Posts

Showing posts from April, 2022

মৃত্যু প্রহরী

 মৃত্যুর প্রহরী  দেবপ্রসাদ জানা ৩০,৪,২০২১ শ্মাশানে, কামাল গাছির মোড়ে,মহা শ্মশান। মৃতদেহ লাইন দিয়ে শুয়ে আছে, এক এক করে লাইন দিয়ে - আগুনের অপেক্ষায় - যারা ভেতরে, তারা চেচাচ্ছে। শ্মাশান প্রহরী ডোম - তাদের সাবধান করছে চিৎকার কোরো না ভগবান জেগে যাবেন। কে স্বর্গে যাবেন? কে নরকগামি হবেন, সব ঠিক করবেন তিনি - যিনি এখন ঘুমোচ্ছেন।  ব্রহ্মার এখন রাত্রি,তার ঘুমের সময়। এক কল্প শেষে উঠবেন,এক কল্প এক যুগ। সারাদিন পরিশ্রম করে,পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, প্রকৃতিকে সাজিয়েছেন,আপনাদের জন্য- গড়েছেন পশুপাখি, গাছগাছালি,  আগুণের বুকে পা রেখে যারা যাচ্ছেন। জ্বালা যন্ত্রণায় চিৎকার করছেন, মনে রাখুন সময় অনেক বাকি। মরণ এগোচ্ছে,আগুন জ্বলছে ধিকি ধিকি। জীবনের অসীমতা ছুঁয়ে, পেন্সিলে লেখা হচ্ছে আত্মকথা। নীরবতা রক্ষা করুন, মরণে বিপুলতায় ভগবান ক্লান্ত। নিদ্রামগ্ন। 

স্বপ্ন বেচে দুঃখ কেনা

 স্বপ্ন বেচে দুঃখ কেনা দেবপ্রসাদ জানা জানো আজ আমি লাল জামা পরেছি। তোমার মতো, লাল শাড়ি লাল ব্লাউজ। কপালে লাল টিপ।  স্নান করে ভেজা চুলে- অপুর্ব তোমার সেই গজগমন। আমি হারিয়ে যেতাম তোমার হৃদয় গভীরে। স্বপ্ন! স্বপ্ন মনে হোতো সব। আজ আমি একেলা, আজ আমি নিঃশব্দে, নিঃশর্তে, তোমার থেকে সরে এসেছি। শুধু তোমার জন্য। তোমার ভালোর জন্য। তোমার ভালো থাকার জন্য। আজ বড় মন খারাপ  জানোতো? তোমার সেই - কথা গুলো ভুলে যাইনি, আমি সব ফ্যাকাশে পোষাক পরি, তাতে তোমার রাগ,  আমি কিছু কিনে দিলে তাতেও তোমার - অভিমান। এটা ভালো না, তুমি কিনতে জানো না। আমার আদর করে কিনে আনা জিনিস - ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছ কতবার। আমি চেয়ে থেকেছি, তোমার দিকে, আর ভালোবেসেছি বিনা শর্তে। আজকাল তুমি ব্যস্ত। চোখে ঘুম আসে না, ছোটো ছোটো ব্যথা গুলো বড় কাঁদায়। রাতের জোছনা বিরক্ত করে, সোনালী সূর্য মুখ টিপে হাসে। আর আমি কাঁদি গোপনে, বৃষ্টি ঝরে,চোখ বেয়ে। জানালা দিয়ে অপলকে,চেয়ে থাকি তোমার পথ। আমি স্বপ্ন বেচে দুঃখ কিনেছি অনেক। লাভের পরিমাপ করিনি। ছোটো ছোটো দুঃখ গুলো রেখেছি হৃদয়ে ভরে।  তবুও সারাদিন খুঁজি তোমাকেই। কত প্রলোভন এসেছে, কত নিমন্ত্র...

উত্তাপ ( K for কলম)

 উত্তাপ দেবপ্রসাদ জানা আহা রে উত্তাপ,কোথায় ছিলে গ্রীষ্ম। প্রচণ্ড শীতেতো পাইনি তো খুঁজে। অভ্যাসে ছিল,শীতের ফুটপাত। জীবনজুড়ে প্রত্যহ পরিবর্তন, কখনো উত্তাপ,কখনো বৃষ্টি- কথার ব্যক্তিত্বে, চরিত্রে- স্বভাবে। ইতিহাস হয়েছে নক্ষত্রে নানা অছিলায় দেখেছি সৃষ্টি। অব্যক্ততার ব্যাকুলতায় স্বমরণ। বাইরে দীর্ঘশ্বাস,আকাঙ্ক্ষা,ঘূর্ণিপাত। পাওয়ার ইচ্ছা,গোপনে পরকীয়ায় জুঝে- উত্তপ্ত ফুটপাত ধরে খুঁজে চলেছি শীতল বিশ্ব।

কে তুমি ( K for কলম)

 কে তুমি?( K for কলম) দেবপ্রসাদ জানা কে তুমি?এত টানছো,আগে তো এমন হয়নি, আকাশ পানা চোখের যাদুতে, কেন যে- বাতাসের মতো ধুলোর ঝড় উড়িয়ে - চোখের ইশারায় পথ দেখাছো।  আপন করে নিতে চাইছো, কেন গো?বাচ্ছা নয়তো, আমি। চোখের শৃঙ্খলে হয়তো- বন্দী হচ্ছি,কি করতে চাইছো? ভালো লাগছে, মুক্তি চাইনি বুঝেছ, শত শত বছর থাকতে চাই, বন্দী হয়ে। মনের অন্ধ আঁধার গুলো কেটে যাচ্ছে যে- ওই চোখের সাঁঝবাতির শিখায়,কাঁদছে রজনী।

কে তুমি?

 কে তুমি? দেবপ্রসাদ জানা কে তুমি?এত টানছো।  আগে তো এমন হয়নি, আকাশ পানা চোখের যাদুতে, বাতাসের মতো ধুলোর ঝড় উড়িয়ে - চোখের ইশারায় পথ দেখাছো। কেন গো? বাচ্ছা নয়তো আমি,  তোমার চোখের কারাগারে আমি বন্দী হচ্ছি। ভালো লাগছে, মুক্তি চাইনি আমি, শত শত বছর বন্দী থাকতে চাই। মনের আঁধার গুলো কেটে যাচ্ছে, তোমার চোখের সাঁঝবাতির দ্বীপ শিখায়, মনের ডানা গুলো ঝাপটাতে শুরু করেছে, তোমার কাছে উড়ে যেতে চাইছে মন। তোমার শীতল চোখের ব্যস্ত পলকে যেন আমার হৃদয় নাচছে, তোমার এ হেন চোখে সিন্ধুতলের- স্নিগ্ধতায় আমি বিচলিত। তবু ভালো লাগছে।

মৃতদেহ K for কলম

 K for কলম মৃতদেহ দেবপ্রসাদ জানা বলো পুরুষ আমরা হাঁটছি কোনদিকে? দিকশূণ্য গন্তব্যহীন জীবনের পথে,  লোকের ভীড়ে,আলোর মাঝে - ঝাঁপিয়ে দেখি বড়ো ক্ষত। চাঁদের আলোর রাতে, আমরা যে সব মৃত। মৃতদেহ। গলে যাচ্ছি অবিরত। পচা গন্ধে ভরা রাজপথে- শকুন দাঁড়িয়ে রয় শত শত, পচা মানুষের মাংসের গন্ধ বুঝে। পচা রক্ত জমা রাস্তায় শকুনের সাথে, আমরা পুরুষ চলেছি,জবাই হওয়ার দিকে।

কামনার চোখ K for কলম

 K for কলম কামনার চোখ দেবপ্রসাদ জানা মায়ের ছিন্ন আঁচলে মুখ লুকিয়ে ছেলেটা, বেথুন স্কুলের তপ্ত ফুটপাতে বৃক্ষতলে- স্তন পান করছিল অনাবিল সুখে। খোলাকাশ,প্রখর গ্রীষ্মের রোদ, আর নিত্য পথের পথচারী। সবাই দেখছিল তাকে, তাচ্ছিল্যে- ভালোবাসার সন্ধিকে, বুকের মধ্যে জন্ম দেয় নারী। পথের চোখ গুলো যেন পারদ। ওঠা নামা করে,নাভি হইতে বুকে। যার করতলে চাঁদ তাকেও করে তোলে, কামনার অতৃপ্ত,বাসনায় তৃপ্ত লোলুপ চোখটা।

ঘুমন্ত ( K for কলম)

