Posts

Showing posts from June, 2024

মটরখানা

মটরখানা দেবপ্রসাদ আমার রঙিন মটরখানা– চলছে পথে একশ মাইল দীর্ঘ সে একটানা। ভোর বেলাতে আরম্ভ হয় নষ্ট গিয়ার–করি নাই ভয় পাহাড় বুকে যন্ত্রগুলো  রিক্স নিয়ে তা ছোটে। সকাল দুপুর বিকেলে সব দম দিয়ে সে খাটে। তিনজনাতে কিনেছে ভাগে কিনত কি তা জানলে আগে আমার মটরখানা। চলে না আর গড়গড়িয়ে চলতে চলতে যায় দাঁড়িয়ে। সস্তা দামে কেনা। আমার মটরখানা। কখনো তাতে তেল থাকেনা  নাড়িতে আর পাল্স থাকে না ফাটা গলায় কাঁপিয়ে ঘর বোঝে না মন কে যে পর তাই বুঝি দেয় হানা। এ আমার মটর খানা। সকাল বিকাল যাত্রী তিন একটু গেলেই হয় মলিন করবে কি তাও বুঝে না ঘর থেকে রোজ দণ্ডি লাগে জলের দরে বেচবে রাগে মিটবে মনের সাধ। কাটলো জীবন সংসার সেবায় ভাবছিল তাই করবে উপায় হলো সব বরবাদ। গাড়ি নয় সে দেহ আমার চলতে করে মানা। এ যে আমার দেহ মটরখানা।

প্রতিবাদ করেনি

প্রতিবাদ করেনি দেবপ্রসাদ কী না তুলকালাম করেই বৃষ্টি এসেছিল কাল  ঘরের মধ্যে দাপাদাপি করেছিল মেঘ, মেঘের গর্জন, বৃষ্টির শব্দ,  ঝড়ের শব্দ, বজ্রপাত। ঘুমোতে দেয়নি। কোন এক অদৃশ্য শত্রু সারারাত ধরে - পৃথিবীর বিদীর্ণ হাঁ-মুখ মাটি গ্রাস করেছে, আদিম হিংস্রতায়।  সোনালী ফসল ভয়ে- নিরুদ্বিগ্ন ঝাঁপ দিয়েছে মরণের ফাঁদে। কোনো প্রতিবাদ করেনি, বৃষ্টির মধ্যে ঝড়ের মধ্যে গুটিয়ে নিয়েছে নিজের সম্বিৎ। প্রচণ্ড প্রসব যন্ত্রণায় যুগান্তের মোড়ে প্রসূতির - এক-ফোঁটা রক্ত পতনের জন্য ভয়! উল্লসিত সূর্যের দিকে এতদিন উত্তপ্ত থাম গুলো রোষে চেয়েছিল মৃত্যু, উত্তাপের মৃত্যু। সারা পৃথিবী পেতে দিয়েছিল দুই বর্ণময় হাত সেই হাত একদিন গর্বে পৃথিবীর দীক্ষায়  আত্মঘাতী হতে চেয়েছিল- আজ কেন টালমাটাল ক্ষুধার্ত ভূমি? জীবন, পৃথিবীর পূর্ণ চাঁদ। এক উত্তাল সমুদ্র উপচে পড়েছে পৃথিবীর ওপর। ভাসিয়ে ডুবিয়ে তচনচ করে ভাণ্ডারের ক্ষুধা, সংহত শক্তির ওপর চুড়ান্ত বজ্রপাত।

অনেকটা এমনো হয়

অনেকটা এমনো হয়,  দেবপ্রসাদ ‘কে বললো আমি ভালোবাসা ছাড়া বাঁচি?  আমি আমার ভালোবাসাকে রোজ‌ দেখি। মননে, আত্মমগ্নতায়, দীর্ঘ কল্পনায় - এটুকুই কি যথেষ্ট নয়?’ কল্পনায় একটা মানুষকে যতটা ভালোবাসা যায়, সামনাসামনি কাছাকাছি কি তা যায়?’ টকটকে লাল রঙ করা একটা ঘর, একটা সুন্দর শোবার ঘর,  সকাল বিকাল কারণে অকারণে লড়াই, অন্ধকার ঘরে মোমের বাতি জ্বেলে, ক্যান্ডেল লাইট ডিনার,  এই কি প্রেম ভালোবাসা। এটা কোন দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার না,  এটা মুহূর্তের ব্যাপার।  একটা মুহূর্ত শুধু যখন আমার মনে হয়েছে, তখনই আমি তার প্রেমে পাগল হয়েছি। জড়িয়ে ধরেছি আবেগে, উৎকন্ঠায়- সময়টা এমনিতেই কেটে গেছে সানন্দে।’ তার স্মৃতি সঙ্গে করে। জীবনের এই সুদীর্ঘ সফর পার করে দেবো তার স্মৃতির সাথেই। জীবন এত ছোট যে তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়েই পার করে দেওয়া যায়।'  তার আসার অপেক্ষায় থাকতেও হয় না।

বৈপরীত্যের ছায়া

বৈপরীত্যের ছায়া দেবপ্রসাদ এ কি মায়া আকাশের পানে চেয়ে তুমি পেয়েছ অসীম নীলাভ ছোঁয়া, চোখের লাল সূর্যটাকে পূবে উদয় দিয়ে গনগনে আগুনে চেতনাকে দগ্ধ করেছ।  বিচ্ছিন্নতায় বোধের পদধ্বনি দূর্বার - আকাঙ্ক্ষায় প্রচ্ছন্ন অন্ধকার গহ্বরে, বলয়ের প্রতীক্ষায় থাকে অনাকাঙ্ক্ষিত মন। যন্ত্রণায় ওঠে, ভীষণ ঝোড়ো বাতাস। অলক্ষ্যে বেড়ে ওঠে ভাবনারা - শ্যাওলা পড়া দেয়ালে, নিঃস্পৃহ ইচ্ছেডানায় চিরচেনা তোমার চলার পথে, অবগুণ্ঠন খুলে দেখি বৈপরীত্যের ছায়া উৎকণ্ঠায় শিহরণ জাগে প্রাণে, মৌনতার প্রান্তরেখায় নগ্নতার ছোঁয়া   কক্ষপথহীন আকাশগঙ্গায় মহাজাগতিক প্রহসন আমি অনন্তকাল, ফিরে যাবো  নীলপদ্মের ঝরে পড়া পথে। অপ্রত্যাশিত মিলনের তীব্র বাসনা বিসর্জন দিয়েছি বিশ্বাসে। বিপরীত ইশারায় ডাকে পৃথিবী, ইচ্ছেরা ছুটে আসে নতুন আলোর লোভে, আলোর পিপাসায় আঁধার পথ চেয়ে থাকে হীরের বৃষ্টি হওয়া গ্রহে। কত শত পৃথিবী ওই গ্রহের বুকে প্রাণ দিতে আসে।

