কথামৃত

// গীতামৃত কথা//

           সর্বশাস্ত্রময়ী গীতামৃত কথা মানব জীবনের এক আবশ্যিক অভয়বাণী। এই বাণী শ্রী ভগবানের মুখনিঃসৃত এবং এর প্রতিটি শ্লোকের মধ্যে মানব জীবনের চলার পথে জ্ঞানের আলোক বিতরণ করে। আশ্চর্যের বিষয় হোল, বহু পূর্বে কুরুক্ষেত্রের মহাসমরের প্রাক্কালে অর্জুনের জড়তা, মূঢ়তা এবং অজ্ঞানতা দূরীকরণের জন্য এই বাণীর প্রয়োজন ঘটেছিল। বহু পূর্বের হলেও অদ্যাপি এর প্রয়োগে বহু সমস্যার সমাধান করা যায় এবং প্রভূত জ্ঞান অর্জন করা যায়। 

         আমি এই গীতার শ্লোক গুলির ভাবার্থ সহজ ও সরল ভাষায় প্রত্যেক অধ্যায়ের অর্ধেক অংশের ভাবার্থ সাধারণ পাঠকদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করে থাকি। আজ ষোড়শ অধ্যায়ের সমূহ অংশের ভাবার্থ নিবেদন করছি। আমার প্রোফাইলে টাইম লাইনে ( Tapan Das Adhikari ) খোঁজ নিলে পর্যায়ক্রমে নিবেদিত অংশ গুলো পড়ে নিতে পারবেন।

        উপস্থাপনায় -  তপন কুমার দাস অধিকারী।

#friendsfollowersViewers #text #StarSender #foryouシ #comments #follower #mahabharat#gita#gitagyan

                   ।।  ওঁ শ্রীপরমাত্মনে নমঃ।।

                            ষোড়শ অধ্যায় 

         শ্রী ভগবান বললেন - হে অর্জুন! যারা দৈব সম্পদ লক্ষ্য করে জন্মগ্রহণ করে, তারা, অভয়, শুদ্ধচিত্ত, আত্মজ্ঞান সম্পন্ন, ঐকান্তিক ভাব, দান, দম, যজ্ঞ, অধ্যবসায়, তপোব্রত, ঋজুতা, অহিংসা, সত্য, ক্রোধ হীন, ত্যাগ, শান্তি, দ্বন্দ্ব হীন, প্রাণীর প্রতি দয়া, নির্লোভ, মৃদুতা,হ্রী, স্থির, তেজযুক্ত, ক্ষমা, ধৃতি, শুচিতা, নির্বিরোধী, অভিমানহীনতা প্রভৃতি এই ছাব্বিশটি গুণ প্রাপ্ত হয়ে থাকে।

        যারা, আসুরিক সম্পদ লক্ষ্য করে জন্মগ্রহণ করে, তারা দম্ভ, দর্প, অভিমান, ক্রোধ, নিষ্ঠুরতা ও অজ্ঞানে অভিভূত হয়ে থাকে। দৈব সম্পদের সাহায্যে মোক্ষলাভ এবং আসুরিক সম্পদ বন্ধনের কারণ।

        হে অর্জুন! তুমি দৈব সম্পদ লক্ষ্য করে জন্মগ্রহণ করেছো, অত‌এব, তুমি অকারণে শোক করোনা।

        হে অর্জুন! এই ইহলোকে দৈব এবং অসুর এই দুই প্রকারের ভূত বা জীব সৃষ্ট হয়েছে। দৈব বিষয়ে বিশদভাবে বললাম, এখন আসুরিক বিষয় সম্বন্ধে বলছি, শোন।

        আসুরিক স্বভাবের লোকসকলের ধর্মে প্রবৃত্তি থাকা, অধর্মে নিবৃত্তি থাকার ব্যাপারে কোন বোধ বা জ্ঞান থাকেনা। এই সকল মানুষের কোন শুচিতা, আচার বিচার, সততা প্রভৃতি থাকেনা। এরা জগৎকে সত্য এবং ধর্মাধর্ম  ব্যবস্থা বর্জিত, ঈশ্বর শূন্য, স্ত্রী পুরুষ কামজনিত ভোগের মনোবাঞ্ছার আকর হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকে।

