একটা ভুল

 একটা ভুল 


আজ আর বিধু আসেনি। একা একাই চা করে খেতে হলো। সকাল ছটায় উঠি, সূর্য ওঠা না দেখলে দিনটা ভালো যায় না। শীতকাল ভোরের কুয়াশা কাটতে কাটতে সূর্য দুপুরের মাঝপথে চলে এলো। আজ রবিবার তাই কোনো তাড়া নেই।বাড়িতে কেউ নেই।শ্রীমতি ঝগড়া করে বাপের বাড়ি।একটু আধটু ঝগড়া রোজ করি।কিন্তু কাল যেন একটু বেশি হলো।সচরাচর ঝগড়া হলে,সঙ্গে সঙ্গে মিটে যায়,খাবার কথা বলে,কাল আর বলেনি।আমিও জোর করিনি ,বিধুকে বলেছিলাম,কাল আসতে হবে না।কারণ রবিবার একটু ছুটি পেতে চায় ও।  বাড়িতে আমরা পাঁচজন।আমি শ্রীমতী বিধু,আর দুই মেয়ে। বিধু আমাদের বাড়ির কাজের লোক নয়। আমার মামার ছেলে।একটু বোকাসোকা।মামা মরে যাওয়ার পর,ও একাই থাকে,বিয়ে করেনি, যদিও বিয়ের বয়স এখনো  যায়নি।খুব ভালোবাসে। আমাকে না হলেও,বৌদিকে খুব ভালোবাসে। হাতে হাতে কাজ করে দেয়। রান্নাবান্না  সব পারে। ওর বৌদি না থাকলে,আমার কোনো অসুবিধা হয় না,বাজার করা ভাত বেড়ে দেওয়া,সব ঐ করে। কথায় কথায় একটা কথা মনে পড়ল,বিধুর মাথায় একটা টিউমার আছে। সেটা ও জানে না। মাঝেমধ্যে অজ্ঞান হয়ে যায়। এটাই ভয়ের কারণ। কখন যে কোথায়,ওই ব্যাধিটি এসে জুটবে,বলতে পারিনে,চিকিৎসা যাওয়া হওয়ার  হয়েছে। ডাক্তার বলেছে, অপারেশন করানো উচিত নয়। মৃত্যুর ঠিক হয়ে আছে,তাকে এত সত্বর  না ডাকাই ভালো। কতদিন বাঁচবে তাও ঠিক করতে পারেনি ডাক্তার।

এর জন্যই ও একটু মুড়ি।যদি ভাবে সারাদিন কাজ করবে।তাহলে সারাদিন।যদি ভাবে কাজ কিছু করবে না। তাহলে ওকে দিয়ে কিছু করানো যাবে না। ঘটনাটা  বিধু কে নিয়ে বললাম, এই কারণে বিধুই আমাদের ঝগড়ার কারণ। বিধু যতই ভালোবাসুক ওর বৌদিকে,বৌদি শ্রীমতি কিন্তু একটুও ভালোবাসে না। তবে প্রয়োজনে বিধুকে ই শ্রীমতি খোঁজে। বিধুর রোগের বিষয় শ্রীমতি জানেনা। আমি বিধুর সেজ পিসির ছেলে। বাকি পিসিদের, সঙ্গে বিধুর কোন সম্পর্ক নেই। আমার মা ওকে ছোটবেলা থেকে মানুষ করেছে। 

আমার প্রতি ওর ভালোবাসা এতই গভীর যে, কিছুতেই আমাকে ছাড়তে চায় না। বা ওর বৌদির প্রতি  এতো ভালোবাসা যে,আমাদের ছেড়ে যেতে পারে না। মাঝে মাঝে আমাদের বাড়ির বেশিরভাগ ঝগড়াই বিধুকে নিয়ে হয়,ওটাও বোঝে কিনা আমার জানা নেই। তবে দেখতে যতই খারাপ হোক ওর মুখ ভরা হাসিটা প্রাণ কেড়ে নেয়। 

