Posts

Showing posts from 2020

সনেট।। শেষপথ।।-১৭৩

    ।।শেষপথ।। দেবপ্রসাদ জানা   ৩১.১২.২০২০ ঘড়ির কাঁটা ক্রমশ অলস অনড়, দিন ফুরিয়ে আসছে,তবু মনে হয়। একটা মিনিট যেন,একটা বছর, প্রতিটা সকাল তাই,অক্ষয় অব্যয়। ভোর হয় সন্ধ্যা হয়,প্রতিদিন চলে অপেক্ষায় ধৈর্য্যহীন,হয়ে আছি আমি। মনের দেয়ালে ঝোলা ঘড়িটাও বলে ঠিক ঠিক ঠিক ঠিক,কোথা গিয়ে থামি? কিছুক্ষণ আগে সূর্য গেছে অস্তাচলে কিছুটা সময় ধার,দিয়ে গেছে মোরে রূপোলী চাঁদের আলো,বেশ ঝলমলে স্রোতস্বিনী নদী বহে, বুকে পড়া চরে। সময়ের নোনা জলে,ঢুব দিয়ে আমি, এইছিল শেষ পথ আর কেন থামি?

সনেট।। ছদ্মবেশে।।-১৭২

 ।।ছদ্মবেশে।। দেবপ্রসাদ জানা ৩০.১২.২০২০ মুখোশ সাঁটা মুখের পরে,অর্বাচীন  আসল মুখের ছবি করো অধ্যয়ন। মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে রাখে প্রতিদিন ভদ্রলোক বলে যারে,করি আপ্যয়ন। পরের ধনে পোদ্দারি,নিজে লবডঙ্কা কোথায় কবে ছোবল দেবে,সাবধান! ছদ্মবেশে সর্বক্ষন,খোঁজে শুধু মক্কা মনে থাকে দুষ্টবুদ্ধি,করে গুনগান। সাবধানে থেকো ভাই, তাদের হইতে  রক্তমাখা ছুরি থাকে,তাদের কোমরে, কখন যে,তা হানবে,পারবে কইতে? আচরনে মিষ্টি ভারি, মন দেবে ভরে। আগুনের সাথে বাস,মোটে ভালো নয়। আমি নয়,আমি নয়, জ্ঞানীগুনী কয়।

সনেট।। নব নবান্ন।।-১৭১

   ।।নব নবান্ন।। দেবপ্রসাদ জানা   ২৯.১২.২০২০ বিবেকের অবসাদে,পেকে ওঠে ধান- ভোরের শিশির পায়ে,নববধু আসে  নবান্নের হাত ধরে,মোরে ভালোবাসে ভোরে দেখি বধূ নাই,আছে তাঁর ঘ্রাণ।  নব নবান্নের ঘ্রাণ, থাকে কয় মাস? ক্ষান্ত উৎসবের শেষ,রয় ভাঙামন, ভাঁড়ারের দেশে মৃত,তারাদের মন, জানলায় বেদনার,স্মৃতির আভাস, রেলের লাইনে গলা,দেয় পুরবাসি অলস ভাবনা তার, বধুর বিহনে পোকাদের আক্রমণ,বধুর উপরে। মহাজনী পঙ্গপাল,দেয় অট্টহাসি - আক্রোশে নবান্ন বুঝি,পুড়িল আগুনে, ফাঁকা মাঠ জুড়ে শুধু,ভুতেরা নাচেরে।      

সনেট।। পাহাড়িয়া রাত।।-১৭০

 ।।পাহাড়িয়া রাত।।   দেবপ্রসাদ জানা শীত যেথা,শীতে কাঁপে,পাহাড়িয়া রাত। ফুলের কুঁড়িরা সেথা, কাঁপে থর্ থর্। কুয়াশা,আগুন জ্বেলে,সেঁকে তার হাত। বৃদ্ধ বৃক্ষ শীতে,খোঁজে,কুয়াশা চাদর। সকালের গুণগান ভুলে গেছে পাখি  ভোরের সোনালী রোদ ঘুমে অচেতন ডাক দিয়েও তোলেনি,রাত জাগা পাখি। ঘন কুয়াশায় তারে,করেছে বারণ। এক ধারে বড় খাদ,পড়লে মরণ অন্যধারে পাহাড়ের,অতি অহংকার। মাঝে পথ, ভয়ে ধরে,পাহাড় চরণ আর নয় পথ চলা বেলা হলো তার। মেঘের আঁচলে ঢাকা নীল নীলাম্বর, আমি আছি ভয় নাই,মেঘের ভিতর।

সনেট।। জ্বালাময় পথ।।-১৬৯

 ।।জ্বালাময় পথ।।  দেবপ্রসাদ জানা    ২৬.১২.২০২০ হে আমার দীর্ঘতম পথ কোথা যাও? কোনস্থানে তব লক্ষ্য,কাউকে বলনি। শুধুই কাঁটার পথে,মোরে লয়ে যাও। ফুলের রাস্তায় কেন, মুখ ফেরাওনি? ওই আগুনের পথ,বড় জ্বালাময় - সেই পথে,পথ তুমি,কেমনে হাঁটাও। আর যে পারি না আমি,বড় ভয় হয়। ফিরে চলো পথ,নয় একটু দাঁড়াও। জ্বালাময়ী পথে আছে,সুখের সন্ধান সেই পথে যারা চলে,জিত তার হয়। কষ্টে চলা পথ দেয়, পরম সম্মান। ফুলে চলা পথিকের,ভাগ্যে পরাজয়। হে পথিক কষ্ট হোক,কাঁটা যুক্ত পথে। একদিন পাবে জেনো,ইতিহাস সাথে।

সনেট।। একটা ঘুম।।-১৬৮

 ।।একটা ঘুম।।  দেবপ্রসাদ জানা   ২৫.১২.২০২০ এমন একটা ঘুম আসুক দুচোখে, সেই ঘুমে স্বপ্ন হবে,রাজ প্রত্যাশার। অগনিত ঐশ্বর্যের ভিতর নিজেকে  ডুবিয়ে,সুখের মধু করিব আহার। একটা ঘুম আসুক,প্রেমিকার বুকে, নির্বাক ভাষায় দেবো,প্রেমের বারতা। ভালোবাসার মৌতাত,দেবো শূন্য বুকে। প্রেম আলিঙ্গনে পাবো,দৈহিক উষ্ণতা। সেই ঘুমে যদি ভোর না হয় বুঝবে- মৃত্যুঘুম এসে গেছে,এবারের মতো। আত্মার নিগূঢ় ডাক,এলে অনুভবে, আকাশ পেরিয়ে রব,গ্রহদের মতো। ঘুম এলো,নাই এলো,স্বপ্ন আছে রাখা। জীবনের সব ছবি,জলরঙে আঁকা। 

সনেট।। কবিতার প্রেম।।-১৬৭

 ।।কবিতার প্রেম।।  দেবপ্রসাদ জানা    ২৪.১২.২০২০ কবিতার প্রেম যদি,স্রোতে ভাসে আজ, জেনো কবির চরিত্রে,দাগ লেগে গেছে। কবির কবিতা পড়ে,দিতে পারো তাজ- হৃদয়ের বাঁধ যেন,ভেঙ্গে দিয়ে গেছে। কবিতার দুখে যদি,কাঁদে মন প্রাণ। বুঝবে,মনের কোনে,কষ্ট ধরে রাখে। কবিতার প্রেমে কবি,দেয় বলিদান। প্রলোভনে ঘরছেড়ে,বনবাসে থাকে। বুনেছে শব্দের জাল,চাঁদের আলোয়, কবিতার খাতাখানি,হৃদয়ে রেখেছে। শেষকালে কবিতার হইল প্রনয়। কবিসনে ঘর বেঁধে,কলঙ্ক মেখেছে। রাতের প্রহরী রাখে, চাঁদ করতলে। কবি বড় অসহায়,কবিতার ছলে।

সনেট।। ভাটা।।-১৬৬

      ।।ভাটা।। দেবপ্রসাদ জানা   ২৩.১২.২০২০ এখন চশমা ছাড়া দেখতে পাই না- সাহিত্য চর্চায় মন দিয়েছি গুছিয়ে। সখের জন্যে,চর্চায় নানান ব্যঞ্জনা চাকুরী ব্যবসা সব,গিয়েছে হারিয়ে। তার ওপর চোখের,এই বেইমানি - অল্পতে ঝাপসা দেখি,লেখার সময়। কষ্টের নিষ্পত্তি কিসে,বুঝতে পারিনি। মনে তাই আলোড়ন, বৃদ্ধ চক্ষুদ্বয়। তলানিতে ঠেকে গেছে,রাখা প্রাণ বায়ু  ধমনীর রক্তস্রোতে,পড়ে গেছে ভাটা, খড়িওঠা ত্বক কহে,কমে গেছে আয়ু সবুজ জীবনে আজ, অযাচিত ভাটা। টায়ারের পোড়া গন্ধ,নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসে, আঁকড়ে ধরেছি পথ্য,জীবনের আশে।

সনেট।। ক্ষমা করো বাঙালি।।-১৬৫

 ।।ক্ষমা করো বাঙালি।।       দেবপ্রসাদ জানা        ২২.১২.২০২০ বিশ্বসেরা সুন্দরীরা আজ রাজপথে- কারো গায়ে স্লিপলেস্,হটপ্যান্টে হানা, এ বাঙালির হল কি? বিবর্তন রথে। মুখে চলে ভিন্ন ভাষা,বাঙলা বোঝে না। জন্ম আমার বাঙলা দেশে তা বুঝি না পাঁচসাত ভাষা বলে,নিজেকে সাজাই- নানান রকম ভাষা, বাঙলা জানি না। ধুতি পাঞ্জাবি ফতুয়া,কোথা খুঁজে পাই? তোমরা বুঝি অবাক হলে?এ কি আর, ডালভাত মাছে মেছো,বাঙালিটা নেই। কেক পেস্টি পিজা হাটে শুধুই আহার। পেট পুরে মাংসভাত,শেষ পাতে দই। একটা কথায় বলি, ভাষা থেকে খাদ্য। ঘরকুনো বাঙালিকে,বোঝানো অসাধ্য।

সনেট।।বাতাসে ভাসে।।-১৬৪

 ।।বাতাসে ভাসে।।  দেবপ্রসাদ জানা    ২১.১২.২০২০ থাকার মধ্যে কোথাও,বিস্তর ফারাক তোমার আমার মধ্যে, তাই মনে হয়- ধৈর্যের বাঁধ ভাঙার পূর্বে,দেখা যাক নীরব ইন্দ্রিয় গুলো, কতক্ষন সয়?   এই নরক যন্ত্রণা, প্রতিদিন রাতে। একটু একটু করে চারিদিক থেকে, আসুক ধমনী বেয়ে,বোধ বেদনাতে। একটা স্ফুলিঙ চলে,শ্মশানের দিকে। একালের কামনার,জাঁতাকলে পিষে ঝরিয়েছিলাম রক্ত,মৌন প্রতিবাদে- ভণ্ডামির ভালোবাসা,সুদিনের শেষে- প্রত্যাখ্যানে,পোড়াতেই হয়, নির্বিবাদে। কঙ্কালসার মানুষ, নিত্য সহবাসে। ছলনার পাপ যেন,বাতায়নে ভাসে।