নয়াচর

নয়াচর দেবপ্রসাদ বাৎসল্য হারিয়ে যবে নগ্ন হলো মন প্রণয় কিনতে এসে, ঘৃণাই মেশালো দেহটুকু পড়েছিল, ঝুলিতে যখন। ভালোবাসা দিতে এসে আমাকে হারালো। গালমন্দ ভালোবাসা সব ছিল প্রেমে। স্বপ্নের স্পর্শানুভূতি অগাধ আবেগে। রহস্যময় নিগূঢ় তৃপ্তি -পরিনামে। মন নিয়ে ছুটি চলে খুব গতিবেগে। আকাশচুম্বী মূল্যের, সমগ্র জীবন। লেগে যাবে নাকি সেই, দাম রোজগারে? ভালোবাসা পোষে মন, কিসের কারণ? সযত্নে পালিত পোষ্য, মন কারাগারে। আস্ফালন করে মন, প্রেমের দুয়ারে। মন ধরে, দেহ নিয়ে, লুটোপুটি খেলে। পিরিতি প্রতীতি মন, পড়েনি নজরে। আমার বেলায় যত বিরক্তি ভরিলে। চিৎকার করিনি আমি, চাই না বদান্য। চাই না ঘনান্ধকার  পিচ্ছিল কোটর। চাই না দুর্গন্ধময়, আঁধার তারণ্য। ভালোবাসা চাই আমি, চাই নয়াচর। চাই শুধু কায়াহীন কোনো মায়াবিনী ঐশ্বরিক স্পর্শ, হোক এ দেহে সর্বত্র। অভিরুচি দোআঁশলা অনুরক্তি মানি                      নিঃস্বার্থ ভালোবাসিবে মন যত্রতত্র। একটুকরো প্রেমের কেক স্বল্পদামে। সাত জন্ম আর্জি নিয়ে এসেছি এখন। পেয়েছি ধূসর প্রেম জীবনের দামে। হাজার স্বপ্ন নেশায় করি আলিঙ্গন। অবরুদ্ধ অস্তিত...

বউ

বউ দেবপ্রসাদ তোমরা শুনেছ পুরুষ নাকি একেবারে হাঁদা। ঘরে ঘরে অন্তঃপুরে,  এই শব্দটা বাঁধা। বয়ঃসন্ধি বা কৈশোরে মাও বলতো তাই। সোনা আমার হাঁদা আমার তোর মত কেউ নাই। প্লাবন তুলে মনে ঘরে যখন এলো নারী। কানা ঘুষোয় শুনেছিলাম আমি স্মার্ট ভারি। চারুতা আর কৌশলে নারী হলো সাথি। হাতের পরে হাত দিয়ে হলো সমব্যাথি। প্রলোভনে পা দিয়ে আমি বিক্রি করি মন। এ পৃথিবীর সবই বৃথা, সেই আপনজন। আমার প্রথম তারুণ্যটার, চিবিয়ে খেলো মাথা। বলল মোরে হাঁদা ভারি একেবারে যা-তা। যে মেয়েটার স্বপ্ন পুরুষ ছিলাম ভারি স্মার্ট। পাশে নিয়ে চলেছিলাম দেখিয়ে ঠাটবাট। মাংসপেশির উত্তেজনায় থই থই তার ঢেউ,  তরঙ্গায়িত অভিলাষে, বানাই ঘরের বউ। মুশকিল হল, বিয়ের পরে রাস্তা ঘাটে ঘুরে। সদ্য মঞ্জরী পিরিত তার, সব গেল ছেড়ে। সে হলো বস আমার, আমি অনুচর। তার পিছনে সকাল সন্ধ্যা, দিচ্ছি চক্কর।

তুচ্ছ তুচ্ছ সব

তুচ্ছ তুচ্ছ সব দেবপ্রসাদ দৈহিক প্রেমের তুচ্ছ সব আকর্ষণে তোমার আমার প্রেম বিকশিত নয়। শূন্য ঘরে যত, বদ্ধ অনুভূতি মনে। জীবন বিষাদে শুধু, যে যন্ত্রনাময়। হৃদকম্পনের গতি মাপো সহজেই বুকে পোষা ব্যথা যদি মাপা যায় যন্ত্রে আলগা গায়ে ত্বকের দগ্ধ ক্ষত সই, আঁতকে উঠে, হঠাৎ দেখি, ক্ষত অন্ত্রে। অন্তরস্থলে যন্ত্রণা, বহে অবিরত। আগুন জ্বালিয়ে রেখে নীরবতা মেখে। মনকে বুঝিয়ে রাখি, লুকিয়ে সে ক্ষত। অনুমতিহীন অশ্রু, হাসিহাসি চোখে। থমকে দাঁড়াই দেখে, মেঘ ভারী মনে। হৃদয় ক্ষরণে রক্ত, খরস্রোতা নদী। ক্ষয়িতে রয় পাঁজর, দ্রুত আলোড়নে। শরীরের প্রেম তুচ্ছ, মন্দ লাগে যদি।

ভোর ভোর সূর্য চোর

ভোর ভোর সূর্য চোর দেবপ্রসাদ সাগরের পেট থেকে যখন-  লাল কুসুম পানা সূর্যের জন্ম হয় - তখন মেঘ কু-আশারা গিলে খেতে আসে, বাতাস তখন দেহ রক্ষী হয়ে- তাড়িয়ে দেয় কখনো কখনো। ভয়ে মেঘ নিজেকে গুটিয়ে নিলেও- কুয়াশাকে কিছুতেই বাগে আনতে পারে না বাতাস। গাঢ় ঘন দানবী কুয়াশারা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় তাকে। কি অদ্ভুত তাই না? দানব মেঘের প্রেয়সী কু-আশা বড়ই শক্তি ধরে। মা সাগর, দুঃখে, অভিমানে, পাড়ের পাথরে-  আছাড় খেয়ে মরে। গর্জনে তার ভুমি কাঁপে, বাতাস আসে আদর করে। কে জানতো? প্রতিদিন তার গর্ভে জন্ম নেওয়া সূর্য অকালে ঝরে যাবে। দানবী কু-আশা ভারি লোভী,  কত সূর্য যে পেটের মধ্যে ভরেছে - প্রতিদিন ওঁত পেতে থাকে কখন শিশু সূর্য সাগরের পেট ছেড়ে আকাশে ঘুরতে আসবে। সাগরের কান্নায় ভেসে আসে আর্তনাদ - অবিরত প্রলাপ বিলাপের ধ্বনি। সম্পর্কের রূপ যাই হোক-  শত্রুতা যাই থাকুক,  একবার অন্তর থেকে চিৎকার দাও  সূর্য তোমায় ভালোবাসি,, দেখো কেমন গলে গলে পড়ে তরল তরল সূর্য, যখন মগডাল ছুঁয়ে পাতায় পাতায়- শাখায় শাখায় সূর্য ছুঁয়ে যায় আদরে। ফিরে যেতে যেতে গোধূলি আলোর রঙ  মাখিয়ে দেয়,  অভিবাদন ছুঁড়ে দাও একবার  মনোহরণ...