        এই সকল লোক অল্প বুদ্ধি সম্পন্ন, মলিন চিন্তার অধিকারী ও সংসারের অহিতকারী হয়ে জগতের ধ্বংসের নিমিত্তে সমুদ্ভব হয়। এরা দম্ভ, অভিমান, মদ, অপবিত্র কর্ম, অপূরণীয় কামনা অবলম্বন করে মোহগ্রস্ত হয়ে, সংকীর্ণ চিন্তায় বশবর্তী হয়ে, ক্ষুদ্র দেবতার আরাধনায় ব্রতী হয়। আমরণ অপরিণামদর্শী হয়ে অমূলক চিন্তার জালে আবদ্ধ হয়ে থাকে। কাম উপভোগ‌ই এরা পরম পুরুষার্থ বলে মনে করে। বহু দুরাশার মায়ায় আবদ্ধ হয়ে, কাম ক্রোধের বশবর্তী হয়ে অন্যায় করে প্রভূত অর্থ সঞ্চয় করে।

        নানা রকম উদ্ভট এবং অবাস্তব চিন্তায় নিমজ্জিত থেকে, অজ্ঞানে বিমোহিত হয়ে, চিত্তবিভ্রম ও মোহজালে আচ্ছন্ন থেকে এবং কামভোগে আসক্ত হয়ে অতি কুৎসিত নরকে পতিত হয়।

        এদের অহঙ্কার, বল, দর্প, কাম, ক্রোধ, অসূয়া, প্রভৃতিকে আশ্রয় করে, নিজেকে নিজেই সম্মানিত, অহঙ্কৃত, মান ও ধনমদে উন্মত্ত হয়ে, দম্ভ সহকারে অবিধির প্রক্রিয়ায় নামমাত্র যজ্ঞের অনুষ্ঠান করে।

        আমি সেই সমস্ত হিংসা পরায়ণ, ক্রূর স্বভাবের ও অশুভকারী নরাধমদের অসুর যোনিতে নিক্ষেপ করি। তারা অসুর যোনি প্রাপ্ত হয়ে আমাকে লাভ করতে পারে না।

        কাম, ক্রোধ ও লোভ এই তিনটি বিষয় হোল নরকের দ্বার। অত‌এব এই তিন বিষয় সদা পরিত্যাগ করবে। যে ব্যক্তি নরকের এই তিন দ্বার থেকে মুক্ত হয়েছেন, তিনি নিজের কল্যাণ আচরণ করেন এবং পরমগতি প্রাপ্ত হন। 

        যে ব্যক্তি শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগ করে স্বেচ্ছাচারে প্রবৃত্ত হয়, সে পরম গতিপ্রাপ্ত হয় না।

        এখানেই শেষ হয়েছে, ষোড়শ অধ্যায়। আমি এখন এই অধ্যায়ের দুটি শ্লোক উদ্ধৃত করে ভাবার্থ বর্ণনা করছি।

                        শ্রীমদ্ভগবদগীতা
 
                         ষোড়শ অধ্যায় 
   
             দৈবাসুর সম্পদ্ বিভাগ যোগ 

ত্রিবিধং নরকস্যেদং দ্বারং নাশনমাত্মনঃ ।
কাম ক্রোধস্তথা লোভস্তস্মাদেতত্রয়ং ত্যজেৎ ।।২১

কাম, ক্রোধ এবং লোভ  -  এই তিনটি হোল, নরকের দ্বার। এই তিনটি বিষয় জীবের অধোগতি লাভের কারণ। অত‌এব এই তিনটি বিষয়কে বিষের মত জ্ঞান করে ত্যাগ করা উচিৎ।

এতৈর্বিমুক্তঃ কৌন্তেয় তমৈদ্বারৈস্ত্রিভির্নরঃ।
আচরত্যাত্মনঃ শ্রয়োস্ততো যাতি পরাং গতিম্ ।। ২২

হে কৌন্তেয়, এই তিনটি দ্বার হতে মুক্ত হলে, মানুষ ঈশ্বর আরাধনা করে নিজের কল্যাণ সাধনে সমর্থ হয় এবং সেই শ্রেয়ঃ অনুষ্ঠানের সাহায্যে, ইহলোকের সুখভোগ ও মনুষ্য জন্মের সার্থকতা লাভ করে শ্রেষ্ঠ গতি বা মোক্ষ লাভ করে।

        আজকে এই পর্যন্তই থাক। দেখতে দেখতে গীতার বাণী নিবেদন করা প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে আসছি। আপনারা সকলে পড়ে দেখবেন। ভালো থাকবেন। আমার তরফ থেকে সকলকে শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই। শুভ রাত্রি।

                           ---------------

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