকল বড় ভারি। তোমার অন্যায়, তোমার অত্যাচার,  তোমার চোখের অতুলনীয় শাসন- ক্ষণিকের মৃত্যুদণ্ড প্রতিদিন -  তোমার কারাগারে লৌহসম বাহু কপাট, অতিরিক্ত শ্রমেও আমি ক্লান্ত নই। আমার ক্রীতদাসই দেহটা যখন পরিশ্রান্ত অসুস্থ, তোমার কঠোর পরিচর্চায়- দেহটা আবার যান্ত্রিক হয়ে ওঠে, হয়ে ওঠে রোবটের মত বাধ্য পরিচারক। যখন আমি পিতা রূপী ক্রীতদাস, তোমার সন্তানের কখনো আগে, কখনো পেছনে বাধ্য বেতন ভোগী অনুচর। শ্রমে জীবন যায়, বিনিদ্র রজনী যায়,  তবু বেঁচে থাকতে হয়।  নিয়ত সংগ্রাম, তোমার নীতি নিয়ম গুলো- ভাঙতে গেলেই, বাধা আসে ভেতরে। এই শৃঙ্খলিত ক্রীতদাসই মহাযজ্ঞে আমিই অগ্নি আমি ঘৃত, আমিই শুষ্ক কাষ্ঠ। আমি আমাকে পোড়াই আমার আগুনে। তোমার চোখের শাসনে। দূর্বল পেশী সবল হলে শুরু হয়- থেমে থাকা পাঞ্জার লড়াই। রশ্মি নয় অস্থি দিয়ে জ্বালাতে হয়- সংসারের আলো। তবু আমি ক্...

টাকা

টাকা দেবপ্রসাদ না আজ আর পান্তা না  বিরিয়ানী খাবো, রহমানের বিরিয়ানী, ভারি সুস্বাদু, পাশ দিয়ে গেলে গন্ধে ম-ম করে আহা রে কতদিনের স্বাদ, আজ বুঝি পূর্ণ হবে। ভগবান তোমাকে ধন্যবাদ, এ হে হে প্যান্টটা যে ছেঁড়া, বিরিয়ানীর দোকানে ইজ্জত থাকবে? একটা প্যান্ট আগে কিনতে হবে। পায়ের চটিটাও তো- একটা জুতো বেশ মজবুত দেখে- জামাটা না হলেও হবে,  ছোটনের বিয়েতে যেটা পরেছিলাম পাঞ্জাবী - সেটাই নয় পরে - না না এ কেমন হবে জুতো, জুতোর সঙ্গে প্যান্ট তার সঙ্গে পাঞ্জাবী? ছ্যা ছ্যা মাথাটা এক্কেবারে গেছে। আহা রে বড় ভালো হতো যদি বউটা রাগ করে, বাপের বাড়ি না যেতো, কি পরবো কি রঙের সঙ্গে কি রঙ পরলে,  ভালো লাগতো সব জানে বউটা। এত গুলো টাকা কিভাবে যে খরচ করব,  কে জানে? একটা প্রথমে আলমারি কিনে ফেলবো আগে টাকা গুলো রাখার জন্য,  সঠিক সুরক্ষা দরকার। তারপর এই ছেঁড়া পোষাক ছেড়ে নতুন পোষাক, তারপর বউকে আনতে যাবো- নাঃ না না বউটা বড় মুখরা, চলেই যখন গেছে, আর কেন মায়া বাড়ানো? একটা নতুন কাউকে - এই বয়সে কি আর নতুন কেউ? আসবে? আসবে টাকার গন্ধ পেলে কত আসবে। রঙিন একটা চশমা কিনতে হবে,  চশমাতে নাকি আমাকে বেশ ভালো লাগে। সুর...

