Posts

Showing posts from October, 2023

ভৈরবী সুর

ভৈরবী সুর দেবপ্রসাদ জানা ২৯.১০.২০২১ আলমারির কোনে সেই পুরানো তানপুরাটা টুং টুং করে বাজে প্রতিদিন। সেই যে, গুপির হাতের তানপুরার মতো। ওস্তাদের গান, ভৈরবী। সকাল কি আছে এখনো? তাহলে গান ধরি, কি বলেন বাবুরা? বটতলার বাবুদের গান শোনালেম, তারা কত সুখ্যাত করলে,তুমি বলো সুর নেই, তানপুরা আবারও বেজে ওঠে- আলমারির কোনে, মূর্ছিত হয়েছি প্রতিবার,তোমার গানে  তোমার কদরে। কত কিছু ঘটেছে,  ওই আলমারির কোনে,এই অন্তপুরে  বেজেছে তানপুরা অকারণে, সৌন্দর্য ফুটেছে তার গানে,ভালোবেসে একদিন। তার হাত, আমার বক্ষ ঘুরে ঐ তানপুরার  প্রতি তারে,সে কি সুর- ভালোবাসা। দেখনি তোমরা তার নয়নের ভাষায় লুকিয়ে ছিল, অশ্লীলতা।  গানটা আমার ঠিক আসে নি,  এ গলায় বসে নি, সুর আমি বুঝিনি, তবু মা, আমার মা। বোঝালে, মাস্টারটা ভালো, শিখে নে কিছু, যা শিখবি সব তোর থাকবে,  শশুর বাড়িতে রোয়াব বাড়বে, ওই তানপুরার তারে জমাট বাঁধা ধুলো হৃদয়ের আলোড়ন বুঝেছিল সে, শরীরের উন্মাদনা দেখেছিল যে। বুঝিনি আমি। ছলনা করেছে,  লোভের লেলিহান শিখায় জ্বালিয়ে দিয়েছে। কি যে চেয়েছিল সে? ভাঙল সব আশার তৃণলতা। ওই আলমারির কোনে তানপুরায়- পাপের ধু...

কল্পনায় তুমি.....

কল্পনায় তুমি... দেবপ্রসাদ জানা ২৬.১০.২০২৩ মেঘলা আকাশ, বিকেলের রোদ হারিয়েছে, আমি নিশ্চুপ নীরবে হেঁটে চলেছি আনমনে।  শহরের কোনো এক গলিতে,  চারদিকে মানুষের কোলাহল, ব্যস্ত শহর। মানুষের কোলাহল ছেড়ে- হাঁটতে হাঁটতে, শহর থেকে দূরে জন-মানবহীন কোনো স্থানে। যেখানে চারদিকে কোনো মানুষ নেই,  একদম নীরব প্রকৃতি। যেখানে শুধু পাখিরা গান গাইবে। বইবে শীতল বাতাস। আমি বসে থাকবো কোনো এক বটতলায়। চোখের কোণে জলবিন্দু এসে জমাট হবে। আকাশটাও আমার চোখের সাথে  তাল মিলিয়ে ঝরিয়ে দেবে বৃষ্টি কণা। বুঝবে না কেউ, আমি কাঁদছি, অনেকটা ভিজে যাবে আমার শরীর, ঠান্ডা বাতাস আমাকে শীতল করে দিয়ে বলবে, কাঁদো, আরো কাঁদো ভুলে যাবে সব। আমি ভুলে যাবো তোমার কথা, আমি ভুলে যাবো তোমার প্রেমের- মন ভোলানো শব্দ গুলো। ভুলে যাবো যাত্রী ছাউনিতে বাসের অপেক্ষায়, নীল শাড়ির ফাঁকে তোমার মোহময় তনু। লাল লিপষ্টিকে আদুরে তোমার ঠোঁট। ভালোবাসায় ভেজা শাড়ির আঁচলে - জড়িয়ে ধরা তোমার আদর। আমি ভুলে যাবো। আবার বৃষ্টি নামলে- বৃষ্টিতে ভিজতে হবে বলে ছাতা হাতে নিয়ে তোমার এগিয়ে আসা। তোমার অভিমানী শাসনে- নিজেকে সামলে নেওয়া, সব ভুলে যাবো।   আবা...

আমি ভালোবেসেছিলাম

আমি ভালোবেসেছিলাম দেবপ্রসাদ জানা ২৬.১০.২০২৩ গাড়িটা চলে গেল দূরে,  অনেক দূরে...... আমার বুকটা হাহাকার করে উঠল,  চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হলো-  "আমি মিথ্যে বলেছি সোনা।  আমি তোমার বরের অফিসের বস নই!  আমি টিউশনী করে চলা,  বস্তিতে থাকা অকর্মা-বেকার যুবক।  যেদিন তোমার বিয়ে হলো,  সেদিন আমি অস্ট্রেলিয়া যাইনি।  আমি সারারাত ছাদে বসে কেঁদেছি...  তোমার কথা ভেবেছি,  তোমার ধারণা ঠিক, আমি একটা দুর্বল।  আমি ভালো নেই সোনা,  আমি ভালো নেই!" হ্যাঁ নিশ্চয়ই ভীষণ অবাক হচ্ছো,  ওর চিন্তা আমি স্পষ্ট ধরতে পারছি না।  একসময় বইয়ের মতো পড়তে পারতাম  ওর মনটাকে, আজ অবোধ্য সে দূর থেকে মিষ্টি করে হাসল, আমি তার দিকে তাকিয়ে।  তার চোয়াল বিস্ময়ে ঝুলে পড়েছে। আমার আকুতি ভরা সংলাপ সে- শুনতে পায়নি, আমার বাইরের হাসিটা দেখেছে। আমি তার প্রাক্তন প্রেমিক,  এ কথাটা তার মুখ থেকে বেরোল না। বেশ অবাক হয়েছে বলে মনে হলো। নিশ্চয়ই ভাবছে, চার বছর আগে - যে ছেলেটার সাথে দীর্ঘদিনে  ভালোবাসার সম্পর্ক, কোন কারণ ছাড়াই,  এক মুহূর্তে চুকিয়ে দিয়ে,  বাব...

