বিচার চাই ধর্মাবতার-২

বিচার চাই ধর্মাবতার-২
দেবপ্রসাদ জানা

রতন বেশ বিরক্তি নিয়ে, না জিগেস করেই বসে পড়ল। বুঝতে পারছিল আমি আগেরদিনের কথায় বিশ্বাস  করছি না। ক্ষুন্ন হয়ে বলল, 
- সেদিন তো সব বললাম স্যর, আজ আবার কেন?
আমি তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললাম-
- প্রেম করছো?
রতন রেগে যাচ্ছিল বেশ। কম বয়েসে রাগটা চট করে হয়। রতনকে মাঝে মাঝে রাগানোও আমার দরকার। রাগানো, ভোলানো।
আমি আবার একটু নরম হয়ে গেলাম। --
-ছোটোখাটো ব্যাপারেও পুলিশের বড়ো সন্দেহ বুঝলে হে, নিজের বাপকেও সন্দেহ করে। এরা একেবারে অমানুষ। আমি কিন্তু পুলিশ নয়। নাথিং টু ডু উইথ দেম। তোমার কাগজপত্রে নানান রকম কেচ্ছা ঢুকিয়ে দিয়েছে। চা খাবে?'
-না।
-আরে রাগ করছ কেন? খাও, একসঙ্গেই খাওয়া যাক। তোমার তো আবার শীত শীতও করছে। 
বলে আমি টেবিলের তলায় সুইচে হাত দিলাম। বাইরে কলিং বেল বাজবে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আমার আরদালি সুকুমার এলো। নামটা যতই সুকুমার হোক, মোটেই সে সুকুমার নয়, বৃদ্ধ এক নেপালী, তবে বাংলা জানে।
-চা দাও। দু কাপ। পাখাটা বন্ধ করে দাও।
সুকুমার পাখার সুইচ বন্ধ করল। করে চলে গেল। দরজা বন্ধ হল। আমি একটু হাসলাম। নরম হাসি। -দেখো রতন, যার যা কাজ তা না করে উপায় নেই। আমারও সেই অবস্থা। আমার কাজটা ঝকমারির। তবু ভালো পুলিশের কাজ নয়। পুলিশদের আমি নিজেও পছন্দ করি না। টু টেল ইউ ফ্র্যাঙ্কলি, আমার মেয়ে-তা ধরো তোমার বয়েস, এখন সতের, আমাদের ফার্স্ট চাইল্ড। 
-তা তোমারও তো একটি বোন রয়েছে। কত বয়েস?' 
আমি খোলামেলা গল্প করার ঢঙে, খানিকটা অন্তরঙ্গ হয়ে কথাবার্তা বলছিলাম, ইচ্ছে করেই। একটা সিগারেট ধরালাম।
রতন বলল, 'আমার বোন আর ছোটো ভাই। বোনের বয়েস সতের।'
- ও আমার মেয়েরই সমবয়েসি। তোমার বোনের নাম কী?
-ডাকনাম নীলা।
- কী যেন করে দেখছিলাম?
রতন তাকিয়ে থাকল। বুঝতে পারল, আমার জানা আছে তার বোন নীলা কী করে। সামান্য পরে
বলল, 
-বাড়ি বাড়ি বাসন মাজার কাজ করে।'
সিগারেটের ধোঁয়া গিলে চুপচাপ বসে থাকলাম। রতন আজ আর ঘামচ্ছিল না। টেনশান যে কেটে গিয়েছে তা নয়, সরে গিয়েছে। 
সুকুমার চা নিয়ে এলো। রাখল। তাকে ইশারায় আমি কিছু বললাম। সে আমার ডানপাশের ঘরের দরজার চাবি খুলল। ভেতরে গেল। ফিরে এল। ইশারায় জানাল-সব ঠিক আছে। চলে গেল সুকুমার।
-নাও, চা খাও।
রতন চায়ের দিকে তাকাল। কিন্তু মুখে দিলো না।
মনে মনে আমার মজা লাগছিল। রতন বোধ হয় ভাবছে চায়ের সঙ্গে কিছু মেশানো আছে। না, তেমন কিছু নেই। যা আছে তাতে ওর উপকার বই অপকার হবে না।।
চায়ে চুমুক দিয়ে আমি বললাম, 'খাও।'
রতন আমার দিকে তাকিয়ে সামান্য দ্বিধার সঙ্গে চায়ে চুমুক দিলো।
-সিগারেট খাবে?
আমার আচমকা প্রশ্নে রতন থতমত খেয়ে গেল। ছোটো করে বিষম খেলো একবার।
-না। মাথা নাড়ল রতন।
-তুমি সিগারেট খাও না?
-খাই।
-সিগারেটে গাঁজা ঢুকিয়ে খাও তো?
রতন ইতস্তত করলো, মাথা নিচু করে কি একটা বলতে যাচ্ছিল, ওর ফাইলে রাখা খবরের কাগজটা খুলে মার্কিং করা জায়গাটা পড়তে শুরু করলাম।