সময় চলে যাবে

সময় চলে যাবে দেবপ্রসাদ পকেটে কিছু পয়সা থাকলেও সময় নেই একটুও। হিসাব করি না।  জন্মের পর জন্ম উপেক্ষায় স্তব্ধ  প্রথাগত কালের কল্লোলে হারিয়ে যাচ্ছে- কত ভালো সময়। সময় এখন ভারি তটস্থ। হয়তো অনেকে ভাবতে পারে সময় উড়নচণ্ডী, একদম সংসারী না।  কিন্তু আমার মনে হয়,  জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওনা সময়।  ইচ্ছের দুরন্ত টগবগে ঘোড়ার মত আসে চলমান স্বপ্নের মতো সকালে হারিয়ে যায়। একে ধরে রাখতে হয়,  নইলে সময় শরীরে আর শক্তি থাকবে না,  মন চাইলেও ইচ্ছা থাকবে না।  বিত্তের বিলাসী ঘুম, স্বার্থ নিয়ে নিশ্চিত সুখ- মিছিল করে আসবে আর ক্ষনিকের জন্য চলে যাবে দূরে, বহু দূরে। একটু হাত ধরাধরি করে হাঁটা, একটু হাসাহাসি, একটু ভীমরতি, হ্যাঁ বুড়ো বয়সের ভীমরতি, ভারি মিষ্টি। ভ্রান্তি গুলো গুটিয়ে রেখে,  বহু জরুরি কাজ ফেলে রেখে, কখনো বুড়ো বাপ মায়ের সামনে বসে, একটু মুড়ি খেতে খেতে, টিভি দেখা- পড়াশোনা চুলোয় দিয়ে ছেলে মেয়ে গুলোর শিশুপনা গুলো নিয়ে খেলা- সুন্দর সুন্দর স্মৃতির ক্যামেরাবন্দী-  সময় কথা বলবে, ক্ষণকাল দাঁড়াবে হাসবে বিষাদের মেঘ কেটে -সূর্য আসবে নেমে,  প্রেম ভালোবাসার-কথায় আনন্দে মন ভাসব...

সাক্ষাতে যম

সাক্ষাতে যম দেবপ্রসাদ একটা একটা করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলুম।  সামনে নরক, অন্ধকার, অল্প আলোয়- টকটকে লাল রক্তেভরা একটা পাত্র,  সেই পাত্রে ছোট একটা মুখ-   ক্ষুদ্রদেহ একজন মানুষ। পায়ের কাছে তার ছ-জন প্রহরী,  শিয়রে আরেকজন,  বুকের ওপর রক্ষিত দুটি হাত,  ক্ষুদ্রাবয়ব ধর্মভীরু ঘুমন্ত;  আমি বললুম এতো আমি! বাতি জ্বলছে একটা, লাল তার আলো,  আমাকে ঘিরে বিচ্ছুরিত দীপ্তি,  বিচ্ছুরিত দীপ্তি আমার রক্তাক্ত দেহে।  খুঁটিয়ে দেখার ব্যাকুলতায় আমি দেখলুম,  শুধুই মৃতদেহ মাত্র, কারণ বুড়ো আঙুলের নখ একটা কালো হয়ে আছে এখনো। এ আর কিছু নয়, এ স্বয়ং আমিই। একটা স্ত্রীলোক কেঁদে উঠল - পরিচিত গলায়, উচ্চকণ্ঠে। আর আমি-যে-আমি, জীবনে কাউকে ভয় করিনি, মৃত্যুকেও না, মৃতদেহকেও না। ভিতরে-ভিতরে সেই-আমিই শিউরে উঠলুম। হঠাৎ মনে হল,  আমি দাঁড়িয়ে আছি যমের সাক্ষাতে।