খিচুড়ি

খিচুড়ি  দেবপ্রসাদ জানা ২৫.১০.২০২৩ চল শালা তোর সময় শেষ। ঘুমিয়ে ছিলাম জানেন,  রাতের খাবার খেয়ে, একটা মিষ্টিও ছিল। বেশ আরামে পাশবালিশে পা তুলে - হ্যাঁ বউ ও ছিল সঙ্গে,  ও উল্টো দিকে মুখ করে গভীর ঘুমে- আমি বললাম আরে !  এখন কেন?  ঘুমাচ্ছি, তাছাড়া কোথায় যাবো? কালো ভোঁত্কা একটা মোটা লোক মাথায় সোনালী রঙের মুকুট পরেছে আবার, সবাই বলে আমার নাকি মাথাটা, খুব ডাল। আপনাদেরও কি তাই মনে হয়?  ছোটো বয়স থেকেই শুনে আসছি  আমার নাকি কিসসু হবে না,  এক্কেবারে ডাল মাথা। তবে শুনতে খারাপ লাগলেও, আমি কষ্ট একেবারেই পাই না,  মহাপুরুষদের জীবনী পড়ে দেখেছি ছোটো বয়সে, তাঁদের অনেকেই আমার মতো ছিলেন,  অনেকেই পড়াশোনা ভালোভাবে করতেন না,  ক্লাসে গাড্ডুও মারতেন কেউ কেউ ।  আমি কিন্তু, কখনোই গাড্ডু মারিনি,  টেনেটুনে ঠিক পাশ নম্বরটা তুলে নিতাম।  তবুও শুনতে হ'তো "ডাল হেডেড ! " তা সে যাই হোক, চাকরি বিয়ে বউ বাচ্চা- ওই বিশেষ বিশেষণটা এখনো মলিন হয়নি। আসলে কি জানেন,  সাধারণ মানুষের পক্ষে, মহাপুরুষদের বুঝতে পারা একেবারেই সম্ভব নয়। সাধারণের সঙ্গে ভাবনার বিশাল ফারাক!...

শুভ বিজয়া

শুভ বিজয়া দেবপ্রসাদ জানা পুজোর শেষ, পৃথিবীকে অন্ধকার করে মা চললেন নিজের বাড়ি কৈলাশে। বরফের দেশ, ঠাণ্ডায় হিমকরা কাঁপুনির মধ্যেও মা থাকেন, বলেন না উষ্ণতা চাই। বলেন না আধুনিকতা চাই। তবু চললেন পৃথিবীর সব সুবিধা ছেড়ে অসুবিধার দেশে। পর্যাপ্ত আলোয় পুবের আকাশটা  সোনালী রঙে ভরে যায় কৈলাশ। আরো কত রঙের বাহার সেখানে প্রাকৃতিক। স্পষ্ট দেখা যায় সব। মাকে দেখা যায় না।  এখানে হাজার নিয়নের বাতি জ্বেলে, রাখতে হয় মাকে। বাবা ভোলা নাথের অমতে আসেন বটে, কিন্তু বেশিদিন থাকতে পারেন না কিছুতেই। আবছা অন্ধকার,  রাতের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। বড্ড দুষ্ট হয়েছে পশ্চিমের আকাশটা। তাড়াতাড়ি তাড়াহুড়ো করে রাত আসে। একটা সময় গভীর হয় অন্ধকার। দিনের শেষে রাতের প্রথম অন্ধকারের  মাঝামাঝি একটা সময় আছে,  বেশ ভালো লাগে কিন্তু সময়টা কম। মা আসার দিন গুলোর মতো। আজ চলে গেল মা- শুভ বিজয়া 

একটা চিঠি

একটা চিঠি  দেবপ্রসাদ জানা ২৩.১০.২০২৩ সাদা পাতার কি কপাল। এখন আর কেউ চিঠি লেখে না তাতে। মেঘের ভাঁজে পুরে, সাদা মেঘের গায়ে- মেঘের হাতেও কেউ চিঠি দেয় না আদরে। পায়রার কথাতো বাদই দিলাম। সে রাজা রাজরাদের ব্যাপার। একটা ভালোবাসার চিঠি এখন, হাজার মাইল দূরে এক মুহূর্তে চলে যাচ্ছে। ভালো খারাপ দেয়ানেয়ার সব কথা তোমাদের ওই ছোট্ট মেশিনটায় ভরে। আমি একদিন কি ভেবে আমার গল্পগুলোকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম তার কাছে।  গল্পগুলো ঠিক গল্প নয়, জানো তো...  নিতান্তই দৈনন্দিন টুকিটাকি।  এই তো সেদিন,  আলগোছে পাতা উল্টিয়ে দেখি, এক কোণে লিখে রেখেছি, সেদিনকার বাজার দর।  কুচো চিংড়ি তিনশো গ্রাম ১০০ টাকা!  কুচো চিংড়ির দাম জেনে,  কি করবে সে? এটা কিছুতেই মাথায় আসে নি!  কি জানি কি সব আবোল তাবোল লিখি! তবু লিখেছিলাম পাতা ভরে, সাদা পাতায়। আসলে সাদা পাতার দুঃখটা বোঝেনি কেউ। আমি বুঝেছিলাম বটে। তবে চিঠিগুলো কাকে লেখা? এই যেমন ধরো বিকেল বেলায়,  অলস বিছানায় গা এলিয়ে,  বসে থাকতে থাকতে, লিখে ফেলেছি দু'কলম। মাঝে মাঝে গভীর রাত্তিরে ঘুম ভেঙে, চোখ কচলাতে কচলাতে লিখেছি,  "আজকের চাঁদটার ম...

