চাটুবাক্য
চাটুবাক্য
দেবপ্রসাদ
১
আত্মদোষী বৃথা করে নিগুড় বন্ধন।
চাটুবাক্যে মন তোষা।বুঝি না তার কি ভাষা।
হিতাহিত পাপ পুণ্য বুঝেছে কজন।
২
বাক্যালাপ কাব্যপাঠ কৌতুক কথায়।
অনাবিল খুশি তায়।
ভারি সুখ সাধনায়।
শাস্ত্রে কহে কাব্যপাঠে বেদন হারায়।
৩
পদে পদে ঘটে যায় ঘটনা এমন।
জীবের প্রকৃতি গত
মহা মহা দোষ যত
হলাহলে হয়ে যায় জীবের নিধন।
৪
বেড়ে ওঠো তত দূর সামর্থ্য যেমন।
করো ধন উপার্জন
মান্য করো দশজন
অহঙ্কারে থেকো না প্রিয় যথা রাবন।
৫
সকাতরে সযতনে ভালোবাসার ছায়।
তোমারে গড়িতে যার।
মহাসিন্ধুর দুইপার।
অহঙ্কারে পদ খানি, দিয়ো না তার গায়।
৬
সমান প্রকৃতি কারো দেখা নাহি যায়।
হিম জমে শিলা হয়।
পরপীড়া আপন হয়।
সব দুঃখ আবরণ করে করুণায়।
৭
ধরণীতে কত জীব, অযথা হারায়।
জন্ম যার দীনতায়।
বুভুক্ষায়, নগ্নকায়।
পথ পরে হেথা হোথা ভোগে সূতিকায়।
৮
নারী বিনা, নর দৈন্য তিমির তপন।
এ হেন জীবন যার।
কি গতি হইবে তার।
অশ্রু বৃষ্টি করে সদা, অকালে মরণ।
৯
অতি স্থুলকায় তনু, জীবন অসার।
নানান অসুখে ভোগে।
বেঁচে রয় ঔষধি যোগে।
অতি বলবান জেনো করে ফলাহার।
১০
যাতে আছে প্রয়োজন মমতা সেথায়।
যে পুত্র খাদ্য দেয়।
তার তরে করে ব্যয়।
কুন্ঠিত লজ্জিত মন, শেষ নাহি পায়।
১১
গৃহ শান্তি বজায় রয়, নাহি করে ক্রোধ।
সংসারের শান্তি যত।
আছে অর্থে বশীভুত।
অর্থ বশে আছে জেনো, ভীষণ অবোধ।
১২
কর্কশ কঠোর বাক্য, কয় যে জনে।
সেই নয় দুষ্ট জেনো।
মহামতি তারে মেনো।
যদি না হয় অনিষ্ট, তার আচরণে।
১৩
ফুলরাশি শিশু হাসি মন না উল্লাসে।
কবিতা কুসুম ঘ্রাণ।
ভরে রাখে মনপ্রাণ।
সে জন পৃথিবী মাঝে সদা অট্টহাসে।
১৪
চাঁদ এনে থাকো যদি, বারান্দায় রাখো।
প্রদীপ জ্বলছে ঘরে।
জোছনায় ভারি ডরে।
নিভে যদি যায় দীপ, সাবধানে রেখো।
১৫
প্রেমের ভূমিকা করে, ভালোবাসো নাই।
কামুক মনের দেহ।
আনিয়াছ কি কেহ।
মনের বাসনা দেখো, সত্য হওয়া চাই।
১৬
মনের বিকীর্ণ তেজে পুড়ে যায় সব।
পোড়ে কলঙ্ক কালো মুখ।
পোড়ে দুঃখ আসে সুখ।
খণ্ডিত জ্যোতিষ্ক তোলে বিষাদের রব।
১৭
ক্রদ্ধ সূর্য যখন তাপের অস্ত্র নিয়ে হাঁটে।
ঘর্মাক্ত দেহ তবে ছায়া খোঁজে।
বৃদ্ধ বটবৃক্ষ সেও কষ্ট বোঝে।
ছায়া দেয় বৃক্ষ পথিকেরে, যে তারে কাটে।
১৮
পদে পদে হাজার অঙ্ক কষে বিধাতা।
পাপ পূণ্যের সব ভাগ ফল
কর্ম ধর্মের চোখে যে জল।
সে জল আগুনে পুড়ে যাবে বৃথা।
১৯
কুটিল রাত্রির অন্ধকারে কালনাগিনীরা।
উদ্ধত তার হিম নিঃশ্বাস।
স্পর্শ করেছে নীলাকাশ।
বরফের ছুরি হাতে ঘোরে বিশ্বাসঘাতকেরা।
২০
মাটি যার স্পর্শে হয় জ্যোর্তিময় চেতনা।
ফুল ফোটায় ভোরবেলা।
ঘোর অন্ধকারে চঞ্চলা।
ডুমুর ফুলের সৌরভও জেনো মন্দ না।
২১
বিদীর্ণ হয়েছে পৃথিবী হয়নি সুপ্রভাত।
