মা আমি সফল



মা আমি সফল
দেবপ্রসাদ

জীবনের সব সফলতার সিঁড়ি পার হয়েও মনে হয়,
আরও কিছু  বাকি রয়েছে মা।
আমি ভালো খাই, ভালো পরি,
আয়েশে অফিসে যাই,
তবু মনে হয় কিছু বাকি থেকে গেল।
আগেতো এমন হতো না, যখন তুমি ছিলে।
যখন স্কুলে যেতাম, বলতে - সাবধানে যাস্।
আমি বড় হয়েছি মা, এসব বলবে না লজ্জা লাগে, 
বন্ধুরা প্যাক দেয়, 
প্রতি রবিবার সারা গায়ে সাবান মাখিয়ে,
কলের পাড়ে ঘষে ঘষে আমাকে স্নান করাতে,
আমার ভালো লাগতো না, 
পাশের বাড়ি তৃণা হাসতো, বলতো কচি খোকা, 
আমি লাল হয়ে উঠতাম,
তোমাকে ঠেলে সরিয়ে দিতাম।
চাইতাম স্বাধীন হতে, তুমি হতে দাও নি,
হিমাংশু কত স্বাধীন, 
সব কিছু করে নিজের যা ইচ্ছা।
আমি ওর মতো হতে চাইতাম,
ওর মা চাকরি করে, তুমি তো করো না,
তোমার ঘর তোমার সংসার,
এই ছিল তোমার পৃথিবী।
প্রথম যখন চাকরি পেলাম, সে কত ভয় তোমার,
বাসে ট্রেনে যাবি সাবধানে যাস,
বাইরের খাবার খাবি না, অচেনা কারোর সাথে কথা বলবি না, অফিস শেষে সোজা বাড়ি আসবি।
প্রতিদিন যাবার সময়, পিছু ডাকতে, বলতে মা পেছনে ডাকলে শুভ। কোনো বিপদ হয় না,
মাঝে মাঝে ডাকলেও দাঁড়াতাম না,
কত রাগ করতে তুমি, কথা বলতে চাইতে না,
আজ আমি স্বাধীন, কেউ পেছনে ডাকে না,
কেউ বলে না সাবধানে যা।
ফেরার সময় দেখতাম বারান্দায় বসে,
আমাকে দেখে হাসি হাসি মুখ করে বলতে
এত দেরি হলো বাবা,
আমি বিরক্ত হয়ে বলতাম, কোথায় মা?
এই সময় তো আসি, তুমি আমার বুকে হাত রেখে বলতে, যা হাত পা ধুয়ে নে, আমি মুড়ি মেখে দিচ্ছি,
রাগ হতো বড়, মুড়ি ভালো লাগতো না।
ভালো কিছু করে দাও, তুমি বলতে, 
আমি তো বাবা তেলেভাজা ছাড়া কিছু পারি না,
তেলেভাজা রোজ খাওয়া ঠিক নয়।
আমি যখন স্নান করে এসে, দাঁড়াতাম-
তুমি আঁচল দিয়ে পিঠ আর মাথার জল মুছে দিতে,
বলতে রাতের বেলা স্নান করেছিস ভালো করে মুছতে হয়, নইলে ঠাণ্ডা লাগবে,
এক কাপ চায়ের বদলে ছাতু গুলে দিতে,
আমি যখন রেগে আগুন হতাম, 
কত আদর করে বলতে- সারাদিন খাটিস, 
ট্রেনবাসে যাতায়াত করিস, 
কত শক্তি ক্ষয় হয় বলতো,
আজ তুমি নেই, আছো হয়তো আকাশের কোনো কোনে তারা হয়ে, দেখছো আমাকে,
আজ আমি বিরক্ত হই না মা, রোজ ছাতু খাই,
তেলেভাজা খাই না, বাইরের খাবারও খাই না,
তোমার বৌমা বলে কিছু খেতে, তবু খাই না,
খেতে গেলেই মনে হয় 
কোথাও থেকে তুমি বারণ করছো,
আজ এত প্রেম ভালোবাসা, 
তবু অব্যক্ত রয়েছে কত কিছু, 
কত না পাওয়া মুহূর্ত বারবার তোমাকে খোঁজে।
শরীর ছেড়ে পাখি-ঠোঁটে উড়ে যাবার আগে, 
যদি শেষ দেখা দেখে যেতে ইচ্ছে করে,
ধরে রাখতে ইচ্ছে করে তোমার  প্রিয় আঁচল। নিবিড় ছুঁয়ে নিতে এ পৃথিবীর প্রতিকণা মাটি, 
তোমার হাতে গড়া এই স্থুল শরীরটা-
কার চকিত পায়ের শব্দে পাঁজরের রিড সশব্দে
ভেঙে যায়, বিপন্ন বিস্ময়ে, অনন্ত হয়ে যায়।
খুব নাড়া খেয়ে ভিতরে ভিতরে জেগে উঠি, 
ঘুমাই এক অসীম নৈঃশব্দ্য, 
গোপনে ক্ষয়ের কথা বলে ঘুন-পোকার স্তব্ধতায় খোঁদলে রচনা করে বাসা এক একদিন, 
এমন-এমনি-ই হয়, ভিতরে-ভিতরে।
যত উপরে উঠি, 
ধাপে ধাপে জড়ায় আঁধার। 
মেঘ আসে উড়ে, মেঘের শরীর ফাটিয়ে, 
আমাকে কেউ যেন সুক্ষম টানে অবিরত অন্তহীন
পথে এক একদিন, অজান্তে, অন্য মনে, কার ধূসর হাত নির্জনতায় ছুঁয়ে দেয়, চির সূর্যাস্তের দিকে...

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