রবীন্দ্রনাথ
🔥পৃথিবীর বিস্ময়:- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর🔥
🌿রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত উক্তি,
জীবনবোধে আজও যা অনুপ্রাণিত করে।🌿
🌿রবীন্দ্র-দর্শন যে জীবনবোধের কতবড় খনি,
তা যিনি রবীন্দ্রনাথকে আত্মস্থ করতে
পেরেছেন , তিনিই বুঝেছেন। বাঙালি ঘরে
শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে পরিবারের
সদস্যদের সঙ্গে তার পরিচয় হয় ,সেভাবেই
তাকে চেনানো হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। তাই
নতুন করে কেবল ২৫ শে বৈশাখ উপলক্ষে
বাঙালির সঙ্গে রবীন্দ্র চেতনার পরিচিতি
ঘটানোর কিছু থাকে না। তবে 'রবি'মাসের এই
দিনটি বাঙালিকে আজও উস্কে দেয় 'রবি
ভাবনায়'।
🌿তিনি বাঙালির কাছে এক মহীরূহের মতো।
যাঁর দর্শনের ছায়া মেলে ধরেছে তাঁর উপন্যাস,
গান কবিতাগুলি। আর সেই সাহিত্যই জীবনের
বিভিন্ন পদক্ষেপে উজ্জিবীত করে চলেছে একটা
জাতিকে। সুখ হোক বা দুঃখ, অবসাদ বা
সামাজিক অবক্ষয় , প্রেম বা বিরহ সমস্ত ক্ষেত্রে
জীবনী শক্তিতে উদ্বুদ্ধ করে তাঁর লেখা। শুধুমাত্র
একটি বিশেষ দিন নয়, বাঙালি রবীন্দ্রনাথকে
রোজ উদযাপন করে , তাঁর লেখা কিছু বিশেষ
লাইন।
🌿ধর্ম নিয়ে তাঁর লেখা.....
ধর্মের গোঁড়ামি সম্পর্কে খুব সহজ ভাবে তিনি
একটি দর্শক তুলে ধরেছেন এক বিখ্যাত
লাইনের মাধ্যমে। 'ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে
ধরে
অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে'।
🌿ন্যায় অন্যায় বোধ....
তাঁর সাহিত্য় বার বার তুলে ধরেছে ন্যায় আর
অন্যায়কে ঘিরে নানা মূল্যবোধ। এ নিয়ে তাঁর
বিখ্যাত একটি লাইন -'অন্যায় যে করে আর
অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম
দহে।'
🌿কীভাবে মানুষ চিনবেন....
মানুষ চেনা ভীষণ কঠিন! কিন্তু সেই কঠিন
কাজকেও সহজ করেছেন রবীন্দ্র দর্শন। 'এ
জগতে, হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি
ভূরি - রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন
চুরি।'
🌿অহংবোধ বড় ভয়ানক!
অহংকারে অন্ধ ব্যক্তি কখনওই সোজা পথ
দেখতে পান না। একথা শাস্ত্র বলেছে। আর
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, 'যারে তুমি নীচে ফেল সে
তোমারে বাঁধিবে যে নীচে, পশ্চাতে রেখেছ যারে
সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে
🌿প্রেমের মোহ....
প্রেম আর রবীন্দ্র চেতনার মিশেলে বাংলা তথা
ভারতীয় সাহিত্যে উঠে এসেছে অসম্ভব সুন্দর
কিছু ভাবনা। তার মধ্যে একটি '...মোহ মেঘে
তোমারে দেখিতে দেয় না'। গানের শুরু 'কেন
মেঘ আসে হৃদয় আকাশে..'লাইনটি দিয়ে।
শ্রদ্ধা-ভালোবাসার মোহে অন্ধ ব্যক্তির কাছে
পছন্দের ব্যক্তিত্বটি সামনে থাকলেও ,তাঁকে
ঘিরে থাকে মোহ-দৃষ্টি। কোনও কিছুর প্রতিই
মোহের সূচনা এই ভাবনা দিয়েই হয়ে থাকে।
আর সেই বিষয়কে যথোপোযুক্ত সঠিক শব্দ
দিয়ে তুলে ধরেছেন রবি ঠাকুর।
🌿প্রেম-সোহাগ প্রসঙ্গে উক্তি.....