নব-ভারতে নব-মহাকাব্য

নব-ভারতে নব-মহাকাব্য দেবপ্রসাদ অনাবাদি জমিতে বুনেছ কি সূর্যবীজ আবাদযোগ্য ভূমি শাপভ্রষ্ট। খণ্ডিত জ্যোতিষ্ক সূর্যের শরীরে মরণ-প্রোথিত আত্মা। দেবতাত্মা না দূরাত্মা বুঝিনি এখনো। জ্বলে রক্ত, জ্বলে কর্ম, সৃজনে নির্মাণে   কালের কুয়াশা চূর্ণ করে মৃত্যুর প্রাচীর গড়ে। বিদ্যুৎ রোপণ করে অলক্ষ্যে ক্ষয়িষ্ণু দেহে  প্রতি কোষে কোষে। শরীর বিকীর্ণ তেজে পোড়ে পুরাতন দুঃখ,  ঝলসে যায় প্রাচীন পৃথিবী। মাটিতে প্রোথিত আছে অগ্নিগর্ভ বীজ  বোধিদ্রুম পৃথিবীর জীবন আকাশে-  অনশ্বর সূর্যের শোণিত।  শরীর নিঃসৃত রক্তকণা প্রাণরসের কোষে কোষে ছুটে চলে অবোধ্য গতি সম্মুখে - ক্রমমৃত্যুর ইতিহাসে মুদ্রিত রক্তাল্পতাজনিত অসুখ। ক্ষয়ের শরশয্যায় প্রতিবাদে নির্বোধের বিষাদ গোলাঘরে সঞ্চিত  রুদ্র সরোদের ঝনঝন, বাড়ন্ত ঘরে- উপোসের একথালা সাদা ইচ্ছে। পাথর কারাগারে মূসৃণ হচ্ছে  পোড়া পাঁজরের অঙ্গার।  কপালে রক্ত শ্মশানডাকিনীরা,  ঘন মেঘ ছিঁড়ে এখনো সূর্য ওঠাতে চায় রাতের অন্ধকারে। হাভাতে মানুষ সমস্বরে মিছিলে হাঁটছে,  মহামারী মন্বন্তরে তর্জনী তুলে বজ্রের অক্ষরে, লিখবে আর এক মহাকাব্য মহা মহাভা...

একটু দেখবেন ধর্মাবতার

একটু দেখবেন ধর্মাবতার  দেবপ্রসাদ সায়নাইডের একটা ক্যাপসুল-  জিভের তলায় রেখে, যদি ভাবি আজ আর বেঁচে কাজ নেই, কাল যদি ভালো হয়, কাল যদি মনের ঘরে প্রেমের জোয়ার আসে, অন্ধকার রাত্রি কেটে, বদ্ধ ঘরের দরজা দিয়ে সূর্যের আলো ঢোকে,  কাল যদি ব্যথা না পাই মনে, তবে মনে রেখো আসব আবার ফিরে এই অবাঞ্ছিত রুগ্ন পৃথিবীর বুকে। আজ মাপ করবেন ধর্মরাজ। আমি ইচ্ছে মৃত্যুর কোলে মাথা রেখেছি। এ আমার পাপ নয়,  পাওয়া না পাওয়া যন্ত্রণার ফল। শয়তানের কোনো অন্তঃস্থিত- নরম পরিভাষা আমার জানা নেই। শয়তান মন শেষদিনে ছিন্নবিচ্ছিন্ন প্রকৃতির কবিতায় ঢুকে পড়েছে, কবিতার গায়ে যে কলঙ্কের রক্ত। শিশুর পিঠে কিণ্ডার গার্টেনের ভারি বস্তা  চাপিয়ে যারা শিক্ষিতের বড়াই করে, তাদের দল বড় ভারি। অপরিনত মস্তিষ্কে মোবাইল নামক দানবের অত্যধিক অত্যাচার কি আর মানা যায়? বিষ ছড়ায়, যে ছেলেমেয়েদের পিতামাতা, শরীরে বসায় অপ্রাকৃতিক জ্ঞানের তীক্ষ্ম দাঁত- জন্মের পরেই হিটলারী থাবা বাড়ায়, তাদের জন্য আধো আধো কাব্যিমাখা  কোন শব্দ আমার জানা নেই। ব্রহ্মাণ্ডে নক্ষত্র যুদ্ধের ফর্মূলায় আদিখ্যেতা আর আদুরে শব্দ আমার - একেবারেই জানা নেই ধর্মাবতার!...

দুর্ভাগ্য

দুর্ভাগ্য  স্বর্ণহংস জাতক দুর্ভাগ্য! অবশেষে বিদায় নিলো ---  আর সেই তুলে রাখা রক্ত ওঠা স্বপ্ন- অনেক দুঃখ নিয়ে চলে গেল - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো যন্ত্রণারা, চারদিক থেকে চক্রব্যুহ ভেঙে এক চিলতে মিষ্টি হাসি হেসে - বিদায়ের হাত নেড়ে চলে গেল। সেই মায়াবী আরবসাগরের তীর থেকে  আসমুদ্র হিমাচলে ছড়িয়ে পড়ল।  দুর্ভাগ্যের মাদকতা কাটিয়ে  রিনরিন করা আধো মিষ্টি মাদকতায়,  মোহিত করে সুখ এলো বাতাসে ভর করে,

মহামতি কর্ণ

মহামতি কর্ণ দেবপ্রসাদ ফাটক সমীপে কোন যোদ্ধা যুদ্ধ করে? ধূমেতে ধূসরবর্ণ, ভরিছে আকাশ  প্রকট বিকট মূর্তি, মনে দৃঢ় জ্ঞান কঠোর কূলিশ সম, কাহার হৃদয়? কুরুক্ষেত্র মাঝে কেন ত্রাহি ত্রাহি রব কে তুমি? মহা বিক্রমে করো ঘোররণ। অর্জুন! অর্জুন তুমি, এখনে হেরিলে বিপক্ষে দেখিয়া মোরে, উল্লাসে আসিলে। তাহলে, সময় হলো, তোমার অর্জুন! দ্বৈরথ মহা সমরে, উত্তর-ভূখণ্ড  জুড়ে পরমায়ু দেখি, হন্তারক ছায়া, বুকের নিভৃত থেকে উঠে আসে বুঝি অরণ্যপিপাসা, হেথা সমস্ত শিকড়  জুড়ে প্রতিহিংসা ঢালে, অবিরাম বিষ ; এতদিনে, মহামতি পার্থ, এতদিনে মুখোমুখি, মহারণ, তোমাতে আমাতে। রশ্মি নয়, অস্থি দিয়ে, জ্বালাই যে আলো পাথর চেরা স্রোতের মত ঋজু পথে তিল তিল করে শোধ করছি জন্মের অযাচিত ঋণ, ওহে মহামতি পার্থ আশৈশব আকাঙ্ক্ষার ভেলায় বেয়েছি। আজ সেই ধ্রুবলগ্ন, দেখো, সূর্য নয় আমার পিতা প্রবীণ, সেই অধিরথ, আজ ঘিরে আছে মোরে, এই মধ্যদিনে  কুয়াশার জমকালো, কলঙ্কিত মেঘ। কনিষ্ঠ আঙুলে ধরি সমগ্র পৃথিবী, তবু কেন ব্যূহ ছেড়ে, গড়েছি প্রাচীর? নেই একাঘ্নী আয়ুধ, কবচকুণ্ডল  হৃত ছদ্মবেশী ইন্দ্র, ভিক্ষুকের হাতে, আর নই, মহারথী,  জীবনের নেশা বি...