একটা অচেনা নদী

একটা অচেনা নদী দেবপ্রসাদ জানা একটা চেনা নদী একটা অচেনা স্রোত। দূর থেকে দূরে  আকাশ চলে যায়,  কেন যে চেনা মন আমাকে ডাকে,  শুধু ডাকে। এমনটা যদি হতো ছেঁড়া সাদা পাল আঁকড়ে ধরে বাতাস নদী বুক চিরে চলে যায় সকালের হাওয়ার বাঁধনে। তোর অকুণ্ঠ ভালোবাসার পথে টিলা জঙ্গল নিয়ে চলেছি, মেঘ কুড়োতে, শেষ আশ্বিন, হেমন্ত হলো শুরু। ভাদ্রের জ্বালা জুড়োতে, শাল পলাশের পাড়ায়, শিশির নেমেছে ঘাসে মুখে চুম্বন দিতে কদমের ফুলের গন্ধ চোখে ঘুম দিয়ে- ছেঁড়া পালের নৌকায় ডাকে হেমন্ত। নীলকণ্ঠের নীল দ্বীপে কোজাগরী জোছনাকে ডেকে বিষণ্ণতার মানে খোঁজে আগমনী হাওয়া গহীন নিভৃতে।  মনের জানালা ধরে, হেমন্তের দিন গুলি উঁকি দিয়ে গেল হিমেল হাওয়ার উত্তরে।

রৌদ্রের চিৎকার

রৌদ্রের চিৎকার  দেবপ্রসাদ জানা না বাসস্টপে দেখা তিন মিনিট,  বহুকাল ধরে মনের গভীরে বেঁধেছি তোমাকে স্বপ্নে, কখনো কল্পনায়। দিকচিহ্নহীন এই ভালোবাসার গল্প শোনাতে পারিনি আমি। এক শরীর, একমন, একান্তে প্রেম- হয়নি কোনদিন, পূবালী হাওয়ার ভিতরে স্বপ্নে, অফুরন্ত বনানীর সবুজে,  নীল স্বপ্নের, নীল দুঃসময়ে। দক্ষিণা বাতাসে ওড়া তোমার চুলের   সুগন্ধ মেখে, স্বপ্নের সমুদ্রে ভাসা কী ভয়ংকর।  স্বপ্ন ফুরিয়েছিল সেদিন,  যেদিন চোখের পাতায় তুলসী চন্দনের,  প্রলেপ পড়ে গেল, ঘুম দিয়ে গেল চিরনিদ্রার অন্ধকার। না ঘুমোবো না, স্বপ্নে দেখা শেষ হবে কিনা? তোমার সুশীল পোশাকের লজ্জাহীন, সেলফি। স্বপ্নহীন জেগে থাকার প্রয়াস, তোমার সহাস্য মুখের অন্তঃস্থলে,  রৌদ্রের চিৎকার শুনেছি, আমি। আমার বুকের ভিতরে।

জ্যোতির্ময়ী রূপ

জ্যোতির্ময়ী রূপ দেবপ্রসাদ জানা ২১.১০.২০২৩ হে রূপসিন্ধু, স্বরূপ তোমার - হৃদয় ভরিয়া যায়, সুধায় সুধায়। এ কোন মৃত্তিকায় খুঁজি বিশ্বের মন্দির। উদার আকাশ আর, সিন্ধুর সুনীল। গিরি নির্ঝরিনী অশ্রান্ত উচ্ছল প্রভা। প্রান্তর দিগন্ত নীল, শ্যাম মধুরিমায়। প্রকৃতির অঙ্গে অঙ্গে তোমার সুষমা, সম্বলহীন কুণ্ঠায়, এ কোন চমৎকারে পেয়েছ তোমার এমন রূপ,  কবে কোনখানে?  সৃষ্টির আদিকালে ব্রহ্মার কোলে, তোমার উৎপত্তি, তোমার সৃষ্টি। তোমার রূপে মুগ্ধ হয়ে,  তোমারেই বাসনা করেন যিনি, তিনি আর কেউ নয়,  তিনি প্রজাপতি ব্রহ্মা। তোমার চঞ্চলতায় সেও ধরিবারে চায়, অন্তরে, বাহিরে অপূর্ব আলোকে তোমার জ্যোতির্ময়ী রূপ, 

কবির দুর্গা

কবির দুর্গা দেবপ্রসাদ জানা নীল আকাশে শরৎ ভাসে শুভ্র মেঘের ভেলা। শুরু হলো রোজ কবিতায়  দুর্গা দুর্গার খেলা। কারো দুর্গা মাটির গড়া কারোর দুর্গা বেলা। কাশ ফুলের সাদা ফুলের বসিয়ে দিলো মেলা। কারো দুর্গা টালির ঘরে কারোর দুর্গা বিলে। মেঘে উড়ছে পেঁজা তুলো  কোথায় যেন চলে। হায়রে দুর্গা ফুটপাতের রজনী গেল খেটে। কাশের ধুতি দুলিয়ে এলো তোমায় নেবে  বটে। এমন দুর্গা খেলায় কেন মাতলো কবির দল। শরতের শুভ্র নীল গগনে  কালো মেঘের ছল। কারোর দুর্গা বাসন মাজে কারোর দুর্গা হাসে। জমির পানে তাকিয়ে দেখি শিশির নেইযে ঘাসে। কাশের বনে শুকনো পাতা দুর্গা তুলে আনে। রান্না ঘরের খালি উনুন ভেসে গেছে বানে। শরৎ হাওয়ায় তারই বার্তা  আকাশের সাদা মেঘ। এদিক ওদিকে ঘুরে বেড়ায় পেটে ক্ষিদের বেগ। কবির দুর্গার ঘর নেই সেতুর নিচে ঘর। মাটির দুর্গার রঙিন আলো হাজার অনুচর। পুজোর গন্ধে মাটির দুর্গা  হাসছে সারাদিন। শিউলির ডালে শুয়োপোকা ঘুরছে প্রতিদিন। দুর্গা নিয়ে শব্দ খেলায় মাতলো কবির দল। গাছের পাতা ফলফুলে কবিতা দূর্বল।