বিপ্লব

বিপ্লব দেবপ্রসাদ একটা জলন্ত কলম চাই- একটা হাত চাই - ধরতে হবে উত্তপ্ত সেই কলম, গরম গরম লিখতে হবে পৃথিবীর নোংরা কাগজে। হ্যাঁ ঘুম আসবে না রাতে গভীর ঘুমে কেউ ঘুমোতে পারবে না সারা পৃথিবী যদি কলম ধরে,  ভোরের কাগজে কাগজে যদি লড়াই লাগে মানুষের হাত, আঙুলে যদি আগুন ফলে- মোবাইলের ডিসপ্লে যদি - বিদ্যুতের বেগে জ্বলে ওঠে  এক নিমিষে ঢুকে যায় ঘরে ঘরে, তবে হবে বিপ্লব। তখত্ তাউসের নিচে পুঁতে রাখা অগণিত  মানুষের ক্ষিদের লাঞ্ছিত ভাতের হাঁড়ি। নক্ষত্রে নক্ষত্রে যুদ্ধ হবে সত্যি। ভীরু চোখের নিচে বিপ্লব হবে তৎক্ষণাৎ। বুকের মধ্যে আজও অবশিষ্ট আছে ঘূর্ণি-তাণ্ডব, এরা দুর্ভিক্ষ নিয়ে আর বাঁচতে পারে না বাঁচতে চায় না।

অন্যায়

অন্যায় দেবপ্রসাদ বুঝে' নাও স্বার্থ তব, ওহে ব্যর্থ বীর। ছিন্ন করো আভিজাত্য-শাসন-শৃঙ্খল। জঞ্জীর-মঞ্জীর ছিঁড়ে, তুলে রাখো' শির। সাম্যমৈত্রী প্রতিষ্ঠিয়া জাগাও দুর্বল। প্রথমে বাজিবে গিয়া, বিদলিত বুকে! ফুসিয়া উঠিয়া মনে, অন্যায়-শাসনে। ক্ষুব্ধ কোটি প্রজা তবে ছুটিবে সম্মুখে। মৃত্যুভয়, কিছু নাহি, করো নির্বাসনে। বক্ষে করি' করাঘাত, কহো জিন্দাবাদ। অকস্মাৎ যদি প্রাণ, লয় জনগণে। বাজাইয়া রণবাদ্য, লবে রণ স্বাদ। রাজদ্রোহী কহে যদি, জন সাধারণে। কম্পিল দেশের বক্ষ, শঙ্কিত ভুবন। লণ্ডভণ্ড অন্তঃস্থল, কিসের কারণ। 

অলিগলি

অলিগলি অলিগলি ঘুরে দেখো আমার দিদিভাই। দেখবে সেথা রাস্তা জুড়ে খানাখন্দ নাই। মোটরগাড়ি ডিঙির মত চলছে হেলে দুলে। লাখটাকার অটো টোটোর যাচ্ছে সব খুলে। গলির ধারের বাড়ি গুলো পড়ছে পথে ঝুলে। তার ওপরে গর্তের পাশে, বাইক গেছে ফেলে। ভোটের আগে রাস্তা হবে, পাথর বালি ফেলা।

কবিতা গো

কবিতা গো দেবপ্রসাদ  কবিতা গো, জানি জানি,  আমি মূর্খ কবি। তবুও তো নাম শুনেছি। না জেনেই ভালোবেসেছি তোমায়। আমি শব্দ হারা, ছন্নছাড়া - ঘুমের ঘোরে ছুটি। তোমার কাছে আমি তুচ্ছ,  আমিতো তোমাকে একগুচ্ছ শব্দ দিতে পারিনি। নানা অলঙ্কারে সাজাতে পারিনি, শব্দমালায়- তুমি চিনবে না আমায় জানি,  আমায় চেনে শব্দ গ্রামের শব্দ চাষিরা। সে গ্রামে কঠিন শব্দ নেই,  সে গ্রামের পাঁচজন শব্দ চূড়ামণি - একাডেমি পায়নি, সাহিত্য রত্ন হয়নি, কথা শিল্পীর পদবী মেলেনি তাদের। সেই গ্রামের কাষ্ট কঠিন কবি - পাহাড় করেনি শব্দ সঞ্চয়ে। কবিতা গো আমি সেই গ্রামের অচেনা এক কবি। অনেক কিছুই বদলে যায়- অনেক জল গড়িয়ে যায় - আমি যারে কবিতা বলি, আমার কলম যে শব্দ গুলো বলে, প্রতিদিন যে কল্পনা গুলো শব্দ ডেকে আনে, চিৎকার করে বলে আমি কবি- তিমিরে  তিমিরে আঁধার তিমিরে- আরো গভীর অন্ধকারের তীরে।  অন্ধকারে অন্ধ হয়ে ঘুরি  কামার কুমোর মুন্সিপাড়ায়, জোয়ান বুড়ো বুড়ির ডেরায়। আমার নামে নতুন আলোর ঝলক দিয়ে যায় যে সব চরণ- আমার গ্রামে তোমার নামে শব্দ চরায় যারা ফসল-কাটা গানের নামে অর্থ সাজায় তারা। কামারশালায় হাতুড়ি পিটে,  ...