পাড়ার যে কোনো কাজে আমার বদলে বিধুই যায়। শ্মশান যাত্রী থেকে হোব্বিসি দেওয়া পর্যন্ত ওর কাজ। আমি আমার কাজের ফাঁকে ওকে বলে দি কি করতে হবে,বিধুর বাবা মানে আমার মামা,তার সমস্ত সম্পত্তি তার তিন মেয়েকে দিয়ে গেছেন,ওর ভাগেরটা ও  সকলে মিলে ভাগ করে নিয়ে,ওকে আমার ঘাড়ে ফেলে গেছে। বোনেরা একেবারের জন্য ও খোঁজ নেয় না। কিন্তু বিধু প্রতি রবিবার ওদের খোঁজ নেওয়ার জন্য ছুটি নেয়। প্রত্যেক বাড়ি,এক একবার করে চলে যায়। সারাদিন থাকে, রাতের বেলা ঠিক চলে আসে। বলাই বাহুল্য রাতের বেলা থাকতে দেয় না। মামা আর আমি ছাড়া ওর রোগের কথা কেউ জানে না। কিন্ত একদিন রবিবার ওর মেজো বোনের বাড়িতে থাকাকালীন অজ্ঞান হয়ে যায়। সে কি হম্বিতম্বি  মেজোবোনের,

-কেন পাঠিয়েছো আমাদের বাড়ি?  ডাক্তার কবিরাজ কিছুই তো করাও না দেখছি, বাবার ব্যাংকের টাকা গুলো কি তোমার মেয়েদের বিয়ের জন্য রাখলে ? আর আমার ভাইটা মরবে? আমিও যে ওর দাদা সেটাই ওরা ভুলে গেছে।

আমার মামাতো বোনেদের ধারণা আমি মামার ব্যাংকের টাকা হস্তক্ষেপ করেছি। কিন্তু মামা মারা যাওয়ার সময় কোন একাউন্টেই টাকা ছিল না। চাকরি করা কালীন মামার যদি কোন একাউন্টে টাকা থাকে তাহলে তা বিধুর চিকিৎসায় খরচ হয়ে গেছে। যেহেতু  মামা আর আমি বিধুকে নিয়ে বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে দৌড়েছি, সেহেতু  ওদের জানার কথা নয়। 

                                ---*--

বারান্দায় বসে একটা সিগারেটের সুখটান দিচ্ছি, শ্রীমতি এসে বলল -

- সিগারেটটা এবার ছাড়ো,মেয়েরা বড় হয়েছে,তুমি শিক্ষক মানুষ,কি শেখাবে?সিগারেট খাওয়া?

-আমি কি ছাত্র-ছাত্রীদের তাই শেখাই 

-না শেখালে তো খাও কেন?

-খাই কোথায়? খেলে তো পেট ভরে যেত,অন্য কিছু খেতে লাগতো না।

- খাও না যখন, কি করো?

- ধোঁয়া ছাড়ি। পরিবেশকে দূষিত করছি,শুধু কি আমি? সকলে মিলে এই প্রচেষ্টাই করছি। সংসারের দূষণ কেই সমতায় আনছি।

- সংসারে কি দূষণ?তুমি কি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছ।

-তোমাকে কেন প্রত্যেক সংসারের বউদের উদ্দেশ্যে আমার এই বার্তা।

-তাই নাকি,নেহাত আমি বলেই তোমার সংসার করছি। নইলে তোমার মত লোকের সঙ্গে জ্বালা কে বুঝতো?

- তাহলে দেখো এর জন্য আলাদা আলাদা বউ আর আলাদা আলাদা তাদের সমস্যা খোঁজ নিয়ে দেখো সব বাড়ির বউদের একই কথা।

- লোকের বাড়ির বউদের খবর তো তোমার কাছেই পাওয়া যায় দেখছি। যাও না তাদের কাছে, গিয়ে দেখো কত ধানে কত চাল? 