সনেট ।।সাঁঝবাতি।।-১৬৩

 ।।সাঁঝবাতি।। দেবপ্রসাদ জানা আজ যদি সাঁঝবাতি,জ্বলে উঠে বলে, ও চাঁদ তুমি আমার,প্রেম সঙ্গী হবে। দুজনায় সন্ধ্যা ছেড়ে,দূরে যাবো চলে। আজকে তুমি তোমার,সন্ধ্যা ছেড়ে রবে। আমায় তুমি নিষাদ ভাবো, অকারনে, বুকে তোমার অচেনা আলোড়ন হবে। মেঘের আড়ালে রাখা,চিঠিটা গোপনে, সকলে জানবে সব,জানি লোকে কবে। তোমার জোছনা আজ,জানি কষ্ট পাবে। ঘোরের ভেতরে ভাসে,তাহার ছলনা। মুঠোয় ধরা পতঙ্গ,আলো খেয়ে নেবে। স্তব্ধ যারা মন্ত্র পড়ে,বাড়াবে বেদনা। মরবে বলে বাতাসে,যত্নে উড়েছিল। আগলে জীবন তাই,ভালোবেসেছিল।

সনেট ।।আগুন।।-১৬২

     ।।আগুন।। দেবপ্রসাদ জানা   ২০.১২.২০২০ শীতের চাদরে ঢাকা,আমার পৃথিবী আগুন চাইছে আজ,বড় ঠান্ডা লাগে ফুটপাতে,খালপাড়ে,দেখেছ কি ছবি? রেলের লাইনে,তার দুইপাশে ভোগে। বুকে আমার,অচেনা রোগের পাহাড়  বুকের ভেতর রাখা,গোপন সন্ত্রাস। কেউ না জানুক,তোরা জানিস কাহার, ভয়ে ভীত?চলে যাবো,একটু দাঁড়াস। জানি কষ্ট দেয়া ওই,তোমার আগুন আজ আমার হৃদয়ে,প্রাণ ভরে দেবে। দেহের ভেতর ভাসে,আমার মরণ। গুণী যারা মন্ত্র পড়ে,করেছে বারন। বেরলে,বেঘোরে প্রাণ,শেষ ঘুমে যাবে, আজ তাই মোর ঘরে,চেয়েছি আগুন।

সনেট ।।বাতাসে ভাসে।।-১৬১

 ।।বাতাসে ভাসে।।  দেবপ্রসাদ জানা থাকার মধ্যে কোথাও,বিস্তর ফারাক তোমার আমার মধ্যে, তাই মনে হয়- ধৈর্যের বাঁধ ভাঙার পূর্বে,দেখা যাক নীরব ইন্দ্রিয় গুলো, কতক্ষন সয়?   এই নরক যন্ত্রণা, প্রতিদিন রাতে। একটু একটু করে চারিদিক থেকে, আসুক ধমনী বেয়ে,বোধ বেদনাতে। একটা স্ফুলিঙ চলে,শ্মশানের দিকে। একালের কামনার,জাঁতাকলে পিষে ঝরিয়েছিলাম রক্ত,মৌন প্রতিবাদে- ভণ্ডামির ভালোবাসা,সুদিনের শেষে- প্রত্যাখ্যানে,পোড়াতেই হয়, নির্বিবাদে। কঙ্কালসার মানুষ, নিত্য সহবাসে। ছলনার পাপ যেন,বাতায়নে ভাসে।

সনেট ।।নিয়ম মেনে।।-১৬০

 ।।নিয়ম মেনে।। দেবপ্রসাদ জানা   ১৯.১২.২০২০ দিন রাত্রি ঘুরেফিরে,লুকোচুরি খেলে, চাঁদমামা,সুয্যিমামা,ভারি তার মিল। নিয়ম করে,আইন মানে,ভোর হলে। ঝগড়া নেই,ব্যাগড়া নেই,বেশ মিল। আকাশে তাদের দেখা,নাই কোনদিন পার হয়ে যায় দিন,রাত্রি আসে নেমে জোছনার আবরণে,আলো হয় ক্ষীণ  অভীষ্ট লক্ষ্যের গুণে,সে দিগন্তে থামে। আসন্ন ভোরের সূর্য,সোনালী অবশ্য। উজ্জ্বীবিত কামনার, অগ্নিমোহ ক্ষুধা।  অশান্ত ক্ষুধাতে চায়,গিলে নিতে বিশ্ব। তবু নিয়মের কাছে,মাথা নিচু সদা। বাজিল আঙিনা মাঝে,নারীর সঙ্গীত।  দিনের বৃক্ষটি দেয়,স্বপ্নের ইঙ্গিত।। 

সনেট ।।একা দূর্বাশা।।-১৫৯

 ।।একা দূর্বাশা।। দেবপ্রসাদ জানা    ১৭.১২.২০২০ তোমার মন খারাপ? কলম সৈনিক। টালমাটাল তোমার,বোধশূন্য দেহ? এত যে স্বপ্ন রেখেছ,গুছিয়ে দৈনিক  কার জন্য? উষ্ণ রিপু উচ্ছ্বাসে প্রত্যহ। সমস্ত ক্ষয়ের মধ্যে,বাঁচার বার্তায়- সময়ের খসে পড়া,ছিন্ন ফুল খানা- ডাল ধরে, টানাটানি করে কেন হায়? সেকি অকারণে?ভূমি করিয়াছে মানা। নদী উপেক্ষায় মুখ,ফেরায় সহসা যেথা আত্মমগ্ন ছায়া,ভরসা হারায় নগ্ন গাছ জোছনায়,একেলা দুর্বাসা অলৌকিক চাঁদ সেথা,মেঘের ছায়ায়। ভেবোনা সৈনিক,পথে নিদারুণ কাঁটা ফুল আছে পথে,বন্ধ হবে নাতো হাঁটা।

সনেট ।।যারে দেখিনি।।-১৫৮

 ।।যারে দেখিনি।। দেবপ্রসাদ জানা ১৮.১২.২০২০ নাগো,বলিনি তেনাকে,আমাদের কথা জীবনের কত কথা, বিষন্নতা ছুঁলে। সেদিনও দেখাইনি ,হৃদয়ের ব্যথা। অসমাপ্ত কত কথা,খুব একা হলে। সেদিন দেখা পেয়েছি,তার সাথে,স্বপ্নে। তোমরা যাঁকে দেবতা বলো,সেই তাকে। ভগবান বলে যারে খোঁজো মহাশুন্যে, ঝরার বীক্ষনে আজো,বলিনি তেনাকে। বলেছি,বেশ ভালোই তোমার দয়াতে। মোদের ভালো থাকার,রসদে এখনো, আসেনি অভাব,তাই নিজেকে জানাতে চাইনি একবারও,যা গেছে,পুরানো। মাথা তুলে বেঁচে আছি আজীবন জেনো, ইস্পাতের মতো আছি,থাকব এখনো।

সনেট ।।ফেসবুক দাস।।-১৫৭

 ।।ফেসবুক দাস।।  দেবপ্রসাদ জানা    ১৬.১২.২০২০ আহা রে কি খেলাই না চলে,ফেসবুকে  কত কথা,কত প্রেম,পাতায় পাতায়।  রাত হোক,দিন হোক,বন্ধু করো সুখে। হাজার পাঁচেক বন্ধু,দেবে সে হেলায়। সব কি আর,প্রাণের বন্ধু? একেবারে? ভার্চুয়াল প্রেমিক ও,আছে এর মাঝে। প্রেমিকারা রাতে অন্ হলে, কথা বাড়ে কুশল জানতে লাগে যে,সকাল সাঁঝে। নিজেকে হিরোর মতো,নায়ক সাজিয়ে, প্রোফাইলে ছবি দিয়ে,নোটিফিকেশন - অনুসন্ধানে বসতে হয় ফোন লয়ে - মন্তব্য লাইকে,অঙ্কে ভেরিফিকেশন। মিথ্যা প্রেমের কলঙ্কে,ভারি সর্বনাশ। আমরা যে সব মূর্খ,ফেসবুক দাস।

সনেট ।।শেষের স্বপ্ন।।-১৫৬

 ।।শেষের স্বপ্ন।। দেব প্রসাদ জানা   ১৫.১২.২০২০ বন্ধু স্বপ্ন দেখো রোজ,ওটা না দেখলে  সামনের পথে তুমি,এগোবে কি করে? মাঝেমধ্যে দেখো,রোজ নাইবা দেখলে। সাহস রেখো তোমার,মনের গভীরে। পঞ্চাশ বছর কেটে গেল অনাদরে, এই শরীর চায় নি,কিছু কোনদিন- ক্রমাগত পরিশ্রমে,আর অনাহারে পরিশ্রান্ত অসুস্থতা,দিন প্রতিদিন। স্বপ্ন আসে না এখন,তেনারা আসলে মৃত্যুভয়,এই বুঝি,শেষ তরী ডোবে। যমদূত দরজায় কড়া নেড়ে বলে- চলো প্রিয়,আর কাজ নাই এই ভবে। কি কাজ করেছি?শুধু স্বপ্ন দেখে গেছি। পাওয়ার থেকে আজ,বেশী হারিয়েছি।

সনেট।।ক্ষেত্র পরিহার।।-১৫৫

 ।।ক্ষেত্র পরিহার।। দেবপ্রসাদ জানা    ১৪.১২.২০২০ কতগুলো জানোয়ার,মানুষের মতো  পোষাক পোরে সমাজে যে ঘুরে বেড়ায়, আপনারা দেখেন না?অলিগলি কতো- মুখোস পরা মানুষ,সবার পাড়ায়। সেবায় নিযুক্ত হয়ে, দশের উন্নতি- করে,যারা যুদ্ধ করে,তাদের ভাঙ্গায়। তাদের পরিকল্পিত,চক্রান্তে দূর্গতি - সেটাও মেনে নিতেই হয়, ভরসায়। নিয়োজিত সব ব্যক্তি,প্রয়োজনে আসে, তা নয়,আসলে যাঁরা, পন করে,ভাবে- সমাজে যেকোন ক্ষেত্রে,সে সাহিত্যাকাশে হোক আর অন্য ক্ষেত্র হোক, সে ফাঁসবে। আর যখন ফাঁসাতে পারবে না আর- ভুলভাল অঙ্ককষে,ক্ষেত্র পরিহার।

সনেট।।পোকা।।-১৫৪

      ।।পোকা।।   দেবপ্রসাদ জানা     ১৩.১২.২০২০ ক্রমশ বড় হয়েছে,বাসনার পোকা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে,আদরে বাড়ছে। পার হওয়া কৈশোরে চাপা দিয়ে রাখা পোকাদের দল আজ,যৌবনে ডাকছে। লোমহর্ষক পোকাটা,হাঁটছে অজান্তে  শিরা উপশিরা হয়ে,মস্তিষ্কের  দিকে। আমার আমিত্ব খেয়ে,আকাঙ্ক্ষার প্রান্তে বাড়ছে ওর দৌরাত্ম্য,কে বোঝাবে তাকে? জীবন যৌবন আর যৌবনের পোকা অলিতে গলিতে সাথে,চলেছে প্রত্যহ। নৈঃশব্দে গোপনে ছোঁবে,যেথা পাবে একা। ভেতরে বাইরে সব,পোকা অহরহ । শিরদাঁড়া বেয়ে চাপা স্রোতে পোকা সব, মস্তিষ্কের গ্রন্থি কাটে,করে কলরব।