হাঁ মুখ মাটি করেছে গ্রাস।
অশান্ত বৃষ্টির চলেছে ত্রাস।
ঘুমোতে পারেনি বিশ্ব কাল সারারাত।
২২
যাকে ঘিরে বিচ্ছুরিত দ্বীপ্তি, রক্তাভ আকাশ।
সে যে আজ নেই ঘরে।
পড়ে আছে বেঘোরে।
পথের ধারে ফাঁকা ফুটপাতে, দেবতার গ্রাস।
২৩
দাঁড়িয়ে আছি আমি সেই দেবতার সম্মুখে।
চিৎকার করিনি তো এখনো।
মরণ বস্ত্র পরিনি তা জেনো।
তবুও শিয়রে দেবতারা এসে, দাঁড়িয়ে থাকে।
২৪
কত যে পরোয়ানায় স্বাক্ষর দিয়ে গেছে হাত।
কত চলেছে এই দুটি পদ।
কত খাদ্য কত নানাপদ।
দেহ বেড়েছে, বয়স বেড়েছে, বেড়েছে আঘাত।
২৫
শোক তাপে জরা দেহ, আকুল মরণে।
কালের নাহিক বোধ।
নাহি মানে উপরোধ।
তবু মন রূপরসে বেঁধেছি অকারণে।
২৬
কালের সুভোগ্য সব স্থায়ী ক্ষণকাল।
কেন এত মহোৎসব।
দিকে দিকে কলরব।
ঘুরে দেখো রাজপথে জঙ্গল জঞ্জাল।
২৭
দেখিতে দেখিতে যারা পেয়েছিল ভয়।
দেওয়ালে ঝোলানো আয়নায়।
ভয়ে কাবু করছিল যে গহনায়।
এদিক ওদিক দেখে লুকিয়েছিল নিশ্চয়।
২৮
এক বছরের ঘৃণা যদি হারিয়ে যায়।
মুহূর্তের ভালোবাসায়।
চোখের জলে ভাসায়।
পৃথিবীটা মুহূর্তেই সুন্দর হয়ে যায়।
২৯
তার সুন্দর টুকরো হাসির ভিতর দিয়ে।
খুঁজে পাই স্পন্দন।
এক অটুট বন্ধন।
আগুনের গ্রন্থিতে ঘিয়ের অঞ্জলি দিয়ে।
৩০
চাঁদ তার জোছনার সুষমা দেখিয়েছিল
তার বাঁকা হাসির মুখ।
এক স্বর্গীয় শান্তির সুখ।
জোছনা হয়ে আঁধার আলো করেছিল।
৩১
মৃত্যুর বাঘবন্দী খেলা হলুদ ঘাসের ওপর।
পড়ে আছে মৃত্যুর স্বপ্ন।
শেষ নিঃশ্বাসের দুঃস্বপ্ন।
কল্পনার মতন রাজকীয় কি সেই গৃহস্থের ঘর।
৩২
মৃতদেহ চলে গেলে সকলেই যেন বানপ্রস্থে
যাওয়ার আমন্ত্রণ পায়।
শুধু কয়েকজনের দায়।
বোকাসোকা সৎ মানুষ শুধু মরে ঋণগ্রস্তে।
৩৩
চৌকাঠের পারে দাঁড়িয়ে যারা মৃতদেহ দেখে।
ওদের চোখের ঠিক চারপাশে।
পেশীগুলো টান টান হয়ে আসে।
তারা মাতালের মত মৃতদেহ গুছিয়ে রাখে।
৩৪
হুমড়ি খেয়ে বলে-মৃত্যু কি ভয়ঙ্কর নিঃসঙ্গ।
সোনালী সুতোর ফাঁস দিয়ে।
বাঘবন্দী খেলার ছক বানিয়ে।
দেখে যাচ্ছো সবে, মৃত মানুষের উৎসব-রঙ্গ।
৩৫
মস্তিষ্কের অন্ধকার এ কোন বন্য উপত্যকায়,
যেখানে পড়ে আছে উপহাস।
জীবন যাপনে শুধু পরিহাস।
মরণ সদা সর্বদা থাকে জীবনের পাহারায়।
৩৬
হুতাশন-গ্রাসে করি জীবন অর্পণ।
ধরো সবে মনোহর বেশ,
বাঁধো বিনাইয়ে কেশ।
চলতো দেখি নিশিরাত করিব যাপন।
৩৭
বহুকাল পরে ওরে সখি আজ বড় সুদিন।
নহি আর ভাগ্যহীন।
আলো দেখি ক্ষীণ।
শুধিব জীবন-দানে আমি পতি-প্রেম-ঋণ।
৩৮
সময়ের হাত ধরে এলো সুখের দিবস,
পাবো সুখ-মোক্ষ যশ।
দিন নহে এরূপ সরস।
প্রমোদ-উৎসবে আজ, কেন সে অলস।
৩৯
ভেবে দেখ দেখি সবে। কে জানিতে তবে?
ছিলে না তো বালিকা।
যথা মুদিতা মালিকা।
অলি যে আনন্দদাতা জানে কি গো সবে?