আঁধারের মৃত্যু

আঁধারের মৃত্যু  দেবপ্রসাদ আলোর ছায়ারা গুড়ি মেরে ছিল,  হঠাৎ যেন লাফিয়ে পড়তে চাইছিল আঁধারের ওপরে।  গুটি গুটি পায়ে চলতে চলতে - দাঁত বের করে, একটা কামড় দিতে চাইছিল। নোংরা মুখ দিয়ে উষ্ণ নির্মল রক্ত,  অন্ধকারের বুক চিরে পান করবে সে। কঠিন পথশ্রমে অবসন্ন,  তন্দ্রাতুর আর নিরস্ত্র অন্ধকার। লুকিয়ে ছিল প্রদীপের তলায় গাছের পেছনে, বহুতল অট্টালিকার গায়ে বন্ধ দরজার পেছনে।  ভয়ে থরথর কাঁপে প্রতিদিন এই বুঝি অতর্কিত আক্রান্ত হল তার শিশু পুত্রেরা। আলোর দিন অদৃশ্য হলে,  তার জায়গা সীমাহীন - অভিশপ্ত দিনের সারি আলো, আর সূর্য, অন্ধকারের দিকে উত্থত হয়ে রয়, এক সর্পদৃষ্টি হেনে। জঘন্য হত্যাকাণ্ড, জঘন্য হিংসা, ঘোষিত হচ্ছে, অবলা অন্ধকার শরীর ঢেকে,  পাতাল গভীরে - আলোর বাহিনী উৎসবে মেতেছে, বল্গাহীন হৃদয়হীনতায়, বিনা কারণে বিনা দয়ায় বিশ্বাসঘাতী আক্রমণে নিহত হয়েছে প্রতিদিন- জ্ঞাত অজ্ঞাত শিকারের রক্তে আলো রঞ্জিত।

প্রথম দেখা

প্রথম দেখা দেবপ্রসাদ এইমতে পরিণয় করি, হইল প্রচার। বিনা পরীক্ষায় হলো সে যে আমার। কি গুণ কি রূপ তার,  কিছুই না জানি যার,  তারে করি সঙ্গী আমি জীবন-যাত্রার!  না জানি কিরূপ তার কিরূপ ব্যবহার। ঘটকের বর্ণনায় মন ভাবে কল্পনায়। প্রেয়সী রূপসী হবে অপ্সরার প্রায়। শুভ-দৃষ্টিকালে ভাঙ্গে। চেনা চীনাদের ঢঙে। প্রিয়ার বদনখানি সেইমত প্রায়। পুলকিত বিবাহে মন কু কেন গায়? জল ভেদ করি ওঠে মৃণাল যেমন। কুজ্ঝটি মাখিয়া এলো বদন তেমন। আঁখি বুঝি খুলে নাই। কেমনে করে বুঝি নাই। আহা-রে প্রেয়সী তোরে বুঝেছি তখন। মেঘপ্সরার অঙ্গে যেন উঠেছে তপন। ঘণ কালো মেঘ বুঝি আকাশ ঢাকিয়া। লাল শাড়ি লাল ফুলে বিছানা জুড়িয়া। বসিয়াছিল প্রিয়, নববধু যেথা। না তুলিয়া মুখ বলেছিল কথা। কেবল যতনে মাত্র জীবন পরখিয়া। কল্পনায় জল ঢালি, বাস্তব বুঝিয়া।