'সোহাগের সঙ্গে রাগ না মিশিলে ভালবাসার
স্বাদ থাকেনা -তরকারীতে লঙ্কামরিচের মত।'
রবীন্দ্রনাথের এই উক্তিই উস্কে দেয় অভিমান
-প্রেমের চক্রাকার সম্পর্ককে।
🌿প্রেমে পড়ার মুহুর্ত....
বাঙালির প্রেম মানেই সেই পর্ব কোথাও না
কোথাও মিশে থাকবেই রবীন্দ্র-সাহিত্য। বহু
দাম্পত্য প্রেমের সোহাগের কথোপোকথোনেই
একটি লাইন বার বার উঠে আসে 'প্রহরশেষের
আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস, তোমার চোখে
দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ"
🌿বিচক্ষণতা প্রসঙ্গে রবি ঠাকুর..
'রাশিয়ার চিঠি' প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলছেন 'যার
সঙ্গে মানুষের লোভের সম্বন্ধ তার কাছ থেকে
মানুষ প্রয়োজন উদ্ধার করে, কিন্তু কখনো তাকে
সম্মান করে না ।' ফলে প্রিয়জন আর
প্রয়োজনের মধ্যে যে সুক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে তাতে বিশেষভাবে নজর রাখা সকলের কর্তব্য।
🌿'সত্যরে লও সহজে'....
রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'বোঝাপড়া' কবিতার মাধ্যমে
এক বাস্তবিক সত্যকে তুলে ধরেছেন। জীবনে
পরিস্থিতি যেমনই হোক, সত্যকে যে সহজে
গ্রহণ করে ফেলে , তাঁকে হারিয়ে দেওয়া কঠিন।
তাই রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ,'মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক/সত্যেরে লও সহজে….
🔥#দুই_কবির_সম্পর্ক.............💕
রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে বেশ সম্মোহন করতেন এবং দুই কবির মাঝে বেশ ভাব ছিল । সেটার প্রতিফলন দেখা যায় যখন ধুমকেতু পত্রিকা বের করেন নজরুল তখন । পত্রিকার শুরুতে কবিগুরুর বাণী থাকতো । যেটি ছিল নজরুলের পত্রিকার প্রতি আশীর্বাদ স্বরুপ । বস্তুত ধুমকেতু তখনকার চাওয়া পাওয়া কে ধারন করেই প্রকাশিত হত । কবিগুরু লিখেছেন ধুমকেতুর জন্য –
কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু।
আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।
তাছাড়া আনন্দময়ীর আগমনে কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার পরে নজরুল কে আটক করে ১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলে কবিগুরু নজরুল কে বসন্ত গীতিনাট্য গ্রন্থটি উৎসর্গ করেন। এতে নজরুল খুবই উৎফুল্ল হয়েছিলেন এবং রচনা করেন আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে
বস্তুত কবিগুরুর সাথে নজরুলের সম্পর্ক ছিল শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার, রবীন্দ্রনাথ কে পাঠানো নজরুলের তীর্থ পথিক কাব্যে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় এটা –
তুমি স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, বিস্ময়ের বিস্ময়
তব গুন গানে ভাষা সুর যেন সব হয়ে যায় লয়
তুমি স্মরিয়াছ ভক্তের তব, এই গৌরবখানি