ওভারব্রীজে

ওভারব্রীজে দেবপ্রসাদ জানা ২০.১০.২০২৩ ওভারব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে আছি আমি।  সন্ধার সূর্যটা বহু আগেই বাড়ি ফিরে গেছে, রাস্তার সোডিয়াম হলুদ বাতিগুলোও জ্বলে উঠেছে আলোকময় নগরীকে আরেকটু আলোকিত। এই সময় বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে মানুষের, ফিরে যাওয়ার নীরব প্রতিযোগিতা। ভীড় বাড়ে বাসে ঠেলাঠেলি।   হাঁ যাত্রীদের ফিরে যাবার,  আকুলতা দেখতে থাকি আমি।  মানুষের জীবনটা বড় বিচিত্র, পাখির মতো। দিন শেষে রাতে পরিবারের পিছুটান, অবাক লাগে মাঝে মাঝে এরকম পিছুটান।  ভীড় বাড়ে ওভারব্রীজে,  একটা মেয়ে না বউ দেখিনি  অনেকক্ষণ কার জন্য যেন অপেক্ষা করছে। অস্থায়ী বাসিন্দারা ফিরতে শুরু করেছে, আমি ব্যস্ততার পাশ কাটিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।  হাতের জ্বলন্ত সিগারেট,  টান দিতে ভুলে গেছি, হাতে ছেঁকা লাগল। ব্রীজের আলো গুলো মহিমায় উজ্বল হয়ে উঠছে। আমাদের পৃথিবীটা হয়ত কোন জ্বলন্ত সিগারেট, প্রতি মুহুর্তেই ছোট হয়ে আসছে।  প্রতিদিন ছেঁকা দিয়ে যাচ্ছে, মধ্যবিত্ত বেকারের হাতে। আজকের দিনে একটু বিলাসিতা হতেই পারে। বেতনটা এ মাসে দুদিন আগেই পেলাম।  মন বাসা পরিবর্তন করেছে। সত্যিকার অর্থে আমার জন্যেই। ...

তোমাকে ঠিক চেয়ে নেবো

তোমাকে ঠিক চেয়ে নেবো  দেবপ্রসাদ জানা যখন খুব মেঘ করবে,  বৃষ্টি নামার আগে রাতের আকাশ যখন-  অফুরন্ত উল্লাসে নিজেকে লালচে রঙ্গে রাঙিয়ে, যখন অফুরন্ত ভালোবাসার উদ্বেগ হবে, তখন তোমাকে ঠিক চেয়ে নেবো। যখন মাঝেমাঝে আমার মনে অদ্ভুত - এক ইচ্ছে জেগে উঠবে।  বোকা বোকা কতগুলো ইচ্ছে ,  আমার কাছে ভীষণ প্রিয় হয়ে উঠবে।  রাতের মেঘলা আকাশে নির্জন একটি দ্বীপ, কিনতে ইচ্ছে করবে।  ইচ্ছেমত সবুজ আর নীলচে রঙ করা- সমুদ্রের মাঝে দ্বীপটিতে - শুধু আমার একলা রাজত্ব হবে। ঠিক তখন তোমাকে চেয়ে নেবো আমি। মাঝরাতের আকাশ ভেঙ্গে যখন ঝুম ঝুম বৃষ্টি নামবে,  সেই বৃষ্টিতে আমি দুরন্ত নদীর মত উল্লাসে,  যখন মেতে উঠব ।  বৃষ্টির আনন্দ আমাকে বাঁধতে আসবে না। আমার একলা দ্বীপে মুগ্ধতায় মাখা বৃষ্টি- ছোট্ট সমুদ্রতটে হলদে বালির ওপর-  অবিরাম ঝরতে থাকবে, রঙ্গীন কোন ছোটো সালতি,  অনেক দুরের কোন দ্বীপাঞ্চল থেকে,  কোন খেয়ালী বাতাস ভ্রমণসঙ্গী হয়ে উদাস নয়নে, ভীষণ সাহসী আর উন্মত্ত বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকবে। তখন আমি ঠিক চেয়ে নেবো তোমাকে। যখন আমার চুলের বাতাসের যুদ্ধ হবে-  তখন আমি ঠিক চেয়...

জন্ম

আকাশের ঘোলাটে বিষণ্ণতা কাটিয়ে হৃদ স্পন্দনের কম্পনে সুরেলা বাদ্যে মুখোরিত দেবীপক্ষে দেবীর আবির্ভাব।  মহা চতুর্থীর পূণ্যলগ্নে দুপুর পেরিয়ে ঠিক একটায়। সবুজের শিহরিত সজীবতায় জন্মে  অভিমানী ফোঁটা, গর্বোদ্ধত বারিবিন্দুর সম্মোহন...  অলিখিত ব্যবধানে বাউণ্ডুলে একতারা   আঙুলের রক্তাক্ত আঁচড় কেটেই  ছড়ের শরীরে ছোঁয়াতে চেয়েছিল  বিশুদ্ধ স্বেদনে নির্ভীক প্রেমের স্মৃতি!  ফুলের সুবাসে স্নিগ্ধতা পর হ’লেই  কুণ্ডলীর কুণ্ঠায় ধোঁয়া অযাচিত,  সময়ের করাল দংশনে হতবাক প্রশ্ন   প্রশমনে সোঁদা মাটির খোঁজে নষ্ট,  ক্ষেতের ক্ষেত্রজ খতিয়ানে খয়রাতি...  ধারায় আপ্লুত ঝরণা হয়তো  আসলে আড়ালে ফেলা চোখের জল,  বিরহিত যমুনায় আকুলতা অনায়াসে   হ’তেই পারে ব্যবহারে বিবর্জিত,  স্থিরতা হারালেই কালপুরুষ কাপুরুষ?  স্বাদ আর বিস্বাদের ফারাক   বুঝে গেলেই নিবারণের বারণ চিনে  হতাশার হা-হুতাশ মোটেও অবুঝ নয়,  বিলম্বিত লয়ের দ্যোতকে পূরণ করা  প্রলম্বিত শূন্যের বিচরণ সাবলীল...  তবুও কারণের শব দাহ-কালে   জ্বল...