নিজস্ব

নিজস্ব  দেবপ্রসাদ অবশেষে বোধের জ্যোৎস্না এসে দাঁড়ায় ঝিলের জলে।  ডুবে যাওয়া চাঁদের তরঙ্গ দেখি অলসে। মন খারাপের নদী যখন উঠে আসে বুকে  উচ্ছ্বাসে উষ্ণ রিপুগুলি ভরে যায় শীতল জ্যোৎস্নায়। যদি প্রত্যাশিত ভোরের স্বপ্ন বোধশূন্য শরীর  স্পর্শ করে-  টালমাটাল জীবন ভেসে যায় মৃত্যু স্রোতে। দরজার আড়ালে দূরে - যেখানে দুঃখের জন্ম হয়েছে  সেখানে আত্মমগ্ন ছায়া, নিঃশব্দে ঘুম আনে শরীরে, ফোঁটা ফোঁটা রক্ত চুইয়ে পড়ে  প্রাচীন ধ্বংসস্তূপে ইতিহাস হতে। মৃত্যুর ঠোঁট কামড়ে রক্তারক্তি হলে মন খারাপের নদী উপেক্ষায় ফেরায় গতিপথ,  কী প্রজ্ঞায় নিয়ে চলে অচেনা প্রদেশে - রাত্রি নীল অন্ধকারে নিজেকে জানাতে।

ঘর

কি অদ্ভুত ব্যাপার বলো তো মা, এই বাড়িতে কাটিয়েছি,  আজ কেন অচেনা? এই বাড়ি থেকে বেরোতে গেলে  জিজ্ঞেস করতে হতো যাবো কিনা..  অথচ দেখো, আজ যাবো বললে, কেউ তোমরা একবারও বলো না কোথায় যাবি। এই বাড়িতেই আমি বেড়াতে আসি.. এই বাড়ি থেকেই ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে যেতে হয়.. যাওয়ার আগে কয়েক বার দেখে নিতে হয় কিছু ফেলে যাচ্ছি না তো.. এই যে আমার সাধের ঘরটা  ফেলে যাই আমি..  এই ঘরের পর্দা,  এই ঘরের বিছানা,  এই আলমারিটা আমার খুব কাছের..  এই ঘরে এলে আমি চেনা গন্ধ পাই..  প্রতিটা কোনা আমার ছোঁয়ায়  আল্লাদে আটখানা হয়ে যায়.. অথচ আমি আর তাদের আদর করি না। আগে আমি ঘর খানা গুছাতাম না..  এখন এসে দেখি পরিপাটি করে গোছানো, কত রাত জেগে কাটিয়েছি এই ঘরে.. কত গোপন আলোচনার সাক্ষী এই ঘর..  কত কান্না কতো অভিমান রাগ দেখেছে  মন ভাঙ্গার রাতে এই ঘরের জানলায়  আকাশ দেখেছি...  কত ছুটির দুপুরে শালিক পাখির মতো, ঝগড়া করেছি তোমার সাথে....  স্কুল থেকে এসে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়েছি, এই ঘরে.. নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছি.. স্বপ্ন দেখেছি,  বুক ভাঙ্গা কান্না কেঁদ...