রাখিব কোথায় ভেবে নাহি পাই, আনন্দ মুক বানী ।
কাব্য লোকের বাণী বিতানের আমি কেও নহি আর
বিদায়ের পথে তুমি দিলে তবু কেন এ আশিস হার
প্রাথনা মোর যদি আবার জন্মি এ ধরণীতে
আসি যেন গাহন করিতে তোমার কাব্য-গীতে ।
কারাগারে কবির অনশন ভাঙ্গানোর জন্য রবীন্দ্রনাথ নজরুল কে পত্র লিখেন,
পত্রের উত্তরে নজরুল লিখেছেন- আদর্শবাদীকে আদর্শ ত্যাগ করতে বললে তাকে হত্যা করার ই শামিল । অনশনে যদি কাজীর মৃত্যুও ঘটে তাহলে ও তার অন্তরে সত্য আদর্শ চিরদিন মহিমাময় হয়ে থাকবে ।
তাছাড়া নজরুলের কৈশোর রবি ও অশ্রু পুষ্পাঞ্জলি কবিতা দুইটি কবিগুরুকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে লেখা । গোরা ছবিতে রবীন্দ্র সঙ্গীত আপত্তি তুললে নজরুল কবিগুরুর কাছে গিয়েছিলেন, কবিগুরু তাকে বললেন আমার গান তোমার চাইতে কি ওরা ভাল বুঝবে … রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুতে শোকাবহ ভারতবর্ষকে সান্ত্বনা দিতে তিনি রচনা করেছেন –
“ঘুমাইতে দাও, শান্ত রবিরে জাগায়োনা ।
সারা জীবন যে আলো দিল ঢেকে তার ঘুম ভাঙ্গায়োনা ।
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নজরুল ইসলামের আন্তরিক সম্পর্ক অটুট থাকুক এটা এক শ্রেনীর হিন্দু-মুসলমানরা চাননি। দু’জনের সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরাবার জন্য দু’পক্ষ থেকেই নানা ধরনের সমালোচনা, আক্রমণ ও ষড়যন্ত্র অবিরামভাবে চলে আসছিল।
#১৯২৪ সনে রবীন্দ্রনাথ চীন সফরে যান। চীনের সাথে ভারত উপমহাদেশের ঐতিহাসিক ভাবেই ভালো সম্পর্ক ছিল। বিশ্বকবির ঋজু দেহ, শ্বেত শ্বশ্রু আর ঋষি-সম ব্যক্তিত্বে চীনারা খুব আকৃষ্ট হয়েছিল। চীন বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে যাওয়া কবিকে নিয়ে ওরা রীতিমত আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছিলেন। সর্বসাধারন চীনাদের দাবী ছিল রবীন্দ্রনাথকে যেন চীন-সম্রাটের রাজপ্রাসাদেই রাখার ব্যবস্থা করা হয়। তৎকালীন চীনের সম্রাট সানন্দে রাজী হয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথ রাজপ্রাসাদেই থেকেছিলেন।
উনি চীনে থাকাকালীন অবস্থায় উনার জন্মদিন চলে আসায় বেশ ঘটা করে উনার জন্মদিন পালনের ব্যবস্থা করা হয়।
চীন দেশীয় রীতিতেই কবিগুরুর জন্মদিন উদযাপনের আয়োজন হয়। সারাদেশ থেকে আসে শতশত উপহার। নীল পায়জামা, কমলা রঙের আলখাল্লা, আর মাথায় বেগুনী রঙের টুপি দিয়ে সাজানো হয় কবিগুরুকে। সবার সামনে দাড়িয়ে কবি বক্তৃতা দিয়েছিলেন আবেগভরা কণ্ঠে।
চীনের মানুষও তাদের প্রাণের ভাষায় শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বরেণ্য কবির জন্ম-উৎসবে। নিজস্ব ভাষায় কবির নতুন নামকরণ করে কবিকে আপন করে নিয়েছিল ওরা। উনার নাম দিয়েছিল ওরা - “চু-চেন্-তাং” ..
কথার অর্থ, “বজ্রের ন্যায় পরাক্রান্ত ভারত-সূর্য”।
Comments
Post a Comment