৪০
সকলে জেনেছ বুঝি পতি অতি প্রাণধন।
যুবতীর জীবন যৌবন।
পাহারায় অলি মধুবন।
পতি বিনা কি হবে রসাল জীবন যৌবন।
৪১
বহিছে গগনে দেখো আহা দক্ষিণা পবন।
ঘনমেঘ সাথে সাথে বায়।
মৃদু মৃদু লাগে পরিখায়।
পাপ তাপ অসুখেরা দ্রুত করে পলায়ন।
৪২
সদা ব্যগ্র সদা ত্রাস এ বড় মহাদায়।
অনশন জাগরণ।
রবে দেশে আমরণ।
হৃদি সিন্ধু জাগিবে নাম নিলে রসনায়।
৪৩
ঘুণাক্ষরে জানিল না কেউ, সাগরের ঢেউ।
লাগিল তার পায়।
যে ছিল পাহারায়।
পশুপালে যে যমুনার তীরে, চিনেছ কি কেউ।
৪৪
জন্ম লয়েছে ভগবান, এহেন জননী যিনি।
ধর্ম ভঞ্জে হৃদি মাঝে।
সকাল সন্ধ্যা সাঁঝে।
গর্ভে তবে আসে ভগবান, আপন জননী মানি।
৪৫
সিঞ্চিলে স্নেহের জল, নরের হৃদয় ভূমি।
হবে যে ফুল ফল।
সুবাসিত অঞ্চল।
এমন যোগ্য মালি কোথা হতে পাবে তুমি।
৪৬
কপট কৌশলে যদি মন চায় অবগতি।
কোথা নবজন্ম হবে?
পশু কিংবা পক্ষী হবে।
কু-মতি, কু-চিন্তায় যদি সদা রয় মতি।
৪৭
জল ভেদি ক্রমে ওঠে মৃণাল যেমন।
মেঘ কাটি ওঠে দিবাকর।
ক্রমে ক্রমে যৌন আকর।
দেহ ভেদি আসে জেনো সরস যৌবন।
৪৮
কলরবে কিবা ফল, আসিবে কি মান?
ঝটিকা নিশায় যেন।
ঘন অবকাশে হেন।
মরু মাঝে মরীচিকায় ভরিবে না প্রাণ।
৪৯
নানা দুখ মাঝে হেন সুখ কোথা আর।
হৃদে ধ্যান কবিতার।
কেটে যাবে আঁধার।
মধ্যদিনের ন্যায় আলো আসিবে তার।
৫০
স্মৃতির সন্ধানে ব্যগ্র বিধির খেলায়।
আছে যার অতিসুখ
পুনরায় পাইবে দুখ।
জেনে রেখো সদা এই জীবন বেলায়।
৫১
রূপরসে মুগ্ধ হয়ে হয়েছি পাগল।
ভালোবাসায় তার।
হৃদয় হইলো ভার।
বিবাগি হয়েছি আমি, প্রেম সম্বল।
৫২
মনিময় চন্দ্রাতপ সুশোভিত তার।
দৃষ্ট মাত্র তার ছায়া
দেখি নাই তার কায়া
জ্বলে মনে সর্বদা শোভা চমৎকার।
৫৩
এ কোন মাহেন্দ্রক্ষণ সমাগত হয়।
চকিত হইল লোচন।
দর্পণে চারু আবরণ।
জানিলাম, আমি তার সুযোগ্য নয়।
৫৪
তৃণতুল্য বলবান আমি মদনের বাণ।
কালসর্প সম, বিষ বরষে।
আন্তর বাসনার নিত্য পরশে।
হিংস্র কুটিল সর্বনাশা পশুর সমান।
৫৫
নীচাচার নীচমতি রত কুক্রিয়ায় সদা।
তায় তার সহবাস
সন্তানের সর্বনাশ
আছে বিধাতার বিধি অবশ্যই তায়।
৫৬
নীরবে শুনিবে যারা সদ জ্ঞান কানে।
কাঁচা ফল তুলে নিয়া।
পাকাই অনল দিয়া।
সে ফল কখনো খেতে সুস্বাদু না আনে।
৫৭
তুমি যে লহ মূর্খ সঙ্গ যতন করিয়া।
মনে মন দেহ নাই।
তুমি বিদ্যা পাও নাই।
বিজ্ঞের অজ্ঞের সঙ্গ আপন ধরিয়া।
৫৮
নারীর প্রসব কালে যত্ন করো তারে।
আদরে ব্যকুল করো।
তার হাত হাতে ধরো।
বুঝাও তুমি আছো সদা তার তরে।
৫৯
বিদ্যা সম ধরাধামে কিবা আছে আর।
শিক্ষা সম এ ধরার।
কিবা উপাদেয় আর।
সম্মানে ভূষিবে সবে যাহা করো কারবার।
৬০
বিশুদ্ধ প্রেমের মন অনল তরুণ ছবি।
দেহ বিনা প্রেম প্রীতি
দেখিছে কোন ক্ষিতি।
অলক্ষ্যে তোমার স্নেহ, স্বর্ণ তরুন রবি।
Comments
Post a Comment