সনেট ।।দৈনিক প্রতিযোগিতা।।১৫৩

 ।।দৈনিক প্রতিযোগিতা।।      দেবপ্রসাদ জানা        ১২.১২.২০২০ কবি,এখানে দৈনিক প্রতিযোগিতা যে হয় না,কেন যে শুধু  দৈনিক লেখেন? বুঝিনা এখনো মোটে। মরে যাই লাজে। কতবার বলা হলো,তবুও লেখেন। আসলে সবাই গ্রুপ ঘুরে দেখিই না। প্রতিদিন কত ভালো লেখা ডিক্লাইন। ডিলিট করি। বিচ্ছিরি একটা তাই না। দয়া করে গ্রুপে ঘুরে, মানুন আইন। অনুশীলন লিখুন, কবিতা পড়ুন- ভালো যদি লাগে কবি,লেখা গুলো সব লাইক করুন পড়ে,কম্যান্ড করুন। জেনে শুনে,কপিপেষ্ট,করছেন সব? জানি কবি ব্যস্ত সব,নানাবিধ কাজে। বারেবারে লেখা গুলো বাদ দেয়া বাজে।

সনেট ।।গুপ্ত ছলনায়।।-১৫২

 ।।গুপ্ত ছলনায়।। দেবপ্রসাদ জানা   ১১.১২.২০২০ আজ কুয়াশার কাছে প্রশ্ন করলাম, এই যে এখন রোজ এসে জানালায়- উঁকিঝুঁকি মারো ঘরে,আমি ভাবলাম ভালোবাসার আদরে,থাকো পাহারায়। সিক্ত করো মোর উষ্ণ শুষ্ক দেহটার  উত্তপ্ত ইন্দ্রিয় গুলো। কিন্তু ভরসায়- কোথায় যেন একটা,গুপ্ত  ছলনার - আভাস দেখি,তোমার চোখের তারায়। আমার উষ্ণ দেহটা সিক্ত করে দিচ্ছে অযথা তোমার আঁখি,ছলনাশ্রু জলে। মিথ্যাচারে লিপ্ত তুমি, ও মনের ইচ্ছে শীতপাখিটার জন্য,তুমি হেথা এলে। উষ্ণতায় ভরা ছিল,মোদের পৃথিবী। কুয়াশার ক্রূর চক্রে,শীতে গেল ডুবি ।

সনেট ।।মৌনতার ভাষা।।-১৫১

 ।।মৌনতার ভাষা।।   দেবপ্রসাদ জানা     ১০.১২.২০২০ অভিমানে প্রিয়তমা,কোথা চলে যাও? এমন কি কথা হলো, রাগ হলো মনে। গোধূলির নানা রঙে,রঙ মেখে নাও। সব কালি ধুয়ে যাবে,রবে মোর সনে। নিরুপিত ছন্দ নিয়ে,কিছু কথা বলো। প্রকৃতির বুকে দেখো,রাত্রি নেমে আসে, কুয়াশায় ডুবে গেছে,কনে দেখা আলো। মেঘে মেঘে বেলা যায়,দেখো ভালোবেসে। ও দেহে লাগবে নাগো,কলঙ্কের দাগ। হৃদয়ের টান ভারি,বেদনায় ঘেরা।  ভালোবাসার সন্ধিতে, রাগ অনুরাগ। উপেক্ষার জ্বালা সয়,ভালোবাসে যারা। ভরাবে শূন্যতা মোর,এই ছিল আশা, প্রেম বোঝে শব্দশূন্য,মৌনতার ভাষা।

সনেট।। অপেক্ষাব দাস।।-১৫০

 ।।অপেক্ষার দাস।।   দেবপ্রসাদ জানা     ৯.১২.২০২০ আঁকাবাঁকা কাদা পথ,সুবজ প্রান্তর। দিগন্তরেখায় নামে নীলাভ আকাশ  সবুজের ঘাড়ে চেপে,খিদের কাঁকর গ্রামের আটচালায়, বিসন্ন বাতাস। সোনালী রোদ্দুর হেথা,উপবাস করে, নদীর কানায় বাঁধা,প্রেমিকার নাও, উদাস বাউল ডাকে,দোতারার সুরে।  মিলনের ছাড়পত্র,পৌঁছে দেবে তাও। মেঠোপথ অন্ধকারে হারিয়ে না যায়। ক্ষেতের উপরে নৃত্য,করছে বাতাস; দেখলাম, শুনলাম, জানলাম হায়- সময়ের খরস্রোত,অপেক্ষার দাস। উপবাসে থাকে নাকি,পূর্ণিমার চাঁদ, বেদনারা সুখবনে,পেতে আছে ফাঁদ।

সনেট।।হাত বদল।।-১৪৯

 ।। হাত বদল।। দেবপ্রসাদ জানা   ০৮.১২.২০২০ অনেক দূরে বিদেশে,তুমি চলে গেলে। বলে গেলে,তাড়াতাড়ি ফিরব সরমা। কাদামাটির ঘরেতে,মোরে রেখে দিলে কুঁড়ে ঘরে আমি নাকি,মাটির প্রতিমা। বিচুলি আর বাঁশের,ছাউনিতে ঘেরা- একলা ঘরে,তোমার অপেক্ষায় থাকি, তুমি এলে না আজও। মিষ্টি গন্ধে ভরা তোমার পাঠানো চিঠি,বুকে করে রাখি। বহুদিন পরে বুঝি হয়েছে স্মরণ  অনাহারে,অপেক্ষায়,জরাজীর্ণ আমি। শুনেছি গড়েছ তুমি,একান্ত আপন- ইমারত! কাঁচাঘরে কই,এলে তুমি? এসেছিলে সেই তুমি,বাতাস বলেছে। হাতে রাখা হাতখানি,বদলে গিয়েছে।

সনেট।। শূন্যতার স্বপ্ন।।-১৪৮

 ।। শূন্যতার স্বপ্ন।।  দেবপ্রসাদ জানা     ৭.১২.২০২০ বোধের ভিতরে বোধ,করে রাখে যত্ন - যৌবনে দেখেছি স্বপ্ন,মিষ্টি এক বউ। মনের ইচ্ছের ঘরে,উঁকি দিচ্ছে স্বপ্ন হাতে হাত রেখে ঘর,ছাড়েনি তো কেউ। দিগন্তরেখায় শশী,দেখি একফালি  হৃদয়াকাশে আনন্দ,মারছিল উঁকি, আত্মহারা হয়ে,দুই সত্তা,চোরাবালি। অন্তর্গামী শূন্যতার,সাদা স্বপ্ন দেখি।   নিস্তব্ধ গহীন রাতে,চলমান ঘড়ি- টিক টিক,টিক টিক,কহে কত কথা, জোছনা প্লাবনে স্নাত,শূন্য এই বাড়ি সবুজ প্রান্তর মাঝে,শূন্যতার ব্যথা। নিশ্চুপ মায়াবী স্বপ্ন,রাতের সোহাগী  চন্দ্রমল্লিকার বনে,জোছনা বিবাগী।

সনেট।। চুড়ি।।-১৪৭

     ।। চুড়ি।। দেবপ্রসাদ জানা   ৬.১২.২০২০ আবারও দেখা হলো,বিনীতার সনে  প্রকৃতির বুকে সব,দুখের কারখানা  আকাশ বাতাস কাঁদে,তার আগমনে। ভুবনে চলছে শুধু যৌন লেনাদেনা। সর্বত্র ভেসে বেড়ায়,ক্রন্দনের শব্দ মাঝ মাঠে বিনীতার,পোড়া শবদেহ ধর্ষণে ধর্ষনে আজ, প্রকৃতিও স্তব্ধ। একেলা পথে বিনীতা,এলে কেন কহ? বুঝি আমি অভিমানে,ঘর ছেড়ে পথে, গিয়েছিলে রাগ করে,আর যে এলে না। দুইদিন পরে তারে,দেখিলাম মাঠে- চিনিবার পথ নাই,হাতে চুড়ি বিনা। চুড়ি নিয়ে বচসায়,গেলে পরবাসে। সেই চুড়ি আজ যেন,মুখ চেপে হাসে।

সনেট।। প্রেমের পরাগে।।-১৪৬

 ।।প্রেমের পরাগে।।   দেবপ্রসাদ জানা    ০৫.১২.২০২০ ভিতরে ভিতরে টের পাই প্রতিদিন। একটু একটু করে কাঠ পোকাদের দল,বিঁধিয়ে দিয়েছে,তীক্ষ্ণ আলপিন, বেশ বুঝতে পারছি,বেদনা দেহের। করতলে বাঁকা চাঁদ,আকাশের নিচে কালো মেঘ,অন্ধকারে মৃত্যুর নিঃশ্বাস। সুন্দরের হাত ছুঁয়ে,আঁধারের পিছে- ঘুরি প্রতিদিন,তার শাস্তি সর্বনাশ। ভুলে যেতে হবে সব,ভাঙতে ভাঙতে। হৃদয় ভেঙেছে,রক্ত পড়ছে প্রত্যহ। মনের কপাট খুলে,যেদিন আসতে- ভালোবাসা কেঁদেছে যে,নিত্য অহরহ। ক্ষমাহীন অপরাধ,কঠিন আবেগে- অগুনতি অনুযোগ প্রেমের পরাগে।

সনেট।। এতদিন পরে।।-১৪৫

 ।।এতদিন পরে।। দেবপ্রসাদ জানা   ০৪.১২.২০২০ হঠাৎ সেদিন,তার সঙ্গে দেখা হলো। এক মুঠো রোদ যেন,সম্মুখে আমার, চাঁদ থেকে নিয়ে আসা,জোছনার আলো গন্ধ খামে মোড়া প্রেম,চোখেতে তাহার। ভালো আছ তো মনিকা,ঠিক কতদিন পরে তোমার আমার,দেখা হলো জানো? ত্রিশটা বছর,আজ বড় ভালো দিন- জীবনে প্রথম প্রেম,তা হবে না কেন? ইচ্ছে করেই সেদিন,বলেছিলে মোরে ভালোবাসা ভালো নয়,লোকে মন্দ কয়। উষ্ণ আবেশের স্নিগ্ধ পরশ তোমারে দিয়েছে ভালোবাসার উন্মুক্ত বলয়। অন্ধকারেও দেখতে পেয়ে চিনেছিলে এতদিন পরে বুঝি,ভালোবেসেছিলে।

সনেট।। হারানো পুঁথি।।-১৪৪

 ।।হারানো পুঁথি।। দেবপ্রসাদ জানা   ০৩.১২.২০২০ আমার বাল্যকালের হারানো পুঁথির- কিছু পাতা খুঁজে পাই,কালকের রাতে। ছেঁড়া পাতা গুলো আজ,মূক ও বধির। বহু বর্ষ অন্ধকারে বন্দী, বঞ্ছনাতে। তারা আমার শৈশব,আমার কৈশোর, কাঁপা হাতে লেখা কিছু,মণি মুক্তা লিপি। অপোক্ত ভাষার শব্দে আমিও বিভোর। এক একটা অক্ষর যেন শিলালিপি। অলীক সব প্রশ্নেরা উত্তরের খোঁজে  অবোধ্য অবাধ্য লিপি,কাটাকুটি খেলে। জরাজীর্ণ পুরাপত্র,কিযে ছাই বোঝে, অকারণে ঝরে পড়ে,শক্ত হাতে নিলে। চেয়ে থাকে বর্ণমালা,অভিমান করে। কেন তারে বন্দী করে রেখেছিল ঘরে।

