সন্দেহ

 সন্দেহ 


ভোর পাঁচটায় এসেছে বাসন্তী। তোমার ঘুম ভেঙে যাবে বলে আস্তে আস্তে দরজা খুলেছি। আজ কী ফুর্তি বাসন্তীর। গান গেয়ে গেয়ে বাসন গুলো মাজল। ছাদ থেকে নিচতলা পযর্ন্ত পুরোটা ঝাঁট দিয়ে মুছে কাপড় কাচতে বসেছে।

কথা গুলো প্রফুল্ল তার নিদ্রারত বউকে গ্রীনটি দিতে দিতে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল। 

- গুড মর্নিং 

চা করে বিছানায় বউকে চা দিয়ে গুড মর্নিং বলাটা প্রফুল্লর প্রতিদিনের কাজ। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বউ কি শুনল তার অপেক্ষা না করে, বিস্কুটের কৌটোটা হাতে নিয়ে বলল,

-আজ কিন্তু আমি তাড়াতাড়ি বেরব। রোজ অত দেরি করলে চলে না। সরকারি অফিসেও কেউ এত দেরি করে যায় না।

- সে সব পরে বুঝব, ইদানিং দেখছি, বাসন্তীর সঙ্গে তোমার ও খুব ফুর্তি বেড়েছে, সকাল সকাল বাসন্তীও আসছে আর তুমিও ভোর ভোর উঠে ওর আগুপিছু ঘুরছ।

প্রফুল্ল শাসনের সুরে বেশ মোলায়েম করে বলল,

- কি যে বলো তুমি? ও একটা কাজের লোক তার সাথে সন্দেহ? 

সন্দেহটা অমুলক নয়, সত্যিই বাসন্তীর ওপরে প্রফুল্লর একটু দূর্বলতা আছে। তাবলে এমন কিছু নয়, যে বউ তাকে যখন তখন পিন করবে। 

প্রফুল্ল চায়ে আর একটা চুমুক দিতে যাবে, বাসন্তী এসে বলল,

- বাবু বৌমনির শাড়িতে আমি আজ হাত দেইনি, নতুন শাড়ি,কোথায় কি হয়ে যাবে, তখন কথা শুনতে হবে। 

এদিকে বউমনি যে জেগে আছে সে কে দেখেছে? ব্যস লেগে গেল আগুন, 

- এই কবে তোকে কথা শুনিয়েছি রে? খুব পটরপটর কথা হয়েছে তাই না? ভোর ভোর আসছিস গুনগুন গান করছিস, আর যেমনতেমন কাজ করে চলে যাচ্ছিস।

- যেমন তেমন কাজ করি না মোটেই, আমি নিজের বাড়ি মনে করে করি, 

- হ্যাঁ নিজের তো মনে করবি, এখানে জাঁকিয়ে বসার মতলব করছিস, নিজের মনে করবি না? কোনদিন দেখবো সোফায় তুই বসে আছিস আর আমি তোর মতো ঘরের কাজ করছি।

বিপদ বুঝে প্রফুল্ল কেটে পড়ে। এখানে থাকলে 

বাসন্তী আরো খেঁপে যাবে।

- এ সব কি বাজে কথা বলছ বউমনি। আর এত কথা কেন শোনাচ্ছ? তোমার কাপড়ে দাগ লেগে গেলে রাগ করবে,দামি কাপড়, তাই বলছিলাম।সকাল সকাল -কত গুলো কথা শোনালে বউমনি,আজ কত আনন্দে ছিলাম আমি, আজ পুষ্পা দেখতে যাবো, আমার বর বলেছে টিকিট কেটে আনবে, কত বছর হয়ে গেল, হলে সিনেমা দেখিনি, শেষ সেই বাহুবলী দেখেছি, আর এখন যা টিকিটের দাম, আমাদের মতো ছা পোষা মানুষের একদিনের আনন্দে সারা বছর কেটে যায়, সেই আনন্দটাকেও মাটি করে দেবে বউমনি? তোমাদের কত আনন্দ থাকে, জন্মদিন, বিয়েবাড়ি,অন্নপ্রাশন কত কিছু, না থাকলে নিজেরাই আনন্দানুষ্ঠান খুঁজে নাও, যেটা আমরা পয়সার অভাবে করতে পারি না।

- বাবা কত কথা শিখেছিস রে তুই, একটা কথায় হাজার জবাব দিতে পারিস, আবার আমাকে বলিস আমি কথা শোনাই?