নবপল্লব

নবপল্লব  দেবপ্রসাদ এই কুটিল রাত্রির অন্ধকারে  তুমি এসো মোর ক্ষতবিক্ষত বুকের  নিবিড় আলিঙ্গনে। গ্রহণ করো মোরে,  তোমার দুবাহু বাড়ায়ে-বদ্ধ আলিঙ্গনে। স্পর্শ করো মোর অশান্ত যন্ত্রণা। জাগছে ঐ রক্তনিশান  জাগছে হৃদয় প্রহরীরা। সর্বহারার মন অবিচল প্রত্যয়ে জাগছে। অশান্ত প্রেমের পদধ্বনি- কুয়াশার আড়ালে আড়ালে ফুটছে  লাল গোলাপ ফুলেরা। কী নিদারুণ যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ল  আমার সারা বুকে।  ওই দেখো প্রেমের রক্ত নিশান!  শোনো ওই স্মৃতিসৌধের রাত্রির প্রহরীরা বলছে, ছিনিয়ে নিয়ে যাবে আমার প্রেম, আমার মনকে-  ওরা আজ সঙ্গীহারা, দিশাহারা রিক্ত।  রুদ্ধ করেছে স্বপ্ন, কুটিল রাত্রির অন্ধকারে। উদ্ধত হিম নিঃশ্বাস স্পর্শ করছে আমার দেহ, বিশ্বাসঘাতকের বরফের ছুরি আমার- বুক চিরে অট্টহাসি হাসছে। তুমি এসো ক্ষতবিক্ষত বুকের আলিঙ্গনে, আমি সঙ্গীহারা, রক্ষীহারা-  এসো, মাটির স্পর্শে জ্যোতির্ময় চেতনায়।  নবপল্লবের কক্ষকুঞ্জে ফুল ফোটাই- রক্তস্নাত অঙ্গীকারের।

হৃদ-কারাগারে

হৃদ-কারাগারে দেবপ্রসাদ কত শত ক্রোশ আমি করি, অতিক্রম।  প্রিয়া অন্বেষণে, দেখি প্রেমিকা সহসা। বুঝেছি তখন আমি, মোর মতিভ্রম। শুধাই সকলে, জ্ঞানী কি করি ভরসা। আকাশের চেয়ে উচ্চ, সত্য ছিল হেথা। সত্যের মিথ্যার প্রতি, ভারি আকর্ষণ। আলোর কদর হয়, অন্ধকার যেথা। অন্য নাহি কিছু আর, তোমাতে এখন। কহিলাম প্রিয়া এবে, কহো একবার। কি দেখিয়া তুষ্ট প্রিয়া, আমার শরীরে। বৃদ্ধ আমি শুভ্র কেশ, মনেতে বিকার। নিষ্পাপ নহি যে আমি, চলেছি আঁধারে। মতিভ্রম নয় প্রিয়, দেখিছ যাহারে। দেহ বিনা ভালোবাসা, হৃদ-কারাগারে।

বেদনাশ্রু

বেদনাশ্রু দেবপ্রসাদ কবিতা গো বলো কী বলতে চাও,  কী শুনতে চাও? চোখে চোখে তো বললে অনেক - শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে লিখে দিলে কত কাহিনী। এবার তো সামনে এসো, বলো কী বলতে চাও, তোমার  লাজুকতা, তোমার হৃদয়ের উৎসুকতা,  ফুসফুসের প্রতি স্পন্দনে রক্তেরই সঞ্চালন।  গ্রথিত,অব্যক্ত কথন,  নিংড়ানো প্রেম প্রতীক্ষিত মরমে। এই লুকোচুরি অভিমান,  ভালোবাসার অভিন্নতা, মুক্তকণ্ঠে কহো কবিতা, কি চাও? সুখের আলো ছড়ানোর আগে, ব্যথা দাও, বেদনার নীলরঙে পোড়াও মন।  প্রেমের আগুন জ্বালার আগে - উড়ন্ত মেঘের ভেলায় ভাসতে দাও। কবিতা গো ও হাতে হাত রেখে, বলতে দাও ভালোবাসি, স্বপ্নরাঙা ভাবনার ছবি গুলি শেষ করতে দাও কি সত্য কিবা মিথ্যা সংশয় ভয় অগোচরে, দৃষ্টির প্রশ্নোত্তরে প্রেম হতে, কিছু অপেক্ষা করো। শেষ চরণে তোমার উন্নত বুকে,  মরতে দাও মোরে। জীবনে-মরণে, প্রেম বিহীন রক্তক্ষরণে  নীরব হতে দাও মোরে- কবিতা গো তোমাকে যদি না পারো তোমার ছায়াকে ভালোবাসতে দাও। চোখের ভাষায় প্রেম হৃদয়, মরা গাঙে, তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো যে প্রেম পিঞ্জর ভাঙে, অপলক চোখে, এ চোখের পানে তাকিও না কান পেতে শোনো,  এ হৃদয়-গহীনে শ...

