স্বর্ণ হংস জাতক
স্বর্ণহংস জাতক
দেবপ্রসাদ জানা
বারাণসীর একটি গ্রামে
গরীব পরিবারে।
অতি কষ্টে দিন কাটে
অর্ধ অনাহারে।
তিন কন্যা ছিল ভারি
অপূর্ব সুন্দরী।
রূপ যেন ফেটে পড়ে
স্বর্গের অপ্সরী।
দৈন্যদশায় অনাহারে
রুক্ষশুষ্ক কাঠ।
ফুলসম তিন কন্যার
কপাল ভরাট।
একদিন সন্ধ্যা বেলা
হলো সর্বনাশ।
অনাহার রোগে পিতার
হলো স্বর্গবাস।
দিন আনা দিন খাওয়া
পরিবার ছিল।
অকারণেই ভগবান,
তাও কেড়ে নিল।
ঘরও গেল দোরও গেল
মহাজনের কোপে।
বহু কষ্টে দিন কাটে
কালের উত্তাপে।
চারজনা ঠিক করে
মরবে জলে ডুবে।
সেই মতো জলাধারে
যেই ডুব দেবে।
পুকুরের জলে বাস
করে রাজহংস।
দেখে ভারি দয়া হলো
জিজ্ঞাসিল বংস।
কুলিন পরিবারে জন্ম
তিনকন্যা কহে।
পিতা মোর মহৎ পুরুষ
অসৎ সে নহে।
অনায়াসে অকালে
সব কেড়ে নিল।
ভগবান নাই সোনা
মাতায় কহিল।
মন দিয়ে রাজহংস
সবই শুনিল।
পূর্ব জন্মের কথা তার
স্মরণে আসিল।
সেই ছিল তিন কন্যার
তখনের পিতা।
দেখে বড় কষ্ট হলো
হায়রে বিধাতা।
এমন অবস্থা এদের
সহিবে কেমনে?
যাও কন্যা ফিরে যাও
তোমরা চারজনে।
কাল প্রভাতেই যাবো
তোমাদের ঘরে।
সব কষ্ট ধুয়ে যাবে
নীরবে অচিরে।
তিনকন্যা বোধিসত্বে
প্রণাম করিল।
মনোকষ্ট দূরে গেল
ঘরে ফিরিল।
ভোর হতে অপেক্ষা
করে চারজন।
জ্যোতি প্রকাশ এক
আর্বিভুত হন।
সাদাহাঁস সোনার হল
কহিলেন হেসে।
একটি পালক খুলে
নাও ভালোবেসে।
এইভাবে পরিবার
স্বাভাবিক হলো।
প্রাক্তন পিতার স্নেহে।
স্বর্গ ফিরে পেলো।
মায়ায় মমতায় ঘিরে
ফেলল সকলে।
অকিঞ্চন দিনটাও
সব গেল চলে।
একদিন মাতা কহে
আর কতদিন?
একটি করে পালকে
চলে কদ্দিন?
কোনদিন যদি ভুলে
যান বোধিসত্ব।
কি হবে ভবিষ্যতে
ফের হবো ভৃত্য।
একদিন বন্দী করে
রেখে দেবো তাকে।
স্বর্ণ কিছু মজুত রবে
আপন সিন্দুকে।
বহু কষ্ট পেয়েছি সব
তাই ভয় করে।
পরের দিন হংসরাজে
ঘরে বন্দী করে।
সাথে সাথে স্বর্ণ পালক
সাধারণ হলো।
সেই মাতার মনে স্বাদ
পূর্ণ না হলো।
যা ছিল তাও গেল
অকারণে নয়।
বোধিসত্ব ভূলে গেলেন
পূর্ব জন্ম হয়।
অতি লোভ ভালো নয়
জ্ঞানী গুণি কন।
ভালো জনের ভালো হয়
কষ্টে দুষ্টজন।
নতুন নতুন কথ্য গল্প
নতুন রকম স্বাদ।
ছড়া দিয়ে বলছে শোনো
জানা দেবপ্রসাদ।
Comments
Post a Comment