পেটের জ্বালা বড় জ্বালা

 পেটে জ্বালা বড় জ্বালা

দেবপ্রসাদ জানা


হারান মণ্ডলের বাড়ির বারান্দায় বিচার বসেছে, 

হারানের বউ,রাত বেরাতে কোথায় যায়?

কলা বাগান পেরিয়ে, শিমুলতলা দিয়ে,

বাঁশ বাগানের কোলে, মজা খালের ওপর দিয়ে-

মাঠ পেরিয়ে?

এমন যদি হতো,রাত পোহালে যেতো,

শুনতে পেতাম,দেখতে পেতাম,

সন্দেহ থাকতো না তাতে।

অলক্ষুণে,কলঙ্কিনী।

হারানের বউ কুলটা। 

হারানের বউ ডাকিনী।

হারানের বউ নষ্ট। 

ওকে ন্যাঙটো করে ঐ শিমুল গাছে বেঁধে দাও।


চিৎকার করে ওঠে হারানের বউ।

থাম না কেনে? ওনেক তো বললি বট্যা?

ওনেক কুথা শুনালি বট্যা। 

একে একে মরে গ্যাছে সব,

মা বাবা ভাই বোন সব,একবারও জিগাইছিস?

মোর পেডের ছানাটা কি খাবে বট্যা? বিচার দিছে!

বলি ও বাবুরা, গাছতলায় বইসে,কুতবার কইছিস?

হারানের বউটা ডাগর বটে, কপাল পাইছে হারান।

তিন বছর হুয়ে গেল, তুদের প্রাণের হারান,

কাজ লাই,কম্ম লাই,ঘরকে বসে তুদের মোসাহেবি

করে বট্যা,কুনো দিন সুধাছিস? 

বউটা কি খাইয়া ডাগরটি হইছ্যা।

একে উন্যের ভাই,উঁচু লিচু ভেদ বিভাজন মুছে-

কুত কথা কইস তুরা, 

রাতের বেলা তুদের শরীলটাতে আগুন লাগে।

রাত পোহালে,আলো আসলে লিভে যায়?

এই পৃথিবী বদলে গিছ্যা,আগের মুতো আর লাই। 

কামার,কুলি, মুজুর,কিষান,মাঝির ঘরের বউ। 

সব কুলটা?

তাদের বুকে খুশির ঢেউ উঠ্যা বট্যা।

বাতাস এসে,বুকের কাপড়টো উড়ল্যা -

দেখতে ভালো লাগে -ধরতে পারলে প্রাণ জুড়াতো?

ও বাবুরা এই দ্যাখ,না কেনে,

প্যাটের বাচ্ছাটা কেমন লড়ছ্যা,ভুকের জ্বালায়।

তুদের মহাজন কয়,একরাত থাক বটে, খাবার পাবি।

উই য্যা হারান,তুদের কাছে নালিশ করছ্যা।

ওরে সুধা না কেনে? কত খাবার দিছ্যা?

হ্যাঁ মুই কুলটা, রাতের বেলা -

উই দূর‍্যা হুটেলে ফ্যালা খাবার খাই,

প্যাটের জ্বালা,বড় জ্বালার‍্যা বাবুরা।


Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