 ঘুমন্ত দেবপ্রসাদ জানা আমি দেখেছি,তার চোখের কোণে জল-  প্রেমে হেরে যাওয়া এক ক্লান্ত পথিক। শিশিরের মতো গড়িয়ে পড়ছে। বোকা সৎ একটা মানুষ। হুমকি খেয়ে বলে- তুমি ভয়ঙ্কর। অদ্ভুত। ভালোবাসো? নাতো,শুধু ব্যবহার - একটু মজা একটু সিনেমা। তৃষ্ণা জানি,আমি বোকা গ্রাম্য। একটু ক্ষুধা ছিল ভালোবাসার প্রেমের। না না অভিযোগ করছি না,আমি যে দূর্বল।

রাবণের প্রতি মন্দোদরী

 রাবণের প্রতি মন্দোদরী দেবপ্রসাদ জানা মণিকর্ণিকার ঘাটে সাজানো চিতায়  রাবণপুত্র মেঘনাদ। মুখ ঢেকে দরজার আড়ালে প্রমিলা। অশ্রুসিক্ত চোখে রাক্ষস ঘরণী মন্দোদরী। কহ,কহ নাথ কি কারণে প্রিয় মোর ধুলিস্নাত। কে কোন ধনুকধারি মানব,সমুদ্র পার হয়ে - কেন আসে মোর ভবনে? কহ বীর রাক্ষসকুলপতি,শরবিদ্ধ পুত্রমোর-  প্রশ্ন করেনি একবারও-কি কারণে স্বামী, কার সনে,যুদ্ধক্ষেত্রে দিতে হবে প্রাণ? কাপুরুষ মানব নন্দন,পুজার ঘরে  নিরস্ত্র মেঘনাদে করিল নিধন। গৃহশত্রু ভাতৃসম বিভীষণ,দেখাইলা তারে - আপন ভাতুষ্পুত্র ইন্দ্রজিতে। ছি প্রাণনাথ কন্যাসম নারী লোভে - বীর শ্রেষ্ট রাবণের একি অধঃপতন? কুলধর্ম, কৌলিন্যবোধ, দিলা জলাঞ্জলী? কি কারণে পুত্রবধু মোর করিবে বৈধব্য পালন? লঙ্কাপুরে নারী নাই? সুন্দরী কলকন্ঠ। যেমনটা তুমি চাও। বনচারি বনবাসি অবলা নিঃসাড় দম্পতি।  বেশতো ছিল তারা আপন অলিন্দে। কেন তারে তুলে এনে,অশোকের বনে, করিলেন বন্দী। কি কহিবে জ্ঞানীগুণী কি কহিবে ভবিষ্যৎ? প্রশ্ন করে বিশ্বভুবণ,প্রশ্ন করে মন্দোদরী। বিনা কারণে বংশলোপ,ধ্বংস হলো স্বর্ণপুরী।

মেঘের ভেতরে চাঁদ

 মেঘের ভেতরে চাঁদ মেঘের ভেতরে চাঁদ,খেলে লুকোচুরি, জোছনা রাতের দীঘি,জোনাকির মন। পদ্মপাতায় দোলে ঐ শ্যামলিয়া তরী তোমার সুবাসে আজ হয়েছি মগন। হৃদয় আকাশে বহে, মৃদু মন্দ বায়। মনের হরষে ভাসে,রাত জাগা পাখি। রাতের আঁধারে সুধা,নীল বজরায়। মধুর সংগীতে রাত,জোছনায় মাখি। দিগন্তের শেষে ভোর মিশে আছে বেশ। নিজের ভেতরে নিজে,একান্ত গোপনে। উদ্দাম বর্ষায় খুঁজে, শুষ্ক পরিবেশ। অতীতে তোমাতে মিলে,কয় কানেকানে। একাকিত্বের অস্ফুষ্ট,এই জীবনটা অব্যক্ত থাকে নদীর স্রোতের বারতা।                  

বেশতো ছিলে

  বেশতো ছিলে দেবপ্রসাদ জানা ২৩.৪.২০২২ হ্যাঁ আমি টের পাই, ভয়ে কেঁপে উঠি,আধো জাগরণে। উন্মত্ত রক্তাক্ত চোখ, প্রতিদিন দৃষ্টি হেনে যায়। আমি ভয় পাই, আমি টের পাই। ভেতরে ভেতরে। কালের রুদ্ধতা ভেঙে প্রমত্ত উৎসাহে - জীবনের এই অন্তর্গত সংলাপ। মানুষ তুমি সভ্য কেন হলে? ঔদার্য অহংকার, প্রতিপত্তি, কীর্তি, মান যশ আকাঙ্ক্ষা। কামনা বাসনায় আত্মস্থ হৃদয়।  হ্যাঁ আমি টের পাই - সভ্যতার বিষাক্ত আস্তরণে বিষাদের পৃথিবী, একদিন ডুবে যাবে অতল গভীর জলস্তরে। হাসছে সূর্য চন্দ্র গ্রহ তারা। সমস্ত বিশ্বে জমে গেছে বিষের আবরণে। দুটো মানুষ,আদম আর ইভ। পৃথিবীর প্রথম মানব। এদের ধর্ম ছিল না,জাতি ছিল না। গোষ্টী ছিল না, ছিল না দেশ। পেন্সিলের আঁচড় কেটে ভাগাভাগি। অস্ত্র ছিল না,ছিল না খুনোখুনি। কেন এলো হিংসা,কে দিল লড়াই? হাতে নিয়ে সভ্যতার দেশালাই বাক্স। বসালে মৃত্যুর শেকড়।  হায়রে মানুষ কেন সভ্য হলে? হ্যাঁ আমি ভয় পাই, টের পাই মনে।

জ্বালামুখী

 জ্বালামুখী দেবপ্রসাদ জানা তোমার কাজল দীঘি,চোখের তারায়। চৈতালি চাঁদ ঘুমিয়ে পড়ে,শব্দহীন। আলোর ঠিকানা যেন,আঁধারে হারায়, নিশির স্বপন আজ, হয়েছে মলিন। তপ্ত যৌবনের জল,নাচে ছলছল। দোদুল দুলছে সূর্য, পদ্ম পাতায়। জোছনা চাদর গায়ে,প্রণয় আদল। বনফুল মুক্তবনে,বিঁধেছে কাঁটায়। রাতচোরা পাখি বুঝি,ফিরে যায় ডাকি নরম বিছানায়-কে হুল ফোটালো। ওরে পাখি ফিরে আয়,রাত নাই বাকি। হৃদয়ের ছুরিখানা,যে বেশ ধারালো। হৃদয়ের উষ্ণতায়-হিম গলে যায়। লাভাস্রোত বহে ওরে,জ্বালামুখী ন্যায়।

নীল উল্কা কথা দাও

 নীল উল্কা কথা দাও। দেবপ্রসাদ জানা  নীল উল্কা তুমি দেখেছ? সময়ের স্রোতে আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন গুলো, হারিয়ে যেতে। চির বন্ধনের সুতোহীন টান। ফুল ঝরে যাওয়ার শব্দ, শরীর ছুঁয়ে যাওয়া- মৃত্যুর নিঃশ্বাস। তুমি দেখেছ? মৃত্যুর পাখিদের- প্রাণ ঠোঁটে করে নিয়ে উড়ে যেতে। নীল উল্কা তুমি দেখেছ? বৃষ্টিরা কেমন - মেঘের কোলে ঘুমিয়ে থাকে। বৃন্তচ্যুত বাতাস কেমন করে লুটিয়ে পড়ে পায়। ধ্বনিময় বিদ্যুতের ঝলকানিতে - শিহরিত হয় পৃথিবী। তুমি দেখেছ? নীল ডানা মেলে- স্বপ্নেরা নিঃশব্দে ধুসরতার ধুলো মাখে।   নীল উল্কা তুমি দেখেছ? চাঁদের বুড়ি কেমন করে, চরকায় সুতো কাটে- চাঁদের ভেলায় বসে। সুখ দুঃখ,আনন্দ উৎসাহ,সব আঁচলে বেঁধে- চাঁদের বুড়ি গল্পের জাল বোনে। নীল উল্কা তুমি দেখেছ? পাহাড়ের চুড়ায় - অশ্রুরা বরফের ঘর বাঁধে। চঞ্চল রাতের পাখি রাত ডেকে - আনন্দের পাখা মেলে চলে যায় খাবারের খোঁজে। তুমি দেখেছ? বাঁচার স্ফুলিঙ্গগুলো কেমন করে- কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যায়। নীল উল্কা তুমি দেখেছ? মহাজাগতিক মহাপ্রলয়, মহাশূন্যে বোধের কালো গর্ত। অন্তহীন মহাশূন্যতার গভীর বিস্ময়। তুমি দেখেছ? জোছনায় ভরা - সাধের মঙ্গলগ্রহ। সহস্র নক্ষত্রে সাজানো- জ...