সনেট।।তাকে খুঁজতে।।-১৪৩

 ।।তাকে খুঁজতে।। দেবপ্রসাদ জানা ০২.১১.২০২০ কখনো জনসম্মুখে,কখনো একাকী  খুঁজি তাকে অন্ধকারে,পৃথিবীর প্রান্তে কখনো পূর্ণিমা রাতে,জোছনায় দেখি একরাশ ভালোবাসা কুড়িয়ে আনতে। অক্লান্ত পথ হাঁটবো যদি পাই তাকে উত্তাল তিস্তায় ঝাঁপ দিয়েও দেখবো, কেমন করে,আঁধারে,সে লুকিয়ে থাকে। পলাশীর ময়দানে,রক্ত দিয়ে দেবো। জঙ্গলে,ঘন জঙ্গলে ব্যস্ত যে পাখিরা তাদের বলবো এসো সকলের সনে আকন্ঠ পান করবো জোছনা মদিরা।  মাতাল হবো আবার  মাটির উঠানে। নীলাভ ভালোবাসার হ্যারিকেন জ্বেলে।  খুঁজবো ঘন জঙ্গলে ভালোবাসা ঢেলে।

সনেট ।। ধ্রুবতারা।।-১৪২

   ।। ধ্রুবতারা।। দেবপ্রসাদ জানা   ২৬.১১.২০২০ জানি লোকটা পাগল,তা বলে বেচারা  আকাশের ধ্রুবতারা,চেনে না তা নয়। তার ঘরে উঁকি দিচ্ছে,তোমার স্মৃতিরা, আকাশের দিকে চেয়ে,কত কথা কয়। একদিন হাতে হাত,ফুলের বন্ধনে বাধা বিপদ পেরিয়ে,টোপর মাথায় লাল চেলি গায়ে দিয়ে হোমের আগুনে সাত পাকে বেঁধে তবে,এনেছিল গাঁয়। একফালি চাঁদ যেন,ঘর আলো করে ছিল কয় মাস,কিযে হলো?সায়োনারা। আঁধার ঘরের,এক কোনে,তার তরে, সেযে জ্বেলে গেল বাতি,হয়ে শুকতারা। স্মৃতিরা আজও উঁকি দেয়, তার ঘরে পাগল লোকটা তাই, ধ্রুবতারা ধরে।

সনেট।।ফেসবুকে।।-১৪১

   ।।ফেসবুকে।।  দেবপ্রসাদ জানা   ২৪.১১.২০২০ কেন বৃথা লড়াইয়ে,নামো ফেসবুক? তোমার আদরে সব,হয় আটখানা। একা ঘরে বৌদিদের,অতি বড় দুখ। সংসারেতে দ্বন্দ্ব হয়,তবুও মানে না। ফেসবুকের অসুখে,ভুগছে সংসার ইনবক্সে প্রেমালাপ, হয় রাতারাতি। আকাঙ্খায় পারদানি,ওঠে বারবার। সংসারে অশান্তি করে,বেচারা দম্পতি। কতদেশ ঘুরে আসে,ফেসবুক পাতা, অনলাইন বন্ধুত্বে, বন্দী সারাক্ষন। একা ঘরের বৌদিরা,ভুলে যায় ব্যথা। হৃদয়ে জন্মায় ফুল,ভরে ওঠে মন। ওরে বধু শোনো সবে,হও রাজহংস। জল শুধু পড়ে রবে,দুধ হবে ধংস।

সনেট ।।সূর্য সাগরে।।-১৪০

 ।।সূর্য সাগরে।। দেবপ্রসাদ জানা  ২৫.১১.২০২০ সমুদ্রের পেট চিরে,সূর্য জন্ম নেয়- নীলাকাশে মহানন্দে,পথ চেয়ে থাকে। সাগরের ঢেউ তারে, কত দোলা দেয়, বেড়ে ওঠে শিশু সূর্য,আকাশের বুকে। শিশু সূর্য গায়ে দিয়ে,সোনার রোদ্দুর বিপুল উল্লাসে খেলে,সাগরের সাথে তুষারে ঢাকা পাহাড়,দেখিল যদ্দূর কেন সূর্য হামি দেয়,সাগরের মাথে। মনের গভীরে তাই,অভিমান তার নবজাতকের হাসি,একা সাগরের? বরফ চাদরে মোড়া,বলিছে পাহাড়  কুয়াশাই বন্ধু হোক,বহু বছরের। মনে মনে জানে সূর্য ,খুব বেশি হলে। কেটে যাবে অভিমান,কুয়াসা না হলে।

সনেট ।।চেতনার শব্দ।।-১৩৯

 ।।চেতনার শব্দ।। দেবপ্রসাদ জানা তোমার চোখের তারা,কি যেন বলছে ডেকে,শুনতে পাও কি তুমি চিত্রলেখা। অনলে আগুন দিতে, হৃদয় কাঁদিছে  তোমারই আঙিনায়,পোড়ে পত্রলেখা। একা একা করিডোরে দীর্ঘ অপেক্ষায়  কেন যে দাঁড়িয়ে ছিলে,এখনো বুঝিনি। আমার লেখা কবিতা,তোমারে শোধায় তুমি কি ভালোবেসেছ?বুঝতে পারিনি। তোমার উষ্ণ ঠোঁটের নিচে ক্ষত,তাই অজানতে যদি ঘটে,গুপ্ত পরকীয়া অন্ধতায় লাগে যদি, কলঙ্কের ছাই। বিষাদে কাঁদছে বুঝি, ঐ বিসন্ন হিয়া। কবিতার অহঙ্কার,লিখে ফেলি গদ্যে। সব পাপ ধুয়ে ফেলি,চেতনার শব্দে।

সনেট ।।উজ্জ্বল সৌমিত্র।।-১৩৮

 ।।উজ্জ্বল সৌমিত্র।।   দেবপ্রসাদ জানা      ২৩.১১.২০২০ ঘুমালে সূর্য ঘুমাও, উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। নীলের স্বপ্ন,চোখের তারায় তারায়- অধরে অবাক হাসি, উন্মুখ মষ্তিষ্ক। সুকন্ঠ রচনা তব, দেহ সুষমায়। দিগন্ত বিস্তৃত যশ,সমুদ্র গভীরে   ভেজা মনে কত শত,প্রাণঢালা গান। তোমার জীবন ছিল,সততাকে ঘিরে। নিজেই নিজেকে খুঁজে,ভরেছিলে প্রাণ। তোমার কবিতা লেখা,বোধের আভাস রঙিন গোলাপে ভরা, মিঠে প্রেমপত্র। চোখের গহ্বরে আঁকা,জোড়া ক্যানভাস। রুপালি জোছনা তুমি,উজ্জ্বল সৌমিত্র । পূর্ণ হলো দেহলীলা,বন্ধ হলো খাতা। ছিন্নতার ব্যথা জানে,ঝরে পড়া পাতা।

সনেট ।।নট নাট্যাচার্য।।-১৩৭

 ।।নট নাট্যাচার্য।। দেবপ্রসাদ জানা   ২৩.১১.২০২০ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়,আমাদের সূর্য, সূর্য গেছে পৃথিবীর,অন্যপারে চলে দিগন্তরেখার বাইরে,নট নাট্যাচার্য। সব কাজ,করে গেলে,সব রঙ ঢেলে। নদী বয়ে যেতে যেতে বালুচরে এনে হারিয়েছে চুপিচুপি,বালির আড়ালে। সত্যজিতের অমল,চারুলতা আনে। অপুর সংসারে তুমি,কত মান পেলে। অন্ধকারে ডুবে গেল,নাটকের পাড়া শুন্য হলো টালিগঞ্জ,নক্ষত্র বিহীন চলে গেলে অকস্মাৎ,এত কিসে তাড়া? সমস্ত উজাড় করে,চলিলে সেদিন। কেমনে হারাল সেই,অমূল্য জীবন। কেড়ে তাকে নিতে পারে্?বিদেহী মরণ।।

সনেট ।।কৃষ্ণ প্রেম।।-১৩৬

 ।।কৃষ্ণ প্রেম।। দেবপ্রসাদ জানা  ২২.১১.২০২০ কানাই তোর বাঁশির সুরে রাধা কাঁদে কদম গাছের তলে। হারিয়ে কলস, হা কৃষ্ণ, হা কৃষ্ণ, নীল যমুনার বাঁধে, কেমনে সে ফেরে ঘরে,কাটিল দিবস। ভেসেছে কলস,নীল যমুনার বুকে - দুষ্টু কানাই বাজাল বাঁশি আচম্বিতে, রাধা তাই খোঁজ করে ভোরবেলা তাকে। যমুনা নদীর তীরে,কদম তলাতে। জ্বালায় কৃষ্ণ,সকাল বিকাল,হেথায়  কৃষ্ণ প্রেমে রাধারানী,পাগল হয়েছে সকাল হতে শ্যামের,বাঁশি বেজে যায়। উথালি পাথালি মনে,শরম গিয়েছে।  বিশুদ্ধ প্রেমের ছোঁয়া,লেগে গেছে হায়, রাধা রাধা করে কৃষ্ণ,যমুনাতে যায়।

সনেট ।।যদি শিব হতাম।।-১৩৫

 ।।যদি শিব হতাম।।  দেবপ্রসাদ জানা    ২১.১১.২০২০ একটা চাঁদ থাকত,কপালে আমার। প্রাণ ভরে জোছনায় স্নান করাতাম। শরীর জুড়ে শুধুই,আলোর বাহার। দিনের আলোতে নয়,নাই ডাকতাম। একটা গঙ্গার স্রোত,জটা দিয়ে বেয়ে পড়তো শিবের মতো,শুদ্ধ হতে তুমি। কালি সব ধুয়ে যেতো,গঙ্গাস্নানে গিয়ে। পাপ তাপ ধুয়ে গিয়ে,সতী হতে তুমি। শরীরময়,সুগন্ধি ফুলের বাগানে- মৌমাছির ভিড় হবে,মধু খাবে এসে। তোমার দেহের মোহ,সৌন্দর্যের বানে করবে বস ভোমরা,ভারি অনায়াসে  আসল প্রেমিকা পাবে,প্রেমিক হৃদয়। গুন গুন গান গাবে,প্রেমিকা সদয়।

সনেট ।।শেষবারে একবার।।-১৩৪

 ।।শেষবারে একবার।।    দেবপ্রসাদ জানা      ২০.১১.২০২০ নারে,পারবো না তোকে,ভুলতে কখনো বক্ষের অতলে আছে,ভীষণ বেদনা। মন চায় ধরে রাখি,জীবন এখনো, পড়ে আছি লয়ে তোর,শেষ ছবিখানা। তোর প্রতি ভালোবাসা,কমিয়েছে আয়ু  নানা রঙ নানা কথা মনে পড়ে যায়। কখন আসবি ওরে , ধরে প্রান বায়ু। কলঙ্ক যা ছিল তোর,ধুয়ে দেবো আয়। কার ভয়ে অপেক্ষায়,দুয়ারের ধারে  চাঁদের কলঙ্ক নিয়ে,চাঁদ আছে বেশ। তোর ভালোবাসা তুই,দিস নারে তারে, শেষবারে একবার,প্রেমের আবেশ। শেষ প্রদীপের শিখা জ্বলে আছে তাই, প্রাণবায়ু বেরতে যে,আর দেরি নাই।

