পঞ্চসতীর অহল্যা
পঞ্চসতী
মহাকাব্যে পঞ্চকন্যা বিশ্বাসে প্রহরী।
সব পাপ দূর হবে,শুনে সেই কথা।
অহল্যা দ্রৌপদী কুন্তী,তারা মন্দোদরী।
রামায়নে থেকে এল,ত্রিসতীর গাথা।
মন্দোদরী তারা আর অহল্যা সুন্দরী।
মহাভারত হইতে,কুন্তী ও দ্রৌপদী।
রূপে গুণে গৃহবধু,সতী সাদ্ধী নারী।
বহু গুণে গুনী তারা,যেন স্বচ্ছ নদী।
স্মরণ করিলে নিত্য,পাপ দূর হয়।
হিন্দু নারী সদা করে,তাদের প্রার্থনা।
হাজার কলঙ্ক নিয়ে,কলঙ্কিত নয়।
পঞ্চসতী নাম মোরা,কভু ভুলিব না।
রামায়ণ খ্যাত সীতা,কেন সতী নয়?
কৌতূহল উদ্দীপক,হতেছে নিশ্চয়।
অহল্যা
১
গৌতম মুনির পত্নী,অহল্যা শ্রীমতি।
চন্দ্ররাজবংশী তিনি,চারু মনোরমা।
অসাধারণ সৌন্দর্যে,খ্যাত কান্তিমতি।
সুরলোক দেবলোকে,রূপসী প্রতিমা।
ব্রহ্মা এক অপরূপ,গড়িলেন নারী।
অহল্যার রূপ গুণ যেন পূর্ণ চন্দ্র।
দিবারাত্র তার পিছে পড়লেন ভারি।
তার রূপে মুগ্ধ হয়ে,দেবরাজ ইন্দ্র।
অহল্যাকে দেখে ইন্দ্র,প্রেমে পড়ে পাছে।
সেই কথা ব্রহ্মদেব,বুঝিতে পারিয়া।
অহল্যাকে রাখিলেন,গৌতমের কাছে।
স্বসম্মানে থাকে কন্যা,আপন করিয়া।
নির্দিষ্ট সময় শেষে,স্বর্গধামে এসে।
অহল্যাকে ফেরালেন,তপস্বীর বেসে।
২
সুন্দরী রমনী পেয়ে,কামনার বসে।
অসংযত হওনি যে, শাস্ত্রজ্ঞ গৌতম।
খুশি হয়ে ব্রহ্মা তারে,দান করে হেসে।
যাও ঋষি বিয়ে করো,থাকিবে উত্তম।
মিথিলার উপবনে,নিজের বাসায়।
বিবাহ করিল ঋষি,চারু অহল্যারে।
দিনভর ধ্যান করে, ফেরেন সন্ধ্যায়।
ঘরে ফিরে খুশীমনে,দেখে অহল্যারে।
রূপবতী শান্তমতি,ক্ষোভ নাই কোনো।
পূজা আর্চা এই নিয়ে, সর্বক্ষণ থাকে।
বৃদ্ধ বলে অপমান , করেনি কখনো।
অপভাষায় কটূক্তি,করেনি তো তাকে।
ফুল তুলে মালা গেঁথে,সাজায় বিছানা।
গৌতম ঋষির চোখে,কখনো পড়ে না।
৩
ফুলসজ্জার জন্যই,ফুলের বাহার।
ফুলের সুবাস নিয়ে,কেমনে ঘুমায়?
বিনিদ্র কাটিছে রাত,দেবী অহল্যার।
সকালে সে বাসি ফুল,দুয়ারে ছড়ায়।
অহল্যা নিজে ফুলের,কুঁড়ি হয়ে থাকে।
স্পর্শহীন কুঁড়ি যেন, ফুল হতে চায়।
কাননে ফুটেছে কুঁড়ি,ফুল করো তাকে।
কুঁড়ি হয়ে ঝরে যায়,মূক বেদনায়।
দিন যায় আনমনে, বনে বনে ঘুরে।
অহল্যার মনে লাগে কামনার ঢেউ।
ফুলতুলে মালাগেঁথে,হাতে পায়ে পরে।
সে সাজ একবারও দেখে নাতো কেউ।
বিয়ের পরেই,আরো সে সুন্দরী লাগে।
অপরূপা অহল্যার,মনে প্রেম জাগে।
৪
গৌতমের সাথে বিয়ে,হয়েছিল শুনে।
দেবরাজ মিথিলার বনে উপস্থিত।
সুযোগের অপেক্ষায় ছিল দিন গুণে।
কিভাবে অহল্য হবে,তার প্রিয় মিত।
কামনার ফুল ফোটে,প্রতিদিন মনে।
অহল্যাকে দেবরাজ ভুলেও না ভোলে।
অন্তরালে অন্তঃস্থল পোড়ে তার প্রাণে।
কাননে ফুটেছে ফুল,তুলিবার ছলে।
গৌতমের রূপ ধরে,এলো ছদ্মবেশে।
অহল্যার অধরে সে করিল চুম্বন।
ইন্দ্রের ইন্দ্রজালের,অহল্যা যে হাসে।
বুঝেও বুঝিল না সে, করিল মন্থন।
রূপযশ খ্যাতি গেল,হারাল সতীত্ব।
ইন্দ্রের বাসনায় সে পাইল গুরুত্ব।
৫
তপস্বী গৌতম এসে,বুঝিল সকল।
অহল্যারে কটূকথা,বলে বারবার।
দেবরাজের চাতুরী,করিল দূর্বল?
এতই অবুজ তুমি,করো অনাচার।
কামনার অগ্নিকুণ্ডে,নিজেকে জ্বালাও,
আকাঙ্ক্ষার নাগপাশে,ছিঁড়িলে বন্ধন?
কালিমা মণ্ডিত করো, কলঙ্কে ভরাও।
যশ কীর্তি সুসম্মান,করিলে লঙ্ঘন?
বাহিরে গৌতম তবু, করিলে বিহার।
বিছানো ফুলের পরে,সানন্দে আদৃত।
গৌতমের শাপ খণ্ডে,সাধ্য বলো কার?
প্রস্তরখণ্ড হইয়া,থাকিবে অজ্ঞাত।
অহল্যার চেয়ে আরো সুন্দরী জন্মাবে।
রূপের গৌরব তার, তবেই খণ্ডাবে।
৬
ইন্দ্রের শরীর যোনী হাজার খানেক।
ইন্দ্রজালে ইন্দ্র তার,সম্মান হারাবে।
অর্ধেক পাপের ভাগ, ইন্দ্র সহিবেক।
ধর্ষনের এই প্রথা, ইন্দ্র সামলাবে।
অহল্যা করিল দাবী,নিরোপরাধী সে।
গৌতমের সেবা করে,গৌতম-ই ভেবে।
প্রাণে ছিল স্বামী তার,শাপ কোন দোষে?
গৌতমের রূপে ইন্দ্র,দোষ কেন হবে?
ধর্ষিত হয়েছে নারী,ইন্দ্রদেব দ্বারা।
অভিশাপ দিল ঋষি,যুগ যুগ ধরে।
ধর্ষণ করবে তাকে, নর-রাক্ষসেরা।
বিপদে পড়িল ইন্দ্র,অনাচার করে।
যতদিন আকাশের রাজা,সূর্য চন্দ্র।
ধর্ষণ হলে পাপের,ভাগ পাবে ইন্দ্র।
Comments
Post a Comment