- কত ধানে কত চাল জানলেতো কৃষি মিনিস্টার হতাম।

- তা জানবে কেন? জানলে যে  ধরা পড়ে যাবে, সারাদিন কি করো জানিনা? যত বৌদির সঙ্গে চ্যাট  করা সব বুঝি। 

- কী বোঝো তুমি? আমি বুঝিনা? তোমার জন্য বাড়িতেই দেবর এনে রেখেছি, নইলে তো বাইরে চলে যেতে। 

- কি? কি বললে তুমি?আমি বাইরে যাই? 

- যাও না? বন্ধুর বাড়ি, যা সব বন্ধু,জানা আছে আমার।

- আর তোমার নেই বুঝি, তোমার পাগল ভাইকেও ছাড়লে না? ওকে নিয়ে আমাকে সন্দেহ করো?

- সন্দেহ কেন? বলছি।

- কি বলছো তুমি? ওকে নিয়ে শুয়ে থাকি? তুমি না থাকলে,আমি এইসব করি?

- আমি বলিনি তুমি বলছো, এমন কথা আমি বলব?

-সে কথাই তো বললে, এই আঠার বছরে  এই প্রতিদান? তোমার বংশের সবাই সমান। মদ মাতালের দল,বস্তিবাড়ির মত কথা।

- বস্তি বাড়ি? বেশতো ভালো একটা জোগাড় করে চলে যাও। 

- হ্যাঁ তাই যাব,অনেক সহ্য করেছি। আর পারিনা মায়ের কাছে গিয়ে থাকব।

-হ্যাঁ হ্যাঁ তাই থাকো।

-তা তো বলবেই,সব মধু খাওয়া হয়ে গেছে তো, এবার অন্য চাক ধরেছ, আমাকে আর ভালো লাগে না, 

- ভালো লাগার মত কিছু আছে, সব ভূয়া। ভালোবাসাটাসা সব ছলনা। এখন শুধু ব্যাংক, মানিব্যাগের খোঁজ পড়ে, আমার খোঁজ কে রাখে?

- রাখবে অন্য কেউ রাখবে। নিয়ে এসো একটা। তখন বুঝবে। 

কথার মাঝে মাঝেই শ্রীমতি, জামা কাপড় বদলানো হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি, দুড়াম করে দরজা বন্ধ করে চলে গেল । 


জীবনে এমন একটা উতরোল  বেলা আসে, যখন সবকিছু ছাপিয়ে যায় জীবনকেও, সেই কিশোর বেলায় যখন সব সময় ছিল বসন্তকাল।

 তেমন বসন্তকাল সকলের জীবনে আসে।আমারও এসেছিল,আমি যখন চোদ্দ কি পনের, কলকাতা থেকে দেশের বাড়ি গেছি। আমাদের নিজস্ব বাড়িটায়  অনেকদিন লোকজন না থাকায়,বাড়িটা সাফ সাফাই করতে বেশ কয়দিন সময় লাগবে তাই জেঠার বাড়ি চলে গেলাম । মা ও সঙ্গে ছিল, দুপুরে খাওয়ার পর বৌদি আমার জ্যাঠার ছেলে মিহির আমার দাদা তার তিন বছর বিয়ে হয়েছে, ভারী মিষ্টি বৌদি আদর যত্নে কোন ত্রুটি রাখেনি। বৌদি বলল ঠাকুরপো তুমি আমার ঘরে শুয়ে পড়ো, আমি তার কথার জাদুতে মোহিত, শরীরটা কেমন ঝিমঝিম করছে, সারাদিনের গাড়ির ধকল নতুন জল নতুন বাতাস শরীরটা ভালো ঠেকছে না শুয়ে পড়লাম বৌদির বিছানায় ক্লান্তিতে কখন যে ঘুম এসে গেল বুঝিনি।হঠাৎ বুকের ওপর একটা নরম চাপ অনুভব করলাম ঘুমের ঘোরে চোখ খুলতে পারলাম না কিন্তু একটা মিষ্টি আমেজের ছোঁয়া পেলাম। তার ওপর কোনো দিন এমন পরশ পায়নি, কি হলো জানিনা ক্ষুধার্ত হায়নার মতো শরীরে ঢুকে পড়লো কিছু। চেতনা হারিয়ে গেল চোখ খুলতেই যা দেখলাম তাতে আমার সর্ব সর্ব শরীর হিম হয়ে গেল বৌদি !