সেই ডাক

সেই ডাক দেবপ্রসাদ যেভাবে ডাক ছেড়ে কাঁদি - তবু তুমি কেন,  নিঃস্তব্ধ, নির্বাক। যেভাবে ডাকলে পাহাড় দাঁড়ায় নত শিরে, মরা নদী ভরে যাবে মহাস্রোতে। আমার কান্নায়- সাগরের ঢেউ উঠে পাড় ভাঙে অনায়াসে - নক্ষত্র জেগে উঠে নক্ষত্রের ভিতরে। ব্রহ্মাণ্ডে ওঠে - ঝড়। কালো ছায়া প্রবেশ করে কলঙ্ক গহ্বরে। হীরক বৃষ্টি নামে যে গ্রহে, প্রচণ্ড ঘূর্ণিপাকে ঘুরতে থাকে নিজ অক্ষে,  সেও থেমে যায় ক্ষণিকের তরে। সাগরের ঢেউ, ভেসে যায় চাঁদ বুকে নিয়ে। জ্যোৎস্নায় ভরিয়ে দেয় আঁধার পৃথিবী। পার হয় দীর্ঘ' শোষণের রাত, আনন্দে পুলকিত হয় এ জীবন। সব বিপন্নতার ভিতরে ডিঙি নৌকা সাগরের জলে ঢেউ খেলে খেলে যায়  মহানন্দে যার ভরসায়, সেই অনাকাঙ্ক্ষিত অদৃশ্য শক্তি সামনে এসে দাঁড়ায়। যদি উজাড় করে ডাকতেই হয়  জীবনের গোপনতম পাপ নিভৃতের  প্রেমের সহবাসে পোড়াতেই হয়। স্বপ্নে দেখা তার মুখের দিকে যদি  চেয়ে থাকতে হয়,  সেই তুমি কোন অভিমানে প্রত্যাখ্যান করো।

শুধু দেখছি

শুধু দেখছি দেবপ্রসাদ ক্রমাগত বিশাল হচ্ছো তুমি- আগের চেয়েও অনেক বেশি। নীল ঘেরাটোপ উঠে যাচ্ছে আরও উচ্চতায়। তুমি আকাশ দেখবে, নীল চশমার আড়ালে। সরে যাচ্ছে তোমার সীমানা, দূরে দূরান্তরে। তুমি দু'হাত ছড়িয়ে, পা রাখছো পৃথিবীর - মাথার ওপরে। টান টান পৃথিবী দুমড়ে মুচড়ে- পাহাড়ের চূড়া থেকে ঢুকে পড়েছে গূহায়। একটা বুড়ো আঙুলের চাপে - স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে নক্ষত্র যুদ্ধ,  অরণ্য স্তব্ধ চোখে পাতায় বৈশাখী ঝড় দেখছে, বিস্ফারিত আগ্নেয়গিরি এক নিঃশ্বাসে- জলন্ত কাঠ কয়লা গিলে খেয়ে - ঢেকুর তুলে বলছে- ক্ষমা করো হে মহাকলি। সমস্ত নদী সাগর মহাসাগর দিশেহারা,  ধমনীতে রক্তনদী, ঘূর্ণি তাণ্ডবে। সমুদ্রে নীল কৃষ্ণের শঙ্খধ্বনি। গ্রহ নক্ষত্রের বুকের ওপরে ক্রমমৃত্যুর - অকেজো ছবি ক্যানভাস জুড়ে হাসছে। আনাচে কানাচে কুকুরের ভীড়, ক্ষুধায় চিৎকার করছে হায়নারা শূকরীর শরীর খুঁজছে এদিক ওদিক- এই বিশালতার কি প্রয়োজন? যদি না তোমার প্রতিবাদের ভাষাশব্দ তারে আয়ত্তে না আনতে পারে? মাতালের দল বাদ্যযন্ত্র হাতে সভ্যতার- দরজা আটকে নৃত্য করছে প্রতিদিন। এক উলঙ্গ যুবতীর দেহ জুড়ে- হোমকুণ্ডের আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে, তুমি আমি আমরা শুধু দেখছি। 

পাথেয়

পাথেয় দেবপ্রসাদ মনে বারুদের স্টক বাড়ছে ক্রমশ হে সুন্দর মহাগ্রীষ্ম ওহে তাপদাহ পুড়িয়ে মারতে চাও কেন সকলেরে। পথ-নুড়ি, তৃণসম সবুজ সৌন্দর্য'  কোন পাপে বিস্তৃত এ সবুজ কানন ফুলের পবিত্রতা  যে এত রূপময়,  সৌন্দর্য' সব কি  অনন্ত নৈঃশব্দ্যে  তুচ্ছ হয়ে যাবে এই  পরম জীবন। পাথরেও জেগে থাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণ,  জীবনের ভিতরে ক্ষুদ্র পাথর ও নুড়ি। তোমারই পরিচ্ছন্ন, সমগ্র হতাশা- তুমি চির বিস্মরণে জেগে থাকো জানি  গভীরে, মরণে স্তব্ধ মুকুলে সকালে সুন্দর অবিনশ্বর এ জীবনান্তরে।

প্রতিধ্বনি

প্রতিধ্বনি প্রতিধ্বনি হলে বুঝি,  ন্যূনতম দূরত্বেই আছো।  জানি, শব্দ ও আলোর গতিবেগের তফাৎ যত, তোমার পায়ের শব্দের প্রতিধ্বনি হলে বুঝি  সঠিক কতটা ব্যবধানে তুমি আছো, হাতের স্বপন কুমারটা ফেলে,  যেকোন একটা বইয়ের ভেতরে - তৎক্ষণাৎ বেঁচে যাওয়া। অথচ নিভৃতে নিঃসঙ্গতায় তোমার অন্তরঙ্গ স্বর আমায় বোঝাতে চেয়েছে,  তুমি আমার বাবা নয়, আমার বন্ধু। কতদিন আত্মস্থ থেকেছি, ওই ধ্বনিটুকু শোনার জন্য। কতদিন- একান্তে নশ্বরতার ভিতরে তটস্থ থেকেছি,  একবুক জ্যোৎস্না নিয়ে সমুদ্রের পিঠ বয়ে  এসেছ আমার গন্ধময় জীবনের, ভিতরে ভিতরে গড়েছ আমার মৃত্তিকাময়, আত্মা, আমার স্থুল শরীর। গত পঞ্চাশ বছর ঋণী রেখেছ এইভাবে,  তিলে তিলে গড়েছ সোনালী স্বপ্নের রাজপথ। কত ঝঞ্ঝা কত ঝড় নি-জ মুষ্টিবদ্ধ হাতে-  শুকিয়ে জেগে উঠছে চোরাবালি, শরীর শুকিয়ে শুকনো পাতা শুধু বাতাসে ভেসেছে, তখনই তুমি ক্ষীণতম আলো হয়ে দাঁড়িয়েছ। কোলাহলে তারা হয়ে জেগে উঠেছ,  আমার আকাশে। প্রতিধ্বনি না হলেও জানি,  তুমি আছো ন্যূনতম দূরত্বে।  আমি আছি শব্দের উৎসে ভূমিকাহীন অপেক্ষমাণ পাথর, বংশপরম্পরায়।