সনেট।।মনোফুল।।-১৩৩

 ।।মনোফুল।। দেবপ্রসাদ জানা  ১৯.১১.২০২০ তোমাকে দেখেছি সেই,কুয়াশায় মোড়া এক ভোরের সকালে,শিউলির তলে। ঐ ফুলের সাঁজি হাতে,টপকিয়ে বেড়া এসেছ বাগানে মোর,হাতের নাগালে। যেন স্বর্গের রমনী,এসেছে বাতাসে- ভেসে,যেখানে মিলেছে,হৃদয়ে হৃদয়। পৃথিবীর সব সাদা মেঘেরা আকাশে- ভিড় করে আছে ওই,পাকিয়ে বলয়। শিউলির মতো মন, ঘ্রাণে মুখরিত। পূবের দিগন্তে হাসে,প্রেমোহারী সূর্য। শিউলির হাসি ছিল,বেশ পুলকিত। কেড়ে নেবে সব হাসি,অহঙ্কারী সূর্য। পড়ে থাকে মনোফুল,ঘাসের উপরে। তুলে নিয়ে এসো প্রিয়া,সাঁঝির ভিতরে।

সনেট ।।প্রেম সঙ্গমে।।-১৩২

 ।।প্রেম সঙ্গমে।। দেবপ্রসাদ জানা    ১৮.১১.২০২০ তোমার ছবিতে আমি,ওঁত পেতে থাকি  কোথায় লুকিয়ে আছে?গোপন পিপাসা। অধরে অধর দিতে,ডাকে শুখ পাখি দেহের কাননে ঝরে,অমৃত সহসা। অমৃত অধরে তব,পান করি সুখে অলি সম দেহ মোর,মত্ত হলো রসে। জাগরিত দেহ মোর,চোখে চোখ রেখে প্রেয়সী রজনী সখী,জোছনায় হাসে। প্রস্তর স্তম্ভের নিচে,প্রেম কাঁদে পড়ি মরা নদী বান ডাকে,সাগর সঙ্গমে উঠেছে অমৃত কুম্ভ,টানাটানি করি। আহা রে প্রেমের ব্যথা,পড়িল শরমে। প্রেমের জোয়ারে ভাসে,হৃদয় আমার। এত প্রেম কোথা ছিল?ছবিতে তোমার।

সনেট ।।এ এক নাট্যমঞ্চ।।-১৩১

 ।।এ এক নাট্যমঞ্চ।।   দেবপ্রসাদ জানা      ১৭.১১.২০২০ যখন ভাবনা গুলো কুপথ ধরেছে বুকের বাঁ পাশে সেই,থিয়েটার হলে প্রতিদিন সততার নাটক করছে। বাসনার দূতক্রীড়া,নাটকের দলে। জীবন্ত ক্ষতের দাগে অবিকল সত্য, যাতনায় বেজে ওঠে গিটারের সুর  দেহের পসরা ঢেলে, দিনরাত নৃত্য। অসুখের তানপুরা বাজে ভরপুর। মিথ্যে ভালোবাসাটাকে সত্যের আল্পনা  দিয়ে সাজিয়ে,দেহের বাগিচা সেচন। মনের রুক্ষ ভূমিতে, ফলন মন্দ না। অন্ধকার নাট্যমঞ্চে,অচিরেই পচন। কপট প্রেমের মায়া, দেখে যায় শুধু। অম্লান অচেনা হাসি,খেয়ে যায় মধু।     

সনেট ।।পারবে কি তবে?।।-১৩০

 ।।পারবে কি তবে?।।    দেবপ্রসাদ জানা আজ নতুন করেই তোমার মনের গভীরে ঢুকতে চাই,গোপা,চিত্রলেখা। আগমনী সুর, মনে বাজছে,গানের। তোমার হৃদয়ে লাল গোলাপ যে আঁকা। বেহাগ সুরে বাজবে কেনরে সোহাগী আজ আমার তোকেই পাওয়ার পালা ওরে গোপারানী আমি জানি তোর লাগি কতপথ কতকথা, ঠিক মধ্যবেলা। আলাদা কোন গুরুত্ব,আজ আমি নই। তোমার কবিতা মোরে দিয়েছে সম্মান। তোমার ভাষায় মোরে,শুধু খুঁজে পাই। তোমাকে নিয়েই মোর,এই প্রেমগান।   অনুভব করি আমি,তুমি সব দেবে সব আগে ভেবে দেখো, পারবে কি তবে?

সনেট ।।এসো নররূপে।।-১২৯

 ।।এসো নররূপে।।   দেবপ্রসাদ জানা    ১২.১১.২০২০ তুমি অন্তর্যামী,তুমি অসীম বিধাতা আমি দেখেনি,তোমার রূপ রস গন্ধ। তবুও বিরাজমান,তুমি বিশ্ব পিতা। সর্বত্র ছড়িয়ে আছে তোমার সুগন্ধ। তোমার ছায়ায় শান্তি,তাও আমি জানি তোমার সান্নিধ্যে মুক্তি,তুমি মহাকাল। তোমার অস্তিত্ব শুধু মন্দিরে? কি জানি? তুমি জলেস্থলে আছো,শুনি চিরকাল। তবে কেন হিংসা রোষ,জগতের বুকে। তোমার সৃষ্টিকে করো নাশ দয়াময়। নানা রঙে নানা সাজে দেখি কত লোকে, তোমার দেওয়া শক্তি, করে অপব্যয়। দেখা দাও,কথা দাও,এমন সঙ্কটে। নররূপে দেখে যাও,ভালো নেই মোটে।

সনেট ।।সেই অন্ধকারে।।-১২৮

 ।।সেই অন্ধকারে।।   দেবপ্রসাদ জানা      ৮.১১.২০২০ সবাই যখন আলো নিয়ে খেলা করে, নিয়নের আলো বুকে করে পথ চলে, জোছনায় পাশাপাশি,আমি অন্ধকারে  খুঁজি তারে,গঙ্গা পাড়ে,বট বৃক্ষ তলে। প্রবল ঘৃণায় কাঁপে,আকাশের চাঁদ। আমাকে দেহের মধ্যে,আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে খেয়েছো অমৃত সুধা,ভেঙ্গে ছিল বাঁধ, আমার ষোড়শী দেহে,রসাল অধরে। বুঝিনি সেদিন আমি,তোমার নজরে, আমার সদ্য যৌবন। বিশ্বাসে ঐ হাতে রেখেছি আমার হাত,অন্ধ কারাগারে, যেখানে করুণা নেই,দয়া নেই রাতে। নষ্ট দেহটার জন্য, ঘোর অন্ধকার । নষ্ট করল যে,তারে আলোর বাহার।

সনেট ।।পরিচয়।।-১২৭

 ।।পরিচয়।। দেবপ্রসাদ জানা ১০.১১.২০২০ আমি তোমার অপেক্ষা করেও দেখেছি। বহুদিন বাসস্ট্যান্ডে,লেকের ধারেও। আমি ফোনে বারবার,কলও করেছি। ম্যাসেঞ্জারও করেছি,দেখনি সেটাও। তোমার ভাবনা,তার মধ্যেও ঢুকেছি, শরীরে ঢুকে দেখেছি,তোমার হৃদয়, বিস্তৃত প্রান্তরে একা,বিষন্ন দেখেছি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে,হাল ছেড়েছি নিলয়। সঙ্গমের শেষে,সেই তোমার আমার, শেষ দেখা হয়েছিল, নীল বিছানায়। বলতে,প্রেম যৌনতা নয়, অঙ্গীকার,  আমিও,দিন গুনছি,আছি অপেক্ষায়। তোমার সন্তান দেহে,জায়গা করছে। সে ও তার পরিচয়,ভেতরে খুঁজছে।

সনেট।।মহামায়া জায়া।।-১২৬

 ।।মহামায়া জায়া।।   দেবপ্রসাদ জানা     ০৬.১১.২০২০ হে প্রভু কেমন লীলা,সব শক্তি তারে? বুদ্ধি পেতে সরস্বতী,টাকা পেতে লক্ষ্মী। বউয়ের সাথে দ্বন্দ্ব, থাকি অনাহারে। শক্তি চাই,দূর্গা কালি,যেন তারা যক্ষী। সব শক্তি,নারীশক্তি,বাবা তোমরা কি? তুমি আছো হিমালয়ে,নারায়ন একা। বাঘ্রচর্মে লজ্জা ঢাকো,শাস্তি পাও নাকি? সাপ আছে পাহারায়,কই যাবে কাকা? লম্ফঝম্ফ,নামযশ,কিছু নয় কাজে। চক্রবক্র ছেড়ে বিষ্ণু,বাঁশরিয়া মস্ত। ত্রিশুলটা দান করে, ঢুগঢুগি বাজে। বুদ্ধি শক্তি ধন দিলে,নিজে শুন্য হস্ত। ভয়ে ভয়ে ঘরে থাকি,সব শক্তি তার। ভগবান হেরে গেছে,আমি কোন ছার।

সনেট ।।বিশ্বাস।।-১২৫

    ।।বিশ্বাস।। দেবপ্রসাদ জানা   ৭.১১.২০২০ ভাবছি মন্দির করে,তাতে তোর ছবি বসিয়ে পুজো করব,হেমন্তের মাসে, হালকা শীতের ছোঁয়া,মুসম্বিনী রবি। শিশিরে ভেজা সকাল,নির্মল বাতাসে। তার মন বিশ্বাসের হাত ভালোবাসে। বাসুক না,ভালোই,কি আর এসে যাবে? যে হাতে কালিমা নেই,সে হাত কোথায়? সকালের মতো স্বচ্ছ হাত তুমি পাবে? তার হাতের আদর মাখানো বিশ্বাস, মোর বুকের উপরে,নীড় গড়ে তোলে। ভালোবাসার অঙ্গনে, ভরসার প্রশ্বাস। রুপালী জোছনা ভরা আকাশের কোলে। আমি খুব সহজেই,তার উষ্ণ স্পর্শে, নীলকন্ঠ হয়ে যাই, অনন্য আদর্শে।

সনেট।। যদি পারো।।-১২৪

 ।। যদি পারো।। দেবপ্রসাদ জানা    ৯.১১.২০২০ শুকিয়ে যাওয়া ধান ক্ষেত ধরে,খালি - পায়ে,যদি পারো তুমি,হেমন্তে, হালকা- হিমেল আঁধারে এসো,নিয়ে পুষ্প ডালি, এসো নীল আকাশের শেষে,শুধু একা। যদি পারো কাশবনে এসো একবার। ঝরে পড়ে থাকা সাদা শুষ্ক কাশফুল তোমার পায়ের উষ্ণ ছোঁয়ায় আবার  জেগে উঠবে আনন্দে,সেই কাশফুল। গোলাপ শিউলি ফুলে আবৃত আমার  সদ্য মৃত দেহ খানা,আছে অপেক্ষায়। কোকিলের কুহুতানে,রাতের আঁধার- কেটে,জীবন আসবে ভোরের আভায়। জীবন কান্ডারী এসো,লাল শাড়ি গায়।  যদি পারো এসো বধূ,ঘোমটা মাথায়।    

সনেট ।। ময়লা।।-১২৩

 ।। ময়লা।। দেবপ্রসাদ জানা   ৫.১১.২০২০ দুখের পাহাড়ে জন্ম নিয়েছে আগাছা। দুখের থেকেও তারা,আরো ভয়ঙ্কর  যেটুকু সুখের নদী,তাতে পরগাছা- দুখের পাহাড়ে কষ্ট, দুখের উপর। একটা ইদুঁর চাই, দুখের পাহাড়ে সে শুধু দুখের মাটি,কেটে ফেলে দেবে একজোড়া হলে ভালো,সংখ্যায় তো বাড়ে এক দুই তিন করে, বংশ বৃদ্ধি হবে। ইদুঁর পারে দুখের পাহাড় কাটতে। সাহসী ইদুঁর, মনে বসবাস তার। লুকিয়ে থাকে মনণে। নিষ্ঠুর আঘাতে অলস মনের শক্তি,জাগিবে আবার। দুখের পাহাড় খানা,ময়লার টিলা। জমেছে ময়লা মনে,ফেলো এই বেলা।