লক্ষ্মী প্রতিমার মত বৌদি সতী-সাধ্বী,কপালে সিঁদুর হাতের শাঁখা পলা লাল শাড়িতে লাল জামা আর তার ভেতরে একটা পিপাসা দেহ 

- এটি করলে ঠাকুরপো তুমি আমার সতীত্ব নষ্ট করলে বৌদি এ হেন কথায় জীবনের সব ভক্তি সব শক্তি  হারিয়ে গেল,কত বয়স হবে বৌদির, কুড়ি বাইশ আমার মত একটা নিষ্পাপ আত্মাকে কুলুষিত  করতে তার বিন্দুমাত্র কুন্ঠাবোধ হয়নি।একটা ছোট খাল বেশ কয়েকটা জাল পাতা আছে খালি এপার ওপার করে একটা ছোট্ট ডিঙি নৌকা ওপারের বাধা 

বিছানা ছেড়ে সেইখানেই পালিয়ে গেলাম সারা বিকেলটাকে আমার মুখ দেখায় নি মায়ের দিকেও তাকাতে পারছিনা দাদার মিহির আমাকে খুব খুব ভালোবাসি কার সঙ্গে কথা বলতে পারছি না জাল বুনতে বুনতে খালের ধারে এল 

- কিরে সন্ধ্যে হয়ে এলো ঘরে যা।

গোধূলি বেলায় আলো ভারী মিষ্টি বেশ মনোরম দৃশ্য কিন্তু আজ যেন বড় বিরক্ত লাগছে ওই আলো আমি তাকাতে পারলাম না নিজের শরীরটার দিকে তাকাতে পারছিনা, এটি হলো আমার কেন এমন হলো এ পাপ আমি কেন করলাম বৌদির বা এমন করল কেন তবে কি বৌদি বাজি এত উত্তর আমি পাচ্ছি না সন্ধ্যায় দাদা নিয়ে এলো চপ বেগুনি বাড়িতে ভাজা মুড়ি দিয়ে অমৃত লাগে সকালে বাড়ির গরুর দুধ দিয়ে মুড়ি খেয়েছি অমৃত সুধা কাকে বলে জানিনা কিন্তু তাই অমৃত লাগলো।

সন্ধ্যা থেকে রাত হওয়ার পথে আশা করে বসে লুডু খেলো আমি কারো দিকে তাকাতে পারছিনা মুখ লুকিয়ে লুকিয়ে ঘুরছি শরীর টার মধ্যে উত্তেজনা অনুভব করছে। ক্লান্তি ম্যাজ ম্যাজ সব কোথায় হারিয়ে গেছে লুকিয়ে লুকিয়ে বৌদিকে দেখছি সেও আমার দিকে আড়চোখে দেখছি 

আমার জেঠিমার মা, আমার দিদিমা পাশের খাল থেকে চিংড়ি মাছ ধরে নিয়ে এলো টপ করে দিয়েছিল দুপুরে তার স্বাদও যেন ভুলে গেলাম বৌদির আড় চোখে দেখার ভঙ্গি স্বাদে, রাতের খাওয়া শেষ হলে কে কোথায় শুবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে আমি একটু দূরে হেরিকেনের আলোয় ছায়া নিয়ে খেলা করছি দাদা বললো 

-তুমি কাকিমা আর ভাই ঘরে শুয়ে পড়ো আমি বারান্দার চৌকিতে শুয়ে পড়ছি 

আমি তাকালাম দাদার দিকে কাকে বললে কথাটা দেখলাম বৌদিকে বলল আমার ভয় জড়িয়ে ধরলো আমাকে যদিও মা সঙ্গে আছে। 