রবি ঠাকুর প্রাণের ঠাকুর

রবি ঠাকুর প্রাণের ঠাকুর দেবপ্রসাদ শরতের হিমের পরশ যদি জানালা গলে আসে। আমাদের ছোট নদী যদি চলে এঁকে বেঁকে। দুই বিঘা জমি নিয়ে যদি লড়াই লাগে এখনো। অমলের দেখা দই ওয়ালা যদি ডাক দেয় ফের। বৃষ্টির কান্নায় ভরা, কাদায় মাখা গ্রামের পথে হঠাৎ বসন্ত আসে একেবারে পচা হেমন্তের মাঝে। উজ্জ্বল সুন্দর বসন্ত- ম্রিয়মান স্বর্গের মতো,  জীবনাগ্রদূতের, সেই লাল লাল লালবসন্ত! পলাশ বনে লাগে দক্ষিণা বাতাস-দক্ষিণায়নে। সোনাঝুরির বাগানে-ওড়ে শুকনো পাতা রক্তিম প্রত্যুষের উদয় হয় বিষণ্ণ আকাশে, ঝকমকে লাল সূর্য তার রশ্মির তরোয়ালে ফেড়ে ফেলে মেঘপুঞ্জ, কুয়াশার শবাচ্ছাদন। আমি তোমাকে দেখতে পাই গুরুদেব। সমূদ্রগহ্বরে দীপ্তির মতো,  প্রকৃতির বেদীমূলে তোমার হাতের জ্বালানো  শাশ্বত উৎসর্গ-শিখার মতো -বুকের গভীরে  উদ্দীপ্ত রক্ত রাঙা গোলাপ সম,  পরিয়ে দি মনে মনে গৌরব-মুকুট।

রথের চাকায়

রথের চাকায় দেবপ্রসাদ মরণেও মেলেনি ছুটি। মিলবে না  শত শত বৎসরের পাপ পূন্যের ফাঁদে জীবন্ত জলন্ত অগ্নি চিতায় এখনো  প্রজ্জ্বল উজ্জ্বল। জীবন্ত হাতে সে গড়ে নয়া ইতিহাস,  কুরুক্ষেত্রে রথের চাকায় বসে - কবিতায় উপন্যাসে, হাতে আঁকা ছবিতে কালের গণ্ডি গুনতে গুনতে - কায়াহীন, আস্তিকের আত্মায় নাস্তিক দেহহীন- অশরীরি নায়ক, বিশাল ইশারায়,  সে যে মহাবীর দানবীর কর্ণ। কুন্তির অবৈধ সন্তান। যার নাম একডাকে উজ্জ্বল  সূর্যের মত দৃঢ়, তপ্ত আধার, প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ। ইতিহাস তারে ক্ষমা করেনি ঠিকই  মরালের রক্ত হতে যোদ্ধা রক্তবীজ আনে,-  বপন করে ধরিত্রীর গর্ভে প্রতিদিন তবুও কালের কুটিল ডাক, যে হলবাহকের। অপজ্ঞান-হত্যা-অভিযানে,  ধার্মিকের স্বর্ণস্বর্গে হানা দিল নাস্তিকের প্রেত, স্পর্শিল অশুচি হাতে শতাব্দীর পবিত্র সঞ্চয়। হে মহাবীর কর্ণ সকল এখনো যারা রথের চাকায় আজীবন বাঁচার লড়াই করছো - মরতে হবেই বিধির এই মহাবিধানে সূর্যস্পর্শা জননী,  তোমারে আনি জনাকীর্ণ পথে,  কদর্য বাস্তবের সাথে ঘটালো পরিণয়।  বিধৌত বলির রক্তে শৃঙ্খলার পাষাণ চত্বরে, বলিদ্বেষী পাষণ্ডের ছায়ামূতি যে, আজ নিঃশব্...