শরতের প্রতিবাদ

শরতের প্রতিবাদ  দেবপ্রসাদ জানা ১৭.১০.২০২৩ শরতের মুখে গাঁথা সূর্য ফোঁটা ফোঁটা চুইয়ে পড়া রক্ত যেমন। সকালের রশ্মি শরতের আগমনী মঞ্চে স্পট লাইটের মতো টানছে। একদিকে ঘোর অন্ধকার,  একদিকে শারদীয়ালোকের শিব তাণ্ডব। প্রতিটি ফুটপাতের আলোর পিছনে  না খেতে পাওয়া, এক একটা উলঙ্গ লাস, তবু আমরা সমাজ কল্যাণে ব্রতী। কতকগুলো ঘৃণিত প্রাণী, ঘৃণার মন্ত্রে উচ্চারিত প্রার্থনাকে ছাপিয়ে দশভূজার দশহাতের অস্ত্রসস্ত্রকে জাগরিত করি। অস্ত্র? যা ছুঁড়ে বিনাশ করা যায়। সস্ত্র? যা নিজ হস্তে বধ করতে হয়। না কোনটাই ব্যবহার যোগ্য নেই। তবু মায়ের আগমনী সুরে পাপ ও পাপীদের বিনাশ বার্তা। কেন? তবু জেগে থাকে প্রতিটা মুখ ফুটপাতে। অলিতে গলিতে। যেখানে সকালের রশ্মির মত ফোঁটা ফোঁটা রক্ত চুইয়ে পড়ে।  দখলদাররা কুত্তার মত গর্জায় -  "ছোটলোকের দল শহরে নোংরা করছিস্।" “কে তোর সঙ্গী ?” একটা বস্ত্রদান এক মুঠো চাল,  একবেলার পেট পূর্তি মোবাইল উৎসব। ভবিষ্যৎ নির্দিষ্ট হয়—সকালের রশ্মির মত, ফোঁটা ফোঁটা রক্ত চুইয়ে পড়া রোদ। ঠিক তখন থেকেই বলবৎ হয়—আগমনী। কথা গুলো তীরের মতো ছিটকে আসে। কার্তুজের মত—আগুন ছোঁড়ে। প্রার্থনাগুল...

এ কিসের আগমনী

এ কিসের আগমনী দেবপ্রসাদ জানা কাশফুলের হৃদয় মায়ের আগমনী। মা এলো নতুন সাজে, আবার প্রকৃতি, ঢাকের তালে নেচে উঠেছে। কি আজব ব্যাপার, বলো দেখি। প্রকৃতির মুখে মুচকি হাসি। মেঘেরা পাল তুলে কাশবনের দেশে চলেছে। কাছে যাবার মতো প্রবৃত্তি কি করেই বা হবে? সারা গায়ে লেগে আছে পাপের ধূলো। সত্যের শুভ পায়ে-  কুৎসিত কালো অন্ধকার। কিঞ্জল চোখের গভীরে প্রতিহিংসার ক্ষুধা। চাপ চাপ রক্তের শুকনো দাগ।  হাঁটতে গেলেই পথ আগলে দাঁড়ায় অন্ধকার। মনও সায় দেয় না যেতে,  অথচ যেতে হবেই সব কালো মেখে, ক্ষুরধার সাঁকো পেরিয়ে, সাদা মেঘের নীচে লক্ লক্, করছে, লেলিহান আগুনের শিখা। কালো ধোঁয়ায় ভরেছে পৃথিবী। চির রহস্যময় পাল তোলা সাদা মেঘ, অন্ধকারময় পৃথিবীর কাশফুল ভয়ে ভয়ে কাঁটা হয়ে আছে।  তবে কি, কোন মূল্যেই তার কাশবনে  যাওয়া হবে না?

কাশফুল

কাশফুলের হৃদয় মাঝে মায়ের আগমনী। মা এলো নতুন সাজে, আবার প্রকৃতি, ঢাকের তালে নেচে উঠেছে। কি আজব ব্যাপার, বলো দেখি। ভাবছে নূপুর।  ছেলেটার নাম রাজু।  সব মেয়েই ওর জন্য পাগল।  নুপুর একদমই পছন্দ করে না।  ছেলেটা তার পাশের বাড়ির। মুচকি হাসে।  কাছে যাবার মতো প্রবৃত্তি কি করেই বা হবে সারা গায়ে লেগে আছে পাপ-ধূলো ঘূণিত সমা সত্যের শভ পায়ে কুৎসিত কালো লেগে আছে কিঞ্জল চোখের গভীরে প্রতিহিংসার ক্ষুধা তন্ময় হাতে ; চাপ চাপ রক্তের শুকনো দাগ । হাঁটতে গেলেই পথ আগলে দাঁড়ায় মনুষ্য বিবেক। মনও সায় দেয় না যেতে, অথচ যেতে হবেই সব কালো মেখে ক্ষুরধার সাঁকো পেরিয়ে যার নীচে লক্ লক্, করছে লেলিহান আগুনের শিখা চির রহস্যময় তোমার কথা ভাবছি, আর ভয়ে ভয়ে কাঁটা হয়ে যাচ্ছি। তবে কি কোন মূল্যেই তোমার কাছে হবে নাকো যাওয়া ?- রাজুঃ এই যে নুপুর, উনি আমার বাবা, কাল এসেছে। নুপুর পায়ে ধরে সালাম করল। আর বলল, “আঙ্কেল, আমাদের বাসায় আসবেন কিন্তু।“ নুপুরের এক ফ্রেন্ড রাজুকে লাইক করে। তাই মাঝে মাঝে রাজুর ভোনের কাছে গিয়ে কথা বলে আসে। কিন্তু নুপুর এসব লাইক করে না। নুপুর একটু reserve  টাইপের। তাই ত...