গ্রামে আপনার সাত-আট দিন থাকবো চলে যাব নিজের বাড়িতে পাশেই বাড়ি পরিষ্কার হয়ে গেছে, মাটির দোতলা বাড়ি।তখনো গ্রামের ইটের বাড়ি প্রচলন হয়নি। দেয়াল রোমাঞ্চকর পরিবেশ নারকেল গাছ কলা গাছ আর একটা গন্ধরাজ লেবুর গাছ ঘেরা আমাদের বাড়ি। সামনে একটা উঠান আর সদ্য গোবর লেখা হয়েছে মিষ্টি ডাবের জল, জমি থেকে তুলে আনা সবজির খাবার পুকুর থেকে সদ্য ধরা মাছ বাজার সবই অমৃত। পূর্ণিমা আকাশে পূর্ণচন্দ্র তার নিজ দিয়ে ভেসে চলেছে মেঘ সাদা কালো মেঘে ঢাকা আকাশ একটা পেঁচা ডাকলে রাখতে চলে গেলো পুরে নারকেল গাছে একটা লক্ষ্মী পেঁচা বসে আছে। দেশ কতগুলো তারা হেসে এসে মিটমিট করছে একটা কালো বিড়াল লাফ দিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল।

খাওয়া-দাওয়ার পর সবাই মিলে বারান্দায় বসেছি এবাড়ি ওবাড়ি গল্প হচ্ছে মা জেঠিমা দাদা বৌদি বিছানা করতে উঠে গেল আমি তনময় হয়ে সব লক্ষ্য করছি গ্রামের পরিবেশ রাতের পরিবেশ সত্যিই এমন ভাবে কোন দিন দেখিনি দেখার সময় হয়নি শহরের চঞ্চলতায় স্কুল-কলেজ পোড়া খাবার এই নিয়েই জীবন জীবনে এত সুন্দর হোক বুঝতে পারিনি।

মা বলল -যা না শুয়ে পড়।

- না মা একা একা ভয় করবে।

- কিসের ভয় বৌদি তো আছে যা শুয়ে পড়।

মনে মনে ভাবলাম বৌদিকেই তো ভয়।

                      -----*----

সাত মাস তুমি নেই একটা ফোনও করোনি ফোন করলে ধরো নি। কেন জানি ভুল করেছি, তাবলে অভিমান এত দীর্ঘ হবে বুঝিনি,কারা তোমাকে ফুসলে এমন দূরত্ব বৃদ্ধি করলো জানিনা। তাই চিঠি লিখছি আমি যেতে পারতাম কিন্তু ভয়ে তোমার কাছে যেতে পারিনি যদি আমাকে তোমাদের বাড়িতে আসতো অপমান করে সহ্য করার মতো সাহস আমার নেই আরেকটা জিনিসও কাজ করতো মনে ইগো। কিসের এত ইগো জানিনা এবার প্রহর গোনার সময় হয়েছে। একটা দীর্ঘ উত্তাল সমুদ্র প্রহর সমুদ্র। কখনো দোলা দেয় কখনো অকূলে ভাসায় আবার ভাটার টানে বেরিয়েছে বালুচর। আমি আশ্চর্য হয়ে দেখি শুধু দেখি সামনে ধু ধু চর। আজ তোমার কথা বারবার মনে পড়ছে শরীরে টান পড়েছে। মনে বয়সের ভার বাড়ছে একবার দেখো সেই আমি আর নেই অনেকটা বদলে গেছি, কাজ মোড়ের মাথায়  দাঁড়িয়ে ভাবি কোন দিকে যাব? রাস্তা খুঁজে পাইনা পথ হারিয়ে ফেলি ভিডিও আর আসেনা তোমার কথা বার বার জিজ্ঞাসা করে। তাই একদিন রাগ করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি বিদ্যুৎ কি হলো জানিনা ভেবেছিলাম একাকী জীবন কাটানো যায় তুমি ভালোই আছো একথাও ভাবতে পারিনা আমাকে ছাড়া তুমি ভালো থাকতে পারো না তাই তোমাকে আসতে হবেই আমার কাছে আসতে হবে নইলে আমি ভাবতে পারিনা তুমি আমাকে ছাড়া সাত মাস কাটাতে পারো 