আমি আছি পাহারায়

 আমি আছি পাহারায়  দেবপ্রসাদ জানা ঘুমালে ফুল?  ঘুমাও - আমি জেগে আছি, শিয়রে তোমার। সারারাত উপেক্ষায় স্তব্ধ হোক শাশ্বত তারা। আকাঙ্ক্ষার জোছনা রাত, উন্মুখ তোমার - অত্যাশ্চর্য অনন্যতায়। ঘুমিয়েছ ফুল? ঘুমাওনি এখনো? বিঘূর্ণিত বাতাস বিরক্ত করে বুঝি  চাঁদের ইশারায়,নির্নিগড় জোছনা। হঠাৎ দেখি নিঝুম দুপুর, হস্তিনাপুর। চাঁদকে পেড়ে কে যেন সূর্য দিল এঁকে । পুড়ছে দাউ দাউ করে জতুগৃহ। পুড়ে ছাই হলো পাঁচটি পুতুল। রক্তে রাঙা আঙুনে পোড়া। সবাই বললে চুপ - কথা বলো না,কৌরবেরা ঘুরছে। কয়েকশ কিলোমিটার শাড়ি পরেছে দ্রৌপদী । ওরে নারী এখনো দুঃসাশন টানছে।  শাঁখা সিঁদুরের রাঙা আঠারো অধ্যায়ের দ্রৌপদী - চুলের গোছা খুলে, হাজার মিটার শাড়ি নিয়ে ঘুরছে আজো। চাঁদের কপালে আজ টিপ নেই,ঘোমটা নেই,  অশ্রু ঝরেনি চোখে, আজ সে অন্য ঘরের বধূ - কে বোঝে তার মনের গভীরে ধুধু করছে মরু। এক অদৃশ্য বেড়ি পায়ে পরে, আবছা আঁধারে ফুল ঘুমালে আলোর দুপুরে। নীরব ভাষার গদ্য খাতায় দিনের দ্রৌপদী, মূর্ছা যায়। ঘুমিয়েছ ফুল?  নাকি রাতের আঁধারে কুয়াশা পীড়িত করে, লাঞ্ছিত করে অস্থির বাতাস। আততায়ীর কার্মাত নিঃশ্বাসে, আর পুড়তে দে...

যদি পাখি হতাম

 যদি পাখি হতাম  দেবপ্রসাদ জানা যদি পাখি হতাম,উড়ে যেতাম,ডানা মেলে। যদি আকাশ হতাম,মেঘের মতন - উড়তে উড়তে পৌছে যেতাম  ওইখানে, যেখানে আনন্দ নিচ্ছ লুটে। রং বেরং এর পোশাক পরে  বিয়ের শুভ আসরে। ইচ্ছামতো পাখনা মেলে, নেচে গেয়ে সব টুকু আনন্দরস পান করতাম মিলেমিশে। উড়ে যেতাম তোমার কাছে । জানি তুমি অনেক দুরে তবু আনন্দের মধু ভরে নিতে পাখিদের মতন ই উড়তে উড়তে পৌছে যেতাম  তোমার কাছে ।

আবরণে

 আবরণে দেবপ্রসাদ জানা স্থিরতার জাল ছিঁড়ে,কালান্তর হচ্ছে। জীবনের সবকিছু কেন অসমাপ্ত? ধূসর হবে প্রতিটি, জীবনের ইচ্ছে। মরানদীর অন্তরে,স্রোত থাকে গুপ্ত। অহরহ ঝরে চলে,কতো শত প্রাণ। আমসত্ত্ব বার করে,দেবে শাসকেরা? হাঁসখালি বকখালি সবই সমান। হাততালি দিয়ে চলে,নিত্য ধর্ষকেরা। পুড়ছে যে,পুড়ুকতো পৃথিবীর বুক। কেন এই কাওতালি,বোধের আর্তিতে। চুপ করে রই শুধু, চুপ করে মূক। কার কি হলো কেনবা,হলো আচম্বিতে। আপনার চরকায়,দাও সর্ষে তেল। আচ্ছাদন আবরণে দেখো তার খেল। 

বিবিধ দর্শন

 বিবিধ দর্শন  দেবপ্রসাদ জানা যখন কান্নার মতো বৃষ্টি নামে মাঠে। তখন শত কবিতা জন্ম নেয় মনে। রোদ্দুর ছড়ালে প্রাণে দিন ভালো কাটে। মরা কাঠ শূন্য মাঠে স্বস্তি ডেকে আনে। কালাপানি জেল গৃহে, ধৃত বন্দীগণ, মৃত আশা ধোঁয়াশায় বিপন্ন মস্তক, আক্ষরিক অর্থ খোঁজে আকরিক মন। আহাম্মক বালুচরে,ধরেছি পুস্তক। চলমান বর্তমানে ভবিষ্যৎ কোথায়? দেখেছি মাথার খুলি,নির্জন উদ্যানে। অপ্রতুল উদগীতে,মৌনতার গায়।  যত ফাঁকি ধরে রাখি,মিথ্যা আলাপনে।  তৃষ্ণার্ত জাতক চায় উদলা বর্ষণ, কমণ্ডলুর ক্ষুদ্রান্তে বিবিধ দর্শন।। 

মানুষ

 মানুষ দেবপ্রসাদ জানা খুব নাড়াচাড়া দিয়ে ভিতরে ভিতরে  জেগে উঠি স্তব্ধতায়,গোধুলি বেলায়। রাতগভীর আলোকে গোপন অন্তরে মহানন্দে ছুটে আসে দুঃখ নিরালায়। টান পড়ে কর্তব্যের রন্ধন শালায়। হিমস্বরে চুপিচুপি নজর এড়িয়ে। জড়িয়ে যায় হতাশা জীবন দোলায়। নিজের মধ্যে নিজেকে দিলাম হারিয়ে। সব মানুষ নিজের কর্তব্যে দাঁড়ায়। মানুষ বাঁচে কর্তব্যে,অধিকার বলে। প্রেমের বর্ষণে মনে,কি শুনতে চায়। মানুষের মতো নয়,মানুষ আসলে। শক্তি যেন,দেবতায় অসুর নিধনে। শুভ চিন্তার সাথেই অশুভ চিন্তনে।

আবার উঠবে সূর্য

 আবার উঠবে সূর্য  দেবপ্রসাদ জানা  আজ আবার ব্যথা গুলো চাগাড় দিচ্ছে মনে, সেই যে সেদিন হৃদয়ের প্রত্যেকটি দেওয়া, সহস্র কাঁটা গেঁথে দিয়েছিলে,  বেরিয়েছিল রক্ত, রক্ত সমুদ্র - স্রোতের টানে সেদিন পালিয়েছিলে, আমি বুঝেছিলাম আর থাকবে না তুমি, যে গর্ত গুলো হৃদয়ের প্রাচীরে ছিল, সেগুলো দিয়ে ভালোবাসার আবেগ-বাতাস ঢুকবে কোন একদিন, কেউতো - ওই ঝাঁজরা প্রাচীর দিয়ে উঁকি দেবে।  উঁকি দিয়ে চলে যাবে না হেসে, সোহাগী প্রলেপ দেবে তায়। মুক্ত বাতাসে ভরে দেবে। ফেলে আসা, অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা এনে দেবে জীবনে আবার,  জানি এইপাশে আমি একা, একলাজীবন জীবিত অঙ্গারের রূপ নেবে  আবারও একদিন।  সেই ভুলে যাওয়া ব্যথা গুলো জেগে উঠবে, ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরির মতো। তবু স্বচ্ছতা চেয়ে থাকবে একভাবে, চুপকথারা পাবে অন্যরূপ। মনের আকাশে কোথাও মেঘ ডাকবে, কোথাও বৃষ্টি নেমে আসবে,  মনের নদীনালা ডোবা খানাখন্দ ভরে দেবে - সহসা।  আবার সোনালী রোদ্দুর পড়বে।  কেউ অব্যক্ত ইশারায় হৃদয়ের দ্বার খুলে বলবে এসো,  ভালোবাসো, অনন্য গভীর প্রেম বিস্তারে আবার উঠবে সূর্য।