পুরুষ

পুরুষ ক্ষুধার্ত এক হায়নার দল পুরুষ। কেঁপে উঠতে হয় বধির নির্জনতায়, তুচ্ছ যৌনতার আগুনে পুড়িয়ে দিতে - তন্ময়তার ঠোঁটে কঠিন দৃষ্টিপাতে উন্মত্ত রক্তাক্ত চোখ পুড়িয়ে দিতে চায় বুঝি সমগ্র অবলা প্রকৃতি। তাই কি? পুরুষ আছে বলেই তুমি ফুলের পাপড়ি। পুরুষ আছে বলেই তুমি স্পেশাল।  তার আকর্ষণ আছে বলেই তুমি এত পাত্তা পাও,  পুরুষকে দেখানোর জন্যই তুমি রাস্তায় - সেজেগুজে বের হও,  পুরুষরা তোমায় দেখে মুগ্ধ হয়।  তুমি মুখে অস্বীকার করো,  তোমার অবচেতন মন কি বলে? পুরুষ তোমাকে বিপদে ফেলে,  তুমি বিপদে পড়লে বহু পুরুষ এগিয়ে আসে। পুরুষের আকর্ষণ তোমায় আনন্দ দেয়।  সারাদিন খেটে তোমার জন্য পছন্দের শাড়িটা, পছন্দের খাবারটা নিয়ে বাড়ি ফেরে।  সেকি দৈহিক আকর্ষণ শুধু? দুলাইনের ছন্দ লিখে, স্মার্ট ক্যামেরায় ছবি তুলে যখন সোসালে দাও- বলোতো কাদের শতশত রিয়্যাক্ট পাও?  শত সহস্র পুরুষের মধ্যে একটা পুরুষ - পথভ্রষ্ট হলে সব পুরুষের প্রাণ যায়, সাদা চামড়াকে পুঁজি করে স্বল্পবসনা -  সেলিব্রেটি বনে যায়,  সেতো পুরুষের জন্যই।  সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান ও মানবকূলের সেরা, শক্তিশালী প্রাণী পুর...

দিবানিশি প্রলোভন

দিবানিশি প্রলোভন  দেবপ্রসাদ ফুৎকারে অকস্মাৎ পোড়ায়েছে বিশ্বব্যাপী  এ মহাবিপ্লবের দিনে লোল বহ্নি-মুখে,  সদা প্রলোভন , অস্থি-র ইন্ধন পৃথিবীর এই এক অনন্ত দুর্দিনে। অত্যাচারী অবিচারী একচ্ছত্রী,  ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলাইবে অগ্রজে যাহার।  একা একা আর্তনাদ করিতে সে দিন,  সপ্তদশ বর্ষীয় মহামানব।  সেই দিন যেই অগ্নি প্রজ্জ্বলিল অন্তরে তাহার, অসহ্য যন্ত্রণার প্রহার,  ভীষণ অগ্নিহোত্রীদের মত, অবিরত,  অনিশ্চিত উপার্জনের কেন এ প্রলোভন? দরিদ্রের হৃদয়ে আকাঙ্ক্ষার পর্বত। বিত্তশালী হয়ে ওঠার অনল-দ্বীপ্ত-শিখাটিকে, ছড়াইল দিকে দিকে, সমদুঃখীদের হিয়া দাউ দাউ করে জ্বলিল অমনি, প্রবুদ্ধচেতন; সম্রাটের রক্ত-চক্ষু- অনিল আলোকে শিরে তার বর্ষিল অশনি! তুষার-শীতল অতিদূর নিস্তব্ধ প্রদেশে,  যুধিষ্ঠিরের সামনে মায়ার পাশায়- অবশেষ যত, স্ফীতবক্ষ ধনাঢ্য কৃতকর্ম, অসম্পূর্ণ বাসনায় দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ।  বাহিরিয়া এলো পত্নী, বিশ্ব মাঝে বস্ত্রহীন।

পরিক্রমা

পরিক্রমা  দেবপ্রসাদ পেছনে ফিরে তাকিয়ো না,  ভেঙে-পড়া থামগুলোর দিকে।   আবর্জনা গুলো তোমাকে ডাকতে পারে। স্বপ্ন ভাঙার আগে, পথ শেষ করো। জমির আল ধরে এগিয়ে চলো আগাছার মাঠে- হাতের মুঠোয়,  কাস্তের উজ্জ্বল ধার, উল্লসিত সূর্যের দিকে তাক করে রাখো, ভাইকে - দস্যুর দীক্ষায় আত্মঘাতী রক্তের তিলক করতে যদি পারো,  ইতিহাস মনে রাখবে দুর্যোধনের মতো। প্রচণ্ড প্রসব যন্ত্রণায় প্রসূতি মায়ের বেদনা গান্ধারীর মত। যুগান্তের মোড়ে, উত্তপ্ত হাতে জমির ফসল- অনেক প্রাণের শস্যে ভরাতে হবে ভাণ্ডারের ক্ষুধা।  হিংস্র দস্যুরা যখন তোমাতে ভর করে, সংহত শক্তির চূড়ায় বিপ্লবের বজ্র দীপ্তি হবে। চম্বলে বেঁচে আছে আদিম হিংস্রতা।  সেখানে তুমি উত্তাল নিরুদ্বিগ্নে ঝাঁপ দাও,  নির্জন জঙ্গলে গভীর ধ্যানে রক্তাক্ত শরীরকে, আরো আহত করো।  অখণ্ড একাগ্রতায় শরীর থেকে বেরিয়ে এসো, পড়ে থাক খেলা! পড়ে থাক মাঠ,  পড়ে থাক সংসার কারখানা,  পড়ে থাক শহর, লক্ষ লক্ষ নর-নারী-  আর তোমার গ্রাম, তোমার শহর, ফোননননন

ফেরার পালা

ফেরার পালা দেবপ্রসাদ জল নেমে যাচ্ছে বাঁধানো সিঁড়ি বেয়ে এবার ফেরার পালা- উজানে বাইতে বাইতে ক্লান্ত আমি, ক্লান্ত নদী, ভাটার টানে শহরের পথ বেয়ে, যত অন্যায় পাপ  দুপারের হাহাকার, ফেলে দেওয়া শহরের শরীর পোড়া কলঙ্কের ছাই- সব নিয়ে ফিরে যাওয়া বিসন্ন মনে ক্লান্তিকর পরিশ্রমে ফিরে যেতে হবে, সেই অসীম সাগরে। যেখানে গঙ্গা ভাগীরথী যমুনা কাবেরী গোদাবরী মেঘনা সরস্বতী সব এক। যে নদীর জলে আগুন ছিল,  আগুন ছিল - উদাস করা দৃষ্টিতে।   আগুন ছিল ছলাৎ ছলাৎ গানের সুরে   আগুন ছিল কাব্যিক মনের হৃদয় জুড়ে- সব যেন ক্লান্ত মনের গভীর ক্ষতে নীরব হলো। মৃত্যুর চোখে আগুন জ্বলে, স্বপ্নের বন্যায়-   প্রতিবাদের প্রবল ঝড় তুলে শহর জুড়ে, কাঁপছিল সব পাপ সব অন্যায়।   শহরের শোনা গল্পের মজা - ফেরার পথ ধরে বলতে বলতে যেতে হবে।

