মাতা

মাতা

সুকোমল কর নিয়া, অঙ্গে বুলাইয়া,
পুনঃ স্নিগ্ধ হৃদি-ভরো পীযূষ-ধারায়,
মমতায় বিমোহিত, সু-বাক্য কহিয়া।
হে জননী করো পুনঃ বালক আমায়।

তব মন পরিহরি, সংসারে প্রবেশি।
সদা মত্ত থেকে মা গো সংসারের রণে।
তুমি কহেছিলে মোরে বড় ভালোবাসি।
তব সেই মিষ্ট কথা কিছু নাই মনে।

কেমনে বর্ণিব আমি, স্মৃতির বিহনে।
ছাড়ো মিথ্যাচার দূর হ রে ব্যভিচার।
দেবরূপে ছদ্মবেশী দানবী জীবনে।
ওরে স্বার্থপর খল, করো অবিচার।

কপট, কাঠিন্য, চাটু, কটু, কুবচনা।
করি কুমন্ত্রণা দান, হরিয়াছ সব।
মম শৈশবভূষণ, দেয় কোনজনা।
সারল্য, সন্তোষ, প্রীতি, আর কলরব।

কত সুখস্বপ্নকথা, অন্তরে জাগিছে।
ধীরে ধীরে হর্ষ শোচ সংশয়ের সনে।
যেন বা প্রবাস বাসে, দূর হয় পাছে।
দেশ-প্রিয় গীত খণ্ড, সন্ধ্যাসমীরণে।

বৃদ্ধকালে অন্বেষিয়া, স্মৃতি মিলাইয়া, 
ছল স্বধাম সন্ধান কিশোর সন্ন্যাসী।
জাতিস্মর হৃদে হেন, প্রেম প্রকাশিয়া।
বিয়োগ-বিষণ্ণ মুখ পূর্বের-প্রেয়সী।

তুল্য এবে এ সব সে শৈশবস্মৃতির।
নিজ অঙ্গ অংশ দিয়া, তনু নিরমিয়া, 
চিত্ত হ'তে দিয়া চিত্ত, করেছ অস্থির।
জীব-দেহ, ব্রহ্মাণ্ডের সম তুলনীয়া।

পরদেশ এ ধরায়, সম্বল সহায়, 
আসি আত্মা, পেয়ে যাঁর আতিথ্য অপার, 
পথ-ক্লান্তি পাসরিয়া, নব-সঙ্গী পায়।
রঙ্গরসে পাসরিছে, হৃদ আপনার।

মহতী মহিমা, বাক্যে কে বর্ণিবে তাঁর।
কভু ভার-নিপীড়িতা বসুন্ধরা প্রীতি।
দোষ পেলে রোষ হয় হৃদয়ে পিতার।
সরসীর হিমপাতে শিলা হয় অতি।

সতত না পূর্ণ রয় সুধাংশু সুধায়।
করে মেঘ ধারাপাত, ঘটে বজ্রাঘাত।
জগৎপ্রাণ, প্রাণ হরে মাতিয়া ব্যথায়।
রবির মুখের হাসি; কাটাইবৈ রাত।

সমান প্রকৃতি কারু দেখা নাহি যায়।
চির অবিকারী মাতা মমতা তোমায়!
তুমি না ধরিলে দেহ, দেহ নাহি পায়।
না আসিত না বাঁচিত কেহ এ ধরায়।

পৃথিবী-ভ্রমনে ক্লান্ত, স্বর্গ-হারা আত্মা।
তব গর্ভে যে কিসের সুখ পায় পান্থ।
প্রবঞ্চনা বিড়ম্বনা, সরিয়ে দূরাত্মা।
অশান্তির দিন শেষে, যখন সে ক্লান্ত।

নাই কিছু চিন্তা যথা তৃষ্ণার ক্ষুধার;- 
তব হৃদিরসে শোধে বঞ্চনা সুধার!
মর্ত্যবাসী, ত্রাসে ভাষে,- “বহু দুঃখ গর্ভবাসে, 
মলালয়, অন্ধকূপ, স্বল্প-আয়তন”! 
বিচারিয়া বিদ্যমান, বলিতেছ অনুমান, 
ভ্রান্ত নর! গর্ভ তব আছে কি স্মরণ? 
মলয়জ ছিল যাহা, এবে মল বল তাহা, 
সে বিশাল বিশ্বে, ভাব বিবর এখন! 
স্তন্য তনু-উপাদানে, এবে ঘৃণা বাসো পানে, 
আবাল্য ভাবিয়া বুঝ বিকার আপন!- 
ভব-শ্বান্-দংশিতের জননী জীবন!

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

কাঙাল হরিনাথ