প্রেমের সকাল

 প্রেমের সকাল বসন্ত আসেনি আজ ফাগুন খেলায়, মনের আগুন তার জ্বলে আছে আজো। কৃষ্ণচূড়া লাল রঙে সেই অছিলায়, লাল হয়ে ফুটে ওঠে,তাই সাজো সাজো। শিমুল পলাশ বন,বেশ জমকালো। চতুর্দিকে রঙ ঢেলে,আভাস হাজার। রঙের মেলায় হাসে,নিয়নের আলো হাসনুহানার মানা,শুনবে না আর। কোকিল মধুর সুরে গেয়েছিল গান মনের মানুষ মাতে,আনন্দ-উল্লাসে, ভোরের বাউল গাহে,উদাসীর গান।  আগুন আলোয় ভাসে,খুশির তল্লাশে। বসন্তের রঙ মেখে,কৃষ্ণচূড়া লাল। প্রকৃতির প্রাণে হাসে,প্রেমের সকাল।

ঝড়ের আগে

 ঝড়ের আগে দেবপ্রসাদ জানা এক মুঠো ঝড় হাতে করে ফনীবাবু খানা-খন্দ নদী-নালা পেরিয়ে সেদিন উত্তরাকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখে - ছুঁড়ে দিয়েছিল সেই মুঠো ভরা ঝড়। মাঝনদী কেঁপে ওঠে,আধো জাগরণে, ওপার যেন ডাকছে মূক ইশারায়। হাতছানিতে না বলা কিছু কথা ছিল, এপারের ইশারাতে, ব্যক্ত হিমস্বরে- হৃদয়ে ছিল বোধের পোশাক,অপ্রেমে সাজানো বাগানে ফোটা ফুলের রঙিন আবেগ,আবেশে ঘেরা,কিছু শিহরণ, এই চৈতালী বেলায়,স্মৃতিঘন মনে- ধূসরবর্ণ মেঘের  নিঃশব্দ প্রয়াণ। একদিকে অন্য চাঁদ ঢেকে আছে মেঘে সে এক অন্য রূপের, আবরণে ধৃত, বিজন সুরে গোপনে,ভালোবাসা প্রেম, চাঁদের আলোয় চলে,সম্মিলনী দোলা, ভিক্ষা চেনে আকাঁড়ার চাল দুধে গোলা। ভালোবাসা মরে যাবে,দুইটি সত্তার বিপরীত মুখী স্রোতে, বিপন্ন বিস্ময়ে। অর্থ খোঁজার কঠিন রেশ লাগা দেশে, তলানো জলের স্বাদ উন্মাদিত প্রাণে। মোহনার বুকে হাসে ক্ষুধার বাতাস। স্বাভাবিকতার ভাঙা অভাব বাড়িয়ে- শুধু বোঝা তুলে ধরা,তৃষ্ণার্ত শেকড়ে। বাতি নিভলে,আগুন চাওয়ার নেশা, রচনা করে চেতনা, অবরুদ্ধ শূণ্যে। প্রয়োজনীয় নদীর স্রোত এনে বুকে- পাথুরে চর গড়েছি দেহ মোহনায়  কাতরে ওঠে বিষন্ন মনের অচেনা স্মৃতির ব্যথা, উথলে ওঠে আদিগন্ত ...

বোধশূন্য

 বোধশূন্য তার বোধশূন্য দেহ, যত স্পর্শ করি। বিবর্ণতায় শরীর  মন ভেসে যায়- শীতল জোছনা যেন ঝরে ঝিরিঝিরি। আত্মমগ্ন মায়াবনী নেশা ছুটে যায়। কুমারী নদীর বুক,কাঁপে তার ভয়ে। স্তব্ধতার ইতিহাস, সঙ্গমে বিকৃত। হে নদী ফেরালে মুখ,দক্ষ অভিনয়ে। রূপালী জোছনা জলে,বেশ পরিনত। মন খারাপের নদী উঠে আসে বুকে। নৌকাটার পালে কই,লাগেনি বাতাস। টলমল শূন্যতরী ভাসে কোন সুখে। সময়ের এক ফালি,করছে হুতাশ। বাঁচার প্রত্যয়ে হারে,জীবন সংগ্রামে। মৃত্যুর হৃদয়ে লিখি,কাব্য তার নামে।

সুখীমন

 সুখীমন দেবপ্রসাদ জানা মাথার চুল গুলো,ধীরে ধীরে ঝরে যাচ্ছে আলগা হচ্ছে দাঁতের বাঁধন। গোঁপের গোড়ায় সাদা রঙের প্রলেপ। বিষন্নতায় ভরে গেছে মন। আগুনের সঙ্গে কুড়ি বছরের বাস তবুও পুড়ে যাইনি। ঝলসে ঝুলে গেছে গায়ের চামড়া  তবুও বুঝতে পারিনি। ভালোবাসার ঘরে লেডিস হোস্টেল মা বউ দুই মেয়ে। সেখানে আমি একা পুরুষ মানুষ থাকি ভয়ে ভয়ে। যাযাবরের মতো এ ঘরে ও ঘরে ঘুরি এক ঘরে হয়ে থাকি। বাথরুমের বাইরে লম্বা লাইন পড়ে  কতক্ষণ আছে বাকি। বাড়ি ফিরে ভয় পাই ভুল করে বুঝি উঠেছি লেডিস কামরায়। চুলোচুলি টানাটানি হাতাহাতি চলে কত যে কি ভাবায়। রাতে জেগে থাকি উত্তেজনায় দিনে ঘুম পায়। আগুনের গায়েও আগুন লাগে সেও পুড়ে যায়। পুড়ে যাওয়া পরশ পাথর খুঁজে পাই ছাই চাপা আগুনের ঘরে। ভালোবাসার জোছনায় মুগ্ধ,সুখীমন কোথাও পাই নারে। 

মাতৃরূপে নারী

 মাতৃরূপে নারী দেবপ্রসাদ জানা নারী তুমি কালো হও,কলঙ্ক নিও না। নারী কালী মহাকালী,প্রেমিকা ঘরনী। পবিত্র বিশুদ্ধ  নারী, মৃন্ময়ী জননী। তোমার অন্তরে মাতা,বিনম্র চেতনা। প্রজন্ম প্রজন্ম তুমি,মায়ার বীক্ষণে, প্রবাহিত শান্তনদী নির্বাক আকাশ। মায়ার বন্ধনে থাকে,গভীর প্রয়াস। শীতল বাতাস আনে,উত্তপ্ত অঙ্গনে। পবিত্র গঙ্গার জল,ভগবত গীতা। তার চেয়ে শুদ্ধনারী,তুমি মাতৃরূপে, কুৎসিত কালো রূপ,তবুও যে মাতা। দেবদেবী পুজা করে,ধুনো আর ধুপে। সৃষ্টির প্রলয় হোক,তবু রবে মাতা। প্রতিটি যুগের নারী,থাকে মাতৃরূপে।

অদিতি

 অদিতি - কেমন আছো গোবিন্দ? গোবিন্দ সম্পর্কে আমার দূর সম্পর্কের ভাই হয়। বহুদিন কোভিট নাইনটিনে ভুগে সবে বাড়ি ফিরেছে। চারমাস, আই সি ইউ, অক্সিজেন, সকলে ভেবেছিলাম ও আর বাঁচবে না। যমে মানুষে টানাটানি। বেশিদিন আর বাঁচবে না। এরকম অবস্থা, সেই গোবিন্দ আজ বিয়ে করতে যাচ্ছে। -তোমার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেছে? - হ্যাঁ  - কবে হলো? জানলাম না কিচ্ছু। আমাকে একবার বলতে পারতে? - বলতাম, কিন্তু সত্যিই বিয়েটা হবে কিনা, সেটাই তো জানা ছিল না। আমার বোনাই ঠিক করেছে। বাড়ির সকলের পছন্দ। বোনাই এর বাড়ির পাশে। তারই কেমন আত্মীয় হয়।  - ও তা ভালো। তোমার শরীর তাহলে এখন ঠিকই আছে।  - আছে, কিন্তু খুব দূর্বল। খাওয়া দাওয়া ভালো করতে বলেছে। - আর তোমার অদিতি একের পর এক সম্বন্ধগুলোকে নাকচ করে দিচ্ছে যে । - অদিতির সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই দাদা।  - তাহলে পিতৃহারা ওই মেয়েটার কি হবে?  - কি হবে তা আমি কি করব?  - ওর মা কত চোখের জল ফেলেন। তোমার তো কোন কিছু অজানা নয় গোবিন্দ। - ও চোখের জলের কোনো দাম নেই। - এতটা স্বার্থপর তুমি? দিনের পর দিন তুমি ওদের বাড়িতে সমস্ত সুযোগ নিয়েছ। হোস্টেলের বদলে ওদের বাড়...