হে অচিন্ত্য

হে অচিন্ত্য দেবপ্রসাদ হে অচিন্ত্য পূর্ণ রূপ-চরিত-মহিমা, নবশোভা, নব ধ্যান, মৃন্ময়ী প্রতিমা, হে মহালক্ষ্মী জননী, বোধন সাধনে। বিকশিল জ্যোতি প্রীতি, মঙ্গল বরণে। তুমি ব্রহ্ম মহামায়া, বিপদহারিনী। তব প্রেমময় আঁখি, নিখিল তারণী। কনককান্তি ঝরিছে, শ্রীকান্ত বদনে। জয় সংগীত ধ্বনিছে, তোমার ভুবনে। প্রাক্-প্রত্যুষে জাগো হে, জ্যোতির্ম্ময়ী মাতা। জগন্মাতা মহাশক্তি, আগমনী বার্তা। আকাশ-বাতাসে ঘোরে, বেদ মন্ত্রস্তব। ভূলোকে গোলোকে জাগে, মহাকলরব। ভূমানন্দে মহানন্দে, অপূর্ব্ব প্রেরণা।  শারদ গগনে দেবী,করিছো ঘোষণা। হে অহং রুদ্রেভি চণ্ডী মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি। মহর্ষি অম্ভৃণের কন্যা; মহাপূণ্য শশী। সূক্তের দেবতা দেবী, পরব্রহ্মময়ী। আদ্যাশক্তি জগদম্বা, হে পরমাশ্রয়ী। তুমি রুদ্রা ও (অষ্ট) বসুরূপে বিচরণ করি; আমি (দ্বাদশ) আদিত্য ও বিশ্বদেবগণের রূপে বিচরণ করি; আমি মিত্র ও বরুণকে ধারণ করছি; আমি ইন্দ্র ও অগ্নিকে ধারণ করছি; আমিই ধারণ করছি অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে।।১।। আমি দেবগণের শত্রুনাশকারী সোম, ত্বষ্টা, পূষা ও ভগকে ধারণ করছি; দেবতাদের উদ্দেশ্যে হবি-প্রদানকারী ও বিধি অনুযায়ী সোমরস প্রস্তুতকারী যজমানকে আমি ধন প্রদান করি।।২।। আ...

তবে?

তবে?  দেবপ্রসাদ জানা ১৫.১০.২০২৩ তবে কেন যেন মনে হচ্ছে,  আজ রাতে বৃষ্টি নামবে ,  শরৎকাল তো সারপ্রাইজ দিতে, ভীষণ পছন্দ করে বলেই জানি। লক্ষ্য করলাম, একা একা হাসছি। কয়েকজন ঘুরে আমার দিকে তাকাচ্ছে, সম্ভবত পাগল ঠাওরেছে। সে যাকগে , কে কি ভাবল তা নিয়ে মাথা ঘামাবার,  খুব কমই সময়, সময় ব্যক্তিমালিকানাধীন। তাই সংরক্ষন করি।  এর সদ্গতি করি, নাকি দুর্গতি করি  তা ঠিক জানি না, তবে আমার সমস্যার  যে একটা গতি হয় তা কিন্তু সত্যি। তবু মনে হচ্ছে আজ রাতে বৃষ্টি হবে। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষার পর- সময়ের দরজা খুলে গেল। কি বলব বুঝলাম না,  সত্যি বলতে কি, বেয়াদব রকমের সময়,  আমার জীবনে খুব কম দেখেছি।  কেন যেন বুড়ো বয়সের সময় গুলি সব বিখ্যাত হয়ে যায়।  কিভাবে সেটা একটা ভাববার বিষয়। আপাতত মাথা না ঘামিয়ে, বসে পড়লাম।  বৃষ্টি আসার অপেক্ষায়। কয়েক মুহূর্তে মেজাজ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল,  এতক্ষন ধরে বসে আছি,কত বড় সাহস,  আমার সময়- আমাকে এর পরেও  অপেক্ষা করতে বলে। আমি হতাশার সাথে আবিষ্কার করলাম, আমার বয়স আর আমার সময়,  চোখে চশমা লাগিয়ে, হাতে বই নিয়ে,...

একটানা স্বপ্ন

একটানা স্বপ্ন দেবপ্রসাদ জানা খুব মেঘ করে বৃষ্টি নামার আগে  রাতের আকাশ যখন অফুরন্ত উল্লাসে, নিজেকে লালচে রঙে সাজায়,  রাতের মেঘলা আকাশ দেখলে,  নির্জন একটি দ্বীপের যেমন ইচ্ছে করে।  সবুজ আর নীলচে রঙ করা, দ্বীপটিতে শুধু একলা রাজত্ব করবে।  আকাশ ভেঙে সেখানে যখন ঝুম বৃষ্টি নামবে,  তখন দুরন্ত নদীর মত উল্লাসে মেতে উঠবে, বৃষ্টির আনন্দে। মুগ্ধতায় মাখা বৃষ্টির আশ সমুদ্রতটে,  অবিরাম দুলতে থাকবে,  কোন এক পাল ছেঁড়া পানসি ,  হতে পারে অনেক দুরের,  কোন দ্বীপাঞ্চল থেকে ভেসে এসেছে ,  হতে পারে খেয়ালি রাজপুত্রের,  বিলাসী ভ্রমণসঙ্গী, হারিয়েছে।  পানসিতে উদাস নয়নে বসে থাকা,  এক সাহসী কাক। ভিজে জবজবে। কাকা রবে ডেকে উঠবে। বৃষ্টিমুগ্ধ পানসি ছেঁড়া পালের আঁচলে, মুখ লুকিয়ে বলবে ভালোবাসি। উন্মত্ত বৃষ্টি বাতাসের সাথে যুদ্ধ করতে করতে- ঝাপসা হয়ে যাওয়া আকাশের চশমায়  ছবি আঁকবে। ভরসন্ধ্যাবেলায় যখন এই অদ্ভুত,  কল্পনাবিলাসী মেঘ, ঝড়ো হাওয়া হয়ে- পানসির পালটি ছিঁড়ে চলে গেল, তখন বুঝলাম।