প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী

প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী  দেবপ্রসাদ পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছো?  সেই লাল শাড়ি, সেই ফোন কানে,  অযথা চিৎকার করে জানানো-  কার সঙ্গে কথা বলছো। আমি তাকিয়ে আছি,  আমি তোমাকে দেখার চেষ্টা করছি, আমি যে ব্যর্থ প্রেমিক- না দেখার ভাণ করে, অত্যন্ত দক্ষতায়- চোখের নিচে অল্প লজ্জার কাজল দিয়ে - বড় বড় চোখ নিয়ে,   বড় খোঁপার ফুলদানি নিয়ে সাজিয়ে- বড় দীর্ঘশ্বাসে বুকের নিশ্বাস ফেলে, কোমরের কোমল সারশ মেলে, এক গোছা লাট খাওয়া চুল কপাল থেকে- কানের পাশে টেনে অল্প হাসির ছলে ঠোঁটের ওপর জিভ বুলিয়ে- এদিক থেকে ওদিকের পথে চলে যাবে পাশ কাটিয়ে। যতো তুমি খুলে দাও হৃদয়ের মৌন পাহারা   আঙ্গুলে অবৈধ ইশারায় ডাকো মনের সুপ্ত প্রেমখানি- আমি জানি, তুমি আমার নয়। যতো তুমি ছড়াও দেহের সুরভী   আঁচল আগলা করে কোমল হৃদয়খানি,  দিনের আলোয় অন্ধকারের আকুলতায় টানো মাটি থেকে মৌনতার চোখের ময়ূর নাচাও - আমি ফিরব না আর। কারোর প্রেমিক হবো নাগো আর। আমি শুধু তোমার প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চাই।  

বন্দী আঁধার

বন্দী আঁধার দেবপ্রসাদ কোন পাপে বন্দী বলো, রাতের অন্ধকার। চাঁদ নেই তারা নেই, এমন কারাগার। মৃতের স্তুপের অন্ধকারে বন্দী কেন রাত। বন্ধ দুয়ার লৌহকপাট, হয় না সুপ্রভাত। ভয়ের রাত থমথমে সব, বন্ধ ঘরের মাঝে।   শহর জুড়ে শুধুই দেখি আলোর ঘন্টা বাজে। আলোর চিতায় পুড়ল আঁধার, রাত আনবে কে? পাষাণ কফিনে বন্দী রাত, কে ছাড়াবে তাকে? জোনাকিরা মন্ত্রপুত মশাল লয়ে হাতে। মৃতের স্তুপে ডুমুরে ফুল, ফোটাবে আজ রাতে। নতুন করে আনবে আঁধার, দীপাবলির দিনে। গাঁথবে মালা নতুন করে, আঁধার গুণে গুণে। আগুন জ্বেলে পথের ধারে কাটবে অন্ধকার। জ্বলতে থাকে  অবলা আঁধার ভারি চমৎকার। গ্রাম নগরে রাত পেরিয়ে, রাত দিনের সূর্য নামে।   হায়রে আঁধার শৃঙ্খল তোর কাটবে কত দামে? ভুবন জুড়ে বাইরে আসে বন্দী অন্ধকার। তখন দেখি বন্দী আলোর মুকুট অন্ধকার।

গলিত হেমন্তে

গলিত হেমন্ত দেবপ্রসাদ সে এক ঝোড়ো দিন।  ঝঞ্চা ছুটছে পৃথিবীর উপর দিয়ে।   পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ।  ঝড় ভেঙে পড়ল পৃথিবীর উপর,  শিলাবর্ষণ আর বজ্রনির্ঘোষ।  আঘাতের পর আঘাতে, ভীষণ ক্ষত। শহরে গ্রামে অন্তরীক্ষে। অগ্নিময় বজ্র, হিংস্র উন্মত্ত বিদ্যুতের ঝলকানি। নির্মম উত্তাপে জ্বলতে জ্বলতে -  বুকের ভেতরটা ছাই হচ্ছে।  পাষাণের বুক চিরে আগুনের তাণ্ডব।  নক্ষত্রহীন রাত্রির নিস্তব্ধ অন্ধকারে- বিধ্বস্ত পৃথিবী।   হৃদয় অস্পষ্ট উদ্বেগে পীড়িত। দারুণ সন্তাপে হাঁপাতে রক্তাক্ত শহীদ, মিথ্যা ভবিষ্যতের মশাল জ্বালে। আগুনের অক্ষয় আঁচড়ে, আত্মোৎসর্গের পথ বেছে নেয়, প্রকৃতির দাসত্বের জোয়াল কাঁধে নিয়ে ঘৃণার শৃঙ্খলখানি ভাঙতে চায়। নিঃশ্বাস পড়ছে কানের পাশে,  হিম শীতল অশান্ত বাতাস,  পাতার বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়া দেখে হেমন্ত,  ধূসর গলিত হেমন্তে।

প্রেম

ব্যর্থ প্রেমে অন্তর্গত সময়ের অভ্যন্তরে আমার বেদনা। আমার প্রেমের মন্দিরে তার অকাল বিষর্জন। আমাকে কাঁদতে দাও, মনে প্রেমের উন্মাদনা।  মরার বাসনারা মনে, সর্বদা করিছে বিচরণ। ঝাঁঝরা বুকের গহ্বরে, অসফল প্রেম  হাসপাতালের অলিগলিতে  একদিন বেঁচে থাকার জন্য ব্যর্থ এক লড়াই। হ্যাঁ লড়াই-সামান্য অভাবে যদি  দিশেহারা। অপূর্ণ প্রেমের সমাধী স্থাপন, রাতের আঁধারে। রাস্তার দু'পাশে ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলো।  একবারও দেখে এসো, পেটে নেই ভাত, মাথার ওপর নেই ছাদ, আছে মুক্ত আকাশ। যদি তুমি কালো ধোঁয়ার কারণে কালো মুখ। এসিডে ঝলসে যাওয়া মানুষগুলোর দিকে  তাকাও যারা নিজেদের সেই ঝলসানো চেহারা নিয়েও সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে অবলীলায়। মেয়ে না-হয়ে ছেলে হওয়ার বুঝি ভারি সুখ। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের দিকে তাকাও,  যারা পরিবারের থেকে বিতাড়িত হয়েও  জীবন চালিয়ে যাচ্ছে সমাজের সাথে  যদিও তা ছলনাময়ী,ধোঁকাবাজ মনে হয়। মায়ের দিকে তাকাও, যে বাবার অভাবের  সংসারে না খেয়ে পড়ে আছে, তবুও ধনী  কাউকে বিয়ে করার পথ বেছে নেয় নি।  যদি পুরুষ বলতে দেহ লোভী, মনেও হয়,  তবে নিজের বাবার দিকে একবার তাকিয়ো,...