মায়ের বন্ধু

 মায়ের বন্ধু ওষুধ লাগিয়ে,জিজ্ঞেস করে - -বয়স কত? -ঊণিশ, ডাক্তার হাসতে হাসতে বলেন, -তাহলে ভেউ ভেউ করে কাঁদছো কেন? আমি ভাবলাম পাঁচ ছয় হবে। - ঊণিশে কেউ কাঁদে না? - কাঁদেতো, তবে অল্প সল্প। সহ্য করে নেয়। এরপর চাপ দিয়ে,অনিতার কাছে থেকে ডাক্তার সব কথা শোনেন। সব শুনে বেশ গম্ভীর ভাবে ডাক্তার বলেন,  - ব্যাপারটা কবে? - আগামী শুক্রবার। - তার মানে এখনো তিনদিন।  ডাক্তার অবনীকান্ত তালুকদার আমাদের পাড়ার বাসিন্দা, সকালে নিজের বাড়িতেই চেম্বার করেন, ওনার একটা পুরানো মডেলের গাড়ি আছে, উনি বাইরে ছিলেন বলে, গাড়িটা পড়েই ছিল। সদ্য এখানে এসেছেন, ছেলে আমেরিকায় থাকে, তিনজনের সংসার, স্ত্রী হার্ড স্পেশালিষ্ট, মেডিকেলে আছেন। দুজনে বেশ কম্প্রোমাইস করে চলেন। অবনী ডাক্তারের নামও কম নয়, উনি সব রুগি দেখেন, জ্বরজারি, কাটাছেঁড়া, গাইনি, পেট ব্যথা পেট খারাপ সব। একবার ওনার ওষুধ খেলে দ্বিতীয় বার আর যেতে লাগে না। গরীব মানুষের চিকিৎসা উনি বিনা পয়সায় করেন। কিন্তু যেদিন বিনা পয়সায় যার চিকিৎসা করবেন তার বাড়ির লোককে তার ডিসপ্নেসারি সাফ সাফাই করে দিতে হবে। যদিও সেই মানুষের যা ওষুধ পত্তর লাগে সব উনি দিয়ে দেন। উনি বলেন...

সন্দেহ

 সন্দেহ  ভোর পাঁচটায় এসেছে বাসন্তী। তোমার ঘুম ভেঙে যাবে বলে আস্তে আস্তে দরজা খুলেছি। আজ কী ফুর্তি বাসন্তীর। গান গেয়ে গেয়ে বাসন গুলো মাজল। ছাদ থেকে নিচতলা পযর্ন্ত পুরোটা ঝাঁট দিয়ে মুছে কাপড় কাচতে বসেছে। কথা গুলো প্রফুল্ল তার নিদ্রারত বউকে গ্রীনটি দিতে দিতে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল।  - গুড মর্নিং  চা করে বিছানায় বউকে চা দিয়ে গুড মর্নিং বলাটা প্রফুল্লর প্রতিদিনের কাজ। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বউ কি শুনল তার অপেক্ষা না করে, বিস্কুটের কৌটোটা হাতে নিয়ে বলল, -আজ কিন্তু আমি তাড়াতাড়ি বেরব। রোজ অত দেরি করলে চলে না। সরকারি অফিসেও কেউ এত দেরি করে যায় না। - সে সব পরে বুঝব, ইদানিং দেখছি, বাসন্তীর সঙ্গে তোমার ও খুব ফুর্তি বেড়েছে, সকাল সকাল বাসন্তীও আসছে আর তুমিও ভোর ভোর উঠে ওর আগুপিছু ঘুরছ। প্রফুল্ল শাসনের সুরে বেশ মোলায়েম করে বলল, - কি যে বলো তুমি? ও একটা কাজের লোক তার সাথে সন্দেহ?  সন্দেহটা অমুলক নয়, সত্যিই বাসন্তীর ওপরে প্রফুল্লর একটু দূর্বলতা আছে। তাবলে এমন কিছু নয়, যে বউ তাকে যখন তখন পিন করবে।  প্রফুল্ল চায়ে আর একটা চুমুক দিতে যাবে, বাসন্তী এসে বলল, - বাবু বৌমনির শাড়িতে আমি আজ ...

প্রথম প্রেম

 প্রথম দর্শনে  প্রেম মানে আকর্ষণ। প্রেম মানে মোহ। প্রেম মানে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। প্রথম দর্শনে প্রেম, শুধুমাত্র একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মধ্যেই  সীমাবদ্ধ থাকবে, তা মনে করার কোন কারণ নেই। স্কুল কলেজ, বাসস্ট্যান্ড, মেলা, কোচিন সব জায়গাতেই এই প্রেম আসতে পারে। আমার প্রেম এসেছিল কনে দেখতে গিয়ে। আমি তখন আঠাশ। যাকে দেখতে গেছি সে সবে ফাস্ট ইয়ার পরীক্ষা দিয়েছে,  হ্যাঁ আমি তার প্রেমে পড়েছিলাম  প্রথম দর্শনে। সেই প্রেম আজও অনড় আছে। আমাদের ভালোবাসা প্রকৃতই অন্তরের ছিলো বলেই, আমরা সাময়িক কষ্ট থেকে, পুনঃরায় তা অমলিন ভালোবাসায় পরিনত হয়েছে।         সবার নিশ্চয়ই বেশ কৌতূহল হচ্ছে,আমার কার সাথে প্রথম দর্শনে প্রেম হয়েছিল?  আমার জীবনে প্রথম কনে দেখার আনন্দটা ছিল অকৃত্রিম। বেশ ফুরফুরে মন সকাল থেকে, বিকাল চারটেতে যাবো সেই বহু প্রতিক্ষিত জীবনের সঙ্গী টিকে পছন্দ করে নেওয়ার মুহূর্ত।  আমার বোন, বোনাই, আমি আর আমার খুড়তুতো দুইভাই লালু আর কালু। যে ঘটক নিয়ে গেছিল, তাকে বলেছিলাম মেয়ে যেন মোটা না হয়, কালো, রোগা যাই হোক আমি রাজি হয়ে যাবো, কিন্তু মোটা হলে সোজা না করে ...

কৃতকর্ম

 কৃতকর্ম  বাপ মা মরে গেছে। হীরা আর পান্না দুই যমজ ভাই। কি একটা কথায় দুই ভাইয়ের লাগল মারামারি। পান্না রেগে গিয়ে বলল, “তুই ঘুঘু দেখেছিস। কিন্তু ফাঁদ দেখিস নি।” হীরা রাগ করে বাড়ি হতে পালিয়ে এলো কলকাতায়। এখানে এসে এ বাড়ি, সে বাড়ি,ঘুরতে লাগল কাজের আশায়। কিন্তু কাজ তাকে কে দেবে? এই শহর এক মজার শহর, এখানে যে পায় অনেক পায়, যে পায় না কিছুই পায় না। কাজের বড় আকাল। অবশেষে হীরা গিয়ে উপস্থিত হল, এক ঠাকুরের বাড়ি। ভারি বিদঘুটে লোক এই ঠাকুর। চাকর রেখে সময় মত খেতে দেয় না, খেতে দিলে, বেতন দেয় না, তাই কেউই তার বাড়িতে কাজ করতে চায় না। তবু হীরা সেখানে কাজে লেগে গেল, হীরা বাজার করে, বাগান ঝাঁট দেয়, বাসন মাজে, রান্না করে, ঠাকুরের বউ সকলকে খেতে দেয়, নিঃসন্তান ঠাকুর, যজমানি করে দিন চলে। তা বলে সে যে খুব গরীব তা নয়, তার বাবা একটা প্রসিদ্ধ মন্দিরে পুজা করতেন, অনেক টাকা পয়সা রেখে গেছেন। ঠাকুরের তিন পুরুষ বসে খেলেও শেষ হবে না। তবুও ঠাকুর পুজো করতে যান বাড়ি বাড়ি,দিনের শেষে অনেক চাল কলা ফল মুল আনেন। সেগুলো সব গুছিয়ে রেখে দেন, মজুত করেন, কিসের জন্য মজুত করেন কেউ জানে না। কোনো মন্দিরে পুজো হলে সেখানে ...