একটি রাত

একটি রাত  দেবপ্রসাদ জানা ১২.১০.২৩ কেন জানি না আজ খুব কান্না পাচ্ছে!  শূন্যতা, পূর্ণতা, নির্ভরতা-  নাকি নিঃসঙ্গতার জন্য,  তাও জানি না।  বুকের ভিতরে কোথায় যেন,  লুকানো জায়গা থেকে একদল অভিমান,  প্রচণ্ড সাইক্লোনে কান্না হয়ে-  দু’চোখ ফেটে বেরুতে চাইছে।  শূন্যতা তার ইচ্ছে মত, তার নিষ্ঠুর খেলা খেলছে। হিমবাহ ছুঁয়ে ছুটে আসা, দমকা শীতল বাতাস। ঘনকালো মেঘের মতো- মহাকাল। যে পাঁচটা আঙ্গুলের শরণার্থী আমি,  যে বুকের খাঁচায় রাখা ছিল আমার প্রাণ,  যার দুটো অদ্ভুত সুন্দর মধুভরা ঠোঁটের উষ্ণতায়, জীবনটা শিউলিফুলের মত সুন্দর,  যদিও ক্ষনিকের, আমি চমকে উঠেছিলাম।  তুমি আমায় পরম মততায় আলতো জড়িয়ে ধরে, তোমার ঠোঁটের সেই খুব মিষ্টি ছোঁয়ায় ভরে, ভোরের আলো ফোটার আগেই, দুষ্টু বাতাস এসে তোমাকে চুপি চুপি, নিয়ে গেল, তবুও আমি কাঁদিনি শিশির। প্রতিটি ক্ষণ হৃদয়ে যে, পরম সত্য অনুভব করলাম-  প্রতিরাতের ক্ষনিকের ভালোবাসা, এ শুধু আমার জন্য নয়, সে আর এক শিউলির এক রাতে প্রেম।

নীল উল্কা

নীলউল্কা স্বর্ণহংস জাতক ১১.১০.২৩ একটা নীলউল্কা প্রতিদিন পথ দেখাচ্ছে, আলোর পথ। ছড়িয়ে যাওয়া রবির কিরণে  বাঁচতে চাওয়া প্রাণী গুলোর ওপর দুহাতে ছড়িয়ে দেওয়া রবির আলো, অকৃপণ দানীর মতো। অসহিষ্ণুতার মেঘলা আকাশ বিদীর্ণ করে, নীলউল্কার সেই দেখানো পথ, অন্ধকারের ফাঁকে ফাঁকে রবির আলো  হীরক দ্যুতির মতো ছড়িয়ে দেয় পৃথিবীর বুকে । রাগ দুঃখ মান অভিমান করেনি সে, ভালোবাসার শ্রাবণের ধারায়  চিরকালের মতো। হিংসা ক্রোধ লোভ লালসা তলিয়ে দিতে চেয়েছে। যদিও ভালোবাসার মনটাকে কতদিন বাঁচাতে  পারবে জানা নেই, যা ধ্বংসাত্মক কর্ম যজ্ঞ চলছে- প্রতিটি নক্ষত্রে নক্ষত্রে, গ্রহে গ্রহে, অন্ধকারময় পথ কেটে নীলউল্কার ছুটে বেড়ানো মুক্ত করে অসহায় বন্দী শব্দমালা নানান আলাপ চারিতায়, অপসংস্কৃতির আঘাতে শব্দগুচ্ছ ভাঙে নির্লজ্জ অনুকরণপ্রিয়তায়। ক্ষয়ে যাওয়া ভাষার পুনরুদ্ধার, নয়তো সংক্রামক ব্যাধির মহৌষ‌‌ধের খোঁজে  নীলউল্কার এই ছুটে বেড়ানো বৃথা।       

ভালোবাসার আগে

ভালোবাসার আগে দেবপ্রসাদ জানা ১০.১০.২০২৩ এই মাতাল করা পূজার গন্ধে, আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরা, আমার একলা সন্ধে, ভালোবাসার বেহিসাবী ঝড়, হৃদস্পন্দনের পেন্ডুলাম ঘড়িটায়। অন্দরমহলের শুধুই নৈঃশব্দ্যে নিয়নবাতি  অন্ধকারকে জব্দ করছে, অতন্দ্র পহরায় থাকা উদাসী মনটা, এখন ভণিতা বোঝে, নিজেকে নিজেই খোঁজে প্রবহমানতায়। নুড়ি-পাথর গুলো যেমন বুকের ভেতরে জমা হয়ে, হিমালয় গড়তে চেয়েছিল, তেমনি আজকাল অন্ধকার গুলো জমা হয়ে, ব্লাকহোল হতে চাইছে। একটা নদীও এদিক ওদিক ঘুরে নুড়ি-পাথরসহ নীরস বুকের মাঝে চিরন্তন বালুচর গড়ে তুলবে বলছে। বুঝলে ভরা শ্রাবণে, জলের চাপে ক্ষয় হতে হতে, স্রোতের দাগ শুকনো খটখটে মনটাকে,  উপত্যকায় আটকে রাখা নুড়িপাথরের-  সকল অভিলাষ..আগ্রাসী শরৎ-কে করে দিয়েছে পুরোপুরি ছারখার- কালো মেঘের ঘন প্রবাহ বিপদসীমা পেরিয়ে, ধুলিসাৎ করেছে শরতের সমস্ত অহংকার। ঋতুরাজে উপেক্ষায় অপ্রাপ্তির ভাণ্ডার - পূরণ করে নিতে, শ্রাবণ এসেছে, আরও একবার। প্রতিশোধের আঁচে--কাশের শুভ্র আঁচল। শিউলি হাসি জলকাদায় মিশেছে। সহ্যের বাঁধ যখন সীমান্ত অতিক্রম করে  কাজলদীঘির অঝোর ধারায়,  থামে না অনাহুত বৃষ্টি। মনের উচ্...

