রবীন্দ্রনাথ
#নোবেল পাওয়ার পর শহরের কত জ্ঞানীগুণী মানুষ মিলে #রবীন্দ্রনাথকে সম্মান জানাতে বিশেষ ট্রেনে করে শান্তিনিকেতন রওনা হলেন।
অথচ তাঁরাই কদিন আগেও নিন্দায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন কবিকে।
#শান্তিনিকেতনে আমবাগানে পদ্মাসন তৈরি হল কবিকে বসাবার জন্য। #জগদীশচন্দ্র বসুকে করা হল সভাপতি।
রবীন্দ্রনাথ সেই সভায় বলে বসলেন, এই দেশ থেকে তিনি যে অপমান অবজ্ঞা পেয়েছেন তাই তাঁর যথার্থ প্রাপ্য। আজ বিদেশের সম্মান আসায় তাঁকে নিয়ে যাঁরা আনন্দ করছেন, সম্মান জানাচ্ছেন সেটিই বরং মিথ্যা। এর চেয়ে ওই অবজ্ঞা ও অসম্মানই সত্য। কারণ, এই সমাদরের বন্যা একদিন চলে যাবে। তখন কেবল শুকনো খড়কুটো পড়ে থাকবে।
সত্য সত্যই, আর মিথ্যা মিথ্যাই।
চিনির রসে ডোবানো মিথ্যা মিথ্যাই থেকে যায়। নিমের রসে ডোবানো সত্য সত্যই থাকে।
****
মানুষের পেটে খাবার আর মনে শিক্ষার আলো থাকলে সে মানুষ কখনও যুদ্ধ করে না, সন্ত্রাসের খেলায় মাতে না, অন্যায়ের দিকে আঙুল তুলে কথা বলে।
সঠিক শিক্ষা, সংস্কৃতির চর্চা, স্বনির্ভরতা মানুষকে সবরকম হীন চিন্তা থেকে সরাতে পারে।
রবীন্দ্রনাথ এই আত্মশক্তির কথাই বলেছেন, স্বনির্ভরতার কথা বলে গেছেন, এ সবই তাঁর দেখানো পথ।
যুদ্ধ শত্রু বাড়ায়, কমাতে পারে না। একটা যুদ্ধ যুযুধানদের অবস্থান চিনিয়ে দেয়, মনের ভিতরের অসুরের ঘুম ভাঙিয়ে জাগিয়ে তোলে। আর জঙ্গিপনার চাষ যে মাথার মধ্যে হয় তার সমূলে বিনাশ তাকে শরীরে মেরে ফেলে হয়না। বরং আরও বাড়ে। কিছুদিনের জন্যে মনে হয় সব শান্ত হল। কিন্তু ক্রোধের উপশম হল কী? ক্রোধ রক্তবীজের মত সংক্রমিত হয়ে প্রতিহিংসা প্রতিশোধের আগুন জ্বালে।
তাই বাইরের মারের থেকে ভিতর থেকে বদল করাই একমাত্র পথ ছিল।
ছিল....
প্রশ্ন হল, কে করবে?
যাদের হাতে সমাজের ভার তারাই তো নিজের নিজের স্বার্থে মানুষকে খেপিয়ে তুলে লেলিয়ে দিচ্ছে একে অপরের বিরুদ্ধে আর নিজেরা ফায়দা লুটছে। রবীন্দ্রনাথের কথা সেখানে বিষবৎ। ওসব শুনলেও সমস্যা।
আর আমরা কিছু মানুষ ওদের সুতোয় নাচি, আর কেউ কেউ সব বুঝেও হয় চুপ করে মানিয়ে নিই অথবা পালিয়ে পালিয়ে ঘুরে বেড়াই।
রবীন্দ্রনাথ আমাদের কারও মধ্যেই নেই। ওই সুতোয় নাচা কিম্বা মেনে আর মানিয়ে নেওয়া আর পালিয়ে বাঁচা - কোনোটাই তাঁর পথ নয়।
আমাদের সত্যের চেয়ে মিথ্যা, সহজ আনন্দের চেয়ে সহজ লাভের দিকে ঝোঁক বেশি হল। আমরা ক্রমশঃ ওঁর থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।
আর যত দূরে সরে যাচ্ছি, নিজেরা হেরে যাচ্ছি, তাঁকেও হারিয়ে দিচ্ছি রোজ, অপমান করছি রোজ।
ছবির গলায় মালা দিয়ে কয়েকটা গান গেয়ে, মুখস্ত কবিতা বলে ভাবছি, বেশ পুজো দিলাম।
কত জন্মের পুণ্যে আমরা একজন রবীন্দ্রনাথ পেয়েছিলাম।
কত জন্মের অভিশাপে আমরা বিন্দুমাত্র বুঝতেই পারলাম না, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কী করতে হয়, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কী করবো!...