যদিও বাসন্তী প্রতিদিনই কথা শোনে। ছোট বড় যাই কাজ হোক তার ত্রুটি বের করবেই, 

- না কথা না, ওই একটু আধটু - নতুন শাড়িতো?

- নতুন শাড়ি না, নতুন মনের খোঁজ আছে দেখছি, তোর মনের ভেতরে, সাবধান বেশি বাড়িস না, নেহাত লোক পাওয়া যাচ্ছে না, তাই। নইলে-

- বের করে দিতে, আর কি? দাদাবাবুর জন্যই কষ্ট হয়, নইলে কবে ছেড়ে দিতাম, আমি চলে গেলে ঐ লোকটাকে সারাদিন খেটে মরতে হবে। জল তোলা কাপড় কাচা, বাসন মাজা পযর্ন্ত। 

- কি ! এত বড় কথা তুই বলতে পারলি? বেরো বেরো বলছি, কাল থেকে যেন তোর ওই মুখ আমি আর না দেখি।

হাত ব্যাগ থেকে পাঁচশ টাকা বের করে ছুঁড়ে দেয় বাসন্তীর দিকে। 

- আর যেন না দেখি এই চত্তরে। 

এত রেগে যায় যে উঠতে গিয়ে টি - টেবিলের কোনা লেগে হাঁটুর মালাই চাকি সরে যায়,হাঁটুর চামড়া কেটে রক্তারক্তি। বাসন্তী চলে যাচ্ছিল, এমন অবস্থা দেখে মন চাইল না। 

অথচ এই বৌমনিই  কত ভালোবাসত ওকে, বাসন্তীর বরের করোনার সময় টাকা থেকে শুরু করে, দেখা শোনা, রোজ ডিম দুধ লেবু কিছুই বাদ যায়নি, নিজে গিয়ে দিয়ে এসেছে। হঠাৎ যে কি হলো, কে জানে? আগে শোবার ঘরটর সব অবাধ বিচরণ ছিল বাসন্তীর, এখন আর কিছুতেই ঢুকতে দেয় না। পরিষ্কার করার জন্য ঢুকলে পেছন পেছন ধাওয়া করে। 

বাসন্তী বৌমনিকে ধরে বসিয়ে দেয়। কিন্তু যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে বৌমনি, বাসন্তী হাঁক দেয় প্রফুল্লকে,

- দাদাবাবু,দাদাবাবু।

প্রফুল্ল কাছেই ছিল, এসে ডাক্তার কে ফোন করল।

এক্সরে হলো, মালাই চাকি ঘুরে গেছে, ঠিক করে বসিয়ে প্লাস্টার করে দিল, ডাক্তার যা বলল, তাতে দুই মাসের আগে ঠিক হচ্ছে না। বাসন্তীর আর পূষ্পা দেখা হলো না। বাসন্তীর সব কাজকর্ম ফেলে   বৌমনির সেবা করতে লাগল, বাথরুম করানো স্নান করানো, কাপড় বদলে দেওয়া, বিছানা ঠিক করা, বাড়ির সব কাজ। 

একদিন বিকালে বাসন্তী ফল কেটে খাইয়ে দিতে দিতে বলল, 

- বৌমনি, দাদাবাবু আমার দাদার মতো, আমি এই যে সারাদিন তোমার বাড়িতে আছি, কই আমার বর তো সন্দেহ করে না? বরং বলেছে বৌমনির যেন কোন অসুবিধা না হয়। আমরা ছোট মানুষ, দিন আনি দিন খাই, আমার বরতো সারাদিন বাইরে থাকে, কই তাকে তো সন্দেহ করি না আমি? আমাদের  কেউ একটু আদর দিলে তার জন্য জীবন দিতে পারি। পয়সাটা বড় কথা নয় বৌমনি, ভালোবাসাটাই বড়। তোমার বর তোমার গর্ব, এমন সহজ সরল মানুষ, তোমাকে কত ভালোবাসে, কদিন শুধু তোমার জন্য সারারাত জেগে তোমার সেবা করেছে। আমি একটু চোখ বন্ধ করলেও উনি করেনি, কখন কি তোমার লাগে।

- আমি জানিরে বাসন্তী, ওই মিসেস মিশ্র যা ভয় দেখাল, বলে কি জানিস? ওর দিদির বাড়ির কোন এক কাজের মেয়ে, ওর দিদির বরের নামে ধর্ষণের অভিযোগ করে, সেই ভয়ে আমি......

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