সনেট।।জীবনের ধারাপাত।।-১২২

 ।।জীবনের ধারাপাত।।    দেবপ্রসাদ জানা      ০৩.১১.২০২০ হাসিকান্না সুখদুখ,জীবন সংগ্রাম। সময়ের তালে তালে,চলে একসাথে। মৃত্যুহীন জীবনের,নাই কোনো দাম। জন্মমৃত্যু দুজনায়,থাকে এক রথে। বাকি সব অভিনয়,জীবনের মঞ্চে  সার্থক অভিনয়েই, সগর্বে প্রস্থান। শেষ সংলাপ যাহার,জাঁক রঙ্গমঞ্চে, সময়ের স্রোতে তার,যশ ভাসমান। জীবন অতীত হবে,কর্ম ভবিষ্যৎ  লোক মুখে নাম রবে,মরণের পর। বর্তমান নষ্ট হয়, হোক ভগীরথ, গঙ্গা তোরে নিয়ে যাবে,বছর বছর। জীবন নদীর ভাঁটা,অল্পক্ষন থাকে। অভিজ্ঞতা উপলব্ধি,তর তাজা রাখে।

সনেট ।।মহালক্ষ্মী।।-১২১

 ।।মহালক্ষ্মী।। দেবপ্রসাদ জানা ০১.১১.২০২০ এসো মাগো মহালক্ষ্মী,পৃথিবীতে এসো আকাশের বুকে দেখো,জোছনার খেলা। পূর্ণিমার চাঁদ ডাকে,তার পাশে বসো। জোছনার আলো জ্বেলে,দেখো এই বেলা। নমঃলক্ষ্মী,নমঃলক্ষ্মী,কোজাগরী রাত। এত আলো জোছনার,তবুও আঁধার। কিছু ঘরে ভরা আলো,কিছু ঘরে রাত। প্রদীপের বুক পুড়ে,যায় প্রতিবার। চারদিক দেখে এসো,সব অনাহারে না খাওয়া যত মুখ,খিদের জ্বালায়, তোমার কৃপার লাগি,উপবাস করে। জোছনা উপুড় করো,রাতের বেলায়। সবশেষে এসো তুমি,আমাদের ঘরে। কষ্টে যদি চোখে জল,ঝরঝর ঝরে।

সনেট ।। মা লক্ষ্মী ।।-১২০

 ।। মা লক্ষ্মী ।। দেব প্রসাদ জানা ৩১.১০.২০২০ দক্ষিণহস্তধারিনী পাশ,অক্ষমালা বামহস্তে নীলপদ্ম অঙ্কুশধারিণী, পদ্মাসনে উপবিষ্টা, শ্রীরূপ,নিরালা ত্রিলোকমাতা,সুন্দরী,হৃদয়হারিণী। সর্বালঙ্কারভূষিতা, ব্যগ্রহস্তে মাতা, সুবর্ণপদ্মধারিণী,বামে কুম্ভ ধরো । বরদাত্রীদেবীলক্ষ্মী,হে ত্রিলোক মাতা ধনদাত্রী মধ্যনেত্র জাগরিত করো। দিকে দিকে অনাহার,খাদ্যের অভাব,  জগন্মাতা দেবী, করো রাগ পরিহার। মুক্ত করো, অন্ন ভরো,কেন মৌনভাব? খোলো গো নয়ন তব,দেখো একবার । নিশীথে বরদা লক্ষ্মী,দেবী কোজাগরী। ধন রত্নে পূর্ণ করো, শুন্য এ গাগরী ।

সনেট ।।অদ্ভুত পূরাণ।।-১১৯

 ।।অদ্ভুত পূরাণ।। দেবপ্রসাদ জানা এ এক অন্য জীবন,পাতাশূন্য বৃক্ষ, আত্মক্ষতে চিরস্থির,ভরানো শূন্যতা। মুখোশে ঢেকেছি মুখ,অন্তরালে যক্ষ, মিথ্যে নয়,ভয়ঙ্কর সত্যি,গুপ্তকথা। আমারই লক্ষ্যভেদে সবার মরণ। এসে গেছি ধর্মরাজ্য স্থাপন করতে। পৃথিবীর নাট্যমঞ্চে,আমি দুর্যোধন। আমি শকুনির পাশা,যুদ্ধের চক্রান্তে। আমি কৃষ্ণ অস্ত্র ধরি,এই মহাযুদ্ধে রথের সারথী হয়ে,কতদিন রই? রক্তস্রোতে নদী হোক,এই ধর্মযুদ্ধে বিধাতা পুরুষ আমি,আর কত সই? নর নই,দেব আমি,দেবতার দান মহাপ্রাণ মহাকাব্য অদ্ভুত পূরাণ।।

সনেট ।।শ্যামাপোকা।।-১১৮

 ।।শ্যামাপোকা।। দেবপ্রসাদ জানা   ১১.১১.২০২০ শ্যামাপোকা গুলো রোজ,আলো চায় আলোর ভিতরে আছে, মরণের ফাঁদ। প্রতিদিন আলো তারে,কাছে যেন পায়, জোছনা কহিল শ্যামা,তোর প্রেম চাঁদ। শুনিল না শ্যামাপোকা,এত ভালো লাগা। বুদ্ধু শ্যামার,আলোর নেশা, কবে যাবে? পোকার জন্য আলোর,এই রাত জাগা। প্রেমের আগুনে পোকা,পুড়ে ছাই হবে। আমার ভালো থাকার গল্প বলি যাকে। কখনো আঁধার পথে,রেখে হাতে হাত। মনের আগুন শুধু, মরীচিকা ডাকে। আলোর ভেতরে থাকে,মরণের রাত। নষ্ট প্রেমে শ্যামাপোকা,করে আত্মদান, প্রেমের আগুন তারে, দিলো বলিদান।

সনেট ।।চমক।।-১১৭

 ।।চমক।। দেবপ্রসাদ জানা ৪.১১.২০২০ চমকে দিয়েছি আজ তোকে,তাই নারে? তোর মনে এত প্রেম,আমায় দিলি না? এতো কিসে ভয় তোর? শুধু পালাস রে। তোর চোখে কার ছবি?কেন বলিস না? কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে,অন্ধরাতে একা। চমকে উঠিস কেন?প্রিয়া অকারণে। যার ছবি তোর চোখে,সেও বড় বোকা। এলোমেলো প্রেমে তোর,খুশী শতজনে। কিরে চমকে দিয়েছি কিনা বল তুই? তোর ভাষাতে বলিস,বুঝে নেব আমি। কার ছোঁয়া পেলে খুশী,হোস বল তুই? বল না আমায়,ওরে সহ্য করি আমি। প্রেম জোয়ারে ভাসলি যদি,পরবাসে । অদেখা প্রেমের মনে,ভালোবাসা আসে।

সনেট ।।প্রেমে পরাধীন।।-১১৬

 ।।প্রেমে পরাধীন।।   দেবপ্রসাদ জানা     ০২.১১.২০২০ ভেবেছ কি,লালশাড়ি আর লাল টিপে, আমার মনের মধু, নিয়ে নেবে তুমি? নিয়নের নীল আলো,আর গন্ধ ধুপে, আপন করে নেবে কি,রুক্ষ ওষ্ঠ চুমি! ওই আঁচলে লুকানো,অমূল্যরতন। লোভী নয়ন টানছে,সেইদিক পানে ফুলের গন্ধে মাতাল,করলে চরণ। কত কথা চুপিচুপি,বলে সাধারণে। তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে এল,দেখে মধ্য দেশ বাতাস যেন করছে খেলা,অকারণে। স্পর্শ তোমায় চমকে দিল? বেশ বেশ। বুকের আঁচল দিচ্ছো,ফেলে আনমনে। আদরে আদর দিলে,ধরে সারাদিন। উষ্ণ ভালোবাসা পেতে,হই পরাধীন।  

সনেট ।।সপ্তম আশ্চর্য।।-১১৫

 ।।সপ্তম আশ্চর্য।।  দেবপ্রসাদ জানা   ২৩.১০.২০২০ এ এক মহাসপ্তমী, সপ্তম আশ্চর্যে পুজো আছে প্যান্ডেলও আছে চারদিকে দেখতে পাবে না কেউ, ফল কৃতকার্যে সাতশ বছরে সাত ঘটনার ফাঁকে। আলোয় আলোয় ভরা,দেখি চারদিক লোকে লোকারন্য সব,দোকানে দোকানে চোখের তারায় অশ্রু,কেন বলে দিক মায়ের ঘরেতে ঢোকা বারন কে মানে? পুজো এসেছে আনন্দ,সাজের বাহারে  আনন্দ উল্লাস ডাকে,মায়ের কাছেই নতুন পোষাকে নানা নব অলংকারে গয়না দিয়ে সাজাবে,থাকবে পাশেই। হায়রে বিধাতা কিযে,অভিশাপ লাগে মায়ের আরাধনায়,নো এন্ট্রিও লাগে।

সনেট ।।মানুষ।।-১১৪

   ।।মানুষ।। দেবপ্রসাদ জানা ৩০.১০.২০২০ আমাকে মানুষ হতে দাও বসুন্ধরা। কেন ভরে দিচ্ছো মনে,কুসংস্কার সব। আলখাল্লা,নামাবলি যত পরম্পরা- তোমরা-সবাই খুলে নাও,তোলো রব। মোরে অমানুষ করে কিযে পাও তুমি। কোরান,পুরাণ,গীতা,বাইবেল,বেদ ধর্মের এত যে ভাগ,কেন রাখে ভূমি ? বুঝিনি আজও আমি,এ প্রকারভেদ। মানবিকতা পালন ,জীবনের ধর্ম। জীবনের সত্যি মানে,বুঝতে চাইছি। আমার ফাঁকা মন্দিরে,মানুষের কর্ম তাই যে অবিনশ্বর,বুঝতে পারছি। মন্দির আমার ধর্ম,মসজিদ কর্ম। আল্লাহ হৃদস্পন্দন,ভগবান বর্ম।

সনেট ।।কই এলে নাতো আর।।-১১৩

 ।।কই এলে নাতো আর।।       দেবপ্রসাদ জানা         ২২.১০.২০২০ "আবার আসিব ফিরে"এলে নাতো কবি? এই বাংলায় নবান্নে। না এলে না তুমি? ধানসিড়িটির তীরে,এঁকে দিতে ছবি রূপসী বাংলার। কাঁদে তব বঙ্গভূমি। এসো শালিকের বেশে,কিংবা শঙ্খচিল নয়তো মানুষ হয়ে, ঐ কাকের মত- কুয়াশার বুকে ভেসে,পার হয়ে ঝিল। কাঠাঁল গাছের তলে পথিকের মত। হলে নাতো হাঁস,নদী সাগর পাহাড়  কই কিশোরীর পায়ে ঘুঙুরের ধ্বনি হতে খুঁজেতো পাইনি,কোনদিন আর। এই পৃথিবীতে শুধু হাহাকার শুনি। ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হয়েছে এবার। পৃথিবীতে ঘনিয়েছে অদ্ভুত আঁধার।