মৃণালিনী দেবী যখন মারা যান তখন কবির বয়স ৪১। রেখে যান দুই পুত্র ও তিন কন্যাকে। রথীন্দ্রনাথ, শমীন্দ্রনাথ, বেলা ( মাধুরিলতা ), রেণুকা( রানী) ও মীরা( অতশী)।কে।
স্ত্রীর পর মারা গেলেন রেণুকা। তারপর ছোটছেলে শমীর মৃত্যু হয় কলেরায়।শমীর মৃত্যুর পর কবি লেখেন " "আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে " কবির মনে হয়েছে তাঁর,এই জ্যোৎস্নায় বনে গেলে হবে না, কারণ শমীর তার বাবার কথা মনে পড়তে পারে, সে হয়তো ফিরে আসতে পারে, তাই কবি লেখেন, " আমাকে যে জাগতে হবে কী জানি সে আসবে কবে "।
রেণুকার বরকে কবি বিলেতে পাঠিয়েছিলেন ডাক্তারি পড়তে। তিনি না পড়েই ফেরত এলেন। বড় মেয়ের বরকেও তিনি বিলে তে পাঠিয়েছিলেন ব্যারি স্টারি পড়তে, তিনিও না পরে ফেরত এলেন। ছোটো মেয়ের বরকেও তিনি বিলে তে পাঠিয়েছিলেন কৃষি বিদ্যার উপর গবেষণা করার জন্য। লোভী এই জামাই বার বার কবির কাছে টাকা চেয়ে পাঠাতেন।
সবচাইতে কষ্টের মৃত্যু হয় বড় মেয়ে বেলার। বড় জামাই বিলেত থেকে ফেরার পর ছোটো জামাইয়ের সাথে ঝগড়া করে কবির বাড়ি থেকে চলে যান। বেলা অসুস্থ হয়ে পড়ে। কবি রোজ গাড়ি করে মেয়েকে দেখতে যেতেন। জামাই যত রকম অপমান করা যায় কবিকে করতেন। কবির সামনে টেবিলে পা তুলে সিগারেট খেতেন। তবু কবি প্রতিদিন মেয়েকে দেখতে যেতেন একদিন কবি মেয়েকে দেখতে যাচ্ছেন, মাঝপথে শুনলেন বেলা মারা গেছে। তিনি আর মেয়েকে শেষদেখা দেখতে গেলেন না। মাঝপথ থেকে বাড়ি চলে এলেন।হৈমন্তী র গল্প যেন কবির মেয়ের ই গল্প। শোক কতটা গভীর হলে তাঁর কলম
দিয়ে বের হল।
," আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু বিরহ দহন লাগে।
তবুও শান্তি,তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে। "
মাত্র সাতান্ন বছর বয়সের মধ্যে তিনি তিন তিনটি সন্তানের মৃত্যুশোক পান। তাঁর ৭১ বছর বয়েসে তাঁর একমাত্র দৌহিত্র ছোটো মেয়ে মীরার একমাত্র পুত্র নিতীন্দ্রনাথ ঠাকুর গঙ্গোপাধ্যায় ( নীতু) এর মৃত্যু হয়।
নানান আঘাত যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে কাটিয়ে শেষ জীবনে কবি উপলব্ধি করেন যে জীবনটা কঠিন বাস্তব। তিনি তার শেষ কবিতা রূপনারানের কূলে কবিতায় লিখে গেছেন, জীবনটা স্বপ্ন নয়। মৃত্যু ই জীবনের একমাত্র সত্য যার মধ্যে দিয়ে জীবনের সব দেনা শোধ হয়ে যায়। রণ রক্ত সফলতা ময় এই জগতের আঘাতে সংঘাতে, রক্তের অক্ষরে ও বেদনায় নিজেকে আবিষ্কার করেছেন কবি। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর এই কবিতা টি প্রকাশিত হয়। এটি তাঁর 'শেষলেখা' কাব্যগ্রন্থে স্থান পায়। সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ
Comments
Post a Comment