"কাঁকিনাড়া স্টেশনের কাছে রেললাইনে 'বোমা' উদ্ধার"
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাকপুর: শিয়ালদহ-রানাঘাট শাখার কাঁকিনাড়া রেল স্টেশনের কাছে দুই নম্বর লাইনের ধার থেকে একটি 'বোমা' উদ্ধার হয়েছে। জিআরপি ও আরপিএফ পৌঁছে বোমাটি উদ্ধার করে। যদিও ফরেন্সিক পরীক্ষার আগে জিআরপি ও আরপিএফ বোমার কথা স্বীকার করতে চায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার কাঁকিনাড়া রেল স্টেশনের দুই নম্বর লাইনের উপর থেকে ওই বোমাটি উদ্ধার হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অফিসের নিত্যযাত্রীদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায় রেলের পরিষেবাও। এরপর বেশ কিছু ট্রেন চার নম্বর লাইন দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা নীলাদ্রী সাউ জানিয়েছেন, ডাউন লাইনের উপরে বোমা রাখা ছিল। ট্রেন গেলেই একটা বড় বিপদের সম্ভাবনা ছিল। সিসিটিভিতে নজর দিলেই কারা এই কাজ করেছে, তা জানা যাবে। বোমার খবর পেয়ে কাঁকিনাড়া স্টেশনে পৌঁছয় রেল পুলিস এবং জিআরপি। বোমা উদ্ধারের জন্য ডাকা হয় বিশেষজ্ঞ দলকে। এরপর সতর্কতার সঙ্গে বোমা উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়। কীভাবে রেল লাইনের উপর বোমা এল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ সন্দেহ করছে লাইনর ধারে থাকা বস্তিতে বেশ কয়েকজন এন্টিসোসাল ছেলে ছোকরারা ওই স্থানে বসে মদ গাঁজা খায়, পাশের বস্তির রতন নামে এক স্থানীয় মস্তানকে পুলিশ সন্দেহ করে থানায় ধরে নিয়ে গেছে। 
-ওরা আমাকে জোর করে....
-চুপ করো, তুমি যাদের সঙ্গে মদ খাও তারাই তোমার নাম বলেছে, সকলে মিথ্যে বলছে?
- মিথ্যে বলছে স্যর, আপনি জানেন না, ওরা রাইভাল গ্রুপ। আমাকে গ্যারেজ করে দিলে ওদের সুবিধা। সবটাই লুটে পুটে খাবে।
রতনের চোখ খানিকটা লালচে দেখাচ্ছিল। 
-নাও, সিগারেট নাও। যদিও তুমি আমার ছেলের বয়েসি, তবু নাও। লজ্জার কিছু নেই। আমি হাসলাম, প্যাকেট থেকে লাইটার এগিয়ে দিলাম। 'কী একটা কথা আছে না-কত বছর বয়েস হয়ে গেলে যেন ছেলেদের সঙ্গে বন্ধুর মতন বাবহার করতে হয়, রতন হাত বাড়াল না, সিগারেটও নিল না। চায়ে চুমুক দিল আবার। আমার বেশ মজা লাগছিল। এই সব ছেলে-ছোকরাদের এক ধরনের অবাধ্যতা থাকে। বেয়াড়াপনা ঠান্ডা করতে আমার বেশি সময়ও লাগে না। তবু, এখন এই মুহূর্তে আমি কিছু করতে চাই না।
-তুমি আর কী নেশা করো? আমি বললাম, শান্ত গলায়, গল্প করার মতন আমেজি ঢঙে।
-নেশা! আর কোনও নেশা করি না।
-মদটদ খাওতো? গাঁজা, চরস? আফিম?
- না না।
-কিছুই না। বাঃ, তুমি তো ভালো ছেলে! আজকাল যে কী হয়েছে বুঝতে পারি না। ছেলে-ছোকরা দেখলেই কতকগুলো দোষ তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে, মজা নিতে ইচ্ছে করে, জানি ফরনাথিং প্রোমোশন পেতে তোমাদের ঘাড়ে অন্যের দোষ চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়। তবু এতো ওপরের চাপ কি করে সামাল দি বলোতো, তারপর ধরো মিডিয়া, এতো পেছনে লেগে থাকে, আমাদের তখন আসল ছেড়ে নিরীহদের ওপরে দোষ চাপিয়ে দিয়ে অব্যহতি পেতে হয়।

......চলবে

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