ঋণী

 ঋণী দেবপ্রসাদ জানা তোমার কিঞ্জল চোখে,গভীর সাগরে। কলকল্লোল জোছনা রাতের ছায়ায়। ভেসেছে জীবনতরী,দুখের মায়ায়। সেই পাথরের মতো একটা বছরে। ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে গাছে ফুল ধরে। ফোটে ফুল ভালোবাসে রাতের নেশায়। ফুলের ঝরার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। ফুলের কেশর জাগে,নিশি জাগা ভরে। করতলে চাঁদ ধরে, দিয়েছ জোছনা। খুব কাছে চাঁদ দেখে,রাত পাখি বলে। এ কেমন দিন এলো,লাজ লজ্জা হীনা। সুন্দরের হাত ছুঁয়ে,কোথা যায় চলে? ফুলেদের কোলাহলে,পিক গাহিবে না। বসন্তের জোরাজুরি,চলে ভোর হলে।

গৌরী

 গৌরী -তোমাদের কি রান্না হবে? মাছ নেই ফ্রিজে। আমি বাজারে যেতে পারবো না, বাজারের লোক গুলো ভালো না, কি সব ইঙ্গিত করে, দাদাবাবু কে বলে দেও। বিকালে ফিরে ছাদের বাগানে জল দেবো। তারপর রাতে সোনাদির বাড়িতে যাবো, কাকার কাছে একটা চাদর আনতে। এই শীতে বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার কোন চাদর নেই। শাড়ি একটা পেয়েছিলাম তোমাদের কাছে সেটাই পোরে যাবো। এক নিঃশ্বাসে বলে গেল গৌরী। গৌরী আমাদের পুরানো কাজের মেয়ে, আমার বাবার সময় থেকে আমাদের বাড়িতে আছে। নয় বছর বয়স থেকে সে এখানে কাজ করে, এখন ওর বাইশ, মাঝখানে একবার বিয়ের ঠিক করেছিল বাবা,বাবার অফিসের কোন এক চাপরাসির সঙ্গে, তখন ও সবে আঠারো, কেন ঠিক করেছিল সঠিক জানি না। তবে যেটুকু আন্দাজ করতে পারি, আমিও তখন বেশ যুবক, ফলে মা বলল, - সমত্ত মেয়ে, কোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে, এবার বিয়ে দাও।  বিয়ের কথা শুনে গৌরীর সে কি কান্না, কিছুতেই বিয়ে করবে না, অগত্যা আমার বিয়ের ঠিক হলো,সদ্য বি এস সি পাশ করেছি, চোখে নতুন স্বপ্ন, কলেজে একটা দুটো প্রেম ও করেছি, ঘোরাঘুরি চলছে, এরই মধ্যে বিয়ে!  মায়ের এক বান্ধবীর মেয়ে, ফাস্ট ইয়ার পড়ছে। মায়ের জোরাজুরিতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হলো, আমাদের গুরুদেব স...

নাট্যমঞ্চ

 নাট্যমঞ্চ দেবপ্রসাদ জানা অন্ধকারে জেগে থাকে,নীল সাজঘর। দিগন্তরে মগ্ন কায়া,ঠায় দেখে যারে- লালনীল আলো জ্বেলে,করে কালান্তর। বিশ্বমঞ্চে আনাগোনা,নাটক আকারে।    সর্বনাশে লোক হাসে,কাঁদে অভিনেতা। হাসিকান্না পাপতাপ, মঞ্চ ভরা সঙ। লোকশিক্ষার প্রসঙ্গে,গল্প গানে গাথা। কালো পর্দা অন্ধকার, চরিত্রের ঢঙ। ঘন্টা দুই স্বপ্নঘোরে,বদ্ধ পরিখায়। মুগ্ধ দর্শকের বুকে, সীমাহীন চাপ।  বসে থেকে,খুব কাছে,শুনেছে আলাপ। মুখে হাসি চোখে জল,নিয়েছে বিদায়। তীব্রতার স্বেচ্ছাচারে,দর্শকেরা চুপ। সমাজ সংসারে দেখা,পাশাপাশি রূপ।

কলম সৈনিক

 ।।কলম সৈনিক।। দেবপ্রসাদ জানা    ২০.০৩.২০২২ ভালো আছতো সৈনিক,কলম সৈনিক? কালের রুদ্ধতা ভাঙো,বীর আত্মোপম । কলম করিছে রণ,সাহিত্যে দৈনিক। পরিবর্তন আসিছে,অতি মনোরম। কাঁটাতারে দেয় প্রাণ,দেশের সৈনিক। পায়ে তার মাথা ঠোকে,গোটা বিশ্বভূমি।  প্রাণ ভয়ে কোনঠাসা,অসুর চৈনিক। ভাবনা সজাগ রাখো, ভগবান তুমি , হাতে আছে তরবারি,কলমের বল। যত খুশি অত্যাচার,আসুক মরণ। এক এক করে আজ,পাকিয়েছি দল। সাত সহস্র টোপকে,আটেতে চরণ। কলম সৈনিক দল,করেছিল পণ। বছর দুই পরে সে, ছুঁইল গগন। দুই সৌমেন,দেবু নাজির,রশ্মি পরিবারে। মুরারী মোহন বাবু,যিনি সভাপতি। উপদেষ্টা মণ্ডলীরা, উপদেশ করে। অর্পিতা ঘোষ পালিত,সহ সভাপতি। বাকি সব সেনা মোরা,মসি পরিবারে, স্বাগতম তথ্য রাখে,নানা কারিগরি। পরিবারে নক্ষত্র সে,সূর্য একেবারে। মানিক সন্তু মধুদা,পরিবারে ফেরী। আরো আছে চন্দ্রকনা,জোছনায় ভরা। পরিবারের রতন,জোনাকির আলো। পারমিতা বিলাসেরা, আকাশের তারা। নূপুর,দিলীপ,স্নিগ্ধা, হিরন্ময় ছিল। কলম সৈনিক এরা,সাহিত্যে অনন্য। পরিবার রত্ন সব প্রতিভাসম্পন্ন। তিন নীলাভ পালকে লেখা,কলম সৈনিক। ধনুকের ছিলা টেনে,কলমের তীর। কলম হাতে লিখছে,সাহিত্য দৈনিক। গল্প কবিত...

সুখের মানচিত্র

 সুখের মানচিত্র  সুখের মানচিত্রটা,আঁকি দিনভর। নিজেই লড়াই করি,নিজের বিরুদ্ধে। তবু প্রশ্ন থেকে যায়,প্রশ্নের ভেতর। দুখের পাহাড় ভাঙি,সমতার যুদ্ধে। সর্বদা যার ওপর, ভরসা রেখেছি। মায়ার বাঁধন খানি,আকাশ পাতাল। আমার সর্বস্ব আমি,অযথা দিয়েছি। দাঁড়িয়ে থেকেছি আমি,সকাল বিকাল। দেখা হয় যদি সেই,রাস্তাটার বাঁকে। যে রাস্তায় দেখা হতো,বার প্রতিবার। আগের মতন দিতে পারি না যে তাকে- লালগোলাপের বুকে, হাতে তুলে তার। সময় এখন উল্টো পথ ধরে হাঁটে। তুষের আগুনে পোড়ে,দেহ পাটে পাটে।

পথে বিলীন

 পথে বিলীন  দেবপ্রসাদ জানা যদি পথ হয়ে যায়,পথে বিলীন। মনে করো না,থাকব  সেদিন। আকাশভরা সূর্য তারা। হবে যেদিন দিশাহারা। আমায় তুমি দেখতে পাবে ক্ষীণ। তোমার চোখের চাহিদা মতো। পিছন পকেটে ভীষণ ক্ষত। অকারণে দামি দামি। কিনে ফেলেছি আমি। শাড়ি গাড়ি বড়লোকের মতো। লোকের কাছে ঋণ হয়েছে। অফিসে কিছু লোন রয়েছে। দোষ বলোতো কার? মুখ দেখানো ভার। কাবলিওয়ালাও দাঁড়িয়ে আছে। চরণ যুগল সামলে রাখো। পারলে একটু সামনে দেখো। চাদর পাতা জমি। তার নিচে ভুমি। যতটা পারো সামিয়ানায় থেকো। অহংকারের ইতিহাস খানা। ধুলির সাথে মিশেছে ডানা। ধনদৌলত পয়সাকড়ি। সবই নেবে এরা কাড়ি। সময়ের পথে কেউ থাকে না।