মা আমি সফল

মা আমি সফল দেবপ্রসাদ জীবনের সব সফলতার সিঁড়ি পার হয়েও মনে হয়, আরও কিছু  বাকি রয়েছে মা। আমি ভালো খাই, ভালো পরি, আয়েশে অফিসে যাই, তবু মনে হয় কিছু বাকি থেকে গেল। আগেতো এমন হতো না, যখন তুমি ছিলে। যখন স্কুলে যেতাম, বলতে - সাবধানে যাস্। আমি বড় হয়েছি মা, এসব বলবে না লজ্জা লাগে,  বন্ধুরা প্যাক দেয়,  প্রতি রবিবার সারা গায়ে সাবান মাখিয়ে, কলের পাড়ে ঘষে ঘষে আমাকে স্নান করাতে, আমার ভালো লাগতো না,  পাশের বাড়ি তৃণা হাসতো, বলতো কচি খোকা,  আমি লাল হয়ে উঠতাম, তোমাকে ঠেলে সরিয়ে দিতাম। চাইতাম স্বাধীন হতে, তুমি হতে দাও নি, হিমাংশু কত স্বাধীন,  সব কিছু করে নিজের যা ইচ্ছা। আমি ওর মতো হতে চাইতাম, ওর মা চাকরি করে, তুমি তো করো না, তোমার ঘর তোমার সংসার, এই ছিল তোমার পৃথিবী। প্রথম যখন চাকরি পেলাম, সে কত ভয় তোমার, বাসে ট্রেনে যাবি সাবধানে যাস, বাইরের খাবার খাবি না, অচেনা কারোর সাথে কথা বলবি না, অফিস শেষে সোজা বাড়ি আসবি। প্রতিদিন যাবার সময়, পিছু ডাকতে, বলতে মা পেছনে ডাকলে শুভ। কোনো বিপদ হয় না, মাঝে মাঝে ডাকলেও দাঁড়াতাম না, কত রাগ করতে তুমি, কথা বলতে চাইতে না, আজ আমি স্বাধীন, কেউ পেছনে ডা...

রাতের আদরে

রাতের আদরে দেবপ্রসাদ মনে রেখো আমি আছি, বেঁচে আছি এখনো। যদি দুপুরে সূর্য মাথার ওপর দিয়ে যায় আমার ছায়া যদি কথা বলে - আমার ছায়ায় যদি সূর্য কিরণ লাগে ভেবে নিয়ো আমি তখনো - ছায়া হয়ে যাইনি,  মনে রেখো ওই বটতলায় যেখানে কালো রঙের গোল শিব- মাথায় ধুতরো ফুল দিয়ে, শীতল শরীর আরো শীতলের জন্য অপেক্ষা করছে ঐখানে এসো, ঐখানে তোমার সাথে,  পঞ্চবটির -ছায়ায়,  আমার কায়া, বড় মায়া নিয়ে অপেক্ষা করছে। দেখবে বড় বড় বটের ঝুরির কোলে- যেখানে সাদা রক্ত টপ টপ করে ঝরছে, বুঝবে আমি ওখানেই কায়া থেকে ছায়া হতে আসবো, একটা গাড়ি -  না না বাঁশ বাগানের কাঁচা বাঁশ - এনো সঙ্গে করে। আর কজন তোমার বন্ধু এনো দেখবে আমি কেমন রাতের আদরে জোছনা মেখে, হাসি সাসি মুখ করে- মাটির শরীর ছুঁয়ে নীরবে শূন্য থেকে শূন্যে চলেছি।

আরো কিছুদিন

আরো কিছৃদিন দেবপ্রসাদ আরো কিছুদিন ফুটে থাক আলপিন যতদিন না রক্তে বিষাক্ত পয়জন মিশে যায়, একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে, লাগবে তোমার ফোটানো আলপিন গুলো, কাছে আসার মতো প্রবৃত্তি কি করেই বা হবে, সারা গায়ে লেগে আছে পাপ-ধূলো ঘৃণিত সুষমা। সত্যের শুভ পায়ে কুৎসিত কালো লেগে আছে  চোখের গভীরে প্রতিহিংসার ক্ষুধা,  তন্ময় হাতে; চাপ চাপ রক্তের শুকনো দাগ।  হাঁটতে গেলেই পথ আগলে দাঁড়ায় মন। মনও সায় দেয় না যেতে,  অথচ যেতে হবেই সব কালো মেখে ক্ষুরধার সাঁকো পেরিয়ে যার নীচে লক্ লক্ করছে লেলিহান আগুনের শিখা, চির রহস্যময় তোমার কথা ভাবছি,  আর ভয়ে ভয়ে কাঁটা হয়ে যাচ্ছি। তবে কি কোন মূল্যেই - তোমার কাছে হবে নাতো যাওয়া?

আলপিন

আলপিন দেবপ্রসাদ সাদা কাগজের স্তব্ধতা থেকে প্রতিদিন  যদি একটু একটু করে স্তব্ধতা চুরি করি শব্দ মায়া ঘুম, অব্যক্ত কথামালা জমা করি পর্ণ কুটিরে।  তৈরী হয় আমার উপেক্ষার জীবন। প্রতিটি শব্দে এক একটা আলপিন। সারা শরীর জুড়ে ফুটে থাকে- আমার চির রুগ্ন ক্ষয়াটে শরীর  রক্তাক্ত, আলপিনের প্রতিটি আঘাতে। একদিন আসে, যেদিন জীবন থেকে খুটে খুটে ফুটে-থাকা আলপিন, তুলতে হয়। ভিতরে ভিতরে টের পাই তার মৃন্দু দহন আর ক্ষয়। গোপনে যে বিঁধিয়েছে আলপিন, তার কর্ক'শ মুখ মনে পড়ে।  মনে পড়ে, সম্মুখ যুদ্ধে যে পরাজিত- মনে পড়ে, চক্রান্তকারীর লোমশ থাবা, শানিত বাক্য।  পিছন, যারা অন্ধকারের বন্ধু সেজে বসেছিল পাশে,  তাদের নিষ্ফলতার প্রতি করুণা জন্মে,  মনে হয় আবার তাদের সম্মুখ যুদ্ধে আহ্বান করি। তখন সমস্ত পরাজিতের শরীরে, বিঁধিয়ে দেব আলপিন।  হিংসার প্রমত্ততায় মুখোমুখি বসে  আমার উপেক্ষিত জীবনে ফুটে থাকা, আলপিনের হিসাব চাইবো, বলবো ওহে প্রিয়তমা নারী, নিঃস্ব রিক্ত অন্তঃসার শূন্য,  জীবনের তুমিই ধারকবাহক। তবে কেন গোপনে বিঁধিয়েছ,  তীক্ষ্ণ সে আলপিন। মৃত্যুর ছোঁয়ায় পরিপূর্ণ অন্ধকার তোমার অহংকা...