সনেট ।।না প্রতিবাদ নয়।।-১১২

 ।।না প্রতিবাদ নয়।।   দেবপ্রসাদ জানা     ২৫.১০.২০২০ কত দূর আর যাবে,বিদ্রোহের ঝড়? প্রতিবাদের কন্ঠে কি,ছিল বীজ মন্ত্র? স্তব্ধতার পাথর যে,সর্বদা অনড়। প্রস্তর খন্ড শোনেনা,বিদ্রোহের মন্ত্র। রেশনে চাল ডালের তঞ্চকতা ভারি বিনামূল্যে বিতরণ,হয়েছে সদাই - বিনা প্রতিবাদে পাই,তাই ব্যাগে ভরি। এত হেরাফেরি কার?কিছু দেখি নাই। বস্তা বস্তা চাল ডাল গোপনে ফিনিস ডিজিটালের নামেই,কত কার্ড বন্ধ। সব গ্রাহকের পন্য,কোথায় জানিস? আগে পিছে সব কিছু সম্পূর্ণ প্রবন্ধ। যে গলিতে প্রতিবাদ,জন্ম নেয় আগে সেই গলিতেই তার,মৃত্যু আগে ভাগে।।

সনেট ।।কবিতার জন্ম।।-১১১

 ।।কবিতার জন্ম।।  দেবপ্রসাদ জানা ২৪.১০.২০২০ কবিতা যখন প্রেমে পড়ল সেবার তখন আমার হাতে,রক্ত মাখা ছুরি। কাটাকুটি করে জন্ম হয় কবিতার? লাবণ্যহীন কঠিন,অদ্ভুত বিচ্ছিরি। হাসপাতালে মায়ের পেট কেটে বাচ্ছা  সময়ের আগে মুক্ত। স্বরচিত কাব্য। আধুনিকতার ভীড়ে পরকীয়া কেচ্ছা, নাভিশ্বাস উঠে আসে,এমনই সভ্য। এ কবিতায় প্রেমের পোকা কুরে খায় দেহ, উষ্ণ চুম্বনের আগেই পাপেরা ঘোরাঘুরি করে কিনা? শুন্য স্তব্ধতায় আপাদমস্তক ঘিরে থাকবে পোকারা। প্রেমের কবিতা জন্ম স্বাভাবিক হবে তবে বিগলিত প্রেম চিরকাল রবে।

সনেট ।।ভেদাভেদ।।-১১০

  ।।ভেদাভেদ।। দেবপ্রসাদ জানা  ২১.১০.২০২০ যেই দেশের মানুষ, আটশ টাকার খাবার কিনে,একশ টাকার ভক্ষন করে,বাকি আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেয় তার বেঁচে যাওয়া খাবার। সে রাজ নন্দন। সেই দেশে একদল লোক ফুটপাতে- থাকে খাবারের খোঁজে।খাদ্যের অভাবে। আস্তাকুঁড়ের খাবার,পড়ে যেন হাতে। একদল ফেলে দেবে,একদল খাবে। যেই দেশে কোটিপতি দেবতার বাস, যে দেশে ধনকুবের মানুষ দেবতা। গুরুদেবের আশ্রমে,মনিমুক্তা চাষ। বলতে পারেন কারা,এর হর্তাকর্তা? কি বলতে পারবেন?কেন ভেদাভেদ? কারোর সোনার থালা,কারো থালা ছেদ।

সনেট ।।অভিযোগ।।-১০৯

 ।।অভিযোগ।। দেবপ্রসাদ জানা ২০.১০.২০২০ তোমার আঁচল ধরে আছি মা,বোঝনি। এখনো ভয়ের স্বপ্নে, মা বলেই ডাকি- তুমি ছেড়েছ মা,আমি তোমাকে ছাড়িনি বিয়ে দিলে ছেলে পর,তাই চুপ থাকি। অথচ দেখো জামাই,কত,কত ভালো। বিয়ের পরে মেয়েই বেশি আপন যে, অন্যের ছেলে আপন,ভরে রাখে আলো। কি জানি হয়তো তাই,আমিও তাই যে। এক বাড়িতে থাকলে দোষ ত্রুটি সব, ভালোমন্দ থাকে কিছু,মেয়ে হলে মাফ। ছেলে হলে,বউয়ের পাল্লা ভারি সব কেন যে মা কিছুতেই,সইছো না চাপ। জীবনের সবকিছু অসমাপ্ত রেখে। তুলাদন্ডে মাপ করি,কে এগিয়ে থাকে।

সনেট ।।যারা বিবাহিত।।-১০৮

 ।।যারা বিবাহিত।।   দেবপ্রসাদ জানা     ১৯.১০.২০২০ অগত্যা হাঁটতে থাকি,তার হাত ধরে। জোছনায়,আলোছায়া পথে কুয়াশায়, যাকে আমি স্বপ্নে দেখি,রাতে দ্বিপ্রহরে রাতের গড়নে দিন,কেন যে হারায়? এক হাঁটু রক্ত,তার ওপর দিয়েই এক জঙ্গল মৃতেরা,হাহাকার করে তবু হাঁটতেই হবে,সে আছে কাছেই ওরা মরুক বাঁচুক,তার হাত ধরে। প্রতিবাদ হীন আমি,ঝামেলা বিহীন- জীবনের পথ ধরে,চলার কসম- খেয়েছি সেদিন,আর নয় কোনদিন, যার বিপদ তারই, শুধু পরিশ্রম। বিবাহিত জীবনের এটাই তো মজা ওরা বুঝুক ওদের,তুমি এসো সোজা।

সনেট ।।সাতনরী হার।।-১০৭

 ।।সাতনরী হার।। দেবপ্রসাদ জানা    ১৮.১০.২০২০ আজ একটু দেরিই হলো অগ্নিশিখা তুমি হয়তো বলবে যে,কোথায় ছিলে? কোথায় দিচ্ছিলে আড্ডা?পাইনি তো দেখা। নাকি আর কোনো বন্ধু,তার সঙ্গে ছিলে। সে এক অদ্ভুতকাণ্ড,গাড়িটা নিয়েই চাকার মধ্যে জড়িয়ে গেছিল সোনার- হার। সাতনরী হার, সেটার জন্যই  দেরি হলো আজ,ভারি অদ্ভুত ব্যপার। ওমা তাই নাকি?কই সেই হার দেখি। কত ভরি হবে বলে,মনে হয় সেটা সাত আট ভরি হবে নিশ্চয়ই,দেখি। দেখলে তো ভুলে গেলে,মিথ্যে কথা এটা। নাগো সোনা বন্ধু নয়,আড্ডাও দিইনি। অফিসে ভারি কাজের চাপ বেরোইনি।

সনেট।। ছদ্মবেশে।।-১০৬

 ।।ছদ্মবেশে।। দেবপ্রসাদ জানা  ১৭.১০.২০২০ ছদ্মবেশে একদিন, তোমার বাড়িতে- যাবো।"বলব গোপিনী,বাড়ি আছো আজ?" তুমি নাকাল হবেই,বলবে ভয়েতে- কেরে বাবা চোর নাকি?সবে হলো সাঁজ। হয়তো জড়িয়ে ধরে,কই ভালোবাসি। নয়তো,দরজা বন্ধ করে ধমকাই। যা আছে সবই দাও,মোরে হাসি হাসি। কি চাই বুঝেছ কিনা?সব কিন্তু চাই। এ বাড়িতে কেউ নাই,তুমি আমি একা ভালোবাসার এমন সুযোগ,কোথায়? আদর করে খাবার যদি থাকে রাখা ভালোবেসে খেতে দেবে,গোপিনী হেথায়। তারপর ছদ্মবেশ খুলে দেবো হেথা। রাগ করে তুমি আর,বলবে না কথা।

সনেট।।শরৎ ডাকে।।-১০৫

 ।।শরৎ ডাকে।। দেবপ্রসাদ জানা  ১৬.১০.২০২০ তোমার হাসির রঙ,শ্বেত দুগ্ধ জাত। তোমার হাসিতে স্নিগ্ধ,ভোরের সঙ্গীত  চোখে তোমার সবুজ অবুজ প্রভাত। শিউলি বনে,তোমার রূপের ললিত। নীল গোলাপ পাপড়ি, তোমার অধর- মিষ্টি মিষ্টি হাসি হাসে। সাদা কাশ ফুল প্রতিষ্ঠা করেছ তুমি দেহের উপর। তারার গহনা গায়,কর্ণে মেঘ দুল। বাতাস প্রেমের গন্ধ ছড়ায়। নীলাভ আকাশ,নীল হারিয়ে,গেল বনবাস। সোনালী ধান হারিয়ে সোনা,অরুণাভ। তোমার গায়ে শারদ প্রভাতী বাতাস । এখন কেন শরৎ? মধুর আহ্বানে - শরৎ আমায় ডেকো,দূর্গা বিসর্জনে। 

সনেট।। মন পাথারে।।-১০৪

 ।।মন পাথারে।। দেবপ্রসাদ জানা   ১৫.১০.২০২০ জলে নয় তো আগুনে,বিপন্ন লগনে শরতে নয় ফাগুনে,ডুব না দিলেও- ডুবিয়ে মারবে ওরা, ঐ আপনজনে- অতল সাগরে মন,ডুব না দিলেও। আমি তেমন ডুবুরি নই,তাও ভালো। তোমার মনের বিলে,ঝাঁপ দিয়ে আজ হাবুডুবু খেয়ে মন,সাঁতার শিখলো। গভীরে মনের থই,পেয়ে গেছি আজ। তোমার মনের নীল সমুদ্রে ডুবুরি ক্ষনকাল,সে সাগরে ডুবে মরি আমি। যা কিছু আমার তাই এনেছি সবরী কত আর পরীক্ষায়,তুল্য নেবে তুমি। মাঝ পাথারে তলিয়ে,যাওয়ার পরে নুড়ি পাথর কুড়িয়ে,নিয়ে আসি ঘরে।

সনেট।।নীরব ব্যথায়।।-১০৩

 ।। নীরব ব্যথায় ।। দেবপ্রসাদ জানা   ১৪.১০.২০২০ যেখানে হারিয়ে যায় মনের তরঙ্গ সেই কদম তলায়,আজ কৃষ্ণ নেই। বাঁশিও বাজে না সেথা,ওঠে না প্রসঙ্গ- তাদের। তবুও ছিল তারা এখানেই। ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে তাহাদের মুখ প্রেমই হারিয়ে যাচ্ছে,এসেছে শরীর ভালোবাসা আর প্রেম,বিপরীত সুখ। যার কাছে প্রেম দেহ,সে প্রেমে অস্থির। স্মৃতিগুলো মনে পড়ে,খোলা বারান্দায় জীবন গোধূলি বেলা,তবু নষ্টামিতে- হারানো যৌবন খোঁজে,নষ্ট নিরালায়। ভিক্টোরিয়ার চত্তরে,পূর্ণিমার রাতে। স্নেহ-সুধা ভরা চেনা গাছের তলায় ঝরে পড়ে প্রেম মধু, নীরব ব্যথায় ।