সভ্যতার চিতায়

 সভ্যতার চিতায় দেবপ্রসাদ জানা বিষাদের ঐ জলন্ত,চিতায় পুড়ছে- মৃত সভ্যতার দেহ,ইতিহাস হবে। পঙ্কিলাবৃত পৃথিবী,উল্লাসে হাসছে। শ্বাপদ আঁধার দেখো,নীরবে পস্তাবে। দেখো,নেমেছে সন্ধ্যায়,রাতচোরা পাখি। রাতের মুখোশ পরে, নীল স্তব্ধতায়। দরজায় ছিল খিল,অকস্মাৎ দেখি। মৃত্যুর মিছিল চলে, কি বিসন্নতায়। সহস্র পাণ্ডব পোড়ে,জতুগৃহ মাঝে। একশ কৌরব নয়,আছে লক্ষাধিক। গৃহবন্দী জনতারা সকলে তা বোঝে। ওরে পাষণ্ড উদ্ধত, নৃশংস সৈনিক। বাঁচার স্ফুলিঙ্গ গুলো,প্রতিদিন নগ্ন। গোপন অস্তিত্ব গুলো, উত্তাপে উদ্বিগ্ন।

সব খেলা শুরু

 সব খেলা শুরু দেবপ্রসাদ জানা এই ভাবেই সব খেলার শুরু হয়। আগুনের গায়ে আগুনে লাগে, রাতের সঙ্গে রাতের লড়াই - অন্ধকার আরো অন্ধ হয়, চোখের আলোতে গ্রহণ লাগে। ভোরের আকাশে ফাগুনের বদলে- আগুন আসে ধেয়ে। পুড়িয়ে দেয় ভাবনার ঘর, আশার অট্টালিকা। নিয়তি হাসে নিভৃতে নীরবে। এই ভাবেই সব খেলা শেষ হয়  নির্মল বাতাস হয় ঝড়। সকালের সূর্য হয় আগুন। কড়িকাঠে ধরে যায় উই- পুড়ে যায় আকাঙ্ক্ষার আগুন। হারিয়ে যায় ইতিহাসের - সেলাই ছেঁড়া পাতা। তবু বাসনার আগুন বাসন্তী রঙের, ফাগুন আনে দেহে। শূন্য থেকে শূন্য এর ভিতরে সে এক অজানা বিপুল বিস্ময়। মনের ভিতরে ভিতরে কঠিন ছদ্মবেশ। সবটুকু জেনেছি নির্জনে। কি জানি কেন যেন সব অজানাই থেকে গেল গভীর বিস্ময়ে।

ক্ষয়ের বৃক্ষটি

 ক্ষয়ের বৃক্ষটি  দেবপ্রসাদ জানা ফুঁ দিয়ে ওড়াই অন্ধকার। তবু কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশের ভারাক্রান্ত মেঘ। স্মৃতিক্ষতে তাচ্ছিল্যের মুহূর্ত। মুখোশে ঢেকেছি মুখ এতদিন। নগ্নতার মান অপমানের সামাজিক দায়বদ্ধতা  বাঁচার স্ফুলিঙ্গ গুলো এই ভাবেই  কঠিন থেকে কঠিনতর হয়, প্রতিদিন নগ্ন করে পোড়াই মনের পাপ।  বদলায় চেনা অজানা-অচেনা পাথুরে মুখ। আলো বাতাস অন্ধকার আর? তার থেকে পাওয়া অচেনা সুখের মুহূর্ত গুলো। সব স্মৃতির গভীর কালো গুপ্ত কক্ষে - হারিয়ে যায় একদিন। মৃত্যু হয় আলোর, ঘনিয়ে আসে অন্ধকার।  সত্যিই কি ভয়ংকর মৃত্যুর খেলা। গভীর গোপন সত্যি উন্মুক্ত শাণিত তরবারি যেন  ক্ষয়ের বৃক্ষটি রোজ কেটে কেটে নির্মূল করি। তবুও অলক্ষ্যে জন্মে যায় স্মৃতির পাহাড়ে।

কিন্তু কেন?

 কিন্তু কেন? দেবপ্রসাদ জানা কিন্তু কেন? কেন এই শূন্যতা? স্বপ্নময় হেঁটে যাবো - এক জীবন থেকে অন্য জীবনে - যদি নির্বাক থাকি, যদি পাথর হয়ে থাকি, পাবো, বুক জুড়ে এক রাশ বঞ্চনার ধুসর প্রস্তর। প্রতিদিনের তুচ্ছ ত্রুটি গুলি, এক এক করে পোড়াই অন্তর্দাহে। বুক জুড়ে এক রাশ গ্রহ নক্ষত্র ছুটে বেড়ায়, দিনের আলোয় হারিয়ে যায়, আবার আসে রাত হলে,  স্বপ্নের মত ঢুকে পড়ে মনে, ঘুমের ঘোরে কিংবা জাগরণে, জানি শব্দগুলো পৌঁছায় না সেখানে,  কোথাও কালো অন্ধকার আসে, মহাকাশেরও অন্ধকার কালো গর্ত,শূন্যতা। বুক ভরা শূন্যতা। কেন? তার কি এমন দুঃখ? কখনো কখনো ধুমকেতুরাও আত্মহত্যা করে। ভীষণ দুঃখে হারিয়ে যায় তার পথ। ঝরে পড়ে মহাকাশ হতে। আত্মহত্যা করে নক্ষত্রেরাও। নিঃশব্দে মৃত্যু হয়,মহাকাশ যানের। কিন্তু কেন?

এ সেই মধ্যবিত্ত ক্ষত

 এ সেই মধ্যবিত্ত ক্ষত। দেবপ্রসাদ জানা সে এক মধ্যবিত্ত ক্ষত। তাদের খিদে বাড়ে,খাবার দেখলে। দুঃখ হয় অন্যের কষ্ট দেখলে। হিংসে হয়,কারোর উন্নতি দেখলে। ভয় হয় মৃত্যু দেখলে। বুকের রুদ্ধতায় জন্ম নেয় স্বপ্ন, বিসন্নতায় ছুঁলে,বাতাসে মারণ মন্ত্র ভাসে। লুকোচুরি চলে মারণ উৎসবের। নীল আলো জ্বেলে, জোনাকিরা ঢুকে পড়ে-শয়ন কক্ষে। অন্ধকারে খোঁজে প্রেয়সীর খোলা চুল। প্রতীক্ষায় জাগে প্রত্যাশার-মন। সফলতার সিঁড়ি ভেঙ্গে- শেষে গ্যাস অম্বল আর ব্লাড সুগারের সাথে- গোপনে লড়াই করে। দৈহিক কষ্ট তবু মৃত্যুকে ভয়। সে এক মধ্যবিত্ত চেতনায় -নিঃশব্দ বিচরণ। ভিজে মাটিতে, স্যাঁতসেঁতে ঘরে,  কিংবা শীততাপহীন বদ্ধ নোনা ধরা - পূর্ব পুরুষের চল্লিশ ইঞ্চি দেওয়ালের ঘরে- জীবনের শেষদিনটার অপেক্ষায় থাকে। পুরাতন আসবাব পত্র, পূর্ব পুরুষের চিহ্ন বলে, সাজানো থাকে ঘরে। মঙ্গলঘট পেতে সবর্দা মঙ্গল কামনায়- ভিক্ষা করে অমৃত পাত্র। দুধে ভাতে থাকতে দাও ভগবান। শরীরে উষ্ণতা কুড়ায়,লড়াকু সংলাপে। শোকযুক্ত অন্ধকারে,রজনীগন্ধার মালা- পলকা কাঠের ফ্রেমে ঝুলিয়ে, সারাজীবন শোক প্রকাশ করে অম্লান চিত্তে। এ এক মধ্যবিত্ত ভাবনা। শুধু আলো, শুধু রোদ, শুধু বৃষ্টি, শুধু...

জঙ্গলে জঙ্গলে

 জঙ্গলে জঙ্গলে  ঘুরতে গেছিলাম সুন্দরবন। হঠাৎ বর্ষা,সারাদিন ঘুটঘুটে  অন্ধকার,নোয়াখালী জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সরু রাস্তা চারপাশে উঁচু উঁচু গাছগাছালি, ঘনঘন ঝোপঝাড়, নদীর জলে প্রবল টান। লঞ্চ,ঘাটে দাঁড়িয়ে পড়েছে, আর এগোনো যাচ্ছে না। বনদপ্তর থেকে বারণ করেছে। ঠিক এ সময় সচরারচর বৃষ্টি হয়না। ঘনঘন মেঘ ডাকছে, কোথাও কোথাও বাজ পড়ছে। আমরা ছয়জন, বন্ধুরা মিলে একটু, মদ মাংস নিয়ে ফুর্তি করতে বেরিয়েছি তিনদিন। প্রত্যেকের ব্যাগে একটা করে বোতল। বন মুরগীর খোঁজ করতে চলেছি বনের মধ্য দিয়ে ভেতরে, বন মুরগীর কষা মাংস আর সুরা। আমরা কেউ সুরা পানে অভ্যস্ত নই, তবে মাঝে মাঝে অকেশনে সুরা পান করে থাকি, সকলেই আনন্দের জন্য এসেছি। সকলেই বিবাহিত, আমাদের তিনজনের পাঁটটা বাচ্ছা। আমার দুটো মেয়ে, অসিতের একটা, গৌরবের দুটো ছেলে। বাকি তিনজন, বাবু প্রলয়, আর অনন্ত। বাবুর চার বছর বিয়ে হয়েছে বাচ্ছা কাচ্ছা হয়নি, তবে চেষ্টা চালাচ্ছে। অসিত অনন্তের দেড় বছর বিয়ে হয়েছে, দুজনের বউ অন্তঃসত্ত্বা। মাসচারেক। আমরা সকালের দিকে বেরিয়ে ছিলাম, এখন প্রায় দুপুর, কিন্তু পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে, সন্ধের পরের রাত। জঙ্গলের মধ্যে আরো অন্ধকার। সাপ খোপ থ...

