জাতক (গুণ জাতক)
জাতক
দেবপ্রসাদ জানা
রূপকথা নয়,জ্ঞানেরকথা
রূপসী রূপকথা।
বারাণসীর রাজ্য সেটা
সেথায় গল্পগাথা।
রাজা ছিলেন ব্রহ্মদত্ত
জাতকে বিশ্বাসী।
পশুপাখি গাছপালা
গল্পে তারাই বেশী।
মানবতার গল্প কথা
সহজসরল ভাষা।
ছড়ায় লেখা গল্পগাথা,
মিষ্টি মধু মেশা।
ভারি মিষ্টি বুদ্ধি বাড়ে
ছোট্ট কচিকাচার।
সবুজবনের পশুপাখি
এই গল্পের আধার।
নতুন নতুন কথ্য গল্প
নতুন রকম স্বাদ।
ছড়া দিয়ে বলছে শোনো
জানা দেবপ্রসাদ।
১
গুণ জাতক
সিংহীর আজ ভীষণ রাগ
কি জানি কি হলো?
বাচ্চায় বাচ্চায় মারামারি
সিংহী রেগে গেলো।
সিংহশাবক নয় তারা
শিয়ালের ছানা।
ভেঙচি কেটে পালিয়েছে
সিংহী দিল হানা।
বনের রাজার বাচ্চা তারা
রাজপুত্র যেমন।
তারে কিনা ভেঙচি কাটে
শিয়ালছানা এমন।
রেগেমেগে সিংহী রানি
বললে শিয়ালটারে।
ভেঙচি কেন কাটল বাচ্চা
বলতে হবে তারে।
মাফ করবেন মহারানী
বাচ্চায় বাচ্চায় খেলা।
বোঝেনি যে বাচ্চা শিয়াল
শিশু ভোলাভালা।
বাচ্চাগুলো বড়ই অবুজ
কানমুলে দিন ডেকে।
ভালো একটা পাখি ধরেছি
দেখবেন নাকি চেখে?
সিংহ মশাই হরিণ মেরে
দিয়েছিলেন বলে।
বেশ কটা দিন আরাম করে
খেয়েছি রাজার হালে।
এমনতো নয় শত্রু মোরা
করব মারামারি,
দুই ঘরেতে আনাগোনা
বন্ধু মনে করি।
শিকার করে রাজামশাই
দিছেন তাজা মাংস।
বনের রাজার অনুগত
এই বনেরই অংশ।
এত কথার পরেও সিংহী।
শান্ত হয়নি মোটে।
বাচ্চাকাচ্চা সঙ্গে করে
নিয়ে গেলেন ডাঁটে।
বলে গেলেন মুখের ওপর
মনে থাকে না কেন?
ভেঁঙচি কেটে অপমান -
করা হয় না যেন।
রাজার ঘরে রাজপুত্র
তার যে অপমান !
ছোটখাটো পুশুরা সব
সাহস কোথা পান?
হম্বিতম্বি করে সিংহী
গেল আপন ঘরে।
শিয়ালছানা শিয়ালিনী
রাজার ভয়ে মরে।
সিংহীরানীর কথাশুনে
ভয়ে শিয়ালিনী।
কাঁপতে কাঁপতে বলল সে
কি হবে কি জানি?
এত আদর প্রিয় বন্ধুর
কোথা গেল আরে?
বুনো মহিষ শিকার করে
দিত প্রথম তারে।
আর রবে না এই বনেতে
এই করল পণ।
আজ দিল চোখ রাঙানি
থাবায় কি বারণ?
শিয়াল এলো সন্ধ্যাবেলা
নিত্য শিকার সেরে।
সিংহমশাই দিয়েছে আজ
আস্ত হরিণ মেরে।
মজা করে খাবে হরিণ
ঘরের সবাই মিলে।
শিয়ালিনীর মুখ দেখে
ভুল করেছে চালে।
বলল শিয়াল রাগ কেন
পুষে রেখেছ মনে।
কে দিয়েছে এত ব্যথা
এমন সরল প্রাণে।
শিয়ালগন্নী বলল তারে
রইব না এই বনে।
বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে থাকি
তুমি থাকো না সনে।
আজ দিয়েছে মুখঝাম্পটা
কাল মারবে থাবা।
বাঘের সঙ্গে বাস করে
মরব নাকি বাবা।
চলো আমরা চলে যাই
অন্য কোনো বনে।
খাই না খাই থাকব সুখে
শান্তি থাকবে মনে।
বলল শিয়াল থামো থামো
যাবো অন্য কোথা।
রাজা মশাই আসুক বনে
আগে বলব কথা।
যাবার আগে শিয়াল গেল
সিংহ রাজার ঘরে।
শিয়ালিনী বলল তারে
একটুও না ডরে।
এতদিনের বন্ধু তারা
ভালো ছিল বনে।
বাচ্চারা সব ঝগড়া করে
হিংসা ভরল মনে।
চোখ রাঙিয়ে সিংহীরানি
বুঝিয়ে দিল এই।
সমান সমান না হলে
বন্ধু করতে নেই।
শুনে সিংহ বলল আরে
এতো মন্দ নয়?
রাজা বলে এমন কোনো
আলাদা কিছু হয়?
বনের মধ্যে আমরা সবাই
মিলে মিশে থাকব।
শিয়ালভায়ার জন্য আমি
কি আর বেশি বলব।
বিপদে সে পাশে ছিল
প্রাণের বাঁচি আমি।
এমন বন্ধু কোথায় পাবো
তার মতো দামি।
কেউ যাবে না অন্য কোথাও
এই খানেতেই থাকো।
বাচ্চার সব ঝগড়া করে
দূর থেকে দেখো।
ওদের জন্য আমরা কেন
করব কাটাকাটি?
ওরা থাকুক ওদের মতো
আমরা রব খাঁটি।
সৎ-বুদ্ধি ছিল বলে
তাই করেনি রাগ।
বোধিস্বত্ত্ব এক জন্মে
হয়ে ছিলেন বাঘ।
Comments
Post a Comment