সনেট।। ততক্ষনে।।-১০২

 ।।ততক্ষণে।। দেবপ্রসাদ জানা ১৩.১০.২০২০ চাকার নিচে একটা মানুষ রক্তাক্ত, চলার পথে চলতে গিয়ে, মানুষটা- পথ হারিয়ে ফেলেছে, বিচ্ছিন্ন বিভক্ত ছিন্নভিন্ন শরীরের,বিকৃত মুখটা। ও ভাই আজ রাস্তাটা,জ্যাম কেন ভাই? স্কুলে যেতে হবে ঠিক সময়ে, নইলে- শাস্তি পাবে মেয়ে দুটো,কি করে যে যাই? যাক গে লোকটা বাচ্ছা দুটোকে বাঁচালে। দেখেছ কাকের কাণ্ড,নাড়িভুঁড়ি গুলো- ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে সব,কি মহাআনন্দে, রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখুন ওগুলো- ছড়িয়ে ছিটিয়ে খাচ্ছে,যে যার পছন্দে। বাচ্ছা গুলোকে বাড়িতে,পৌঁছে দিন ভাই। বড় নিষ্ঠুর বিধাতা,আমি চলে যাই।

সনেট।। ছায়া।।-১০১

    ।।ছায়া।। দেবপ্রসাদ জানা   ১১.১০.২০২০ ছায়া,তুমিতো জানোই,আমি বিবাহিত  তবে কেন শুধু শুধু,পাশে পাশে ঘোরো? যেখানে যাচ্ছি সেখানে,করছো বিব্রত। বৃথা তুমি পথেঘাটে, মোর হাত ধরো। বোধের অজস্র ঢেউ, তুমি ভেঙ্গে দিচ্ছো ভয়ে আমি আলোটাকে এড়িয়ে চলেছি আলোর ছটা পড়লে হাত ধরে নিচ্ছো। আমি যে সদাই  ভীত হয়েই রয়েছি- বাঁচার প্রত্যয়ে তার কাছেই থাকতে চাই।শীতল জোছনা স্পর্শ করে ধীরে। গুপ্তপ্রেম,পরকীয়া,পারি না করতে- যতই তোমার শরীর ছোঁয়াও শরীরে। ছায়া তুমি মায়া হয়ে করো না বিনাশ। এমনিতে মরে আছি,কেড়ো না প্রশ্বাস।।

সনেট।। অবরোধ।।-১০০

 ।। অবরোধ।। দেবপ্রসাদ জানা ১২.১০.২০২০ আজ গোধুলির মেঘ,দেখি অন্য মনে!  উদাসী বাতাস বয়, মনের অলিন্দে,  তার কথা মনে পড়ে,আজ সঙ্গোপনে!!  স্মৃতিপটে বোধহয় ফুল ফোটে ছন্দে! খোলা ওই বারান্দাতে দাঁড়িয়েছ তুমি,  আপন মনে বলছো,তুমি কত কথা মৃদুমন্দ বাতাসের,অঙ্গ ছুঁয়ে ভূমি- কালের রুদ্ধতা ভেঙ্গে,গড়ে নব প্রথা । হৃদয়ের সব প্রেম,দিয়েছি তোমায়। সব রূপ রস গন্ধ,দিয়েছিল রাধা- তবে কেন অবহেলে,রাখো অপেক্ষায়। খোলো মনের দরজা,কেন দাও বাধা? সন্ধ্যা ঘনিয়ে দিগন্তে,কনে দেখা রোদে- স্বরচিত উপন্যাস,পোড়ে অবরোধে।

সনেট।। মহামায়া।।-৯৯

 ।।মহামায়া।। দেবপ্রসাদ জানা   ৯.১০.২০২০ ওরে তোরা দূর্গা কালি,লক্ষ্মী সরস্বতী  বীরাঙ্গনা লক্ষ্মীবাঈ,তোদের কিসের - এতো ভয়? জেগে ওঠ,ওরে অরুন্ধুতী। হাতের সামনে মাথা, নর পিশাচের। ওরা দূর্গা কালি লক্ষ্মী,সব করে পূজো  নারীশক্তি মহাশক্তি, সব জানে ওরা- দেবীবরণ করছে, অত্যাচারে আজো। জাগো নারী এইবার,মুক্ত করো ধরা। যারা বে-আব্রু করছে,অ্যাসিড ঢেলেছে, ক্ষমা করো না ওদের,যারা জিভ কেটে - বোবা করে দিতে পারে,তারা কি ভাবছে পার পেয়ে যাবে তারা?বিধাতার কোর্টে। ফুটন্ত তেলের মধ্যে,ফেলে ভাজা হবে। সেইদিন বিধাতার ঘরে,তুমি রবে।

সনেট।। ফাঁসি।।-৯৮

   ।। ফাঁসি।। দেবপ্রসাদ জানা     ৯.১০.২০২০ মোরা সব ক্ষুদিরাম,খুদ দিয়ে কেনা ফাঁসির দড়ি পরেছি,হয়েছি শহীদ। মাতৃঋণ রক্তঋণ ভুলে গেছি কিনা? ফাঁসি কাঠে ঝুলে মোরা,প্রথম শহীদ। কতদিন কেটে গেল,ভ্যাকসিন কই মানুষ মারার কল,করেছো তাহলে? কাটাকুটি খেলা খেলো,ফল বেরবেই। ছয়মাস ধরে শুধু,বোকাই বানালে? হায়রে কপাল মোরা সবাই হয়েছি- ক্ষুদিরাম। ভ্যাকসিন ঘুমোচ্ছে এখনো, ঠান্ডা ঘরে। বোতলের লেবেল খুঁজছি- সোকেশের তাকে,কোন বোতলে লাগানো। বুঝে গেছি ফাঁসি হবে,কাল সকালেই লেবেল চুরির দায়ে, ধরা পড়লেই।  

সনেট।। অঙ্ক শেখা।।-৯৭

 ।।অঙ্ক শেখা।। দেবপ্রসাদ জানা  ০৮.১০.২০২০ সিঁড়ি ভাঙ্গা অঙ্ক গুলো,কেন মিলছে না? ঝরা ফুল শব্দ তুলে প্রতিবাদ করে। বুকের ভেতরে কাঁদে,প্রেমের যন্ত্রনা। শিশিরের ফোঁটা পড়ে,গায়ে টপ করে। আসলে চোখের জল,কাজলে কাজলে কলঙ্ক ধুয়ে ফেলতে চায় প্রতিদিন। গোপনে করা পাপের,কালির বদলে অশ্রু ঝরে প্রতিক্ষনে, প্রত্যাশা মলিন। চোখের কোনে অশ্রুতে মেশা বেদনার শিশির বিন্দু জমেছে,আকাশের চোখে। শূন্যতার নীলাকাশে কলঙ্কের ভার - নেবে ভালোবেসে আজ,শরতের থেকে। আকাশ বাতাস রোদ,ঐ মেঘ বলাকা। জীবনের সিঁড়ি বেয়ে,শুধু অঙ্ক শেখা।

সনেট।। ডাক আসেনি।।-৯৬

 ।।ডাক আসেনি।।  দেবপ্রসাদ জানা      ৭.১০.২০২০ ডাক আসেনি এখনো,তবে ডাক পাবো। বিনা আমন্ত্রনে আমি,কোথাও যাই না। হয়তো কয়েকবার,ভেবেছিনু যাবো। সাজগোজ করে ভোরে। অবাস্তব ভাবনা। একটা বিষের শিশি,সেই চিলেকোঠা তিন দিক খোলা ছাদ,বুকের যন্ত্রনা। ডাক পেড়েছিল রাতে,মুক্ত চিলেকোঠা। হ্যাঁ দুপুরে,একা ঘরে,সে ডাক মন্দ না। যন্ত্রনাটা যত বাড়ে, তার ডাক আসে কড়িকাঠ বা ঝুলন্ত পাখাটার শব্দে। বিষের শিশিটা ঘোরে,শুধু আশেপাশে। লিখে যাব রক্ত দিয়ে একবার, গদ্যে। তার ছলনায় আমি ভুলেছি আমায়। ভালোবাসা কেন এত,আমাকে কাঁদায়।

সনেট ।।একটা মিথ্যে।।-৯৫

 ।।একটা মিথ্যে।। দেবপ্রসাদ জানা     ৬.১০.২০২০ হ্যাঁ গুরুদেবের পায়ে,হাত দিয়ে মিথ্যে  বলেছিল বউ, তাই সেদিন মাথার পোকাগুলো প্রান পেয়ে,চাঁদের আবর্তে ঘুরেছিল চারমাস,নিশ্চিত ব্যথার। বিষন্নতায় লোকটা,পাগল হতেই বুঝেছিল তার বউ। কতখানি ব্যথা বুকে নিয়ে কেটেছিল। ভালোবাসাতেই লোকটা পাগল,তাও বুঝেছিল পৃথা। জীবনের সব রস,যখন শুকনো। বিয়ের পরেই সব,ছেড়ে চলে এলো- শুধু বউটার জন্য। তার আত্মমগ্ন কাজের ফাঁকেই বউ,প্রেমে পড়েছিলো। দিশাহারা লোকটার, জীবন মরণ। লেখা থাক কবিতায়,চোদ্দটা চরণ।

সনেট ।।গীতা।।-৯৪

     ।। গীতা।। দেবপ্রসাদ জানা   ০৪.১০.২০২০ গীতায় দিয়েছি মন,ভয় নেই তাই। মৃত্যু ভয়,করি জয়,গীতা অধ্যয়নে। বর্ণময় পৃথিবীতে,চলছে লড়াই। কুরুক্ষেত্র যত্রতত্র,সৈন্য জনগনে। জীবনের বহু বাঁক,ঘুরিলাম আমি এই যুদ্ধ দেখি নাই,গত জীবনেও- এ পোকা এমন পোকা,জানে অন্তর্যামী। ধর্মকর্ম অর্থবল,কিছু না রইলো। গীতা এখন বাসন,মাজে বাড়ি বাড়ি - পড়িব কেমনে তারে,ছিঁড়ে গেছে পাতা জীবনের সব মন্ত্র,নিয়ে গেছে কাড়ি। কহ কৃষ্ণ,কহ এসে,কুরুক্ষেত্রে গীতা। ধর্মরাজ্য স্থাপনের,কেমন লড়াই? অস্ত্র নাই রক্ত নাই, মরেছে সবাই।

স নেট - ৯৩ ।।তার রূপে মুগ্ধ আমি ।।

    ৯৩ ।। তার   রূপে   মুগ্ধ   আমি   ।। দেবপ্রসাদ   জানা   আনমনে   একা   একা   বহু   পথ   চলি । দেখিনু   তরুণী   কন্যা , ভিক্ষা   করে   সেথা হাসিমাখা   মুখখানি ,  মরাল   মরালী । ক্ষুদ্ধার   জ্বালায়   যেন , কহিছে   না   কথা ।   সর্পিনীর   মত   কেশ ,  দুলিতেছে   পিঠে । চঞ্চলা   উতলা   বায়ু , খেলে   তার   সাথে । খোলা   চুল   জট   লেগে , উড়িতেছে   বটে । ফুরফুরে   নীলশাড়ী , শত   ছিন্ন   তাতে ।   কৃষ্ণমৃগ   নীল   আঁখি ,  চাউনি   চপল , ইশারায়   তীর   ছোঁড়ে ,  হৃদয়   গহ্বরে । হায়   তার   কেশরাশি , করিল   চঞ্চল। মৃদু   মৃদু   হাসি   দিয়া , মন   যেন   কাড়ে ।   পথ   মাঝে   দাঁড়াইয়া , দেখি   কিছুক্ষন । রূপে   তার   মুগ্ধ   আমি , মনে   আলো...