ইতি 

তোমার অতীত 

মুড়ে পোস্ট করে দিলাম এই চিঠির উত্তর আসবেই উত্তরের সাথে উত্তরদাতা ও আসবে চিঠি পোস্ট করে চলে গেলাম বিধুর খোঁজে। কোন বাড়িতে তার খোঁজ পেলাম না হাসপাতালগুলো খুঁজে দেখা দরকার নার্সিংহোমে তাকে পাওয়া যাবে না, কারণ তার কাছে পয়সা নেই। এখন অনুশোচনা হয়, কেন করলাম এমন সেই মুহূর্তে মৃত্যু হয়েছিল আমার মানুষের জীবনে প্রতিদিন কারো না কারো মৃত্যু হচ্ছে অনুভূতির মৃত্যু ভাবনার মৃত্যু আশা আকাঙ্খার মৃত্যু সব মৃত্যুর মধ্যে দৈহিক মৃত্যু অনিবার্য আমারও তাই হয়েছে মৃত্যুবরণ নিষ্ঠুর শব্দ তবু আমরা প্রতিদিন তা অনুভব করি তোকে সামনে তারা দেখি আপন জনের মৃত্যুতে আমরা কাঁদি কিন্তু কান্না থাকে প্রাসঙ্গিক কিছু প্রচার কিছু আন্তরিক নানা জায়গায় খুঁজে অবিদুর খোঁজ পেলাম না শ্বশুর বাড়ি যাবো ভাবতে পারছি না রাস্তার এপার ওপার করতে গিয়ে পড়লাম হাত-পা ছড়িয়ে গেল মাথা ফেটে গেল রাস্তার লোক ধরে হাসপাতালে নিয়ে গেল একটা প্রাইভেট হাসপাতাল কেটে গেল হাড়গোড় ভাঙেনি তাই সময় বেশি লাগলো না ডাক্তার ছুটি দিলে ট্যাক্সি করে বাড়ি যাবো,দেখি শ্রীমতি হাসপাতালে ঢুকছে। আমাকে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় দেখে হাউমাউ করে এসে কেঁদে বলল। 

- কি হয়েছে তোমার?

-কিচ্ছু না একটা সামান্য অ্যাক্সিডেন্ট মাথাটা জন্য দুদিন রেখে দিল তোমাকে কে খবর দিলো 

- না আমাকে কেউ খবর দেয় নি আমি বিধুকে নিতে এসেছি 

- বিধুকে?

আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম 

-বিধুকে  কোথায় পেলে?

-বিধু আমার কাছেই ছিল, সাত মাস ধরে তোমার কাছ থেকে তাড়া খেয়ে আমার ওখানে গিয়ে পড়ল প্রথমে আমি ওকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম এই সময় অজ্ঞান হয়ে যায় হাসপাতলে আলী সব জানতে পারি সেই থেকে আমার কাছেই ছিল কাল আবার অজ্ঞান হয়ে যায় ডাক্তার বলল আর রাখার দরকার নেই ওকে নিয়ে যান তাই এসেছিলাম 

- ও আমাকে দেখতে আসনি বিধুকে নিতে এসেছ? 

- আবার বিধুকে নিতে এসেছি তোমার খবর কে দেবে আমাকে তোমাকে শাস্তি দিতে গিয়েই তো জানতে পারলাম বেচারা মৃত্যুপথযাত্রী কদিনার বাজবে তাই।

-তাহলে চলো 

-কোথায়?

- তোমার বাড়ি 

- আমার না তোমার 

- ওটাও তো তোমার বাড়ি 

- এখন বুঝলেতো আমি ছাড়া তোমার গতি নেই 

-সে আর বলতে 

বিধুকে সঙ্গে নিলাম শ্রীমতি আর আমি, বিধুর সে কি হাসি। 

নিজের একটা ভুল,কত বড় ক্ষতি করেছিল।নিজের জীবনের একটা ভুল অন্যকে সন্দেহ করতে শিখিয়েছিল আর একটি ভুল জীবনকে অনেক বড় ক্ষতির থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারল।


Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