জোনাকির প্রেম

 জোনাকির প্রেম দেবপ্রসাদ জানা জোছনার ঠোঁটে চুমু খেয়ে ও জোনাকি। আলো জ্বেলে উড়ে এলি মশারির পানে। প্রিয়া সনে বিছানায় ,  নীল আলিঙ্গনে। আলো জ্বেলে আমাদের,দেখলি তাই কি? তাই দেখে জোনাকির মাথা ঘোরে নাকি? রোজ রাতে প্রিয়া তার থাকে কার সনে? নীরবে কহিল পোকা আপনার  মনে। নীল আলো জ্বেলে তার লাভ  হইল কি? আলোপোকা দুখে কাঁদে,গভীর আঁধারে। জানিবে কেমনে প্রিয়া, করিল আদর। এইটুকু সুখ তার ছিল না কপালে। দেখেছিল রাতভর জোনাকি আহা রে। বোঝাবে কেমনে তারে,ছন্নছাড়া ঘর। কেন যে জোনাকি মোরে,দেখিল এ হালে।

পিতৃসত্য

 পিতৃসত্য দেবপ্রসাদ জানা ১ কেন রাম কি কারণে,এলে বনবাসে? অযোধ্যার ভবিষ্যৎ,ভুলে গেলে রাম। এ জগতে কে কাহারে,এত ভালোবাসে? সব ছেড়ে বনবাসে, দেখো পরিনাম। কৈকেয়ীর ছলনায়, রাজা দশরথ। অবিচার করিলেন,জ্যেষ্ঠ পুত্র সনে। না বুঝে অবোধ শিশু,পূরে মনোরথ। পৃথিবীতে এলে একা,যাবে বন্ধু বিনে। ছলনাময়ী কৈকেয়ী,সেবা অজুহাতে, কবুল করিয়ে নিল, ঘৃণ্য এই কাজ। তার তরে সব ছেড়ে,এলে কার হিতে? শূণ্য অযোধ্যা নগর,করে দিলে আজ? কহিল জাবালি ঋষি, রামের সম্মুখে। প্রিয়জনের আসক্তি,সদা থাকে দুখে। ২ যাও যাও ফিরে যাও,এই ক্ষণে তুমি। প্রিয়জন পরিজন, সকলে অতিথি। দুদিনের মায়া জেনো, কহিলাম আমি, ভুলে যাও পিতৃসত্য, ভুলে যাও রীতি। সদানন্দে ভোগ করো,রাজ সিংহাসন। আমোদ প্রমোদ করো, দ্বিধাহীন মনে। বনবাসে বহু কষ্ট , ক্লেশ সর্বক্ষণ। রাজার দুলাল তুমি, মরিবে দহনে। দেখো রাম নববধু জানকী তোমার। কত আশা কত স্বপ্ন, হৃদয় গভীরে। রাজকন্যা রাজবধু, কি হবে তাহার? নিয়তির একি খেলা সঙ্গে নিলে তারে? জাবালি ঋষির কথা,সত্য ছিল বটে। অনাসক্ত রঘুনাথ, শোনে পাটে পাটে। ৩ শোকমগ্ন ভরতের, ছিল অভিলাষ। সঙ্গে করে নিয়ে যাবে দাদারে তাহার। জাবালি ঋষির বার্তা, দিয়েছিল আশ। রাম বুঝি ফি...

আমি দেখেছি

আমি দেখেছি দেবপ্রসাদ জানা আমি দেখেছি। সেদিন চুপিচুপি অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ছিলে নিঃশব্দে গাছের নীচে, গড়ের মাঠে সবুজ ঘাসের ওপরে, অজানা কোনো বন্ধুর অপেক্ষায়। আমি দেখেছি, আমি দেখেছি - ঝরা পাতারা তোমায় ছুঁয়ে- কানে কানে নিচু স্বরে কিছু বলে, বসন্তের সেই শেষতম দিনে। তোমার হলুদ পাটভাঙ্গা শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে- অপেক্ষায় থাকে কিছুক্ষণ, ভালো লাগার, ভালোবাসার টানে। আমি দেখেছি, আমি শুনেছি- গাছের নিচে চায়ের দোকানে  পুরাতনী টপ্পা গানের তালে তালে তোমার নুপুরহীন পায়ের নাচ। সন্ধ্যা রাতের সন্ধিক্ষনে - তোমার শরীরী অপেরায়, রূপালী জোছনার খেলা। আমি দেখেছি, আমি দেখেছি-  নিরলস দৈহিক আবেদনে- সহস্র চোখের আনাগোনা। সতত প্রবহমান গাড়ির হেডলাইটের আলোয় তোমার পলকহীন দুচোখের চঞ্চলতা। আমি দেখেছি, আমি দেখেছি- তুমি সেই অন্ধকারে আত্মমগ্ন আত্মস্থ। কি জানি কোন রহস্যময় আকর্ষণে গ্রহচ্যুত প্রাণীর মতো ছুটে যাই মনে মনে। এক পরিপূর্ণ আঁধারে তুমি যেন এক সহস্র চাঁদ। আমি দেখেছি আমি দেখেছি- আবেগ স্বপ্নের উদ্দাম রোদ্দুরমেখে - তোমার শাড়ির ভাঁজে, অন্ধকার লুকিয়ে কাঁদে- তোমার বক্ষমধ্যস্থলে। আমি দেখেছি। আমি দেখেছি - সেদিন চুপিচুপি অন্ধকারে।

কবি নয় জেলে

 কবি নয় জেলে দেবপ্রসাদ জানা তোমরা বলো কবি, তাই কি? আমরাতো জেলে,  মনের হাতে ফিকা জাল নিয়ে - খালবিল নদীনালা সমুদ্র ঘুরছি, মাছ ধরবো বলে। ছোট বড় মাঝারি কেউ আবার অনেক বড়, মাছ ধরি। শহরে গ্রামে মেলায় রাস্তা ঘাটে বাসে ট্রামে জন জঙ্গলে, বনে বাদাড়ে- আড্ডা খানায়,পানশালায় খুঁজি শব্দমৎস্য। খুঁজি কবিতার রসদ। কেউ ছোট,কেউ বড়,কেউ আবার অনেক বড়। সে গুলো সাজাই, সাফাই করি,  পশরা সাজিয়ে -কেউ কেউ মাছ ওয়ালার মতো - বাজারে বসে যাই - হাঁক দিয়ে বলি, এসো জ্যান্ত মাছ,সদ্য ধরেছি-স্বাদে গুণে ভরা- পুঁটি মাছের মতো দামি - মোরলা মাছের মতো টেষ্টি- শব্দগুণে ভরা সাহিত্যের বাজারে আমিই শ্রেষ্ঠ, ছন্দের জাদুতে আঁকা দুরন্ত ছবি, বলো কবি কত শব্দ করেছ চয়ন? কেউ আবার মজুত শব্দের ভাণ্ডারে -অভিধানে চোখের জাল ফেলে খুঁজে আনি - দন্তভঙ্গ শব্দের ইলিশ,পাবদা,চিতল মাছ। প্রতিদিনতো রুই কাতলা মাছের ঝোল রাঁধি। মাঝে মাঝে - দামি দামি মশলা মিশ্রণে - মনের রন্ধনশালায় রেঁধে ফেলি শব্দব্যঞ্জণ। টক ঝাল নমকিনের অনন্য বাহার। পরিবেশনে - কারো অনবদ্য, কারো মিষ্টি, কারো অসাধারণ লাগে। সেই দেখে সেই শুনে মনের আবেগে - নিত্য জাল হস্তে,ভিন্ন ভিন্ন জলাশয়ে...