পুতি মাংসজাতক
পুতিমাংস জাতক
দেবপ্রসাদ জানা
হিমালয়ের পাদদেশে
কোন একটি গ্রামে।
ভেড়ার দলে রানি সে
মেড়মাতা নামে।
চকচকে ভেড়া ছাগল
দেখতে অনবদ্য।
সবুজসবুজ গাছপালা
সব তাদের খাদ্য।
কোন একদিন সেস্থানে
বিপদ এলো তেড়ে।
তাই না দেখে ভেড়ার দল
গেল বাগান ছেড়ে।
দুষ্টু শিয়াল,শিয়ালিনী
ক্ষুণ্ণ হলো তাতে।
একটাও যে পায়নি তারা
এমন মিঠে রাতে।
হদ্দবোকা ভেড়ার দল
ছুটল রানির কাছে।
রক্ষা করুন মেড়মাতা
শিরে বিপদ নাচে।
বলল রানি মেড়মাতা
এত কিসের ভয়?
একদিন তো যাবে প্রাণ
কেউতো অমর নয়।
জঙ্গলে থাকি বিপদ জেনে
পালাতে যদি হবে।
কেমন করে কাটবে দিন
কোথা কোথা যাবে?
খাদ্যখাদক শৃঙ্খলে রই
তারা খাবে ঠিক।
ভয়ে যারা ঘর ছাড়েরে
তাদের শতধিক।
ভয় পাস না দেখছি আমি
তাদের কাছে গিয়ে।
কেমন সে মাংসাশী জীব
যাবে মোদের নিয়ে।
বনের রানি তোদের রানি
আমি একা যাবো।
বলতো এবার কোথা গেলে
তাদের খুঁজে পাবো।
উত্তরের ওই জঙ্গলে যাও
পিপুল গাছের ফাঁকে।
বড় সেই গর্তের ভিতর
লুকিয়ে তারা থাকে।
একা একা যাবেন কেন
সকলে যাই চলো।
দুষ্টু শিয়াল বড়ই চালাক
ছাগল খেয়ে নিলো।
সেই ভয়েতে পালাই সবে
পিপুল তলা হতে।
চোখ দুটো তার জ্বলে দেখি
গভীর কালো রাতে।
সঙ্গে করে বেরোয় দুজন
শিয়ালিনী বউ।
বাচ্চাকাচ্চা আরো আছে
দেখেনি তাদের কেউ।
ঠিক আছে ওই দিকে আজ
যেও না কেউ তবে।
আমিই যাবো একা সেথায়
যা হবার তা হবে।
প্রাণ গেলে আমারই যাক
তোমরা থাকো সুখে।
রানি আমি ভেড়ার দলে
সব গেলাম রেখে।
মরার আগে মরিস কেন?
বিপদ আসবে ধেয়ে।
তাদের আমি বুঝিয়ে সুঝিয়ে
শান্ত করব গিয়ে।
সেথা গিয়ে বলল তাদের।
ভেড়ার দলের রানি।
ওরে ভাই শিয়াল দাদা
বোন শিয়ালিনী।
কিগো বোন শিয়ালিনী
কেমন আছো হেথা।
কষ্ট কিছু নাইতো বনে
বলবে নাকি কথা।
বন্ধু আমি তোমার হবো
গল্প গুজব করে।
একা একা মনোকষ্টে
থাকতে পারি নারে।
যুক্তি করে শিয়াল ভায়া
শিয়ালিনীর পাশে।
তোমার আমার পূর্ণজীবন
কাটবে অনায়াসে।
এত যে ভেড়া ছাগলছানা
পাইনি কোথাও গেলে।
একটা করে দুদিন যাবে
মোটাসোটা হলে।
একা একা ঘাস খেতে
গেল গভীর বনে।
শিয়ালিনীর দেখা হলো
মেড়মাতার সনে।
একটু একটু ভাব জমালো
ধূর্ত শিয়ালিনী।
সুযোগ পেলে খাবে তারে
শিয়াল ঘরণী।
এত কিছু করেও তবু
সুযোগ এলো না।
যুক্তি করে শিয়াল গিন্নী
করল ছলনা।
মন খারাপের ভান করে সে
বলল ভেড়ার কাছে।
গত রাতে কর্তাটি তার
পরলোকে গেছে।
সৎকার তার কেমনে হবে
কহিল বারবার।
এই বনেতে চেনা জানা
কে আর আছে তার।
চলো বন্ধু তুমিই চলো
করো উপকার।
দুজন মিলে শেষ যাত্রায়
করি আরপার।
দুষ্টু শিয়াল মড়ার মতো
পড়েছিল বনে।
আড় চোখে মেড়মাতার
দেখল সবখানে।
শিয়াল যেন নড়ল একটু
বুঝতে পেরে শেষে।
শিয়ালিনীর ষড়যন্ত্র
চোখের ওপর ভাসে।
মেড়মাতা বলল তারে
শিয়ালিনী শোন।
তুই যে আমার প্রাণের প্রিয়
আমার ছোট বোন।
আমরা দুজন পারব নারে
এই সকল কাজ।
সন্ধ্যাবেলায় আসবে না কেউ
নাই বা হলো আজ।
না না বন্ধু কেমন করে হয়
করতে হবে এখন।
নইলে সময় পার হয়ে যায়
মানছে না যে মন।
যেতে যেতে বনের মধ্যে
নড়লো যেন কি।
শিয়াল যেন উঠল নড়ে
গাইল ভৈরবী।
ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে
আড় চোখে দেখে।দ
বলল ভেড়া শোনো বন্ধু
গন্ধ পেলাম নাকে।
চলো বন্ধু আজ ফিরে যাই
আসব আগামীকাল।
আমার দুজন বন্ধু আছে
এই বনেতেই থাকে।
তারাই এসে শিয়ালটাকে
তুলবে না হয় দেখে।
কুকুর দুটোর ভীষণ শক্তি
দাঁতে ভীষণ জোর।
তারাই এসে দোখলাপনা
ছাড়িয়ে দেবে তোর।
তুই বুঝিস,আমরা বোকা
এলেবেলে ভেড়া।
টুপাটপ খাবিরে তুলে
এই রকম মেড়া।
ডেকেছি আমি সেই দুজনে
আসবে কুকুর দুটি।
সেই ভয়েতে শিয়ালেরা
পালাল গুটি গুটি।
বোধিসত্ব সেই জন্মে
মেড়মাতা হয়।
জন্মে ছিল ভেড়া দলে
জানিও নিশ্চয়।
বুদ্ধি ও সাহস বলে
বিপদ পালায়।
কোনদিন কান দিতে নেই
দুষ্টের ছলনায়।
নতুন নতুন কথ্য গল্প
নতুন রকম স্বাদ।
ছড়া দিয়ে বলছে শোনো
জানা দেবপ্রসাদ।
Comments
Post a Comment