ভেঙে মোর

ভেঙে মোর ঘরের তালা  নিয়ে পালা  আন্দামানে। ও বন্ধু আমার না পেয়ে তোমার দেখা, একা একা দিন যে আমার কাটে না রে ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে বুঝি গো রাত পোহালো, বুঝি ওই রবির আলো আভাসে দেখা দিল গগন-পারে বুঝি গো রাত পোহালো, বুঝি ওই রবির আলো আভাসে দেখা দিল গগন-পারে সমুখে ওই হেরি পথ তোমার কি রথ পৌঁছবে না মোর-দুয়ারে ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে আকাশের যত তারা, চেয়ে রয় নিমেষহারা বসে রয় রাত-প্রভাতের পথের ধারে আকাশের যত তারা, চেয়ে রয় নিমেষহারা বসে রয় রাত-প্রভাতের পথের ধারে তোমারি দেখা পেলে সকল ফেলে ডুববে আলোক-পারাবারে ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে প্রভাতের পথিক সবে এল কি কলরবে গেল কি গান গেয়ে ওই সারে সারে প্রভাতের পথিক সবে এল কি কলরবে গেল কি গান গেয়ে ওই সারে সারে বুঝি-বা ফুল ফুটেছে, সুর উঠেছে অরুণবীণার তারে তারে ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে ও বন্ধু আমার না পেয়ে তোমার দেখা, একা একা দিন যে আমার কাটে না রে ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে ও বন্ধু আমার

অভিশাপ

অভিশাপ কার অভিশাপে আজ, কাঁদে সন্ধ্যাতারা। অস্তপারে সন্ধ্যাতারা মোরে যবে পাবে। হারিয়ে যায় তোমার, কোলে বসুন্ধরা। আমি হেথা দিশাহারা, বুঝবে বুঝবে। তোর ছবি বুকে বেঁধে, পাগল পাগল। কেঁদে কেঁদে ফিরবে কি, সাগর আকাশ। সেদিন মোরে খুঁজবে-বাতাস বাদল। বুঝবে সেদিন ওরে, করবো হতাশ। স্বপ্ন ভেঙে নিশি রাতে, জাগবে চমকে। ভাববে বুঝি আমিই, ধরেছি আবেশে। কার যেন চেনা-ছোঁয়া লাগবে ও-বুকে। জাগবে চমকে রাতে, মোর কোল ঘেঁষে।   ধরতে গিয়ে দেখবে, শূন্য শয্যা পরে। মিথ্যা স্বপ্ন ভেবে তব, অশ্রু যদি ঝরে। ২ বেদনাতে চোখ বুঁজে, যায় কোনোদিন। বুজবে সেদিন প্রিয়া, কোন অভিশাপে। কান্না এলে চক্ষুকোনে, হবে উদাসীন। পথিকের লেখা গান, গাবে দুঃখ তাপে। পড়বে মনে ও প্রিয়া, আমার সোহাগ। অশ্রুহারা শুষ্ক আঁখি,  কন্ঠে তোমার কাঁদবে, দুখের বেহাগ!                   প’ড়বে মনে অনেক ফাঁকি                                      ঘন ঘন মুছবে-                   ...

কথা ছিল

কথা ছিল দেবপ্রসাদ কথা ছিল দেখা হলে, কহিব তাহারে,  বেঁচে আছি কোনক্রমে, এই চরাচরে। হাজার রঙিন স্বপ্ন, রাঙা ক্যানভাসে। সুখ মায়া-আর্তনাদ, ছড়ানো বাতাসে। অন্ধ নগরীর সেই, কোলাহল শুনে।  জমাট গল্পের মালা-বাঁধি মনে মনে। তোমার ছড়িয়ে পড়া, যন্ত্রণা গভীর। শূন্য সে সমীকরণ, অঙ্কের মন্দির। সময়ের জালে ধরা, জীবন যন্ত্রণা। মুক্তির হাওয়া তার, রঙের মন্ত্রণা। স্মৃতির ঐ জলোচ্ছ্বাসে, জীবন প্রভাত। কালের নিষ্ঠুর চোখে, ঘাত প্রতিঘাত। স্বর্ণালী দিগন্তে বাঁধা, প্রাপ্তির উচ্ছ্বাস। ভাঙ্গা তরী বয়ে নিয়ে, চলিছে বাতাস। কথা ছিল দেখা হলে, কহিব তাহারে। ছন্নছাড়া হতভাগা, আজ কারাগারে। স্মৃতিহারা তবু সুখ, খুঁজে ফেরে মন।  মন উদাসীন বড়, পাথুরে জীবন। মুখোশের আড়ালেই, চলে মহারণ।  সেজেছি বিবর্ণ-বর্ণে, যখন তখন। সর্বহারা অবিচল, প্রত্যয়ে জাগছে। কুয়াশার অন্তরালে, সংগ্রাম বাড়ছে। ধূসর পাণ্ডুলিপির, সমাপ্ত অধ্যায়। উদাসীন মন ঘরে, বেদনা সাজায়। হাজার প্রেমের বুলি, না শুনিল মন। জারজ প্রেমের ধ্বনি, শুনিবে কখন। কথা ছিল দেখা হলে, না কবে কদাপি। কুয়াশায় দিনরাত, আসে চুপি চুপি। বালুকার তট ছুঁয়ে, নেশা করে ঢেউ। সমুদ্রের টানে ফির...

সাত বছর আগে

সাত বছর আগে দেবপ্রসাদ সাত বছর আগের কতক গুলো ছবি বাতাসে ভর করে স্মৃতির প্রকোষ্ঠে ফিরিয়ে দিলো মন। সেই যে, শূন্যতায় পাশে  থাকা তোমার  গ্যাংটক পেলিং এর ছবি গুলো মনে পড়ে তোমার?  তখন শুধু লোক ভয়ে, তুমি আমি হাসি মুখে ভোলোনি নিশ্চয়ই,  আমাদের ভালো লাগা ভালোবাসা গুলো অন্য কোনো পাত্রে, অন্য কোনো ঘরে তখন বাসা বাঁধছিল,  আমার ভালোবাসাকে উপেক্ষা  করতে বিন্দুমাত্র সংকোচ করো নি তুমি, সাত বছর আগে,  আমি যে ভেতরে ভেতরে - ক্ষয়ে গেছি তোমাকে কত ভালোবাসি সেটা বোঝনি তখনও,  সেই বেড়ানোটা ছিল শুধু দেখানো আমি তোমাকে পাশে চাইছি অথচ তুমি দূরত্বে, শরীর নয় মন বহু দূরে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছিলে তুমি, তুমি বিশ্বাস করো আমি একবারও  তোমার থেকে দূরে চলে যাইনি তোমাকে ভালোবাসার এমন পরিনাম পাবো বুঝিনি আমি ব্যকুল হয়ে তোমার ফিরে আসার পথ দেখছিলাম। তোমাকে মন থেকে হারাতে বড় কষ্ট হচ্ছিল সকলের অলক্ষ্যে যে লড়াইটা চলছিল আমি বুকের ভেতরে যে বেদনা অনুভব করছিলাম  সেও তুমি বোঝনি, ঘুরে দেখোনি একবারও, কে আমি কি আমি কেন আমি তুমি ভাবতে বসেছিলে সেই তোমাকে ভালোবাসে আমি নয়, সাত বছর আগে।