ভাঙ্গা শরীরে

ভাঙ্গা শরীরে দেবপ্রসাদ জানা রাতের পাখিরা নীড় ছাড়ছে- শরীর ভাঙছে দ্রুত,তফাৎ শুধু একটাই... পুরোপুরি রাত ভেঙে গেলে দিন আসে আলোর ফুলঝুরি জ্বলে,  শরীর ভাঙা শেষ হলে  পুরো অন্ধকার! আর সহ্য হয় না পরিশ্রম। এক স্বপ্নে দেখা রাজকন্যার খোঁজে,  বয়ঃসন্ধির প্রাক্কালে, কোনো এক বাসন্তী ভোরে- তখনো পাখিরা ঘর ছাড়েনি, পৃথিবীতে পড়েনি সূর্যের আলো, একটা জোরে...শব্দ করে মিলের সাইরেনটাও বাজেনি তখন। হ্যাঁ ঘর ছেড়েছিলাম, সময় কে পিছনে ফেলে, এগিয়ে যাবো উন্নতির শিখরে। বরফ ঢাকা হিমালয়ের কক্ষে। কিংবা কৈলাশে। কৈলাশের কোলে পৌঁছনোর আগেই শরীরটা যেন ভেঙে যাচ্ছিল। স্বপ্নে দেখা রাজকন্যার দেখা হয়নি তখনো। তোমার সঙ্গে দেখা হলো বটে, ধবধবে জামায় লাল রঙের একটা দাগ- হঠাৎ ই কালো হয়ে গেল। সেই দাগ আজও  স্বপ্নে নয়, বাস্তবে দেখতে পাই। ভাঙ্গা শরীরের ভাঙ্গা স্বপ্ন গুলো, হারাতে দেয়নি এখনো।

ত্বং স্বাহা ত্বং স্বধা ত্বং হি বষট্‌কারঃ স্বরাত্মিকা ।   সুধা ত্বমক্ষরে নিত্যে ত্রিধা মাত্রাত্মিকা স্থিতা ॥  অর্ধমাত্রা স্থিতা নিত্যা যানুচ্চার্যা বিশেষতঃ ।   ত্বমেব সা ত্বং সাবিত্রী ত্বং দেবজননী পরা ॥  ত্বয়ৈব ধার্যতে সর্বং ত্বয়ৈতৎ সৃজ্যতে জগৎ ।   ত্বয়ৈতৎ পাল্যতে দেবি ত্বমত্স্যন্তে চ সর্বদা ॥  অনুচ্চার্যা নির্গুণা বা তুরীয়া,   হে দেবি, গায়ত্রীমন্ত্ররূপা পরিণামহীনা শ্রেষ্ঠা শক্তি আদি মাতা।   হে দেবি, প্রলয়কালে আপনিই ইহা সংহার করেন। উদ্যদ্‌ভানুসহস্রকান্তিমরুণক্ষৌমাং শিরোমালিকাং  রক্তালিপ্তপয়োধরাং জপবটীং বিদ্যামভীতিং বরাম্ ।  হস্তাব্জৈর্দধতীং ত্রিনেত্রবিলসদ্বক্ত্রারবিন্দশ্রিয়ং  দেবীং ৰদ্ধহিমাংশুরত্নমুকুটাং বন্দে সুমন্দস্মিতাম্ ॥  যিনি সহস্র উদীয়মান রবিতুল্য রক্তবর্ণা, রক্তবর্ণ-কৌষেয়-বস্ত্রপরিহিতা,  নৃমুণ্ডমালিনী এবং চারি হস্তকমলে অক্ষমালা, বিদ্যা,  অভয়মুদ্রা ও বরমুদ্রাধারিণী, যাহার স্তনযুগল রক্তরঞ্জিত,  যাহার ত্রিনেত্রশোভিত মুখমণ্ডল কমলবৎ সুন্দর, যাহার মুকুটে চন্দ্র রত্নরূপে নিবদ্ধ সেই ঈষত্হ...

ভালো থাকার রসদ

ভালো থাকার রসদ দেবপ্রসাদ জানা ৮.১০.২৩ আকাশটা একটু ফর্সা হয়েছে আকাশের এককোণে স্থির হয়ে -সূর্যটা  ভালো থাকার ভাণ করে দাঁড়িয়ে আছে। তোমরা তো জানো না,  কত অগ্নিকাণ্ড চলছে ভেতরে ভেতরে। কত বিস্ফোরণ চলছে, তোমাদের অজান্তে। কিন্তু ভালো থাকার প্রশ্নটা? রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া একদল প্রাণী- সাদা পোশাকে ময়দানের দিকে। কেউ বাসস্ট্যাণ্ডে দাঁড়িয়ে, অসহায়। কারো রক্ত ঝরছে বুকে,  যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত শরীর,  কারো গলায় উঠেছে ফাঁস ..... কেউ ছুটেছে, কেউ আঁচ পোহাতে চায়,  গনগনে সূর্যের আঁচে। প্রশ্ন করো কেমন আছো বন্ধু? বলবে ভালো আছি। প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়েছে, ভেসে চলেছে আকাশে। চোখে জল, বেদনার জল, যন্ত্রণার জল। সবাই ঘাড় উঁচু করে দেখে - বলে, ভালো থেকো বন্ধু।

জীবনের আঁধার

জীবনের আঁধার  দেবপ্রসাদ জানা তখন ঢের রাত। উঠোনে জ্যোৎস্নার আলো, দু-তিনটে বেড়ালের থাবায় শান্ত জোছনা। বিড়াল গুলি সেই আলোর গোলা নিয়ে - লোফালুফি করছে। একপাল গেছো ইঁদুর ভারি ব্যস্ত,  কিচকিচ শব্দে কেবলই জানান দিচ্ছে, আমরা আছি। আসলে জোছনা নয়, চাঁদপানা নিয়নের আলো, পাশের হাই রাইজ বিল্ডিং থেকে লাফ দিয়ে, এই হাসপাতালের ভাঙ্গা জানালা গলে, শ্যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। তারপর সারারাত সারাক্ষণ চললো জীবন মরণের হুটোপাটি। প্রভাত হলো। শেষ নিশ্বাসটুকু চেটেপুটে সাফ করে সরে পড়ল যমরাজের নিয়নের আলো। ভোরের নরম আলো এসে ছুঁয়ে দিলো নির্মীয়মান বহুতলের দিকে চেয়ে থাকা যৌবনের  প্রথম আলোর রেণু, আর বসন্ত কোকিলটা ডেকে উঠলো ঠিকই, বসন্ত ডাকেনি। একবারও। ঝাঁকড়া মাথা বটঅশ্বত্থ গাছটায়,  ভারি খুশী হয়ে আত্মার পাখিটা পুকুরের জলে- নিজের মুখ দেখলো। জীবনের আঁধার ওৎ পেতে থাকে প্রতিদিন যমরাজের মৃত্যুদণ্ডের মতো।